1 of 3

০২।২ দ্বিতীয় কাণ্ড : দ্বিতীয় অনুবাক

দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : সপত্নহাহগ্নিঃ
[ঋষি : শৌনক (সত্যকাম) দেবতা : অগ্নি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি ]

সমাস্তাগ্ন ঋতবো বর্ধয়ন্তু সংবৎসরা ঋষয়ো যানি সত্যা। সং দিব্যেন দীদিহি নোচনেন বিশ্বা আ ভাহি প্রদিশশ্চতঃ ॥১॥ সং চেধ্যস্বাগ্নে প্র চ বর্ধয়েমমুচ্চ তিষ্ঠ মহতে সৌভগায়। মা তে বিষপসত্তাররা অগ্নে ব্রহ্মাণস্তে যশসঃ সন্তু মান্যে। ২। ত্বমগ্নে বৃণতে ব্রাহ্মণা ইমে শিববা অগ্নে সংবরণে ভবা নঃ। সপত্নহাগ্নে অভিমাতিজিদ ভবম্বে গয়ে জাগৃহ্যপ্রযুচ্ছ ॥ ৩ ক্ষত্রেণাগ্নে স্বেন সং রভম্ব মিত্রেণাগ্নে মিত্রধা যতস্ব। সজাতানাং মধ্যমেষ্ঠা রাজ্ঞামগ্নে বিহবব্যা দীদিহীহ ॥৪॥ অতি নিহো অতি সৃষধাহত্যচিত্তীরতি দ্বিষঃ। বিশ্বা হ্যগ্নে দুরিতা তর ত্বমথাস্মভ্যং সহবীরং রয়িং দাঃ ॥ ৫॥

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! সম্বৎসর, ঋতু, মাস, পক্ষ, দিবস ইত্যাদি তোমার সমৃদ্ধি করুক। পৃথিবী ইত্যাদিও তোমার বর্ধন করুক এবং ঋষিগণও তোমার বর্ধন করুন। অপিচ, তুমি আপন দিব্য শরীরে প্রদীপ্ত হয়ে চারি দিমূহকে প্রকাশিত করো ৷৷ ১।

হে অগ্নি! তুমি স্বয়ং দীপ্যমান হয়ে এই যজমানের কামনাগুলি পূর্ণ করো; তাঁকে ধন দানের নিমিত্ত উদ্যত হও। তোমার সেবা-করণে নিয়োজিত এই ঋত্বি যজমান ইত্যাদি কর্ম করুক এবং এঁরা যেন কদাপি ক্ষীণ না হন। যারা তোমার সেবক নয়, তারা যশোহীন (নিন্দনীয়) হয়ে যাক। ২৷৷

হে অগ্নি! এই ঋত্বিক যজমান ইত্যাদিগণ তোমার উপাসক; তুমি আমাদের (অর্থাৎ ঋত্বিক যজমান ইত্যাদি ব্রাহ্মণদের) কোনও প্রমাদেও (ভুলত্রুটি ঘটলেও) যেন রুষ্ট হয়ো না। তুমি আমাদের শত্রুবর্গকে ও পাপসমূহকে পরাভূত করে আপন গৃহে সচেষ্ট থাকো ॥ ৩

হে অগ্নি! আপন বলের সাথে যুক্ত থাকো। তুমি মিত্রবর্গের উপকারশালী, অতএব তাদের (আমাদের) পোষণ করো। তোমার সমান-জন্মসম্পন্ন অর্থাৎ সজাতিগণের (অর্থাৎ ব্রাহ্মণর্গের) মধ্যস্থ হয়ে থাকো, যজমানের উপজীব্য হও। রাজগণের দেবাত্মক এই যজ্ঞে প্রদীপ্ত হও। ৪

হে অগ্নি! এই বিষয়-বিকার কুকুর-শূকর যোনিতে (জন্মে) নিপতনকারী, তুমি এগুলিকে (এই জন্মগতিগুলিকে) শমন করো। দেহকে শুষ্ককারী (অর্থাৎ দেহের শোষকস্বরূপ) ব্যধিগুলিকে দূর করো। পাপে নিমজ্জনকারী কুবুদ্ধিকে বিনাশ করো। আমাদের শত্রুগণকে নাশ করো; আমাদের পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সম্পন্ন ধন প্রদান করো ৷ ৫ (২কা, ২অ. ১সূ)।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দ্বিতীয়েনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র সমাাগ্ন ইতি প্রথমং সূক্তং। অনেন। সংস্পকামঃ অগ্নোগং উপস্থানং বা কুর্যাৎ …তথা ভূতরোগচোরাদিভয়েন দারুণে সংবৎসরে সতি তচ্ছান্তয়ে অনেন সূক্তেন আজ্যং জুহুয়াৎ। তথা চ সূত্রং। অথ যত্ৰৈতৎ সমা দারুণা ভবন্তি ইতি প্রক্রমা সমাস্বাগ্নি ইতি জপতি ইতি (বৈ.৫১) বৈতানসূত্ৰাৎ। তথা আগ্নেয়ীং অগ্নিভয়ে সর্বকামস্য চ ইতি (ন.ক. ১৭) বিহিতায়াং আগ্নেষ্যাং মহাশূন্তৌ এতৎ সূক্তং যোজয়েৎ। তৎ উক্তং নক্ষত্রকল্পে।… রাজ্ঞো রাত্রৌ আরাত্রিকবিধানে অতি নিহঃ (২/৬/৫) ইত্যনয়া দীপং প্রজ্বালয়েৎ। … ইত্যাদি। (২কা, ২অ. ১সূ)।

টীকা –সম্পৎকামী জনের পক্ষে মন্ত্রগুলির সাহায্যে অগ্নিযাগ করণীয়। ভূত, ব্যাধি, চোর ইত্যাদি সম্পর্কিত ভীতি হতে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে শান্তিকর্মানুষ্ঠানে এই মন্ত্রগুলির দ্বারা আজাহুতি দেয়। অগ্নিভয়ে মহাশান্তি কর্মেও এই মন্ত্রগুলি যোজনীয়। চতুর্থ মন্ত্রে অগ্নিকে ব্রাহ্মণগণের সজাতানাং বলার কারণ এই যে, অগ্নি ও ব্রাহ্মণগণ প্রজাপতির মুখ হতে উৎপন্ন হয়েছিলেন, সুতরাং তারা একে অপরের সজাতি। বিহব্যে পদের দ্বারা যজ্ঞকে লক্ষ্য করা হয়েছে; কারণ, যজ্ঞেই দেবগণ বহুরূপে আহুত হয়ে ১ থাকেন ॥ (২কা, ২অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : শাপমোচনম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ভৈষজ্য, আয়ু, বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ ভুরিক, বৃহতী ]

অঘদ্বিষ্টা দেবজাতা বীরুচ্ছপথয়োপনী। আপো মলমিব প্রাণৈক্ষীৎ সর্বান্ মচ্ছপৰ্থা অধি। ১৷ যশ্চ সাপত্নঃ শপথো জাম্যাঃ শপথশ্চ যঃ। ব্রহ্মা যন্মোতঃ শপাৎ সর্বং তন্নো অধস্পদম্ ৷৷ ২. দিবো মূলমবততং পৃথিব্যা অধত্ততম। তেন সহস্ৰকাণ্ডেন পরিণঃ পাহি বিশ্বতঃ॥ ৩৷৷ পরি মাং পরি মে প্রজাং পরিণঃ পাহি যৎ ধন। অরাতিনো মা তারীন্মা নস্তারিষুরভিমাতয়ঃ ॥ ৪৷৷ শপ্তারমেতু শপথো যঃ সুহা তেন নঃ সহ।  চক্ষুর্মস্য দুহাদঃ পৃষ্টীরপি শূণীমসি। ৫।

 বঙ্গানুবাদ –পিশাচ ইত্যদি হতে উৎপন্ন পাপ, বিপ্র-শাপ (ব্রাহ্মণের অভিশাপ) ইত্যাদি নাশকারী দেব-নির্মিত বীরুধ (জড়ী বা দূর্বা বা যব) আমাকে নানা রকমের শাপ হতে মুক্ত করে দিক; যেমনভাবে জল শরীরের সকল মলকে দূর করে, মলকে জলের দ্বারা পৃথক্ করে, সেইভাবে (বীরুধ আমাদের সকল শাপ ও পাপ) দূর করুক। ১।

 শত্রুর দ্বারা আক্রোশ, ব্রাহ্মণের শাপ, ভগিনীর ক্রোধ–এই তিন দোষ আমার পদের দ্বারা পিষ্ট হোক। ২।

হে মণি! নতমুখ হয়ে বিস্তৃত, জড়বৎ ঊর্ধ্বে উখিত, শত শত গ্রন্থি (গাঁইট বা পর্ব) সমন্বিত দূর্বার দ্বারা তুমি আমাদের শাপ হতে মুক্ত করো ৷ ৩৷৷

হে মণি! তুমি আমার সন্তানকে এবং ধনকে রক্ষা করো। আমাদের শত্রু যেন সমৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয় এবং হিংসক যক্ষ পিশাচ ইত্যাদিও যেন আমাদের হিংসা করতে সমর্থ না হয়। ৪

আমাদের প্রতি শাপ-প্রদানকারীই যেন শাপগ্রস্ত হয় (অর্থাৎ সেই শাপ তাদেরই দিকে বর্ষিত হোক বা তারাই যেন সেই শাপ ভোগ করে)। যে পুরুষ আমাদের অনুকূল, তারা আমাদের সুখদায়ক হোক। আমাদের সাথে দুর্ভাবাপন্ন এবং গোপনে আমাদের নিন্দাকারী জনের নেত্র এবং পার্শ্বের অস্থিগুলিকে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবো। ৫।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অঘদ্বিষ্টা ইতি সূক্তেন লৌকিকবৈদিকাক্রোশযোব্রাহ্মণশাপে ক্রুরচক্ষুপুরুষদৃষ্টিনিপাতে পিশাচরক্ষাদিভয়ে চ যমণিং সম্পত্য অভিমন্ত্র বধুীয়াৎ। সূত্রিতং হি। অঘদ্বিষ্টা (২/৭) শং নো দেবী (২/২৫) বরণঃ (৬/৮৫) ইতি প্রকম্য প্রথমেন মন্ত্রোক্তং বাতি ইতি (কৌ. ৪/২)। ভার্গবীং নক্ষত্রগ্রহোপসৃষ্টভয়ার্তরোগগৃহীতানাং ইতি (ন.ক.১৭) বিহিতায়াং ভার্গব্যাং মহাশূন্তৌ সহস্ৰকাণ্ডমণিবন্ধনেপি এতৎ সূক্তং। উক্তং নক্ষত্রকল্পে অঘদ্বিষ্টা দেবজাতেতি সহস্ৰকাণ্ডং ভার্গব্যাং ইতি (ন.ক. ১৯)।… ইত্যাদি। (২কা, ২অ. ২সূ)।

টীকা— লৌকিক বৈদিক আক্রোশ, ব্রহ্মশাপ, ক্রুরচক্ষু পুরুষের দৃষ্টিনিপাত ও পিশাচ-রাক্ষস ইত্যাদি স্বে সম্পর্কিত ভীতি হতে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে এই সূক্তের মন্ত্রগুলির সাহায্যে যমণি অভিমন্ত্রিত করে অঙ্গে ধারণ কর্তব্য।…মহাশান্তি হোমে সহস্ৰকাণ্ডসম্পন্ন মণি বন্ধনেও এই সূক্ত-মন্ত্রগুলি পাঠ বিধেয়। ভাষ্যে অঘদ্বিষ্টা শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে–অঘস্য পিশাচরক্ষঃপ্রভৃতিজনিতস্য পাপস্য দ্বেষিণী বিনাশয়িত্রী।(২কা, ২অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : ক্ষেত্রিয়রোগনাশনম্

[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : যক্ষ্মকুষ্ঠাদি নাশনম্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি ]

উদগাতাং ভগবতী বিচূতৌ নাম তারকে। বি ক্ষেত্রিয়স্য মুঞ্চতামধমং পাশমুত্তমম্ ॥১॥ অপেয়ং রাত্ৰুচ্ছত্বপোচ্ছভিকৃত্বরীঃ। বীরুৎ ক্ষেত্রিয়নাশন্যপ ক্ষেত্রিয়মুচ্ছতু। ২৷৷ বভোরর্জুনকাণ্ডস্য যবস্য তে পলাত্যা তিলস্য তিলপিঞ্জা। বীরুৎ ক্ষেত্রিয়নাশন্যপ ক্ষেত্রিয়মুচ্ছতু। ৩. নমস্তে লাঙ্গলেভ্যো নম ঈষাযুগেভ্যঃ। বীরুৎ ক্ষেত্রিয়নাশন্যপ ক্ষেত্রিয়মুচ্ছতু ॥৪॥ নমঃ সনিসাক্ষেভ্যো নমঃ সংদেশ্যেভ্যঃ। নমঃ ক্ষেত্রস্য পতয়ে বীরুৎ ক্ষেত্রিয়নাশন্যপ ক্ষেত্রিয়মুচ্ছতু ॥৫॥

বঙ্গানুবাদ –বিষ্কৃতি নামক দুই মূল নক্ষত্রের উদয় হয়েছে; এরা মানবকে মাতা-পিতা হতে প্রাপ্ত (অর্থাৎ বংশগত) ক্ষয়, কুষ্ঠ, অপম্মার ইত্যাদি ব্যাধির দ্বারা পাশের ন্যায় বন্ধনকারী রোগের বীজকে (বা মূলকে) বিনাশ করুক। ১।

এই উষাকালীন রাত্রি এইসকল ক্ষেত্রিয়-ব্যাধিকে দূর করুক। সূর্য এই ব্যাধিকে প্রশমিত করুন। অপম্মার ইত্যাদি রোগসমুহের প্রেরণকারিণী পিশাচীসমূহ দূর হয়ে যাক। ঔষধিও এই ক্ষেত্রিয় রোগসমূহের নাশ-করণে সমর্থ ॥ ২॥

হে রোগী! অর্জুনবৃক্ষের কাষ্ঠ, যবের ভুষি, এবং তিলের মঞ্জরীর দ্বারা প্রস্তুত মণি তোমার ব্যাধিকে শমিত করুক, তথা ঔষধিও এই ক্ষেত্রিয় ব্যাধির নাশকারক হোক। ৩।

হে রোগী! বৃষভের সাথে যুক্ত হলকে (লাঙ্গলকে) এবং তার (অর্থাৎ হলের) অবয়বকে তোমার রোগ-উপশমের নিমিত্ত নমস্কার করছি। ক্ষেত্রিয় রোগসমূহের নাশক ঔষধি তোমার রোগকে বিনাশ করুক। ৪

মৃত্তিকা নিষ্ক্রান্তের পর ত্যাজ্য গহ্বরকে নমস্কার; যে গৃহের জানালা ইত্যাদি জীর্ণ এবং পতনোম্মুখ, সেই শূন্য গৃহকে নমস্কার; সেই গৃহসমূহের অধিপতিগণের (অর্থাৎ গৃহাধিপতি দেবতাগণের উদ্দেশ্যেও) নমস্কার। এই ক্ষেত্রিয় ব্যাধিসমুদয়ের নাশক ঔষধি তোমার ব্যাধিকে বিনাশ করুক ॥ ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –উদগাতাং ভগবতী ইতি সূক্তেন কুলাগতকুষ্ঠয় গ্রহণ্যাদিরোগশান্তয়ে কি উদকঘটং সম্পত্য অভিমন্যু গৃহাৎ বহির্বাধিতং অবসিঞ্চেৎ। অত্র অপেয়ং ইতি দ্বিতীয়য়া ঋচ্য উক্তব্যাধিশান্তয়ে বুষ্টায়াং রাত্রৌ উক্তপ্রকারেণৈব অবসেকং কুর্যাৎ। বদ্রোঃ ইতি তৃতীয়য়া অর্জুনকাষ্ঠয়ববুসতিলপিঞ্জিকা একীকৃত্য অভিমন্যু বধুীয়াৎ। তথা অনয়ৈব ঋচা আকৃতিলোষ্ঠং বল্মীকমৃত্তিকাং বা জীবপশুচর্মণ আবেষ্ট্য পূর্ববৎ বর্ধীয়াৎ। নমস্তে লাঙ্গলেভ্য ইতি চতুৰ্থা উদঘটং অভিমন্ত্র বৃষভযুক্তস্য কলস্য অধস্তাৎ ব্যাধিতং অবস্থাপ্য তেনোদকেন অবসিঞ্চেৎ। নমঃ সনিসাক্ষেভ্যঃ ইতি পশ্চম্যা শূন্যগৃহে উদকঘটং সম্পত্য জরগর্তং চ অন্তে সম্পাত্য তর্তে শালাতৃণানি আস্তীর্য তত্র ব্যাধিতং স্থাপয়িত্বা তেন ঘটোদকেন আচাময়েৎ অবসিঞ্চেচ্চ৷৷..ইত্যাদি৷ (২কা, ২অ. ৩সূ)।

টীকা –কুলাগত অর্থাৎ বংশগত কুষ্ঠ, ক্ষয়, গ্রহণী ইত্যাদি রোগ-শান্তির নিমিত্ত উদকঘটে অর্থাৎ জলপূর্ণ কলসের জলে এই সূক্তমন্ত্রগুলির দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে রোগীকে গৃহের বাহিরে আনয়নপূর্বক সিঞ্চিত করা কর্তব্য। এই কর্ম উষাকালে করণীয়। অর্জুনবৃক্ষের কাষ্ঠ, যবের ভূষি এবং তিল-মঞ্জরীর দ্বারা প্রস্তুত মণি এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে রোগীর অঙ্গে বন্ধন করণীয়। ইত্যাদি৷৷(২কা, ২অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : দীর্ঘায়ুঃপ্রাপ্তিঃ

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, বিরাট ]

দশবৃক্ষ মুঞ্চেমং রক্ষসসা গ্রাহ্যাঁ অধি যৈনং জগ্রাহ পর্বসু। অথো এনং বনস্পতে জীবানাং নোকমুন্নয়॥১॥ আগাদুদগাদয়ং জীবানাং ব্রাতমপ্যগাৎ। অভূদু পুত্ৰাণাং পিতা নৃণাং চ ভগবত্তমঃ ॥ ২॥ অধীতীরধ্যগাদয়মধি জীবপুরা অগ। শতং হ্যস্য ভিষজঃ সহস্রমুত বীরুধঃ ॥ ৩॥ দেবান্তে চীতিমবিদ ব্রহ্মাণ উত বীরুধঃ। চীতিং তে বিশ্বে দেবা অবিদ ভূম্যামধি ॥ ৪ যশ্চকার স নিষ্করৎ স এব সুভিষক্তমঃ। স এব তুভ্যং ভেষজানি কৃণবদ ভিষজা শুচিঃ ॥ ৫৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে দশবৃক্ষ মণি! তুমি পলাশ, ঔদুম্বর ইত্যাদির দ্বারা নির্মিত। যে জন ব্রহ্ম-রাক্ষসী বা ব্রহ্ম-রাক্ষসের দ্বারা গৃহীত হয়েছে, তাকে (অর্থাৎ সেই জনকে) অমাবস্যা ইত্যাদি পর্বে গ্রহণ করেছে, তাকে তার কবল হতে মুক্ত করো। সেই পুরুষকে মুক্ত করে পুনজীবিত করো। ১।

হে মণি! এই পুরুষ তোমার প্রভাবে গ্রহ হতে মুক্ত হয়ে যাক এবং এই লোকে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করুক। সে আপন ব্যাপারে সমর্থ হোক এবং আপন পুত্রের পিতা তোক। ২৷৷

ব্ৰহ্মগ্রহ হতে বিমুক্ত হওয়ার পর এই পুরুষ তার বিস্মৃত হয়ে যাওয়া বিদ্যা পুনরায় স্মরণ করুক। এই জন। প্রাণিগণের নিবাসস্থলসমূহকে পুনরায় জ্ঞাত হোক ৷ ৩৷৷

 হে মণি! তুমি গ্রহ-বিকার হতে রোগীকে এ মুক্ত করে থাকো। তোমার এই সামর্থ্য ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা জ্ঞাত আছেন। ব্রাহ্মণ, ঔষধসমূহ, বরুণ, মিত্র ইত্যাদি দেবতাও তোমার এই শক্তির জ্ঞাতা, (অর্থাৎ তারাও তোমার এই শক্তির পরিচয় জ্ঞাত আছেন)। ৪

যে মহর্ষি অথর্ব এই মণিবন্ধনের ব্যাপার রচনা করেছিলেন, তিনি এই গ্রহের বিকারকে প্রশমিত করুন। তিনি মহান্ ভিষক (চিকিৎসক বা বৈদ্য ভেষজজ্ঞ)। হে রোগী! পবিত্র জ্ঞানের দ্বারা সম্পন্ন তিনিই তোমার চিকিৎসা করুন। ৫৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –দশবৃক্ষ ইতি সূক্তেন ব্রহ্মগ্রহশান্তয়ে পলাশৌদুম্বরজমূকাম্পীলাদিযু সূত্রোক্তেষু ইচ্ছয়া দশবৃক্ষশকলানি গৃহীত্বা তৈলাক্ষাহিরণ্যেন বেষ্টিতং মণিং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র বীয়াৎ। তথৈব এতৎ সূক্তং দশ ব্রাহ্মণাঃ ব্রহ্মগ্রহগৃহীতং স্মৃশন্তো জপেয়ুঃ। তৎ উক্তং সংহিতা বিধৌ… ইত্যাদি। (২কা, ২অ. ৪সূ)।

টীকা –ব্রহ্মগ্রহশান্তির নিমিত্ত পলাশ-ঔদুম্বর-জম্মু-কাম্পীল্য ইত্যাদি দশটি বৃক্ষের বল্কল-খণ্ড গ্রহণ করে সেগুলির সাথে লাক্ষা, হিরণ্য বেষ্টিত করে মণি প্রস্তুত পূর্বক এই দশবৃক্ষ ইত্যাদি সূক্ত মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে ব্রহ্মগ্রহ-গৃহীত রোগীর অঙ্গে ধারণীয়। তারপর এই সূক্তটি দশজন ব্রাহ্মণ কর্তৃক রোগীর গাত্র স্পর্শপূর্বক জপ করা বিধি ॥ (২কা, ২অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পাশমোচনম

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : নির্ঋতি, দ্যাবাপৃথিবী, ব্রহ্ম, অগ্নি, আপ, সোম, বায়ু, সূর্য ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ইত্যাদি ]

ক্ষেত্রিয়াৎ ত্বা নিঋত্যা জামিশংসাদ হো মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ॥১॥ শং তে অগ্নিঃ সহাদ্ভিরস্তু শং সোমঃ সহৌষধীভিঃ। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিত্যা জামিশংসা হো মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ॥ ২ শং তে বাতো অন্তরিক্ষে বয়ো ধাচ্ছং তে ভবন্তু প্রদিশশ্চতস্রঃ। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসাদ দ্রুহহা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ৷৷ ৩৷৷ ইমা যা দেবীঃ প্রদিশশ্চতম্রো বাতপত্নীরভি সূর্যো বিচষ্টে। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসা দ্রুহহা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃপোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম৷ ৪৷ তাসু দ্বন্তর্জরস্যা দধামি প্র যক্ষ্ম এতু নিঋতিঃ পরাচৈঃ। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসা দ্রুহহা মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ॥ ৫৷৷ অমুকথা যক্ষ্মাদ দুরিতাদবদ্যাদ দ্রুহঃ পাশাদ গ্রাহ্যাশ্চোদমুথাঃ। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসাদ হো মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃপোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তম ॥ ৬৷ অহা অরাতিমবিদঃ সোনমপ্যভূর্ভদ্রে সুকৃতস্য লোকে। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসাদ হো মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা ত্বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ॥ ৭৷ সূর্যমৃতং তমসসা গ্রাহ্যা অধি দেবা মুঞ্চন্তো অসৃজন্নিরেণসঃ। এবাহং ত্বাং ক্ষেত্রিয়ান্নিঋত্যা জামিশংসাদ হো মুঞ্চামি বরুণস্য পাশাৎ। অনাগসং ব্ৰহ্মণা বা কৃণোমি শিবে তে দ্যাবাপৃথিবী উভে স্তাম্ ॥ ৮৷

বঙ্গানুবাদ –হে পুরুষ! তুমি হেন রোগ-পীড়িতকে, মাতা-পিতা হতে (অর্থাৎ কুলপরম্পরানুক্রমে) প্রাপ্ত ক্ষয়, কুষ্ঠ ইত্যাদি ব্যাধি হতে মুক্ত করছি। তোমাকে পাপ হতে, পাপীগণকে দণ্ডদানকারী বরুণের পাশ হতে এবং ব্রহ্মদোষ হতেও মুক্ত করছি। আমি এই সকল মন্ত্রের শক্তির দ্বারা সাধন করছি। এই আকাশ পৃথিবী তোমার মঙ্গল সাধন করুক ॥১॥

হে রোগী! এই পার্থিব অগ্নি জলাভিমানী দেবতাগণের সাথে মিলিতভাবে সুখদানকারী হয়ে থাকেন। কাস্পীল ইত্যাদি ঔষধিসমূহের সাথে সোম তোমাকে সুখী করুক। আমি তোমাকে ক্ষেত্রিয় ব্যাধি এবং নৈঋতি হতে মুক্ত করছি। বরুণের পাশ হতে মুক্ত করে আপন মন্ত্রের শক্তির প্রভাবে আমি তোমাকে পাপরহিত করে দিচ্ছি। এই আকাশ ও পৃথিবী (দ্যাবাপৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতাদ্বয়) তোমার পক্ষে মঙ্গলময় হোক ৷ ২৷৷

হে রোগী! আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থায়ী অন্তরিক্ষে বিচরণশীল বায়ু তোমার মঙ্গল করুক। চারি দিক (বা দিকসমূহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাগণ) তোমার পক্ষে সুখকারী হোক। আমি তোমাকে আক্রোশ, নির্ঋতি, ক্ষেত্রিয় ব্যাধি, গুরু-দ্রোহজনিত পাপ এবং পাপীগণের নিয়ামক বরুণের পাশ হতে মুক্ত করে পাপ-রহিত করে দিচ্ছি। আকাশ-পৃথিবী তোমার পক্ষে, মঙ্গলময় হোক। ৩।

দ্যোতমানা দিসমূহ বায়ুর পত্নী; সূর্য-মণ্ডলের অধিপতি সবিতাদেব তাঁদের সকল দিকে, হতে দর্শন করছেন; সেই দিকসমূহ এবং সবিতা দেবতা তোমার মঙ্গল বিধান করু। আমি তোমাকে আক্রোশ, নির্ঋতি, ক্ষেত্রিয় ব্যাধি, গুরুদ্ৰোহজনিত পাপ এবং পাপীবর্গের নিয়ামক বরুণের পাশ হতে মুক্ত করে পাপরহিত করে দিচ্ছি। আকাশ ও পৃথিবী তোমার পক্ষে মঙ্গলময় হোক। ৪

হে রোগী! আমি তোমাকে রোগরহিত করে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত সেই দিকসমূহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাগণের মধ্যে স্থাপিত করছি। তোমার ব্যাধি দূর হোক, এবং পাপ-দেবতা (নির্ঋতি) তোমার পশ্চাৎ হতে প্রত্যাবর্তন করুন। আমি তোমাকে বান্ধবগণের আক্রোশ, ক্ষেত্রিয়ব্যাধি, পাপদেবতা নির্ঋতি, গুরুদ্ৰোহজনিত পাপ এবং পাপীগণের নিয়ামক বরুণের পাশ হতে মুক্ত করে পাপরহিত করে দিচ্ছি। আকাশ ও পৃথিবী তোমার পক্ষে মঙ্গলময় হোক। ৫

হে রোগী! তুমি ক্ষেত্রিয় ব্যাধি ক্ষয় হয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত হচ্ছে এবং আপন ব্যাধির পাপ, ভগিনী ইত্যাদির আক্রোশ, দেব-দ্রোহ, পাপীগণকে দণ্ডদানকারী বরুণের পাশ এবং ব্রহ্ম-রাক্ষসী ইত্যাদির বন্ধন হতেও মুক্তি প্রাপ্ত হতে চলেছে। আমিও তোমাকে এইগুলি হতে মুক্ত করে মন্ত্রবলে নিষ্পাপ করে দিচ্ছি। আকাশ ও পৃথিবী তোমার পক্ষে মঙ্গলময় হোক ৷ ৬ ৷

হে রোগী! তুমি শত্রুসমান ব্যাধি হতে দূরে যাও (অর্থাৎ শত্রুসমান ব্যাধিগুলি তোমার নিকট হতে দূরে হটে যাক)। তুমি আপন পুণ্যফলের দ্বারা মঙ্গলময় পৃথিবীলোকে আগত হয়েছ। আমি তোমাকে ক্ষেত্রিয় রোগ, আক্রোশ, পাপ এবং পাপীগণের নিয়ামক বরুণের পাশ হতে মুক্ত করছি এবং মন্ত্রবলে নিপাপ করে দিচ্ছি; আকাশ ও পৃথিবী তোমার মঙ্গল করুক। ৭।

 রাহুর (বা স্বভানুর) গ্রাস হতে সূর্যকে মুক্ত করার কালে দেবতাগণ পাপকেও দূর করেছিলেন, সেই রকম আমি তোমার ক্ষেত্রিয়রোগকে দূর করে দিচ্ছি। তোমাকে নির্ঋতি, আক্রোশ, গুরুদ্ৰোহজনিত পাপ এবং বরুণ-পাশ হতে মুক্ত করে নিষ্পাপ করে দিচ্ছি। আকাশ-পৃথিবী তোমার মঙ্গল করুক ॥ ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ক্ষেত্রিয়া ত্বা ইতি সূক্তেন পূর্বোক্তক্ষেত্রিয়রোগশান্তয়ে চতুষ্পথে উদকঘটং সম্পত্য অভিমন্যু ব্যাধিতপর্ব কাস্পীলশকলানি বদ্ধা কুর্চৈঃ সহ তেনোদকেন আপ্লাবয়েদ অবসিঞ্চেৎ…ইত্যাদি৷ (২কা, ২অ. ৫সূ)৷৷

টীকা –এই সূক্তের দ্বারা পূর্বে বর্ণিত ক্ষেত্রিয় ব্যাধিসমূহের শান্তিকল্পে চতুষ্পথে জলপূর্ণ কলস অভিমন্ত্রিত করে রোগীর অঙ্গে কাস্পীল বল্ল-খণ্ড বন্ধন পূর্বক ঐ জলে অভিসিঞ্চন কর্তব্য।…ইত্যাদি। (২কা, ২অ. ৫সূ) ৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *