1 of 3

০৩।৩ তৃতীয় কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক

তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : দীর্ঘায়ুঃপ্রাপ্তি
[ঋষি : ব্রহ্মা, ভৃগু, অঙ্গিরা দেবতা : ইন্দ্রাগ্নি প্রভৃতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

মুঞ্চামি জ্বা হবিষা জীবনায় কমজ্ঞাতযক্ষ্মাদুত রাজযক্ষ্মাৎ। গ্রাহির্জগ্রাহ যদ্যেতদেনং তস্যা ইন্দ্রাগ্নী প্র মুমুক্তমনম্ ॥১॥ যদি ক্ষিতায়ুদি বা পরেতো যদি মৃত্যোরন্তিকং নীত এব। তমা হরামি নিঋতেরুপস্থাদোর্শমেনং শতশারদায় ॥ ২॥ সহস্রাক্ষেণ শতবীর্যেণ শতায়ুষা হবিষাহামেন। ইন্দ্রো যথৈনং শরদো নয়াত্যতি বিশ্বস্য দুরিতস্য পারম৷ ৩৷৷ শতং জীব শরদো বর্ধমানঃ শতং হেমন্তাতমু বসন্তা শতং ত ইন্দ্রো অগ্নিঃ সবিতা বৃহস্পতিঃ শতায়ুষা হবিষাহার্ষমেন॥ ৪৷৷ প্র বিশতং প্রাণাপানাবনড়াহাবিব ব্রজ। ব্যহন্যে যন্তু মৃত্যবো যানাহুরিতরাঞ্ছতম্ ॥ ৫। ইহৈব স্তং প্রাণাপানৌ মাপ গামিতো যুবম্। শরীরমস্যাঙ্গানি জরসে বহতং পুনঃ ॥৬৷৷ জরায়ৈ ত্বা পরি দদামি জরায়ৈ নি ধুমি ত্বা। জরা ত্বা ভদ্রা নেষ্ট ব্যহন্যে যন্তু মৃত্যবো যনাহুরিতরানছত ॥৭॥ অভি ত্বা জরিমাহিত গামুক্ষণমিব রজ্জা। যা মৃত্যুরভ্যধত্ত জায়মানং সুপাশয়া। তং তে সত্যস্য হস্তাভ্যামুদমুঞ্চদ বৃহস্পতিঃ ॥৮॥

 বঙ্গানুবাদ –হে রোগাক্রান্ত পুরুষ! অজ্ঞাতরূপে (বা অজ্ঞাতসারে) দেহে প্রবেশ-করণশালী যক্ষ্মা ব্যাধি (রাজযক্ষ্মা নয়, এমন যক্ষ্মা ব্যাধি) হতে আমি তোমাকে হবির দ্বারা মুক্ত করছি। যা প্রথমে সোমকে গ্রহণ করেছিল (অর্থাৎ সোম যার দ্বারা প্রথমে আক্রান্ত হয়েছিল), সেই রাজযক্ষ্মা (মূল ক্ষয়রোগ) হতে আমি তোমাকে মুক্ত করে চির আয়ুস্মান করে দিচ্ছি। হে ইন্দ্র ও অগ্নি! যে পিশাচী এই বালকের উপর প্রভুত্ব স্থাপিত করেছে, সেই পিশাচী হতে একে মুক্ত করাও। ১।

ব্যাধির কারণে এই পুরুষের আয়ু যদি ক্ষীণ হয়ে গিয়ে থাকে এবং সে যদি এই লোক হতে গমনশীল হয়ে থাকে, অথবা সে যদি যমরাজের নিকট সমুপস্থিত হয়ে গিয়ে থাকে, তবুও আমি তাকে এই লোকে আনয়ন পূর্বক শতায়ুষ্য হওয়ার বল-সমন্বিত করে দিচ্ছি ৷৷ ২৷৷

যে হবির ফল অনন্ত দর্শন-শক্তি প্রাপ্ত করানো এবং শ্রবণশক্তি রূপ বল প্রাপ্ত করানো, সেই হবির শক্তিতে আমি এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষকে মৃত্যুর নিকট হতে ফিরিয়ে এনেছি। আমি ইন্দ্রকে হবির দ্বারা এই নিমিত্ত প্রসন্ন করছি, যাতে এই পুরুষের আয়ুকে ক্ষীণ-করণশীল পাপসমূহ হতে সে উত্তীর্ণ হয়ে যায় এবং যার ফলে সে শত বৎসরব্যাপী আয়ু ভোগ করতে সক্ষম হয় ॥ ৩॥

আমি এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষকে শত বৎসরের আয়ু-প্রাপণশীল হবির দ্বারা মৃত্যু হতে ফিরিয়ে এনেছি। হে ব্যাধিমুক্ত! তুমি শত শরৎ, শরৎ হেমন্ত এবং শত বসন্ত পর্যন্ত জীবিত থাকো। ইন্দ্র, অগ্নি, সবিতা ও বৃহস্পতি তোমাকে শতায়ুযুক্ত করুন। ৪

হে প্রাণ ও অপান (বায়ুদ্বয়)! আপন গোষ্ঠে বৃষভের প্রবিষ্ট হওয়ার ন্যায় তুমি এই ক্ষয়-গ্রস্তের শরীরে প্রবিষ্ট হও। লোকে যে রোগকে মৃত্যুর কারণ রূপ বলে থাকে, সেই রোগ দূর হয়ে যাক। ৫

হে প্রাণ ও অপান! তোমরা অকালেই এই শরীরকে ত্যাগ করো না। বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত এই রোগীর শরীরে বর্তমান থাকো ॥ ৬।

হে ব্যাধিমুক্ত! আমি তোমাকে তোমার বার্ধক্য পর্যন্ত জীবন-সম্পন্ন করে দিচ্ছি। তোমাকে তোমার জরাবস্থা পর্যন্ত ব্যাধি হতে রক্ষা করছি। বিদ্বাৰ্গণ যে মৃত্যুকারক ব্যধিগুলির বর্ণনা করে থাকেন, সেই সকল ব্যাধি তোমা হতে পৃথক হয়ে যাক। ৭।

হে ব্যাধিমুক্ত! যেমন সেচনসমর্থ বলীবর্দকে রজ্জ্বর দ্বারা বন্ধন করা হয়, সেইভাবে জরাবস্থা তোমাকে তোমার যথাসময় প্রাপ্তি পর্যন্ত বন্ধন করে রাখুক। (অর্থাৎ জরা প্রাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত তোমার যেন মৃত্যু না হয়)। যে মৃত্যু তোমাকে অকালেই গ্রহণের উদ্দেশে বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, বৃহস্পতি সেই বন্ধনকে ছিন্ন করে দিন। ৮।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –তৃতীয়েনুবাকে পঞ্চ সূক্তনি। তত্র মুঞ্চামি ত্বা ইতি প্রথমসূক্তেন বালগ্রহরোগে নিরন্তরস্ত্রীসঙ্গতিজনিতযক্ষ্মনি চ পূতিগন্ধবৎসাসহিতং ওদনং অভিমন্যু ভোজনকালে ব্যাধিতং আশয়েৎ। তথা অনেন সূক্তেন অরণ্যতিলৈধজ্বালিদেপাত্রেণ উষঃকালে (অরণ্যে) গৃহে বা ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ মার্জয়েৎ আচাময়েচ্চ। তথা অরণ্যশণারন্যগোময়চিত্ত্যা- দিশান্তৌষধিভিঃ প্রত্যেকং প্রজ্বালিতেনোদকেন উষঃকালে ব্যাধিতস্য অবসেকমার্জনাচমনানি কুর্যাৎ। তথা সর্বব্যাধিনিবৃত্তয়ে চ অনেন সূক্তেন ব্যাধিতং উপস্পৃশ্য অভিমন্ত্রয়েৎ।…ইত্যাদি। (৩কা, ৩অ. ১সূ)৷৷

টীকা –পঞ্চসূক্ত সমন্বিত তৃতীয় অনুবাকের এটি প্রথম সূক্ত। এই সূক্তের দ্বারা বালগ্রহরোগে ও অবিরত স্ত্রী-সঙ্গ জনিত কারণে যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত জনকে নিরাময় করা যায়। এই নিমিত্ত দুর্গন্ধযুক্ত বৎসার সাথে অন্ন অভিমন্ত্রিত করে ভোজনকালে ব্যাধিত ব্যক্তিকে গ্রহণ করাতে হয়। এই সূক্তের দ্বারা অভিমন্ত্রিত অরণ্যতিলের সাথে ঈষদুষ্ণ জলের দ্বারা উষাকালে অরণ্যে বা গৃহে ব্যাধিতকে সিঞ্চন, মার্জন এবং আচমন করাতে হয়। এইভাবে অরণ্য-শণ, অরণ্য-গোময় ও চিত্ত ইত্যাদি শান্তৌষধির দ্বারা প্রত্যেকটি প্রজ্বালিত জলে উষাকালে ব্যাধিতের অবসেক, মার্জন, আচমন ইত্যাদিতে করাতে হয়। সর্বব্যাধি নিবৃত্তিকল্পে এই সূক্তের দ্বারা ব্যাধিত ব্যক্তিকে স্পর্শ পূর্বক অভিমন্ত্রণ কর্তব্য।…ইত্যাদি৷৷ (৩কা, ৩অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : শালানির্মাণম

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : শালা, বাস্তোষ্পতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী, বৃহতী ]

ইহৈব ধ্রুবাং নি মিনোমি শালাং ক্ষেমে তিষ্ঠাতি ঘৃতমুক্ষমাণা। তাং ত্বা শালে সর্ববীরাঃ সুবীরা অরিষ্টবীরা উপ সং চরেম। ১৷৷ ইহৈব ধ্রুবা প্রতি তিষ্ঠ শালেহশ্বাবতী গোমতী সূতাবতী। ঊর্জতী ঘৃতবতী পয়সূত্যুচ্চুয়স্ব মহতে সৌভগায় ॥ ২॥ ধরুণ্যসি শালে বৃহচ্ছা পূতিধান্যা। আ ত্বা বৎসসা গমেদা কুমার আ ধেনবঃ সায়মাস্পন্দমানাঃ ॥ ৩৷৷ ইমাং শালাং সবিতা বায়ুরিন্দ্রো বৃহস্পতির্নি মিনোতু প্রজান। উক্ষন্তুদ্রা মরুততা ঘৃতেন ভগো নো রাজা নি কৃষিং তনোতু ॥ ৪৷৷ মানস্য পত্নি শরণা সোনা দেবী দেবেভির্নিমিতাস্যগ্রে। তৃণং বসানা সুমনা অসমথাস্মভ্যং সহবীরং রয়িং দাঃ ॥ ৫৷ ঋতেন স্কুণামধি বোহ বংশোগ্রো বিরাজপ বক্ষ শত্রু। মা তে বিষমুপসত্তাররা গৃহাণাং শালে শতং জীবেম শরদঃ সর্ববীরাঃ। ৬৷ এমাং কুমারস্তরুণ আ বৎসসা জগতা সহ। এমাং পরিসুতঃ কুম্ভ আ দঃ কলশৈরগুঃ ॥ ৭৷৷ পূর্ণং নারি প্র ভর কুম্ভমেতং ঘৃতস্য ধারামমৃতেন সংড়তাম। ইমাং পাতৃমৃতেনা সমন্ধীষ্টপূর্তমভি রক্ষাত্যেনাম্ ॥ ৮ ইমা আপঃ প্র ভরম্যযক্ষ্মা যক্ষ্মনাশনীঃ। গৃহানুপ প্র সীদাম্যমৃতেন সহাগ্নিনা ॥ ৯।

বঙ্গানুবাদ –আমি এই প্রদেশে (অর্থাৎ স্থানে) স্তম্ভের সাহায্যে গৃহ (শালা) নির্মাণ করছি। এই গৃহ ঘৃত ইত্যাদি প্রদান পূর্বক ভয়-মুক্ত হয়ে থাকুক। (হে গৃহ) সুন্দর গুণশালী, ব্যাধিসমুহ ও অরিষ্টসমুদায় হতে মুক্ত এবং বহু পুত্র-পৌত্র সমন্বিত হয়ে আমরা তোমাতে অবস্থিত (বর্তমান) থাকবো। ১।

হে গৃহ (শালা)! তুমি অনেক অশ্ব, গো ইত্যাদি এবং শিশুর প্রিয় বাণীর (শিশুকণ্ঠের কাকলির) সাথে পরিপূর্ণ এবং ঘৃত দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা সম্পন্ন হয়ে এই স্থানে স্থিত থাকো; এবং আমাদের মঙ্গলদায়িনী হও। ২

হে গৃহ! তুমি দেবতাগণের দ্বারা সম্পন্ন অসংখ্য ভোগকে ধারণকারিণী। তোমাতে গোবৎস এবং পুত্র আগমন করুক. (অর্থাৎ এই গৃহে আমাদের ধেনুগুলি সুন্দর বৎস এবং আমাদের স্ত্রীগণ সুন্দর পুত্ৰশালিনী হয়ে উঠুক) ॥ ৩॥

গৃহ নির্মাণের বিধিজ্ঞাতা বৃহস্পতি, সবিতাদেব, বায়ু ও ইন্দ্রদেব এই গৃহের স্তম্ভ ইত্যাদি রক্ষা করে নির্মাণ করুন। মরুৎ-বৃন্দ ঘৃত ও জলের দ্বারা এই গৃহের ভূমিকে সিঞ্চিত করুন এবং পুনরায় ভগদেবতা এর (সংলগ্ন) জমিকে কৃষিযোগ্য করুন। ৪

ধান্য ইত্যাদির পোষণশালিনী হে গৃহ! তুমি প্রাণীগণকে সুখদানকারিণী। দেবতাগণ তোমাকে মনুষ্যবর্গের উপভোগের নিমিত্ত রচনা করেছিলেন। তুমি তৃণের (খড়ের) দ্বারা আচ্ছাদিত শুভ আশাসম্পন্ন হও এবং আমাদের পুত্র ইত্যাদি ধন প্রদান করো। ৫।

হে বংশ (অর্থাৎ বাঁশ)! তুমি গৃহের মধ্যস্থায়ী স্তম্ভে অবস্থান করো। হে গৃহ! তোমাতে অবস্থানকারী (আমরা) যেন কখনও সন্তপ্ত না হই এবং পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সমন্বিত হয়ে শতায়ুম্মান হই। ৬।

এই গৃহে যুবা পুত্রের আগমন ঘটুক এবং গমনশীল গাভীসমূহের সাথে তাদের বৎসগণও আগত হোক। মধু ও দুগ্ধের কলসগুলিও এই স্থানে আগমন করুক ॥ ৭৷

হে স্ত্রী! এই গৃহে ফোঁটায় ফোঁটায় (চুঁইয়ে পড়ার স্বভাববিশিষ্ট, জলের দ্বারা সম্পাদিত মধু ও ঘৃতের ধারাশালী কলসকে নিয়ে আগমন করো। এই কলসকে সুধা রূপ জলে উত্তম রূপে উজ্জ্বল করো। এই গৃহে চোর ও অগ্নির ভয় হতে, আমাদের অনুষ্ঠিত শ্রৌত ও স্মার্ত কর্মগুলি আমাদের রক্ষক হোক ॥ ৮।

আমি যক্ষ্মারহিত ও তোমার (গৃহের) সেবকগণের ক্ষয়-বিনাশক কলসের জলকে, কখনও নাশপ্রাপ্ত না হওন-শালী অগ্নির সাথে নিয়ে গমন (বা তোমাতে অর্থাৎ গৃহে প্রবেশ করছি)। ৯

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইহৈব ধ্রুবাং ইতি প্রথমং সূক্তং বাস্তোম্পত্যগণে পঠিতং। তেন গণেন নবশালাবাস্তুসংস্কারার্থং শালাভূমিং হলেন কর্ষেৎ। তথা যত্রতত্র চতুৰ্গণী মহাশান্তিঃ শান্ত্যদকাদৌ প্রযুজ্যতে তত্র সর্বত্র অস্য বিনিয়োগঃ ….ইত্যাদি৷৷ (৩কা, ৩অ. ২সূ)।

টীকা –এই সূক্তটি বাস্তাম্পত্যগণে পঠিতব্য। নবগৃহ নির্মাণে বাস্তুসংস্কারার্থে, হলের দ্বারা গৃহভূমি কর্ষণে এই সূক্তের বিনিয়োগ নির্ধারিত। যেখানে চতুৰ্গণী মহাশান্তি কর্মে শান্তিজল ইত্যাদি প্রযুক্ত হয় সেই সর্বত্র এই সূক্তের বিনিয়োগ কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৩কা, ৩অ. ২সূ)

.

তৃতীয় সূক্ত : আপঃ

[ঋষি : ভৃগু দেবতা : সিন্ধু, আপ, বরুণ ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী ]

যদদঃ সংপ্রয়তীরবনতা হতে। তস্মাদা নদ্যো নাম স্থ তা বো নামানি সিন্ধবঃ ॥ ১৷ যৎ প্রেষিতা বরুণেনাচ্ছীভং সমবল্পত। তদাপ্নোদিম্রো বো যতীস্তদাপো অনুষ্ঠন ॥ ২॥ অপকামং স্যন্দমানা অবীররত বা হি কম। ইন্দ্রো বঃ শক্তিভির্দেবীস্তম্মাদ বার্নাম বা হিতম্ ॥ ৩॥ 
একো বা দেবাইপ্যতিষ্ঠৎ স্যন্দমানা যথাবশম। উদানিমুর্মহীরিতি তস্মাদুদকমুচ্যতে ॥ ৪। আপাে ভদ্রা ঘৃতমিদাপ আসন্নগ্নীষামৌ বিভ্রত্যাপ ইৎ তাঃ। তীব্রা রসা মধুপৃচামরংগম আ মা প্রাণেন সহ বচসা গমেৎ ॥ ৫|| আদিৎ পশ্যামুত বা শৃণাম্যা মা ঘাযাগচ্ছতি বা মাসাম্। মন্যে ভেজানা অমৃতস্য তহি হিরণ্যবর্ণা অতৃপং যদা বঃ ॥ ৬. ইদং ব আপা হৃদয়ময়ং বৎস ঋতাবরীঃ। ইহেথমেত শরীর্যত্রেদং বেশয়ামি বঃ | ৭||

 বঙ্গানুবাদ – হে জলসমূহ! মেঘের প্রতাড়নের পর তোমরা ইতস্ততঃ গমন পূর্বক নাদ (শব্দ) করার কারণে তোমাদের নাম নদী হয়েছে এবং তোমাদের অপ ও উদক, নামও অর্থের অনুকূলই সার্থক হয়েছে । ১।

বরুণের দ্বারা প্রেরিত হওয়ার পর তোমরা নৃত্য করতে করতে একত্রে গমন করেছিলে, সেই সময় ইন্দ্র তোমাদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন; সেই হ’তে তোমাদের নাম হয়েছিল আপ ॥ ২॥

ইচ্ছা না থাকলেও ইন্দ্র তোমাদের আপন শক্তিতে বরণ করেছিলেন, সেই নিমিত্ত তোমাদের নাম হয়েছিল বারি ৷ ৩৷৷

ইন্দ্র একবার তোমাদের উপর আধিপত্য জমিয়েছিলেন; ইন্দ্রের মহত্বের কারণে জলসমূহ (অর্থাৎ তোমরা) নিজেদের বড় মনে করে উদান করেছিলে, তখন হ’তে তোমরা (অর্থাৎ জলসমূহ) উদক নামপ্রাপ্ত হয়েছিলে। ৪।

কল্যাণকারী জলই ঘৃত হয়েছিল। অগ্নিতে হোমের (আহুতির) পর ঘৃত জল রূপ হয়ে যায়। এই জলই অগ্নি ও সোমের ধারণকারী। এই হেন জলের মধুর রস আমাকে অক্ষয় বল ও প্রাণের সাথে প্রাপ্ত হোক। ৫৷৷

পুনরপি আমি দর্শন করতে ও শ্রবণ করতে পারি যে, উচ্চারিত শব্দ আমার নিকটে আমার বাণীকে প্রাপ্ত হয়ে আছে। সেই রসের আগমনে আমি শব্দোচ্চারণ ও বাগিন্দ্রিয় লাভ করি। হে জলসমূহ! তোমরা সুন্দর বর্ণশালী, অমৃতের সমান। তোমাদের সেবায় আমি তৃপ্ত হয়ে গিয়েছি। ৬।

 এই জলে পতিত হওয়া সূবর্ণ তােমাদের হৃদয়। হে জলসমূহ! এই মণ্ডুক (জলনিবাসী ব্যাঙ) তোমাদের বৎসের সমান। হে অভীষ্ট ফলপ্রদাত্রী জলসমূহ! যে খাতে তোমাদের প্রবেশ করাচ্ছি, তাতে তোমরা মকদের উপর প্রক্ষিপ্ত অবকার ন্যায় দৃঢ় হও বা স্থির প্রবাহযুক্ত হও) | ৭|| 

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ – “যদদঃ সম্প্রয়তিঃ ইতি সূক্তং স্বাভিমতপ্রদেশে নদীপ্রবাহকরণে বিনিযুক্তং। তত্রায়ং ক্রমঃ। যেন মার্গেণ প্রবাহং নিনীষতি তং দেশং প্রথমং খাতা তত্র অনেন সূক্তেন উদকং প্রসিঞ্চন ব্রজে। তথা অনেন সূক্তেন কাশশৈবালপটেরকবেলশাখাঃ প্রত্যেকং অভিমন্ত্র তত্র খাতে নিখনেৎ…ইত্যাদি। (৩কা, ৩অ. ৩সূ)৷ 

টীকা – আপন অভিমত প্রদেশে নদীপ্রবাহ-করণে এই সূক্ত মন্ত্রগুলি বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। যে পথে প্রবাহকে নিয়ে যেতে হবে, প্রথমে সেই দেশ (স্থানে) খনন পূর্বক এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা ক্রমে ক্রমে জল 
প্রসিঞ্চন করে যাওয়া কর্তব্য। এই সূক্তের দ্বারা কাশ, শৈবাল, পটেরক, বেতলশাখার প্রত্যেকটি অভিমন্ত্রিত M করে সেই খাতে নিখনীয়।..ইত্যাদি ॥ (৩কা, ৩অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : গোষ্ঠঃ

[ঋষি : ব্রহ্ম দেবতা : গোষ্ঠ, অহঃ, অর্যমা, বৃহস্পতি, ইন্দ্র ইত্যাদি ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ]

সং বো গোষ্ঠেন সুষদা সং রষ্যা সং সুভূত্যা। অহর্জাতস্য যন্নাম তেন বঃ সং সৃজামসি ॥ ১৷৷ সং বঃ সৃজত্বৰ্ম সং পূষা সং বৃহস্পতিঃ। সমিন্দ্রো যো ধনঞ্জয়ো ময়ি পূষ্যত যদ বসু ॥ ২॥ সংজগ্ননা অবিভূষীরস্মিন গোষ্ঠে করীষিণীঃ। বিভ্রতীঃ সোম্যং মধ্বনমীবা উপেতন ৷ ৩৷৷ ইহৈব গাব এতনেহো শকেব পুষ্যত। ইহৈবোত প্র জায়ধ্বং ময়ি সংজ্ঞানমস্তু বঃ ॥ ৪শিববা বো গোষ্ঠো ভবতু শরিশাকের পুষ্যত। ইহৈবোত, প্ৰ জায়ধ্বং ময়া বঃ সং সৃজামসি ॥ ৫৷৷ ময়া গাবো গোপতিনা সচধ্বময়ং বো গোষ্ঠ ইহ পোষয়িষ্ণুঃ। রায়ম্পোষেণ বহুলা ভবন্তীজীবা জীবন্তীরূপ বঃ সদেম ॥ ৬।

বঙ্গানুবাদ –হে ধেনুগণ! আমরা তোমাদের সুখপূর্ণ গোষ্ঠের সাথে যুক্ত করে (খাদ্যস্বরূপ) চারা (তৃণ) ইত্যাদিতে সম্পন্ন করছি, আমরা তোমাদের সমৃদ্ধি, পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির সাথেও সম্পন্ন করছি ॥ ১।

হে ধেনুগণ! অর্যমা, পূষা, ইন্দ্র, বৃহস্পতি তোমাদের উৎপন্ন করুন। পুনরপি (অর্থাৎ উৎপন্ন ও সংবর্ধিত হয়ে) তোমরা আপন ক্ষীর ঘৃত ইত্যাদি ধনের দ্বারা আমি হেন তপস্বীকে সন্তুষ্ট (বা পুষ্ট) করো। ২।

হে ধেনুগণ! এই গোষ্ঠে তোমরা ভয়-রহিত তথা সন্ততির সাথে সম্পন্ন থেকে রত্নরাজিতে পরিপূর্ণ হও এবং রোগ-রহিত মধুর দুগ্ধ ধারনে সমর্থ স্থূল স্তন্যশালিনী হয়ে (আমাদের) প্রাপ্ত হও ৷ ৩৷৷

হে ধেনুগণ! মক্ষিকা (মাছি) যেমন ক্ষণমাত্রেই অনেক হয়ে যায়, সেইরকমেই তোমরাও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে এই স্থানে আগমন করো। এই গোষ্ঠে পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির সাথে যুক্ত হও এবং সাধক আমাতে প্রীতি রক্ষা করো। ৪

হে ধেনুসমূহ! তোমাদের গোষ্ঠ সুখময় হোক। তোমরা সহস্রে সহস্রে উৎপন্ন শারিশাক নামক প্রাণীর ন্যায় অসংখ্যশালিনী হও। তোমরা এই গোষ্ঠেই অবস্থান পূর্বক পুত্র-পৌত্রাদি রূপে প্রকট হও (অর্থাৎ বংশ বিস্তার করো)। ৫।

 হে ধেনুসকল! আমি তোমাদের পালক; তোমরা আমার গোষ্ঠে আগত হও। প্রভূত পশুখাদ্য ও ধনের সাথে অসংখ্যক হয়ে চিরকাল পর্যন্ত জীবিত থাকে এবং আমরাও যেন চিরায়ুম্মান হই ৬

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সং বো গোষ্ঠেন ইতি সূক্তেন গোপুষ্টিকামঃ অভিনবং (পয়ো গৃষ্টেঃ) শ্লেষ্মমিশ্রিতং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্যু অশ্নাতি। তথা অনেন সূক্তেন গাং অভিমন্ত্র দদাতি গোপুষ্টিকাম এব। …ইত্যাদি৷৷ (৩কা, ৩অ. ৪সূ)।

 টীকা –গোষ্ঠে অর্থাৎ গোশালায় পোষিত ধেনুসমূহের, পুষ্টিকামনায় গো-বৎসের শ্লেষ্ম (অর্থাৎ মুখফেনা) মিশ্রিত দুগ্ধ এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে পান করণীয়। গো-পুষ্টি কামনায় এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত গাভী দান করণীয়।..ইত্যাদি। (৩কা, ৩য়, ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : বাণিজ্যম

 [ঋষি : অথর্বা (পণ্যকামঃ) দেবতা : ইন্দ্রাগ্নী ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

 ইন্দ্রমহং বণিজং চোদ্দয়ামি স ন ঐতু পুরএ নো অস্তু। নুদন্নরাতিং পরিপন্থিনং মৃগং স ঈশানো ধনদ। অস্তু মহ্যম। ১৷৷ যে পন্থনো বহবো দেবযানা অন্তরা দ্যাবাপৃথিবী সঞ্চরন্তি। তে মা জুষন্তাং পয়সা ঘৃতেন যথা ক্রীত্বা ধনমাহরাণি ॥ ২॥ ইনোগ্ন ইচ্ছমাননা ঘৃতেন জুহোমি হব্যং তরসে বলায়। যাবদীশে ব্ৰহ্মণা বন্দমান ইমাং ধিয়ং শতসেয়ায় দেবী ৷ ৩৷৷ ইমামগ্নে শরণিং মীমৃযো নো যমধ্বানমগাম দূর। শুনং নো অস্ত্র প্রপণে বিক্রয়শ্চ প্রতিপণঃ ফলিনং মা কৃপোতু। ইদং হব্যং সংবিদানৌ জুষেথাং শুনং নো অস্তু চরিতমুখিতং চ ॥ ৪৷৷ যেন ধনেন প্রপণং চরামি ধনেন দেবা ধনমিচ্ছমানঃ। তন্মে ভূয়ো ভবতু মা কনীয়োহগ্নে সাতঘো দেবান্ হবিষা নিষেধ ॥ ৫॥ যেন ধনেন প্রপণং চরামি ধনেন দেবা ধনমিচ্ছমানঃ। তস্মিন্ ম ইন্দ্রো রুচিমা দধাতু প্রজাপতিঃ সবিতা সোমো অগ্নিঃ ॥ ৬৷৷ উপ ত্বা নমসা বয়ং হোতবৈশ্বানর স্তমঃ। স নঃ প্রজাস্বাত্মসু গোষু প্রাণেষু জাগৃহি ॥৭॥ বিশ্বাহা তে সদমিদ্ভরেমাশ্বায়েব তিষ্ঠতে জাতবেদঃ। রায়পোষেণ সমিষা মদন্তো মা তে অগ্নে প্রতিবেশা রিম ॥ ৮

 বঙ্গানুবাদ –আমি ইন্দ্রকে বাণিজ্যকর্তার ভাবে স্তুতি করছি। সেই ইন্দ্র এই স্থানে আগমন করুন এবং (আমাদের) বাণিজ্যকে হিংসা-করণশীল শত্রু, পথ রোধকারী দস্যু এবং ব্যাঘ্র ইত্যাদিকে বিনাশপূর্বক অগ্রসর হোন। সেই ইন্দ্র আমাদের বাণিজ্যে লব্ধব্যরূপ (অর্থাৎ লভিতব্য) ধন প্রদান করুন ॥ ১৷

যে দেশে আমরা বাণিজ্য করছি। সেই দেশের পথগুলি ঘৃত-দুগ্ধের দ্বারা আমাদের সেবা-করণশালী হোক, যাতে আমি ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা প্রাপ্ত মূলধনকে লাভের সাথে ঘরে আনয়ন করতে পারি। ২!

 হে অগ্নি! আমি বাণিজ্যে লাভের কামনা পূর্বক শীঘ্র চলনের শক্তি প্রাপ্তির নিমিত্ত তোমার স্তুতি করে ধনসম্পন্ন হবো। এই নিমিত্ত আমি তোমার উদ্দেশে হবিঃ সমর্পণ করছি ৩

হে অগ্নি! দূরপথ অতিক্রম করে চলার কারণে আমাদের যে ব্রত লোপ হয়ে গিয়েছে (অর্থাৎ গৃহ থেকে দূরে থাকার কারণে আমাদের পালনীয় অগ্নিসেবা ইত্যাদি কর্ম করা হয়ে ওঠেনি), তার জন্য আমাদের ক্ষমা করো। এই দূর দেশে কষ্ট সহনের শক্তি তুমি আমাদের দান করো। ক্রয় ও বিক্রয় দুটি ব্যাপারই লাভপ্রদ ও সুখদায়ী হোক। তুমি আমার প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ করো। হে দেবগণ! মূলধন অপেক্ষা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত লাভের পরিমাণ (ধন) আমাদের সুখী করুক ॥ ৪

হে অগ্নি! লাভের প্রতিরোধশালী দেবতাগণকে এই হবির দ্বারা সন্তুষ্ট করে ফিরিয়ে দাও। হে দেবগণ! যে ধনের দ্বারা আমি ধনের বৃদ্ধি করতে কামনা করছি, সেই ধন তোমাদের কৃপায় নিরন্তর বৃদ্ধিলাভ করুক ॥ ৫৷৷

ইন্দ্র, সবিতা, সোম, প্রজাপতি ও অগ্নি আমার মনকে সেই ধনের দিকে প্রেরিত করুন, যে মূলধনের দ্বারা ধনলাভের ইচ্ছা করে আমি বাণিজ্য করতে ইচ্ছা করছি। ৬। হে দেবাহ্বায়ক অগ্নি! আমরা হবির সাথে তোমার নিকট প্রার্থনা জ্ঞাপন করছি। তুমি আমাদের পুত্র পৌত্র ইত্যাদি প্রজার রক্ষার্থে সতর্ক থাকো। ৭।

 হে উৎপন্ন প্রাণিবর্গের জ্ঞাতা (জাবেদা) অগ্নি। আপন গৃহে বর্তমান অশ্বকে প্রতিদিন তৃণ ইত্যাদি প্রদানের মতো আমরা তোমাকে নিত্য হবিঃ প্রদান করছি। তোমার সেবকরূপী আমরা যেন ধন ও অন্নে পরিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারি। ৮।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রং অহং বণিজং ইতি বাণিজ্যলাভার্থং বিনিযুজ্যতে। বিক্রয়ার্থং পণ্যানি বিপণিং নয়ন বনি কর্ম বাণিজ্যলাভার্থং কুর্যাৎ। তদ যথা। ইন্দ্রং অহং ইতি সূক্তেন বর্জং বস্ত্রং বা পূগীফলং বা অশ্বান বা হস্তিনো বা রত্নাদি বা সম্পত্য অভিমন্যু তত উত্থাপয়তি।… ইত্যাদি। (৩কা. ৩অ. ৫সূ)।

টীকা –এই সূক্তটি বাণিজ্য লাভার্থে বিনিযুক্ত হয়। বিক্রয়ের নিমিত্ত বণিক পণ্যদ্রব্য বিপণিতে (বা হাটে) নয়ন কালে বাণিজ্যলাভার্থে বজ্র (হীরক) বা বস্ত্র। পূগীফল বা অশ্ব বা হস্তি বা রত্ন ইত্যাদি এই সূক্ত মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে সেস্থান হতে উত্থাপন করবেন।…ইত্যাদি ॥ (৩কা, ৩অ. ৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *