লরেন্স টিবেট : প্রত্যাখান তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে

লরেন্স টিবেট : প্রত্যাখান তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে

১৯২২ সালে লরেন্ট টিবেট এত গরিব ছিলেন যে, লস এঞ্জেলসের কাছে একটা গ্রামে অত্যন্ত কষ্টকর অবস্থায় দিন কাটাতেন। রোববার গির্জায় অন্যান্য গায়কদের সাথে গান গাইতেন এবং মাঝেসাজে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের গান গেয়ে সামান্য উপার্জন করতেন। তিনি গ্রামে একটা বাসা ভাড়া করে থাকতেন এবং বাসাটা ছিল আঙুর খেতের মধ্যস্থলে। তিনি স্বীকার করেছেন তার এমনও সময় গেছে যখন শুধু আঙুর ছাড়া আর কোনো খাবার ছিল না। গায়ক হিসেবে বাসাভাড়ার টাকাটাও উপার্জন করতে পারতেন না। একবার দশ মাসের ভাড়া বাকি পড়ে গেলে; তখন আঙুর তুলে এবং আঙুর গাছ ছাটাই করে তা পরিশোধ করতে হয়েছিল।

লরেন্ট টিবেট যথেষ্ট পড়াশুনা করেছিলেন কিন্তু জীবনের করুণ ও দুঃখময় অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কিছুই করতে পারলেন না। তার বন্ধু রুপার্ট হিউযের তার ওপর অপরিসীম আস্থা ছিল। তিনি লরেন্ট টিবেট সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী ছিলেন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। হিউয তোমার গলায় দামি কণ্ঠস্বরের সকল উপাদান আছে। তোমার নিউইয়র্ক গিয়ে শিক্ষালাভ করা উচিত। এই ছোট্ট বন্ধুসলভ উৎসাহটাই তার জীবনের গতিপথটাকে এক উজ্জ্বলময় ভবিষ্যতের দিকে প্রভাবিত করতে তাকে সহায়তা করল।

নিউইয়র্ক এসে মাসে পাঁচ ডলারের বিনিময়ে একটা পিয়ানো ভাড়া করলেন। টিবেট। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটান অপেরা হাউসের সবচেয়ে সস্তা একটা আসন ক্রয় করার ক্ষমতাও তার হল না। অপেরা হাউসের পেছনে দাঁড়িয়ে সুন্দরী মেরি গার্ডেনের মোহময় নাট্যাভিনয় দেখবার জন্য দু’ডলার বিশ সেন্ট করে দিতেন। ঘরভাড়া ও সঙ্গীত শিক্ষার জন্য তাকে বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করতে হত। দশবছর পর লরেন্স টিবেট নিজেই মেট্রোপলিটানের রঙ্গমঞ্চে উত্তেজনাময় আনন্দধ্বনির মধ্যে একটিমাত্র নাট্যাভিনয় দর্শকদের উপহার দেওয়ার জন্য বাইশবার অনুরোধ এসেছিল এবং তিনি সমগ্র বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসবে সুখ্যাতি অর্জন করে ছিলেন। আপনারা তখনকার সময়ে নির্মিত বহু চলচ্চিত্রে তার সুকণ্ঠ শুনেছেন। তিনি বলেছেন অনেক উচ্চাভিলাষী গায়কের ব্যর্থতার কারণ তাদের কণ্ঠস্বরের নির্বুদ্ধিতা এবং প্রদর্শন দক্ষতার অভাব।

লরেন্স টিবেট ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ডে শৈশবকাল কাটান। তার বাবা ছিলেন একজন রাখাল। তিনি গোচারণ ক্ষেত্র ঘোড়ায় চড়ে তদারক করতেন। তার কোমরে সবসময় মুক্তাখচিত বাটওয়ালা একটি রিভলভার রাখতেন। তার লক্ষ ছিল অব্যর্থ। পশ্চিমাঞ্চলের এক কুখ্যাত ব্যাংক লুটকারী ডাকাত জিমম্যাক কিনির সাথে এক সংঘর্ষে তাঁর বাবা গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যান। টিবেট বলেছেন যে, বাবার এই করুণ মৃত্যু না হলে তিনি একজন গায়ক এবং অভিনেতা হওয়ার সাহস করতেন না। তার বাবার শিক্ষা তার ওপর জাদুকরী প্রভাব বিস্তার করেছিল। এখনো তিনি বছরে মাত্র একটা সিগার খান এবং যখন খান তার মনে হয়ে যে, সাংঘাতিক ধরনের একটা অন্যায় করছেন আর সাক্ষাৎ শয়তান দাঁড়িয়ে অন্যায়ের পথে ঠেলে দিচ্ছে।

স্কুল জীবনে টিবেটের মনে হীনতাবোধের সৃষ্টি হয়। তার মা ঘরভাড়া দিতেন। তার মাত্র একপ্রস্থ কাপড় ছিল, পাজামাগুলো অত্যন্ত ছোট হয়ে গিয়েছিল এবং তার বান্ধবীকে একটা আইসক্রিম সোডা কিনে দেওয়ার মতো পয়সা তার পকেটে থাকত না। ক্লাসের অন্যান্য ছেলেরা তাচ্ছিল্য করে পাত্তা দিত না। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে, খ্যাতি অর্জন করতে হবে এবং কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায় তার সোজাপথ খুঁজতে লাগলেন। তিনি স্কুলের গ্নি ক্লাবের সদস্য হতে চাইলেন এবং নাটকে অভিনয় করতে চাইলেন কিন্তু তারা তাকে নিল না। অথচ এই বালক যিনি কিনা ক্যালিফোর্নিয়ার সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত গায়ক হিসেবে খ্যাতিলাভের জন্য ভাগ্য কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে আছেন, তিনি স্কুলের একটা কনসার্টে গান গাইতে চাইলে নিদারুণভাবে প্রত্যাখ্যাত হন। অবশ্য তার বয়স একুশ হওয়ার আগে তার কণ্ঠস্বরে প্রতিভার ফুলিঙ্গ স্ফুরিত হয় নি। তার গাওয়া পর্যন্ত যত গান লেখা হয়েছে তার মধ্যে ‘দ্য এন্ড অব এ পারফেক্ট ডে’ একটি অন্যমত শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় গান। বিশ্বের পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি লোক এই গানের রেকর্ড কিনেছেন এবং লরেন্স টিবেট বলেন যে, এই সাধারণ গানটা ছিল সত্যিই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *