০১. দীর্ঘঞ্জীবিতীয় – প্রথম অধ্যায়

দীর্ঘঞ্জীবিতীয়
প্রথম অধ্যায়

[সূত্রস্থানের ১, ২, ৩, ৬, ৭, ১৬, ১৭, ২১, ২৬ ও ৩০ অধ্যায়ের নাম সেই সেই অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের প্রথম পদ বা পদদ্বয় লইয়া গঠিত। অধ্যায়ের অবতরণায় সর্ব্বত্রই আত্রেয় ঋষির নাম আছে।
২-চিহ্নিত শ্লোক অধ্যায়ের প্রথম শ্লোক।
এই সংহিতায় বক্তা ভগবান মহির্ষি-অত্রিনন্দন পুনর্ব্বসু এবং শ্রোতা অগ্নিবেশ প্রভৃতি ঋষিগণ। অবতারণায় ‘আমি’ স্থলে ‘আমরা’ পদ ব্যবহার করা হইয়াছে।]
অনন্তর আমরা দীর্ঘঞ্জীবিতীয় নামক অধ্যায় ব্যাখ্যা করিব, এই কথা ভগবান আত্রেয় কহিলেন। [কেহ কেহ বলেন, ‘অথ’ শব্দ মঙ্গলার্থ। চক্রদত্ত বলেন যে, ইহা “আনন্তর্য্য”-বোধকও হইতে পারে। প্রচলিত মতে ইহা ‘বাক্যারম্ভ-বোধক,’ যেমন “অথ শ্রীরামের বনবাস”। যাহা হউক, এস্থলে চক্রদত্তের মত রক্ষা করিয়া “অথাতঃ” শব্দের অর্থ ‘অনন্তর’ লিখিত হইল। অনন্তর অর্থাৎ ‘শিষ্য প্রশ্ন করিলে পর’ এইরূপ অর্থ বুঝিতে হইবে]।১।

কিরূপে দীর্ঘ জীবন লাভ করিতে পারা যায়, তাহা জানিবার জন্যে মহাতপা ভরদ্বাজ মুনি ইন্দ্রের নিকট আয়ুর্ব্বেদ অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। প্রথমতঃ ব্রহ্মা প্রজাপতি দক্ষকে আয়ুর্ব্বেদ শিক্ষা দেন; পরে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নিকট আয়ুর্ব্বেদ শিক্ষা করেন। মহর্ষি ভরদ্বাজ ঋষিদিগের অনুরোধে ইন্দ্রের নিকট গমন করিয়াছিলেন।২।

রোগ সকল প্রাদুর্ভূত হওয়াতে মানবদিগের তপস্যা, উপবাস, অধ্যয়ন, ব্রত ও আয়ুর বিঘ্ন উপস্থিত হইল। তখন জীবদিগের প্রতি দয়াবশতঃ পুণ্যকর্ম্মা মহর্ষিগণ হিমালয় পার্শ্বে সমবেত হইলেন।৩।

এই সভায় অদিরা, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ, কাশ্যুপ, ভৃগু, আত্রেয়, গৌতম, সাংখ্য, পুলস্ত্য, নারদ, অসিত, অগস্ত্য, বামদেব, মার্কণ্ডেয়, আশ্বলায়ন, পারিক্ষি, ভিক্ষু, আত্রেয়, ভরদ্বাজ, কপিঞ্জল, বিশ্বামিত্র, আশ্বরথ, ভার্গব, চ্যবন, অভিজিৎ, গর্গ, শাণ্ডিল্য, কৌণ্ডিল্য, বার্ক্ষি, দেবল, গালব, সাঙ্কৃত্য, বৈজবাপি, কুশিক, বাদরায়ণ, বডিশ, শরলোমা, কাপ্য, কাত্যায়ন, কাঙ্কায়ন, কৈকশেয়, ধৌম, মরীচি, কশ্যপ, শর্করাক্ষ, হিরণ্যাক্ষ, লোকাক্ষ, পৈঙ্গি, শৌনক, শাকুনেয়, মৈত্রেয়, মৈমতাযনি, বৈখানস মুনিগণ, বালখিল্য মুনিগণ ও অন্যান্য মহর্ষিগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁহারা ব্রহ্মজ্ঞান, শান্তি ও নিয়মের নিধিস্বরূপ ও তপস্যার তেজে হুয়মান অগ্নিসমূহের ন্যায় প্রদীপ্ত। [তবে আত্রেয় নামে দুইজন মহর্ষি ছিলেন, তন্মধ্যে একজনের নাম ভিক্ষু আত্রেয়, আর এই সংহিতার উপদেষ্টার নাম কৃষ্ণাত্রেয়। এইরূপ কাল ও সুন্দর দুই জন অগস্ত্য ছিলেন। এইরূপ ১২শ অধ্যায়ে ‘কৃশ’ সাঙ্কৃত্যায়ন, ‘বড়িশ’ ধারার্গব প্রভৃতি নাম সকল বিশেষণযুক্ত দেখিতে পাওয়া যায়। এস্থলে যে ভরদ্বাজের উল্লেখ হইয়াছে, তদ্ভিন্ন কৃষ্ণাত্রেয়ের শিষ্যদিগের মধ্যে একজন ভরদ্বাজ ছিলেন, তাঁহার নাম কুমারশিরা ভরদ্বাজ]।৪।

তাঁহারা সেই স্থানে সুখোপবিষ্ট হইয়া প্রস্তাব করিলেন যে আরোগিতাই ধর্ম্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষলাভের প্রধান উপায়, আর রোগ সকল ধর্ম্মার্থকামমোক্ষ, জীবন ও শ্রেয়ঃ নাশ করিয়া থাকে। অথচ মানবদিগের সে মহান অন্তরায় উপস্থিত। কিরূপে সেই অন্তরায়ের শাস্তি করা যায়, উপস্থিত ঋষিগণ সকলেই তাহা চিন্তা করিতে লাগিলেন।৫।

অনন্তর তাঁহারা ধ্যানচক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখিতে পাইলেন যে, ইন্দ্রই এ বিপদের উদ্ধারকর্ত্তা এবং সেই অমরনাথই রোগশান্তির উপায় স্থির করিয়া দিবেন।৬।

ইন্দ্রের নিকট আয়ুর্ব্বেদ শিক্ষার্থ কে তাঁহার ভবনে গমন করিবেন, এই কথা উপস্থিত হইবামাত্র, ভরদ্বাজ প্রথমেই কহিলেন যে, আপনারা এজন্য আমাকেই নিযুক্ত করুন। তখন ঋষিরাও তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন।৭।

ভরদ্বাজ ইন্দ্রভবনে উপস্থিত হইয়া সুরর্ষিগণ—মধ্যস্থ বলহন্তাকে দীপ্যমান অগ্নিত ন্যায় দর্শন করিলেন। তখন তিনি জয়ার্শীর্ব্বাদ উচ্চারণপূর্ব্বক সুরেশ্বরকে অভিনন্দন করিয়া ঋষিদিগের সাধু প্রস্তাব অবগত করিলেন এবং কহিলেন, হে দেবেশ! ধরাতলে সর্ব্বপ্রাণিভয়ঙ্কর রোগ সকল উপস্থিত হইয়াছে, উহাদের শাস্তির উপায় নির্দ্দেশ করুন।৮।

ভগবান ইন্দ্র ভরদ্বাজের প্রশস্ত অভিপ্রায় অবগত হইয়া তাঁহাকে সংক্ষেপে সমস্ত আয়ুর্ব্বেদ শিক্ষা দিলেন। যে শাস্ত্র পাঠ করিলে রোগের হেতু, লক্ষণ ও ঔষধের জ্ঞান হয়; যে শাস্ত্র সুস্থ ও রোগী উভয়েরই উপযোগী; যাহার প্রধান সূত্র বায়ু, পিত্ত ও কফ এই তিনল যাহা সনাতন পবিত্র; যাহা কেবল পিতামহা ব্রহ্মা সম্যক বুঝিয়াছিলেনল; সেই অপার ত্রিস্কন্ধ আয়ুর্ব্বেদ মহামতি ভরদ্বাজ তন্মনা হইয়া অচিরাৎ অভ্যাস করিয়াছিলেন এবং তৎপ্রভাবে সুখ ও দীর্ঘায়ু লাভ করিয়া ঋষিদিগকে যথাজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন।৯।

ঋষিরাও প্রজাদিগের দীর্ঘায়ু সাধন করিতে ইচ্ছুক হইয়া ভরদ্বাজের নিকট হইতে সেই সর্ব্বহিতকর আয়ুর্ব্বেদ শিক্ষা করিয়াছিলেন। তাঁহারা জ্ঞানবলে উপদিষ্ট বিষয়ের সামান্য ও বিশেষ, দ্রব্য-সমূহের গুণ, দ্রব্যসমূহের স্বরূপ, বস্তি প্রভৃতি কর্ম্ম এবং উহাদের পরস্পর সম্বন্ধ অবগত হইয়া পরম মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু লাভ করিয়াছিলেন। [বস্তি শব্দের অর্থ পিচকারী]।১০।

(প্রথম অধ্যায় অসম্পূর্ণ)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *