1 of 2

হরপার্বতী সংবাদ – প্রবোধকুমার সান্যাল

হরপার্বতী সংবাদ
প্রবোধকুমার সান্যাল

মাথার চুলের রাশির মধ্যে দাঁড়া চিরুনিখানা টানতে টানতে নন্দিতা বললে, বলেছিলাম না তখন? এখন শুনতে পাচ্ছ তো?

টেবিলের কাগজপত্রের উপর কলমটা রেখে মুখ ফিরিয়ে সুপ্রিয় বললে, শুনিনি কিছু, অতো গোলমাল কিসের?

জানো না? আদর দেবার বেলায় তখন তো দশখানা হাত বের করবে। আমি তখনই জানি কপালে দুঃখ আছে! এখন সামলাও!

আরে কি হলো তাই আগে শুনি?

হবে আমার শ্রাদ্ধ। ইচ্ছে হয় বাইরে বড়ো বড়ো কান দুখানা পেতে শোনো গে।

সুপ্রিয় হেসে বললে, বড়ো কান আমার না তোমার?

রাগ করে নন্দিতা বললে, আচ্ছা আমার না হয় বড়ো কান আমি গাধা। আর তুমি? দাঁত বার করে হাসছো যে বড়ো? দাঁত নয় দাঁতাল।

সকাল বেলাতেই ঝগড়া আরম্ভ করলে তো? তবু শুনতে পেলুম না বাইরে গোলমালটা কিসের। সুপ্রিয় বললে, আরে শোনো, চলে যেয়ো না–আচ্ছা গাধার কান নয়, ইঁদুরের কান, হয়েছে তো? এবার শোনো।

এলো খোঁপা পিছন দিকে ফিরিয়ে নন্দিতা দরাজর কাছে এসে দাঁড়ালো। এরদৃষ্টিতে চেয়ে বলে, রাতের জানোয়ার দিনে হয় মানুষ, কেমন?

হাসিমুখে সুপ্রিয় বললে, আর একটু কাছে এসো। ঝগড়াও করবে অথবা হাতের নাগালের বাইরেও থাকবে এ আমার অসহ্য। এসো বলছি হাতের কাছে।

মুখ দেখলে ঘেন্না করে।–বলে মাথায় একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে নন্দিতা চলে গেলো।

কিন্তু পড়াশুনোয় সুপ্রিয়র আর মনোযোগ দেওয়া হলো না। বাইরের গোলমাল তখনও থামেনি। উঠে সে বাইরে এসে দাঁড়ালো। ব্যাপারটা অবশ্য এমন কিছুই নয়। তার বেবি কুকুরটা এমন একটা গণ্ডগোল প্রায়ই বাধিয়ে বসে। কুকুরটা আজকাল ভারী দুষ্টু হয়েছে।

শৈশব থেকে এখানে সে মানুষ, আদরে ও যত্নে লালিত, এখন তার চেহারায় ভঙ্গিতে ও কণ্ঠে এসেছে তারুণ্য, রোখটা বেড়ে গেছে। এই পাড়ায় সে কাকে যেন তেড়ে গিয়েছিলো, সে বাড়ির কর্তা গিয়েছেন ক্ষেপে। বলছেন; পুলিশে খবর দিয়ে এখুনি ফাইন করাতে পারি, তা জানো? ওদের জানিয়ে দিয়ো, বড়োমানুষি ফলাতে হয় ভবানীপুর ছেড়ে বালিগঞ্জে যাক্, এদিকে ওসব চলবে না। আমরা হালদার পাড়ার হেলে, অমন ঢের চালাকি দেখেছি।

সুপ্রিয় বললে, তথাস্তু।

মুখ ফিরিয়ে নন্দিতা বললে, নির্লজ্জ তুমি।

কেন নির্লজ্জ? যেতে বলছে বালিগঞ্জে, তাই যাবো।

সুপ্রিয় বললে, হালদার পাড়ায় যে কুকুর মার খায়, বালিগঞ্জে গিয়ে সে মাথায় চড়ে বসে। জানোয়ারের উপর মমতা আধুনিক কালচারের লক্ষণ। তুমিই তো সেদিন বলেছিলে, জানোয়ার থেকেই মানুষ না মানুষ থেকেই জানোয়ার?

ওরে, এই কষ্ট?

আজ্ঞে বাবু?

ওপরে আয়।

চাকরটা উপরে উঠে এলো। নন্দিতা মুখ ঝামটা দিয়ে বললে, হতভাগা তোকে না বলেছি দিনের বেলা বেবিকে বেঁধে রাখবি?

ভীষণ অভিযোগ জানিয়ে কেষ্ট বললে, তাই তো রেখেছিলুম মা, কিন্তু শেকল ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে।

সুপ্রিয় বললে, ওদের বাড়ির লোককে কামড়াতে গিয়েছিলো, না রে?

আজ্ঞে না বাবু, ও লোকটা আকাট মিথ্যক। আমাদের বেবির সঙ্গে অন্য কুকুরের ঝগড়া বেধেছিল, ওনার ছেলে মারলে ঢিল, তাই কেবল একটু গোঁ গোঁ করেছিলো!

নন্দিতা বললে, অন্য কুকুরের সঙ্গে যদি ঝগড়া করে, তুই দরজা বন্ধ করে রাখিসনে কেন?

রাখি বৈ কি মা—কেষ্ট বললে, বুও সেদিন ছুটে বেরিয়ে গেলো অত বড়ো পাঁচিল ডিঙিয়ে। কী গায়ে জোর! মাদী কুকুররা বাঁধা থাকতে চায় না।

থাম, নিজের কাজে যা বলে নন্দিতা তার আগেই নীচে নেমে গেলো। সুপ্রিয় ততোক্ষণে গা ঢাকা দিয়েছে।

একটু পরেই বেবির দীর্ঘ আর্তনাদে আবার সুপ্রিয়র শান্তি ভঙ্গ হলো। পড়াশুনো রেখে নীচে নেমে গিয়ে দেখলো, চেরীগাছের ছড়িটা হাতে নিয়ে কোমর বেঁধে নন্দিতা বেবিকে বেদম প্রহার করতে আরম্ভ করেছে।

সুপ্রিয় দৌড়ে গিয়ে স্ত্রীর হাতখানা ধরে ফেললে।—আরে কি হচ্ছে? অততা মারলে মরে যাবে যে?

মরুক, ওকে আমি খুন করবো।

ও কি, ও যে অবলা!

ছাড়ো বলছি—

না।

তুমি ওকে অতো আস্কারা দাও কেন?

অবলা যে!

ফিক্‌ করে নন্দিতা হেসে ফেললে। কুকুরটা এই সুযোগে ল্যাজটা গুটিয়ে কাঠের বাক্সর পাশে গিয়ে লুকিয়ে কোঁ কোঁ করে কাঁদতে লাগলো।

হাসিমুখে নন্দিতা বললে, ছড়িগাছা এখনও হাতে আছে সাবধান বলছি।

মুখ টিপে সুপ্রিয় বললে, সাবধানেই তো আছি। আমি মার খেয়ে মরে গেলে কানে হীরের দুল পরতে পারবে তো?

ছড়িগাছা ফেলে দিয়ে নন্দিতা বললে, তাই বলে তোমার কুকুর পাড়ার লোককে কামড়ে আসবে?

আর যারা ঘরের লোককে কামড়ায়?

মুখ ফিরিয়ে বিদ্বেগে নন্দিতা ছড়িগাছা হাতে তুলে নেবার চেষ্টা করতেই সুপ্রিয় সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে গেলো।

নন্দিতা ওখান থেকে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, আমি কামড়াই কেমন? হীরের দুলের ধাপ্পা তুমি আর কত কাল চালাবে শুনি?—এই বলে সে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো।

সুপ্রিয় হাসছিলো। দুজনের ভিতরকার এই অদ্ভুত আর অহেতুক সংঘাতটা প্রায় নিত্য দিনের। এখানে সম্প্রীতির অভাব বলে ভুল ঘটতে পারে, কিন্তু অন্তত ওদের দুজনের মধ্যে সে ভুল ঘটেনি। সুপ্রিয় কাগজপত্রের মধ্যে মুখ রেখে চোখের তারা দুটো উজ্জ্বল করে হাসছিলো। কুকুর কেন, সামান্য ব্যবহারিক খুটিনাটি নিয়েও ওদের দ্বািদ চলে। এই যেমন ধরো সেদিন সুপ্রিয় নিজেই আরম্ভ করলে, শীঘ্র বলো, কেন ছিঁড়ে গেছে জামার বোতাম?

বোতামটা অবশ্য ধোপার বাড়ি থেকেই ছিঁড়ে এসেছে।

কিন্তু নন্দিতা বলে, আমিই ছিঁড়েছি, বেশ করেছি।

এর ক্ষতিপূরণ?

ওঃ গবর্ণর এলেন শাসন করতে! যাও, বেরোও।

বাঁকা চোখে চেয়ে সুপ্রিয় বলে, মনে রেখো আমি যদি পায়ে রাখি তবেই তুমি দাসী।

ঝংকার দিয়ে নন্দিতা বলে, ওরে চরিত্রহীন, দাসীর সঙ্গে কোনো ভদ্রলোক—হঠাৎ সুপ্রিয় দার্শনিক হয়ে ওঠে,—তাই তো ভাবছি, ঠিকই বলেছো। আমি ভাবি চতুরা স্ত্রীলোকের কী অদ্ভুত ইন্দ্রজাল!

আমি চতুরা—?–নন্দিতা বলে, ভিক্ষে চাইতো কে পেছনে পেছনে এসে? সাবধান কিন্তু সুপ্রিয়, আমি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো বলছি।

মুখের হাসি টিপে সুপ্রিয় বলে, আচ্ছা, দাও ভেঙে, দেখি তোমার হাঁড়িতে আর কি কি ‘সন্দেশ’ আছে। আমিও তখন বলবে, হে সমবেত ভদ্রমহোদয়ও ভদ্রমহিলাগণ, আপনারা সকলে শ্রবণ করুশ, একটি বিষধর উর্ণনাভের জালে একটি নিরুপায় মক্ষিকা আবদ্ধ হয়েছিলো। একটি অদ্ভুত চক্রান্তে সে বন্দী!

মুখখানা বিকৃত করে নন্দিতা বলে, মক্ষিকাই বটে, আঁস্তাকুড়ের মাছি।

থুড়ি।–সুপ্রিয় বলে, মক্ষিকা নয়, ভ্রমর। আর সেই ভ্রমরের পাখার গুঞ্জনে কস্তুরাগ শুনে রক্তগোলাপ মাথা দুলিয়ে উঠতো।

অমনি নন্দিতা হেসে ফেলে, আমি মাথা দোলাতুম? কী মিথ্যেবাদী তুমি? কবিতা লিখে পাঠাত কে শুনি?

পুরনো কথাটা সুপ্রিয় স্মরণ করিয়ে দেয়, কবিতার সুখ্যাতি করতে কে শুনি?

নন্দিতা বলে, স্বপ্নকন্যার রূপের প্রশংসা করোনি তুমি? আমরণ উবাসের ভয় দেখিয়েছিলো কে?

উত্তরটা তখনই সুপ্রিয় জুগিয়ে দেয়, হে ঈশ্বর, তুমি সাক্ষী। করি কোঁকড়া চুল আর কালো চোখের তারার কে জানিয়েছিলো সুখ্যাতি গোপনে?

নিজের চেহারার কী গর্ব! বেহায়া!

–বলে তখন নন্দিতা রণে ভঙ্গ দেয়।

আগে নতুন ঘরকন্নায় সুপ্রিয়র মন বসতে চায়নি। আগে মনে হয়নি তাকে ভাবতে হবে বাজার খরচের কথা, তেল-নুনের খবর, চাকরবামুনের মাইনে। এ যেন তার কাছে একটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। নন্দিতাকে সে বরাবর জানিয়ে এসেছে। আকাশের চেহারাটা উজ্জ্বল নীল আর লোয়ার সার্কুলার রোডের রাত্রির দৃশ্যটা হেমরে কুয়াশা আর স্তিমিত আলোকস্তম্ভ মিলিয়ে একটা স্বপ্নজড়ানো রহস্য পথ। নন্দিতার চুলের অরণ্যে বর্ষার যেন ঘনঘটা, আর মুখে শরতের সোনার রৌদ্র ঝলোমলো, আর আঁচলে উচ্ছ্বসিত চৈত্ৰ পূর্ণিমার দোলা। আগে সুপ্রিয় ঘুমিয়ে পড়তে নিবিড় তন্দ্রায় মোটরের মধ্যে নন্দিতাকে ঘিরে, রবারের চাকায় জড়িয়ে যেত কলকাতা শহর পাকে পাকে, ঘন আলিঙ্গনে যেতো মিলিয়ে রেড রোড আর চৌরঙ্গীর। পাতালপথ। আশ্চর্য সেই অতিপরিচিত অপরিচয় কথা বললে যেন ধ্যান ভেঙে যেভো। ঘুমের রসে টস টস করছে কণ্ঠস্বর—যেন দূরের কোন্ এক তপোবনে তপস্বীর মৃদু স্তবগান।

দেওদারের স্তব্ধ বিশাল ছায়ায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চক্ষে সুপ্রিয় বললে, ঘোমটা দাও মাথায়।

না।–নন্দিতা আদরে জড়িয়ে বললে, আড়াল করতে পারবো না তোমাকে।

আড়াল খুলে আবিষ্কার করে নেবো।

লজ্জা করে যে তোমার সামনে ঘোমটা দিতে।

কেন?আগে থেকেই তো দেখে নিয়েছে। আড়ালে রাখার আর আছে কি?

শীতের মধ্যাহ্নে দেওদারের নিভৃত স্তব্ধ ছায়ায় দাঁড়িয়ে নন্দিতা আবার বললে, নস বউ আসে ঘোমটা দিয়ে, সেইজন্য তাকে খুঁজে বার করতে হয়।

সুপ্রিয় বললে, হলো না। রকে যতোই জানতে থাকে ততোই ঘোমটা খোলে মেয়েরা।

বিয়ের পরেও নন্দিতা ঘোমটা দিলো না, সিঁথির সিন্দুর লুকিয়ে রাখলো একপাশে চুলের ঘন অন্ধকারে—অরণ্যের গভীরে যেমন গোপনে থাকে অগ্নিশিখা। এটা কেমন তরো? নন্দিতা বললে, আমাদের তরুণ কৌমার্যকে জাগিয়ে রাখবো দুজনের সামনে কিন্ত্ত করে।

রাখিপূর্ণিমার রাত্রে ওরা স্টীমারে চলেছিলো বদরতলা পেরিয়ে। আকাশের এক পারে শরতের চন্দ্র, অন্যপারে মেঘের মন্দ্র। সুপ্রিয় বললে, পারবে?

তার হাতখানা হারে মধ্যে নিয়ে নন্দিতা নতমুখে বললে, বোধ হয় পারবো না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রতিজ্ঞাই থাকে না।

সুপ্রিয়র কণ্ঠস্বর সেই চন্দ্ৰব্বণ নদীর উল্লোলে উচ্ছ্বসিত দোলায় দুলে উঠলো। অনাদি আর অনন্তকাল তার সেই আবেগের মুহূর্তের উপরে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। বললে, নন্দিতা, ভুলতে ইচ্ছা করে না আমাদের সেই প্রথম পরিচয়ের উল্লারে দোলা, আমার বুকের রক্তে যখন কবিতা লিখেছিলুম আর তুমি সেই রক্তে দুই চরণ রাঙিয়ে এসে দাঁড়ালে।

স্টীমার সেদিন যেন জীবন-মরণ বিদীর্ণ করে চলেছিলো পৃথিবী ছাড়িয়ে অথৈ অজানায়।

সুপ্রিয়র চমক ভাঙলো। এর মধ্যে কখন বেবি নীচে থেকে এসে তার পায়ের তলায় আশ্রয় নিয়েছে। সেদিনটা নেই বটে, কিন্তু এখন এসেছে একটা প্রকাণ্ড ব্যাপ্তি। প্রথম প্রবাহটার সেই খরবেগ এখন মন্থর, জীবনযাত্রাটা দুই দিকে এখন বিস্তৃত, গভীর হয়েছে বলেই উপরটা প্রশান্ত, প্রথম অবস্থাটা চঞ্চল ছিলো বলেই দিশাহারা, এখন লক্ষ্যটা স্থির, তাই নিরুদ্বেগ।

চুড়ির আওয়াজে সুপ্রিয় মুখ ফিরিয়ে তাকালে। নন্দিতা ঘরে এসে দাঁড়িয়ে বললে, পায়ের তলায় এসে বুঝি ঢুকেছে? ওকে আমি তাড়াবো।

সুপ্রিয় বললে, তাড়ালে যাবে কোথায় বেচারা!

কুকুরের নেশা নিয়ে তোমাকে আমি থাকতে দেবো না।

তুমি ছাড়া আমার বুঝি আর কোনো নেশা থাকতে নেই?

না।–বলে নন্দিতা কাছে এলো। সুপ্রিয়র গলাটা তার চুড়িরা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধের ওপর মুখ রেখে বললে, তোমার আর কোনো নেশা আমার। বরদাস্ত হয় না।

সুপ্রিয় বললে, কেন বলো তো? শুনলে তুমি আস্পর্ধা পাবে তাই বলতে ইচ্ছা করে না। আচ্ছা বলল, অভয় দিচ্ছি।

নন্দিতা বললে, সহজে তো পাইনি, পেয়েছি অনেক দুঃখে, তাই কেবলি যারবার ভয়। তুমি আর কিছুতে মন দিতে পাবে না।

সে কি ঈশ্বরচিন্তাও নয়?—সুপ্রিয়র চাহনিতে ভীষণ বিস্ময়।

নন্দিতা তার মুখখানা টিপে ধরে বললে, নাস্তিকের মুখে ঈশ্বরের নাম শোনাও পাপ। আর বলবে?..বলবে আর?

আঃ ছাড়ো, সতী নারীর চুড়ির ঘায়ে মুখখানা কেটে গেলো বুঝি।

বেবি এইবার কোনো আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কা করে পাশ কাটিয়ে ঘর থেকে উঠে বেরিয়ে গেলো। সুপ্রিয় বললে, ওর সঙ্গে তোমার একটা আড়ি আছে।

হেসে নন্দিতা বললে, ও আমার চোখের বালি। ঐ যে বেরিয়ে গেলো, এ বেলায় আর বাড়ি ঢুকবে না।

সুপ্রিয় তার কোমরে বাঁ হাতখানা জড়িয়ে বললে, সংসারের সঙ্গে তুমি মানাতে পারো না, তাই আমার সঙ্গে ঝগড়া বাধাও তাই না?

অমনি গোঁজামিল দিচ্ছ, কেমন?–নন্দিতা বললে, ঠিক উল্টো, তোমাকে বাগ মানাতে পারিনে ঘরকন্নায়, তাই এতো ঠোকাঠুকি। এই যে সকালবেলা থেকে বসে রইলে, করলে কি বলল দেখি?

করতে তো বলোনি?

বলে না দিলে বুঝতে পারো না? বাজার হলো কোত্থেকে, রান্না হলো কি দিয়ে? না হয় জানলুম চাকর-বামুন আছে কিন্তু খোঁজ-খবর রাখা?

সুপ্রিয় বললে, এও আমাকে করতে হবে? বিয়েটা ফিরিয়ে নাও নন্দিতা, এসব আমি পারবো না। বলো কি, বাজারের হিসেব? মুদির ফর্দ? গয়লার পাওনা?

একখানা চেয়ারেই দুজনে ঠেসাঠেসি করে বসল, নন্দিতা হেসে বললে, ধোপর খাতা, বাড়িভাড়া, ঘুঁটে কয়লা —তাছাড়া ডাক্তারি, মনিহারি, স্যাকরা, আরো কতো কি।

আমাকে মুক্তি দাও, নন্দিতা। এসব আমি পারবো না।

নন্দিতা স্বামীর গায়ে মুখখানা বুলিয়ে বললে, আরো রইলো। ব্যাঙ্কের জমাখরচ, পোস্টাপিসের খাতা, ইনসিওরেন্সের পলিসি, পাটকলের শেয়ার, তোমার বাড়ির খাজনা, ইনকাম ট্যাক্স, সব ছাড়িয়ে তোমার চাকরি।

ব্যাকুল হয়ে সুপ্রিয় বললে, সবই ঠিক কিন্তু আমি কী অপরাধ করেছি? বিয়ে ফিরিয়ে নাও, নন্দিতা। বিয়ে আমি করিনি, ঘরকন্না আমি মানিনা আমাকে ছেড়ে দাও, কেঁদে বাঁচি।

নন্দিতা তার চিবুক নেড়ে দিয়ে বললে, তখন মনে ছিলো না?

কখন গো?

দেবদারুর ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে কি প্রতিজ্ঞা করেছিলে?

সুপ্রিয় বললে, তখন কে জানাতে তোমাকে পাওয়া মানে এতোখানি উৎপীড়ন মাথা পেতে নেওয়া? হ্যাঁ, প্রতিজ্ঞা আমি করেছিলুম, মহারানীর সকল দায়িত্ব আমি বহন করবো।

তবে?–নন্দিতা প্রশ্ন করল।

দাঁড়াও, তখন গয়লা-মুদি-ধোপা কয়লাওয়ালা কেউ গিয়ে দাঁড়ায়নি। তোমার প্রেমে মজতে গিয়ে তোমার ঐ বর্বর সন্তানদলের বীভৎস আক্রমণ আমাকে সইতে হবে এমন কথা হয়নি?

নন্দিতা বললে, তবে না হয় চলো পালিয়ে যাই কোথাও?

যেখানেই পালাবো তোমাকে নিয়ে, সঙ্গে থাকবে এই গোলকধাঁধা আর এই প্যারাফারনালিয়া! আর যাবেই বা কোথায় তুমি তোমার এই শরীরে?

স্বামীর কাঁধের ওপর মাথা রেখে নন্দিতা বললে, সব গুলিয়ে দিলে তুমি। কিসে কি হলো আমিও ঠিক বুঝতে পারলুম না।

সুপ্রিয় বললে, পারবে আর কিছুদিন পরে। আমি কিন্তু বলে রাখছি নন্দিতা, হয় বিয়ে ফিরিয়ে নাও আর নয়তো তোমার সন্তানদলের ছোঁয়া থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রেখো। বিয়ে মানে দায়ত্বি, কিন্তু দায়ত্বি মানে ভদ্রজীবনের উপর অত্যাচার নয়। টাকাকড়ি ঘরকান্না সবই তোমার আর তুমি কেবল আমার,–এই শর্ত।

নন্দিতা তার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বললে, তুমি কি সিরিয়াস?

হাফ সিরিয়াস। কারণ মনের কথা হেসে না বললে তোমার দরবারে আবেদনটা পৌঁছবে না।

উঠে দাঁড়িয়ে নন্দিতা বললে, কোনো শর্তে আমি সংসার করতে পারবো না। তোমার যা খুশি তাই করো।

সুপ্রিয় বললে, এই অত্যাচার সইতে গিয়ে যদি আমার মত্যু ঘটে?

ঝংকার দিয়ে নন্দিতা বললে, তবে তোমার চামড়া নিয়ে ডুগডুগি বাজাবো। এই বলে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

বেলা এগারোটার পর সুপ্রিয় খেয়ে দেয়ে আপিস বেরোলো। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেলো প্রবল উৎসাহে নন্দিতা ঘরের কাজে মন দিয়েছে। চাকরটাকে বললে, উপরে আয় একবার আমার সঙ্গে এই বলে সে কোমর বেঁধে একটা প্রবল তাড়নায় কাজে লেগে গেলো। নতুন করে ভাবতে সেও জানে। মেয়েদের সৃষ্টিশক্তি নেই, এমন মবাদ যাদের, নন্দিতা তাদের প্রদি। নন্দিতার অত্যধিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ছুটোছুটি আর হাঁটাহাঁটি ডাক্তারের নিষেধ। কিন্তু আজ তাকে বাগ মানানো যাবে না। স্বামীর মনের প্রবাহটা আবিল হলে স্ত্রীর পক্ষে দুর্দিন কিনা নন্দিতার জানবার দরকার নেই। কিন্তু পুরুষকে ঠিক বুঝতে না পারলেই নারীর মনে জমে ওঠে আশঙ্কা, তখন চুম্বন—আলিঙ্গনের আতিশয্যটাও নির্ভুল নিরাপদ বলে মনে হয় না। পুরুষের প্রাণের চিন্তাধারার সম্বন্ধে নিঃসংশয় হতে না পারলে মেয়েদের স্বস্তি নেই।।

ঘণ্টাখানেক পরে দেখা গেলো অতিশয় পরিশ্রমে নন্দিতার কপালের চুলের আঙটগুলি বেয়ে কোমল কয়েকটি ঘামের ধারা নেমে এসেছে গাল বেয়ে। মুখে ললিত রক্তাভা, যেন ভিতর থেকে প্রভাতের তরুণ সূর্যোদয়ের আভাস। কিন্তু আর একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সবগুলিই ঘামের ফোঁটা নয়, টলটলে অশ্রুর ধারাও নেমে এসেছে তার সঙ্গে। বিড়ম্বিত জীবন তার নয়, কিন্তু এতদিন পরে আজ যেন একটা আকস্মিক ঝাপটায় মনে হচ্ছে, সর্বস্বান্ত হয়েও একজনকে আজও পরিপূর্ণ পাওয়া যায়নি, জটিল রহস্যের আঁকাবাঁকা পথে এখনও রইলো সে অনেক দূরে, হয়তো ঘোমটা সরিয়ে ধীরে ধীরে তাকে আবিষ্কার করলেই পাওয়া সহজ হতো। সংশয়ের দ্বন্দ্বে আর বুঝতে না পারার অনুতাপে নিরুপায় নন্দিতার মনে কেমন যেন একটা আসন্ন ভূমিকম্পের থরো থরো কম্পন এপার থেকে ওপার পর্যন্ত শঙ্কায় আকুল করে তুলেছে। ওদের ভালোবাসার আগডালে সুগন্ধ ফুল ধরেছে সন্দেহ নেই, কিন্তু মৃত্তিকার নীচে মূল এখনও গভীরে নামেনি। ফুল ফোঁটার চেয়ে শিকড়ের দিকে কোনো নজর নেই।

সন্ধ্যার সময় সুপ্রিয় ফিরে এলো। সে আসে একটা সমারোহ সঙ্গে নিয়ে। মোটা টাকা মাইনে পায়, কিন্তু রোজ রোজ নতুন নতুন মোটরে চড়বার লোভে সে দামী ব্যাক্সি চড়ে আসে—মোটর আজো কেনেনি। সঙ্গে আসে মনিহারি, ব্যাঙ্কের খাতাপত্র, চৌরঙ্গী গ্রীলের খাবার, নিউমার্কেটের ফুল—কোনো কোনো দিন মুখরোচক অসাময়িক দামী আনাজ-তরকারী।

গাড়ি থেকে নেমে এসেই স্ত্রীর দিকে চেয়ে সে একেবারে বিস্ময়ে স্তম্ভিত। আজ কি ভুল করে সে অন্য বাড়ি ঢুকেছে?

কাছে এসে নন্দিতা বললে, দেখছো কি বোকার মতন? এই বলে মাথার টুপিটা খুলে নিলো।

সুপ্রিয় শুধু বললে, হতবুদ্ধি!

অমন হাঁ করে থাকলে আমি কিন্তু সব টান মেরে খুলে ফেলবো।

আজ তার কপাল থেকে সিঁথির ভিতর অবধি সুদীর্ঘ বিস্তৃত সিন্দুররেখা।

পরনে গঙ্গারঙের রেশমী রাঙাপাড় শাড়ি, আঁচলে চাবির গোছা, মাথায় ঘোমটা। সুপ্রিয় রাঁধুনী বামুন আর চাকরটাকে লুকিয়ে নন্দিতাকে কাছে টেনে নিলো। বললে, নতুন কিনা, তাই ভালো লাগছে।

নন্দিতা বললে, আজ কিন্তু তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।

সে কি, গাড়ি আনলুম যে তোমার জন্যে! তুমিই তো বেড়াতে যাবার জন্য পাগল, আমাকেই তো তুমি তিষ্ঠতে দাও না।

না, চলো ছাদে বেড়াবে, আজ পূর্ণিমা।

গাড়ি ফিরে গেলো। ঠিক বোঝা গেলো না–নতুন করে মিলনের আনন্দ, অথবা আজ অভিনব উপায়ে পরস্পরকে জানার আগ্রহ? রমণীর বেশ ছেড়ে আজ হঠাৎ গৃহলক্ষ্মীর ছদ্মবেশ কেন।

গলা ধরাধরি করে উপরে উঠে গিয়ে সুপ্রিয় বললো, রস ঢেলে দিয়ে আজ মাতাল করবে, না অমৃত ঢেলে ঘুম পাড়াবো নন্দনবাসিনী?

সুপ্রিয়র বোতাম খোলা কোটটা মুখের উপর টেনে নন্দিতা বললে, রসটা হেঁকে নিলেই অমৃত।

সঙ্গীত না সুভাষণ?

দুটো মিলিয়ে যা হয়–কবিতা! ঘরে চলো।

ঘরে ঢুকে সুপ্রিয় অবাক হয়ে গেলো। যে ঘরে সকালবেলা সে ছিলো, এ ঘর সে নয়। তার চকচকে চোখের তারা চারিদিক থেকে ঠিকরে পড়তে লাগলো। যা ছিলো তা সবই আছে, কিন্তু ভিন্ন চেহারায়, ভিন্ন ভঙ্গিতে পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে নয়, প্রাণ-বৈচিত্রটাই যেন সজীব। এ দেয়ালের ছবি ও দেয়ালে, এধারের খাট ওধারে, নতুন হয়ে এসেছে ফুলদানি, চায়না গ্লাস ঘুরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণে, মখমলের জাজিমে রেশমী তাকিয়া পোট্রেটগুলোর বদলে ল্যান্ডস্কেপ এসে সমস্ত ঘরখানার ভিতরে কল্পনার একটা অসীম ব্যাপ্তি এনে দিয়েছে।

পর্দা সরিয়ে ঘরের ভিতর দিয়ে অন্য ঘরে নন্দিতা স্বামীকে নিয়ে গেলো। এ আবার নতুন জগৎ। এধারে সোফা আর ইজিচেয়ারের সেট, ওধারে পিয়ানো। দেয়ালের গায়ে গায়ে বইয়ের আলমারি, কোণে কোণে পিতল আর পাথরের পুতুল মাঝখানে কাঁচের টেবলের উপর চীনা আর তিব্বতী কিউরিয়ে, জানালার

স্ক্রীনগুলিতে সুন্দর কারুকলা চিত্রিত।

সুপ্রিয় বললে, পেলে কোথায় এত!

নন্দিতা বললে, সবই ছিলো।

দেখতে পাইনি তো?

চোখ ছিলো না তোমার। এসো, এবার কাপড় ছাড়বে।

শোবার ঘরে এনে সুপ্রিয়কে খাটের উপর বসিয়ে নন্দিতা তার পায়ের জুতো আর মোজা খুলে নিলে। ঠাকুর খাবার নিয়ে এলো হাতে করে। কচুরি, নিমকি আর সন্দেশ দেখে সুপ্রিয় বললে, কি রকম যেন একটা ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। হঠাৎ আজকে এমন রাজোচিত আতিথেয়তা আরম্ভ হলো কেন ব্যাপার কি বলো তো ঠাকুর?

ঠাকুর টিপাইয়ের উপর খাবার আর জল রেখে যাবার সময় বলল, সবই মা তৈরি করেছেন।

লক্ষণ ভালো নয়। যুদ্ধের চেয়ে সন্ধির চেহারা দেখলেই আমার ভয় করে।

কেন?–নন্দিতা হাসি মুখে প্রশ্ন করলে।

মনে হয় তখন বুঝি তোমাকে আর চিনতে পাচ্ছিনে।

ঝগড়া করে কী হবে?

সুপ্রিয় বললে, এতেও আমার দুশ্চিন্তা। তুমি চুপ করে থাকলেই মনে হবে দূরে সরে যাচ্ছে। তোমার মুখ বন্ধ হলেই আমার হবে পরাজয়। আমি সীতাও চাইনে, দ্রৌপদীও নয়, আমি চাই সুভদ্রাকে। আমার হাতে ধনুর্বাণ, তার হাতে অশ্ববহ্মা!

হয়েছে। ‘এবার বীরের তুনুতে লহ তনু।’ এই বলে উঠে নন্দিতা হাত ধুয়ে স্বামীর মুখে একখানা কচুরি পুরে দিলো, তারপর সুপ্রিয়ের কোমরের বোতামগুলি খুলে ট্রাউজার ছাড়িয়ে নিয়ে ধুতিখানা জড়িয়ে দিতে লাগলো।

মাস পাঁচেক পরে অত্যন্ত উদ্বেগ নিয়ে সুপ্রিয় সেদিন সন্ধ্যার সময় হাসপাতালে খবর নিতে এলো। ডাক্তার হাসিমুখে বললেন, কেবিনে যান, আপনার স্ত্রী ভালো আছেন।

মুখের উপরকার অস্বস্তির ছায়া আনন্দে রূপান্তরিত হলো। সুপ্রিয় সোজা দোতলায় উঠে গিয়ে সাত নম্বর কেবিনে ঢুকলো। নার্স নমস্কার জানিয়ে বললে সন্দেশ আনুন।

সুপ্রিয় হাসলো, তারপর আড়ষ্ট পা দুখানা টেনে নন্দিতার কাছে এসে দাঁড়ালো। আজ আবার স্ত্রীর সঙ্গে তার নতুন করে পরিচয়। লজ্জা নয়, কিন্তু আনন্দের অসহনীয় অস্বস্তিতে নন্দিতা বালিসে মুখ লুকিয়ে রইলো; মিনিট দুই পরে দেখা গেলো, তার নাক বেয়ে অশ্রুর ধারা গড়িয়ে পাশের নবজাত সুন্দর শিশুর ছোটো বালিশটিও ভিজে গেছে।

নার্স বাইরে গেলো। মাথার কাছে বসে রুমাল দিয়ে সুপ্রিয় নন্দিতার চোখ মুছিয়ে দিলো। হাতখানা একটু কাঁপলো। রমণী রূপান্তরিত জননীতে—আজ তাকে মোগ্য সম্রম না দিলে আর চলবে না। সুপ্রিয়ের হাতখানা আবার সন্তর্পণে ফিরে এলো। কিন্তু অশ্রু কেন আজ? হয়তো নন্দিতার সেই জীবনটা এবার মুছে গেলো—সেই দেওদারের ছায়াপথ, প্রিয় সান্নিধ্যে সেই অপরূপ জ্যোৎস্নার অবগাহন, চৌরঙ্গীর আবেশ-বিহ্বল স্বপ্নলোক, তরুণ কৌমার্যের মালঞ্চে বাসকশয্যা। সেই জীবনের বিচ্ছেদ-বেদনা আর এই নূতন জীবনের আনন্দ—হয়তো এই অশ্রুতে তার বিচিত্র সংমিশ্রণও ছিলো।

সুপ্রিয় নতমস্তকে নূতন শিশুটির দিকে চেয়ে রইলো।

অনেকক্ষণ পরে মুখ ফিরিয়ে নন্দিতা বললে, বাড়ির খবর কি? ঠাকুর চাকর আছে তো?

আছে।

ঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া হয়?

হ্যাঁ। ভাঁড়ারের চাবিটা নিজের কাছে রাখো তো?

হ্যাঁ।

একটু চুপ করে থেকে নন্দিতা বললে, কুকুরটার খোঁজ পেলে কিছু?

নিশ্বাস ফেলে সুপ্রিয় সজাগ হয়ে বললে, হ্যাঁ, দশবারো দিন পরে কাল সকালে দেখি, আমাদের বার বাড়ির সিঁড়ির তলায়।

পোড়ামুখী ছিলো কোথায় এ ক-দিন?

সুপ্রিয় হেসে বললে, আরে সেই কথাই তো বলছি। তোমার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলো। চেহারা দেখে সন্দেহ হলো, সিঁড়ির তলায় ঢুকে দেখি বেবির তিনটে বাচ্চা হয়েছে।

অ্যাঁ?

বাচ্চা গো। একটা নয়, তিন তিনটে। আর তাকে তাড়াতে তোমার মন উঠবে না দেখো। কী সুন্দর দেখতে হয়েছে বাচ্চাগুলো!

নন্দিতা মুখ ফিরিয়ে নিঃশব্দে পড়ে রইলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *