হযরত ইদরীস (আ)

ইদরীস (আ)

হযরত ইদরীস (আ) মর্যাদাবান একজন মহান নবী। তাঁহার উপর আল্লাহ তাআলা ত্রিশটি সহীফা নাযিল করিয়াছেন। কুরআন মজীদের একাধিক স্থানে আল্লাহ তাআলা তাঁহার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। কুরআন মজীদে; ১২(১৯ : ৫৬) তাঁহাকে নবী ও সিদ্দীক বলিয়া আখ্যায়িত করা হইয়াছে এবং তাঁহাকে শামিল করা হইয়াছে ধৈর্যশীলদিগের মধ্যে ২২ : (২১ : ৮৫)। তিনিই সর্বপ্রথম কলমের সাহায্যে লেখা আবিস্কার করিয়াছেন, আরও আবিষ্কার করিয়াছেন সেলাই এবং ওযন ও পরিমাপের পদ্ধতি। অস্ত্রশস্ত্রের আবিস্কার তাঁহার আমল হইতেই শুরু হয়। তিনিই সর্বপ্রথম মানব যাঁহাকে আল্লাহ তাআলা মুজিযা হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অংক শাস্ত্র শিক্ষা দিয়াছিলেন। তাঁহার নবুওয়ত ও রিসালাতের উপর ঈমান অনিয়ন করা আমাদের উপর অপরিহার্য। কেননা কুরআনের অকাট্য আয়াত দ্বারা তাঁহার রিসালাত ও নবুওয়ত প্রমাণিত। (রূহুল মাআনী, ১৬শ খণ্ড, পৃ. ১০৫; আন্-নুবুওয়াতু ওয়াল-আম্বিয়া, পৃ. ২৯৯)।

জন্ম ও বংশপরিচয়

হযরত ইদরীস (আ)-এর নাম, বংশপরিচয় এবং তাঁহার সময়কাল সম্পর্কে ইতিহাসবেত্তা ও জীবনীকারগণের মধ্যে মতপার্থক্য রহিয়াছে। কেহ কেহ বলেন, তিনি হযরত নূহ (আ)-এর দাদা। কাহারো মতে ইদরীস শব্দটি মূল অক্ষর [ ] ধাতু হইতে নিষ্পন্ন হইয়াছে। ইহার অর্থ পাঠ করা। ইদরীস (আ) যেহেতু আল্লাহর কিতাব বেশী বেশী পাঠ করিতেন তাই তাঁহাকে ইদরীস নাম দেওয়া হইয়াছে। বস্তুত এই কথাটি সহীহ্ নয় (কাশশাফ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩)। হিব্রু ও সুরয়ানী ভাষায় তাঁহার নাম আখনূখ অর্থাৎ ইদরীস [ ] শব্দ হইতে নিষ্পন্ন হয় নাই। কেননা অনারব কোন শব্দ অন্য কোন শব্দ হইতে [ ] হওয়া সর্বজনবিদিত নহে। অধিকন্তু ইহাকে এ ধরা হইলে তাহা—[ ] (রূপান্তরবিহীন বিশেষ্য) হইতে পারে না। অথচ এই শব্দটি—[ ] (রূহুল মাআনী, ষষ্ঠদশ খণ্ড, পৃ. ১০৫)। আল্লামা যামাখশারী (র) বলেন, [ ] শব্দটিকে [ ]-এর ওযনে ধরা হইলে ইহাতে এক সবব [ ] পাওয়া যায়। কিন্তু এক … দ্বারা কোন ইসম [ ]– (সীমিত রূপান্তরযোগ্য বিশেষ্য) হইতে পারে না। এহেন অবস্থায়ও শব্দটি, [ ] হওয়া তাঁহার (অনারব) হওয়ার দলীল। সম্ভবত আরবী ভাষার কাছাকাছি অন্য কোন ভাষায় শব্দটির অর্থ এই হইতে পারে। কিন্তু বিষয়টি যথাযথ উপলব্ধি না করিয়াই হয়তো বর্ণনাকারী এই কথা বলিয়া দিয়াছেন যে, ইহা, ধাতু হইতে নিষ্পন্ন হইয়াছে। কাজেই এই ব্যাখ্যা বিশুদ্ধ নয় (কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯০; আল্‌-জামি লিআহকামিল কুরআন, ১১ খ., পৃ., ৭৯; তাফসীরে রূহুল মাআনী, ১৬খ., পৃ. ১০৫)। দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকদিগেরও এই বিষয়ে মতপার্থক্য রহিয়াছে। এক দলের মতে তাহার নাম ছিল হারমাসুল হারামিসা [ ]। তিনি মিসরের আনাফ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রীকরা হারামাসকে আরমীস বলে। অপর এক দলের মতে তাহার নাম গ্রীক ভাষায় তারমীস। তারমীসকে হিব্রু ভাষায় হানূখ বা খানূখ (৪) ও আরবী ভাষায় আখনূখ বলা হয়। আর কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা তাঁহাকে ইদরীস বলিয়া নামকরণ করিয়াছেন। তৃতীয় আরেক দলের মতে হযরত ইদরীস (আ) বাবিল (ব্যবিলন) শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই লালিত-পালিত হন (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ., ২৫; কাসাসুল কুরআন, ১খ., পৃ. ৯৩-৯৪)।

তাঁহার বংশধারা নিম্নরূপ : ইদরীস ইব্‌ন ইয়ারিদ ইব্‌ন মাহলাঈল ইবন কায়নান ইব্‌ন আনুশ (মতান্তরে ইয়ানিশ) ইবন শীছ ইব্‌ন আদম (আ) (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৪; কাসাসুল কুরআন, পৃ. ৯০; আল-জামি লিআহকামিল কুরআন, ১৬ খ., পৃ. ৭৯)।

কাহারো মতে হযরত ইদরীস (আ) হযরত নূহ (আ)-এর পূর্বেকার নবী নহেন, বরং বনী ইসরাঈল বংশীয় নবীগণের একজন।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। তাহারা বলেন, ইয়াস (আ)-এর নামই ইদরীস (আ)। তাহার এইরূপ উক্তির কারণ সেই রিওয়ায়াতটি যাহা ইমাম যুহরী (র) হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে মিরাজ প্রসঙ্গে বর্ণনা করিয়াছেন । উহাতে উল্লেখ আছে যে, জিব্রাঈল (আ) যখন নবী করীম (স)-কে সঙ্গে লইয়া হযরত ইদরীস (আ)-এর পাশ দিয়া অতিক্রম করিলেন, তখন তিনি বলিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই। আপনাকে মারহাবা। তিনি হযরত আদম এবং হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর মত “হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! মারহাবা” কথাটি বলিলেন না। ইহাতে বুঝা যায় যে, হযরত ইদরীস (আ) যদি আখন্মুখ হইতেন তবে তিনিও তাহাদের ন্যায় “হে নেক সন্তান” বলিতেন।

এই রিওয়ায়াতটি উল্লেখ করার পর হাফিয ইব্‌ন কাছীর (র) বলেন, এই প্রমাণটি দুর্বল। কেননা এই দীর্ঘ হাদীছটিতে রাবী হয়তো শব্দগুলো সম্পূর্ণরূপে স্মরণ রাখিতে পারেন নাই অথবা (২) হযরত ইদরীস (আ) হয়তো বিনয়বশত নবী করীম (স)-এর সম্মানার্থে এইভাবে বলিয়াছেন, নিজের পিতৃত্ব সম্পর্কটির কথা এখানে উল্লেখ করেন নাই (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১খ., পৃ. ১১২-১১৩)।

হযরত আদম ও শীছ (আ)-এর পর হযরত ইদরীস (আ)-ই সর্বপ্রথম নবী। তাঁহার প্রতি আল্লাহ তাআলা ৩০টি সহীফা নাযিল করিয়াছেন। তিনিই সর্বপ্রথম মানব যাহাকে আল্লাহ্ অআলা মুজিযা হিসাবে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অংক শাস্ত্রের জ্ঞান দান করিয়াছিলেন। হযরত ইদরীস (আ)-ই সর্বপ্রথম কলমের সাহায্যে লেখা আবিস্কার করেন এবং সর্বপ্রথম কাপড় সেলাই করেন। প্রতিবার সুই চালাইবার সময় তিনি একবার “সুবহানাল্লাহ” বলিতেন। তালে তাহার তুলনায় উত্তম আমলকারী আর কেহই ছিল না (মুখতাসার তাফসীরে ইবন কাছীর, ২খ., পৃ. ৪৫৬) এবং সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করেন। তাহার পূর্ববর্তী লোকেরা জীব-জন্তুর চামড়া পরিধান করিত। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতিও তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন এবং অস্ত্রশস্ত্রের আবিষ্কার ও ব্যবহার তাঁহার আমল হইতেই শুরু হয়। তিনি অস্ত্র তৈরি করিয়া কাবীল গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন (রূহুল মাআনী, ১৬ খ., পৃ. ১০৫)।

শারীরিক গঠন : হযরত ইদরীস (আ)-এর শারীরিক গঠন ও আকৃতি কেমন ছিল, এই সম্বন্ধে উল্লেখ রহিয়াছে যে, তিনি গোধূম বর্ণের, মধ্যমাকৃতির, পূর্ণ অবয়ববিশিষ্ট, পাতলা চুলবিশিষ্ট, সুদর্শন এবং ঘন দাড়ি বিশিষ্ট ছিলেন। তাঁহার চেহারা অত্যন্ত সুন্দর, বাহুদ্বয় মযবুত, কাঁধ খুবই প্রশস্ত এবং শরীরের হাড় শক্ত ছিল। তিনি হালকা পাতলা গড়নের ছিলেন। তাঁহার চক্ষুদ্বয় ছিল উজ্জ্বল, কাল। তিনি ছিলেন কথা-বার্তায় ধীরস্থির, নিরবতাপ্রিয় ও চাল-চলনে গাম্ভীর্যপূর্ণ এবং চলার সময় তিনি দৃষ্টি অবনমিত রাখিতেন। তিনি চিন্তাশীল ও অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী ছিলেন এবং রাগের সময়ে শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা বারবার ইশারা করিতেন। তাঁহার আংটির উপর এই বাক্যটি অংকিত ছিলঃ

“আল্লাহর প্রতি ঈমানের সহিত ধৈর্য অবলম্বন বিজয়ের পথ সুগম করিয়া দেয়।” তাঁহার কোমরবন্দের উপর লিখিত ছিলঃ

“প্রকৃত ঈদ ফরযসমূহ আদায় করার মধ্যে নিহিত, দীনের পূর্ণতা শরীআতের সহিত সংশ্লিষ্ট আর মানবতার পূর্ণতাই দীনের পূর্ণতা।”

তিনি জানাযার নামাযের সময় যে পাগড়ী ব্যবহার করিতেন তাহাতে নিম্নের বাক্যটি লিখিত ছিলঃ

“ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে নিজের নফসের প্রতি দৃষ্টি রাখে। আর আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দরবারে মানুষের জন্য সুপারিশ হইল তাহার নেক আমলসমূহ” (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৭-২৮; কাসাসুল কুরআন, ১খ., পৃ. ৯৮-৯৯)।

তাওরাতে হযরত ইদরীস (আ) সম্বন্ধে বিশদ কোন বিবরণ পাওয়া যায় না। সেখানে শুধু এতটুকু উল্লেখ রহিয়াছে যে, হনোক পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে মথুশেলহের জন্ম দিলেন। মথুশেলহের জন্ম দিলে পর হনোক তিন শত বৎসর ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন এবং আরও পুত্র কন্যার জন্ম দিলেন। সর্বশুদ্ধ হনোক তিন শত পঁয়ষট্টি বৎসর রহিলেন। হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না (আদি পুস্তক, পৃ. ৭)। কুরআন মজীদে হযরত ইদরীস (আ)

কুরআন মজীদের শুধু দুই জায়গায় হযরত ইদরীস (আ) সম্বন্ধে উল্লেখ রহিয়াছে :

“এবং স্মরণ কর এই কিতাবে ইদরীসের কথা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী এবং আমি তাহাকে উন্নীত করিয়াছিলাম উচ্চ মর্যাদায়” (১৯ : ৫৬)।

“এবং স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফুল-এর কথা; তাহাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল এবং তাহাদিগকে আমি আমার অনুগ্রহভাজন করিয়াছিলাম। তাহারা ছিল সৎকর্ম পরায়ণদিগের অন্তর্ভুক্ত” (২১ : ৮৫-৮৬)।

নবুওয়াত প্রাপ্তি দীনের প্রচারে আত্মনিয়োগ

হযরত শীছ (আ)-এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তাঁহার সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক লোক ঈমান আনয়ন করিয়াছিল । অতঃপর তাহারা নিজ গোত্রের অপরাপর মুশরিক ও মূর্তিপূজকদের দেখাদেখি হযরত শীছ (আ)-এর মূর্তি তৈরি করিয়া উহার পূজা করিতে থাকে। এইভাবে তাহারা পথভ্রষ্ট হইয়া মুশরিকে পরিণত হইয়া যায়। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের হিদায়াতের জন্য তাহাদের মধ্য হইতে হযরত ইদরীস (আ)-কে নবুওয়ত দান করেন এবং তাহাদেরকে হিদায়াতের নির্দেশ দান করেন (আনওয়ারে আম্বিয়া, পৃ. ২১)।

নবুওয়ত প্রাপ্তির পর তিনি তাহাদিগকে আল্লাহর দীন, একত্ববাদ এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানান। নেক আমলের মাধ্যমে তিনি লোকদিগকে জাহান্নামের আগুন হইতে মুক্তির জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তাহাদেরকে বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে (আইয়ামে বীদ) সওম পালনের জন্য হুকুম করেন। পার্থিব দৌলতের প্রতি আসক্ত না হওয়া, সর্ব ব্যাপারে আল ও ইব্‌নসাফ কায়েম করা এবং আল্লাহর দীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য তিনি তাঁহার সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন। দুর্বল ও অসহায় লোকদিগকে সাহায্য করার নিমিত্ত যাকাত প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন। উপরন্তু তিনি তাহাদিগকে নাপাকী হইতে পবিত্রতা অর্জন করা, কুকুর ও শূকর ভক্ষণ না করা এবং মাদক দ্রব্য গ্রহণ না করার ব্যাপারে কঠোর বিধান প্রদান করেন। এমনিভাবে বিশেষ বিশেষ সময়ে ঈদ তথা আনন্দ উৎসব উদযাপন এবং বিশেষ ধরনের নেক আমল করার জন্য তিনি তাকীদ করিতেন । হযরত ইদরীস (আ) তিন ধরনের বস্তু আল্লাহর নামে মানত ও কুরবানী করার জন্য নির্দেশ দিতেন ও সুগন্ধি দ্রব্যের ধুয়া, জীব কুরবানী করা এবং মদ।

দার্শনিকদের বিপরীতমুখী বর্ণনায় বিস্মিত হইতে হয়। একদিকে তাহারা হযরত ইদরীস (আ)-এর শরীআতে মদ হারাম বলিয়া উক্তি করেন এবং অপর দিকে তিনি আল্লাহর নামে মদ উৎসর্গ করিবার জন্য উপদেশ দিতেন বলিয়াও বর্ণনা করেন। এতদ্ব্যতীত মৌসুমের প্রথম ফল ও ফুল আল্লাহর নামে উৎসর্গ করাকেও প্রয়োজনীয় মনে করা হইত। ফুলের মধ্যে গোলাপ, শস্য বীজের মধ্যে গম এবং ফলের মধ্যে আঙ্গুরের অগ্রাধিকার ছিল (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৬-২৭; আনওয়ারে আম্বিয়া, পৃ. ২১; কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৬-৯৭)।

হিজরত

নবুওয়াত প্রাপ্তির পর হযরত ইদরীস (আ) দীনের প্রচার ও প্রসারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাইয়া যান। কিছু সংখ্যক লোক তাহার কথা বিশ্বাস করে এবং তাহার উপর ঈমান আনয়ন করে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তাঁহার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং তাহার বিরোধিতা শুরু করে। ফলে হযরত ইদরীস (আ) নিজ এলাকা হইতে হিজরত করিয়া অন্যত্র চলিয়া যাইতে মনস্থ করিলেন এবং নিজের অনুগামীদেরকেও হিজরত করিতে বলিলেন। ইদরীস (আ)-এর অনুসারিগণ যখন এই কথা শুনিলেন তখন তাহারা জন্মভূমি ত্যাগ করা দুঃসাধ্য কাজ মনে করিয়া বলিল, বাবিল শহরের মত অনুরূপ শহর আমরা কোথায় পাইব?

অতঃপর হযরত ইদরীস (আ) তাহাদিগকে সান্ত্বনা দিয়া বলিলেন, আমরা যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করি তবে আমাদিগকে সেইখানেও রিযিক দান করা হইবে। অতঃপর তিনি ও তাঁহার অনুসারিগণ মিসরের উদ্দেশে বাবিল শহর ত্যাগ করিলেন। এই ক্ষুদ্র দলটি যখন নীল নদ অববাহিকার সুজলা-সুফলা অঞ্চল দেখিতে পাইল তখন তাহারা আনন্দিত হইল এবং এই উৎকৃষ্ট স্থানটিকে নির্বাচন করিয়া তাহারা নীল নদের পার্শ্বেই বসবাস করিতে লাগিল। এখানে পৌঁছিয়া হযরত ইদরীস (আ) আল্লাহর পয়গাম তথা সকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করার দায়িত্ব পালনে ব্রতী হইলেন। কথিত আছে যে, তাঁহার যমানায় বাহাত্তরটি ভাষা প্রচলিত ছিল। তিনি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে উপরিউক্ত সব ভাষায়ই অভিজ্ঞ ছিলেন এবং তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাহাদের ভাষায় দাওয়াত দিতেন এবং শিক্ষা দান করিতেন (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৫-২৬; কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৪-৯৫)।

হযরত ইদরীস (আ)-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা

নবুওয়াতের সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা হযরত ইদরীস (আ)-কে জাগতিক বহু জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারীও করিয়াছিলেন। হযরত ইদরীস (আ)-ই সর্বপ্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রবর্তন করিয়াছিলেন। আল্লাহ্ তাআলা তাঁহাকে সৌরজগত এবং নক্ষত্রসমূহের পারস্পরিক আকর্ষণ ও বিকর্ষণের গুরুত্ব ও রহস্য শিক্ষা দিয়াছিলেন। তারীখুল হুঁকামা গ্রন্থে উল্লেখ রহিয়াছে যে, হযরত নূহ (আ)-এর সময়ের তুফানের পূর্বে জ্ঞানের যত প্রসার ও ব্যাপ্তি ঘটিয়াছিল তাহার প্রধান পুরোধা ছিলেন হযরত ইদরীস (আ)। একদল জ্ঞানী ব্যক্তি এমনও ধারণা করেন যে, দর্শন শাস্ত্রের পুস্তকসমূহে যে সমস্ত জ্ঞান-গভীর আলোচনা এবং নক্ষত্রসমূহের গতিবিধির যে বিবরণ পাওয়া যায় তাহা সর্বপ্রথম হযরত ইদরীস (আ)-ই বলিয়াছেন। আল্লাহর ইবাদতের জন্য ইবাদতখানা নির্মাণ, চিকিৎসা শাস্ত্রের আবিষ্কার, যমীন ও আসমানের যাবতীয় বস্তু সম্বন্ধে যথোপযোগী কবিতা রচনার মাধ্যমে স্বীয় মতামত প্রকাশও তাঁহারই অমর কার্যাবলীর অন্তর্গত। তিনি সর্বপ্রথম তুফান সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন, আমাকে দেখান হইয়াছে একটি “আসমানী মুসীবত”, যাহার পানি ও আগুন ভূমণ্ডলকে গ্রাস করিবে । ইহা দেখিয়া তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের এবং শিল্প ও প্রযুক্তির বিলুপ্তি সম্বন্ধে শংকিত হইয়া পড়িলেন। অতঃপর তিনি মিসরে আহরাম এবং বারাবী অর্থাৎ মজবুত অট্টালিকা নির্মাণ করিয়া উহাতে সমস্ত শিল্প ও তৎসম্পর্কিত নব আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতিসমূহের নকশা তৈয়ার করিলেন এবং যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী তাহাতে অংকিত করিলেন, যাহাতে এই শিল্প ও বিদ্যা চিরদিনের জন্য সংরক্ষিত থাকে এবং ধ্বংসের হাত হইতে রক্ষা পাইয়া যায়। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিল্প-প্রযুক্তি রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে হযরত ইদরীস (আ) সম্বন্ধে যেসব বর্ণনার উল্লেখ পাওয়া যায়, তাহার মধ্যে কিছুটা অতিরঞ্জন থাকিতে পারে বলিয়া অনেকে উল্লেখ করিয়াছেন (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৮-২৯; কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০০-১০১; আনওয়ারে আম্বিয়া; পৃ. ২২; মুহাম্মাদ জামীল আহমাদ, আম্বিয়া-ই কুরআন, ১খ., পৃ. ৭৮-৮৩)।

মিসরে অবস্থানকালে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদিগকে ধর্মের প্রতি আহ্বান করা ছাড়াও তিনি দেশ শাসন, শহরের জীবন যাপন পদ্ধতি এবং একত্রে জীবন যাপনের নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষা দিয়াছিলেন। এই শিক্ষা প্রদানের জন্য তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায় হইতে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করিয়া তাহাদিগকে দেশ শাসন ও এতদসম্পর্কিত মূলনীতি শিক্ষা দিতেন। তাহারা এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জনপূর্বক নিজ নিজ সম্প্রদায়ে প্রত্যাবর্তন করিয়া উক্ত নীতিমালার আলোকে শহর ও গ্রামগুলিকে আবাদ করিলেন । তাহাদের আবাদকৃত শহরের ন্যূনতম সংখ্যা হইল দুই শতের মত। ইহার মধ্যে ক্ষুদ্রতম শহরটির নাম ছিল রাহা (3), যাহার ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। তিনি তাঁহার শাসিত ভূখণ্ডকে চারি ভাগে বিভক্ত করিয়া প্রত্যেক অংশের জন্য একজন করিয়া শাসনকর্তা নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তাহাদিগকে তিনি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান অনুসরণের হুকুম দিয়াছিলেন। এইসব শাসকদের মধ্যে চারজনের নাম : (১) ঈলাওয়াস,  (২) যূস, (৩) ইসকিলীবূস ও (৪) যূস আমূন অথবা ঈলাওয়াস আমূন অথবা বসীলূখাস।

হযরত ইদরীস (আ) ইলম ও আমলের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর বান্দাদিগকে তিন ভাগে বিভক্ত করিয়াছিলেন : (১) জ্যোতিষী, (২) রাজা ও (৩) প্রজা। জ্যোতিষীদের মর্যাদা সকলের ঊর্ধ্বে ছিল। কেননা তাহাকে আল্লাহর দরবারে নিজের ব্যাপারসহ রাজা ও প্রজার ব্যাপারেও জবাবদিহি করিতে হইবে । দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিল রাজা। কেননা তাহাকে নিজের এবং রাজত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের জবাবদিহি করিতে হইবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে ছিল প্রজা। কেননা তাহাকে শুধু নিজের ব্যাপারে জবাবদিহি করিতে হইবে। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর বান্দাদের এই পর্যায়ক্রমিক মর্যাদাভেদ কর্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল- বংশ ও খান্দানের পার্থক্যের প্রেক্ষিতে নহে (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৬-২৭; কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৫-৯৮)।

সন্তান-সন্তুতি ও মৃত্যু

তাওরাতে হযরত ইব্রীস (আ) সম্পর্কে উল্লেখ আছে, আর হানুক বা ইদরীস (আ)- এর পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে পুত্র মুতাওয়াশশালাহ জন্মগ্রহণ করেন। মুতাওয়াশালাহ-এর জন্মের পর হানুক (ইদরীস) তিন শত বৎসর আল্লাহর সহিত ছিলেন। তাঁহার বহু সন্তান-সন্ততি হইয়াছিল। এই

১৬৩ হিসাবে হানূকের পূর্ণ বয়স হইয়াছিল তিন শত পঁয়ষট্টি বৎসর। তিনি আল্লাহর সাথেই ছিলেন, পরে অদৃশ্য হইয়া যান অর্থাৎ আল্লাহ তাহাকে উঠাইয়া লইয়া যান। আর মুতাওয়াশালাহ্-এর বয়স যখন ১৮৭ তখন লমক (sl.) জন্মগ্রহণ করেন। লমকের জন্মের পর মুতাওয়াশশালাহ্ ৭৪২ বৎসর জীবিত ছিলেন। তাহার ঔরসে বহু সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করে। ৯৬৯ বৎসর বয়সে মুতাওয়াশশালাহ মারা যান। আর লমক ১৮২ বৎসর বয়সে এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। তিনি তাহার নাম রাখেন নূহ (আওয়ারে আম্বিয়া, পৃ. ২৩)।

তাওরাতের এই আলোচনার দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা হযরত ইদরীস (আ)-কে জীবিত অবস্থায়ই আসমানে তুলিয়া নেন। কুরআন মজীদেও এ সম্বন্ধে উল্লেখ রহিয়াছে :

“এবং আমি তাহাকে উন্নীত করিয়াছিলাম উচ্চ স্থানে” (১৯ : ৫৬)।

ইব্‌ন জারীর তাবারী (র) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে হিলাল ইব্‌ন ইয়াসাফ (র)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, একদা ইবন আব্বাস (রা) কাব আল-আহবার (রা)-কে জিজ্ঞাসা করিলেন, হযরত ইদরীস (আ) সম্বন্ধে কুরআন মজীদে যে উল্লেখ রহিয়াছে, ইহার অর্থ কি? জবাবে তিনি বলিলেন, একদা আল্লাহ্ তাআলা হযরত ইদরীস (আ)-এর প্রতি ওহী নাযিল করিলেন, হে ইস! সমস্ত দুনিয়াবাসী দৈনিক যেই পরিমাণ নেক আমল করিবে, সেই সমুদয় আমলের সমান আমি তোমাকে প্রত্যেক দিন সওয়াব দান করিব (ইহার দ্বারা তাঁহার যমানার লোকদিগের আমলের কথা বুঝানোই হয়তো আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল)। এই কথা শুনিয়া হযরত ইদরীস (আ)-এর মনের মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষার উদয় হইল যেন প্রত্যেক দিন তাহার আমল বৃদ্ধি পাইতে থাকে। অতঃপর তাঁহার এক ফেরেস্তা বন্ধু তাঁহার নিকট আসিলে তিনি তাহাকে বলিলেন, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এইরূপ ওহী নাযিল করিয়াছেন। সুতরাং আপনি এই মর্মে মৃত্যুর ফেরেশতার সহিত আলোচনা করুন, যাহাতে আমি আমার আমল বৃদ্ধি করিবার সুযোগ পাই। অতঃপর চার বন্ধু ফেরেশতা তাঁহাকে নিজের ডানার উপর বসাইয়া আসমানের দিকে আরোহণ করিলেন। ইহার পর তাহারা যখন চতুর্থ আসমানের উপর দিয়া যাইতেছিলেন ঠিক সেই সময়ে মৃত্যুর ফেরেশতা যমীনের দিকে অবতরণ করিতেছিলেন। সেখানেই তাহাদের পরস্পরের মধ্যে সাক্ষাত হইয়া গেল। বন্ধু ফেরেশতা মালাকুল মওত ফেরেশতাকে হযরত ইদরীস (আ)-এর বাসনার কথা বলিলে তিনি বলিলেন, ইদরীস এখন কোথায়? বন্ধু ফেরেশতা বলিলেন, এই তো তিনি আমার পিঠের উপর আছেন। তখন মালাকুল মওত ফেরেশতা বলিলেন, চতুর্থ আসমানে তাহার রূহ কবয করিবার জন্য আমি আদিষ্ট হইয়াছি। এই কারণে আমি বিস্ময়ের মধ্যে ছিলাম যে, ইহা কেমন করিয়া সম্ভব হইবে। কেননা তাঁহার তো যমীনে থাকার কথা। আর আমাকে চতুর্থ আসমানে তাহার জান কবয করার হুকুম করা হইয়াছে। অতঃপর এই স্থানেই মালাকুল মওত ফেরেশতা তাহার রূহ কবয করিয়া নিলেন। ইহার পর কাব আল-আহবার (র) বলিলেন, মহান আল্লাহর বাণী (এবং আমি তাহাকে উন্নীত করিয়াছিলাম উচ্চ স্থানে)-এর অর্থ ইহাই।

এই ঘটনা বর্ণনা করার পর হাফিয ইব্‌ন কাছীর (র) বলেন, ইহা ইসরাঈলী বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। ইহার কোন কোন তথ্যে সন্দেহের অবকাশ আছে (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১ম খণ্ড,পৃ. ১১২)।

এই কারণেই আল্লামা সায়্যিদ মাহমূদ আলুসী (র) [ ] এর ব্যাখ্যায় বলিয়াছেন, এই আয়াতের অর্থ হইল, আমি তাহাকে নবুওয়ত, রিসালাত ও নৈকট্যের বিশেষ মর্যাদা দান করিয়াছি (রূহুল মাআনী, পৃ. ১০৫)।

হযরত কাতাদা (র) বলেন, হযরত ইদরীস (আ) সপ্তম আকাশে ফেরেস্তাগণের সহিত একত্রে ইবাদত-বন্দেগী করিতেন এবং জান্নাতের যে কোন স্থানে ইচ্ছা বিচরণ করিয়া বেড়াইতেন। অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারের মতে তাঁহাকে সশরীরে আসমানে উঠাইয়া নেওয়া হইয়াছে। মুকাতিল (র)-এর মতে তিনি আসমানে মৃত অবস্থায় আছেন। তবে এই মতটি বিরল। কাব আল-আহবার (র)-এর মতে হযরত ইদরীস (আ)-কে আসমানে উঠাইয়া নেওয়ার ঘটনাটি নিম্নরূপ : একদা হযরত ইদরীস (আ) নিজ প্রয়োজনে কোথাও যাইতেছিলেন। পথে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ তিনি অনুভব করিলেন এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করিয়া বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি কেবল একদিন রৌদ্রের মধ্যে হাঁটিয়াছি। ইহাতেই আমার এত কষ্ট হইয়াছে। তাহা হইলে যে একদিন পাঁচ শত বৎসরের পথ ইহাকে বহন করিয়া চলিবে তাহার কি অবস্থা হইবে! সুতরাং হে আমার রব! আপনি ইহার ওজন ও তাপ উভয়টিই কমাইয়া দিন। সকাল হইলে পর সূর্য বহনকারী ফেরেশতা উহাকে ওজন ও তাপের দিক হইতে পূর্বের তুলনায় কম পাইলেন । কিন্তু তিনি ইহার কারণ বুঝিতে পারিলেন না। তাই উক্ত ফেরেশতা বলিলেন, হে আমার রব! আপনি আমাকে সূর্য বহনের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু কিছুই তো বুঝিতে পারিলাম না, সূর্য যে খুবই হালকা হইয়া গিয়াছে। আপনি এই ব্যাপারে কি ফয়সালা করিয়াছেন : আল্লাহ্ বলিলেন, আমার বান্দা ইদরীস আমার নিকট ইহার তাপ ও ওজন কমাইয়া দেওয়ার জন্য দুআ করিয়াছেন। আমি তাঁহার দুআ কবুল করিয়াছি। এই কথা শুনিয়া সূর্য বহনকারী ফেরেশতা বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে তাঁহার সহিত একত্র করিয়া দিন এবং আমার ও তাঁহার মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করিয়া দিন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাহাকে অনুমতি দিলেন এবং তিনি হযরত ইদরীস (আ)-এর নিকট আসিলেন। তৎপর হযরত ইদরীস (আ) তাঁহাকে আসমানে উঠাইয়া নেওয়ার জন্য তাঁহার নিকট আবেদন করিলেন এবং আল্লাহ তাআলাও এই বিষয়ে তাহাকে অনুমতি প্রদান করিলেন। অবশেষে তিনি তাঁহাকে আসমানে উঠাইয়া লইয়া গেলেন।

ইবনুল মুনযির (র) আফরা (রা)-এর আযাদকৃত গোলাম উমার থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (স) ইরশাদ করেন : হযরত ইদরীস (আ) একজন পূণ্যবান-পবিত্ৰাত্মা নবী ছিলেন। তিনি তাঁহার সময়টাকে দুই ভাগে ভাগ করিয়া লইয়াছিলেন। সপ্তাহে তিন দিন তিনি লোকদিগকে কল্যাণ তথা ইলম শিক্ষা দিতেন, চার দিন দেশ-বিদেশে সফর করিতেন এবং অত্যন্ত মুজাহাদার সহিত আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করিতেন। সকল বনী আদমের যেই পরিমাণ আমল আসমানে উথিত হইত একাই তাঁহার প্রাত্যহিক আমল সেই পরিমাণ আসমানে সমুখিত হইত। মালাকুল মওত তাহাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসিতেন। একদা তিনি যখন সফরের উদ্দেশে বাহির হইলেন তখন ঐ ফেরেশতা তাঁহার নিকট আসিলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি অনুমতি দিলে আমি আপনার সাহচর্যে থাকিতে চাই। হযরত ইদরীস (আ) তাঁহাকে চিনিতেন না। তাই তিনি তাঁহাকে বলিলেন, আপনি আমার সাহচর্যে থাকিতে সক্ষম হইবেন না। ফেরেশতা বলিলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে শক্তি-সামর্থ দিবেন বলিয়া আমি আশাবাদী। অতঃপর এই দিনই ফেরেশতা তাঁহার সহিত সফরে বাহির হইলেন। দিনের শেষভাগে তাঁহারা বকরীর এক রাখালের নিকট দিয়া যাইতেছিলেন। এই অবস্থায় মালাকুল মওত বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমাদের সন্ধ্যা কোথায় হইবে তাহা আমাদের জানা নাই। যদি এই বকরীর পাল হইতে একটি বকরীর বাচ্চা নেই তাহা হইলে ইহার দ্বারা আমরা ইফতার করিতে পারিব। অর্থাৎ আমরা তাহা আহার করিতে পারিব। হযরত ইদরীস (আ) বলিলেন, এইরূপ কথা আর বলিবেন না। যে খাদ্য আমাদের নয় আপনি কি আমাকে সেইরূপ খাদ্য গ্রহণের জন্য বলিতেছেন? যেখানে আমাদের সন্ধ্যা হইবে সেইখানে আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। সন্ধ্যা হওয়ার পর আল্লাহর পক্ষ হইতে জীবিকার ব্যবস্থা হইয়া গেল, যেইভাবে অন্যান্য সময় তিনি হযরত ইদরীস (আ)-এর জন্য ব্যবস্থা করিতেন। খানা হাযির হওয়ার পর হযরত ইদরীস (আ) ফেরেশতা মালাকুল মওতকে বলিলেন, অগ্রসর হউন এবং আহার করুন। ফেরেশতা বলিলেন, যে আল্লাহ্ আপনাকে নবুওয়াতের মর্যাদায় ভূষিত করিয়াছেন তাহার শপথ! আমার আহার করার ইচ্ছা নাই। আপনি একাই আহার করুন। তারপর তাঁহারা উভয়ে সালাত আদায়ের নিমিত্তে দাঁড়াইলেন। সালাত আদায় করিতে করিতে হযরত ইদরীস (আ) ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া ঘুমাইয়া পড়িলেন। কিন্তু ফেরেশতা ক্লান্তও হইলেন না এবং কোনরূপ নিদ্রাও তাঁহাকে স্পর্শ করিতে পারিল না। ইহাতে হযরত ইব্রীস (আ) আশ্চর্যান্বিত হইলেন এবং নিজের ইবাদতকে তুচ্ছ জ্ঞান করিলেন। অতঃপর ভোরে আবার তাঁহারা উভয়ে চলিতে আরম্ভ করিলেন। চলিতে চলিতে দিনের শেষে তাঁহারা একটি আঙ্গুরের বাগানের নিকট গেলেন। তখন ফেরেশতা বিগত দিনের ন্যায় তাঁহাকে পুনরায় সেই কথা বলিলেন। সন্ধ্যা হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা তাহাদের খাবার পাঠাইয়া দিলেন। হযরত ইদরীস (আ) সাথী ফেরেশতাকে আহার করার জন্য ডাকিলেন, কিন্তু তিনি আহার করিলেন না। ইহার পর তাঁহারা সালাত আদায়ের উদ্দেশে দাঁড়াইলেন এবং তাঁহাদের অবস্থা বিগত রাত্রের অনুরূপই হইল। এই অবস্থা দেখিয়া হযরত ইদরীস (আ) বলিলেন, যে সত্তার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ তাঁহার শপথ! আপনি তো আদম বংশজাত কোন মানুষ নহেন। জবাবে ফেরেশতা বলিলেন, হ্যাঁ, আমি মানব বংশজাত নই, বরং আমি মালাকুল মওত (মৃত্যুদূত)। এই কথা শুনিয়া হযরত ইদরীস (আ) বলিলেন, আপনি কি আমার কোন বিষয়ে আদিষ্ট হইয়া আসিয়াছেন। উত্তরে মালাকুল মওত বলিলেন, আমি আপনার কোন ব্যাপারে আদিষ্ট হইয়া আসিলে আপনাকে আমি লক্ষ্য করিতাম না। আমি তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনাকে মহব্বত করি এবং এইজন্যই আমি আপনার সাহচর্য অবলম্বন করিয়াছি। ইহার পর হযরত ইদরীস (আ) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যত সময় আপনি আমার সহিত ছিলেন এই সময়ের মধ্যে আপনি কাহারো জান কব্‌য করিয়াছেন কী? জবাবে তিনি বলিলেন, হাঁ, আপনার সাহচর্যে থাকা অবস্থায় মাশরিক হইতে মাগরিব পর্যন্ত যত মানুষের জান কব করার জন্য আমি আদিষ্ট হইয়াছি তাহাদের সকলের প্রাণই আমি এই অবস্থায় সংহার করিয়াছি। বস্তুত গোটা পৃথিবী আমার সামনে মানুষের সম্মুখস্ত দস্তরখানের মত যা থেকে মানুষ ইচ্ছামত খাদ্য গ্রহণ করিতে পারে। হযরত ইদরীস (আ) তাঁহাকে বলিলেন, হে মালাকুল মওত! যেই সত্তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনি আমাকে মহব্বত করেন তাঁহার উসীলায় আমি আপনার নিকট এমন কিছু যাজ্ঞা করিব যাহা অবশ্যই আপনি দিবেন। তিনি বলিলেন, হাঁ, আপনি যা করুন হে আল্লাহর নবী! হযরত ইদরীস (আ) বলিলেন, আমি মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিয়া পুনরায় আমার জান ফিরিয়া পাইতে চাই। জবাবে মালাকুল মওত বলিলেন, অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে আমি এই কাজ করিতে সক্ষম নই। অতঃপর তিনি স্বীয় রবের নিকট এই ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করিলেন এবং মহান আল্লাহ তাআলা এই বিষয়ে তাহাকে অনুমতি প্রদান করিলেন। অনন্তর তিনি তাঁহার জান কবয করিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাঁহার জান পুনরায় তাঁহাকে ফেরত দিলেন। প্রাণ ফিরিয়া পাওয়ার পর মালাকুল মওত তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আল্লাহর নবী! মৃত্যুর স্বাদ আপনার কেমন অনুভূত হইল :তিনি বলিলেন, আমাকে যেমন বলা হইয়াছে এবং আমি যাহা শুনিয়াছি ইহার চাইতেও কঠিন পাইয়াছি। ইহার পর জাহান্নাম দেখার জন্য তিনি তাঁহার নিকট আবেদন করিলেন। ফেরেশতা তাঁহাকে জাহান্নামের এক দরজার কাছে লইয়া গেলেন এবং জাহান্নামের একজন প্রহরীকে ডাক দিলেন। জাহান্নামের প্রহরী ফেরেশতাগণ মালাকুল মওতের আগমন টের পাইতেই তাহাদের শরীর শিহরিয়া উঠিল এবং তাহারা বলিলেন, আপনি আমাদের ব্যাপারে আদিষ্ট হইয়া এখানে আগমন করিয়াছেন কি? তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে আদিষ্ট হইয়া এখানে আসিলে তোমাদের প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করিতাম না। আমার আগমনের কারণ এই যে, আল্লাহর নবী হযরত ইদরীস (আ) জাহান্নামের কিছু নমুনা দেখার জন্য আমার নিকট আবেদন করিয়াছেন। তাই আমি এখানে আসিয়াছি। অতঃপর তাহারা সূচের ছিদ্র পরিমাণ জায়গা উম্মুক্ত করিয়া দিলে জাহান্নামের সামান্য পরিমাণ বাতাস তাহার গায়ে লাগিতেই তিনি বেহুশ হইয়া পড়িয়া যান। মালাকুল মওত বলিলেন, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করিয়া দিন। তৎক্ষণাৎ তাহারা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। অতঃপর মালাকুল মওত হযরত ইদরীস (আ)-এর মুখমণ্ডলে হাত বুলাইয়া বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমার সাহচর্যে থাকা অবস্থায় আপনার গায়ে এতটুকু স্পর্শ লাগুক আমি তাহা চাই নাই। তাঁহার হুঁশ ফিরিয়া আসিলে ফেরেশতা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, জাহান্নামকে কেমন দেখিলেন? তিনি বলিলেন, আমাকে যেমন বলা হইয়াছে এবং যেমন আমি শুনিয়াছি তাহার চাইতেও ভয়াবহ এবং কঠিন পাইয়াছি। ইহার পর হযরত ইদরীস (আ) জান্নাতের সামান্য কিছু দর্শন করার জন্য সাথী ফেরেশতার নিকট আবেদন করিলেন এবং এই বিষয়ে তাহাদের মধ্যে পূর্ববৎ কথাবার্তা হইল। অবশেষে জান্নাতের দ্বার খুলিয়া দেওয়ার পর জান্নাতের স্নিগ্ধ বাতাস, সুগন্ধি ও ফুলের সৌরভ তাঁহার তনু ও মনকে বিমোহিত ও আমোদিত করিয়া ফেলিল। ইহাতে তাঁহার হূদয় প্রফুল্ল ও মন খুশীতে ভরিয়া উঠিল। হযরত ইদরীস (আ) সাথী ফেরেশতাকে বলিলেন, হে মালাকুল মওত! আমি জান্নাতে প্রবেশ করিয়া জান্নাতের ফলমূল ভক্ষণ করিতে চাই এবং উহার শরাবান তহুরা পান করিতে চাই। তবে হয়ত আমার এই চাওয়া-পাওয়া অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার হইবে বলিয়া আমি মনে করি। অতঃপর তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়া সেখান হইতে কিছু আহার করিলেন এবং পান করিলেন। তারপর ফেরেশতা মালাকুল মওত বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার উদ্দেশ্য তো হাসিল হইয়াছে। এখন আপনি বাহির হইয়া আসুন। আল্লাহ তাআলা পুনরায় আপনাকে আম্বিয়ায়ে কিরামের সঙ্গে এখানে প্রবেশ করান, ইহাই আমার কামনা। এই কথা শুনিয়া হযরত ইদরীস (আ) জান্নাতের বৃক্ষরাজির মধ্যকার একটি বৃক্ষ জড়াইয়া ধরিলেন এবং বলিলেন, আমি এখান হইতে বাহির হইব না। এই বিষয়ে আপনি যদি আমার সহিত বিতর্ক করিতে চাহেন তবে আমি আপনার সহিত বিতর্ক করিতেও প্রস্তুত আছি। তখন আল্লাহ তাআলা মালাকুল মওতের প্রতি প্রত্যাদেশ করিলেন, ঝগড়া শেষ করিয়া দাও। এই কথা শুনিয়া তিনি হযরত ইদরীস (আ)-কে বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! কোন যুক্তির ভিত্তিতে আপনি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে বিতর্ক করিতেছেন? জবাবে হযরত ইব্রীস (আ) বলিলেন, কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তাআলা বলিয়াছেন, [ ] (জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিবে)। আর আমি তাহা আস্বাদন করিয়াছি। তিনি বলিয়াছেন, [ ] (এবং তোমাদের প্রত্যেকেই উহা অতিক্রম করিবে), আমি তাহাও অতিক্রম করিয়াছি। অধিকন্তু আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশকারী লোকদিগের ব্যাপারে বলিয়াছেন, [ ] (এবং তাহারা সেথা হইতে বহিস্কৃতও হইবে না)। কাজেই আল্লাহ তাআলা আমাকে জান্নাতে দাখিল করার পর আমি কি এখান হইতে বাহির হইয়া যাইব? তখন আল্লাহ তাআলা মালাকুল মওতের প্রতি প্রত্যাদেশ করিলেন, তোমার সহিত যে ব্যক্তি বিতর্ক করিতেছে সে আমার বান্দা ইদরীস। আমি আমার ইজ্জত ও মহাপরাক্রমের কসম করিয়া বলিতেছি, বিষয়টি অনুরূপ ঘটিবে বলিয়াই আমার জ্ঞানের মধ্যে ছিল । সুতরাং তুমি তাহাকে ছাড়িয়া দাও। সে তোমার বিপক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তি পেশ করিয়াছে।

এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লামা আব্দুসী (র) বলেন, ইহার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। এই পর্যায়ে মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র) বলেন, এখানে [ ]-এর অর্থ “আমি তাহাকে উন্নীত করিয়াছি উচ্চ মর্যাদায়” অর্থাৎ [ ] তথ্য মর্যাদার দিক হইতে উন্নীত করা উদ্দেশ্য। আর ~, তথা জীবিত অবস্থায় আসমানে তুলিয়া নেওয়ার বিষয়টিকে যদি বিশুদ্ধ বলিয়া মানিয়া নেওয়া হয় তথাপি এই তথ্যটির উপর কুরআনের মর্ম বুঝা নির্ভরশীল নহে। উল্লেখ্য যে, ৩০-এর si… হওয়ার বিষয়টি তো বহুল ব্যবহৃত। এমনিভাবে sk-এর sy হওয়ার বিষয়টিও আরবী ভাষায় কম ব্যবহৃত নহে। যেমন নিম্নোক্ত কবিতায় ইহার সমর্থন রহিয়াছে : (বায়ানুল কুরআন, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১)।

আল্লামা মাহমূদ আসী (র) উপরিউক্ত রিওয়ায়াতসমূহ উল্লেখ করার পর বলিয়াছেন যে, কাব আল-আহবারের বর্ণনাটিতে সন্দেহ আছে। আল্লাহ তাআলাই ইহার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত (রূহুল মাআনী, ১৬খ., পৃ. ১০৭)।

ইদরীস (আ)-এর উপদেশাবলী

হযরত ইদরীস (আ)-এর বহু উপদেশ, প্রজ্ঞাজনিত উক্তি ও শিষ্টাচারমূলক বক্তব্য সাধারণ্যে প্রবাদের ন্যায় ছড়াইয়া আছে। নিম্নে ইহার কয়েকটি উল্লেখ করা হইল :

আল্লাহ তাআলা তাঁহার সৃষ্টিকে যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করিয়াছেন এইগুলির শোকর আদায় করিতে কেহই সক্ষম নহে।

যেই ব্যক্তি জ্ঞানে পূর্ণতা লাতের ও নেক আমলের ইচ্ছা করে সে যেন তাহার হাত হইতে মূর্খতার উপকরণ এবং বদ আমলকে বর্জন করে। যেমন কারিগর যে সকল প্রকার কারিগরীতে দক্ষ, সে যখন সেলাই কাজ করার ইচ্ছা করে তখন সুঁই হাতে নেয় কিন্তু মিস্ত্রীর যন্ত্রপাতি হাত হইতে রাখিয়া দেয়। দুনিয়ার এবং আখিরাতের মহব্বত একই দিলে কখনও একত্র হয় না।

দুনিয়ার ধন-সম্পদের পরিণাম হইল আক্ষেপ এবং মন্দ কাজের পরিণাম হইল অনুতাপ ।

যখন তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ডাকিবে তখন তোমাদের নিয়াতকে একনিষ্ঠ করিয়া নিবে। সাওম ও সালাতের ক্ষেত্রেও অনুরূপ করিবে।

মিথ্যা শপথ করিও না, আল্লাহ তাআলার পবিত্র নামে শপথের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করিও না এবং মিথ্যাবাদী লোকদিগকে শপথ করিবার জন্য উৎসাহিত করিও না। কেননা এইরূপ করিলে তোমরাও তাহাদের পাপের অংশীদার হইয়া যাইবে।

নিকৃষ্ট উপার্জন পরিহার কর।

তোমরা তোমাদের শাসকগণের আনুগত্য করিবে, বয়ঃজ্যেষ্ঠদের সামনে অবনত থাকিবে এবং সর্বদা মুখে আল্লাহর প্রশংসা করিবে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানই আত্মার জীবন।

অপরের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন দেখিয়া হিংসা পোষণ করিও না। কেননা তাহাদের এই উপভোগ ক্ষণস্থায়ী।

যে ব্যক্তি তাহার চাহিদার চাইতেও বেশী পাইতে চায় সে কখনোও তৃপ্ত হইবে না।  (কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৮; কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৯-১০০)।

গ্রন্থপঞ্জী : (১) কুরআন মজীদ, ১৯ ও ৫৬; ২১ : ৮৫-৮৬; (২) মাওলানা মুহাম্মাদ হিফযুর রহমান সিউহারবী, কাসাসুল কুরআন, ১ম খণ্ড; (৩) মুহাম্মাদ আলী আস-সানী, আন্-নুবুওয়াতু ওয়াল আম্বিয়া, পৃ. ২৯৯, দারুল কলম, দামেশক; (৪) আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্‌ন আহমাদ আনসারী আল-কুরতুবী, আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন, ১১খ., পৃ. ৭৯, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যা, বৈরূত ১৯৯৩ খৃ.; (৫) যামাখশারী, কাশশাফ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩-২৪, দারুল কিতাব আল-আরাবী, বৈরূত তা.বি.; (৬) পবিত্র বাইবেল, পুরাতন ও লূতন নিয়ম, পৃ. ৭, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ঢাকা; (৭) আলুসী, রূহুল মাআনী, ১৬ খ., পৃ. ১০৫-১০৭, মুলতান, পাকিস্তান; (৮) আবদুল ওয়াহহাব আন্-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ২৪, ২৯, বৈরূত ১৯৮৬ খৃ.; (৯) ইবন কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, পৃ. ১১১-১১২-১১৩, বৈরূত ১৯৯৩ খৃ.; (১০) জামীল আহমাদ, আম্বিয়া-ই কুরআন, ১খ., পৃ. ৭৮-৮৫; (১১) ইবন কাছীর, মুখতাসার তাফসীর, ২খ., পৃ. ৪৫৬, বৈরূত; (১২) এ.এম.এম. সিরাজুল ইসলাম অনূদিত, আনওয়ারে আম্বিয়া, পৃ. ২০-২৩, ইফা প্রকাশিত, ১৯৮৭ খৃ.; (১৩) মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, বায়ানুল কুরআন, ২খ., পৃ. ১১, দিল্লী।

মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *