পর্ব ২ : মনোবলের শক্তি

দ্বিতীয় পর্ব : মনোবলের শক্তি

(৫) প্রাত্যহিক মনোবল

আমি বহু বছর ধরে শিখেছি যে কারো মন যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় তখন ভয় কমে যায়; যা অবশ্যই করতে হবে তাকে জানা, ভয়কে দূরে নিয়ে যায়।

– রোসা পার্ক

ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আবিষ্কার করার পূর্বে আপনি যদি আমার কাছে মনোবলের উদাহরণ সম্পর্কে জানতে চাইতেন তাহলে আমি হয়তো আপনাকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কিছু মানুষের তালিকা দিতাম। আমি হয়তো কখনোই বলতাম না যে মনোবল হলো– আপনার বিছানা ছেড়ে উঠে আসা, বসের সঙ্গে কথা বলা, ফোনটি হাতে তুলে নেয়া অথবা ওজন মাপা যন্ত্রের ওপর উঠে পড়া। আমি হয়তো আপনাকে এটা বলতাম যে মনোবল হলো একটি শব্দ যা বিশাল ও সাহসিক কাজগুলোকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আমার দৃষ্টিতে সাহসী মানুষ হলো– নোবেল পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই, লেইমা গব্বি, দালাইলামা, অং সান সু চি, নেলসন ম্যান্ডেলা ও এলি ওয়াইসেল। আমি হয়তো আরো ভাবতাম উইনস্টন চার্চিলকে– নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার জন্য, রোসা পার্কসকে– বাসে তার আসন রক্ষা করার জন্য এবং রুখে দাঁড়ানোর জন্য, মুহাম্মদ আলীকে– তার ধর্মীয় বিশ্বাসে অনঢ় থাকার জন্য এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য। আমি হয়তো স্মরণ করতাম হেলেন কেলারকে– যিনি তার নিজের অক্ষমতার উপর জয়লাভ করেছিলেন অন্যদের অধিকার আদায়ের জন্য, স্যার আর্নেস্ট শ্যাকেলটনকে– যিনি অ্যান্ডুরেন্স জাহাজের ক্রুদের বাঁচাতে অবিশ্বাস্য ও অদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন, অথবা গ্যালিলিওকে– যিনি সনাতন গির্জাগুলোকে অগ্রগামী বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু সাত বৎসর যাবৎ রুলটির ব্যবহার ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষের কথা শোনার পর আমি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে শিখেছি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ভীতিকর, অনিশ্চয়তাপূর্ণ এবং কঠিন মুহূর্ত দ্বারা পরিপূর্ণ। এই মুহূর্তগুলোর মুখোমুখি হতে এবং জীবনের সুযোগ, জাদু ও আনন্দগুলোকে অর্গলমুক্ত করতে প্রয়োজন অসাধারণ মনোবল।

মনোবল হলো ঠিক তাই, দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল যা আপনাকে দেয়। রুলটি হোসেকে নিজের মূল্য সম্পর্কে বিশ্বাস করার মনোবল জুগিয়েছিল যা তাকে তার বসের কাছে মজুরি বৃদ্ধির কথা বলতে সাহসী করেছিল। যখন সে একটি বৃদ্ধির কথা বলেছিল, সেটা সে পেয়েছিল এবং পরবর্তী মজুরি গ্রহণের দিন তার জন্য আরো বড় একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। না চাইতেই তাকে ঘন্টাপ্রতি আরো এক ডলার মজুরি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

ব্রাইসকে একটি রান্নার বই লেখার জন্য দুই বৎসর প্রচেষ্টা চালানোর মনোবল জুগিয়েছিল এই রুলটি। এবং সে এখানেই থেমে থাকেনি। একটি বইয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য সে পেয়েছিল বার্নস অ্যান্ড নোবেল বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে। ব্রাইস-এর ভাষায়– আপনি যে বিষয়ে উৎসাহী এবং যা কিছুর জন্য কাজ করতে আগ্রহী, তার সবকিছুই আপনি অর্জন করতে পারেন।

মজার বিষয়, ব্রাইস-এর বয়স যখন মাত্র ১৫ বৎসর, রুলটি মার্টিন-কে নয় বৎসর যাবৎ একের পর এক অজুহাত তৈরির ভেতর দিয়ে সামনে ঠেলে দিতে, অজুহাতগুলোকে ধাক্কা মেরে গুঁড়িয়ে দিয়ে স্কুলে ফিরে যেতে, পরবর্তীতে তার কর্মজীবনকে পরিপূর্ণতা দিতে এবং দ্বিতীয় স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছিল।

জুনিতা তার ভেতরের জ্ঞান-এর কথা শুনতে শিখেছিল। একটি চাকরি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে চিন্তা করা বাদ দিয়ে তার এক বন্ধুর সুপারিশক্রমে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে কল করেছিল। অনুমান করতে পারেন সে কি পেয়েছিল? ঠিক তাই, যার জন্য সে নিজেকে ধাক্কা মেরেছিল, এমন একটি কাজ– যার স্বপ্ন দেখেছিল সে।

গ্যাবের জন্য দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি সম্পর্কে জানা ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। আমিই আমার জীবনের সব ঘটনার জন্য দায়ী এই বোধটি আসার পর গ্যাবে তার জীবন বদলে দিতে রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজের অন্তর্জালিক বাস্তবিক প্রতিষ্ঠান (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি) চালু করতে পেরেছিলেন। আজ তিনি তার স্বপ্নের কর্মজীবন নির্মাণ করে চলেছেন।

ক্রিস্টিন-এর জীবন চিরতরে বদলে গেছে কারণ তার প্রেমিক ড্রাগ আসক্তি থেকে এখন মুক্ত। যখনি তিনি (প্রেমিক) অনুভব করেছেন ঐসব আসক্তি থেকে তার বেরিয়ে আসা উচিত, নিজের মনস্তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি তার আচরণ পরিবর্তন করতে উল্টো ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩-২-১ করেছিলেন যা তার মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল এবং তিনি ফিরে পেয়েছিলেন তার নিজস্ব সময়।

মনোবল আমার কাছে তাই যা বিছানা ছেড়ে উঠে আসতে আমার প্রয়োজন। বিছানা ছেড়ে উঠে আসাটা আমার জন্য ভীতিকর ছিল কারণ এরপরই আমাকে আমার সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হতো। আয়নায় নিজেকে দেখা আমার জন্য কঠিন ছিল এবং এটা স্বীকার করা যে আমি এখন ৪১ এবং আমার কর্মজীবন বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করা দুঃসাধ্য এটা স্বীকার করে নেয়াটাও আমার জন্য ছিল কষ্টকর।

মনোবল শব্দটি যতবার এসেছে এটি আমাকে তার চাইতে বেশি আগ্রহী করে তুলেছে এমন কোনো ঐতিহাসিক মুহূর্তের মুখোমুখি হতে যা আমাকে আরো ভালোভাবে মনোবলের প্রকৃতিটি বুঝতে সাহায্য করেছিল। প্রথম ব্যক্তি যার কথা আমার মাথায় এসেছিল সে হলো– রোসা পার্কস। আপনি হয়তো তার গল্পটি জানেন যে, কেমন করে তিনি ডিসেম্বর, ১৯৫৫ সালের এক শীতের সন্ধ্যায় আধুনিক আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন যখন তিনি বাসে একজন সাদা চামড়ার যাত্রীকে নিজের আসনটি ছেড়ে দিতে নীরবে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

মনোবল হলো, ইতিহাস ক্লাসে আমার কন্যার কলমটি নামিয়ে রেখে তার হাত উঁচিয়ে ধরা। এটা হলো আপনার প্রতি আপনার দলের মনোযোগ প্রদানের প্রয়োজন এবং আপনার বাচ্চাদের আপনাকে বলার প্রয়োজন যে আসলে কি ঘটতে চলেছে। ডেটিং সাইট-এ আপনার অনলাইন প্রোফাইল স্থাপন অথবা আপনার ফোনে কোনো প্রাক্তনকে ব্লক করা হলো একটি সাহসী পদক্ষেপ। মনোবল হলো– আপনার ব্যবসায় নতুন প্রযুক্তির আত্মীকরণ অথবা একগ্লাস মধ্যপান করা বা টেলিভিশনের সামনে বসে থাকার পরিবর্তে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি দাঁড়ানো।

আমি যখন এই বইটি লিখতে শুরু করি এবং বিশ্বব্যাপী যারা রুলটি ব্যবহার করেছেন তাদের গল্প সংগ্রহ করতে শুরু করি, এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে– যে কোনো সিদ্ধান্তের ভেতরেই রয়েছে একটি ৫ সেকেন্ড-এর মনোবল যা আমাদের জীবনের সবকিছু বদলে দিতে সক্ষম।

তার সাহসীকতার মুহূর্তটি আমাদের শিখিয়েছিল যে– সবকিছু বদলে দিতে খুব বড় কোনো পদক্ষেপ নয় বরং আমাদের জীবনের ক্ষুদ্রতম একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। সেই সন্ধ্যায় তিনি যা করেছিলেন তার জন্য কোনো পূর্ব পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। মিসেস পার্কস নিজেকে বর্ণনা করেছেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে যে নিজেকে সব রকমের ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে সবসময় সতর্ক থাকেন। একটি দীর্ঘ কর্মব্যস্ত দিনের শেষে সন্ধ্যায় তার একমাত্র পরিকল্পনা থাকে বাড়ি ফেরা এবং স্বামীর সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া। এটা ছিল আর সব সন্ধ্যার মতোই একটি সন্ধ্যা, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি সিদ্ধান্ত সবকিছু বদলে দিয়েছিল।

আমি মিসেস পার্কস-এর ওপর গবেষণা করতে জাতীয় সংগ্রহশালা, আজীবনী, বেতার সাক্ষাৎকার ও সংবাদপত্রের নিবন্ধগুলো পড়ে দেখেছিলাম। যা পেয়েছিলাম তা ছিল অবিশ্বাস্য। গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর তিনি সিডনি রজার্সকে পেসিফিকা বেতারে একটি সাক্ষাৎকার দেন যা জাতীয় সংগ্রহশালা ওয়েবসাইট শব্দ ধারণ করে রাখে। তার নিজের ভাষায় সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করা হলো :

বাসটি শহরের বাইরের দিকে বেরিয়ে যাবার পথে তৃতীয় স্টপেজে ছিল এবং এর সামনের অংশ সাদা চামড়ার যাত্রী দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। আমি যখন বাসটিতে উঠি, এর পেছনের অংশ বিভিন্ন গাত্রবর্ণের যাত্রী দ্বারা ভরে গিয়েছিল এবং তারা দাঁড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল। আমি যে আসনটি দখল করেছিলাম তা ছিল কালো চামড়ার যাত্রীরা যেখানে বসে তার প্রথমটি, হ্যাঁ, এই পথের এটাই ছিল স্বাভাবিক নিয়ম। বাসের চালক লক্ষ্য করল যে বাসের সামনের অংশ সাদা যাত্রীদের দ্বারা পূর্ণ এবং দুতিনজন যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমরা কালো যাত্রীরা যে আসলগুলোতে বসেছিলাম তা ছেড়ে দিতে বললেন। অন্য যাত্রীরা অত্যন্ত নিরুৎসাহের সঙ্গে কাজটি করছিল কিন্তু আমি তা করতে অস্বীকৃতি জানাই। চালক আমাকে বলে যে, আমি যদি আসনটি ছেড়ে না দিই তবে তিনি পুলিশ ডাকবেন। আমি তাকে বলি– ঠিক আছে পুলিশ ডাকুন।

এরপর বেতার উপস্থাপক তাকে কোটি টাকা মূল্যের প্রশ্নটি করেন :

জিম ক্রো এবং বিচ্ছিন্নতার সেই সব বছরগুলো পেরিয়ে কখন আপনি এমন ব্যক্তিত্ব হতে এবং সেই বিশেষ মুহূর্তে বাসের আসনটি ধরে রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন?

মিসেস পার্কস খুব সহজভাবে জবাব দিলেন :

আমি অনুভব করেছিলাম যে আমার সাথে একজন যাত্রী হিসেবে সঠিক আচরণ করা হয়নি এবং আমার অধিকার আছে বাসের একজন যাত্রী হিসেবে আসনটি ধরে রাখার।

উপস্থাপক আবার তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন– বছরের পর বছর ধরে তো আপনি এভাবেই নির্যাতিত হয়েছেন, তাহলে ঠিক ঐ মুহূর্তে কেন আপনি সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন? একটি দ্বিতীয় উত্তরের জন্য তাকে বলা হলো এবং তার জবাব ছিল :

যখন সময় এসেছে, আমি নিজেকে ধাক্কা মেরে দাঁড় করাতে যতটুকু প্রয়োজন ধাক্কা মেরেছি, আমার মনে হয়।

উপস্থাপক প্রশ্ন করলেন– আপনার পূর্ব পরিকল্পনা ছিল?

উত্তর : না।

উপস্থাপক জানতে চাইলেন– এটা কি তবে হঠাৎ ঘটেছিল?

উত্তর : ঠিক, এটা ছিল একটি হঠাৎ করে সংঘটিত ঘটনা।

এটি ছিল একটি সমালোচনামূলক ঘটনার বর্ণনা। রোসা পার্কস দ্বিধা করেননি অথবা কি ঘটবে চিন্তা করেননি। তিনি শুধু তার প্রবৃত্তির কথা শুনেছিলেন যা তাকে বলেছিল –তোমার সাথে সঠিক আচরণ করা হচ্ছে না এবং তিনি নিজেকে তা অনুসরণ করতে ধাক্কা মেরেছিলেন।

যেহেতু তিনি দ্বিধা করেননি, এ ব্যাপারে নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় তার ছিল না।

কাকতালীয়ভাবে, চারদিন পর, ডিসেম্বর ৫, ১৯৫৫ সালে একই শহর এলাবামার মন্টেগোমেরিতে ৫ সেকেন্ডের ইতিহাস বদলে দেয়া একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। মিসেস পার্কস-এর গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় মন্টেগোমেরি উন্নয়ন সমিতি গঠিত হয়েছিল এবং একজন ২৬ বৎসর বয়স্ক কালো ধর্মপ্রচারককে তার সহকর্মীরা ভোট দিয়ে মনোনীত করেছিল সেই সময় সংঘটিত ৩৮১ দিনের বাস বয়কট কর্মসূচির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।

সেই রাতে বয়কট কর্মসূচি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ার পর যুবক ধর্মপ্রচারক পরবর্তীতে লিখেছিলেন :

এটা এত দ্রুত ঘটেছিল যে এ ব্যাপারে আমার চিন্তা করার কোনো সময় ছিল না। যদি থাকতো, সম্ভবত, আমি মনোনয়নটি প্রত্যাখ্যান করতাম।

ধন্যবাদ যে তিনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেননি। তিনি সর্বকালের মহান নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতাদের একজন হতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন– ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।

ড. কিং তার সহকর্মীদের ধাক্কা খেয়ে প্রচার আলোয় এসেছিলেন। রোসা তার নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। তারা দুজনেই একটি ধাক্কার ক্ষমতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। এটি এমন একটি মুহূর্ত যখন আপনার প্রবৃত্তি, মূল্যবোধ ও লক্ষ্য এক বিন্দুতে এসে দাঁড়াবে এবং আপনি এত দ্রুত মুভ করবেন যে আপনার কাছে সময় বা বৈধ কোনো কারণ থাকবে না নিজেকে থামানোর।

আপনার হৃদয় যখন কথা বলবে তখন চিন্তা করবেন না, শুধু আপনার হৃদয় কি করতে বলছে শুনুন। মহত্ত্ব কোনো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি আমাদের সকলের মধ্যেই রয়েছে এবং কখনো কখনো এর দেখা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। মিসেস পার্কস যার বর্ণনা করেছিলেন তিনি ছিলেন শান্ত এবং লাজুক, আর ড, কিং তার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের শুরুর সময়ে সংগ্রাম করেছিলেন তার সন্দেহ আর ভয়কে সঙ্গে নিয়ে।

১৯৫৬ সালে এক বেতার সাক্ষাৎকারে মিসেস পার্কস বলেছিলেন– আমি ভাবিনি যে আমি সেই ব্যক্তি যাকে এটা করতে হবে, এটা আমার সাথে ঘটেনি। সম্ভবত আপনার সাথেও ঘটবে না যদি আপনি না জানেন কর্মক্ষেত্রে বা জীবদ্দশায় আপনি মহান কি অর্জন করতে সক্ষম। তার উদাহরণ আমাদের এটা দেখায় যে, যখন মুহূর্তটি একটি বিশেষ কিছু, আমরা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করার মনোবল খুঁজে পেতে সক্ষম।

এটা সত্যি, রোসা যেমন তার ১৯৫৬ সালের বেতার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, একটি বৈষম্যের পদ্ধতি দ্বারা নিজেকে দাঁড় করাতে যতটুকু ধাক্কা দেবার প্রয়োজন ছিল তিনি তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ একক মুহূর্তটিতে তিনি নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে আরো শক্তিশালী কিছুর সাহায্যে ধাক্কা মেরেছিলেন।

এটাই হলো মনোবল। একটি ধাক্কা। যে ধাক্কা আমরা নিজেদের দিই যখন আমাদের প্রয়োজন হয়– উঠে দাঁড়াতে, কথা বলতে, প্রদর্শন করতে, প্রথমে যেতে, হাত তুলতে অথবা যা কিছু কঠিন, ভীতিকর অথবা অনিশ্চিত মনে হয় তা করতে। ইতিহাস, ব্যবসা, শিল্প ও সঙ্গীতে আমাদের যারা নায়ক তাদের দিকে তাকানো কিংবা অনুমান করার প্রয়োজন নেই যে তারা আপনার চেয়ে আলাদা। এটা সত্য নয়।

মনোবল একটি জন্মস্বত্ব। এটা আমাদের সকলের মধ্যেই বিরাজমান। আপনি এটা সঙ্গে করেই জন্মান এবং যখনই চাইবেন আপনি একে স্পর্শ করতে পারবেন। এটা আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা, অবস্থান, ব্যক্তিত্ব বা পেশা সংক্রান্ত কোনো বিষয় নয়। সহজ ভাষায় এটা হলো কেমন করে প্রয়োজনের মুহূর্তে একে পাওয়া যাবে তা জানা। এবং যখন আপনার একে প্রয়োজন হবে, সম্ভবত আপনি থাকবেন একা।

এটা ঘটবে হঠাৎ করে, আপনি যখন– কর্মস্থলে একটি সভায় অংশ নিয়েছেন, নিজের রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছেন, সাবওয়েতে প্রবেশ করেছেন, আপনার ফোনটির দিকে তাকিয়ে আছেন, আপনার কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছেন অথবা কোনোকিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। কিছু একটা নেমে যাবে এবং আপনার প্রবৃত্তি জীবন ফিরে পাবে। কাজ করার ব্যাপারে আপনার ভেতরে প্রবল আগ্রহ তৈরি হবে। কি করা উচিত তা আপনাকে আপনার মূল্যবোধ ও প্রবৃত্তি জানাবে। এবং আপনার অনুভূতিগুলো চিৎকার করে উঠবে– না। এটাই হলো ধাক্কা দেওয়ার সময়। আপনার কাছে– সবকিছুর উপরে থাকা জরুরি নয়। আপনাকে শুধু পরবর্তী ৫ সেকেন্ডের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

ভ্যান, একা একা তার কম্পিউটারের সামনে বসে ভাবছিল গ্রীষ্মকালীন ক্লাসগুলোর জন্য সে নিবন্ধন করবে কিনা। ৪৪ বৎসর বয়সে সে তার কলেজ ডিগ্রিটি অর্জন করতে চায়, কিন্তু নতুন করে শুরু করার এই ধারণাটি ভয়ঙ্কর কিছুর চাইতে কম ছিল না।

ক্রিস্টিন-এর প্রয়োজন ছিল মনোবল, যখন তিনি টেক্সাস-এ তার কর্মস্থলে একটি বিক্রয় সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছিলেন কিন্তু একইসাথে ভাবছিলেন– আবার বোকামি হয়ে যাচ্ছে না তো?

টম শিকাগো শহরের একটি গুঁড়িখানায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে মুহূর্তে একজন সুন্দরী তরুণীর দিকে তার দৃষ্টি পড়ে, তিনি আর চোখ ফেরাতে পারছিলেন না। তার সামনে বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল– হয় বন্ধুদের দিকে ফিরে ফুটবল নিয়ে তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, না হয় সুন্দরী তরুণীটির দিকে হেঁটে যাওয়ার মনোবল খুঁজে পাওয়া।

ন্যাশভিল-এ একটি আর্থিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের গোটা বিক্রয় বিভাগ নিরুৎসাহিত বোধ করছিল। তারা পরপর তিন বৎসর তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিল কিন্তু তারপরও আবার তাদের কোটা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।

ইংল্যান্ড-এ এলিস-এর নিজেকে একটু ধাক্কা দেবার প্রয়োজন ছিল দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দৌড় শুরু করার জন্য। তিনি ফেসবুক-এ তার এক বন্ধুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কিন্তু নিরুৎসাহিত বোধ করছিলেন এই ভেবে যে– কতদিন আগে তিনি শেষ অনুশীলন করেছিলেন মনে পড়ছে না।

অর্ধেক পৃথিবী দূরে প্যাটেল তার এক বন্ধুর ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে পারছেন না যার ছেলে সম্প্রতি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তিনি বুঝতে পারছিলেন না বন্ধুকে কি বলবেন, এবং নিজের সন্তানকে হারানোর দুর্ভাবনাও তাকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তিনি নিজেকে এই বলে বোঝাচ্ছিলেন যে– যদি আর কটা দিন অপেক্ষা করি, এটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। ফোনটি তুলে তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার আকুলতা ভেতর থেকে কেউ থামিয়ে দিচ্ছিল যাতে তা করতে বিলম্বিত হয়।

চীনে সাই নামক এক ভদ্রমহিলা ত্বকের যত্নের কিছু সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য পরিবেশক হিসেবে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি অন্তত এক ডজন মানুষকে ফোন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ফোনটির দিকে তাকিয়ে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে চিন্তা করছিলেন– যদি তারা ভাবে আমি জোর করে বিক্রি করতে চাইছি, তাহলে কি হবে?

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড-এ টড জানে তার জীবনের সাথে ঠিক কি করতে হবে এবং তা আইন বিষয়ে পড়াশোনা নয় বরং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা। কিন্তু এটডকে তার ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পূর্বে তার বাবা-মার মুখোমুখি হতে হবে। হতাশাজনক!

এবং মার্ক, অকল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড-এ তার বিছানায় শুয়ে আছেন যেখানে এখন রাত ১০টা ৩০ মিনিট। তিনি ঘুরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন, যে এই মুহূর্তে একটি বই পড়ছে। তিনি চাইছেন স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু সময় কাটাতে কিন্তু মনে হচ্ছে তার স্ত্রীর মুড নেই। তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে এবং তার কাঁধে চুমু খেতে চাইলেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ও পাচ্ছিলেন। ইতিপূর্বে তার স্ত্রীকে রুমমেট হিসেবে দীর্ঘদিন অনুভব করার মতো ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তার এখন প্রয়োজন– মনোবল।

সেথ গোডিন একবার লিখেছিলেন– আমাদের মস্তিষ্কের একটি পৃথক অংশ তখনই সচল হয় যখন আমরা কি প্রয়োজন তা চিন্তা করার পরিবর্তে কি সম্ভব তা নিয়ে ভাবি। আমি বিশ্বাস করি এটা সত্যি, যখন আমরা আমাদের থামিয়ে দেয়া ভয়ের উপর আলোকপাত করার চাইতে সাহসী হওয়া নিয়ে বেশি ভাবি। এটা হলো সমস্যার ওপর আলোকপাত করার পরিবর্তে সমাধানের ওপর আলোকপাত করার মধ্যকার পার্থক্য।

আমার বিছানা ছেড়ে উঠে আসার সংগ্রামকে একটি শক্তিশালী কাঠামো দেওয়া, প্যাটেল-এর তার বন্ধুকে ফোন করার জন্য সংগ্রাম, বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটিকে আরো উচ্চতর বিক্রয় লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম এবং এলিস-এর অনুশীলন নিয়ে সংগ্রামগুলো হচ্ছে প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত এক একটি উদাহরণ।

দিন শেষে, মনোবল হলো একটি ধাক্কা মাত্র।

আপনি যখন নিজেকে ধাক্কা মারবেন, পৃথিবী, আইন অথবা নাগরিক অধিকার আন্দোলন হয়তো বদলে যাবে না, কিন্তু নিশ্চয়তা দিচ্ছি আপনি একই ধরনের কিছু একটা বদলে দিতে সক্ষম হবেন– আপনি নিজেকে বদলে দেবেন।

আপনি নিজে কিন্তু একজনই। এবং আপনার মতো আর একজন কোনোদিনই আসবে না। এটাই আপনার শক্তি।

*

(৬) অপেক্ষা কিসের?

যা সঠিক, তা করার সঠিক সময় সবসময় এটাই।

– ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

শিকাগো শহর কেন্দ্রের হায়াত রিজেন্সি হোটেল-এর অভ্যন্তরে স্টেটসন্স স্টেকহাউস-এ টম তার বন্ধুদের সাথে একটি নতুন ব্যবসা উদযাপন করছিলেন। এ বৎসর তিনি তার পরিচালিত এলাকার জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করে ফেলেছেন যা তার এলাকাটিকে দলপতিদের তালিকায় নিশ্চিতভাবে এগিয়ে রাখবে। চার মাস আগে, তার স্ত্রী চলে যাবার পর তিনি একটি আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। এটা ছিল একটা চমৎকার ব্যাত্যয় কেননা তিনি তখন তার ব্যক্তিগত জীবনের টুকরোগুলোকে আবার জোড়া লাগাতে চাইছিলেন। একটা সময় তিনি বারটেন্ডার-এর দিকে ফিরলেন আরেক প্রস্থ পানীয় অর্ডার করার জন্য এবং ঠিক এই সময় তিনি তাকে দেখলেন।

সুন্দরী তরুণীটি খুঁড়িখানার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ছিলেন আর তার বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা করছিলেন। তার মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার ছিল। টম তা ধরতে পারছিলেন না। তিনি এগিয়ে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন কিন্তু দ্বিধাবোধও করছিলেন। তার কাছে মনে হচ্ছিল এটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তিনি অনিশ্চিত বোধ করলেন। ভাবলেন– এমন একজন সুন্দরী মহিলা কি আমার মতো একজন দুই বাচ্চার বাবার সঙ্গে যায়?

টমকে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা করতে হবে পরবর্তী ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।

এক মুহূর্তের মধ্যে টম যদি তরুণীটির দিকে হাঁটা শুরু করতে পারেন তাহলে হয়তো জীবনটাকে তিনি পুনঃনির্মাণ করতে পারবেন। একটি কর্মিসভায় হাত তুলতে এক মুহূর্ত সময় মাত্র প্রয়োজন হয় যা কার্যক্ষেত্রে আপনার উপলব্ধি বদলে দিতে পারে। আর আপনি যদি তা না করেন, মুহূর্তটি চলে যাবে যা ব্ল্যাক-এর ক্ষেত্রে ঘটেছিল, আর সেই জন্য এখন তিনি নিজেকে লাথি মারতে চাইছেন।

আপনি যে কারণেই নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রাখেন না কেন– তা ভুল। এ ব্যাপারে নীরব থাকা নিরাপদ নয়। এখানে শান্তি বজায় রাখা ভালো নয়। এই চেষ্টা (নীরব না থাকা) নিরর্থক নয়। এটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আপনি ভুল এবং আপনার অজুহাত ও যুক্তিসমূহ ভুল। আপনার জীবনে উন্নতি করার জন্য সঠিক সময় বলে কিছু নেই। যখনি সামনে এগোবেন, আপনি আপনার শক্তিমত্তা আবিষ্কার করবেন। এটাই সত্যিকার আপনাকে বের করে নিয়ে আসার উপায়– আপনার মস্তিষ্ক থেকে ধাক্কা মেরে বের করে আপনাকে বাস্তবে নিয়ে আসা। এবং এটা করার সর্বোত্তম সময় এখনই যখন আপনার হৃদয় আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে বলছে।

আলোচনা করার জন্য, মূল্য বাড়ানোর জন্য, উপস্থাপনার জন্য অথবা শুরু করার জন্য অপেক্ষা করে করে আমরা জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকি। এটা আমাকে মহান ওয়েইন গ্রেটজিকির উক্তিটি স্মরণ করিয়ে দেয়– আপনি যে শটগুলো নেয়া থেকে বিরত থাকেন সেগুলো আপনি ১০০% মিস করেন। বিষয়টি হলো– আপনার নেয়া শটগুলো নিয়ে কখনোই আপনার অনুশোচনা হবে না কিন্তু যে ক্ষেত্রে নিজেকে আপনি পেছনে টেনে ধরে রাখেন, সে সব ক্ষেত্রে অবশ্যই পরে অনুশোচনা হবে। এন্থনি এটা কঠিনভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।

আজ রাতে কাউকে আমার নাম্বারটি দেওয়ার সুযোগ এসেছিল কিন্তু আমি দিইনি আর এজন্য সারাজীবন আমাকে অনুশোচনা করতে হবে। হায়, জীবন কেন এত কঠিন??

জীবন সত্যিই কঠিন, কিন্তু আমরা যখন ভয়ের কথা শুনে নিজেদেরকে অপেক্ষা করতে বলি এবং আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে পেছনে টেনে ধরে রাখি, জীবনকে আমরা তখন আরো কঠিনতর করে তুলি। এটা আমরা সবাই করি। আমরা কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে বা আমাদের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের পেছনে টেনে ধরে রাখি। প্রশ্ন হলো– কেন আমরা এটা করি? উত্তরটি খুবই রূঢ়। আপনি এটাকে বলতে পারেন– প্রত্যাখ্যান, ব্যর্থতা অথবা খারাপ লাগার ভয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি কারণ আমরা চেষ্টা করে দেখতেও ভয় পাই।

কয়েক মাস আগে আমার কন্যা কেন্ডাল-এর সাথে আমার একটি কথোপকথন হয়েছিল যা আমাকে স্পষ্ট করেছিল– আমাদের স্বপ্নের কাছে এই ধরনের অপেক্ষার খেলা কতটা মারাত্মক হতে পারে। আপনাদের প্রথমে একটু পটভূমি জানাতে চাই। কেন্ডাল-এর বয়স ১৫ এবং সে খুব প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী। সকালবেলা বিছানা ছেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিছানায় ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সে গান গাইতে থাকে। সম্প্রতি তার একজন পরামর্শদাতা তাকে নিউইয়র্ক শহরের একজন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে অডিশন দেওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছে। এই সঙ্গীত পরিচালক লা মিজারেবল, মেরী পপিন ও মাটিল্ডা মঞ্চনাটকগুলো নিয়ে তার ভ্রমণ পরিকল্পনায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করছিলেন। পরামর্শদাতার মনে হয়েছিল যে কেল-এর কোনো একটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার এখানে একটি ভালো সুযোগ রয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, সে (কেন্ডাল) অডিশন দিতে চেয়েছিল কিন্তু তা জানিয়ে পরামর্শদাতাকে কখনো কিছু লেখেনি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন সে অপেক্ষা করছে। এটা জানা আমার জন্য আকর্ষণীয় ও হৃদয়বিদারক ছিল যে, কেমন করে তার ভাবনা ও অনুভূতিগুলো তাকে ফাঁদে ফেলেছিল। মজার বিষয় হলো সে অডিশন দেওয়ার ব্যাপারে ভীত ছিল না। অন্তত যখন সে এটা নিয়ে ভেবেছিল তখন তো নয়ই। এটা ছিল অডিশন দেওয়ার পর কি ঘটতে পারে তা নিয়ে দুর্ভাবনা।

সে আমাকে বলে– আমি চেষ্টা করে দেখতে চাইনি কারণ যদি আমি ব্যর্থ হই তাহলে কি হবে মা? কি হবে যদি দেখতে পাই নিজেকে নিয়ে যা ভাবি আমি তা নই? আমি যদি অডিশন না দিই, অন্তত নিজেকে বলতে পারব যে আমি অসাধারণ। যা চাই তা পেতে আমি শুধু একটু অলস, এই যা!

এ পর্যায়ে আমরা কোথাও এসে পৌঁছলাম। পর্যাপ্ত ভালো না হওয়ার অথবা ব্যর্থতার অনুভূতির মতো বাস্তবতার মুখোমুখি হতে আমরা কেউই চাই না। সুতরাং, মরণঘাতী কোনো রোগের মতো আমরা এগুলো এড়িয়ে চলি। আমরা আসলে অনুশীলনের সাথে এটা করে থাকি। আমরা কল্পনা করি যতক্ষণ এগুলো এড়িয়ে চলব ততক্ষণ খুব সুন্দর থাকতে পারব। যে মুহূর্তে আমি জিমনেসিয়াম যাব, আমাকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। আর বাস্তবতা হলো– মিনিট দুয়েক ট্রেডমিল-এর উপর দৌড়ানোর পর আমাকে বাথরুমে যেতে হবে, আমার নিঃশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেবে। মনে হবে আমি মোটেই আর সুন্দর অবস্থায় নেই। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। আর এজন্যই নিজেদের অহঙ্কার রক্ষা করতে এমনকি এটা যদি হয় আমরা যা পেতে চাই তা পাবার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে হলেও আমরা চ্যালেঞ্জগুলোকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।

আমি কেন্ডাল-এর যথেষ্ট পরিমাণে ভালো না হওয়ার ভয় সম্পর্কে শুনে তাকে একটি সহজ প্রশ্ন করেছিলাম :

তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে?

এটি একটি শক্তিশালী প্রশ্ন এবং এই প্রশ্নটি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে করি। তোমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে? কি হবে যদি তুমি অডিশনে ভালো কর এবং সবাই যেমন বলে থাকে তুমি আসলে তেমনই ভালো। কি হবে যদি তোমার ধারণাটি আসলে একটি ভবিষ্যতের কোটি টাকা মূল্যের ব্যবসা? কি হবে যদি তুমি শুধু এ বছরের কোটাই পূর্ণ করলে না বরং তা অতিক্রম করে গেলে? কি হবে যদি দেখ এটা থাকা ততটা ভীতিকর নয় যতটা তুমি ভেবেছিলে এবং তোমার সত্যিকারের সঙ্গীটির আবির্ভাব খুব সন্নিকটে?

তুমি কি দুঃশ্চিন্তাগুলোকে তোমার শ্রেষ্ঠতর হওয়ার এবং ভালোবাসার জীবন পাওয়ার প্রশ্নে তোমাকে থামিয়ে দিতে দেবে? অবশ্যই দেবে না। এমনকি যদি তুমি নিঃশেষ হয়ে যাও– নিজেকে তুমি আরেকটি কথা বলতে পার :

তাহলে কি?

আসুন আমরা দেখি তারপর আসলে কি? সুতরাং, কি হবে যদি আপনি নিঃশেষ হয়ে যান? অন্তত ক্লান্ত। আমি এ ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন ভূমিকা গ্রহণ করছি বিষয়টি ঠিক ততটাই অপ্রাসঙ্গিক। যেমন অপ্রাসঙ্গিক ছিল গুঁড়িখানায় টম-এর দৃষ্টি তরুণীটির উপর পড়া। একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো– আপনি নিজে। আপনার ভেতরে আছে শক্তি। আপনি সেই শক্তির নাগাল পেতে নিজেকে একটু ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনি আপনার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারেন অডিশনে, শুড়িখানায়, হাত তুলে অথবা কর্মক্ষেত্রে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে।

আপনি কখনোই কোনো কিছুর ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি দুঃশ্চিন্তার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন যা আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে। আপনি নিজেকে শক্তিশালী কিছুর ব্যাপারে চিন্তা করার জন্য বলতে অথবা ধাক্কা দিতে পারেন। আপনি বর্তমানে ফিরে যান এবং ফিরে যান যা আপনি চান তা পেতে। আর আপনি এটি করতে পারেন ঠিক ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।

আমরা সবাই কোনো না কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ার চিন্তা করার জন্য অপরাধী কিন্তু কাজটি আমরা করছি না। আমরা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। এটা সম্পূর্ণ বোকামি। একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ৮৫% পেশাদার সেবাকর্মী স্বীকার করেছেন যে, তারা তাদের বসদের কাছে সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। কেন? আপনি ইতিমধ্যে উত্তরটি জেনে গেছেন– তারা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। এটা আপনার ছেলেমেয়ে, পোষ্য, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের ক্ষেত্রেও সত্যি।

এভাবে আমরা সবাই একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এডাম গ্রান্ট-এর অসাধারণ বই অরিজিনালস-এ একটি অন্তদৃষ্টিপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ছিল– কিভাবে বিরুদ্ধবাদীরা পৃথিবীকে শাসন করেছিল যখন আমাদের কিছু মহানায়করা ঠিক আমাদের মতোই দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, নিজেদের সন্দেহ করেছেন এবং জীবনের সুযোগগুলো প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন কারণ তারা নিজেদের প্রস্তুত মনে করেননি। আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আমরা যাদের পছন্দ করি তাদেরও ভয়, অজুহাত ও অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার দরকার আছে ঠিক আমার আপনার মতোই।

আপনি কি মাইকেল এঞ্জেলোকেকে জানেন যিনি রোমে সিস্টেইন চ্যাপেল এঁকেছিলেন? এর একটি পেছনের গল্প হয়তো আপনি জানেন না। গ্রান্ট-এর মতে ১৫০৬ সালে পোপ যখন মাইকেল এঞ্জেলোকে সিস্টেইন চ্যাপেল আঁকতে বলেছিলেন, মাইকেল এতটাই দ্বিধা ও ভীতিবোধ করেছিলেন যে তিনি শুধু অপেক্ষাই করতে চাইলেন না বরং ফ্লোরেন্স-এ পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রইলেন। পোপ-এর দুই বৎসর সময় লেগেছিল মাইকেলকে ছবিটি আঁকতে রাজি করাতে।

আরেকটি গল্প শুনতে চান? অ্যাপল সম্পর্কি হলে কেমন হয়? ১৯৭৭ সালে একজন বিনিয়োগকারী যখন স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াককে অ্যাপল চালু করতে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন, ওজনিয়াক এতটাই ভীত ও অনিশ্চিত বোধ করেছিলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে এবং নিজের চাকরিটি ছেড়ে দেওয়ার পূর্বে একটু অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তার নিজেকে প্রস্তুত মনে হয়নি। প্রকল্পটি শুরু করতে তাকে তার একাধিক বন্ধু, অভিভাবক ও স্টিভ জবস ধাক্কা দিয়েছিলেন।

ড, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র সম্পর্কে গত অধ্যায়ের গল্পটি নিশ্চয় মনে আছে, যেখানে তিনি স্বীকার করেছিলেন মন্টেগোমেরি উন্নয়ন সমিতিকে নেতৃত্ব দানের মনোনয়নটি হয়তো তিনি প্রত্যাখ্যান করতেন যদি এটা নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় থাকত। অথবা রোসা পার্কস যেমন স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি কখনোই ভাবেননি এই কাজটি তাকেই করতে হবে। নির্দিষ্ট মুহূর্তে, তাদের কেউই চিন্তা করে সময় ক্ষেপণ করেননি। তারা প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করেননি। আমাদের সকলের ঠিক এটাই করতে হবে। আমরা সবাই মহৎ কিছু করতে সক্ষম। আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের অনুভব ও ভীতিগুলো আমাদের এই বলে বোঝায়– এটা সঠিক সময় নয়, আর এভাবেই আমাদেরকে মহত্ত্ব অর্জন করা থেকে বিরত রাখে।

গ্রান্ট অতঃপর তার বইতে এই লাইনটি লিখেছিলেন– আমরা কেবল কল্পনা করতে পারি কতজন ওজনিয়াকি, মাইকেল এঞ্জেলো কিংবা রাজাকে তাদের মূল ধারণাগুলো প্রচার আলোয় টেনে আনা বা নিক্ষেপ করার জন্য তাদের পেছনে ছোটা, প্রচার বা প্রসার করতে হয়নি।

এরপর আপনার নিজেকে যে প্রশ্নটি করতে হবে, তা হলো :

অপেক্ষা কিসের?

আপনি কি অপেক্ষা করছেন যে কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, টেনে নিয়ে যাবে অথবা প্রচারের আলোয় ছুঁড়ে দেবে– সেই জন্য নাকি আপনি নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মনোবল খুঁজে পেতে ইচ্ছুক? আপনি কি প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করছেন? সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন? আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য অপেক্ষা করছেন? অনুভব করার জন্য অপেক্ষা করছেন? যোগ্য বোধ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। আরো অধিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অপেক্ষা করছেন?

কখনো কখনো পরবর্তী সময় বলে কিছু থাকে না। দ্বিতীয় আরেকটি সুযোগ কিংবা বিরতিও না। অপেক্ষা করা ছাড়ুন। এটা হয় এখন না হয় কখনোই নয়। যখন আপনি অপেক্ষা করেন, তখন শুধুমাত্র গড়িমসিই করছেন না বরং তার চাইতেও ভয়ঙ্কর কিছু করছেন। আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে বোঝাচ্ছেন যে– এটা সঠিক সময় নয়। আপনি সক্রিয়ভাবে নিজের স্বপ্নগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছেন।

পলা নিজেকে বোঝাতে পারতেন যে একটি দুর্দান্ত কাজের সুযোগের জন্য তিনি কখনোই যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এটা করলে তিনি চরম ভুল করতেন। তার ভাষায় :

আমি একটি চাকরির আবেদন করেছিলাম। ভাবিনি নির্বাচিত হব কিনা কারণ আমি শুধু চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিলাম। আমি আমার দুর্বলতাগুলোর উপর দৃষ্টি না দিয়ে গুণাবলিগুলোর উপর জোর দিয়েছিলাম এবং চাকরিটি পেয়েছিলাম। আগে হলে আমি হয়তো ৫ সেকেন্ড পরেই এটা ভুলে যেতাম এবং চেষ্টা পর্যন্ত করতাম না।

দুর্বলতার পরিবর্তে গুণাবলির উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে পলা তার ভয়গুলোকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চাকরিটি পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আপনি মনে করতে পারেন যে কারো বিচার, প্রত্যাখ্যান অথবা বিপর্যয় থেকে নিজেকে আপনি রক্ষা করছেন। কিন্তু আপনি যখন অজুহাত তৈরি করেন এবং নিজেকে অপেক্ষা করতে বলেন, তখন আসলে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার যোগ্যতাকে আপনি সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। আমি এই ভেবে অবাক হই যে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় কী পরিমাণ সময় আমি অপচয় করেছি। অপেক্ষা করেছি নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত, অপেক্ষা করেছি আমার কাজটি নিখুঁত ভাবা পর্যন্ত অথবা কাজটিতে অনুভব করা পর্যন্ত।

আপনি হয়তো নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত যেমনটি আমার কন্যা ছিল। তাহলে বলি, নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আসলে কি– বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনুশোচনা করা যে আপনি কখনো চেষ্টা করে দেখেননি, ৩০ বৎসর বয়সের পর অনুধাবন করা যে আপনার বন্ধুরা কে কি ভাববে এই ভয়ে তরুণ বয়সে নিজেকে অনেক কিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বন্ধুরা, এই ফাঁকে বলি, যে কথা আপনি আর কখনো বলতে চান না– ৫৬ বছর বয়সে আপনি অনুধাবন করেছেন যে আপনার পোষ্য (স্বামী/স্ত্রী)-কে আরো ১০ বৎসর আগেই ডিভোর্স করা উচিত ছিল, ৪৫ বৎসর বয়সের পর আশা করছেন কর্মস্থলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করার মতো সাহস যদি আপনার থাকতো যা আপনার পেশাজীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, অথবা একটি ডিগ্রি অর্জন করে বাবা-মাকে খুশি করতে কলেজের শ্রেণিকক্ষে বসে আছেন যখন আপনি জানেন যে জীবনে অন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন আপনি।

সঠিক সময় বলে এখানে কিছু নেই। আছে শুধু এখন। আপনি একটি জীবন পেয়েছেন, এটাই সব। এবং এটা আবার নতুন করে শুরু হবে না। আপনার উপর নির্ভর করছে এ থেকে সর্বোচ্চটা পেতে নিজেকে আপনি কেমন করে ধাক্কা দেবেন, আর সেটা করার এখনই সময়।

আপনি আপনার ধারণাগুলোর পেছনে তাড়া করার মাধ্যমে তাদের যাচাই করুন

এটা অনেকের কাছ থেকে শোনাটা হৃদয়বিদারক যে, নিজেদের উদ্ভাবনী ধারণা ও পণ্য যাচাই করতে আপনাদেরকে তৃতীয় কারো মুখাপেক্ষী হতে হয়। এটা সত্যিই দুঃখজনক কারণ, যাচাই করার অপেক্ষা আপনার স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে পারে। আপনার যদি একটি অনুষ্ঠান তৈরির ধারণা থেকে থাকে অথবা একটি বইয়ের এবং আপনি অপেক্ষা করছেন কখন একটি টেলিভিশন সংস্থা বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এসে আপনাকে তুলে নেবে, নিশ্চিতভাবেই আপনি সব হারাবেন। এটা অনেকটা টম-এর আশা করার মতো যে, তার হৃদয়সঙ্গী তার দিকে হেঁটে আসবে এবং তাকে হৃদয়ে তুলে নেবে অথবা আমার মতো যে বিছানা ছেড়ে উঠে আসার অনুপ্রেরণা অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। আপনার প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা দ্বারা কিছুই ঘটবে না। পৃথিবী এভাবে কাজ করে না।

পৃথিবী সেইসব মানুষকে পুরস্কৃত করে যারা স্বপ্ন দেখে নিজেকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখার এবং সেই লক্ষ্যে কারো জন্য অপেক্ষা না করে কাজ শুরু করে দেয়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি– আপনারা যারা আশা করে আছেন যে, কোনো একজন টেলিভিশন নির্বাহী এসে আপনাকে আবিষ্কার করবে, তারা ইউটিউবের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন সেইসব মানুষজন যারা অপেক্ষা করেনি। যাদের নিজেদেরকে এবং নিজেদের ধারণাগুলোকে এখানে সৃষ্টি ও প্রদর্শন করার মতো মনোবল রয়েছে আর শেষপর্যন্ত তারাই জয়লাভ করবে।

আপনার একটি উপন্যাস লেখার ধারণা এবং ব্রিটিশ লেখক ই.এল.জেমসূ (যিনি বহুল বিক্রিত ফিফটি শেডস অব গ্রে ট্রিলজি লিখেছিলেন, যেটি প্রায় সব মহিলা কর্তৃক আদৃত হয়েছিল এবং প্রকাশের চার দিনের মধ্যে যার লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল) এর ধারণার মধ্যকার পার্থক্য হলো তিনি কারো অনুমতি, কোনো সঠিক সময় অথবা প্রস্তুত অনুভব করার জন্য অপেক্ষা করেননি। তিনি কোনো প্রকাশনা চুক্তির জন্য অপেক্ষা করেননি। আসলে তিনি টোয়াইলাইট থিমযুক্ত একটি ব্লগ-এ ইরোটিকা লিখতে শুরু করেছিলেন। তিনি ছোটভাবে শুরু করার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন এবং সেই ব্লগ-এ ক্রমাগত লিখে গেছেন একটি উপন্যাস লেখার আত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।

ফিফটি শেডস অব গ্রে ছিল সেই উপন্যাস। এটি একজন কর্মজীবী মায়ের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল যিনি নিজে অবসর সময়ে লিখতেন। হ্যাঁ, সত্যি তাই।

যাই হোক, এভাবেই অবশ্য গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী সঙ্গীতশিল্পী এড শিরান আবিষ্কৃত হয়েছিলেন। ১৫ বৎসর বয়সে তিনি ইংল্যান্ড-এর একটি পার্কে গান গাইতেন যেখানে তার কোনো অনুমতি ছিল না এবং এই নিশ্চয়তাও ছিল না যে কেউ তাকে দেখে ফেলবে না। আপনি যেভাবে এটা করবেন– নিজেকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে আপনার আরামদায়ক এলাকা থেকে বের করে দেবেন এবং শুরু করবেন। এখানে অন্য কোনো উপায় নেই। এভাবেই পুরস্কার জয়ী ব্রড সিটি অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয় কমেডি সেন্ট্রাল মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিল। তারা সাহসিক কাজ করেছিল। প্রথমে তারা আই-ফোনে ৩ মিনিটের একটি দৃশ্যধারণ করত এবং তা পরে ইউটিউব-এ পোস্ট করে দিত।

এবং প্রত্যেক ইউটিউব তারকা, টাইলার ওকলি থেকে রূপচর্চা শিক্ষাক্লাস, অসম্ভব গুণসম্পন্ন মিশেল ফান থেকে আমার মাতল রান্নাঘর- এর উপস্থাপন হান্নাহ হার্ট, স্ট্যামপি ক্যাট-এর কাব্যিক শিল্পকুশলী বর্ণনাদাতা পর্যন্ত বলবে যে, তারা যদি প্রস্তুত বোধ করার জন্য অপেক্ষা করে কিংবা একজন পৃষ্ঠপোষক পাবার আশায় অপেক্ষা করে নিজেদের পেছনে টেনে ধরে রাখতেন, তাহলে হয়তো আজ পর্যন্ত তাদের স্বপ্নের জীবন নির্মাণ এবং হাসতে হাসতে ব্যাংকে যাওয়ার বদলে পূর্বের সেই বিরক্তিকর জীবনই যাপন করতে হতো।

অপেক্ষা করা, চিন্তা করা বা প্রায় করে ফেলা গণনাযোগ্য নয়। কাইরা যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কোনো পরিবর্তনের জন্য আপনাকে আসলে কাজটি করতে হবে। প্রায় করে ফেলা বিবেচ্য নয়।

যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে আর আমরা যারা পারিনা, তাদের মধ্যে পার্থক্য একটাই– শুরু করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এগিয়ে চলা। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দৃশ্যপট বদলে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কারণ, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা আপনাকে আপনার মাথা থেকে বের করে নিয়ে আসবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

এবং এটা আমাদেরকে শিকাগো শহরের হায়াত রিজেন্সি হোটেল-এর শুড়িখানায় টম-এর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এনেছে। সে কি এখন তরুণীটির দিকে হেঁটে যাবে নাকি অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেবে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। নির্ভর করছে কে টম-এর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্তটি নেবে। এটা কি তার হৃদয় নাকি মস্তিষ্ক? কে জয়ী হবে– টম-এর স্বপ্ন নাকি ভয়? ঠিক এই ধরনের মুহূর্তের জন্য রোসা পার্কস কিছু অসাধারণ উপদেশ দিয়েছেন। টম-কে ঠিক তাই করতে হবে যা করা আবশ্যক। টম-এর হৃদয় জানে কি করা আবশ্যক। তাকে পুনরুজ্জীবিত হতে হবে।

অপেক্ষা করা কাজে দেবে না। অপেক্ষা শুধু কোন বিষয়কে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। আপনি যখন ভয় ও অনিশ্চয়তা নিয়ে বসে থাকবেন, আপনার মস্তিষ্ক এগুলোকে আরো বাড়তে দেবে। এর নাম দ্য স্পট লাইট ইফেক্ট (প্রচার আলোর প্রভাব) এবং এটা হলো আপনাকে নিরাপদ রাখতে আপনার মস্তিষ্কের অনেকগুলো কৌশলের একটি। টম-এর ভয়টি বাস্তব। অনিশ্চয়তা ভীতিকর ব্যাপার। নিজেকে সন্দেহ করা অ-সমর্থন যোগ্য। কেউই প্রত্যাখ্যাত বা বোকা হতে চায় না। কেউই নিজেকে নিঃশেষিত অবস্থায় দেখতে চায় না। একারণেই মুহূর্তটি আপনার সামনে দিয়ে একটি আন্তঃযোগাযোগ সভা, একটি পার্টি, একটি সাক্ষাৎকার, একটি ক্যাফেটেরিয়া অথবা আপনার যাকে আকর্ষণীয় মনে হয় তার দিকে হাঁটা শুরু করে দেয়। এটা আপনার কাছে ভীতিকর মনে হতে পারে। কি ভুল হতে পারে অথবা কতটা অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি, যদি সব সম্ভাবনা থাকার পরও কেউ আমাদের স্বাগত না জানায়।

কিন্তু টম নিরাপত্তা চায় না। টম তার জীবনকে পুনর্নির্মাণ করতে এবং আবারো ভালোবাসা পেতে চায়, যা করতে হলে প্রয়োজন মনোবল। শুড়িখানার অন্য প্রান্তের দিকে হেঁটে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপটি যতই ভীতিকর হোক না কেন, যে মুহূর্তে টম তা করবে, সে জীবনের সকল জাদু, আশ্চর্য এবং আনন্দ আবিষ্কার করতে শুরু করবে।

আপনি সমান্তরালভাবে কিছু কাজ করতে পারেন যেমন– আপনি অনিশ্চিত বোধ করতে এবং প্রস্তুত হতে পারেন। আপনি ভীতিবোধ করতে এবং যে কোনো ভাবে কাজটি করতে পারেন। আপনি প্রত্যাখ্যানের ভয় পেতে এবং তারপরও চেষ্টা চালাতে পারেন।

৫ সেকেন্ড-এর মনোবল বদলে দেয় সবকিছু

টম ক্ষণ গণনা শুরু করেন ৫-৪-৩ এবং এ পর্যায়ে যখন ২ এ পৌঁছান, তিনি তার জায়গা থেকে হাঁটতে শুরু করে দেন। তার কোনো ধারণা ছিলনা কি বলবেন। তার হৃত্যন্ত্র অস্থির ছিল কিন্তু দীর্ঘদিন পর এই প্রথমবারের মতো নিজেকে তার অসাড় মনে হলো না। তিনি প্রাণ অনুভব করলেন। তিনি যতই তরুণীটির দিকে এগোচ্ছিলেন, তার বুক ততই লাফাচ্ছিল। যখন তিনি পৌঁছুলেন, তরুণীটি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর কি হলো– সেটা অপ্রাসঙ্গিক।

কি হয়েছিল তা কোনো ব্যাপার নয় কারণ তিনি হয়তো তার হৃদয়সঙ্গী হবেন অথবা হবেন না। গল্পের শেষ অংশটি অপ্রাসঙ্গিক। একমাত্র যে বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো গল্পের শুরু, যেখানে টম আবার জীবন শুরু করা পছন্দ করেছেন। এভাবেই আপনার হৃদয়ের কথা শুনতে হয়। যখন আপনি নতুন করে ডেট করা শুরু করতে চান, একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান অথবা একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে চান– আপনাকে প্রথমে শুরু করার মনোবল খুঁজে পেতে হবে।

লক্ষ্য করুন, আমরা কেমন মরিয়া হয়ে একটি নিশ্চয়তা চেয়েছি যেন টম তরুণীটিকে পায়। এটি হয়তো একটি ভালো সিনেমার গল্প তৈরি করেছে কিন্তু তরুণীটিকে পাওয়া এখানে মূল বিষয় নয়। জীবন নিকোলাস স্পার্কস-এর কোন উপন্যাস নয়। জীবন ধুলোময় ও কঠিন এবং পাশাপাশি হঠাৎ করেই এটা উজ্জ্বল ও অসাধারণ। তরুণীটি কারো সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, সমকামী হতে পারে কিংবা হতে পারে সত্যিকারের দুশ্চরিত্র। এমনকি সে যদি অসাধারণ হয় এবং এর সমাপ্তি ঘটে উদ্দাম যৌনতা ও বিবাহ পর্বের মাধ্যমে, তারপরও তরুণীটি এই গল্পের শক্তির উৎস নয়। এটা হলো টম।

আপনার জীবনের মহামূল্য সম্পদ আপনার ভেতরেই সমাহিত অবস্থায় আছে। এটা অন্য কারো কাছে জমা করা নেই। টম তার নিজের জীবনের শক্তির উৎস, আর আপনার জীবনের শক্তির উৎস– আপনি নিজে। আপনি আপনার প্রবৃত্তির কথা যখন শোনেন তখন এই শক্তি বন্ধনমুক্ত হয়, আর ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একে সম্মানিত করেন। আপনি যখন আপনার ভেতরকার প্রকৃত আপনাকে আবিষ্কার করবেন, এটা হবে আপনার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপহার।

জিন-ব্যাপটিস্টও এটা দেখেছিলেন। তিনি আমাকে লিখেছিলেন– এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমি যে জীবনযাপন করতে চাই তা কেউ এসে আমাকে দিয়ে যাবে না। এই পৃথিবীতে আমার নিজে স্থান তৈরি করার একমাত্র উপায় হলো কাজ শুরু করে দেওয়া।

জিন-ব্যাপটিস্ট যেমনটি বলেছেন, আমিও ঠিক তাই বিশ্বাস করি– আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি সেখানে প্রত্যেকেই কিছু নতুন ও মৌলিক জিনিস যোগ করতে পারি। আমাদের সকলের ভেতরেই আছে বৃহত্তর মহত্ত্বের সম্ভাবনা।

প্রত্যহ নিজেকে সামনে ঠেলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার শক্তিকে সক্রিয় করে থাকেন। আপনি যখন আপনার প্রবৃত্তির কথা শুনবেন– মেল, উঠে পড় এবং দিনটির মুখোমুখি হও, টম, চিন্তা করা বাদ দাও এবং হাঁটা শুরু কর, ক্যাথরিন, তোমার বোনের সন্তানদের যত্ন নাও, রোসা, তোমার আসনটি ছেড়ে দিও না, তখন এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে আপনাকে অবশ্যই কি করতে হবে।

আপনি যখন আপনার হৃদয়কে অনুসরণ করবেন তখন এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি সিদ্ধান্তই কেবল আপনার মাথার ভেতরকার অহেতুক কিচির-মিচিরগুলোকে থামাতে পারে। বইয়ের শুরুতে আমি যেমন বলেছিলাম– আপনি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবন থেকে শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের দূরত্বে অবস্থান করছেন।

আমরা অনিশ্চয়তার ব্যাপারে এতটাই ভীত যে কখনো কখনো এমনকি চেষ্টা করে দেখার আগেই আমরা নিশ্চয়তা চাই। আমরা প্রমাণ দেখতে চাই যে, যদি আমরা ঝুঁকি নেই তাহলে মেয়েটিকে পাব। এমনকি টম যদি মেয়েটিকে পেয়ে থাকে তবে তা প্রমাণ করে না যে আপনিও আপনার কাঙ্ক্ষিত নারী/পুরুষটিকে পাবেন। যে কোন খেলায়, আপনাকে প্রথমে শুরু করতে হবে। জয়ী হওয়ার জন্য তা চালিয়ে যেতে হবে। আপনি যদি আপনার স্বপ্নকে সত্যি করতে চান, তাহলে লম্বা সময় ধরে খেলা চালিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিন।

জীবন কোন ধরো এবং মারো ধরনের চুক্তি নয়। আপনি যা চান তার জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে। আপনি কি এ্যাংরি বার্ড খেলাটি সম্পর্কে জানেন? এই খেলাটি বাজারে ছাড়ার আগে তারা ৫১টি খেলায় ব্যর্থ হয়েছিল। এভেঞ্জার্স তারকা মার্ক রুফালো সম্পর্কে শুনেছেন কি? আপনি কি জানেন তার প্রথম চরিত্রটি পাওয়ার আগে ঠিক কতবার তাকে অডিশন দিতে হয়েছিল? প্রায় ৬০০ বার! এমনকি বাব রুথও ১,৩৩০ বার অডিশন দিয়েছিলেন।

আমার প্রিয় ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হলো ডায়সন। মেশিনটির ধুলোবালি শোষণ করার ক্ষমতা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জেমস্ ডায়সন ইতিপূর্বে একই ধরনের ৫,১২৭টি মেশিন তৈরি করেছিলেন। এই শেষ সংস্করণটি আপনার মাথা ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। পিকাসো তার জীবদ্দশায় প্রায় ১০০টির মতো সেরা শিল্পকর্ম (মাস্টারপিস) তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ যেটা জানেন না তা হলো– পিকাসো ৫০,০০০টির চাইতেও বেশি শিল্পকর্ম তার সারা জীবনের শিল্পচর্চায় সৃষ্টি করেছিলেন।

আপনি কি শেষ সংখ্যাটি লক্ষ্য করেছেন? ৫০,০০০! এর মানে হলো প্রতিদিন ২টি করে শিল্পকর্ম। সফলতা একটি সংখ্যার খেলা। এবং আপনি এটা কখনোই জিততে পারবেন না যদি নিজেকে ক্রমাগত অপেক্ষা করতে বলেন। যত দ্রুত আপনি সাহস সঞ্চয় করবেন, সফলতার সম্ভাবনা আপনার তত বেশি।

আপনি যখন নিজেকে সামনে ঠেলে দিতে ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করবেন, আপনার জীবনে আপনি জাদু আবিষ্কার করবেন এবং নিজেকে পৃথিবীর সামনে, সুযোগ ও সম্ভাবনার সামনে মেলে ধরতে সক্ষম হবেন। আপনি হয়তো মেয়েটিকে পাবেন না, আপনার অংশ পাবেন না অথবা যে প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন তা পাবেন না, কিন্তু এটা মূল কথা নয়। দিন শেষে আপনি হয়তো আরো অসাধারণ কিছু পেয়ে যাবেন– আপনি আপনার অন্তর্গত শক্তিকে আবিষ্কার করবেন।

এক মিনিট, এটা নিয়ে আমাকে একটু ভাবতে দিন।

*

(৭) নতুন অনুভব

বেড়ে ওঠার জন্য এবং আপনি সত্যি ঠিক যা, তাই হওয়ার জন্য চাই মনোবল।

– ই. ই. কিউমিংস

প্লানো, টেক্সাস-এর এক গ্রীষ্মের বিকেল বেলা। ক্রিস্টিন নামে এক ভদ্রমহিলা তার কর্মস্থলে এক কর্মীসভায় বসে আছেন। তার বস কোম্পানির একটি বিশাল পরামর্শ প্রদানকারী ব্যবস্থা (কনসাল্টিং বিজনেস) প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে সকলের মতামত ও ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য সভাটি ডেকেছেন। এটি এখন দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার আর সিদ্ধান্তটি নেয়া হবে আগামী সপ্তাহে। ক্রিস্টিন শুনছিল এবং নোট করছিল, হঠাৎ করেই একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের চিন্তা তার মাথায় আসে। তিনি বলেন :

আমরা যদি একটি স্ন্যাপচ্যাট জিও ফিল্টার তৈরি করে তা সম্ভাব্য অফিস ভবনগুলোতে যুক্ত করে দিই তাহলে ঐ সব ভবনে সবাই যারা স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করছে তারা এটি দেখবে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এটি একটি সংকেত দেবে।

এ সময় তার মস্তিষ্ক অবিশ্বাস্য সব বিষয় নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিল, সহকর্মীদের সঙ্গে তার আলোচনা বন্ধ হয়ে গেল এবং বাণিজ্য উন্নয়ন উপ প্রধান বললেন– এটা একটা অসাধারণ পরামর্শ, আর কেউ?

ক্রিস্টিন কে এখন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা পরবর্তী ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।

তিনি জানেন তাকে আলোচনায় নেমে পড়তে হবে কিন্তু প্রথমে তিনি চিন্তা করা বন্ধ করলেন। এটা কি পাগলামি হয়ে যাচ্ছে? অন্য কেউ এর ধারে কাছেও কিছু পরামর্শ দেয়নি। সে তার চেয়ারে বসল। আর কেউ স্ন্যাপচ্যাট এর বিষয়টি উল্লেখ করেনি, এর কি কোনো বিশেষ কারণ আছে? এখন তার মনে হতে লাগলো– এই ধারণাটি শেয়ার করা তার আদৌ উচিত হয়েছে কিনা।

পরবর্তী ৫ সেকেন্ড ক্রিস্টিন হয় চুপ থাকবে যা কর্মস্থলে অভ্যাসের একটি ধরন হয়ে দাঁড়িয়েছে, না হয় তাকে কথা বলার সাহস খুঁজে পেতে হবে। সাথে ক্রিস্টিন-এর একটি লক্ষ্যও রয়েছে। তিনি কর্মস্থলে উন্নতি করতে চান এবং আরো জ্যেষ্ঠ পদবীর জন্য নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তার উদ্বেগ রয়েছে যদি না তিনি তার নির্বাহী উপস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে কি করা উচিত তা খুঁজে বের করতে প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন এবং আমাকেও লিখেছিলেন, কারণ এটা করার জন্য নিজের সক্ষমতার সাথে তিনি সংগ্রাম করছিলেন। আত্মবিশ্বাস নেমে যাচ্ছিল।

তিনি লান ইট, ট্রাইবস, ডেয়ারিং গ্রেটলি এবং দ্য কনডিফেন্স কোড এর মতো বইগুলো পড়ে ফেলেছিলেন। তিনি মহিলা সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন, পরামর্শদাতার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং বাড়িতে আয়নার সামনে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো অনুশীলন করেছেন। এই সকল গবেষণা ও পড়াশোনার প্রতি– কৃতজ্ঞতা। ক্রিস্টিন এখন জানে তাকে কি করতে হবে (কৌশলগত ধারণা শেয়ার করা, সক্রিয়া হওয়া, স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, আরো দৃশ্যমান হওয়া এবং যে প্রকল্পগুলো তাকে প্রসারিত করবে তাতে স্বেচ্ছাসেবক হওয়া) এবং কেন করতে হবে।

আপনি সম্ভবত ভাবছেন, কেন ক্রিস্টিন কথা বলেনি যেখানে তার সুযোগ ছিল কথা বলার। দারুন প্রশ্ন। উত্তরটি কিন্তু খুব সহজ। তিনি অনুভূতিগুলোর সাথে তার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছিলেন। ক্রিস্টিন-এর কথা বলার ব্যাপারে কোনো সমস্যা ছিল না। তিনি আত্ম-সন্দেহের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। একটি সভায় কিভাবে কথা বলতে হয়, ক্রিস্টিন অবশ্যই তা জানেন। যা জানেন না তা হলো কিভাবে অনুভূতিগুলোকে পরাজিত করতে হয়, যেগুলো তাকে থামিয়ে দিচ্ছিল।

আপনি যদি কখনো এটা জেনে বিস্মিত হয়ে থাকেন যে, কেন এমন জিনিসগুলো করা কঠিন যা আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান ও জীবনমানের উন্নতি করবে, তাহলে এর উত্তরটি খুব সহজ।

এটা আপনার অনুভূতি। আমরা কেউ এটা বুঝতে পারি না, কিন্তু আমরা প্রায় সব সিদ্ধান্তই আমাদের যুক্তি দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, আমাদের লক্ষ্য ও স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে গ্রহণ করি না– গ্ৰহণ করি আমাদের অনুভূতি দিয়ে। কিন্তু আমাদের অনুভূতিগুলো প্রায়শঃই যা আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। উদাহরণ হিসেবে ক্রিস্টিন-কে নিতে পারেন। তিনি জানেন তার জন্য সবচেয়ে ভালো কি, কর্মীসভায় কথা বলা, কিন্তু তার অনুভূতি তাঁকে দ্বিতীয় কিছু অনুমান করতে প্রলুব্ধ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে– হৃদয় থেকে আমরা জানি যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ভালো করবে তার চাইতে বরং এই মুহূর্তে যা আমাদের কাছে ভালো বা সহজ মনে হয়, আমরা তাই বেছে নেই।

যে মুহূর্তে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অনুভূতিগুলোই আপনার সমস্যা, আপনি এটাও জেনে যাবেন এদের পরাজিত করার ক্ষমতা আপনার ভেতরে রয়েছে। খেয়াল করে দেখুন প্লানো, টেক্সাস-এর কর্মীসভায় কত দ্রুত ক্রিস্টিন-এর অনুভূতিগুলো ডালপালা মেলে দিয়েছিল। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তার মন সন্দেহে পরিপূর্ণ হতে শুরু করেছিল। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। একবার যখন আপনি বুঝতে পারবেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপনার অনুভূতিগুলোর ভূমিকা কি, আপনি তাদের পরাজিত করতে পারবেন।

আপনার সিদ্ধান্তগুলো অনুভূতির উপর ভিত্তি করে নেওয়া

আমরা এটা ভাবতে পছন্দ করি যে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো যুক্তি বা লক্ষ্য নির্ভর, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী এন্টোনিও দামাসিওর মতো ৯৫% ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়। আপনি চিন্তা করার পূর্বে অনুভব করেন। আপনি কাজ করার পূর্বে অনুভব করেন। দোমাসিও যেমনটি মনে করেন– মানুষ হলো অনুভূতির যন্ত্র যে চিন্তা করে, চিন্তা করার যন্ত্র নয় যে অনুভব করে। এবং এভাবেই আসলে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, আপনার অনুভূতির উপর ভিত্তি করে। দোমাসিও সেইসব মানুষদের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যাদের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যারা কোনো আবেগ অনুভব করতে অক্ষম, আর তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক। যাদের তিনি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তাদের কেউই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। তারা যৌক্তিকভাবে কি করা উচিত বা একটি পছন্দের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বর্ণনা করতে পেরেছিল কিন্তু সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করতে পারেনি। আমি কি খেতে চাই জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও তারা ছিল অসাড়।

দোমাসিও যা আবিষ্কার করেছিলেন আপনাকে তা সর্বাগ্রে অনুধাবন করতে হবে। প্রত্যেকবার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় অবচেতন মনে আমরা আমাদের পছন্দটির সুবিধা অসুবিধাগুলো বিচার বিবেচনা করি এবং তারপর যেভাবে আমরা অনুভব করি তার উপর ভিত্তি করে একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। এটি এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে ঘটে থাকে, আর এজন্যই আমাদের কেউ এটা ধরতে পারে না।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন নিজেকে প্রশ্ন করেন– আমি কি খেতে চাই? তখন আপনি আসলে নিজের কাছে জানতে চাইছেন– কি খেতে আমার ইচ্ছে করছে? একইভাবে, আমি জিজ্ঞেস করিনি যে– আমার কি ওঠা উচিত? আমি আসলে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম– আমি কি উঠে পড়তে পছন্দ করব? টম জিজ্ঞেস করেনি– আমি কি তার কাছে হেঁটে যেতে চাই? অবচেতন মনে তিনি আসলে জিজ্ঞেস করেছিলেন– আমি কি তার দিকে হেঁটে যাওয়ার ব্যাপারে অনুভব করছি? ক্রিস্টিন তার কর্মক্ষেত্রে ঠিক এটাই করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেননি– আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করব? তিনি অবচেতন মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন– আমি কি আমার ধারণা শেয়ার করার মতো কিছু অনুভব করছি?

বিশাল পার্থক্য। আর এটা ব্যাখ্যা করে কেন পরিবর্তন এত কঠিন। যৌক্তিকভাবে, আমরা জানি আমাদের কি করা উচিত, কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অনুভূতিগুলোই আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আপনার অনুভূতিগুলো এটা করে ফেলবে। ঐ মুহূর্তে আপনি যেভাবে অনুভব করে থাকেন তা কখনোই আপনার লক্ষ্য এবং স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আপনি যা চান তা কখনোই পাবেন না যদি আপনি শুধুমাত্র আপনার তাৎক্ষণিক অনুভূতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকেন।

আপনি যে কাজগুলো করে থাকেন তা থেকে আপনার অনুভূতিগুলোকে আলাদা করা শিখতে হবে।

• যে মুহূর্তে আপনি খুব ক্লান্তি বোধ করেন, আপনি না দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি দৌড় শুরু করে দিতে পারেন।

• আপনি যদি আপনার টেবিলের কার্যতালিকা অনুসরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ বোধ না করে থাকেন, আপনি কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি তা করতে নিজের উপর জোর খাটাতে পারেন।

• আপনি যদি নিজেকে যোগ্য মনে না করেন, আপনি বিশেষ কাউকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনি বলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আপনি যদি আপনার কার্যকলাপ থেকে অনুভূতিগুলোকে আলাদা করতে না শেখেন, আপনি আপনার সত্যিকারের সম্ভাবনাগুলোকে কখনোই বন্ধনমুক্ত করতে পারবেন না।

এভাবেই আপনার অনুভূতিগুলো পরিবর্তন থেকে আপনাকে সরিয়ে রাখে। আপনি কিভাবে অনুভব করছেন তা যখন বিবেচনা করা বন্ধ রাখেন, আপনি আসলে লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করে দেন। একবার যখন আপনি দ্বিধা করেন, আপনি চিন্তা করা শুরু করেন। কি করা প্রয়োজন, কি ভালো কি মন্দ। যা করা প্রয়োজন সেই সম্পর্কে কিভাবে আপনি অনুভব করছেন তা বিবেচনা করেন এবং আপনি কাজটি করার বাইরে অন্য বিষয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।

আমি এটা আগেও বলেছি এবং আবারও বলব, কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট ডায়েট অনুসরণ করতে, একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে, একটি ভেঙ্গে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক মেরামত করে জীবন পুনর্নির্মাণ করতে, আপনার বিক্রয় লক্ষ্য অর্জন করতে অথবা একজন খারাপ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে আপনি আপনার সক্ষমতা নিয়ে লড়াই করছেন না, আপনি আসলে এটা করতে আপনার অনুভূতিগুলোর জন্য লড়াই করছেন। আপনি অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও ভালোর জন্য যে কোনো পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে অনেক বেশী সক্ষম।

আপনি কিভাবে অনুভব করবেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কিন্তু কিভাবে কাজ করবেন তা সবসময় নির্বাচন করতে পারেন।

এটা সবসময় আশ্চর্যজনক যে কি করে পেশাদার ক্রিড়াবিদরা এতসব অর্জন করেন? এর একটি অংশ প্রতিভা ও অনুশীলন, কিন্তু অন্য একটি মূল উপাদান দক্ষতা যা আমার আপনার সবার জীবনে প্রয়োজন– আমাদের আবেগ থেকে বাস্তবতা আলাদা করার দক্ষতা এবং শরীর ও মুখকে নাড়ানোর জন্য ধাক্কা দেওয়া। যখন ফুটবল চতুর্থ অর্ধে প্রবেশ করে, তারা হয়তো ক্লান্তি অনুভব করেন কিন্তু তা তারা প্রদর্শন করেন না। অনুভূতিগুলো নিছকই পরামর্শ যখন কোনো শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ বা দল তা উপেক্ষা করে। পরিবর্তনের জন্য আপনাকেও একই কাজ করতে হবে। আপনি অবশ্যই উপেক্ষা করবেন ঠিক যেভাবে অনুভব করবেন, নাইকি যেমন বলে থাকে– যেভাবে হোক কাজটি করুন।

প্রত্যেক মানুষই আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করে। লিন-ম্যানুয়েল মিরান্ডা-কে জিজ্ঞেস করুন যিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হ্যামিল্টন-এর স্রষ্টা যা ২০১৬ সালে ১১টি টনি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিল। তার ছয় বৎসর সময় লেগেছিল হ্যামিল্টন লিখতে। আপনি হয়তো পরবর্তী হ্যামিল্টন লেখার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু ভুলে যাবেন না, মিরান্ডার ৬ বৎসর লেগেছিল এবং এর প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছিল।

তিনি সম্প্রতি তার টুইটার পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটি মিরান্ডা ও তার স্ত্রী ভেনেসার মধ্যকার কথোপকথনের উপর একটি পোস্ট। তিন বৎসর আগে হ্যামিল্টন যখন সর্বসাধারণের সামনে প্রথম আবির্ভূত হয় এবং এক হাজার ডলার মূল্যের টিকিট বিক্রি করা শুরু করে, মিরান্ডা তখনো এই মিউজিক্যালটি লিখছিলেন এবং তার আত্ম-সন্দেহ বোধের সাথে লড়াই করছিলেন। তার ভাষায় :

আমি যত দ্রুত এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম তত দ্রুত হচ্ছিল না এবং এটা শেষ করার জন্য অপেক্ষা করে আমি সময় নষ্ট করতে চাইছিলাম না। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে আমাকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল।

মিরান্ডা কি করলেন? তিনি নিজেকে ধাক্কা মারলেন এবং লিখতে থাকলেন। এজন্য তিনি তার টুইটার পৃষ্ঠায় পোস্ট করেছিলেন– এটা মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা প্রত্যেকে একই রকম। আমরা সবাই নিজেকে পরাজিত করার একই রকম অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করছি এবং এ থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করা এবং নিজের কাজে ফিরে যাওয়া।

তার স্ত্রী যা বলেছিলেন তা আমার পছন্দ হয়েছিল। প্রত্যেকেরই এই সমস্যাটি হয়, সবসময়। তিনি ঠিকই বলেছেন। এটাই সত্যি। আপনি সবচেয়ে বড় ভুলটি করতে পারেন যখন আপনার অনুভূতিগুলোর কথা শুনে কোনো কিছু করতে যাবেন। কোনো কিছুর জন্য অনুভব করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং আপনার কাজে ফিরে যান।

চলুন ফিরে যাই প্লানো, টেক্সাস-এ, যেখানে ক্রিস্টিন-কে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পূর্বে, যখনই তিনি অনিশ্চিত বোধ করেছেন, তিনি হয়তো কিছু না বলে নিজের নোটপ্যাড-এর দিকে তাকিয়ে থেকেছেন, আর ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে মুহূর্তটি হয়তো কেটে গেছে। আর যদি তার কোনো সহকর্মী একই ধারণা উত্থাপন করে থাকে (যা সহকর্মীরা প্রায়ই করে থাকে তাহলে সারা বিকেলজুড়ে তিনি হয়তো কথা না বলে চুপ থাকার জন্য নিজেকেই দায়ী করতে থাকবেন।

কিন্তু, আজ ক্রিস্টিন ভিন্ন কিছু করলেন। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন এবং অনুভব করছিলেন ৫ সেকেন্ড-এর জানালাটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারণ তার মস্তিষ্ক তার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। তিনি যখন রুলটি প্রয়োগ করলেন, তার পেটের ভেতর গিট লেগে গেল।

তিনি তার সন্দেহগুলোকে চুপ করিয়ে দিতে এবং মস্তিষ্কের গিয়ারগুলোকে চালু করতে নীরবে উল্টো গণনা শুরু করলেন–

৫…৪…৩…২…১

এই গণনাটি তার আচরণের স্বাভাবিক ধারাকে ব্যাহত করল, ভয় পাওয়া থেকে তাকে বিরত রাখল এবং ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ গ্রহণের একটি মুহূর্ত সৃষ্টি করল। ঐ মুহূর্তটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি তার প্রিফ্রন্টাল করটেক্স-কে সক্রিয় করলেন যাতে করে চিন্তা-ভাবনাগুলো পরিচালনা ও কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়। অতঃপর তিনি মুখ খুললেন এবং বললেন– আমার কাছে একটি ধারণা আছে।

সবাই তার দিকে ঘুরে তাকাল এবং ক্রিস্টিন-এর মনে হলো তিনি সেখানেই মারা যাবেন। সামনে এগোতে নিজের উপর জোর খাটালেন তিনি। একটু উঁচু হয়ে বসলেন, একটু বেশি জায়গা নিয়ে টেবিলের দুপাশে তার কনুই দুটি ছড়িয়ে দিলেন (শক্তিশালী অঙ্গপ্রদর্শন যেমন পরামর্শ দিয়ে থাকে) এবং কথা বলা শুরু করলেন– সুতরাং, আমার ধারণা, আপনারা পরিসংখ্যানগত ভাবে জানেন কিভাবে অজস্র মানুষ একটি প্রচার মাধ্যম হিসেবে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করছে…

সবাই তার ধারণাটি শুনলেন, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন এবং তারপর তার বস বললেন– ধন্যবাদ ক্রিস্টিন, অত্যন্ত আকর্ষণীয় পরামর্শ, আর কেউ? বাইরের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটল না কিন্তু ভেতরে জীবন বদলে দেয়ার মতো কিছু একটা ঘটে গেল। ক্রিস্টিন নিজের ভেতরে সেই মনোবল আবিষ্কার করলেন যা কর্মক্ষেত্রে তিনি যা হতে চেয়েছিলেন (একজন রকস্টার) তার জন্য প্রয়োজন ছিল।

ক্রিস্টিন যা বলেছিলেন তা মুখ্য বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি যা কিছু বলেছিলেন তা ঐ মুহূর্তটিকে শক্তিশালী করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযানের উদ্দেশ্যে তার ধারণা শেয়ার করা ছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিপণন কৌশলের চাইতেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা ক্রিস্টিন-কে পরিবর্তন করে দিল। এটা শুধু তিনি কেমন আচরণ করেন তাই পরিবর্তন করল না বরং নিজেকে তিনি কিভাবে দেখেছিলেন তাও পরিবর্তন করে দিল। এটা এমনকি তার মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করে দিল। এটাই হলো যেভাবে আপনার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে– একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের পদক্ষেপ দ্বারা।

তিনি একটু মনোবল খুঁজে পেতে নিজের ভেতর গভীরে পৌঁছানোর জন্য ফাইভ সেকেন্ড রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। এবং কথা বলার মাধ্যমে (যখন সাধারণতঃ নিজেকে তিনি পেছনে টেনে ধরে রাখতেন) প্লানো, টেক্সাস-এর এক বিকেল বেলায় সম্মেলন কক্ষে বসে তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করেছিলেন যে, কর্মক্ষেত্রে ধারণা শেয়ার করে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট পরিমাণে ভালো এবং করিতকর্মা।

এটি ছিল একটি ছোট কিন্তু বিস্ময়কর পদক্ষেপ। এবং এর জন্য প্রয়োজন। হয় মনোবল। রুলটি ছিল কেমন করে তিনি একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং পরামর্শটি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন সেই সংক্রান্ত, যা আমরা সবাই জানি কাজ করে থাকে। এটি ছিল কেমন করে –শেরিল স্ট্যান্ডবার্গ অনুরোধ করেছিলেন, সেথ গোডিন টিকটিকি মস্তিষ্ককে বোকা বানাতে চেয়েছিলেন, গ্রান্ট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মৌলিক কাজ দেখাতে চেয়েছিলেন এবং ব্রেনে ব্রাউন মহা-সাহসিকতার সাথে আমাদের ক্ষমতায়িত করতে চেয়েছিলেন।

ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি, রুলটি এমন একটি হাতিয়ার যা ক্ষণিকভাবে মানুষের আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম। ঠিক এভাবেই ক্রিস্টিন রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। আপনিও তাই করবেন। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে। ক্রিস্টিন তার অনুভূতিগুলোকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা তাকে থামিয়ে দিত এবং কর্মজীবনে অধিক প্রভাব বিস্তার করত। তিনি তার ধারণাগুলো প্রকাশ করার জন্য যত বেশি করে রুটি ব্যবহার করবেন, ততবেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।

আত্মবিশ্বাস একপ্রকার দক্ষতা যা আপনি কাজের মাধ্যমে অর্জন করে থাকেন। সামাজিক মনোবিজ্ঞানী টিমোথি উইলসন অ্যারিস্টটল-কে মানসিক হস্তক্ষেপ সম্পর্কে লিখেছিলেন– ভালো করুন, ভালো হোন। এর সূচনা প্রথমতঃ মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে, যা তাদের কাজের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বের আত্ম-উপলব্ধি বদলে দেয়।

ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আপনার সঙ্গী হওয়ার এটাই সঠিক কারণ। এটি কাজ ও আচরণ পরিবর্তনের সাথে আপনার লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি চিন্তা করার হাতিয়ার নয় এবং দিনের শেষে আপনি যদি জীবনকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে চিন্তা করার চাইতে আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে।

এ ব্যাপারে উইলসন পরিষ্কারভাবে সম্মত। তিনি বলেন– আমাদের মস্তিষ্ক বোকা নয়। এটা এমন নয় যে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে বলবেন ইতিবাচক চিন্তা কর আর তা জেগে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি আপনাকে এর চাইতে বেশি কিছু করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই আপনার অভ্যাসগুলো যা আপনাকে থামিয়ে দেয়, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে হবে। আপনাকে অভ্যাসগুলো ভাঙতে হবে যা আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখে। অতঃপর আপনার প্রত্যেকটি ধ্বংসাত্মক অভ্যাস এক একটি সাহসী অভ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে। পরবর্তী সভায় ক্রিস্টিন-কে প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করতে হবে। তাকে কিছু বলতে হবে এবং তিনি অনিশ্চিত ও অস্বস্তিবোধ করবেন। যখন তিনি তার ধারণাগুলো শেয়ার করতে যাবেন, নিজের প্রতি তার সন্দেহ জাগবে এবং দ্বিধাবোধ করবেন। তিনি প্রতিহত অনুভব করবেন। এটাই ধাক্কা দেওয়ার প্রকৃত সময়। এটা সেই মুহূর্ত যখন আপনার মূল্যবোধ ও লক্ষ্য একটি রেখায় এসে দাঁড়াবে কিন্তু আপনার অনুভূতি আপনাকে না বলবে। কথা বলার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে ক্রিস্টিন-এর ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে।

রুলটি তিনি যত বেশি ব্যবহার করবেন, কর্মী সভায় তার চুপ করে থাকার অভ্যাসটি তত বদলাবে এবং মনোবল নামক নতুন একটি অভ্যাস প্রতিস্থাপিত হবে। ক্রিস্টিন যত বেশি তার নিজেকে প্রকাশ করতে ও অন্তর্গত ধারণাগুলোকে বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন, ততবেশি প্রাণবন্ত, সংযুক্ত ও ক্ষমতায়িত হতে থাকবেন।

ন্যাট জানেন এটি ঠিক কতটা ক্ষমতায়নজনিত অনুভূতি। তিনি এখন ব্যবসার প্রবৃদ্ধির জন্য নিজের ধাক্কা দিতে প্রতিদিনই রুলটি ব্যবহার করছেন। তার ভাষায়–

হ্যাঁ, রুটি এখন আমি প্রতিদিনই ব্যবহার করছি। আজকে যেমন করলাম। আমি যে হাসপাতালে কাজ করি সেখানে একজন ভদ্রমহিলা রোগী হিসেবে অপেক্ষা করছিলেন এবং আমি সেখানে একটি সম্ভাব্য বাজার দেখতে পেলাম। আমি ভদ্রমহিলার কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করলাম, একটু আন্তরিক হলাম এবং তার কাছ থেকে যোগাযোগের তথ্যাদি সংগ্রহ করলাম যাতে করে আমরা সংযুক্ত থাকতে পারি এবং পরবর্তী কোনো সময়ে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারি।

রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ক্যারল একটি পেশাদার সম্মেলনে তার সেবিকা সহকর্মীদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করার মতো মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন যা ছিল তার নিজেকে ধাক্কা দিয়ে নিজের আরামদায়ক এলাকা থেকে বাইরে বের করে এনে জীবনের একটি লক্ষ্য অর্জন করার মতো।

আলেকজান্ডার-কে যখন তার কর্মস্থলে একটি উপস্থাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো, তার মাথায় এসে অসংখ্য অজুহাত ভর করল। ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে তিনি সবকিছু বদলে দেয়া একটি মুহূর্তের সন্ধান পান যা তাকে একটি স্নাতকোত্তর ক্লাসে শিক্ষা দেওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল।

ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির ব্যবহার এত স্বাধীন হওয়ার কারণ হলো আপনি এতে শুধু একটি মুহূর্তকেই জব্দ করছেন না বরং আপনার জীবনের মালিকানা ভার গ্রহণ করছেন। আপনি হ্যাঁ এবং নাগুলোকে বদলে দিচ্ছেন। জিম যেমনটি বলেছেন– আপনার নিজের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করবেন না। তিনি বিশ্লেষণ অসাড়তা-কে পরাস্ত করতে রুলটি ব্যবহার করেছিলেন, আর পেয়েছিলেন একটি অবিশ্বাস্য বছর।

উলসন বলেছিলেন– ভালো করুন, ভালো হোন। সর্বপ্রথম আপনার আচরণ বদলান কারণ আপনি যখন তা করবেন নিজেকে উপলব্ধি করার ধরনও বদলে যাবে। ঠিক এটাই রুলটি ব্যবহার করার সময় এ্যানা ক্যাট আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একজন পেশাদার বিপণন কর্মী যিনি শান্ত থাকা পছন্দ করতেন বিশেষ করে সবাই যখন তাকে লক্ষ্য করছে। তার দুশ্চিন্তা ছিল সহকর্মীরা হয়তো তাকে বোকা ও অনভিজ্ঞ ভাবছে। আমাকে লেখা এ্যানা ক্যাট-এর চিঠি :

প্রিয় মেল,

এই হলো আমার ফাইভ সেকেন্ড রুল সংক্রান্ত গল্প :

আমি যখন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের আগেই আমার সকালের কাজগুলো শেষ করার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে বিছানা থেকে (৫ সেকেন্ডের মধ্যে) টেনে তুলেছিলাম, আমার পেশাজীবন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।

আমি বিপণনে আছি তাই সবসময় নতুন নতুন ধারণার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। প্রত্যেকটি নতুন ধারণা পুরনোটিকে সরিয়ে দিতে পারে এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রচারণার উন্নয়ন ঘটাতে এবং আমাদের ভোক্তাদের জন্য বিশেষ ফলাফল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। হ্যাঁ, ছোট্ট একটি ধারণা। সব একত্রিত করে রাখার জন্য আমি যেখানেই যাই না কেন, আমার ব্যাগে একটি ছোট নোটবই বহন করি এবং তা জরুরি কাজগুলো লিখে রাখার জন্য ব্যবহার করি কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমি আমার ধারণাগুলোই লিখে রাখি।

আমি মনে করি না ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আমার ধারণাগুলোকে দীর্ঘায়ু করে এবং অনুমোদনের আশায় আমি সেগুলো কোথাও পাঠাইও না। শুধুমাত্র পরবর্তীতে ব্যবহার করার জন্য ধারণাগুলো রেখে দিই। আমি শুধু চাই এগুলো কাগজে লেখা থাকুক। পরে, এগুলোকে আমি আবার দেখি এবং সময় নিয়ে মূল্যায়ন করি যাতে করে এ থেকে কোনো অসাধারণ কৌশল উদ্ভাবন করা যায়।

ধারণা শেয়ার করার সময় অথবা তা লিখে রাখার সময় আমি মেনিমুখো একজন হয়ে যেতাম। মানুষ কি চিন্তা করবে অথবা যদি তারা আমাকে মূর্খ ও অনভিজ্ঞ মনে করে, এই ভেবে আমি সচেতন এবং চিন্তিত হয়ে পড়তাম। ভয়ঙ্কর বিড়াল উপসর্গ দূর হয়ে যাওয়ার পর আমার সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটেছিল। এখন আমি আর মনে করতে পারিনা যে, কেন আমি আগে এতটা উদ্বিগ্ন ছিলাম।

ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির জন্য ধন্যবাদ।

পুনশ্চ : আমার দল এখন আমার ধারণাগুলো নিয়ে গবেষণা করছে।

– এ্যানা ক্যাট।

আপনি নিজেকে ভয়ঙ্কর বিড়াল মনে করতে পারেন কিন্তু ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনার মাধ্যমে আপনিও মহৎ কাজ করতে পারেন। আপনার কাছে যা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ তা করতে, বলতে অথবা অনুসরণ করতে ৫ সেকেন্ডের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। এ কারণেই মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যকার বন্ধন এত অচ্ছেদ্য। প্রতিবার আপনি যখন সন্দেহের মুখোমুখি হবেন, ৫-৪ ৩-২-১ ক্ষণ গণনা করে তা পার হয়ে যান এবং নিজেকে সক্ষম প্রমাণ করুন।

প্রতিবার আপনি যখন ভয়কে প্রতিহত করবেন, ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং কাজটি যেভাবেই হোক সম্পন্ন করুন যাতে করে আপনার অন্তর্গত শক্তির প্রদর্শন হয়। প্রতিবার আপনি যখন অজুহাতগুলোকে ধ্বংস করবেন, ৫ ৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করুন এবং কথা বলুন যাতে করে আপনার মহত্ত্বকে সম্মানিত করা যায়। এভাবেই বেড়ে উঠবে আত্মবিশ্বাস– একটি ছোট ও সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে।

*

(৮) কেমন করে শুরু করতে হবে

আপনি পারেন কিংবা পারেন না যাই চিন্তা করেন না কেন, তাই ঠিক।

– হেনরি ফোর্ড

ফাইভ সেকেন্ড রুল্ল-টি প্রয়োগ করার দ্রুততম উপায় হলো আমি যেভাবে করেছিলাম ঠিক সেভাবে প্রয়োগ করা। আগামীকাল ভোরে উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনি রুলটির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। স্বাভাবিক সময়ের ৩০ মিনিট আগে আপনার অ্যালার্মটি সেট করুন, রিং বাজার সাথে সাথে ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে তুলে দিন।

পরিবর্তন খুব সাধারণ কিন্তু সহজ নয়।

কেন এই চ্যালেঞ্জটি গুরুত্বপূর্ণ তার কিছু কারণ রয়েছে–

(এক)– এখানে আন্দোলিত হওয়ার কোনো জায়গা নেই। চ্যালেঞ্জটি সহজবোধ্য। এটা শুধু আপনি, অ্যালার্ম ঘড়ি আর ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা। আপনি ব্যর্থ হলে তার কারণ ফাইভ সেকেন্ড রুলটিকে ব্যর্থ করে দেওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত আপনি হয়তো গ্রহণ করেছেন।

(দুই)– আপনি যদি আপনার সকালের কর্মসূচি পরিবর্তন করতে পারেন, তবে সবকিছুই পরিবর্তন করতে পারবেন। পরিবর্তনের জন্য আপনার অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে হবে। আপনি যদি জীবনের একটি ক্ষেত্রে এটা করতে পারেন, তাহলে জীবনের যে সব ক্ষেত্রে আপনি উন্নতি করতে চাইছেন, সেসব ক্ষেত্রেও করতে পারবেন।

(তিন) –আমি চাই আপনি সক্রিয়করণ শক্তি ধারণাটির অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং অনুভব করুন– সাধারণ কিছু করতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়া কতটা কঠিন। রসায়নশাস্ত্র মতে সক্রিয়করণ শক্তি হলো– একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন পরিমাণ শক্তি। রসায়নবিদরা লক্ষ্য করেছেন, এই প্রাথমিক শক্তির পরিমাণটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে চলমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় গড় শক্তির চাইতে অনেক বেশি। কি আছে এর ভেতরে? অনেক কিছু। নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে তুলে আনতে যে পরিমাণ প্রাথমিক শক্তি লাগে তা আপনার উঠে পড়া ও চলমানতা অব্যাহত রাখার জন্য ব্যবহৃত শক্তির চাইতে অনেক অনেক বেশি।

কিংবদন্তিতুল্য মনোবিজ্ঞানী মিহালী সিসাইজেন্টমিহালী এই ধারণাটি মানবিক আচরণের উপর প্রয়োগ করেছিলেন এবং আবিষ্কার করেছিলেন সক্রিয়করণ শক্তি হলো একটি বড় কারণ যার জন্য কোনো পরিবর্তন এত কঠিন। তিনি এর সংজ্ঞা নিরূপণ করতে গিয়ে বলেছেন– এটা হলো পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শক্তির ধাক্কা যা থেমে থাকা একটি গাড়িকে নাড়াতে কিংবা ভোরবেলা উষ্ণ বিছানা থেকে আপনাকে তুলে দিতে কাজ করে।

ফিলিপাইন থেকে জেরোমি লিখেছেন :

এটাকে অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে কারণ আমার দেহ ও মন এই ধরনের শাসনের জন্য প্রস্তুত নয়। কিন্তু আমি এটা অনুশীলন করতে চাই।

সক্রিয়করণ শক্তির প্রথম পর্যায়টি খুব অস্বস্তিকর, কিন্তু আমি চাই আপনি সেই প্রতিরোধটি অনুভব করুন যাতে করে শিখতে পারেন নিজেকে ধাক্কা দেওয়াটা আসলে কি রকম।

আপনি যদি নিজেকে সেই বিশাল ধাক্কা দিতে না পারেন (যেমন ছোটবেলা আপনার মা টেলিভিশনটি বন্ধ করে দিয়ে বলেছেন– কি সুন্দর একটি দিন, বাইরে যাও এবং কিছু একটা কর) তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কিছুই না করার পথে চালিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যখন ৫ ৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা শুরু করেন তখন একটি শৃঙ্খলিত প্রতিক্রিয়া শুরু হয় যা শুধু আপনার প্রিফ্রন্টাল করটেক্সকেই জাগিয়ে তোলে না বরং পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক প্রাথমিক বিশাল ধাক্কা দিতে আপনাকে প্রস্তুত করে।

আপনি যখন ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজার মুহূর্তে উঠে পড়েন, এটি আপনাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রদান করে। উঠে পড়ার এই ছোট্ট কাজটি আপনার ভেতরকার শক্তিকে প্রদর্শন করে। এমা যেমনটি আবিষ্কার করেছেন– এটি আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে অধিক পরিমাণে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে।

ট্রেসি ঠিক একই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে জেগে রুটি ব্যবহার করে– বিছানা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে তুলে জিমনেসিয়াম পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ট্রেসি একটি ইতিবাচক দিন শুরু করতে পেরেছিলেন।

আপনি যদি বিছানা থেকে নিজেকে তুলে আনতে না পারেন তাহলে আপনার জীবনে আর যে পরিবর্তনগুলো আপনি আনতে চান তা কখনোই আসবে না। আর আপনি যদি সকালগুলোর নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করার জন্য সেই ছোট্ট পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারেন, তবে তা শৃঙ্খলাবদ্ধ ঘটনার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে যা আপনার জীবনের সর্বত্র পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

সাফল্যের জন্য নিজেকে কিভাবে তৈরি করবেন?

(১) বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার অ্যালার্ম ঘড়িটি অন্য একটি কক্ষে রাখুন এবং সচরাচর আপনার যে সময়ে ঘুম ভাঙে তার চাইতে ৩০ মিনিট আগে সময় সেট করুন। যদিও বিছানা থেকে খুব ভোরে উঠে পড়াটা সহজ কাজ নয়। প্যাটি যেমনটি বর্ণনা করেছেন– চ্যালেঞ্জটি সম্পূর্ণ করতে হলে অবশ্যই আপনার নিজেকে ধাক্কা দিতে হবে। আপনি হয়তো ভেবে অবাক হচ্ছেন কেন আমি চাইছি এই অনুশীলনটি শুরু করার জন্য ৩০ মিনিট আগে আপনার ঘড়ির অ্যালার্মটি সেট করুন। সহজ কারণ। আমি চাই এটা আপনার কাছে কঠিন মনে হোক, আপনার যদি আক্ষরিক অর্থে সেভাবেই নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তুলতে হয়।

(২) আগামীকাল ভোরে যখন অ্যালার্ম বাজবে– চোখ খুলুন এবং উল্টো ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১, গায়ের চাদর/কম্বল ছুঁড়ে ফেলুন, উঠে দাঁড়ান, শোবার ঘর ছেড়ে বাইরে হেঁটে যান এবং আপনার দিনটি শুরু করুন, দেরি না করেই। মাথার উপর কোনো বালিশ নয়। প্রলম্বিত করা নয়। আবার ঘুমিয়ে পড়া নয় কিংবা বিছানায় ফিরে যাওয়া নয়।

এখানে যা ঘটতে পারে তা হলো, অ্যালার্ম বন্ধ হওয়ার পর আপনি উঠে পড়ার ব্যাপারে কেমন বোধ করছেন তা নিয়ে চিন্তা শুরু করবেন। আপনার মনে হবে উঠে পড়ার এই চ্যালেঞ্জটি বেকুব ধরনের। আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। নিজেকে আপনি এই বলে বোঝাতে চেষ্টা করবেন– আগামীকাল শুরু করা যাবে। টিম-এর মতোই আপনি হয়তো উঠতে চান না। কিন্তু ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করতে এমন কিছু হাতিয়ার দেবে যা আপনাকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে সাহায্য করবে।

একবার যখন টিম-এর মাথায় ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ঢুকে পড়েছিল, তিনি অবিলম্বে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তে এবং জিমনেসিয়াম যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমাদের অনেকের মাঝেই কিছু ভালো লাগছে না জাতীয় আচরণ লক্ষ্য করা যায়। ঐ মুহূর্তগুলোতে রুলটি আপনাকে জেসিকার মতো কাজ করতে সহায়তা করবে। জেসিকা-র ভাষ্যমতে :

আমি দেখেছি যে আমার ভেতরে যখন কিছু ভালো লাগছে না জাতীয় আচরণ প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে বেড়ায়, তখন রুলটি আমাকে সাহায্য করে। আর তাই, আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।

এই কিছু ভালো লাগছে না আচরণটি আপনার সারাদিনের নিয়ন্ত্রণভার নিয়ে নিতে পারে, আর তাই ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির ব্যবহার এত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাকি জীবনে এর একটি অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। স্টিফেনকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যিনি উঠে পড়ার চ্যালেঞ্জটি প্রথমবার চেষ্টা করে দেখার আগে আমাকে লিখেছিলেন।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সকালে উঠে পড়া কেমন ছিল? তিনি বলেছিলেন, যখন তিনি প্রথমবার চেষ্টাটি করেছিলেন– এটি ছিল গাধার মতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি তার জীবনে বিশাল একটি পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছিল। তার মানসিকতা কয়েক মিনিটের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই বদলে গিয়েছিল। এবং যখন তিনি উঠে পড়া চ্যালেঞ্জটি অনুশীলন করা শুরু করলেন, তিনি একটি নতুন চাকরি পেলেন যা তাকে নতুন করে জীবন শুরু করার অনুমতি দেয়।

স্টিফেন-এর জন্য ঘুমিয়ে পড় বোতামটি ভেঙে গিয়েছিল এবং স্বয়ংক্রিয় চালক বলে তার জন্য আর কিছু রইল না। এটাই সব পার্থক্য গড়ে দেয়। স্টিফেন শুধুমাত্র সকালে উঠে পড়লেন না, তিনি সবসময় একই রকম ও কদাচিৎ নিজের ভালোলাগার পেছনে ছোটা জাতীয় ব্যক্তিত্ব থেকে একটি পাঁচ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তে নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়া ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। এবং এর সবকিছুই শুরু হয়েছিল ঠিক যখন অ্যালার্মটি বেজেছিল।

আপনি যদি ঠিক সময়ে উঠে পড়তে পারেন, দিনটি শক্তভাবে শুরু করুন, এগিয়ে যাবার পরিকল্পনা করুন, নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে ভাবুন এবং নিজের উপর দৃষ্টিবদ্ধ করুন। এই সব কিছুই করুন আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়ার আগেই। তারপর আপনি খুব সহজে আরো অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণের এটা হলো প্রথম পদক্ষেপ।

মনে রাখবেন, রুলটি আমি তৈরি করেছিলাম বিছানা ছেড়ে উঠে পরার জন্য কিন্তু এটি তার চাইতেও বেশি কিছু। এটি আপনার শক্তিকে জাগ্রত করবে। জীবনকে ঝাঁকুনি দিতে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। উঠে পড়া চ্যালেঞ্জটি চেষ্টা করে দেখার পর ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি নিজের সম্পর্কে কি আবিষ্কার করলেন তা জানিয়ে আমাকে লিখুন। আপনি হয়তো দেখতে পাবেন, স্টিফেন যেমনটি বলেছিলেন– এটি ছিল গাধার মতো, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, একটি ছোট্ট পরিবর্তন বিশাল পার্থক্য তৈরি করে দেবে।

এখন আপনি জানেন কেমন করে শুরু করতে হবে, মৌলিক স্তরে। পরবর্তী তিন অধ্যায়ে আমরা আরো গভীরে প্রবেশ করব এটা দেখার জন্য যে, রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে কি করে আপনি ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা অর্জন, ভয়কে জয়, সুখী বোধ ও সম্পর্কগুলোকে সমৃদ্ধ করাসহ নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *