হযরত ইসহাক (আ)

হযরত ইসহাক (আ)

হযরত ইসহাক (আ) একজন বিশিষ্ট নবী। তিনি মহান নবী হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর দ্বিতীয় পুত্র। তাঁহার বংশতালিকা হইল : ইসহাক ইবন ইব্রাহীম ইবন তারিহ (বা আযর) ইবন নাহ্র ইব্‌ন সারুগ ইবন রাউ ইবন ফালিগ ইব্‌ন আবির ইবন শালিখ ইব্‌ন আরফাখশাজ ইবন সাম ইবুন নূহ (আ) (ই কুতায়বা, আল-মাআরিফ, পৃ. ১৯)। সাম ইব্‌ন নূহ (আ)-এর বংশধরগণ ইতিহাসে সামী বা সেমিটিক জাতি হিসাবে পরিচিত। সুতরাং হযরত ইসহাক (আ)-এর পূর্বপুরুষগণ সেমিটিক জাতিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তবে সাম ইব্‌ন নূহ (আ) এবং হযরত ইসহাক (‘আ)-এর মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল এক হাজার বৎসরেরও অধিক (মুহাম্মাদ আলী আস-সাবুনী, আন-নুবুওয়াত ওয়াল-আম্বিয়া, পৃ. ১৪৬)।

নমরুদের অগ্নিকুণ্ড হইতে বাহির হইয়া হযরত ইব্রাহীম (আ) ভ্রাতুস্পুত্র হযরত লূত (আ)-সহ তাঁহার পরিবার-পরিজনকে লইয়া দেশত্যাগ করিয়া ইরাকের বাবিল শহর হইতে শাম (সিরিয়া) চলিয়া যান। বিদেশ-বিভূঁইয়ে পৌঁছিয়া তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। অবশেষে তিনি কানআন (ফিলিস্তীন) অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতে লাগিলেন (ইব্‌ন কুতায়বা, পৃ. ২০)। তাঁহার একান্ত বাসনা ছিল এবং তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট দুআও করিয়াছিলেন :

“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সকর্মপরায়ণ সন্তান দান কর” (৩৭ : ১০০)।

তাহার প্রথমা স্ত্রী সারা বিন্ত লাবান ইব্‌ন বাছবীল ইবুন নাহুর, যিনি ইবরাহীম (আ)-এর পরিবারের সহিত সম্পৃক্ত ছিলেন (ইব্‌ন হাবীব, আল-মুহার, পৃ. ৩৯৪; আল-মাসউদী, মুরূজুয-যাহাব, ১খ., পৃ. ৮৫)। তাঁহার কোন সন্তান ছিল না। অতঃপর তাঁহার দ্বিতীয় স্ত্রী হাজার (হাজিরা)-এর গর্ভে তাহার প্রথম সন্তান হযরত ইসমাঈল (আ) জন্মগ্রহণ করেন। অতঃপর দীর্ঘকাল পর কানআনে অবস্থানকালেই তাঁহার প্রথমা স্ত্রী সারার গর্ভে তাঁহার দ্বিতীয় সন্তান হযরত ইসহাক (আ) জন্মগ্রহণ করেন।

হযরত ইসহাক (আ)-এর জন্ম-সংক্রান্ত আল-কুরআনে যে ঘটনা বিবৃত হইয়াছে উহার সারাংশ হইল : হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট কিছু সম্মানিত মেহমান (ফেরেশতা) আসিলেন। তিনি তাঁহাদের জন্য একটি মাংসল গো-বস ভাজা লইয়া আসিলেন এবং তাঁহাদিগকে খাইতে বলিলেন, কিন্তু তাঁহারা হাত গুটাইয়া রাখিলেন। ইহাতে ইব্রাহীম (আ) কিছুটা ভীত হইয়া পড়িলেন। তাঁহারা বলিলেন, “ভয় করিবেন না, আমাদিগকে লূত (‘আ)-এর মহল্লায় প্রেরণ করা হইয়াছে”। ইহার পর তাঁহারা হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলেন। আল-কুরআনে উল্লেখ করা হইয়াছে :

“তাহার স্ত্রী তথায় দণ্ডায়মান ছিল। অতঃপর আমি তাহাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম” (১১ : ৭১)।

আরও উল্লেখ করা হইয়াছে :

“তখন তাহার স্ত্রী চিৎকার করিতে করিতে সম্মুখে আসিল এবং গাল চাপড়াইয়া বলিল, এই বৃদ্ধা বন্ধ্যার সন্তান হইবে” (৫১ : ২৯)?

তখন হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর বয়স ছিল এক শত বৎসর এবং হযরত সারার বয়স ছিল নব্বই বৎসর। হযরত ইসহাক (আ)-এর বয়স যখন আট দিন তখন তাঁহাকে খন্না করানো হয় (হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, ১খ., ২৫০)। হযরত ইসহাক (আ) হযরত ইসমাঈল (আ) হইতে বয়সে ১৩/১৪ বৎসর ছোট ছিলেন।

কানআনের হেবরন (অপর নাম আল-খালীল)-এ হযরত ইসহাক (আ) জন্মগ্রহণ করেন বলিয়া অনুমান করা হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ) মিসর হইতে প্রত্যাবর্তনের পর সেখানে বসবাস শুরু করেন (ইবন খালদূন, তারীখ, ১খ., ৫২)।

হযরত ইসহাক (আ)-এর জন্মের সুসংবাদ হযরত ইব্রাহীম (আ) ও তাঁহার স্ত্রীকে বৃদ্ধ বয়সে দেওয়া হইয়াছিল। ইসহাক শব্দটির ইানী (হিব্রু) উচ্চারণ হইল য়াসহাক। আর আসহাক শব্দটির আরবী সমার্থক শব্দ হইল আদহাক (মূল অর্থ হাসি)। হিব্রু ভাষায় [ ] অক্ষরের ব্যবহার নাই। তাই [ ]-এর পরিবর্তে [ ] ব্যবহৃত হইয়াছে এবং এ আর; উচ্চারণের দিক হইতে খুবই কাছাকাছি। কালক্রমে [ ] পরিবর্তিত হইয়া [ ]-এ রূপান্তরিত হয়। এই ভিত্তিতে ইসহাক তাহার মাতার দেওয়া নাম । হযরত সারা বলিয়াছিলেন, “আল্লাহ তাআলা আমাকে হাসাইলেন (আসহাক) এবং আমার সহিত যাহারা ইহা শ্রবণ করিবে তাহারাও হাসিবে” (আদি পুস্তক, ২১৪৭)। কুরআন কারীমে উল্লিখিত হইয়াছে, ৬২, ৫, “তখন তাহার স্ত্রী দাঁড়াইয়াছিল এবং সে হাসিল” (১১ : ৭১)।

হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে যখন হযরত ইসহাক (আ)-এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তাঁহার স্ত্রী, হযরত সারা, যিনি নিকটেই দণ্ডায়মান ছিলেন, খুশীতে হাসিতে লাগিলেন। ইংরেজী ভাষায় ইসহাক-কে Isaac (আইজাক) নামে অভিহিত করা হইলেও প্রাচ্যবিদদের এই ধারণা সঠিক নহে যে, তাওরাতেও ইসহাক (আ)-এর এই নাম উল্লিখিত হইয়াছে।

ইসরাঈলী রিওয়ায়াতে (কাহিনীতে) উল্লিখিত হইয়াছে যে, হযরত ইসহাক (আ) “ঈদুল ফাসহ”-এর দিন জন্ম গ্রহণ করেন। আর মুসলিম ঐতিহাসিকদের রিওয়ায়াত অনুযায়ী তিনি ‘আশুরা-র রাত্রে জন্মগ্রহণ করেন (আছ-ছালাবী, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৬০; আল-কিসাঈ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ১০০)। প্রকৃতপক্ষে ইহার কোনটিই ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত হয় না। অবশ্য বাইবেলের আদিপুস্তক ৪৫ অনুচ্ছেদে এতটুকু উল্লেখ আছে যে, হযরত ইসহাক (আ)-এর জন্মের এক বৎসর পূর্বে হযরত সারাকে তাঁহার জন্মের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ইসরাঈলী রিওয়ায়াতে উল্লিখিত আছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আ) ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে আহার না করাইয়া নিজে খাদ্য গ্রহণ করিতেন না। একবার পনের দিন পর্যন্ত কোন মেহমান আসিল না। অতঃপর একদিন তিনজন অপরিচিত লোক আসিয়া হাযির হইলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ) তাহাদের জন্য একটি ভুনা গো-বৎস লইয়া আসিলেন। তাহারা বলিলেন, আমরা মূল্য পরিশোধ না করিয়া কোন কিছু খাইব na। আর সে মূল্য হইল, প্রথমে আমরা আল্লাহর নিয়ামতের শোকর আদায় করিব এবং শেষে তাঁহার প্রশংসা করিব। অবশেষে তাঁহারা তাহাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলেন। কুরআন কারীমেও এই ঘটনার উল্লেখ রহিয়াছে, তবে কিছুটা ভিন্নভাবে :

“আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ লইয়া ইব্রাহীমের নিকট আসিল। তাহারা বলিল, ‘সালাম। সেও বলিল, ‘সালাম। সে অবিলম্বে এক কাবাব করা গো-বৎস আনিল। সে যখন দেখিল তাহারা উহার দিকে হাত বাড়াইতেছে না, তখন তাহাদিগকে অবাঞ্ছিত মনে করিল এবং তাহাদের সম্বন্ধে তাহার মনে ভীতির সঞ্চার হইল। তাহারা বলিল, ভয় করিও না, আমরা দূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হইয়াছি। তখন তাহার স্ত্রী দাঁড়াইয়া ছিল এবং সে হাসিল। অতঃপর আমি তাহাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তীতে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম” (১১ : ৬৯-৭১)।

“তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত অতিথিদিগের বৃত্তান্ত আসিয়াছে কি? যখন উহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, সালাম। উত্তরে সে বলিল, ‘সালাম। তাহার মনে হইল, ইহারা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইব্রাহীম তাহাদিগকে কিছু না বলিয়া তাহার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি মাংসল গো-বৎস ভাজা লইয়া আসিল ও তাহাদের সামনে রাখিল এবং পরে বলিল, তোমরা খাইতেছ না কেন? ইহাতে উহাদিগের সম্পর্কে তাহার মনে ভীতির সঞ্চার হইল। উহারা বলিল, ভীত হইও না। অতঃপর উহারা তাহাকে এক গুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল” (৫১ : ২৪-২৮)।

হযরত ইবরাহীম (আ) ও তাহার স্ত্রী হযরত সারা উভয়েরই বৃদ্ধাবস্থায় সন্তান জন্মদানের বিষয়টিতে হযরত সারা আশ্চর্যান্বিত হইয়াছিলেন। কুরআন কারীমে বলা হইয়াছে :

“সে (সারা) বলিল, কী আশ্চর্য! সন্তানের জননী হইব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ! ইহা অবশ্যই একটি অদ্ভুত ব্যাপার” (১১ : ৭২)।

আরও বলা হইয়াছে :

 “(ইবরাহীম বলিল) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাককে দান করিয়াছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনিয়া থাকেন” (১৪ : ৩৯)।

অন্যত্র বলা হইয়াছে :

“আমরা তাহাকে (ইব্রাহীমকে) দান করিয়াছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকূব এবং প্রত্যেককেই করিয়াছিলাম সকর্মপরায়ণ” (২১ : ৭২)।

কুরআন কারীমের উল্লিখিত আয়াতসমূহে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে যে পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হইয়াছিল তিনিই হযরত ইসহাক (আ)। সূরা হূদ-এ (আয়াত ৭১) তাঁহার নামও স্পষ্টরূপে উল্লিখিত হইয়াছে। প্রাচ্যবিদগণ তাওরাতের ভাষ্য মিরাস (R. Gena, ৫৫, Tachuna Gen., ৪০)-এর কোন কোন বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়া বলেন যে, সেই মেহমানগণ হযরত ইবরাহীম (আ)-কে ইহাও বলিলেন যে, ইহাকে আল্লাহর নামে কুরবানীর নিমিত্ত যবেহ করিতে হইবে। এই বর্ণনা সঠিক নহে। অনুরূপভাবে এই বর্ণনাও সঠিক নহে যে, ইসহাক (আ)-এর বয়স সাত বৎসর হইলে ইব্রাহীম (আ) তাঁহাকে বায়তুল মাকদিস লইয়া যান, সেখানে তাঁহার প্রতি স্বপ্নদেশ হইল যে, উহাকে আল্লাহর রাহে কুরবানী কর। সকালে তিনি একটি ষাঁড় আল্লাহর নামে যবেহ করিলেন । কিন্তু রাত্রে পুনরায় গায়েব হইতে আওয়ায আসিল, “আল্লাহ ইহার চেয়ে অধিক মূল্যবান বস্তুর কুরবানী চাহেন।” সুতরাং তিনি এইবার একটি উট যবেহ করিলেন। পরের রাত্রে তিনি এই আওয়ায শুনিলেন, আল্লাহ তোমার পুত্রের কুরবানী চাহেন। প্রাচ্যবিদগণ উপরিউক্ত ঘটনাকে ইসহাক (আ)-এর সহিত সম্পৃক্ত বলিয়া ধারণা করত তাহাকে যাবীহুল্লাহ (আল্লাহর নামে কুরবানীকৃত) বলিয়া আখ্যায়িত করেন। অথচ তাওরাত ও কুরআন কারীমের ঘটনা দ্বারা এই উভয় রিওয়ায়াতই প্রত্যাখ্যাত হইয়া যায় ।

আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে তাঁহার একমাত্র পুত্র”-কে কুরবানী করিবার নির্দেশ দিয়াছিলেন, যাহা বাইবেলেও (আদি পুস্তক) উক্ত হইয়াছে “Thine Only Son” (Genesis, 22 : 2)। আর ইসহাক (আ) ইব্রাহীম (আ)-এর একমাত্র পুত্র ছিলেন না। তাঁহার পূর্বে ইসমাঈল (আ) জন্মগ্রহণ করেন। Genesis, ১৬ ও ১৬ অনুযায়ী ইব্রাহীম (আ)-এর ৮৬ বৎসর বয়সে ইসমাঈল (আ)-এর জন্ম এবং Genesis ২১:৫ অনুযায়ী তাঁহার ১০০ বৎসর বয়সে ইসহাক (আ)-এর জন্ম। অতএব ইসমাঈল (আ) ইসহাক (আ) হইতে ১৪ বৎসরের বড় ছিলেন। সুতরাং আল্লাহর এই নির্দেশকালে ইসমাঈল (আ)-ই ছিলেন তাঁহার একমাত্র পুত্র। অতএব তাহাকেই যবেহ করার নির্দেশ দেওয়া হয় (বিস্তারিত দ্র, ইসমাঈল (আ) শীর্ষক নিবন্ধী।

কুরআন কারীমের যে সকল আয়াতে ইসমাঈল ও ইসহাক (আ)-এর কথা বর্ণনা করা হইয়াছে সেখানে প্রথমে ইসমাঈল এবং পরে ইসহাক-এর কথা উল্লেখ করা হইয়াছে (দ্র. ২ : ১৩৩, ১৩৬, ১৪০, ৩ : ৮৪; ৪৪ ১৬৩; ১৪ ও ৩৯)। তদুপরি হযরত সারাকে যখন ইসহাক-এর সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন ইবরাহীম (আ) ফিলিস্তীনে এবং ইসমাঈল (আ) হিজাযে বসবাসরত ছিলেন। সুতরাং ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, হিজাযে অবস্থানরত ইসমাঈল (আ)-ই যাবীহুল্লাহ। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর দুই পুত্রকে দুইটি খেতাবে ভূষিত করিয়াছেন, একজনকে– ২ (ধৈর্যশীল পুত্র সন্তান, ৩৭ : ১০১) এবং অপরজনকে l : (জ্ঞানী পুত্র সন্তান, ১৫ : ৫৩)। আর জ্ঞানী পুত্র দ্বারা যে হযরত সারার গর্ভজাত ইসহাক (আ)-কে বুঝানো হইয়াছে তাহা কুরআন কারীমের বর্ণনায় সুস্পষ্ট। ইসহাক (আ) সম্পর্কে ইরশাদ হইয়াছে, “অতঃপর উহারা তাহাকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল” (৫১ ও ২৮; আরও দ্র. ১৫ : ৫৩)। অপরদিকে আল্লাহ তাআলা ইব্রাহীম (আ)-এর দুআর পরিপ্রেক্ষিতে যে “ধৈর্যশীল পুত্র”-এর সুসংবাদ দিয়াছিলেন তিনি ছিলেন তাঁহার প্রথম পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ)। আর তাঁহার সম্পর্কেই যবেহ-এর কথা বলা হইয়াছে (৩৭ : ৯৯-১০৭)।

কুরআন কারীমে অন্যত্র আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ)-এর নামোল্লেখ করিয়া তাহাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত বলিয়াছেন। ইরশাদ হইয়াছে :

“এবং স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফল-এর কথা; তাহাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল” (২১ : ৮৫)। সুতরাং ইহা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, হযরত ইসমাঈল (আ)-ই যাবীহুল্লাহ। খলীফা উমার ইব্‌ন আবদিল আযীয (র) একদা ইসলামে দীক্ষিত একজন ইয়াহূদীকে এই সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিল, “ইয়াহূদীরা জানে যে, ইসমাঈল (আ)-ই প্রকৃত যাবীহ, কিন্তু তাহারা আপনাদের প্রতি ঈর্ষাবশত ইহা স্বীকার করে না” (ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ., পৃ. ১৬০)।

হযরত ইসহাক (আ)-এর জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। ইসরাঈলী রিওয়ায়াতও বেশীর ভাগই যবেহ-এর ঘটনায় পরিপূর্ণ। তিনি ফিলিস্তীনের হেবরন নামক স্থানে তাহার পৈতৃক আবাসস্থলেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন (আস-সাবুনী, আন-নুবুওয়াতু ওয়াল-আম্বিয়া, পৃ. ২৪৪; তাফহীম, ২খ., পৃ. ৩৮১)। সেখানে তিনি তাঁহার পিতার স্থলাভিষিক্তরূপে বসবাস করিতে থাকেন। হযরত ইবরাহীম (আ) ইসমাঈল (আ)-কে মক্কায়, ইসহাক (আ)-কে ফিলিস্তীনে (কানআনে) ও লূত (আ)-কে মরূ সাগর (জর্দান) অঞ্চলে তাহার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। হযরত ইসহাক (আ)-এর জীবনকাল আনুমানিক খৃ.পূ. ১৭৬১ হইতে ১৫৮১ সন পর্যন্ত। কুরআন কারীমে তাঁহার নবুওয়ত সম্পর্কে ইরশাদ হইয়াছে :

“আমি তাহাকে (ইব্রাহীমকে) সুসংবাদ দিয়াছিলাম ইসহাকের, সে ছিল একজন নবী, সৎকর্মপরায়ণদিগের অন্তর্ভুক্ত। তাহাকে এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করিয়াছিলাম” (৩৭ ১১২-১১৩)।

“স্মরণ কর আমার বান্দা ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা, উহারা ছিল শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী” (৩৮ :৪৫)।

ইমাম বুখারী ‘আম্বিয়া” অধ্যায়ে হযরত ইসহাক (আ) সম্পর্কে ইব্‌ন উমার ও আবু হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের উল্লেখ করিয়াছেন :

আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (স)-কে জিজ্ঞাসা করা হইল, সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সর্বাধিক খোদাভীরু ব্যক্তিই সর্বাধিক সম্মানিত। তাঁহারা (সাহাবীগণ) বলেন, আমরা এই বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতেছি না। তিনি বলিলেন, সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি হইলেন হযরত ইউসুফ (আ)। তিনি হইলেন আল্লাহর নবী এবং তাহার পূর্বপুরুষগণও হইলেন বংশপরম্পরায় আল্লাহ্ নবী। অর্থাৎ তাঁহার পিতা হযরত ইয়াকূব (আ) এবং তাঁহার পিতা হযরত ইসহাক (আ) এবং তাঁহার পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ সকলেই আল্লাহর নবী ছিলেন (আল-বুখারী, আল-জামি, ১খ., পৃ. ৪৭৮)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) বর্ণনা করেন, নবী (স) বলেন : বংশপরম্পরায় সম্মানিত ব্যক্তি হইলেন হযরত ইউসুফ (আ), তাঁহার পিতা হযরত ইয়াকুব (আ), তাঁহার পিতা হযরত ইসহাক (আ) এবং তাঁহার পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ); সবাই ছিলেন সম্মানিত (আল-বুখারী, আল-জামি, ১খ., পৃ. ৪৭৯)।

অনুমান করা হয় যে, চল্লিশ বৎসর বয়সে হযরত ইসহাক রিক্কা (Rebeeca)-এর সহিত বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন (আল-ইয়াকূবী, তারীখ, ১খ., পৃ. ২৮)। হযরত ইব্রাহীম (আ) হযরত ইসহাক (আ)-কে নিজ গোত্রে বিবাহ করিতে ওসিয়ত করিয়াছিলেন। তাই তিনি তাঁহার চাচা নাহুর ইব্‌ন তারেখ-এর মেয়ে রিফকাকে বিবাহ করেন (ইব্‌ন কুতায়বা, পৃ. ২২)। কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত তাহাদের কোন সন্তান হয় নাই। অবশেষে বিশ বৎসর পর ‘ঈসু (বা ‘ঈস) এবং ইয়াকুব নামে দুই পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন (আল-ইয়াকূবী, ১খ., ২৯; ইবন খালদূন, ১খ., ৫৮)। তাঁহারা উভয়ে ছিলেন জমজ। বলা হইয়াছে যে, প্রথমে ঈসুর জন্ম হয় এবং পরে ইয়াকূব-এর। রিওয়ায়াতে উল্লিখিত আছে যে, আজীবন উভয়ের মধ্যে কিছুটা মন কষাকষি ছিল। পিতা অনেকটা ঈসূর প্রতি ছিলেন আকৃষ্ট, আর মাতা ইয়াকুবের প্রতি। এই সব কাহিনীর উপর গুরুত্ব দেওয়া সঙ্গত নহে। কারণ ইহা ইসরাঈলী কাহিনী। বানূ ইসরাঈল তাহার নবীগণকে তাহাদের নিজেদের জীবনধারার আলোকে মূল্যায়ন করিয়াছে। কিছু সংখ্যক মুসলিম ঐতিহাসিক ও জীবন-চরিত রচয়িতাও নির্বিচারে সব ধরনের রিওয়ায়াতই বর্ণনা করিয়াছেন। তাহারা প্রকৃত ঐতিহাসিক তত্ত্বের অনুসন্ধান আদৌ করেন নাই, করিলেও খুব অল্প।

ইয়াহূদী বিশ্বকোষ Jewish Encyclopaedia-তে উল্লিখিত হইয়াছে যে, ইসহাক (আ)-এর বাসস্থান লাহায়রে (Lahai-rai) নামক বির (কূপ) অঞ্চলে। যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তখন আল্লাহ তাআলা তাঁহাকে মিসর না যাইতে ইঙ্গিত করিলেন এবং ফিলিস্তীনের সীমানায় অবস্থান করিতে বলিলেন। আরও বলিলেন যে, সেখানে তিনি এবং তাঁহার সন্তান-সন্তুতি খুবই সুখে-শান্তিতে বসবাস করিকেন। তাই হযরত ইসহাক (আ) জিওয়ার (Bera)-এর সন্নিকটে ফিলিস্তীনীদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতে থাকেন এবং সেখানেই চাষাবাদ করিতে থাকেন। সেখানে ধীরে ধীরে তিনি এতই উন্নতি লাভ করেন যে, ফিলিস্তীনবাসী তাঁহার প্রতি হিংসা করিতে লাগিল। কিন্তু হযরত ইসহাক (আ) তাহাদের এই দুর্ব্যবহার হাসিমুখে বরদাশত করিতেন। অবশেষে তিনি “বিরুস-সাবআ” (Beer-Sheba) চলিয়া যান। সেইখানে আল্লাহ তাআলা তাহাকে বরকত দেন। এইখানে হযরত ইসহাক (আ) একটি ইবাদতখানা (বায়ত ঈল=আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন। ইহার পর তিনি এতই প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করেন যে, ফিলিস্তীনের বাদশাহও তাহার সহিত সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হন।

কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর বংশধরদেরকে নবুওয়াত ও কিতাব দান করার ঘোষণা দিয়াছেন :

“আমি তাহার বংশধরদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব দান করিয়াছি” (২৯ ও ২৭)। বস্তুত হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দুই পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) ও হযরত ইসহাক (আ) এবং তাঁহাদের বংশধরগণের মধ্যেই হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর আবির্ভাবের সময় পর্যন্ত নবুওয়াত সীমাবদ্ধ থাকে। হযরত মুহাম্মাদ (স) ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর। হযরত লুত (আ) ছাড়া অন্য সকল নবী ছিলেন হযরত ইসহাক (আ)-এর বংশধর। ঈসূ-এর বংশধরের মধ্যে দুইজন নবী হযরত আইয়ূব (আ) ও তাঁহার পুত্র হযরত যুল-ফিল্‌ল (আ)-এর আবির্ভাব ঘটে। অন্যদিকে হযরত ইয়াকূব (আ), যাঁহার অপর নাম ছিল ইসরাঈল (আল্লাহর বান্দা) । তিনি ছিলেন ইসরাঈলীদের আদি পিতা। তাঁহার পুত্র হযরত য়ুসুফ (আ) মিসরে গমন করিলে তাহার অন্যান্য ভাইয়েরাও তথায় চলিয়া যান। তাঁহারাই হইলেন বন্ ইসরাঈল। কয়েক শতাব্দী মিসরের ফিরআওনের অধীনে থাকিয়া অবশেষে হযরত মূসা (আ)-এর নেতৃত্বে বনূ ইসরাঈল পুনরায় ফিলিস্তীনে প্রত্যাবর্তন করে।

ইসরাঈলী কল্পিত কাহিনীতে উল্লেখ আছে যে, হযরত ইসহাক (আ)-এর বৃদ্ধ জীবন বেশী সুখে অতিবাহিত হয় নাই। তাঁহার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল। পুত্রগণ অর্থাৎ ঈসূ এবং হযরত ইয়াকুবের বিরূপ সম্পর্ক লইয়াও তিনি চিন্তিত ও মনক্ষুণ্ণ থাকিতেন। হযরত ইসহাক (আ)-এর দুই ছেলের মধ্যে বড়জন ঈসূ শিকার করিয়া বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে খাওয়াইতেন। ছোট ছেলে ইয়াকুব মাতা-পিতার সঙ্গে গৃহেই অবস্থান করিতেন। একদিন ঈসূ শিকার লাভে ব্যর্থ হইয়া ক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় বাসায় আসিয়া ইয়াকুবের কাছে কিছু খাবার চাহিলেন। ইয়াকূব তাহাকে বলেন, “ফিলিস্তিনীদের রীতি অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ সন্তানই মাতা-পিতার উত্তরাধিকার লাভ করে। তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারের দাবি ত্যাগ কর তাহা হইলে তোমাকে খাবার দিব।” ঈসূ তাহার দাবি ত্যাগ করেন এবং ইয়াকূব তাহার খাবারের ব্যবস্থা করেন।

হযরত ইসহাক (আ) বৃদ্ধ ও ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন হইয়া পড়িলে তাহার দ্বারা একবার ঈসূ এজন্য বরকত লাভের দোআ করিতে চাহিলেন। ইসহাক (আ) শিকার করিয়া উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করিয়া তাঁহার নিকট উপস্থিত করিতে ঈসূকে আদেশ করিলেন। রিকা একথা শুনিয়া বরকত লাভের জন্য ইয়াকূবকে উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করিয়া পিতার নিকট উপস্থিত করিতে পরামর্শ দেন। ইয়াকুব মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী পিতার অজান্তে কৌশলে বরকত লাভে সমর্থ হন। ঈসূ এ ঘটনা জানিতে পারিয়া খুবই মর্মাহত হন। ফলে দুই ভ্রাতার মধ্যে বিরোধ ক্রমেই বাড়িতে থাকে।

রিফকা ইয়াকূবকে তাঁহার মামা লাবান-এর সঙ্গে বসবাস করিতে পরামর্শ দেন। সুতরাং ইয়াকুব লানের নিকট যাইয়া বসবাস করিতে থাকেন এবং তথায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অন্যদিকে ঈসূ আপন চাচা হযরত ইসমাঈল (আ)-এর কাছে চলিয়া যান এবং তথায় চাচাত বোন বাশামা (বা বাছিমা)-কে বিবাহ করেন এবং নিজ পরিবারসহ ‘সায়ীর নামক স্থানে গিয়া বসবাস করতে থাকেন। ঈসূ তথায় ‘আদুম নামে খ্যাতি লাভ করেন। তাই ঈসূর বংশধর বনূ আদুম নামে পরিচিতি লাভ করে (হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, ১খ., ২৫১-২৫২)। তবে এই ধরনের কাহিনী বস্তৃত নবী-রাসূলগণের শানের পরিপন্থী (তু. জামীল আহমাদ, আবিয়া-ই কুরআন, ১খ., পৃ. ২৮৫)। হযরত ইসহাক দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স ছিল ১৮০ বৎসর (ইবন কুতায়বা, পৃ. ২২)। তিনি হেবরন (আল-খালীল)-এ ইনতিকাল করেন এবং সেখানেই হযরত ইব্রাহীম (আ) ও হযরত সারা (রা)-র পার্শ্বে তাহাকে দাফন করা হয়।

গ্রন্থপঞ্জী : (১) কুরআন মজীদ, স্থা, তাফসীরসহ.; (২) আয-যামাখশারী, ১খ., ২২৪; (৩) আল-বায়দাবী, ১খ., ২৩৩; (৪) বাইবেল, স্থা., ঢাকা; (৫) আছ-ছালাবী, কাসাসুল আম্বিয়া, কায়রো ১৩১২ হি., পৃ. ৪৮-৬০; (৬) আল-কিসাঈ, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ১৩৬-১৪০; (৭) আত-তাবারী, তারীখ, লাইডেন সং, ১খ., ২৭২-২৯২; (৮) আল-মাসউদী, মুরূজুয যাহাব, প্যারিস ১৮৬১ খৃ., ১খ., পৃ. ৮৫; (৯) আল-য়াকূবী, তারীখ, বৈরূত ১৩৭৯ হি., ১খ., ২৮-২৯; (১০) ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফীত-তারীখ, ১খ., ৮৭-৮৯; (১১) ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া, ১খ., ১৬০-৬২; (১২) ইবন খালদূন, তারীখ, মিসর ১৯৩০ খৃ., ১খ., ৫৮; (১৩) ইবন হাবীব, আল-মুহার, হায়দরাবাদ ১৯৪২ খৃ., পৃ. ৩৯৪; (১৪) ইবন কুতায়বা, আল-মাআরিফ, বৈরূত ১৯৮৭ খৃ., পৃ. ২০-২৫; (১৫) আল-বুখারী, আল-জামি আস-সাহীহ, দিল্লী ১৩৭৭ হি., ১খ., ৪৭৮; (১৬) আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, কায়রো ১৯৫৩ ৪৯৫ খৃ., পৃ. ১০৩-৫; (১৭) মুহাম্মাদ আলী আস-সাবুনী, আন-নুবুওয়াত ওয়াল-আম্বিয়া, মক্কা ১৯৮০ খৃ., পৃ. ১৪৬, ২৪৪-৪৫; (১৮) সায়্যিদ আবুল আলা মাওদূদী, তাফহীমুল কুরআন, ২খ., ৩৮১; (১৯) Grunebaum, Beitrage, পৃ. ১১০-১২০; (২) Ency. Hebrew, নিউইয়ক, ৫, ১৮, শিরো, Isaco; (২২) Jewish Ency., শিরো.; (২৩) Ency. of Islam, ৪খ., ১০৯-১০; (২৪) মাওলানা হিফজুর রহমান, কাসাসুল কুরআন, করাচী ১৩৬৯ হি., ১খ., পৃ. ২৪৮-২৫৪।

ড. রফিক আহমদ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *