1 of 2

চিলেকোঠার সেপাই – ৪৬

চিলেকোঠার সেপাই – ৪৬

দেওয়ালের দিকে মুখ করে বিছানায় শুয়ে ছিলো ওসমান সায়েব। ঘরে আরো ৩জন। এদের সবাইকে জুম্মন চেনে। আনোয়ার সায়েবকে আগে দাখেনি, কয়েকদিন থেকে দেখছে, রোজই আসে, রাত্রে মাঝে মাঝে এখানেই থাকে। আলতাফ সায়েব প্রায়ই দ্যাখা যায় আলাউদ্দিন মিয়ার ওখানে। চুরুটওয়ালা সায়েবের নাম না জানলেও জুম্মন একে চেনে, এই সায়েব ইংরেজি কথা বেশি বলে, তার অর্ধেক কথা বোঝা যায় না। তা কোন ভদরলোকটা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে? ওসমান সায়েবের কথা বার্তা নিয়ে সবাই যে হাসাহসি করে কেন জুম্মন বুঝতে পারে না। পাগল বলো আর মাথা-খারাপ বলো,–এই সায়েবের কথাবার্তা বরং জুম্মনের মাথায় ঢোকে, স্পষ্ট বোঝা যায় যে খিজিরের সঙ্গে বাইরে বেরোবার জন্য লোকটা উদগ্রীব। তা এই ১ ঘরের ভেতর কাহাতক বন্দি থাকা যায়?
তাকে দেখে ওসমান উঠে বসে, রাত্রে কোথায় ছিলি?
চুরুট-সায়েব বলে, আমাদের একটু চা খাওয়াতে পারবি?
চায়ের কেতলি নিয়ে জুম্মন তার হাতের ক্রু-ড্রাইভার ও প্লায়ার তক্তপোষের নিচে রেখে দেওয়ার জন্য উপুড় হতেই ওসমানের চোখজোড়া সেদিকে হঠাৎ স্থির হয়ে গেলো। চোখের লাল-খয়েরি রেখাগুলো কাপে, সে তাকায় ওপরের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বিকট জোরে চিৎকার করে, সরো! টেবিলের ওপর ওভাবে ঝুলছে কেন? সরে যাও!
গ্লাসে গরম পানিতে চামচ দিয়ে ওভালটিন ঢালছিলো আনোয়ার, চমকে উঠে গ্লাস সরিয়ে ফেললো। ঠোঁট থেকে চুরুট নামিয়ে শওকত হাসে, কি ব্যাপার? আপনিও এফেক্টেড হলেন?
লজ্জা পেয়ে আনোয়ার মনোযোগ দিয়ে গ্লাসের ভেতর চামচ নাড়ে। ওসমান তখন বন্ধুদের কাছে প্রকৃত ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, বুঝলে না? জুম্মনের হাতে ওর ফেভারিট টুলস দেখে খিজির এসে পড়েছে। এতো লোক দেখে বোধহয় আড়ালে চলে গেলো।
চুপ করে ঘুমান শওকতের ধমকে ওসমান সুবোধ বালকের মতো দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়ে। জুম্মনের চোখজোড়া এখন ঐদিকে। খিজিরের ঝুলন্ত আবির্ভাবটি দ্যাখার জন্যে এ কয়েকদিন ধরে সে অনেক চেষ্টা করছে। তার ইচ্ছা, -খিজিরকে দ্যাখামাত্র তার হাতে প্লাস ও কু-ড্রাইভার গুঁজে দেয়। আহা, এই ২টো পেলে মরার পর বেচারার রুহু শান্তি পায়। কিন্তু এই সায়েবদের হাউকাউ শুনে খিজির নিশ্চয়ই অনেকক্ষণের জন্য গায়েব হয়ে গেলো। জুম্মনের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। এর ওপর চুরুট-সায়েব বলে, তোকে দেখলেই তোর বাবা এসে পড়ে।’
বাবা না, সৎ বাবা। আলতাফের এই সংশোধনী অগ্রাহ্য করে শওকত জানতে চায়, ‘এনিওয়ে, ডাক্তার কি বলছে?
চায়ের কেতলি হাতে জুম্মন বেরিয়ে যাচ্ছিলো, শওকত ডাকলো, তোর এই সব যন্ত্রপাতি নিয়ে যা। এইসব দেখলে ওসমানের তোর বাপের কথা মনে পড়ে, বুঝলি না?
কেতলি ও ঐসব নিয়ে জুম্মন বেরিয়ে গেলে আলতাফ বলে, ‘হ্যাঁ আনোয়ার, তারপর?
ওসমান যাতে শুনতে না পায় আনোয়ার তাই গলাটা নিচে নামায়, ডাক্তার বলে এক ধরনের শিজোফ্রেনিয়া। প্যারানয়েড শিজোফ্রেনিয়া।
শওকত বাধা দেয়, আজকাল মাথার গোলমাল হলেই সাইকিয়াট্রিস্টদের ডায়াগনসিস হলো শিজোফ্রেনিয়া। সামথিং লাইক এ্যাঁলার্জি ইন ফিজিক্যাল ডিজঅর্ডার। সবাই হেসে ফেললে ওসমান উঠে বসে এবং খুশি খুশি চোখ করে ওদের হাসি সম্পূর্ণ অনুমোদন করে। আনোয়ারের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ঢক ঢক করে ওভালটিন খেয়ে ফের শুয়ে পড়ে। শওকত তখন মনোযোগী হয় আনোয়ারের দিকে, ডাক্তার কি এ্যাডভাইস দিলো?
তিনটে ওষুধ দিয়েছে। সিডেটিভ তো চলবেই, স্টেমিটিল টুয়েন্টি ফাইভও কন্টিনিউ করতে হবে। আর একটা ওষুধ কয়েকদিন খাওয়ার পরে ফের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তবে প্রধান চিকিৎসা হলো সঙ্গ দেওয়া।
সঙ্গ দেবে কারা? খুব নিজেদের লোক? হা, ঘনিষ্ট। মানে যাদের সঙ্গ, আই মিন-যারা— এগিয়েবল টু হিম। শওকত বলে, একা হলেই আনডিজায়রেবল এলিমেন্টস স্টার্ট হস্টিং হিম।
আলতাফ বলে, এখানে নিজেদের লোক মানে তে আমরাই। ইন্ডিয়া থেকে ওর বাবাকে কি নিয়ে আসা সম্ভব? আমাদেরই এ্যাঁটেন্ড করতে হবে।’
আনোয়ার তো এটা ভালো করেই জানে। গতকাল ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার পর আনোয়ার ওকে নিয়ে গিয়েছিলো ওয়ারিতে, ওদের বাড়িতে। বাড়ির প্রতিক্রিয়ার জন্য ও তৈরি হয়েই ছিলো। আম্মা একটু বিড়বিড় করতেই সে তার রিহার্সেল-দেওয়া বাক্য ঝাড়লো, আমার বন্ধু বিপদে পড়লে আমার বাড়িতে তাকে শেলটার দিতে পারবো না? জবাৰে আনোয়ারের মা বিপদগ্ৰস্ত মানুষের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ও তার মৃত স্বামীরউদ্যোগী ভূমিকার বিবরণ দেয়, বিপদ আপদে মানুষকে সাহায্য করবো না কেন? পঞ্চাশ সালের রায়টে এই বাড়িতে আটটা হিন্দু ফ্যামিলি পুরো একমাস ছিলো, জনিস? তোরা তখন ছোটো, কতো ঝুঁকি নিয়ে আমরা তাদের থাকতে দিয়েছিলাম।
তো এখন একটিমাত্র লোকের ব্যাপারে আপনাদের এতো আপত্তি কেন?
সুস্থ লোক হলে কথা ছিলো। একটা পাগলকে—।
একটা লোক একটু অন্যরকম হয়ে গেলেই তাকে পাগল বলে ফেলে দিতে হবে? আমাদের ছোটোচাচার মাথায় ডিফেক্ট দ্যাখা গেলে আপনারা তাকে দারুণ নেগলেক্ট করেছেন। কাজটা ভালো করেননি আম্মা।
এবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে তুই কি যা তা বলতে শুরু করেছিস। আনোয়ারের মা কেঁদে ফেলে, জাহাঙ্গীরের জন্যে কি কম করা হয়েছে? তোর আব্বা ওর লেখাপড়ার সম্পূর্ণ ভার নেয়নি? তারপর মাথায় অসুখ হলো, একেবারে উন্মাদ মতো হয়ে গেলো তো তোর আব্বাই কতো কষ্ট করে বাড়ি নিয়ে গেলো।
চিকিৎসা করাননি কেন?
পাগলের চিকিৎসা কি তখন তেমন ছিলো?
কে বললো ছিলো না? কলকাতয় লুম্বিনী পার্ক ছিলো না? রাঁচিতে পাঠাতে পারতেন না?
আনোয়ার কাউকে পরোয়া করে না। তার ঘরে তার বন্ধু থাকনে, সে পাগল কি স্বাভাবিক সেটা দাখার অধিকার আছে একমাত্র তারই। ওসমানকে নিজের ঘরে রেখে সবাইকে একচেটি নেওয়া যাবে ভেবে আনোয়ার বরং খুশি হয়েছিলো। হুইস্কি, শিল্প-সাহিত্য ও সমাজতন্ত্রের কনিস্যার ভাইয়ার প্রতিক্রিয়াটা বেশ তারিয়ে তারিয়ে দ্যাখার জন্য সে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলো।
তোমার বাসায় রাখা তো মুশকিল। আলতাফ বলে, তোমার মা আছেন, ভাৰী আছেন-।
আরে না! কোনো প্রবলেমই হতো না। আমাদের বাড়িতে এ্যাঁবনর্মাল লোকদের সহ্য করার ট্রাডিশন আছে। ঠাট্টা করে বললেও আনোয়ারের গলায় প্রচ্ছন্ন গর্ব শিরশির করে ওঠে, আমার চাচা ফুল ফ্লেজেড পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।’
এই জেনারেশনে এসে হয়েছে তুমি। আলতাফ বললে সবাই হাসে।
শোনো, প্রবলেম তৈরি করলো ওসমান নিজেই।
ওয়াইল্ড হয়ে গেলো?
না। খুব স্বাভাবিক মানুষের ভঙ্গিতে জেদ শুরু করলো। রাত সাড়ে বারোটার দিকে হঠাৎ তার খেয়াল হলো এই ঘরে বোধহয় খিজির এসে অপেক্ষা করছে। বলে, চলো, আনোয়ার চলো। খিজির অপেক্ষা করছে। খিজির মাটিতে পা রাখতে পারে না, স্পেসে ঝোলে, বেচারা কতোক্ষণ ঝুলবে? চলো। এমন জেদ করলো, শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে পড়লো একাই। আমি কি করি? ওর পিছে বেরিয়ে রিকশা নিয়ে রাত একটায় এখানে এলাম।
এরপর ওকে একা একা এখানে রাখে কি করে? জুম্মনটাকে এই ঘরে রাখা যায়। কিন্তু এইটুকু ছেলের ওপর ভরসা করা যায়? ছোকরা ভয় পায় না, কিন্তু ওসমানের সব কথা, সব দ্যাখা সে বিশ্বাস করে এবং নিজে সেগুলো দ্যাখার জন্যে উদগ্রীব।
না, না, ওর ওপর ডিপেন্ড করবে, পাগল নাকি? শওকত পরামর্শ দেয়, বরং হাসপাতালে যাও।
পাবনা? পাবনায় সিট পাওয়া কঠিন। নেক্সট টু ইমপসিবল!’ আনোয়ার রাজি হয় না।
তাহলে পিজিতে চেষ্টা করা যাক। পিজিতে সাইকট্রির ওয়ার্ড খুলেছে। মেডিক্যাল কলেজেও থাকতে পারে।’
শওকতের দ্বিতীয় প্রস্তাবও আনোয়ারের অনুমোদন পায় না। না, হাসপাতালে দিয়ে লাভ নাই। কেন?–অন্য সব রোগীদের সঙ্গে থেকে তার রোগ আরো জটিল হতে পারে। পাগলরা অবশ্য নিজেদের জগতেই মগ্ন থাকে, কিন্তু ওসমান যে ধরনের মানুষ, পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ে তার যেরকম আগ্রহ, তাতে ভয় হয় যে অন্য সহরোগীদের দ্যাখা হ্যাঁলুসিনেশন নিজে দ্যাখার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে উঠবে। যদি দেখতে পারে তো তার নিজের উদ্ভট জগৎ আরো জটিল হবে এবং দেখতে ব্যর্থ হলে হতাশ হয়ে পড়বে।
যুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে আনোয়ারের বাড়াবাড়িরকম আগ্রহে শওকত অবাক হয়। আলতাফ জানতে চায় বুঝলাম তো। কিন্তু ওর সঙ্গে থাকবে কে?
কেন? আমি যতোদিন পারি থাকি না! আমার তো আপাতত-।
তোমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে দোস্ত!’ আলতাফ সত্যি সত্যি উদ্বিগ্ন হয়, এ্যাঁবনর্মাল লোকের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা থাকাটা ঠিক নয়।’
আনোয়ার তাহলে কি করবে? ওসমানকে হাসপাতালে পাঠালে আনোয়ারের করার থাকে কি? সে যে গ্রামের সমস্ত কাজ রেখে এখানে এসেছে সে তো ওসমানকে দ্যাখাশোনা করবে বলেই। ওসমানের শুশ্রুষা করা থেকে খারিজ হলে ঢাকায় থাকার পক্ষে তার আর যুক্তি থাকে?
শওকত ও আলতাফ চলে গেলে নিচে রেস্টুরেন্টে খেয়ে আনোয়ার ভাত ও মুরগির ঝোল নিয়ে আসে ওসমানের জন্য। সিঁড়ির গোড়ায় পা দিয়েই ওসমানের চিৎকার শোনা গেলো, প্রত্যেকটি ধাপ পেরোবার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার আরো স্পষ্ট হয়। নিজের ঘরে দরজার মুখে ধাক্কা খেয়ে আনোয়ার পড়েই যাচ্ছিলো। কোনোরকমে টাল সামলে উঠলে তার সামনে দাঁড়ায় রঞ্জ। রঞ্জু ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আনোয়ারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চিৎকার করে ওঠে। তবে তার ভয়ও কাটে, দ্যাখেন তো! কি করতাছে, দ্যাখেন।’
ঘরের মেঝেতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওসমান। তার গায়ে গেঞ্জি, পরনে কিছু নাই। তার লিঙ্গ নেতিয়ে রয়েছে কালো ও স্যাঁতসেতে অণ্ডকোষের ওপর। আনোয়ার বিছানা থেকে চাদর টেনে তার কোমরে জড়িয়ে দিলে ওসমান নিজেই সেটা লুঙির মতো পরে নেয়। তারপর অভিযোগ করে, দ্যাখো তো, ব্যাটা রঞ্জকে এ্যাঁটাক করতে আসে। আমি না ধরলে রঞ্জুর মাথায় লাথি মারতো!’ ওসমানকে একরকম ঠেলে বিছানায় বসিয়ে দিলে আনোয়ারের চোখে পড়ে মেঝের এক কোণে। সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে ভাত, পুইশাক, আলু ও ইলিশ মাছের টুকরা। সেসবের দিকে আঙুল দেখিয়ে ওসমান বলে, দ্যাখে তো আনোয়ার। আমাদের বিলের জমির রাজভোগ ধানের চালের ভাত, কি সুন্দর জুইফুলের মতো সাদা আম্মা নিজে রেধে দিলো, আমি নিয়ে এলাম, খিজিরকে বললাম, খাও, তুমিও খাও, আমিও খাই। ব্যাট নিজেও খাবে না, আমাকেও খেতে দেবে না। আবার রঞ্জুর পিঠে লাথি মেরে ঘর থেকে বার করে দিতে চায়!
রঞ্জুর ভয় একেবারে কেটে গেছে, সে বেশ মজা পাচ্ছে, তার চোখের কোণে চাপা হাসি চিকচিক করে।
আনোয়ার বলে, ‘ভাত তুমি এনেছো?
জী। আমাকে ধরতে আসলে গামলাটা হাত থাইকা পইড়া গেলো।
তুমি এসব আনতে গেলে কেন? ওর অবস্থা তো জানো। কখন কি করে।
আমার কি দোষ? ছোটোআপার ঢঙ!
তোমার ছোটো আপাও এসেছিলো?
মাথা খারাপ? পাগল আর কুত্তা আর তেলাপেকা—এই তিনটা জিনিসরে ছোটোআপ যমের মতো ডরায়। আমার পিছে পিছে দরজা পর্যন্ত আসছিলো। উনারে দেইখা আমার হাতে ট্ৰে দিয়া আপা এ্যাঁবাউট টার্ন। খুব রসিয়ে রসিয়ে রঞ্জ ওসমানের আচরণের বিবরণ দেয়। তাকে দেখে ওসমান প্রথমে একটু হেসে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলো। এরপরই রঞ্জ, সাবধান খিজির তোমাকে মারতে আসছে!’ বলে চিৎকার করে লাফিয়ে মেঝেতে নামে এবং রঞ্জকে জড়িয়ে ধরে। বিছানা থেকে ডাইভ দেওয়ার সময় তার লুঙি খুলে গিয়েছিলো, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে রঞ্জু হাসে। ওর এইসব হাসি ও বর্ণনাকে পাত্তা না দিয়ে ওসমান দেওয়ালের দিকে মিনতি করে, খিজির, প্লীজ, রঞ্জকে ধরে না। প্লীজ খিজির!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *