1 of 2

চিলেকোঠার সেপাই – ২৯

চিলেকোঠার সেপাই – ২৯

‘দ্যাখেন, লোকটা খুব গরিব। গোরু না পেলে একেবারে পথে বসবে। বেচারার গোরুগুলো’-আনোয়ারের অনুরোধ শেষ হতে না হতে হোসেন আলি রাজি হয়, ‘গোরু তো তাই পারেই। তা ধরেন আইন একটা আছে, জরিমানা দিয়া খোয়াড় থাকা গোরু খালাস করা লাগে।
জরিমানা?
সরকারী আইন। জরিমানার আট আনা গওরমেন্টের। আর আট আনার দুই আনা যাই গোরু নিয়া আসে তার। তারপরে ধরেন—।
‘জরিমানার ভাগ গভমেন্টকে দিতে হয়?
‘তো কি? আনোয়ারের অজ্ঞতা দেখে হোসেন আলি অবাক, মানুষ খাজনা দেয়, ট্যাকসো দেয়, জরিমানা দেয়, দণ্ড দেয়,—তবে না গওরমেন্ট চলে। শিক্ষিত মানুষ হয়া আপনে বোঝেন না?
পচার বাপ, করমালি ও ফকিরের লোকজন আসছে ওদের পেছনে পেছনে। পচার বাপের ফোৎ ফোৎ কান্না কখনো বাড়ে, কখনো কমে। ওদের বাদিকে এবার মস্ত গমের জমি। গমগাছের বাড়ন দেখে পচার বাপ ও করমালি মুগ্ধ। অভিভূত পচার বাপের কান্নার স্বস্তিকর বিরতি ঘটে। রাত্রে ভালো করে বুঝতে পারেনি, আনোয়ার এখন চরটা ভালো করে দেখে নিচ্ছে। লোকবসতি খুব কম, বেশির ভাগ ফসলের জমি। কোথাও কোথাও ধান কাটা হয়ে গেছে, কিছু কিছু লোক ইদুরের গর্তে হাত দিয়ে ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত, গর্তে হাত রেখে তারা আনোয়ারকে দ্যাখে। হাটতে হাটতে নদী হঠাৎ আড়ালে পড়ে যায়, নদী তখন হাজিরা জানান দেয় স্রোতের কলরবে। আরো কিছুক্ষণ হাটার পর জমি নেমে গেছে বেশ নিচুতে। এখানে ভেরেণ্ডা গাছ ও জিগাগাছের লম্বা সারি। নিচে নামবার সময় আনোয়ার প্রায় পড়ে যাচ্ছিলো, হোসেন আলি ওর হাত ধরে সামলে নেয়। নিচে কেবলি বালু, মাটি এখনো জমাট বাঁধেনি, বহুকাল মাটির নিচে ডুবে থাকার পর বছর দুয়েক হলো চরটা গতর তুলেছে। কোনো কোনো জায়গায় বালুর ওপর পানির ঢেউয়ের দাগ এখনো মুছে যায়নি। অনেক দূর পর্যন্ত গাছপালা নাই, ধুধু করে বালু দূরে দূরে কাটাওয়ালা ঝাউগাছ মানুষের কোমর পর্যন্ত মাথা তুলেছে। এখান থেকে ডাকাত-মারা চর দাখা যাচ্ছে, উঁচু জমির ওপর ফের ভেরেণ্ডা ও জিগাগাছের সারি দিয়ে শুরু হয়েছে ঐ চরের সীমানা। হোসেন আলির এক সঙ্গী বলে, *আর তিন চারটা বর্ষা গাও যদি টান্টিবাল্টি না করে তো ধারাবর্ষার সাথে ডাকাত-মারা চর একত্তর হয়া যাবো।’
হোসেন আলি এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুমোদন করে, এখনি তো একটা চরই ঠেকে। সাত আট বছর আগেও এই জায়গাত জাহাজের খাটাল আছিলো কেউ বুঝবার পারবো?
পচার বাপ পা ফেলছে খুব জোরে জোরে। বালুর ওপর হাটা কঠিন, লোকটা তরু অনেকটা সামনে চলে গেছে। ডাকাত-মারা চরের বাথান দ্যাখা যাচ্ছে, খড়ের চালার নিচে সারি সারি গোরু, প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা খুঁটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাধা পুরনো চরের শক্ত মাটিতে উঠলে আনোয়ার গোরু বাছুরের গায়ের গন্ধ পায়। হোসেন আলি পচার বাপকে ডাকে, এই বুড়ার ব্যাটা, এক কাম করো। তোমার গোরু আগে খুঁজা বাইর করো, না পারো তো ঐ যে খোয়াড়ের সরকার আছে তার কাছে পুছ করো। জরিমানা যা হয় দিয়া গোরু নিয়া যাও।
পচার বাপ নতুন উদ্যমে কাঁদে, ট্যাকা তো দিব্যার পারমুনা বাপ! আপনাগোরে পায়ের তলাত পড়া আছি, দয়া হামাক করাই নাগবো কাদুক আর কথা বলুক, পচার বাপের পায়ের গতি কিন্তু অব্যাহত থাকে।
আনোয়ার এবার একটু শক্ত করে বলে, টাকা নিলে এদের ওপর জুলুম করা হবে।
আপনার তো গাঁওত বাস করেন নাই। ইগল্যান বেন্ন্যা জাতের স্বভাব জানেন না। মাথার উপরে লাঠির ডাং ন মারলে শালারা কোমরের গেরো খুলবো না। আপনার দাদা, আপনার বাপের দাদা হলে ঠিকই বুঝলোনি। না হলে তারা সম্পত্তি করবার পারে? ধারাবর্ষার অর্ধেক আছিলো আপনার দাদার জোত, আপনার লাকান ভালো মানুষ হলে তাই কিছু করবার পারলোনি?’
সুযোগ পেয়ে হোসেন আলি তাকে ভালোই ল্যাং মারলো। গ্রামের এইসব নিমভদর লোকের বাঁকাচোরা কথার জবার দেওয়া আনোয়ারের পক্ষে অসম্ভব। আবার দ্যাখো, কথাটা বলেই হোসেন আলি লম্বা লম্বা পা ফেলে অনেকটা এগিয়ে গেলো। করমালি পাশে দাঁড়িয়ে আনোয়ারের কানে প্রায় ফিসফিস করে, ভাইজান, হামার জ্যাঠোর মাথা খারাপ হছে। একলা গোরু লিয়া গেলে জ্যাঠোক গায়ের মদ্যে ঢাকব্যার দিবো? ঘাটার উপরে গাবগাছতলাত চেন্টু খাড়া হয়া থাকবো না? গোরু জ্যাঠো একলাই নিবো? হামরা?
বাথানের বাইরে নদীর ধারে বেঞ্চ পেতে আনোয়ারকে বসতে দিয়ে হোসেন আলি বেশ উদার হয়ে যায়, বুড়ো মানুষ, আবার আপনে সাথে আসছেন, এখন কি করি, কন তো? আপনের বাপ-দাদা হামাগোরে জন্যে কি না করছে? আপনাকে হামি না করি কেমন করা ? কিন্তু আইনের বরখেলাপ সে করতে পারে না, সেজন্যই তো এতো সমস্যা, এখন গওরমেন্টের খোয়াড়, জরিমানা না নিয়া গোরু দিলে হামার মুসিবত। দেখি, কিছু মাপসাপ করব্যার পারি নাকি!
আনোয়ারকে বসিয়ে রেখে হোসেন আলি বাথানে ঢোকে, সঙ্গে পচার বাপ। আনোয়ারও সঙ্গে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছিলো, হোসেন আলি বাধা দেয়, আপনে বসেন। বাথানের মদ্যে খালি গোবর আর চোনা, হাটবার পারবেন না। তার লোকজন এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে আনোয়ারের পক্ষে ভেতরে যাওয়া অসম্ভব। করমালি এর মধ্যে কোথেকে ঘুরে এসে বসে পড়ে আনোয়ারের পাশে। নিজেদের গ্রামে হলে তার পাশে করমালি কিন্তু কিছুঁতেই বসতে পারতো না। আনোয়ার আরো অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করে, কি মনে হচ্ছে?
জ্যাঠার জরিমানা হবো মেলা। তিনটা গোরু-দ্যাড়শো টাকা, আবার শিকল দিয়া ব্যান্ধ্যা গুছিলো, তার জরিমানা পনরো ট্যাকা, তালা লাগছিলো, তার দশ টাকা। কতো হলো? দুইশো টাকার উপরে হলো না?
না। পৌনে দুশো। শিকল-তালা লাগাবার জন্য আবার আলাদা জরিমানা?
পচার বাপের সঙ্গে হোসেন আলি এসে পড়লে করমালি উঠে দাঁড়ায়। হোসেন আলি পাশে বসতে বসতে বলে, দণ্ড হছে পুরা একশো পঁচিশ টাকা।
পচার বাপ এবার হামলে কাঁদছে, গোরু ওর পাওয়া গেছে ২টো, বকনাটার কোনো পাত্তা নাই। কি সুন্দর বকনাটা তার, আর কটা মাস গেলে গাভীন হতো। আল্লা! তার একি বিপদ! আল্লা! আল্লাগো!
তা গোরু তুমি সামলাবার পারো না, কান্দো কিসক? তা একদিক থাকা ভালোই হছে, হোসেন আলি সাম্ভুনা দেয়, ঐ গোরুটা থাকলে তো পঞ্চাশ টাকা বেশি দণ্ড দেওয়া লাগতো।
‘দুটো গোরুর জন্য আপনার হিসাবে জরিমানা হয় একশো টাকা। আর পঁচিশ টাকা কিসের? আনোয়ার প্রায় চার্জ করার মতো করে বললে হোসেন আলি কৈফিয়ৎ দেয়, যার জমির ফসল গিলছে তাক ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগবো!
জমির ফসল খেলো কার? এ তো আপনারা ওর তালা আর শিকলের জরিমানা ধরেছেন।
আনোয়ার এই নিয়া ঝামেলা বাধাতে পারে ভেবে পচার বাপ এবার তার হাত চেপে ধরে, এটি বিবাদ করেন না বাবা! হামার গোরু বড়ো বজাত। কার ভিউয়েত মুখ দিয়ে, কার কতো লোকসান করছে আল্লাই জানো কোমরে বাধা লাল রঙের কাপড়ের থলি বার করে ১ টাকার ১৪টা নোট ও কিছু রেজকি হাতে ঢেলে সে হোসেন আলির হাতে দেওয়ার চেষ্টা করে, টাকা পনেরোটা নিয়া হামার গোরু নিয়া দেন বাবা।
ঐ টাকা হোসেন আলি ছুয়েও দ্যাখে না, শোনো, পুরাপুরি একশো টাকা দিয়া গোরু নিয়া যাও। এই চ্যাংড়াক নিয়া আসছে। মানী মানষের ব্যাটা, মানী মানষের ভাইগ্না, পঁচিশ ট্যাকা মাপ কর‍্যা দিলাম।
১০০ টাকার কথায় পচার বাপ আর্তস্বরে কাঁদে, কাঁদতে কাঁদতেই সে জানায় যে তার সারা জীবনের সঞ্চয় সে নিয়ে এসেছে, ২০ টাকার বেশি ১টি পয়সাও তার কাছে নাই। হোসেন আলি পরামর্শ দেয়, তাহলে ঐ ২০ টাকা নিয়ে সে বাড়ি চলে যাক, ৮৫ টাকার কমে গোরু দেওয়া যাবে না। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নানারকম কান্নাকাটি, গালাগালি ও টানাহাচড়া চলে। আনোয়ার বিরক্ত হয়ে নিচে নতুন চরে এসে নদী দাখে। পচার বাপ শেষ পর্যন্ত ৬৭ টাকা দিয়ে তার বলদ ও গাইয়ের দড়ি হাতে পায়। আনোয়ারকে ডেকে হোসেন আলি বলে, আপনে সাথে আসছেন, লোকসান করা গোরু দিলাম। করমালিকে সে মাত্র ৪০ টাকার বিনিময়ে তার গোরু দেওয়ার প্রস্তাব করে। ‘তুইও গোরু নিয়া যা। না হয় ৩৫ টাকাই দে। বড়ো মানষের ব্যাটাক সাথ করা আসছস, কি করি? দেওয়াই লাগে। কিন্তু রশিদ দিবার পারমুনা। সরকারী আইন, কড়ায়গণ্ডায় টাকা পরিশোধ না করলে রশিদ দেওয়া হবে না। করমালির প্রতিক্রিয়া বড়ো উদ্ধত, টাকা কোটে সরকার? ট্যাকা নাই। তার রাগ ঝাড়ে সে পচার বাপের ওপর, যাও, গোরু লিয়া বাড়ি বিলা ঘাটা ধরে। ট্যাকালিয়া তুমি গোরু লিছো, হামাগোরে সাথে তোমার সাথ কি?
গোরু ২টো পেয়ে পচার বাপ তার বকনা ও ৬৭ টাকার শোক ভুলে যায়, একবার সে হাত বুলায় তার বলদের গায়ে, মুখে ও মাথায়, একবার সে এটুলি বেছে দেয় তার গাইয়ের পিঠ থেকে। তার ধৈর্য ছিলো না। নদীর কিনার ধরে সে রওয়ানা হলো বাড়ির দিকে। হেটে হেঁটে একেকটা চর পাড়ি দেবে, মাঝে মাঝে নদী পার হবে খেয়ানৌকায়। বেলা থাকতে রওয়ানা হলো, আগামীকাল দুপুরবেলার আগেই গাইবলদ নিয়ে বাড়ি পৌঁছবে।
আনোয়ার পড়ে গেছে মহা ফ্যাসাদে। নৌকায় আর কতোদিন? ৩দিন তো হয়েই গেলো। এখানে বাস করাটা কাজে লাগলেও না হয় কথা ছিলো। লাভটা হচ্ছে কি? করমালির মাথায় কি করে ঢুকেছে যে টাকা পয়সা না দিয়েই সে গোরু নিয়ে যেতে পারবে। তার গোরু তো বটেই, গ্রামের সকলের গোরু এই হোসেন ফকিরের নৌকায় ভরেই সে নিয়ে যাবে। সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে সে নোতুন খবর আনে, পুবের দিকে খালি এক কথা। -শালা হোসেন ফকিরেক জবো করো। বোঝেন না, শালাটাসকা ম্যারা গেছে। হামাক কিছু করার পারে না, আপনে আছেন তো উই মনে করছে, বিপদ এ্যাঁটা হলে আপনেক ধরা উই পার হবো শালা মানুষ চেনে নাই। আনোয়ার একটু আঁচ করে বৈ কি? সেদিন মূলবাড়ি খাট থেকে নৌকায় ধারাবর্ষা চরে আসার সময় কোনো কোনো চরে বা খেয়ানৌকায় গোরু নিয়ে অনেককে যেতে দাখা গেছে। জরিমান ট্যাক্স দিয়ে নিজের গোরু নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলো। পরদিন থেকে এদের সংখ্যা বেশ কম। পরশু তবু কয়েকজন গেলো, কাল গোরু নিয়ে কাউকেই যেতে দ্যাখা যায়নি। করমালি এর কারণ ব্যাখ্যা করে, ‘দুইটা দিন দ্যাখেন না। আলিবক্স ভাই ঢোল দিছে, হোসেন আলিক জরিমানা দিলে তার পরিণতি ভালো হবো না।
সেদিন সন্ধ্যার আগে ঘাটে এলো হোসেন ফকির নিজেই। হাতে গামছা-বাধা বাটি। ইয়াসিন সায়েবের ভাগ্নে, আকবর সায়েবের ছেলে, সর্বোপরি তার এককালের মুরুব্বি বড়োমিয়ার মেজোনাতি এখানে এসে নৌকায় বাস করে, এই দুঃখে সে কাতর। পাঙাস মাছের ঝোল ও পাবদা মাছের চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খেতে খেতে আনোয়ার তার আক্ষেপ শোনে। ঢেউয়ের ধাক্কায় নৌকা একটু একটু দোলে, আনোয়ার ভাত খায় আর হোসেন আলির মুখে তার বাবার গল্প শোনে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে তার বাবা এখানে এসেছিলো রেডক্রসের সাহায্য বিলি করতে, আনোয়ারের তখন জন্মই হয়নি, তার বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দুধ, কাপড়, দেশলাই—এইসব বিতরণ করেছিলো এই হোসেন আলি ফকির। বাবার এই ধরনের জনসেবামূলক তৎপরতার কথা আনোয়ার কোনোদিন শোনেনি। মনোযোগ দিয়ে এইসব শুনতে শুনতে হোসেন আলির ওপর বিরাগে একটু নরম প্রলেপ পড়ে। সেইসব দিন আর নাই, সেইসব মানুষই বা কোথায়?–হোসেন আলি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এখন হলো চোর ডাকাতের রাজত্ব। আগের রাত্রে ডাকাত-মারা চরে বাথানের উত্তরপ্রান্তে কারা এসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ডাকাতদের অবশ্য হটানো গেছে। কিন্তু পালাবার মুহুর্তে বাথানের একদিকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় ৮/১০টা গোরু পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তবে হোসেন বীরদৰ্পে জানায় যে, সে একটুও ঘাবড়ায়নি। খয়বার গাজীর কাছে লোক পাঠানো হয়েছে, এমএনএ সায়েবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গওরমেন্টের খোয়াড়-এর লাভের ভাগ মন্ত্রী গবর্নর পর্যন্ত ভোগ করে -এখানে আগুন লাগাবার পরিণতি যে কি ভয়াবহ হবে শালারা বুঝতে পাচ্ছে না। এমএনএ কি মন্ত্রী যদি মিলিটারি পাঠিয়ে দেয় তো পুবপাড়ের ঐসব ডাকাতদের লাশে যমুনায় স্রোত মন্থর হয়ে উঠবে -তবে তার দুঃখ ঐ গোরুগুলোর জন্য। আল্লার অবলা জীব, ঘরে আগুন লাগলে দড়ি কি শিকল ছিঁড়ে পালাবার উপায় নাই যাদের, তাদের যারা পুড়িয়ে মারে, আল্লার গজব থেকে তাদের রেহাই নাই।-এই আক্ষেপ শুনে আনোয়ারের মাথা দপ করে জ্বলে ওঠে। শালার ভণ্ডামির সীমা নাই। বদমাইসটার মুখের ওপর পাঙাস মাছের ঝোল-মাখা ভাত উগরে দিতে পারলে আনোয়ারের মাথার আগুনটা নেভে। তা আর হয়ে ওঠে না। কয়েক বেলা ধরে করমালির রান্না করা ছোটো মাছের প্রচণ্ড ঝাল চচ্চড়িতে-ঝলসানো জিভে পাঙাস মাছের ঝোল মোলায়েম প্রলেপ দিয়ে আরামে গলা দিয়ে নেমে যায়। খালি বাটি নিয়ে হোসেন আলি চলে গেলে করমালি বলে, শালা ফকিরের ব্যাটার জান সিটক্যা গেছে মনে করছে আলিবক্স ভায়ের সাথে আপনের সাট থাকবার পারে। তাই আপনেক এতো খাতির করব্যা নাগছে!
আনোয়ার ভাবে আলিবক্সের সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা কল্পনা করে বলে হোসেন আলি তাকে সমীহ করে কেন? হোসেন আলি ফকিরকে অনুরোধ করে এবং ভয় দেখিয়ে গ্রামের গোরুগুলো উদ্ধার করার জন্য তার উদ্যোগ কি সাহসের পরিচয় নাই?–লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আনোয়ার নৌকার নিচে পানির ছলাৎ ছলাৎ স্রোত শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার স্রোতের আওয়াজেই তার ঘুম ভাঙে, নৌকা মনে হয় চলতে শুরু করেছে, নিচের ঢেউ সে বুঝতে পাচ্ছে সারা শরীর জুড়ে। আনোয়ার উঠে বসে, করমালি, কি ব্যাপার?
ভাইজান, ভয় পায়েন না। ঘোড়ার ডাক শোনেন? ভাটি বিল্যামেলা করছি, বাথান পার হয়া জাহাজের খাটাল ধরা গেলে রাত এক পহর থাকতে পুবপাড় পৌছা যামু।
তুমি যাচ্ছে কোথায়?
পুব পাড়। নদীতে বান আলে সিন্দুরিয়া চরত ওঠা যাবো।
বান আসবে কেন? নাকি হোসেন আলির লোক ধরতে আসছে?
কোটে হোসেন আলি? ঘোড়ার ডাক শুন্যা ব্যামাক মানুষ ঘরের মদ্যে সান্দছে।
ব্যাপারটা কি? গোরুর দুঃখে পাগল হয়ে করমালি কি ঘোড়ার ডাক শুনতে পাচ্ছে? করমালির ব্যাখ্যা আরো বিভ্রান্তিকর, নদীর অনেক ভেতর থেকে সমবেত ঘোড়ার ডাক শোনা যাচ্ছে। সে তার বাপদাদার কাছে শুনেছে যে, নদীতে ভয়ঙ্কর বান ডাকার আগে যমুনা নদীর ঘোড়ার পাল উচ্চরবে হেষার্ধ্বনি দিয়ে সবাইকে জানান দিয়ে যায়। করমালির কানের বিএম দেখে আনোয়ার কঠিন গলায় নির্দেশ দেয়, ‘পাগলামি করো না। নৌকা তীরে ভেড়াও।’
দেখতে দেখতে নৌকা চলে এসেছে বাথানের ধারে। বাঁধান পেরিয়ে যাবার পর দাখা গেলো আরেকটি ছিপ নৌকা আসছে তাদের দিকে। ঐ নৌকা থেকে কে ডাকে, করমালি!’ করমালি সাড়া দিলে ফের শোনা যায়, ‘আনোয়ার ভাই আছে? ঘোড়ার ডাক শুনা ভয় পাবার মানা কর।
করমালি আস্তে করে বলে, আলিবক্স ভাই আসছে। আপনের সাথে কথা কৰো। ছিপনৌকা কাছাকাছি আসতে আনোয়ারদের নৌকা প্রবলভাবে দুলে ওঠে। আনোয়ার আরে গেলো। গেলো।’ বলে চিৎকার করে ওঠে, ছিপনৌকা থেকে তাদের নৌকায় লাফিয়ে-পড়া লোকটি ২ পায়ের ভার এদিক ওদিক করে ব্যালান্স সামলে নিলো। লুঙি-পরা ও চাদরজড়ানো যুবকের কালো মুখে চাদের হলদে আলোর আভা, কিন্তু তার চেহারা অস্পষ্ট। আনোয়ারের সারা শরীর টলে ওঠে হোসেন আলির আতিথেয়তা গ্রহণের অপরাধে করমালি কি তাকে সমর্পণ করছে আলিবক্সের হাতে? আলিবক্স কি তাকে শ্রেণীশক্র হিসাবে চিহ্নিত করবে?
ছইয়ের ভেতর ঢোকার আগেই আলিবক্স বলে, করমালি, নাও ফেরা, ধারাবর্ষ মুখে চল। নৌকা উল্টোদিকে চলতে শুরু করে, কিন্তু করমালি খুব উদ্বিগ্ন, ভাইজান, বান আসলে পরে নাও ভাসায়া নিবো। ধারাবর্ষাত গেলে তখন হোসেন ফকিরের বাড়িত ওঠা ছাড়া আর বুদ্ধি থাকবে না। ঐ বাড়িত গেলে আপনের জান থাকবে? –
আরে বলদ, মাঘ মাসোত নদীত বান আসে? তুমিও কি টাউনের ভদ্রনোক হয়৷ গেলা?
ঘোড়ার ডাক শোনেন নাই? নদীর মদ্যে কতো ঘোড়া ডাক পাড়ে শুনছেন? আমাক ঠগা ঠাওরাস? তামাম নদীর মদ্যে ঘোড়া খালি তড়পাতিছে। বিপদ দেখলে যমুনার ঘোড়া ডাকে। বিপদ কি যমুনা একলাই করে? মানুষ মানুষের মুসিবত করে না?
আনোয়ারের পাশে বসে বিড়িতে শেষ টান দিয়ে বিড়ির গোড়াটা এগিয়ে ধরে করমালির দিকে। তারপর বলে, কালই আপনার সাথে কথাবার্তা কওয়ার নিয়ত করছিলাম। শালা হোসেন ফকিরের মানুষ এমন করা ধাওয়া করলো, আগে আমরা অগো বলটা বুঝবার পারি নাই। পরে এমন অবস্থা হলো কি বাথানেত আগুন দিবার না পারলে আমরা আর পলাবার পারি না। আনোয়ার একটা সিগ্রেট দিলে সেটা ধরিয়ে আলিবক্স তার আসার উদ্দেশ্য জানায়, ‘আজ আপনের সাথে নিরিবিলি কথা কওয়া যাবো। ঘোড়ার ডাক শুনছে, হোসেন ফকিরের বাপের ক্ষমতা হবে না যে বার হয় আমাক ধরবার আসে ব্যামাক মানুষ আজ ঘরের মদ্যো’
আলিবক্সের মুখেও যমুনার গভীর ভেতর থেকে ঘোড়ার ডাক শোনার কথা শুনে আনোয়ার বিগড়ে যায়, হায়রে, এই আমাদের বাম রাজনৈতিক কর্মী। এর সঙ্গে নিরিবিলি কি পরামর্শ করবে? জিগ্যেস করে, আপনি মাদারগঞ্জ কলেজের ছাত্র?
হ্যাঁ। তা শোনেন— ‘ বি এসসি পড়েন না? সায়েন্স পড়েন, লেফট পলিটিক্স করেন আর এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন?
বিএ পড়ি। এইচ এছ ছি পাস করছিলাম সাইন্স নিয়া। মাদরগঞ্জ কলেজে বি এছছি নাই, তাই বিএ পড়তিছি?
তার আসল প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো বলে নয়, এইচ এস সি ও বিএসসি কথাগুলো আলিবক্স যথাক্রমে এইচ এছ ছি ও বি এছছি উচ্চারণ করায় আনোয়ারের কান শিরশির করে। তার মূল প্রশ্ন বা কান শিরশির করাকে আলিবক্স তোয়াক্কা করে না। আপনারা ঢাকাত বস্যা বড়ো বড়ো কথা কন আর পার্টি ভাঙেন। মতিন ভাই আমাগোরে এলাকায় আসলো, দল থাকা ভালো ভালো কয়েকটা কর্মী আলাদা হয়া গেলো। এরকম করলে কাম হয়? জনগণতান্ত্রিক কন আর স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক কন, উপনিবেশ কন আর আধা উপনিবেশ কন, গায়ের মদ্যেকার শয়তানগুলাক শাষ করবার না পারলে কোনো কাম হবো না।
‘সে তো বটেই। কিন্তু এইসব শয়তানের মুরুব্বিরা তো থাকে ঢাকা ইসলামাবাদ।’
‘গায়ের মানুষ তো অগোরে চেনে না। আর এই শয়তানগুলা শাষ হলে মুরুব্বির খাড়াবো কোন জমির উপরে? আমরা পুবের চর এলাকাত সব একসাথে শয়তান খতমের কামে নামছি!’
‘পাটি ভাগ হলো তো একসঙ্গে কাজ করছেন কি করে?
একজোট না হয়া আমাগোরে পথ আছিলো না ভাইজান। সার্কেল অফিসার আর তশীলদার,—এই দুই শয়তান মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করা তুলছিলো। এটার মদ্যে খাজনা বসায়, এই মানষেক জমি থাকা ভিটা থাকা উচ্ছেদ করে, এ্যাঁক ধর্যা থানাত দেয়, অক ধরা বেগার খাটায়। তশীলদার চাকরি করতিছে ছয় বছর, এর মদ্যে জমি করছে একুশ বিঘা, পুকুর নিছে দুইটা। মানষে একজোট হয় এমন দাবাড় দিছে যে দোনো শয়তান পাছার কাপড় তুল্যা দৌড় মারছে ময়মনসিং মুখে।
এরা তো আবার ফিরে আসবে। দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আসবে। পুলিশ ব্যাটালিয়ন নিয়ে আসবে। তখন?
তা আসবো। মিলিটারিও আনবার পারে। তা এই সার্কেল অফিসার কন আর তশীলদার কন আর এমএনএ মন্ত্রী যাই কন না এদের ভরসা হলো আপনাগোরে ওটি খয়বার গাজী, আমাগোর এলাকাত হামিদ তালুকদার, মাদারী আখন্দ। আবার খয়বার গাজীর বারো আনা ভরসা হোসেন ফকিরের উপরে। এই শয়তানগুলাক শাষ করবার পারলে এমএনএ, মন্ত্রী কারো ক্ষমতা নাই যে এই এলাকায় যমুনার পুব পশ্চিম কন্ট্রোল করে।’
তখন পুলিস মিলিটারি ক্যাম্প করবে আপনার পাশের এলাকায়, না হলে পাশের জেলায়!
তা ঠিক। আলিবক্স আনোয়ারের সঙ্গে একমত হয়েও হতাশ হয় না, তাই তো কই কি সোগলি যার যার এলাকায় কাম করলে শয়তানগুলাক শাষ করা যায়, তখন পুলিস মিলিটারি পাত্তা পাবো কোটে?
আলিবক্স বেশি সরলীকরণ করছে, আনোয়ার এ ব্যাপারে নিশ্চিত। কিন্তু ঠিক কিভাবে ওর যুক্তি খণ্ডন করবে তাও বুঝতে পারে না। শ্রেণীশক্ৰ খতম করার প্রোগ্রাম তো ওদেরও আছে, কিন্তু গ্রামে কিছু লোক মেরে ফেললেই কি রাষ্ট্রযন্ত্র ভেঙে পড়বে? এদের দাপট যতোদিন থাকবে এই রাষ্ট্র কাঠামোতে ততোদিন কোনো চিড় ধরানো অসম্ভব। কিম্ভআনোয়ার কিছু বলার আগেই আলিবক্স প্রস্তাব করে আনোয়ার ভাই, আপনে আজই বাড়িমুখে রওয়ানা হন। কাল সকালবেলা পৌঁছবেন তালপোতাত করমালির বাড়িত যারা চেংটু, বান্দু শেখ, করমালি—এদের সাথে কথাবার্তা কন। অন্তত পঞ্চাশ ষাটজন মানুষ সাথে করা চেংটুক আপনে কালই ধারাবর্ষ মুখে পাঠায় দেন। পশ্চিম থাকা আসবো অরা, পুব থাকা আসবো আমরা। হোসেন আলির বাথান পরশু রাতের মদ্যেই আমরা দখল কর‍্যা শালাক বক্তা কবর দেমো তার ওপর এতোটা আস্থা স্থাপন করায় কৃতজ্ঞতায় আনোয়ার অবিরাম কথা বলতে শুরু করে, আমাদের পশ্চিম পাড়ে মানুষ নিজেরাই স্পনটেনিয়াসলি এগিয়ে আসছে। দলের জন্য অপেক্ষা করেনি-।
পার্টি না থাকলে মানুষের উৎসাহ শেষ পর্যন্ত থাকবে না। আপনে আজই মেলা করেন, রাতে রাতে নাও বায়া যাবো করমালি। যমুনার মদ্যে ঘোড়ার ডাক শুনা মানুষ খুব পাইছে। আসলে এটা বানের নিশানা নয়, শীতের সময় বান হবে কেন? বিপদ তো মানুষও করবার পার, এখন সকলের একজোট হওয়া দরকার। মানষেক এইভাবে কওয়া লাগবে।
‘ঘোড়ার ডাক আপনি শুনলেন কোথায়? আলিবক্সের আস্থাভাজন হওয়ায় আনোয়ার তাকে সরাসরি জিগ্যেস করে, মানুষ কি বলে, কি শোনে, আপনি পার্টির লোক হয়ে চট করে তা মেনে নেন কি করে? মানুষের কুসংস্কার বাড়তে সাহায্য করলে শেষ পর্যন্ত লাভ হয় কাঁদের? রিএ্যাকশনারিয়া তো এইসব ক্যাপিটাল করে এক্সপ্লয়েট করে।
কি যে কন’ আনোয়ারের অবিশ্বাসে আলিবক্স ক্ষুব্ধ হলো, শোনেন যমুনার ভেতর অনেকদিন বাদে বাদে ঘোড়ার ডাক শোনা যায়। তাহলে বুঝবেন চর এলাকায় বড়ো কোনো বালা মুসিবত আছে।
আমার বাপদাদারা আছিলো শঙ্করপুরের মানুষ –কায়েমি চর আছিলো গো! হাই ইসকুল, ইউনিয়ন বোর্ড অফিস, সাহাদের টিনের গুদাম, গাছগাছালিসব আছিলো। সেই চর যেদিন ভাঙা শুরু হলো তার দিন পনেরো ষোলো আগে নদীর মধ্যে কম করা হলেও দুইশো আড়াইশো ঘোড়া একসাথে উরুজোগার দিয়া ডাকছে।’ আপনি জানলেন কি করে? আপনি শুনেছেন? আমার বাপে কছে, দাদায় কছে। চাষা মানুষ হলে কি হয়, বাপ আমার পাঁচ ওকতো নামাজ পড়ছে! তাই মিছা কথা কওয়ার মানুষ আছিলো না! নামাজ পড়ার সঙ্গে সত্যনিষ্ঠ হওয়ার সম্পর্ক কি? নামাজ পড়তে পড়তে খয়বার গাজীর কপালে কড়া পড়ে গেছে, মিথ্যা কথা বলা তার স্বভাব। তাহলে?–কিন্তু তর্ক করার সময় পাওয়া যায় না। ভাইজান, বাথানের গোরুবাছুর ঘোড়ার ডাক শুনবার পাছে! করমালি ভয়ে চিৎকার করে উঠলে বিপুল সংখ্যক গোরুবাছুরের সমবেত ও এলোমেলো হাম্বা রব শুতে পায় সবাই। আনোয়ার পর্যন্ত ভয় পায়, কি ব্যাপার, বাথানে কি আগুন টাগুন লাগলো?
আরে নাঃ। শোনেন না? হাজার ঘোড়া ডাক পাড়ে। গোরুবাছুর ভয় পাবো না? করমালিকে নৌকা ভেড়াতে বলে আলিবক্স লাফিয়ে ডাঙায় নামে, রওয়ানা হয় উল্টোদিকে, যেতে যেতে করমালিকে তাড়া দেয়, তরা করা যা। কাল ব্যায়না চেংটুর সাথে কথা কয়৷ পাছাবেলার মদ্যে মানুষজন নিয়া মেলা করবু।
আরে আপনি এখানে নামছেন কেন? আনায়ার চিৎকার করে, এখানে নামছেন কেন? হোসেন ফকিরের মানুষ টের পেলে—।
একটু এগিয়ে আলিবক্স তার ছিপনৌকায় উঠতে উঠতে চিৎকার করে, করমালি, কিনার দিয়া যাস। ভয় করিস না, কিছু হবো না। আলিবক্সের ছিপনৌকা মেঘের ছায়ার মতো নদীর আড়াআড়ি গিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো।
ধারাবর্ষার চরও দেখতে দেখতে সরে যাচ্ছে। হোসেন আলির বাড়ির দিক থেকে কে যেন চিৎকার করে আজান দিচ্ছে। আবার কোথেকে ভেসে আসছে হাঁস-মুরগির আতঙ্কিত ডাক ব্যাপার কি? চরের সবাই কি ঘোড়ার ডাক শুনতে পাচ্ছে? নদীর পানির দিকে কান পেতে আনোয়ার ঘোড়ার ডাক শোনার জন্য একাগ্রচিত্ত হয়। না। শীতকালের যমুনা ছলাৎ ছলাৎ করে বয়ে চলে। এমনকি ডাঙার শঙ্কা ও আর্তরব নদীকে এতোটুকু স্পর্শ করতে পাচ্ছে না।
করমালি দাঁড় বাইতেই থাকে। ডাঙা থেকে ভেসে আসা দূরের আওয়াজ, ক-র-মা-লি, নাও ভিড়াও চরের পশ্চিম মুড়াত নদীর মদ্যে ঘোড়ার ডাক শোনা যায়। হোসেন ফকির খবর দিছে, আকবর সায়েবের ব্যাটাক তার ঘরত যাবার কছে। বান আলে বিপদ হবো। ও ক-র-মা-লি!’
আনোয়ার স্থির গলায় নির্দেশ দেয়, করমালি, তাড়াতাড়ি চলো। সকালের আগেই মূলবাড়ি ঘাটে পৌছা চাই।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *