সাহিত্য
ভাষার কথা
ভারতবর্ষ
সমাজ
বিচিত্র

পাঠান-বৈষ্ণব রাজকুমার বিজুলি খাঁ

পাঠান-বৈষ্ণব রাজকুমার বিজুলি খাঁ

আমার বিশ্বাস, নবাবি আমলের বঙ্গসাহিত্যের অন্তর থেকে অনেক ছোটোখাটো ঐতিহাসিক তত্ত্ব উদ্ধার করা যায়। বলা বাহুল্য, সত্য মাত্রেই ঐতিহাসিক সত্য নয়, যেমন fact মাত্রেই scientific fact নয়। সত্যেরও একটা জাতিভেদ আছে।

ইতিহাসেরও একটা Evidence Act আছে। যে ঘটনা উক্ত আইনের বাঁধাধরা নিয়মের ভিতর ধরা না পড়ে, সে ঘটনা যে সত্য, এ কথা ইতিহাসের আদালতে গ্রাহ্য হয় না। সুতরাং যে ঘটনা আমরা মনে জানি সত্য, তা যে ঐতিহাসিক সত্য, এমন কথা মুখ ফুটে বলবার সাহস পাই নে, রীতিমত দলিলদস্তাবেজের অভাবে।

আর বাংলা সাহিত্যে যে শুধু ছোটোখাটো ঐতিহাসিক সত্যের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, তাঁর কারণ সেকালে কোনো বাঙালি ইতিহাস লেখেন নি, লিখতে চেষ্টাও করেন নি; প্রসঙ্গত এখানে- ওখানে এমন অনেক ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যার গায়ে সত্যের স্পষ্ট ছাপ আছে। আর আমার বিশ্বাস যে, ইতিহাসের ক্ষেত্রে ছোটো-বড়োর বিশেষ কোনো প্রভেদ নেই। সত্যের যদি কোনো মূল্য থাকে তো সে মূল্য ছোটোর অন্তরেও আছে, বড়োর অন্তরেও আছে। সুতরাং সেকেলে বঙ্গসাহিত্যের অন্তরে যে-সকল ঐতিহাসিক তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলি তুচ্ছ বলে উপেক্ষা করবার জিনিস নয়।

চৈতন্যচরিতামৃতের অষ্টাদশ পরিচ্ছেদে কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় যে অদ্ভুত ঘটনার উল্লেখ করেছেন, সে ঘটনা যে প্রকৃত, কবিকল্পিত নয়, এই আমার চিরকেলে ধারণা। এবং এর ফলে, যাঁরা ঐতিহাসিক গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন, উক্ত ঘটনাটির প্রতি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার ইচ্ছা আমার বরাবরই ছিল। পূর্বে যে করি নি, সে কতকটা আলস্য ও কতকটা সংকোচবশত। সম্প্ৰতি শ্ৰীযুক্ত অমৃতলাল শীল উক্ত ঘটনা অবলম্বন ক’রে প্রবাসী পত্রিকায় একটি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ লিখেছেন।

তিনি বলেন যে, তাঁরও বিশ্বাস ও-গল্পটি বৈষ্ণবদের কল্পিত নয়, সত্য ঘটনা। আমরা যদি সে যুগের ইতিহাসের অন্তর থেকে পাঠান-বৈষ্ণব বিজুলি খাঁকে বার করতে পারি, তা হলে কবিরাজ গোস্বামী বর্ণিত বিবরণ যে সত্য সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যায়। উক্ত কারণেই শীল মহাশয় বিজুলি খাঁর পরিচয় দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, চৈতন্যচরিতামৃতে যাঁকে বিজুলি খাঁ বলা হয়েছে, তাঁর প্রকৃত নাম আহম্মদ খাঁ। আমার ধারণা অন্যরূপ। আমার বিশ্বাস, চৈতন্যের যুগে বিজুলি খাঁ নামে একটি স্বতন্ত্র ও স্বনামখ্যাত রাজকুমার ছিলেন, এবং কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় তাঁরই কথা বলেছেন। কি কারণে আমার মনে এ ধারণা জন্মেছে, সেই কথাটাই এ প্রবন্ধে বলতে চাই।

চৈতন্যচরিতামৃত হতে যদি সমগ্র বর্ণনাটি পাঠকদের চোখের সুমুখে ধরে দিতে পারতুম, তা হলে ঘটনাটি যে কত অদ্ভুত তা সকলেই দেখতে পেতেন। কিন্তু এ প্রবন্ধের ভিতর তার অবসর নেই, কারণ বর্ণনাটি একটু লম্বা। তা ছাড়া যিনি ইচ্ছা করেন, তিনিই চৈতন্যচরিতামৃতে তা দেখে নিতে পারেন। আমি সংক্ষেপে এবং যতদূর সম্ভব কবিরাজ মহাশয়ের জবানিতেই ব্যাপার কি হয়েছিল বলবার চেষ্টা করব। কারণ ঘটনাটি না জানলে তার বিচার পাঠকদের মনে লাগবে না। ঘটনাটি অদ্ভুত হলেও যে মিথ্যা নয়, এবং একেবারে বিচারসিদ্ধ ঐতিহাসিক সত্য, তাই প্রমাণ করবার চেষ্টা করব। সকলেই মনে রাখবেন যে, ঐতিহাসিক সত্য বৈজ্ঞানিক সত্য নয়। অতীতে যা একবার ঘটেছিল, তা পৃথিবীতে আর দুবার ঘটে না। ইংরেজিতে যাকে বলে historical fact, – তার repetition নেই। আর যে-জাতীয় ঘটনা বার বার ঘটে এবং ঘটতে বাধ্য, সেই জাতীয় ঘটনা নিয়েই বিজ্ঞানের কারবার। সুতরাং ইতিহাসের ক্ষেত্রে আমরা যাকে প্রমাণ বলি, তা অনুমান মাত্ৰ।

মহাপ্রভু বৃন্দাবন-অঞ্চলে তীর্থভ্রমণ ক’রে দেশে যখন প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন একদিন পথশ্রান্তি দূর করবার জন্য একটি বৃক্ষতলে আশ্রয় নেন। তাঁর সঙ্গী ছিল তিনটি বাঙালি শিষ্য আর দুটি হিন্দুস্থানি ভক্ত; একজন রাজপুত অপরটি মাথুর ব্রাহ্মণ। এ দুই ব্যক্তিকেই তিনি মথুরাতে সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি গাছতলায় বসে আছেন, এমন সময়—

আচম্বিতে এক গোপ বংশী বাজাইল।
শুনি মহাপ্রভুর প্রেমাবেশ হইল ॥
অচেতন হঞা প্রভু ভূমিতে পড়িল।
মুখে ফেন পড়ে নাসায় শ্বাস রুদ্ধ হৈল ॥
হেনকালে তাঁহা আসোয়ার দশ আইলা।
ম্লেচ্ছ পাঠান ঘোড়া হৈতে উত্তরিলা ॥
প্রভুকে দেখিয়া ম্লেচ্ছ করয়ে বিচার।
এই যতি-পাশ ছিল সুবর্ণ অপার ॥
এই পঞ্চ বাটোয়ার ধুতুরা খাওয়াইয়া।
মারি ডারিয়াছে যতির সব ধন লইয়া ॥
যবে সেই পাঠান পঞ্চজনেরে বান্ধিল।
কাটিতে চাহে গৌড়িয়া কাঁপিতে লাগিল ॥

এর থেকে বোঝা যায় যে, ভয় জিনিসটে আমরা বিলেত থেকে আমদানি করি নি। বাঙালি তিনজন ভয়ে কাঁপতে লাগলেন দেখে মহাপ্রভুর হিন্দুস্থানি ভক্ত দুজন তাঁদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। কারণ,

কৃষ্ণদাস রাজপুত নির্ভয় সে বড়ো।
সেই বিপ্র নির্ভয় মুখে বড়ো দড় ॥

সেই ‘মুখে বড়ো দড়ো’ ব্রাহ্মণ পাঠান আসোয়ারদের বললেন,

এই যতি ব্যাধিতে কভু হয়েত মূর্ছিত।
অবহি চেতন পাব হইব সংবিত ॥
ক্ষণেক ইহা বৈস বান্ধি রাখহ সবারে।
ইঁহাকে পুছিয়া তবে মারিহ আমারে ॥

এ কথা শুনে

পাঠান কহে তুমি পশ্চিমা দুইজন।
গৌড়িয়া ঠক এই কাঁপে তিনজন ॥

বাঙালি বেচারারা ভয়ে কাঁপছে, তার থেকে প্রমাণ হল তারাই মহাপ্রভুকে খুন করেছে। একালেও আদালতে demeanour থেকে অপরাধের প্রমাণ হয়। সুতরাং সে তিন বেচারার হাতে হাতে প্রাণদণ্ড দেওয়াই স্থির হল। এ ক্ষেত্রেও উক্ত গোবেচারাদের প্রাণরক্ষা করলেন সেই নির্ভীক রাজপুত বৈষ্ণব।

কৃষ্ণদাস কহে আমার ঘর এই গ্রামে।
দুইশত তুরুকী আছে দুই শত কামানে।
এখনি আসিবে সব আমি যদি ফুকারি।
ঘোড়া পিড়া লুটি লবে তোমা সবা মারি ॥
গৌড়িয়া বাটপাড় নহে তুমি বাটপাড়।
তীর্থবাসী লুট আর চাহ মারিবার ॥
শুনিয়া পাঠানমনে সংকোচ বড় হইল।
হেনকালে মহাপ্রভু চেতন পাইল ॥

এর পর পাঠানদের মধ্যে যে একজন পীর ছিলেন, তার সঙ্গে মহাপ্রভুর শাস্ত্রবিচার শুরু হয়, এবং সে বিচারে পরাস্ত হয়ে পীর সাহেব মহাপ্রভুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন, এবং

রামদাস বলি প্রভু তার কৈল নাম।
আর এক পাঠান তার নাম বিজুলিখান ॥
অল্পবয়স তার রাজার কুমার।
রামদাস আদি পাঠান চাকর তাহার ॥
কৃষ্ণ বলি পড়ে সেহ মহাপ্রভুর পায়।
প্রভু শ্রীচরণ দিল তাহার মাথায় ॥

এই হচ্ছে পূর্বোক্ত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

পীর ও প্রভুর শাস্ত্রবিচারের পরিচয় পরে দেব; কারণ সে বিচার অতি বিস্ময়জনক। তার পর কি কারণে রাজকুমার বিজুলি খাঁকে ঐতিহাসিক ব্যক্তি মনে করি তা বলব। প্রথমে এরকম ঘটনা ঘটা যে সম্ভব তাই দেখাবার জন্য দেশ-কালের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেওয়া আবশ্যক।

শীল মহাশয় অনুমান করেন যে, মহাপ্রভু যখন বৃন্দাবন-অঞ্চলে তীর্থভ্রমণে যান তখন সিকন্দর লোদি দিল্লির পাতশা এবং আগ্রা ছিল তাঁর রাজধানী। ১৫১৭ খৃস্টাব্দে সিকন্দর লোদির মৃত্যু হয়। সুতরাং চৈতন্যচরিতামৃতের উল্লিখিত ঘটনা সম্ভবত ১৫১৬ খৃস্টাব্দে ঘটে। আমার বিশ্বাস, এ অনুমান সংগত। কবিরাজ গোস্বামীর কথা মেনে নিলেও ঐ তারিখই পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন যে মহাপ্রভুর,

মধ্যলীলার করিল এই দিগ্‌দরশন।
ছয় বৎসর করিল যৈছে গমনাগমন ॥
শেষ অষ্টাদশ বৎসর নীলাচলে বাস।
ভক্তগণ-সঙ্গে করে কীর্তন-উল্লাস ॥১

[১ . চৈতন্যচরিতামৃত, ২৫ পরিচ্ছেদ, ১৮৫ শ্লোক।]

এখন, ঐতিহাসিকদের মতে চৈতন্যদেব চব্বিশ বৎসর বয়সে ১৫০৯ খৃস্টাব্দে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, এবং তার কিছুদিন পরেই তীর্থপর্যটনে বহির্গত হন। ঠিক কতদিন পরে তা আমরা জানি নে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে তাঁর ‘গমনাগমন’ শুরু হয় ১৫১০ খৃস্টাব্দে, তা হলে তিনি কবিরাজ গোস্বামী মহাশয়ের হিসেবমত ১৫১৬ সালে ‘মথুরা হইতে প্রয়াগ গমন’ করেন। অপরপক্ষে তাঁর মৃত্যুর আঠারো বৎসরের আগের হিসেব ধরলেও ঐ একই তারিখে পৌঁছানো যায়, কারণ মহাপ্রভুর তিরোভাবের তারিখ হচ্ছে ১৫৩৪ খৃস্টাব্দ।

সিকন্দর লোদি ছিলেন হিন্দুধর্মের মারাত্মক শত্রু। উক্ত পাতশার পরিচয় নিম্নোদ্ধৃত কথা-ক’টি হতে পাওয়া যাবে—

The greatest blot on his character was relentless bigotry. The wholesale destruction of temples was not the best method of conciliating the Hindus of a conquered district.২

[২. Cambridge History of India, vol. 3, p. 246.]

চৈতন্যদেব যখন বৃন্দাবনে উপস্থিত হন, তখন সে দেশে যে দেবমন্দির ও বিগ্রহাদির ধ্বংসলীলা চলছিল, তা চৈতন্যচরিতামৃতের নিম্নোদ্ধৃত শ্লোকগুলি হতেই জানা যায়। মহাপ্রভু অতিকষ্টে গোপালজির দর্শনলাভ করেন। কারণ

অন্নকূট নাম গ্রামে গোপালের স্থিতি।
রাজপুত-লোকের সেই গ্রামেতে বসতি ॥
একজন আসি রাত্রে গ্রামীকে বলিল।
তোমার গ্রাম মারিতে তুডুকধারী সাজিল ॥
আজি রাত্রে পলাহ না রহিও একজন।
ঠাকুর লইয়া ভাগ আসিবে কালযবন ॥
শুনিয়া গ্রামের লোক চিন্তিত হইল।
প্রথমে গোপাল লঞা গাঠুলিগ্রামে থুইল ॥
বিপ্রগৃহে গোপালের নিভৃতে সেবন।
গ্ৰাম উজাড় হৈল পলাইল সর্বজন।
ঐছে ম্লেচ্ছভয়ে গোপাল ভাগে বারে বারে।
মন্দির ছাড়ি কুঞ্জে রহে কিবা গ্রামান্তরে ॥

পূর্বোক্ত ইংরেজ ঐতিহাসিক সিকন্দর লোদি সম্বন্ধে আরো বলেন যে—

The accounts of his conquests resemble those of the protagonists of Islam in India. Sikandar Lodi’s mind was warped by habitual asso- ciation with theologians.

পাঠান বীরপুরুষেরা প্রথম যখন ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, তখন তাঁরা যেভাবে হিন্দুর মন্দির-মঠ-দেবদেবীর উপর যুদ্ধঘোষণা করেন, তার পাঁচশো বৎসর পরে পাঠানরাজ্যের যখন ভগ্নদশা, তখন আবার পাঠান পাতশারা হিন্দুধর্মের বিরুদ্ধে নব জেহাদ প্রচার করেন কেন? যেকালে সিকন্দর লোদি বৃন্দাবন-অঞ্চলে দেব-মন্দিরাদির ধ্বংস করেন, ঠিক সেই একই সময়ে গৌড়ের পাতশাহ হুসেন শাহ ও

ওড্রদেশে কোটিকোটি প্রতিমা প্রাসাদ।
ভাঙ্গিলেক, কতকত করিল প্রমাদ ॥১

[১. চৈতন্য-ভাগবত, অন্ত্যখণ্ড, চতুর্থ অধ্যায়।]

এই সময়েই হিন্দুধর্ম নূতন প্রাণ পায়। তাই উক্ত ধর্মের প্রতি পাতশাদের মনে নববিদ্বেষও জাগ্রত হয়। এই নবহিন্দুধর্ম নবরূপ ধারণ ক’রে আবির্ভূত হয়। জ্ঞান-কর্মকে প্রত্যাখ্যান ক’রে এ ধর্ম একমাত্র ভক্তিপ্রধান হয়ে ওঠে। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রামানন্দ যে ভক্তির ধর্ম উত্তরাপথে প্রচার করেন, সে ধর্ম বহুলোকের হৃদয়-মন স্পর্শ করে। ‘শুষ্ক জ্ঞান’ ও ‘বাহ্যকর্মের’ ব্যবসায়ীদের, অর্থাৎ হিন্দুসমাজের ধর্মযাজকদের ও বেদান্তশাস্ত্রীদের, যে এই ভক্তিধর্মের প্রতি অসীম অবজ্ঞা ছিল, তার প্রমাণ বৈষ্ণবগ্রন্থে পাতায় পাতায় আছে।

অপরপক্ষে মৌলবিদের অর্থাৎ মুসলমান-ধর্মশাস্ত্রীদের বিদ্বেষের একটি বিশেষ কারণ ছিল। তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন যে, এই প্রবল ভক্তির স্রোতে অনেক মুসলমানও হয়তো ভেসে যাবে, এবং আমার বিশ্বাস, এই শাস্ত্রীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়েই সেকালের মুসলমান পাতশারা এই নবহিন্দুধর্মের উপর খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন। অন্তত সিকন্দর লোদির মন তো was warped by habitual association with theologians।

শ্রীযুক্ত অমৃতলাল শীল সেকালের জনৈক ব্রাহ্মণের নবধর্মমত প্রচার করার অপরাধে প্রাণদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন। Cambridge History of India থেকে উক্ত ঘটনাটির বিবরণ নিম্নে উদ্ধৃত করে দিচ্ছি—

Sikandar had an opportunity while at Sambul of displaying the bigotry which was a prominent feature of his character. A Brahman of Bengal excited some interest and, among precisians, .much indignation, by publicly maintaining that the Mahomedan and Hindu religions were both true, and were but different paths by which God might by approached. A’zam-i-Humayn, governor of Bihar, was directed to send the daring preacher and two rival doctors of Islamic law to court, and theologians .were summoned from various part of the kingdom to consider whether it was permissible to preach peace. They decided that since the Brahman had admitted the truth of Islam, he should be invited. to embrace it with the alternative of death in the event of refusal. The deci- sion commended itself to Sikandar and the penalty was exacted from the Brahman, who refused to change his faith.

এ বাঙালি ব্রাহ্মণটি যে কে জানি নে। কিন্তু তাঁর সমকালবর্তী কবীরের মতও ঐ, চৈতন্যেরও তাই। চৈতন্যের শিষ্য যবন হরিদাসের যখন গৌড়ের বাদশার দরবারে বিচার হয়, তখন হরিদাসও ঐ একই মত প্রকাশ করেন, এবং বাংলার ও আগ্রার মৌলবিদের মতে যে it was not permissible to preach peace, তার কারণ তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন যে উক্ত ধর্মের প্রশ্রয় দিলে কোনো কোনো পাঠানও এই নববৈষ্ণবমন্ত্রে দীক্ষিত হবে, যেমন বিজুলি খাঁ পরে হয়েছিলেন। আমার বিশ্বাস, আদিতে এই বৈষ্ণবধর্ম একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক ধর্ম ছিল না। পূর্বোক্ত বাঙালি ব্রাহ্মণ যেমন স্বধর্ম ত্যাগ না করেও মুসলমানধর্মের অনুকূল হয়েছিলেন, আমার বিশ্বাস কোনো কোনো পাঠানও তেমনি স্বধর্ম ত্যাগ না করেও পরমভাগবত হয়েছিলেন এবং বিজুলি খাঁ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

এখন প্রকৃত প্রস্তাবে ফিরে আসা যাক। যে অবস্থায় ও যে কারণে মহাপ্রভুর দলবল পথ-চলতি তুরুখ-সোয়ারদের হাতে গ্রেপ্তার হন, তার পুনরুল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন। ঐ সূত্রে কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় বলেছেন যে,

সেই ম্লেচ্ছমধ্যে এক পরম গম্ভীর।
কালো বস্ত্র পরে তা’তে লোকে কহে পীর ॥

এই পীরের সঙ্গে মহাপ্রভু শাস্ত্রবিচার ক’রে তাঁকে স্বমতাবলম্বী করেন। পরে পাঠান রাজকুমার বিজুলি খাঁও স্বীয় গুরুর পদানুসরণ করেন। এই শাস্ত্রবিচারের কিঞ্চিৎ পরিচয় দেব, কারণ এ বিচার অদ্ভুত। সেই পীরের

চিত্ত আর্দ্র হৈল তার প্রভুরে দেখিয়া

এবং সে

নির্বিশেষ ব্রহ্ম স্থাপে স্বশাস্ত্ৰ উঠাইয়া।
অদ্বয় ব্রহ্মবাদ সেই করিল স্থাপন।
তারি শাস্ত্রযুক্ত্যে প্রভু করিলা খণ্ডন।

মুসলমান পীর যে শংকরপন্থী অদ্বৈতবাদী, এ কথা কি বিশ্বাস্য? তার পর মহাপ্রভুর উত্তর আরো আশ্চর্য। তিনি বললেন,

তোমার পণ্ডিত সবের নাহি শাস্ত্রজ্ঞান।
পূর্ব পর বিধিমধ্যে পর বলবান্ ॥
নিজ শাস্ত্র দেখ তুমি বিচার করিয়া।
কি লিখিয়াছে শেষ নির্ণয় করিয়া ॥…
প্রভু কহে তোমার শাস্ত্রে স্থাপ নির্বিশেষ।
তাহা খণ্ডি সবিশেষ স্থাপিয়াছে শেষ ॥
তোমার শাস্ত্রে কহে শেষে একই ঈশ্বর।
সর্বৈশ্বৰ্যপূৰ্ণ তেহোঁ শ্যামকলেবর ॥
সচ্চিদানন্দ দেহ পূর্ণব্রহ্মরূপ।
সর্বাত্মা সর্বজ্ঞ নিত্য সর্বাদিস্বরূপ ॥

মহাপ্রভুর মুখে এ কথা শুনে পীর উত্তর করলেন যে,

অনেক দেখিনু মুঞি ম্লেচ্ছশাস্ত্ৰ হৈতে।
সাধ্যসাধনবস্তু নারি নির্ধারিতে ॥…
আমি বড়ো জ্ঞানী এই গেল অভিমান ॥

এই কথোপকথন আমাদের বড়োই আশ্চর্য ঠেকে, কারণ মুসলমানধর্মের God যে personal God, বহু দেবতাও নয়, এক নির্গুণ পরব্রহ্মও নয়, এ কথা আমরা সকলেই জানি। সুতরাং কোনো পরমগম্ভীর মুসলমান পীরকে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে মহাপ্রভুর পক্ষে আবশ্যক হয়েছিল, এ কথাটা প্রথমে নিতান্তই আজগুবি মনে হয়। কিন্তু যাঁদের মুসলমানধর্মের ইতিহাসের সঙ্গে কিঞ্চিৎ পরিচয় আছে, তাঁরা জানেন যে, কালক্রমে মুসলমানধর্মও নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে, এবং তাদের মধ্যে কোনো কোনো সম্প্রদায় জ্ঞানমার্গ অবলম্বন করে, এবং কোনো ধর্মেরই জ্ঞানমার্গীরা সগুণ ঈশ্বর অঙ্গীকার করে না। উক্ত পীর যে কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন, তা তাঁর পরিধানের কালো বস্ত্র থেকেই বোঝা যায়। সুফীদের সাম্প্রদায়িক-বেশ স্বতন্ত্র। সুতরাং পীর মহাশয় সুফী নন। তবে তিনি কি? যাঁরা মুসলমানধর্মের ইতিহাস সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ তাঁরা বলতে পারেন।

তার পর আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মহাপ্রভুর মুসলমান শাস্ত্রের বিচার। শ্রীচৈতন্য যে মহাপণ্ডিত ছিলেন তা আমরা সকলেই জানি, তবে তিনি যে আরবি শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন, এ কথা কারো মুখে শুনি নি। তবে এ বিচারের কথাটা কি আগাগোড়া মিথ্যা। আমার ধারণা অন্যরূপ আমার বিশ্বাস, সে-যুগে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের পণ্ডিতমহলে শাস্ত্রবিচার চলত, এবং হিন্দু-মুসলমান শাস্ত্রীরা উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মমতের আসল কথা সব জানতেন। সিকন্দর লোদি গোঁড়া মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর দরবারে জনৈক বাঙালি ব্রাহ্মণের সহিত মৌলবিদের শাস্ত্রবিচারের বৈঠক বসান। আমার এ অনুমান যদি সত্য হয় তো মহাপ্রভু যে মুসলমান শাস্ত্রের বিচারে প্রবৃত্ত হন, এ কথা অবিশ্বাস কররার কোনো কারণ নেই।

কবিরাজ গোস্বামীর এ-সব কথা যদি সত্য হয়, এবং আমার বিশ্বাস তা মূলত সত্য, তা হলে এই প্রমাণ হয় যে, মহাপ্রভু যেমন পুরীতে সার্বভৌমকে, কাশীতে প্রকাশানন্দকে, জ্ঞানমার্গ ত্যাগ ক’রে ভক্তিমার্গ অবলম্বন করতে বাধ্য করেছিলেন, তেমনি তিনি সৌরক্ষেত্রে জনৈক পরমগম্ভীর অদ্বৈতবাদী মুসলমান পীরকেও ভগবদ্ভক্ত করে তুলেছিলেন, এবং একমাত্র ‘কোরানের দোহাই দিয়ে। এবং তিনি পূর্বেও যেমন হিন্দু শাস্ত্রীদের নিকট মুসলমানধর্ম প্রচার করেন নি, এ ক্ষেত্রেও তেমনি তিনি মুসলমান শাস্ত্রীর নিকট. হিন্দুধর্ম প্রচার করেন নি। কিন্তু উভয় ধর্মমতেরই যা greatest common measure, অর্থাৎ ভগবদ্‌ভক্তি, তারই মর্ম ব্যাখ্যা করেছিলেন। এবং, আমার বিশ্বাস, ইতিপূর্বে সিকন্দর লোদি যে-ব্রাহ্মণ বেচারাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন, সে বেচারির অপরাধ সে একই মত প্রচার করে, কিন্তু তাই বলে স্বধর্ম ত্যাগ করে পরধর্ম অঙ্গীকার করতে রাজি হয় না—প্রাণ বাঁচাবার খাতিরেও নয়।

ও-যুগটা ছিল এ দেশের ধর্মের ইন্টারন্যাশনালিজমের যুগ। আজও এমন বহু লোক আছেন যাঁরা ইন্টারন্যাশনালিজ্ম্ কথাটায় ভয় পান, কারণ তাঁদের বিশ্বাস ও-মনোভাব ন্যাশনালিজমের পরিপন্থী। সেকালেও অনেকে ধর্ম বলতে বুঝতেন, হয় হিন্দুধর্ম, নয় মুসলমানধর্ম। কিন্তু মানুষে যাকে ধর্মমনোভাব বলে, তার প্রাণ যে ভগবদ্‌ভক্তি, এ জ্ঞান যার আছে, তার অন্তরে নানা ধর্মের ভেদজ্ঞানটাই অবিদ্যা। আমার বিশ্বাস, সে যুগে ভগবদ্‌ভক্ত ও বৈষ্ণব এ দুটি পর্যায়-শব্দ ছিল। সুতরাং ব্রাহ্মণের মতো পাঠানও স্বধর্ম রক্ষা করেও পরমবৈষ্ণব অর্থাৎ পরমভাগবত হতে পারত। সকল ধর্মেরই কথা এক, শুধু ভাষা বিভিন্ন। বৈষ্ণবধর্মের মূলমন্ত্র হচ্ছে,

সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।

এ কথা বলাও যা আর স্বধর্ম রক্ষা ক’রে মামেকং শরণং ব্রজ, এ কথা বলাও কি তাই নয়?

হিন্দু যে স্বধর্ম ত্যাগ ক’রে স্বেচ্ছায় মুসলমানধর্ম গ্রহণ করে, এ ঘটনা আজও ঘটে কিন্তু মুসলমান যে স্বধর্ম ত্যাগ ক’রে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে, আজ তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। এই কারণেই চৈতন্যচরিতামৃতের কথা বিশ্বাস করা আমাদের পক্ষে কঠিন। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, হিন্দুধর্ম অর্থাৎ হিন্দুসমাজের দরজা আজ বন্ধ হলেও অতীতে খোলা ছিল। আজ আমরা এ সমাজ থেকে অনেক হিন্দুকে বহিষ্কৃত করতে পারি, কিন্তু কোনো অহিন্দুকে তার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি নে, কারণ আজকের দিনে হিন্দুসমাজের অর্থ হিন্দুধর্ম ও হিন্দুধর্মের অর্থ হিন্দুসমাজ। আর হিন্দুসমাজ হচ্ছে অপর সকল মানবসমাজ হতে বিচ্ছিন্ন ও একঘরে; কিন্তু ঐতিহাসিক মাত্রই জানেন যে, হিন্দুযুগে অসংখ্য শক ও যবন বৌদ্ধধর্মের শরণ গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মেরই একটি শাখা মাত্র; আর এ ধর্মমন্দিরের দ্বার বিশ্বমানবের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

ভারতবর্ষের মধ্যযুগের এই নববৈষ্ণবধর্মও সনাতন হিন্দুধর্মের একটি নব শাখা মাত্ৰ। তবে এ নবত্বের কারণ, মুসলমানধর্মের প্রভাব। মুসলমানধর্ম যে প্রধানত ঐকান্তিক ভক্তির ধর্ম, এ কথা কে না জানে? ভারতবর্ষের মধ্যযুগের বৈষ্ণবধর্ম যে মুসলমানধর্মের এতটা গা-ঘেঁষা, তার কারণ পাঁচশো বৎসর ধ’রে হিন্দুধর্ম ও মুসলমানধর্ম পাশাপাশি বাস ক’রে আসছিল। একেশ্বরবাদ, 13 মানুষমাত্রেই যে ভগবানের সন্তান, এ দুটিই হচ্ছে মুসলমানধর্মের বড়ো কথা। তাই এই নবহিন্দুধর্মে অহিন্দুরও প্রবেশের পূর্ণ অধিকার ছিল। তা যে ছিল, তার প্রমাণ চৈতন্যভাগবত ও চৈতন্যচরিতামৃতের মধ্যে দেদার আছে। সুতরাং শীল মহাশয়ের আবিষ্কৃত আহম্মদ খাঁ নামক পাঠানও যে উক্ত ধর্মে দীক্ষিত হন, এ কথা অবিশ্বাস করবার কোনো কারণ নেই। তবে বিজুলি খাঁ নামক যে একটি স্বতন্ত্র পাঠান রাজকুমার ছিলেন সে বিষয়েও সন্দেহ নেই, এবং খুব সম্ভবত তাঁর সঙ্গে চৈতন্যদেবের মথুরার সন্নিকটে দেখা হয়েছিল। Tabakat-i-Akbari নামক ফারসি গ্রন্থে তাঁর নামধাম এবং তাঁর বাপের নামও পাওয়া যায়। আকবর কর্তৃক কালিঞ্জর-দুর্গ আক্রমণসূত্রে গ্রন্থকার বলেন যে-

This is a strong fortress, and many former Sultans had been ambitious of taking it. Sher Khan Afghan (Sher Shah) besieged it for a year, but was killed in the attempt to take it, as has been narrated in the history of his reign. During the interregnum of the Afghans, Raja Ram Chunder had purchased the fort at a high price from Bijilli Khan, the adopted son (Pisan – i – khwanda) of Bihar Khan Afghan .১

[১. Elliots’ History of India, vol. I, p. 333.]

এর থেকে জানা যায় যে, রাজকুমার বিজুলি খাঁ কালিঞ্জরের নবাবের পোষ্যপুত্র; এবং তিনিই এ রাজ্য রাজা রামচন্দ্রকে বিক্রি ক’রে চলে গিয়েছিলেন, সম্ভবত বৃন্দাবনে। তবে তিনি যে কবে কালিঞ্জর-রাজ্য ত্যাগ করেন তার তারিখ আমরা জানি নে, সম্ভবত তাঁর পিতা বিহারি খাঁ আফগানের মৃত্যুর পর তিনি যখন স্বয়ং নবাব হন। শের শাহ্র মৃত্যু হয়েছিল ১৫৪৪ খৃস্টাব্দে, বিজুলি খাঁ খুব সম্ভবত এর পরেই কালিঞ্জর হস্তান্তর করেন। মহাপ্রভুর সঙ্গে তাঁর যখন সাক্ষাৎ হয় তখন তাঁর অল্প বয়েস, সুতরাং রাজা রামচন্দ্রকে তিনি যখন কালিঞ্জর-দুর্গ বিক্রি করেন, তখন তাঁর বয়েস আন্দাজ পঞ্চাশ। বিজুলি খাঁ কালিঞ্জরের নবাব হওয়া সত্ত্বেও যে পরমভাগবত ব’লে গণ্য হয়েছিলেন, এ ব্যাপার অসম্ভব নয়। বৌদ্ধযুগের বড়ো বড়ো রাজামহারাজারাও পরমসৌগত ব’লে গণ্য হতেন। তা ছাড়া, এ নববৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হবার জন্য বিষয়সম্পত্তি ত্যাগ করবার প্রয়োজন ছিল না। ভোগে অনাসক্ত হলেই বৈষ্ণব হওয়া যেত। মহাপ্রভু রঘুনাথ দাসকে এই কথা বলেই তাঁকে সংসারত্যাগের সংকল্প হতে বিরত করেন।

মহাপ্রভু নিজে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু অপরকে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে কখনো উৎসাহ দেন নি। এমন-কি, বালযোগী অবধূত নিত্যানন্দকে সন্ন্যাসীর ধর্ম ত্যাগ করে গার্হস্থ্য ধর্ম অবলম্বন করতে বাধ্য করেছিলেন।

এই-সব কারণে আমার বিশ্বাস যে চৈতন্যচরিতামৃতে বর্ণিত উক্ত ঘটনাটি অন্তত চৌদ্দ-আনা সত্য, অতএব ঐতিহাসিক। কারণ আমরা যাকে ঐতিহাসিক সত্য বলি, তার ভিতর থেকে অনেকখানি খাদ বাদ না দিলে তা বৈজ্ঞানিক সত্য হয় না। ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে অসত্য ও বৈজ্ঞানিক সত্যের মাঝামাঝি একরকম সত্যাসত্য মাত্র। আর-এক কথা। আমরা যে প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যের অনেক কথাই কবিকল্পিত মনে করি, তার কারণ সেকালের অনেক পুঁথি কাব্য হিসেবে পড়ি যদিচ কাব্যের কোনো লক্ষণই তাদের গায়ে নেই, এক পয়ারের বন্ধন ছাড়া। পরে সে পয়ারের বন্ধন যে কত ঢিলে আর তার শ্রী যে কত চমৎকার, তা চৈতন্যচরিতামৃতের উদ্ধৃত শ্লোকগুলিতে সকলেই দেখতে পাবেন। তা ছাড়া ও-সব গ্রন্থে কবিকল্পিত, অর্থাৎ কবির কল্পনাপ্রসূত, ব’লে কোনো জিনিসই নেই। কবিকল্পনার তাঁরা ধার ধারতেন না। সুতরাং তাঁদের কথার যদি কোনো মূল্য থাকে, তা একমাত্র সত্য হিসাবে।

সুতরাং লিটারেচার ওরফে রসসাহিত্য যাঁদের মুখরোচক নয় এবং যাঁরা মাত্র সত্যানুসন্ধী, তাঁদের প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নির্ভয়ে চর্চা করতে অনুরোধ করি। তাঁরা ও-সাহিত্যের অন্তরে অনেক নীরস ঐতিহাসিক ও দার্শনিক তত্ত্বের সন্ধান নিশ্চয় পাবেন।

বৈশাখ ১৩৩৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *