০৩. কিরীটী বাড়ি ফিরছিল

মিঃ অধিকারীর ওখান থেকে বিদায় নিয়ে কিরীটী বাড়ি ফিরছিল। রাত বেশী নয়। কিন্তু শীতের রাত বলে এর মধ্যেই চারিদিক যেন নিযুতি হয়ে এসেছে। আর শীতও এবার যেন বেশ জাঁকিয়ে এসেছে শহরে। একেবারে হাড়কাঁপানো কনকনে।

যে ট্যাক্সীতে কিরীটী বামদেবের ওখানে গিয়ছিল, সেটা ছাড়েনি অত রাত্রে কোন ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না বলে। পাঞ্জাবী ড্রাইভার ট্যাক্সি চালাচ্ছিল। চলমান গাড়ির খোলা জানালা পথে শীতের রাত্রির কনকনে হাওয়া নাকে চোখে মুখে কিরীটির এসে ঝাপটা দিচ্ছে।

রাস্তার দু’পাশে দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মধ্যে মধ্যে শুধু চোখে পড়ে কাচিৎ কখনো এক-আধটা পানের দোকান এখনও খোলা। তারই সামনে দেখা যায় এখনো দুচারজন শেষ খরিদ্দার। আর চোখে পড়ে এক-আধটা মিঠাঁইয়ের দোকান—তারাও একেবারে দরজা বন্ধ করার উদ্যোগ করছে।

দু-একটা ট্যাক্সি বা প্রাইভেট গাড়ি পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে!

কিরীটির মাথার মধ্যে তখনও পাক খেয়ে ফিরছিল গঙ্গার ধারে একখানা নবাবী আমলের পুরাতন বাড়ি। বিক্রয়-কোবালা—যার এখনো রেজিষ্ট্রি হয়নি। কিন্তু বায়না হয়েছে দশ হাজার টাকা।

কে এক রাণা বাড়িটা কিছুদিন আগে পঞ্চান্ন হাজার টাকায় বামদেবের কাছ হতে ক্রয় করে নেবে বলে বায়না দিয়েছে। কাঁসার বাসনের ফ্যাক্টরী খুলবে। কাসার বাসনপত্রের জন্য বহরমপুরের খাগড়া অঞ্চল অবশ্য বিখ্যাত। গুজরাটি ব্যবসায়ীর সেদিকটায় নজর পড়েছে। ব্যাপারটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তবে অত অধিক মূল্যে একটা পুরাতন আমলের বাড়ি ক্রিয় করেছে। যখন গুজরাটি ব্যবসায়ী, মিথ্যে সে নিশ্চয়ই অতগুলো টাকা ব্যয় করছে না।

এক-আধটা টাকা নয় তো–পঞ্চান্ন হাজার টাকা!

টাকাটাও অবশ্য এখনো সম্পূর্ণ পেমেন্ট হয়নি—হাজার দশেক বায়না নিয়েছে বামদেব এবং সামনের পনের তারিখে বাকি পেমেন্টের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রয়-কোবালা রেজিস্ট্রি হবে। আগাম দশ হাজার টাকা নিয়েছে এবং কথাবাতাঁর যখন সব ঠিক-ঠাক, কেবল বিক্রয়কোবালা রেজিষ্ট্র করা বাকী, তখন একপ্রকার বিক্রয়ই হয়ে গিয়েছে ধরে নিতে হবে।

হঠাৎ কিরীটীর চিন্তাসূত্রে বাধা পড়লো।

গাড়ির মধ্যস্থিত দর্পনে বার দুই একটা গাড়ির সাইড হেডলাইটের আলো ওর সতর্ক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সঙ্গে সঙ্গে কিরীটী ড্রাইভারকে বলে গাড়ির গতি আর একটু কমিয়ে দিতে। ট্যাক্সির স্পীড কমতেই কিরীটী সন্তপণে পিছনের দিকে তাকাল। সামান্য ব্যবধানে সাইডলাইট জ্বালিয়ে একখানা গাড়ি ট্যাক্সির পিছনে পিছনেই আসছে সমগতিতে।

কিরীটী তার সহজ বিচারবুদ্ধি দিয়েই বুঝতে পেরেছিল, সাধারণ কোন গাড়ি নিশ্চয়ই নয়, তাই ট্যাক্সির গতি কখনো একটু কমিয়ে কখনো একটু বাড়িয়ে বেশ কিছুটা পথ পরীক্ষা করে দেখল এবং বুঝতে দেরি হয় না। ওর পাশ্চাতের গাড়িখানা ওকে অনুসরণ করছে।

সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলী হয়ে ওঠে কিরীটী। এবং আরো কিছুটা পথ চলে কিরীটী সুস্পষ্টই লক্ষ্য করে পাশ্চাতের গাড়িটা ঠিক একই ভাবে তার ট্যাক্সিকে অনুসরণ করে আসছে। ব্যাপারটায় ও একটু বিস্মিতই হয়।

নিতান্ত বামদেব কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়েই কিরীটী বামদেবের ওখানে রাত্রের ডিনারে গিয়েছিল এবং বামদেবও প্রথমটায় আসল উদ্দেশ্যটা তার কিরীটীকে খুলে বলেনি। খাওয়াদাওয়ার পর সব বলল।

এ ক্ষেত্রে বাইরের কোন তৃতীয় পক্ষের তো ব্যাপারটা আঁচ করাও সম্ভব নয়। তবে?

এখন স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে বামদেবের ওখানে যাওয়াটা তার কারো-না-কারো শ্যেন সতর্ক দৃষ্টিকে এড়ায়নি। বামদেবের ওপরে কারো-না-কারো লক্ষ্যও আছে। অতঃপর কিরীটী সোজাপথে না গিয়ে ইচ্ছা করে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করতে লাগল।

কিরীটী মনে মনে বুঝি মৃদু হাসে এবং সে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয় মনে মনে তাঁর অনুমানটা মিথ্যে নয় বলে। সে ট্যাক্সি-ড্রাইভারকে আদেশ দেয়, সদািরজী, সোজা পার্কসার্কাসের দিকে চল। সঙ্গে সঙ্গে সর্দারাজী গাড়ি ঘোরায়। পার্কসাকাস অঞ্চলে কিরীটীর এক শিল্পী বন্ধু থাকে। সবিতাব্রত সেন। কিরীটীর নির্দেশে সর্দারাজী সেই দিকে গাড়ি চালায়।

নির্জন রাস্তায় কেবল গ্যাসের আলোগুলো টিম টিম করে জুলছে। এদিক হতে। ওদিকে যতদূর দৃষ্টি চলে রাস্তাটা শূন্য—একেবারে খাঁ খাঁ করছে।

সবিতাব্রতর বাড়ির বন্ধ দরজার সামনে এসে কিরীটী সর্দারাজীকে থামতে বললে সর্দারাজীকে গাড়ির স্পীডটা স্লো করতে বললে এবং একসময় চলন্ত ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ল, ট্যাক্সি আবার স্পীড নিল।

অন্য গাড়িটাও ততক্ষণে থেমে গিয়েছে। পশ্চাতে গড়ির সাইডলাইট দুটো দপ করে হঠাৎ ঐ সময় নিভে গেল।

কিরীটী গাড়ি থেকে নেমে একটা লাইটপোস্টের আড়ালে আত্মগোপন করে রইল কিছুক্ষণ, তারপর এক সময় এগিয়ে গিয়ে সবিতাব্রতর বাড়ির দরজার গায়ে কলিং বেলটা টিপল।

কিরীটী বারিকয়েক বাজাবার পর দরজার ওপাশে পদশব্দ শুনতে পেল।

দরজা খুলে দিতে লোক আসছে, কিরীটী বুঝতে পারে।

দরজা খুলতেই সামনে সবিতাব্রতর সঙ্গে চোখাচৌখি হয়ে গেল কিরীটীর।

এত রাত্রে কিরীটীকে দেখে সবিতাব্রত কম বিস্মিত হয়নি। সবিতাব্রত ঘুমোয়নি, জেগে বসে একটা ছবিতে রিটাচ দিচ্ছিল সন্টুডিওর মধ্যে।

ব্যাপার কি রে! এত রাত্রে তুই? সবিতাব্রত প্রশ্ন করে।

কথা আছে—চল ভেতরে। কিরীটী বললে।

না করে কেবল আহ্বান জানল, আয়।

দরজা বন্ধ করে দুজনে ওপর উঠতে লাগল সিঁড়ি দিয়ে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে কিরীটী প্রশ্ন করে, জেগে ছিলি মনে হচ্ছে—

হ্যাঁ, একেটা ছবির রিটাচ দিচ্ছিলাম।

সবিতাব্রতর দোতলায় বসবার ঘরের মধ্যে ঢুকে ইজিচেয়ারটার ওপরে গাটা এলিয়ে দিতে দিতে আরাম করে চোখের পাতা দুটো বুজিয়ে মৃদুকণ্ঠে কিরীটী বললে, এক কাপ কফি খাওয়াতে পারিস সবিতা?

করছি—

সবিতাব্রত বলতে গেলে একাই থাকে। দ্বিতীয় প্রাণী এক বৃদ্ধ ভৃত্য। ইলেকট্রিক স্টেভে দুইেকাপের মত কফির জল চাপিয়ে দিল সবিতাব্রত।

গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কিরীটী বললে, বাকি রাতটুকু এখানে কটাব চেয়ারে শুয়েই-একটা বালিশ দে!

কিরীটী যে বিনা কারণে এই শীতের মধ্যরাত্রে তার বাড়িতে এসে ওঠেনি। সবিতাব্রত তা জানে। মনের মধ্যে কৌতূহল উঁকিঝুঁকি দিলেও ও সম্পর্কে এতক্ষণ কোন প্রশ্নই করেনি। আকারণ কৌতূহল কিরীটী পছন্দ করে না। কোন দিন প্রশ্রয়ও দেয় না।

কিন্তু কিরীটী নিজেই সবিতাব্রতর কৌতূহলের অবসান ঘটায়।

আচ্ছা জব্দ করা গেছে বেটাকে-বলতে বলতে কিরীটী নিঃশেষিত কফির কাপট একপাশে নামিয়ে রেখে ভাল করে হেলান দিয়ে শোয় চেয়ারের ওপরে।

কিরীটীর হাস্যোদীপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সবিতাব্রত প্রশ্ন করে, কাকে আবার জব্দ করলি?

সে আছে। একজন। বামদেববাবুর ওখানে গিয়েছিলাম—সর্দারজীর ট্যাক্সিতে ফিরছি, দেখি বেটা আমায়। ফলো করছে। হঠাৎ মনে হল রাতটা তোর এখানে এসে কাটিয়ে যাওয়াই ঠিক হবে। বেটা বোধ হয় এখনো ট্যাক্সিটা ফলো করছে।-বলতে বলতে কিরীটী হাসল।

আলোটা নিভিয়ে দেব? সবিতাব্রত প্রশ্ন করে।

তা দে।

ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে সবিতাব্রত এগিয়ে গিয়ে আবার ছবিটা নিয়ে বসল পাশের ঘরে। দুই ঘরের মধ্যবর্তী দরজাটা খোলাই রইল।

অন্ধকার ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা যেন হঠাৎ চাপ বেঁধে ওঠে।

 

লালবাজারে এল কিরীটী তার বিশেষ পরিচিত ইন্সপেক্টর সুভাষ দত্তর ঘরে গিয়ে ঢুকল।

সুভাষ দত্ত বললেন, কি ব্যাপার কিরীটীবাবু?

কিরীটী বলল, অ্যাটর্নি রমেশ দত্ত তো আপনার পরিচিত, না?

হ্যাঁ।

তার পার্টনার রাঘব সাহা লোকটা তেমন জানেন?

যেমন মোটা তেমনি কালো ও তেমনি কুটচক্রী। দত্ত অ্যাণ্ড সাহা অ্যাটর্নি ফর্মের ইদানীং যে দুর্নাম রটেছে বাজারে তা তো ঐ রাঘব সাহার জন্যেই শুনেছি। সুভাষ দত্ত বললেন।

আজ একবার দত্ত-সাহার ওখানে একজন কাউকে এখান থেকে পাঠাতে পারবেন?

কেন পারবে না! কিন্তু ব্যাপারটা কি?

শুনুন বহরমপুরে আমার এক বিশেষ পরিচিত ভদ্রলোক বামদেব অধিকারীর রত্নমঞ্জিল নামে একটা বাড়ি বিক্রি হচ্ছে—কথাটা আরো একটু পরিষ্কার করে বলি, কে এক রাণা বাড়িটা কিনবার জন্য দশ হাজার টাকা ইতিমধ্যে অগ্রিমও দিয়েছে। দাম ঠিক হয়েছে পঞ্চান্ন হাজার টাকা। সামনের মাসের পনেরই বিক্রয়-কোবালা-রেজিস্ট্রি হবার কথা।

বুঝলাম।

রাঘবকে সে বলবে তার হাতে একজন খদ্দের আছে। সে ষাট হাজার টাকা দাম দেবে। এবং কমিশন হিসাবে তাকে দেবে পাঁচ হাজার।

বাড়িটা যাতে রাণা কিনতে না পারে, এই তো?

না, ঠিক তা নয়—আসলে বাড়ি বিক্রির ব্যাপারটা মাসখানেক পিছিয়ে দিতে চাই। এমনিতে দত্ত রাজী হলেও তার পার্টনার রাজী হবে না, তাই ঐ টোপ আর কি!

বেশ। কিন্তু ব্যাপারটা কি কিরীটীবাবু?

আসলে ঐ রত্নমঞ্জিলের সঙ্গে একটি অপহৃত সুবর্ণ-কিঙ্কন-রহস্য জড়িয়ে আছে।

সুবৰ্ণকিঙ্কন!

হ্যাঁ। পরে আপনাকে সব বলব। কিরীটী আর দ্বিতীয় বাক্যব্যয় না করে একটা ফাইল টেনে নেয়।

 

ঐদিনই অ্যাটর্নি দত্ত-সাহার নিভৃত চেম্বারে সুভাষবাবু-প্রেরিত লোক যতীন ঘোষ ও রাঘব মুখোমুখি বসে দ্বিপ্রহরে কথা হচ্ছিল। পাশে দত্তও ছিল।

কিরীটীর অনুমান ভুল হয়নি।

রাঘব সাহা নির্বিবাদেই তার টোপ গিলেছে। কিন্তু আপত্তি তুলেছে তার পার্টনার দত্ত। দত্ত যতীন ঘোষকে বললে, এখন তা কি করে সম্ভব যতীনবাবু। দশ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়ে গিয়েছে—এতে ব্রিচ অফ কনট্রাক্টের মামলায় পড়তে হবে যে!

চেষ্টা করলে আপনি ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারবেন না-এ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। মিঃ দত্ত। এতে করে যদি দু-চার হাজার খরচও হয় আমার পার্টি দিতে রাজী আছে।

রাঘব সায় দেয়, চেষ্টা করে দেখতে একবার ক্ষতিটা কি দত্ত? পাঁচ হাজার টাকাও তো কম নয়!

কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কি বলুন তো মিঃ ঘোষ? ঐপুরাতন বাড়িটার প্রতিই বা আপনার ক্লায়েন্টের লোভ হল কেন? দত্ত যতীন ঘোষকে প্রশ্ন করে।

যতীন ঘোষ বললেন, আমার ক্লায়েন্ট কেন ঐ বাড়িটা কিনতে চান তা তো বলতে পারব না। তবে ডিলটা করে দিতে পারলে আমিও কিছু পাব।

রাণার তো এখনই আসবার কথা—তাকে আসতে বলেছি। দশ হাজার টাকা সুদ-সমেত দিলে যদি রাজী হয়ে যায়! রাঘব বলে ওঠে।

তা হলে অবিশ্যি কোন ঝামেলাই থাকে না। তবে ব্যাপার যা বুঝেছি তাতে অত সহজে সে রাজী হবে বলে মনে হচ্ছে না।

এমন সময় বেয়ারা এসে সেলাম দিয়ে দাঁড়াল।

কি রে?

আজ্ঞে, রাণা সাহেব এসেছেন।

ভেতরে পাঠিয়ে দে। দত্ত বলে।

একটু পরে রাণা এসে ঘর প্রবেশ করল চেম্বারের সুইংডোর ঠেলে, রাম রাম! দোত্তবাবু, কি ব্যাপার? এত জরুরী তোলব কেন?

বসুন—বসুন রানা সাহেব!

যতীন ঘোষ চেয়ে দেখছিলেন আগন্তুককে। মোটাসোটা ভূড়িয়াল চেহারা। গায়ে দামী সার্জের সেরওয়ানী, পরনে মিহি নয়নসুখের ধুতি।

চোখ দুটো ছোট, কিন্তু সতর্ক দৃষ্টি। অতি মাত্রায় সজাগ।

খানিকটা ভণিতা করে অবশেষে সোজাসুজি দত্তই ব্যাপারটা রাণাকে বললে, একটা কথা ভাবছিলাম রাণা সাহেব, মিথ্যে কেন অতগুলো টাকা ঐ পুরাতন বাড়িটার পেছনে ঢালবেন! তার চাইতে আশে পাশে অন্য কোন বাড়ি—

মৃদু হাসিতে রতনলাল রাণার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, বলে বাত তো হাপনি ঠিকই বলিয়েছেন দোত্তবাবু—লেকেন একবার যখন টাকা হামি আগাম দিয়েসে, কন্ট্রাকটু ভি হইয়েসে, তোখন ও তো বিক্রিই হয়ে গিয়েসে—কি বোলেন অ্যাঁ!

তা অবিশ্যি বলতে পারেন। তবে যদি আপনাকে সুদের উপরেও কিছু বেশী ধরে দেওয়া যায়! কথাটা বললে রাঘব।

রতনলাল রাণাকে টাকা দেখলাবেন না দোত্তসাহেব। টাকার বাৎ থোড়াই আছে, চান তো আরো কিছু আগাম ভি হামি দিতে পারি। লেকেন ও বাড়িটা হামার চাই-ই।

কিন্তু কেন বলুন তো রাণা সাহেব? রাঘব সাহা প্রশ্ন করে।

সে কি দোত্তবাবু, হাপনাকে তো হামি বলিয়েসে কেন বাড়িটার হামার প্রয়োজন।

ফ্যাক্টরী করবেন তো? তা ওর চাইতে যদি ভাল একটা বাড়ি পাওয়া যায়— মানে আত পুরনো নয়।

না, ওহি বাড়ি হামি লিবে।

শুনুন তবে, আর একজন খরিদ্দার আছে—বলেন তো মাঝখান থেকে কিছু মোটা মতন পেতে পারেন–

না।

তাহলে আপনি ঐ বাড়িটাই নেবেন?

হ্যাঁ।

কিন্তু আমি বলছিলাম কি–

দেখেন দোত্তবাবু, হামি রতনলাল। —সিধা বাতের লোক আছে। সিধা বাতই হামি পসন্দ কোরে। হাপনাদের কাছে ভি সিধা বাতই চাই দোত্তবাবু। রূপেয়া দেখলাচ্ছেন রতনলালকে-ও তো হাতের মোয়ালা আছে, আনা-যানা তো রূপেয়াকে দস্তুর আছে!

মিঃ রাণা, আপনি ঠিক আমাদের কথা ধরতে পারেননি—ও কথা আমি বলিনি। বলিছলাম একটা সেকেলে পুরাতন বাড়ির পিছনে মিথ্যে কেন অতগুলো টাকা ঢালবেন! তাছাড়া-বিনীত হাস্যের সঙ্গে রাঘব সাহা আরো বলবার চেষ্টা করে।

কিন্তু থামিয়ে দেয়। রাণী। বলে, আইনের কারবারী আপনি দোত্তবাবু, এ কেমন বাত করছেন? হামি যদি বলি, যে বাবুটি এখোন বাড়িটা কিনতে চাইছেন তিনিই বা কিনতে চান কেন? বোলেন—জবাব দেন। বলতে বলতে হা-হা করে রতনলাল হেসে ওঠে।

হাসির উচ্ছাসে তার মেদ ও চর্বিবহুল বিরাট শরীরটা দুলতে থাকে।

যতীন বুঝতে পারে রতনলালকে অত সহজে ঘায়েল করা যাবে না। সে গভীর জলের কাতলা। এবং তার অফিসের সুভাস দত্তর মুখ থেকে শোনা কহিনীটা আবার আগাগোড়া তার মনে পড়ে।

সুবৰ্ণকিঙ্কন আর রত্নমঞ্জিল এই দুটোর মধ্যে যে একটা রহস্য জড়িয়ে আছে এবং একে অন্যের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত সে সম্পের্কেও আর সন্দেহের অবকাশ মাত্রও থাকে না।

আচ্ছা দোত্তবাবু, হামি এবারে উঠবে। আর হ্যাঁ, রূপেয়ার আউর জরুরৎ হোয় তো গদিতে একটা ফোন কোরে দেবেন, হামি রূপেয়া ভেজ দেবো। রাম রাম বাবু!

রতনলাল গাত্ৰোখান করল এবং ধীরপদে একবার আড়চোখে অদূরে চেয়ারে উপবিষ্ট যতীনের দিকে তাকিয়ে ঘর হতে বের হয়ে গেল।

সুইং-ডোরটা ফাঁক হয়ে আবার স্বস্থানে ফিরে এল।

তাহলে এখন উপায়? প্রশ্নটা করে যতীন দত্তকে এবারে।

রেজিস্ট্রির দিনটা মাসখানেক পিছিয়ে দেওয়া ভিন্ন তো আর কোন উপায় দেখছি না! চিন্তিতভাবে দত্ত বলে।

বেশ, তবে অন্তত তাই করুন।

আরো মিনিট পনের পরে যতীন দত্ত-সাহার অফিস হতে বিদায় নিয়ে রাস্তায় এসে জীপগাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে স্টার্ট দিতে বললে।