০২. বিছেনা ছেড়ে একদিন আর উঠলে না

বিছেনা ছেড়ে একদিন আর উঠলে না

দাদি আমার বাপজিকে একটুকুনি ভয়ই করত। যেদি কিছু খেতে দেবে, একটো লাড়ু, বাতাসা কি পাটালি কিংবা চিনির কদমা, আড়ালে ডেকে নিয়ে যেয়ে লুকিয়ে দিত। লতুন মা য্যাতোদিন ছিল না, বাপজি ত্যাতোটো খেয়াল করত না। সারাদিন বাড়িতেই থাকত না, তা খেয়াল করবে কি? লতুন মা এলে বাড়ি আবার ঠিকঠাক হলো, ঘর-দুয়ারে ঝট পড়তে লাগল, ঘরের মেজে-দেয়ালে আবার লাতা দেয়া হতে লাগল। লিয়ম ধরে রাঁধা-বাড়া চলল। সসাংসার আবার ঠিক হলে আমাদের হাতে দাদির দেওয়া খাবার-দাবার দেখলে বাপজি যেন অখুশি হতো। তবে ঠান্ডা মানুষ তো! য্যাতেই রাশভারি হোক, চ্যাঁচামেচি কুনোদিন করত না। কিন্তু তার অখুশির কথা বুক যেন ছাদা করে দিত। তা সহ্যি করা খুব কঠিন। আমি জানতম বলেই দাদিকে বলতম, সবকিছু আমাদের দিতে যাস ক্যানে দাদি?

তু যি আমার জান বুন। ই দুনিয়ায় আর থাকা কিসের লেগে? তিন কুলে আমার কেউ নাই। সোয়ামি নাই, পুত নাই, মেয়ে নাই, ভাই নাই। খালি তুই আছিস। আল্লা জানে, তুই আছিস তাই আমার দুনিয়ায় থাকা।

ই কথার কি কুনো জবাব আছে? দাদি যি বলত আমার যা আছে সব তোর–তা আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখতম দাদির কি আছে। ঐ কেঁদাকাটা আঁদার ঘর আর কালো কালো মাটির হাঁড়ির সার আর তো কিছু দেখি নাই দাদির। তবে দাদি য্যাকন আমাকে বলত, আমার জানের জান, ত্যাকন বোঝতম দাদির জান আছে। ঐ একটো জিনিসই আছে, আর সেটা আমার। আঃ, হায়রে–সেই জানটো কি আমার।

একদিন ঠিক সকালবেলায়, কাক ত্যাকন ডেকেছে কি ডাকে নাই, আমি যেয়ে দেখি দাদি ত্যাকননা ওঠে নাই। আমকাঠের ভাঙা দুয়োরটো ঠেসানো। ভাবলম এমন তো কুনোদিন হয় না! দাদি ওঠে সুয্যি ওঠার আগে আঁদার থাকতে। ই কেমন কথা হলো? আমি যেয়ে দরজাটো ঠেলা দিয়ে খোললম। ঘর আঁদার। ঘরের ভেতরে কিছুই দেখা যেছে না। তাপর একটু একটু আবছা দেখলম খেজুরপাটির ওপর কাঁথার বিছেনায় দাদি শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে ডাকলম, ঠ্যাললম, সাড়া দিলে না। ত্যাকন আমি চেঁচিয়ে কেঁদে ওঠলম। দাদি আর বিছেনা ছেড়ে উঠলে না। মরে কাঠ হয়ে আছে!

বাপজির খালা য্যাকন, ত্যাকন দাদির লিশ্চয় অ্যানেক বয়েস। তা কতে হবে? কে বলবে সি কথা? ত্যাকনকার দিনে লোকে নিজের বয়েস জানত না। মরা নিয়ে কারও কুনো ভাবনা ছিল না। মওত ত্যাকনকার জ্যান্ত মানুষের পেছু পেছু ঘুরে বেড়াত। বয়েসের কথা ভেবে আর কি হবে? তবে মনে হয়, অ্যানেক বয়েস হয়েছিল দাদির। চার-কুড়ি বছরেরও বেশি হবে।

দাদি চলে গেল যেন দুনিয়ার সব গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে গেল। আবার দাদি নিজেও কতোদিন বাদে শুকনো পাতার মতুনই কোথা হারিয়ে গেল! অ্যাকন আর কিছুই মনে পড়ে না। তবে বুকটোকে চিরলে সোনার পিতিমে আমার দাদিকে আজও দেখতে পাওয়া যাবে লিশ্চয়। কোথা দাদির কবর অ্যাকন আর কেউ জানে না। আমিও জানি না। অথচ আমি ঠিক জানতম কবরটো কোথা। কিন্তুক সি জায়গায় গেলেও অ্যাকন আর বলতে পারব না।

বাপজি ছেলেমেয়ে ঘর-সংসার কুনো কিছুকে যি ভালোবাসত তা চোখে দেখতে পাবার উপয় ছিল না। কুনোদিন বাপজির কোলে উঠেছি বলে মনে পড়ে না। গায়ে মাথায় হাত দিলে কি দুটো মিষ্টি কথা বললে, কখনো এমন দেখি নাই! কথাই তো বলত কম। মা য্যাকন গেল ত্যাকন তো আমি বেশ বড় হয়েছি–কই বাপজি তো একবারও কাঁদলে না, চোখ থেকে দু-ফোটা পানি ফেললে না? ত্যাকনকার ভাবই ছিল এইরকম। বউ মরলে কাদলে সেই পুরুষের খুব নিন্দে।

মনে পড়ে, ঘরের ভেতর ছেঁয়া-ছেঁয়া আঁদারে বাপজি খালি গায়ে খেতে বসেছে। পরনে শুদু একটো ধুতি পরা। বেরাট মানুষ, ফরশা ধপধপে গায়ের রঙ। বেরাট কাঁসার থালায় ঝিঙেশাল চালের ভাত, বড় বড় কঁসার বাটিতে নানারকম তরকারি। মাছ-গোশতো ত্যাতে লয় কিন্তুক। সব শ্যাষে জামবাটি ভরা ঘন দুধ, কলা আর আখের গুড়। বাপজির গায়ের বলও ছিল তেমনি। এই নিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে কতো গপ্পো! অত বল, কিন্তুক কুনোদিন একটি লোকের গায়ে হাত তোলে নাই। জেনে-শুনে একটি পিপড়ের ক্ষেতিও করে নাই। কুনোদিন কুনো মানুষকে একটো অকথা-কুকথাও বলে নাই। তবু কত যি কথা ছিল তাকে নিয়ে। একবার একটো আখমাড়াইয়ের কল দশজনা মিলে সরাইতে পারছে না। যিখানে আখমাড়াই হবে, সাল হবে, গুড় উঠবেসি তত বছরের একটো উচ্ছবই বটে–কলটোকে গরুর গাড়িতে তুলে সিখানে নিয়ে যেতে হবে। ঐ কল পুরোটা লোহা দিয়ে তৈরি। চার ধারে শুদু চারটে শালকাঠের পায়া। দশজনায় সি কলটোকে কিছুতেই জুৎ করতে পারছে না। দেখতে দেখতে বাপজির কি যি হলো, আস্তে আস্তে বললে, সন্ দিকিনি তোরা। এই বলে একাই সেই লোহার কল সাপুটে ধরে মাটি থেকে চাগিয়ে তুলে ফেললে। এই আচ্চয্যির কথা এখনো সবাই বলে।

ইদিকে ল্যাখাপড়া জানা মানুষ–বাংলা জানত, ফারসি জানত। গাঁয়ে ত্যাকন পাঠশালা হয়েছে বটে কিন্তুক বাপজি কোথা থেকে ওসব শিখেছিল, তা জানি না। ল্যাখাপড়া শেখার লেগে ত্যাকনকার দিনের মানুষ কোথা কোথা সব চলে যেত। বাপজি-ও লিশ্চয় কোথাও যেয়ে শিখেছিল ল্যাখাপড়া। ফারসি বয়েত বলত মাঝে মাঝে আর একটো বাংলা শুভঙ্করি বই লিখেছিল। ইসব অ্যানেকদিন দখিন-দুয়োরি ঘরের চ্যাঙরিতে টাঙানো ছিল। পরে আর দেখি নাই।

জমিজমা আমাদের বেশ ছিল। খাওয়া-পরার অভাব হতো না। কিন্তুক ঐ জমিই সব–আর কিছু নাই। কঠিন চুম না করলে কিছুই পাবার উপয় ত্যাকন ছিল না। জান-পরান দিয়ে খাটলে ভাতের অভাব নাই। নিজে খাও, গরিব-দুখিকে দাও। নুন আর মশলাপাতি ছাড়া কিছুই তো কিনতে হতো না। পরের কালে দেখলম কেরাসিন কয়লা আর মিলের শাড়ি কিনতে হতো।

আমাদের ছেলেবেলায় ধুতি আর শাড়িও কিন্তুক তাঁতিবাড়িতে কিনতে পাওয়া যেত। ই কথার মানে হচে, কম-বেশি জমি যার আছে তার সব আছে, তার আর কুনো ভাবনা নাই। সবরকম আনাজপাতি, চাল-গম-আটা, তেল-ডাল-গুড়, মিষ্টি-দুধ-দই-ছানা কিছুর অভাব নাই। তবে গরিবের অভাব সব কালে। জমি-জিরেত না থাকলে উপোস না করে কি উপয়? তবে একটা কথা না খাটতে পারলে তোমার শত জমিজমা থেকে কিন্তু কিছু পাবে না। তা তুমি নিজেই খাটো কি মুনিষ-মাহিন্দার খাটাও।

বাপজি সব কাজ জানত। এমন কাজের লোক আমি জেবনে দেখি নাই। ই কি আচ্চয্যি–হ্যানো কুনো কাজ নাই যা বাপজি পারত না। চাষবাসের য্যাতো কাজ, জমি চষা, রোয়া, নিড়ননা, ধান কাটা, গম কাটা, ঝাড়া, মরাই তৈরি করা, ইসব কাজ তো বটেই, জাল বোনা, মাছ ধরা, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ–বিশ্বসসাংসারের সব কাজ তার জানা ছিল। তা বলে সব কাজ কি নিজে নিজে করত, তা লয়। বরঞ্চ আয়েশিই ছিল খানিকটা। ডালপালায় বড় বংশ, আদ্দেকটো গাঁই আমাদের জ্ঞাতিগুষ্টি ভাই-ভায়াদে ভরা। আর তেমনি দাপট। জমিসম্পত্তি বিস্তর। বড় বড় পুকুর, দিঘি ইসব ছিল। সব জমি চাষ হতো না, পড়ে থাকত। গরু-মোষ চরার লেগে জমি, ভাগাড়ের লেগে আলাদা জমি সব ছিল।

বাপজির ভাইদের সব আলো আলেদা সংসার, আলো আলেদা বাড়ি। দলিজ খামার সব আলেদা ইয়াদের মধ্যে বাপজির বড় ভাই, আমাদের দেড়েল চাচার কুনো সংসার-ছেলেমেয়ে ছিল না। তার কি নোম্বা-চওড়া চেহারা! ভয়ে মুখের দিকে চাইতে পারতম না। মুখভত্তি সফেদ পাকা দাড়ি নাভির নীচে এসে পড়ত আৰু তেমনি ঘের সেই দাড়ির। চোখ আর কপাল বাদ দিলে মুখের! কুনো জায়গা বাদ ছিল না আর তেমনি ঘন নোম্বা গোঁফ। হাঁ-মুখটা দেখতেই পাওয়া যেত। বাঘের মতুন গলার আওয়াজ। আমরা ভেজা দুরের কথা, গাঁয়ের কুনো মানুষ তার ছামুতে দাঁড়াইতে পারত না। তা দেড়েল চাচাও কম কথার মানুষ, চিৎকার চ্যাঁচামেচি কুনোদিন করে নাই। বুজুর্গ মানুষ, কটো পুঁথিও লিকিনি লিখেছিল। তাকে আমরা দেড়েল চাচা কলতম ক্যানে? চাচা য্যাকন পেশাব করতে বসন্ত, দাড়ি এসে পড়ত ডুয়ে। সেই লেগে দু-হাতে দাড়ি গোছ করে ধরে ডান বগলে ভরে তবে পেশাব করতে বসতে পারত।

দেড়েল চাচা কুনোদিন বাড়িতে ঢুকত না। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে মসিদ দিঘির দখিন পাড়ে আমাদের দলিজ ছিল। সেই দলিজেই থাকত চাচা। দলিজটো উত্তফ্র-দক্ষিণে নোম্বা। মাটির দেয়াল আর টিনের চাল। তাতে তিটো ঘর। দখিন দিকের ঘরটো এমনি পড়ে থাকত। বাকি ঘরটোয় মেহমান কিংবা বিদেশী কেউ এলে থাকতা; আর উত্তর দিকের ঘরটোয় থাকত দেড়েল চাচা। একটো তক্তপোেশ”চাচার বিছেনা, বালিশ। এক পাশে কাঠের চৌপাইয়ের ওপর ফরসিকো। ইয়া নোম্বা তার নল। ভুরভুরে গন্ধময়লা অম্বুরি তামুক দিয়ে কঙ্কে সাজিয়ে আগুন ধরিয়ে সেই ফরসি দেওয়া হতো দেড়েল চাচার হাতে। দেড়েল চাচা রাত-দিন ভুরুক ভুরুক তামুক টানত, ম-ম গন্ধোয় ভরে যেত খানকা। খানকার বাঁ দিকে বেরাট মসিদ দিঘি, তার পচ্চিম-পাড়ে ভাঙা কিন্তুক পাকা মসিদ। পুবদিকটো একদম খোলা। বাঁ দিকে খানিকটা দূরে খাঁ-দের খামারের ঘরদুয়োর খানিকটো দেখা যেত।

ঘরের ভেতর পুবমুখো বসে দেড়েল চাচা ফরসিতে তামুক টানছে। দোপরবেলায় দস্তরখানা কাঁধে ফেলে খাঞ্চা করে ভাত-তরকারি নিয়ে যেছে আব্যশ চাকর। রেতে খাবার নিয়ে যেচে ঐ আব্যশই। দিনে-রেতে আর কুনো লোকই চাচার কাছ ঘেঁসতে সাহস পেত না। সি একটু কেমন বেপার না? আবার কথা শোনো। ক ক রোদে কাকপক্ষী নাই, গরম হাওয়ায় ধুলোয় দম আটকিয়ে যায়, এমন সোমায় কোন্ গাঁয়ের কোন্ বেল্লিক ছাতা মাথায় দিয়ে দলিজের ছামনে দিয়ে যেছে। দেড়েল চাচা শুদু হেঁকে উঠলে, কে? কে যায়? আবশ, ধরে নিয়ে আয় তো! দেখি কোন্ লায়েক ছাতা মাথায় আমার খানকার সামনে দিয়ে যায়। বেয়াদপ!

আর বলতে হতো না, ছাতামাতা গুটিয়ে সি লোক তো ভয়ে কাপতে শুরু করত। লোকে বলত, আমাদের দেড়েল চাচা কামেল মানুষ ছিল। কেউ বলত, দু-দুটো জিন তার ফরমাশ খাটত। আমরা সিসব জানি না। তার ছামনে পড়তম না কিছুতেই। দেড়েল চাচার মওত হলে ঐ দলিজের উত্তর দিকেই পুকুরের পাড়ে তার মাটি হয়েছিল। কেন যে গোরস্থানে হয় নাই তা আমরা কেউ জানি না।

যাকগো, ভাই-বেরাদরে বিরাট এই বংশ। কাউরির সাহস ছিল না একটো কথা বলে। কিন্তু বাপজি নিজে কাউরির সাথে মাখামাখি পছন্দ করত না। ভাই, চাচাতো ভাইদের সাথেও না। মা মরার পরে বিয়ে আবার করলে বটে তবে ঐ একলা স্বভাবটা ঠিকই রইল। বিয়ের কিছুদিন পর লতুন মায়ের প্যাটে আবার একটো ভাই হলো আমাদের। তারপরে হয়েছিল আরও তিন বুন। লতুন মায়ের মতুন ভালো মানুষ দুনিয়ায় দেখা যাবে না। সব দিকে নজর তার। তবে সবচাইতে বেশি নজর আমার আর আমার ছোট ভাইটোর দিকে, তার পরে তার নিজের ছেলেমেয়ে। কালোপানা মানুষটির চেহারা-ছবি যেন পটে আঁকা। আর কি যি তার হাতের গুণ! ঐ হাতের রাঁধা যে একবার খেয়েছে, সে কুনোদিন ভুলতে পারবে না। মাটির ঘরের দেয়াল কেমন করে যি লেপত, সি আর কেউ পারবে না। গরুর গাড়ি করে লাল মাটি আনিয়ে রাখত এরোলের মাঠ থেকে। সেই মাটি দিয়ে ছোট ছোট ম্যাঘের গায়ে ম্যাঘের মতুন দেয়াল লেপত। ঠিক যেন লাল কোদালে কুড়ুলে ম্যাঘের আসমান।

লতুন মায়ের খোঁকাটি জন্মানোর পরেই দু-কোশ দূরের আমার নানার বাড়ির গাঁ থেকে মামুরা এসে বললে, এক মেয়ে এক ছেলে রেখে আমাদের বুন মরতে না মরতে দামাদ-ভাই আবার বিয়ে করেছে। সি ভালো কথা, লতুন খোঁকার জন্ম হয়েছে, সি-ও ভালো কথা, তবে আমরা আমাদের ভাগ্নেকে নিয়ে যাব, তাকে মানুষ করব। ভাগ্নিটো এখানে থাক্। তার মানে হচে, আমার মায়ের প্যাটের ভাইটোকে মামুরা নিয়ে যাবে, আমি বাপের সোংসারেই থাকব। আমার দু-তিন মামু ত্যাকন বেঁচে, খালারাও আছে, নিজের নানা আর ত্যাকন বেঁচে নাই। তাদের আবস্তা তেমন ভালোও লয়, মন্দও লয়। বরং এট্টু গরিবই বটে। তবে নামকরা বড় বংশ, চাষাভুষাে লয়। নিজের হাতে চাষবাস কেউ করে না। কেউ পাঠশালে মাস্টার, কেউ মক্তবে ওস্তাদজিবিদ্বেনবংশ আর কি! কেউ কেউ ছিল অকম্মা, ই গাঁ উ গাঁয়ের দিঘিতে মাছ ধরে বেড়াত সারা বছর, কেউ পুঁথি লিখত, কারুর শখ ছিল নানারকম তামুক খাবার। কতরকম তামুক আর কতোরকম তার সরঞ্জাম, সি আর কি বলব! মেয়েদের তো রাঁধাবাড়া আর ছেলে মানুষ করা ছাড়া আর কুনো কাজ ছিল না। বিয়ে আবার সব ঘরে ঘরে মেয়েরা কেউ বংশের বাইরে যায় না। বাইরের মেয়ে কেউ আসেও তেমন। মোসলমান মিয়ে মোকাদিমদের মদ্যে এইরকমই চল ছিল।

তা আমার ভাইটিকে নিয়ে যাবার পেস্তাব য্যাকন করলে, বাপজি একটো কথা বললে না। তার স্বভাবই ছিল ঐরকম। ছেলে নিয়ে যাবি যা। আমার সোংসারে মানুষ হবে না, খেতে পাবে না মনে করছিস, কর গা। এমন চাপা মানুষ, এ কথাগুনোও বললে না। শুদু বললে, আমার ইখানে কুনোদিন ভাতের অভাব হবে না। তবে সৎ-মায়ের কাছে ভাগ্নেকে রাখতে চাও না, আমি কিছু বলব না। যা করার তোমরাই করবে, ছেলের কাছ থেকে আমার কুনো পিত্যেশ নাই।

সত্যিই আমার কাকাল থেকে ভাইটিকে ছিড়ে নিয়ে চলে গেল মামুরা। বাপজি ঘর থেকে কোলে নিয়ে ঝর ঝর করে চোখের পানি ফেললে।

ভাইকে নিয়ে মামুরা চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *