চারজন মানুষ ও একখানা তক্তপোশ

চারজন মানুষ ও একখানা তক্তপোশ
প্রমথনাথ বিশী

একদিন বিকাল-বেলা এক সরাইখানায় চারজন পথিক আসিয়া পৌঁছিল। সরাইখানার মালিক তাহাদের যথাসম্ভব আদর অভ্যর্থনা করিয়া বসাইল। পথিকরা অনেক দূর হইতে আসিতেছে, পথশ্রমে অত্যন্ত ক্লান্ত, গত রাত্রি তাহাদের সকলেরই বৃক্ষতলে কাটিয়াছে, আজ সরাইখানায় বিশ্রাম ও আহার করিতে পারিবে আশায় উৎফুল্ল হইয়া উঠিলা তাহারা একটি কক্ষে বসিয়া আহার করিয়া লইল এবং তারপরে পরস্পরের পরিচয় লইতে লাগিল। তাহাদের কেহ কাহাকেও চিনিত না—এই তাহাদের প্রথম সাক্ষাৎ।

প্রথম পথিক বলিল যে, সে একজন শিক্ষক। এখন বিদ্যালয়ের ছুটি, তাই সে তীর্থযাত্রায় বাহির হইয়াছিল। হিমালয়ের পাদদেশে পশুপতিনাথের পীঠস্থান কয়েকজন সঙ্গীর সাথে সে সেখানে গিয়াছিল। দেবদর্শন সারিয়া ফিরিবার পথে তাহারা পথ হারাইয়া এক বনের মধ্যে ঢুকিয়া পড়ে। রাত্রে তাহারা এক গাছের তলায় আশ্রয় লইতে বাধ্য হয়। ভোরবেলা যখন সে জাগিল, দেখিল যে তাহাদের সঙ্গীরা নাই, তৎপরিবর্তে তাহাদের কঙ্কাল কয়খানা পড়িয়া আছে। বোধ হয় কোন শ্বাপদে খাইয়া গিয়াছে। কিন্তু সে একা বাঁচিল কিরূপে? তখন তাহার মনে পড়িল সে যে শিক্ষক, সে যে জাতিগঠনের রাজমিস্ত্রি-শ্বাপদ বোধ হয় সেই খাতিরেই তাহাকে ছাড়িয়া দিয়াছে। যদি এ শ্বাপদটা তাহার ভূতপূর্ব ছাত্র হইত, তবে কি আর তাহার রক্ষা ছিল? কিম্বা এমনও হইতে পারে যে হাজার ছাত্র শাসাইয়া এমন শক্তি সে অর্জন করিয়াছে—সামান্য শ্বাপদে তাহার কি করিবে? যাই হোক, আর যে-কারণেই হোক, সে পুনরায় চলিতে আরম্ভ করিলা সারা দিন চলিবার পরে সে এই সরাইখানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে। সংক্ষেপে ইহাই তাহার পরিচয়।

তখন দ্বিতীয় পথিক আরম্ভ করিল। সে বলিল যে, সে একজন সাহিত্যিক। গোরক্ষপুরে সাহিত্য সম্মেলনের অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে সে গিয়াছিল। একটি বৃহৎ অট্টালিকায় যখন মহতী সভার অধিবেশন আরম্ভ হইয়াছে এমন সময়ে এক কালান্তক ভূমিকম্প সুরু হইলা। ফলে অট্টালিকার ছাদখানি পড়িয়া সকলেই মারা গেল—কেবল সে অক্ষতদেহে রক্ষা পাইয়াছে।

তাহার শ্রোতারা বিস্ময়ে বলিল—তাহা কিরূপে সম্ভব?

সাহিত্যিক বলিল, আপনারা জানেন না, আর জানিবেনই বা কিরূপে, আপনারা তো সাহিত্যিক নহেন, সাহিত্যিকদের মাথা বড় শক্ত। হেন ছাদ নাই—খসিয়া পড়িয়া যাহা তাহাদের মাথা ফাটাইতে সমর্থ, হেন ভূমিকম্প নাই যাহাতে তাহারা টলে, হেন অগ্নিকাণ্ড নাই—যাহাতে তাহারা পোড়ে

শিক্ষক বলিল—তবে অন্য সবাই মরিল কেন?

সাহিত্যিক বলিল—সে মহতী সাহিত্য সভায় আমিই ছিলাম একমাত্র সাহিত্যিক। ইহা শুনিয়া আপনারা বিস্মিত হইতেছেন—কিন্তু ইহা নিশ্চয় জানিয়া রাখুন সাহিত্য সভায় পারতপক্ষে সাহিত্যিকরা কখনো যায় না—এক সভাপতি ব্যতীতা তাই তাহারা পিষিয়া মারা গেল—আর আমি যে শুধু বাঁচিয়া রহিলাম তা-ই নয়, আমার মাথায় লাগিয়া একখানা পাথরের টুকরা চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া ধূলি হইয়া গেল। এই সেই ধূলি

এই বলিয়া সে পকেট হইতে এক কৌটা ধূলি বাহির করিয়া দেখাইল। তারপরে বলিল— সাহিত্যিকদের বেলায় শিরোধূলি কথাটাই অধিকতর প্রযোজ্য। তারপরে গোরক্ষপুর হইতে বাহির হইয়া পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়াছি। ইহাই আমার পরিচয়

তৃতীয় পথিক বলিল—মহাশয়, আমি একজন চিকিৎসক। হজরতপুরে মহামারী দেখা দিয়াছে শুনিয়া সেখানে আমি গিয়াছিলাম সেখানে কোন চিকিৎসক ছিল না। আমি সেখানে গিয়া নিজেকে বিজ্ঞাপিত করিবামাত্র হজরতপুরের সমস্ত অধিবাসী নগর ছাড়িয়া পলায়ন করিল। তাহারা যাইবার সময়ে বলিয়া গেল যে মহামারীর হাতে যদি বা বাঁচি—মহাবৈদ্যের হাত হইতে রক্ষা করিবে কে?

নগরের মধ্যে ঘুরিতে ঘুরিতে এক অতি কুৎসিত ও বীভৎস বৃদ্ধকে দেখিতে পাইয়া বলিলাম —তুমি পালাও নাই কেন?

সে বলিল—আমার ভয়েই তো সকলে পালাইতেছে, আমি পালাইতে যাইব কেন? আমার নাম মহামারী। আমি তাহাকে বলিলাম যে, তোমার গর্ব বৃথা, সকলে আমার ভয়েই পালাইয়াছে, আমার নাম মহাবৈদ্যা ইহা শুনিবামাত্র সে প্রাণভয়ে পলায়ন সুরু করিলা কিছুকাল পরে দেখি। হজরতপুরের নাগরিকগণ মহামারীর সঙ্গে সন্ধি করিয়া আমার বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করিয়াছে। তাহারা বলিল—মহামারী আমাদের শত্রু নয়, মিত্র যেহেতু তাহার কৃপাতেই আমরা অক্ষয়স্বর্গ লাভ করিবার সৌভাগ্য পাইয়া থাকি তাহাদের সম্মিলিত শক্তির সম্মুখে আমি দাঁড়াইতে না পারিয়া পরম ভাগবত ইংরাজ সৈন্যের মতো দৃঢ়পরিকল্পনানুযায়ী পশ্চাদপসরণ করিতে করিতে এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি। বন্ধুগণ, ইহাই আমার ইতিহাস

তখন চতুর্থ পথিকের পরিচয় দিবার পালা।

সে আরম্ভ করিল—মহাশয়, আমি গঙ্গাস্নানে গিয়াছিলাম। সারা দিন উপবাসী থাকিয়া সন্ধ্যায় যখন স্নান করিতে নামিব এমন সময়ে শুনিতে পাইলাম কে যেন বলিতেছে বৎস, তুমি যথেষ্ট পুণ্য সঞ্চয় করিয়াছ—এখন স্নান করো, করিবামাত্র তোমার মুক্তি হইয়া যাইবে, আর তোমাকে পৃথিবীতে বাস করিতে হইবে না।

সে বলিল—মহাশয়, মুক্তি কাম্য ইহা জানিতাম, কিন্তু কখনো সদ্য মুক্তির সম্ভাবনা ঘটে নাই। আমি বিষম ভীত হইয়া পড়িলাম এবং গঙ্গাস্নান না করিয়াই পলায়ন করিলামা রাত্রে পথ ভুলিয়া গেলাম, কোথা হইতে যে কোথায় গেলাম জানি না—তারপর ঘুরিতে ঘুরিতে এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছি।

তাহার কাহিনী শুনিয়া অপর তিন পথিক বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—আপনার পরিচয় কি?

ইহা শুনিয়া চতুর্থ পথিক বলিল—আমি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা—যাহার বাংলা সিনেমা স্টার।

তখন সকলে একবাক্যে স্বীকার করিল—তাহার অভিজ্ঞতাই সব চেয়ে বিস্ময়কর তবে সিনেমা স্টারের পক্ষে বিস্ময়ের কিছুই নাই।

এই ভাবে পরস্পরের পরিচয় সাধনের পালা উদযাপিত হইতে চারজনে মিলিয়া গল্পগুজব আরম্ভ করিল চারজনেই আশা করিল যে, রাতটা আমোদ-আহ্বাদে ও আরামে কাটাইতে পারিবে এমন সময়ে সরাইখানার মালিক প্রবেশ করিল। সে অতিথিদিগকে বিশেষ আপ্যায়ন করিয়া সেখানে যতদিন খুশী কাটাইতে অনুরোধ করিল, বলিল—তাহাদের যাহাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে সে দৃষ্টি রাখিবো তারপরে কি যেন মনে পড়াতে সে একটু হাসিয়া বলিল—এই সরাইখানার সমস্ত ঘরই অধিকৃত কেবল একটিমাত্র ঘর খালি আছে।

পথিকরা বলিল—একটি ঘরেই আমাদের চলিবে।

সরাইখানার মালিক বলিল—ঘরটি নীচের তলাতে, কাজেই একটু স্যাঁৎসেতে—

পথিকরা বলিল—তাহাতেই বা ক্ষতি কি? ঘরে তক্তপোশ আছে তো?

মালিক বলিল—তক্তপোশ অবশ্যই আছে কিন্তু একখানা মাত্র, কাজেই আপনাদের তিনজনকে মেঝেতে শুইতে হইবে, সেই জন্যই স্যাঁতসেতে মেঝের উল্লেখ করিয়াছিলাম। ইহা ছাড়া আর কোন অসুবিধা নাই। আপনাদের মধ্যে কে তক্তপোশে শুইবেন তাহা আপনারা স্থির করিয়া ফেলুন, আমি আর কি বলিব? এই বলিয়া সে প্রস্থান করিল।

তখন পথিক চারজন বিব্রত হইয়া পড়িল কে তক্তপোশে শুইবে আর কারা বা মেঝেতে শুইবে! তাহারা সেই ঘরটায় গিয়া দেখিল সরাইখানার মালিকের কথাই সত্যা ঘরের মেঝে বিষম ভেজা, তার উপরে আবার এখানে সেখানে গর্ত, ইতস্তত অরসুলা, ইঁদুর, ছুঁচো নির্ভয়ে পরিভ্রমণশীল, এক কোণে আবার একটা সাপের খোলসও পড়িয়া আছে। আর এক দিকে একজনের মাপের একখানা তক্তপোশ—সেটাও আবার অত্যন্ত জীর্ণ।

চারজনে গালে হাত দিয়া বসিয়া পড়িল—তাহাদের দুরবস্থা দেখিয়া ছুঁচোগুলো চিকচিক শব্দে পলায়ন করিল—যেন ফিক ফিক করিয়া হাসিয়া উঠিল।

কে তক্তপেপাশে শুইবে? কাহার শরীর খারাপ? চারজনেরই শরীরের অবস্থা সমান।

তখন শিক্ষক বলিয়া উঠিল—এক কাজ করা যাক। আমাদের মধ্যে যাহার জীবন সমাজের পক্ষে সবচেয়ে দরকারী—সে-ই তক্তপোশে শয়ন করিবে, অপর তিনজনকে মেঝেতে শুইতে হইবে।

ইহা শুনিয়া তিনজনে ত্রিগপৎ বলিয়া উঠিল—ইহা অত্যন্ত সমীচীন—আর ইহা শিক্ষকের যোগ্য কথা বটে। কিন্তু কাহার জীবন সমাজের পক্ষে সবচেয়ে দরকারী তাহা কেমন করিয়া বোঝা যাইবে? পরীক্ষার উপায় কি?

তখন সাহিত্যিক বলিল—আমি একটা উপায় নির্দেশ করিতে পারি। আসিবার সময়ে দেখিয়া আসিয়াছি কাছেই একটা গ্রাম আছে। সেখানে আমাদের কেহ চেনে না আমরা চারজন চার পথে সেই গ্রামে প্রবেশ করিবা নিজেদের অত্যন্ত বিপন্ন বলিয়া পরিচয় দিব ইহার ফলে গ্রামের লোকেদের কাছে যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য ও সহানুভূতি পাইবে—বুঝিতে পারা যাইবে তাহারই জীবনের মূল্য সর্বাধিক। তক্তপোশে শয়ন করিবার অধিকার তাহারই।

সাহিত্যিকের উদ্ভাবনী শক্তি দেখিয়া তিনজনে স্তম্ভিত হইয়া গেল।

তখন চিকিৎসক বলিল—তবে আর বিলম্ব করিয়া কাজ কি? এখনো অনেকটা বেলা আছে এখনি বাহির হইয়া পড়া যাক, রাত্রি প্রথম প্রহরের মধ্যেই ফিরিতে হইবো

সিনেমা স্টার বলিল—আশা করি, আমরা সকলেই নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ফিরিয়া আসিয়া সত্য কথা বলিব।

ইহা শুনিয়া শিক্ষক বলিয়া উঠিল—হায় হায়, যদি মিথ্যা কথাই বলিতে পারিব তবে আজ কি আমার এমন দুর্দশা হইত!

তখন সকলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামের দিকে বিভিন্ন পথে প্রস্থান করিল।

২.

রাত্রি প্রথম প্রহর উত্তীর্ণ হইবার পূর্বেই চার বন্ধু ফিরিয়া আসিল। সকলে একটু বিশ্রাম করিয়া লইয়া সদ্যলব্ধ অভিজ্ঞতার ধাক্কা সামলাইয়া লইয়া নিজের নিজের পরিভ্রমণ কাহিনী বলিতে সুরু করিলা

প্রথমে শিক্ষক বলিতে আরম্ভ করিলা সে বলিল—আমি উত্তর দিকের পথ দিয়া গ্রামে প্রবেশ করিলাম কিছুদূর গিয়া একটি সম্পন্ন গৃহস্থ-বাড়ি দেখিলাম—ভাবিলাম এখানেই আমার ভাগ্য পরীক্ষা করিবা বাড়ীর দরজায় উপস্থিত হইবামাত্র সেই দয়ালু গৃহস্থ আমাকে বসিবার জন্য একটি মোড়া আগাইয়া দিল। আমি তাহাকে নমস্কার করিয়া উপবেশন করিলাম। সদাশয় গৃহস্থ আমাকে আপ্যায়িত করিয়া আমার পরিচয় শুধাইল। আমি বলিলাম যে, আমি একজন বিদেশী শিক্ষক—পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়া পড়িয়াছি।

ইহা শুনিবামাত্র গৃহস্থ চাকরকে ডাকিয়া বলিল—ওরে রামা, মোড়াটা ঘরে তুলিয়া রাখ, বাহিরে থাকিলে নষ্ট হইয়া যাইবে। আমি পরিত্যক্ত মোড়া হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। বলিলাম—আজ আপনার বাড়ীতে রাত্রি কাটাইবার অনুমতি প্রার্থনা করি। ইহা শুনিয়া গৃহস্থ বলিল—তোমাকে যে আশ্রয় দিব তাহার স্থানাভাবা আমি বলিলাম যে, অন্যজায়গা যদি না থাকে, তবে অন্তত আপনার গোয়ালঘরে নিশ্চয় স্থান হইবে। ইহা শুনিয়া গৃহস্থ বলিল—গোয়ালঘরেই বা স্থান কোথায়? দশ বারোটা গোরু আছে। কোনটাকে বাহিরে রাখিতে সাহস হয় না রাত্রে বাঘের ভয়। আজকাল গোরুর যা দাম, জানো তো?

আমি কহিলাম—গোরুর চেয়ে শিক্ষকের জীবনের মূল্য কম?

সে বলিল—কি যে বলো? একটা যেমন তেমন গোরুও আজকাল পাঁচ শশা টাকার কম মেলে না। আর দশটাকা হইলেই একটি শিক্ষক মেলে। এখন তুমিই বিচার করিয়া দেখো।

আমি বলিলাম—কিন্তু আমরা যে জাতিগঠন করি! বৃদ্ধ হাসিয়া বলিল—তার মানে তোমরা গোরু চরাও। কিন্তু রাখালের চেয়ে গোরুর মূল্য অনেক বেশি।

আমি বলিলাম—আপনার ছেলে নিশ্চয় শিক্ষকের কাছে পড়ে!

সে বলিল—পড়িত, এখন পড়ে না। এক সময়ে তাহার জন্য একজন শিক্ষক রাখিয়াছিলাম। সে এখন আমার গোরুর রাখালী করে—কারণ সে দেখিয়াছে যে, শিক্ষকের চেয়ে রাখালের বেতন ও সম্মান অনেক বেশি। তবে তুমি যদি রাখালী করিতে চাও, আমি রাখিতে পারি—আমার আর একজন রাখালের আবশ্যক। আর তোমাকে একটা পরামর্শ দিই, গোরুই যদি চাইবে তবে এমন গোরু চরাও যাহারা দুধ দেয়। দুধ দেয় না এমন মানুষ গোরু চরাইয়া কি লাভ? যাই হোক, তোমার ভালমন্দ তুমি বুঝিবে—তবে বাপু এখানে তোমার জায়গা হইবে না। ইহা শুনিয়া বুঝিতে পারিলাম যে শিক্ষকের জীবনের কি মূল্যা সেখান হইতে সোজা সরাইখানায় ফিরিয়া আসিলাম। এই বলিয়া সে নীরব হইল।

তখন চিকিৎসক তাহার কাহিনী আরম্ভ করিল। সে বলিল—দক্ষিণদিকের পথ দিয়া আমি গ্রামে প্রবেশ করিয়া একটি অট্টালিকা দেখিতে পাইলামা অনুমানে বুঝিলাম বাড়ীটি কোন ধনীর —কিন্তু বাড়ীর মধ্যে ও আশেপাশে লোকজনের উদ্বিগ্ন চলাচল দেখিয়া কেমন যেন সন্দেহ উপস্থিত হইল। এমন সময়ে এক ব্যক্তি বাহিরে আসিতেছিল, তাহাকে শুধাইলাম—মশায়, ব্যাপার কি? এ বাড়ীতে আজ কিসের উদ্বেগ?

সে বলিল—আপনি নিশ্চয় বিদেশী, নতুবা নিশ্চয় জানিতেন তবে শুনুন, এই বলিয়া সে আরম্ভ করিল—এই বাড়ী গ্রামের জমিদারের। তাহার একমাত্র পুত্র মৃত্যুশয্যায়—এখন শেষ মুহূর্ত সমাগত—যাহাকে সাধারণ ভাষায় বলা হইয়া থাকে যমে মানুষে টানাটানি—তাহাই চলিতেছে। বোধ করি যমেরই জয় হইবে।

আমি বলিলাম—এ রকম ক্ষেত্রে যমেরই প্রায় জয় হইয়া থাকে তার কারণ চিকিৎসক আসিয়া যোগ দিতেই যমের টান প্রবলতর হইয়া ওঠে ইহার প্রমাণ দেখিতে পাইবেন যে চিকিৎসক আসিয়া না পৌঁছানো পর্যন্ত রোগী প্রায়ই মরে না। কিন্তু তারপরেই কঠিন।

সে লোকটি বিস্মিত হইয়া কহিল—এ তথ্য আপনি জানিলেন কি করিয়া?

আমি সগর্বে বলিলাম—আমি যে একজন চিকিৎসক।

তখন সে বলিল—আপনার ভাগ্য ভাল, এ গ্রামের চিকিৎসকেরা কেহই রোগীকে নিরাময় করিতে পারে নাই—আপনি গিয়া চেষ্টা করিয়া দেখুন। সফল হইলে প্রচুর ধনরত্ন লাভ করিবেন।

আমি ভাবিলাম, সত্যই আমার ভাগ্য ভালো একবার চেষ্টা করিয়া দেখা যাক। সফল হইলে আর সরাইখানার ভাঙা তক্তপোশে রাত্রি না কাটাইয়া জমিদার-বাড়ীতেই আদরে রাত্রিযাপন করিতে পারিব।

তখন আমি ভিতরে গিয়া নিজেকে চিকিৎসক বলিয়া বিজ্ঞাপিত করিয়া রুগী দেখিতে চাহিলামা আমাকে চিকিৎসক জানিতে পারিয়া জমিদারের নায়েব সসম্রমে বসিতে দিল। সম্যক পরিচয় পাইয়া বলিল—হাঁ, রুগীর অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। তবে আপনি যদি তাহাকে আরোগ্য করিতে পারেন তবে দশ হাজার মুদ্রা ও সরিফপুর পরগণা পাইবেন। আমি উৎফুল্ল হইয়া উঠিলাম। তখন নায়েবের আদেশে একজন ভৃত্য আমাকে ভিতর মহলে লইয়া চলিল। পথে অনেকগুলি ছোট বড় কক্ষ পার হইয়া যাইতে হয়—একটি প্রায়ান্ধকার কক্ষে পাশাপাশি তিন চারটি লোক কাপড় মুড়ি দিয়া ঘুমাইতেছে দেখিতে পাইলাম। চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলাম— ইহারা এমন অসময়ে ঘুমাইতেছে কেন?

চাকরটি বলিল—অসময় তাহাতে সন্দেহ নাই কিন্তু তাহাদের এ ঘুম আর ভাঙিবে না।

—সে কি?ইহারা কে?

ইহারা মৃত এবং মৃত চিকিৎসক।

—মরিল কেমন করিয়া?

—চিকিৎসা করিতে গিয়া।

–চিকিৎসায় তো রুগী মরে।

–কখনো কখনো চিকিৎসকও মরে—প্রমাণ সম্মুখেই।

এই সব বাক্য বিনিময়ে আমার চিত্ত উচাটন হইয়া উঠিলা আমি বলিলাম—ব্যাপার কি খুলিয়া বলো।

সে বলিল—বুঝাইবার বিশেষ আবশ্যক আছে কি? হয়তো জীবন দিয়াই আপনাকে বুঝিতে হইবে। জমিদারবাবু বড়ই প্রচণ্ডস্বভাবের লোক। চিকিৎসায় আরোগ্য করিতে পারিলে তিনি চিকিৎসককে প্রচুর ধনরত্ন দিবেন ইহা যেমন সত্য, তেমনি চিকিৎসক ব্যর্থকাম হইলে তাহাকে মারিয়া ফেলিবেন ইহাও তেমনি সত্য প্রমাণ তো নিজেই দেখিলেন।

—আগে আমাকে এ কথা বলা হয় নাই কেন?

—তাহা হইলে কি আর আপনি চেষ্টা করিতে অগ্রসর হইতেন?

—কিন্তু চিকিৎসক মারিয়া ফেলার ইতিহাস তো কখনো শুনি নাই!

জমিদারবাবুর ধারণা আনাড়ি চিকিৎসক যমের দূত। তাহাদের মারিয়া ফেলিলে যমের পক্ষকে দুর্বল করিয়া রুগীর সুবিধা করিয়া দেওয়া হয়। কই আসুন—

আমি ততক্ষণে জানালার শিক ভাঙিয়া, পগার ডিঙাইয়া ছুটিয়াছি—আমাকে ধরিবে কে? যদিচ পিছনে আট-দশটি পাইক পেয়াদা দৌড়াইয়াছে দেখিতে পাইলাম। এক ছুটে সরাইখানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছি। এই পর্যন্ত বলিয়া সে থামিল তারপরে বলিল, আজ আমাকে এই স্যাঁতসেতে মেঝেতেই শুইতে হইবে, তা হোক। আমের কাঠের চেয়ে এই ভেজা মেঝে অনেক ভালো।

এবার সাহিত্যিকের পালা। সে বলিল—কি আর বলিব! খুব বাঁচিয়া গিয়াছি বন্ধু চিকিৎসকের মতো আমিও মৃত্যুর খিড়কি দরজার কাছে গিয়া পড়িয়াছিলাম—নেহাৎ পরমায়ুর জোরেই এ যাত্রা রক্ষা পাইয়াছি।

সকলে উৎসুক হইয়া শুধাইল–ব্যাপার কি খুলিয়া বলুন।

সাহিত্যিক বলিয়া চলিল—পূর্বদিকের পথ দিয়া গ্রামে গিয়া তো প্রবেশ করিলাম। সে দিকটায় রজকপল্লী। রজকপল্লী দেখিলেই আমার রজকিনী রামীকে মনে পড়িয়া যায়, কোন সাহিত্যিকেরনা যায়? রজক কিশোরীদের লক্ষ্য করিতে করিতে চলিয়াছি—হ্যাঁ—চণ্ডীদাস রসিক ছিল বটে, সজোরে পাথরের উপরে কাপড় আছড়াইবার ফলে দুই বাহু ও সংলগ্ন কোন কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমন সুপুষ্ট হইয়া ওঠে যে, অপরের প্রশস্ত নীল শাড়িও তাহা আবৃত করিবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। বিশেষ কাপড় আছড়াইবার সময় উক্ত প্রত্যঙ্গদ্বয় শরীরের তালে তালে শূন্যে বৃথা মাথা কুটিয়া মরিতে থাকে, তাহা দেখিয়া কোন পুরুষের মন না ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিবে-সাহিত্যিকদের তো কথাই নাই। এমন সময়ে একটি রজক কিশোরী আমাকে দেখিয়া চিৎকার করিয়া উঠিল—ফিরিয়াছে, ফিরিয়াছে!

ফিরিয়াছে? কে ফিরিয়াছে? হ্যাঁ, ফিরিয়াছে বই কি? আমার মধ্যে দিয়া চিরদিনকার চণ্ডীদাস ফিরিয়া আসিয়াছে—রজকিনী রামীর শীতল পায়ে বুঝিলাম জগতে দুটি মাত্র প্রাণী আছে—আমি চণ্ডীদাস আর কিশোরী রজকিনী রামী দেখিতে দেখিতে আমার চারিদিকে একদল কিশোরী জুটিয়া গেল—জগৎ রামীময়, আর তাহাদের ভাব দেখিয়া মনে হইল জগৎ আমিময়। এ রকম অবস্থায় কবিতা না লিখিয়া উপায় কি?

একজন বলিল—ফিরিয়াছে।

(ফিরিয়াছে বই কি! না ফিরিয়া কি উপায় আছে?)

আর একজন বলিল—অনেকদিন পরে।

(সত্যিই তো! চণ্ডীদাসের পরে আজ কত যুগ গিয়াছে!)

তৃতীয়া বলিল—ঠিক সেই চেহারা, ঠিক সেই হাবভাব।

(এমন তো হইবেই। মানুষ বদলায়, প্রেমিক কবে বদলিয়াছে?)

চতুর্থা বলিল—কেবল যেন একটু রোগা মনে হয়। (ওগো শুধু মনে হওয়া নয়…এ যে অনিবার্য বিরহসঞ্জাত-কৃশতা।)

পঞ্চমী কিছু বলিল না—কেবল আমার গায়ে হাত বুলাইয়া দিল। (ওগো বৈষ্ণব কবি, তুমি প্রশ্ন করিয়াছিলে, অঙ্গের পরশে কিবা হয়। আজ আমারও ঠিক সেই প্রশ্ন)

অপরা বলিল—কিন্তু লেজটা যেন কাটিয়া দিয়াছে?

লেজ? কার লেজ? এবার চণ্ডীদাস-থিওরিতে সন্দেহ জন্মিল।

এবারে আমি প্রথম কথা বলিলাম—আমি প্রেমিক চণ্ডীদাস।

তাহারা সমস্বরে বলিল—হাঁগো হাঁ, তাহার ঐ নামই ছিল বটে।

এই বলিয়া একজন একটা কাপড়ের মোট আনিয়া আমার ঘাড়ে চাপাইয়া দিতে চেষ্টা করিল।

আমি বলিলাম—আমি তো চাকর নই!

তাহারা বলিল—চাকর হইতে যাইবে কেন? তুমি যে গাধা।

আমি গাধা!

বলিলাম—সে কি! আমি যে মানুষের মতো কথা বলিতে পারি।

রসিকা বলিল—অনেক মানুষ গাধার মতো কথা বলে, একটা গাধা না হয় মানুষের মতো কথাই বলিল—আশ্চর্যটা কি?

আমি ব্যস্ত হইয়া বলিলাম—আরে, আরে, আমি যে সাহিত্যিক!

—তবে আর তোমার রাসভত্বে সন্দেহ নাইকারণ যাহারা মধুর স্বাদ নিজে গ্রহণ না করিয়া কবিতার ব্যাখ্যা করিয়া মরে—তাহারা যদি গাধা না তবে গাধা কে?

তখন অপর এক কিশোরী বলিল—ও দিদি, এ যে বশ মানিতে চায় না—কি করি?

কিশোরীর দিদি যুবতী বলিল—প্রেমের ডুরি খানা আন তো?

প্রেমের ডুরি শুনিলেও দেহে রোমাঞ্চ হয়।

দেখিতে পাইলাম একজন মোটা একটি কাছি আনিতেছে।

তবে ওরই নাম প্রেমের ডুরি! ও ডোর ছিড়িবার সাধ্য তো আমার হইবেই না—এমন কি পাড়াসুদ্ধ লোকের হইবে না। তখনই ছুটা কিশোরীরা দৌড়ায় বেশ! প্রায় ধরিয়াছিল আর কি! উঃ, পথ বিপথ লক্ষ্য করি নাই—এই দেখুন হাঁটুর কাছে ছড়িয়া গিয়াছে, কাপড়টা ছিড়িয়া গিয়াছে! তবু ভালো যে প্রেমের ডুরিতে বদ্ধ হই নাই!

এই বলিয়া সে থামিল। তার পরে বলিল—তবু ভালো যে আজ ভিজা মেজেতে শুইতে পাইব, প্রেমের ডোরে বাঁধা পড়িলে গোয়ালে ঘুমাইতে হইত।

তাহার কাহিনী শেষ হইলে সকলে মিলিয়া সিনেমা স্টারের অভিজ্ঞতা শুনিবার জন্য উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল।

চতুর্থ পথিক তাহার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিতে সুরু করিল।

–বন্ধুগণ, আমি পশ্চিমদিকের পথ দিয়া গ্রামে প্রবেশ করিয়া দেখি একটি পুকুরের ধারে একটি মেলা বসিয়াছে। স্থান কাল পাত্র দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম যে সামাজিক ধাপে আমার। জীবনের মূল্য বিচারের ইহাই যথার্থ স্থানা আমি তখন পুকুরের জলে নামিয়া ডুবিয়া মরিতে চেষ্টা করিলাম। আপনারা ভয় পাইবেন না, সহস্রবার ডুবিয়াও কি করিয়া না মরিতে হয় তাহার কৌশল আমাদের আয়ত্ত। ডুবিয়া মরিবার চেষ্টা অভিনয় মাত্র। আমি সকলকে ডাকিয়া বলিলাম—আমি ডুবিয়া মরিতেছি, তোমরা আমাকে বাঁচাও! আমার আর্ত আহ্বান শুনিয়া সকলে পুকুরের ধারে আসিয়া দাঁড়াইল, কিন্তু কেহ জলে নামিল না।

আমি বলিলাম—আমি ডুবিলাম বলিয়া—শীঘ্র বাঁচাও!

তাহারা বলিল—আগে তোমার পরিচয় দাও তবে জলে নামিব।

আমি বলিলাম—আমি একজন মানুষ বাঁচাইবার পক্ষে ইহাই কি যথেষ্ট নয়?

তাহারা বলিল—আমরা সবাই তো মানুষ। কেবল আইনে বাধে বলিয়া পরস্পরকে মারিয়া ফেলিতেছি না—সদয় বিধাতা আইনের নিষেধ লঙ্ঘন করিয়া তোমাকে যখন মারিবার ব্যবস্থাই করিয়াছেন—তখন তোমাকে আমরা বাঁচাইতে যাইব কেন?

আমি তাহাদিগকে পরীক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে বলিলাম—আমি শিক্ষক।

তাহারা এক বাক্যে বলিল—জীবন্মত হইয়া বাঁচিয়া থাকিবার চেয়ে তোমার ডুবিয়া মরাই ভালো।

আমি বলিলাম—আমি চিকিৎসক।

তাহারা বলিল—অনেক মারিয়াছ, এবারে মরো।

—আমি সাহিত্যিক।

—ডুবাইতে পারো আর ডুবিতে পারো না?

—আমি সাংবাদিক শুনিয়া তাহারা ঢেলা মারিল।

—আমি সাধুপুরুষ—শুনিয়া তাহারা হাসিল।

—আমি বৈজ্ঞানিক—শুনিয়া তাহারা সাড়াশব্দ করিল না।

—আমি গায়ক—শুনিয়া তাহারা কেহ কেহ চঞ্চল হইয়া উঠিল।

—আমি খেলোয়াড়—শুনিয়া দু-একজন জলে নামিতে উদ্যত হইল।

—আমি চলচ্চিত্র অভিনেতা।

তাহারা বুঝিতে পারিল না। তখন বলিলাম—যাহার বাংলা হইতেছে ‘সিনেমা স্টার’।

ইহা শুনিবামাত্র মেলার সমস্ত জনতা একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়া পড়িল। পুকুরের জল স্ফীত হইয়া উঠিয়া মেলার জিনিসপত্তর ভাসাইয়া লইয়া গেল।

সকলেরই মুখে হায় হায়! গেল গেল! দেশ ডোবে, জাতি ডোবে, সমাজ ডোবে, রাজ্য সাম্রাজ্য সভ্যতা আদর্শ ডোবে তাহাতে ক্ষতি নাই কেবল সিনেমা স্টার ডুবিলে সমস্ত গেল! হায়, হায়! গেল, গেল!

সকলে মিলিয়া আমাকে টানিয়া তুলিয়া ফেলিল। সকলে অর্থাৎ আবাল বৃদ্ধ নর নারী যুবক যুবতী বালক বালিকা কিশোর এবং কিশোরী।

আমাকে মাটিতে ফেলিয়া দিয়া আমার দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গের মাপজোক লইতে আরম্ভ করিয়া দিল। পা হইতে মাথা পর্যন্ত নানাস্থানের মাপা তারপরে চুলের রং, ঠোঁটের রং, নখের রং দাঁতের রং, চোখের রং এ সব টোকা হইয়া গেলে, আমার জীবনেতিহাসের খুঁটিনাটি লইয়া প্রশ্ন সুরু করিলা আমাকে কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না। আগামী কল্য তাহাদের সম্বর্ধনা গ্রহণ করিব এই প্রতিশ্রুতি দিয়া তবে ছাড়া পাইয়া আসিয়াছি।

চতুর্থ পথিকের অভিজ্ঞতা শুনিয়া অপর তিনজনে বুঝিতে পারিল আজ রাত্রে তক্তপোশে শুইবার অধিকার কাহারা।

চার বন্ধুতে আহারান্তে শয়ন করিলা সিনেমা স্টার তক্তপোশে শুইল—অপর তিনজনে সেই ভেজা মেঝের উপরে তক্তপোশশায়ী সিনেমা স্টারের নিদ্রার তালে তালে যখন নাসিকা গর্জন চলিতেছিল, তখন তিনজনে মশা, মাছি, ছুঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি তাড়াইয়া বিনিদ্র-নিদ্রায় রাত্রি কাটাইতেছিল। সারারাত ছুঁচোগুলো চিক চিক করিয়া ঘরময় দৌড়িয়া বেড়াইল—তিনজনের কানে তাহা বিদ্রুপের ফিক ফিক হাসির মতো বোধ হইল। ঘরের একপ্রান্তে একটা সাপের খোলস পড়িয়া থাকা সত্বেও তাহারা নির্বিঘ্নে রাত্রি অতিবাহিত করিল। কপালে যাহাদের দুঃখ সাপেও তাদের স্পর্শ করে না!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *