1 of 3

একটি আদ্যোপান্ত দুর্ঘটনা

একটি আদ্যোপান্ত দুর্ঘটনা

এ বাসটায় খুব ভিড়। অবশ্য সব বাসেই খুব ভিড় আজকাল। শনিবার রবিবার, সকাল-বিকেল কিছু নেই, সব সময়েই লোক উপছিয়ে পড়ছে; বাসে, রাস্তায়, বাজারে, সিনেমায়। এত লোক কোথা থেকে আসে, কেন আসে, কোথায় যায়, কেন যায়, রাতে কোথায় ঘুমায়?

নির্মলা লেডিস সিটের এক প্রান্তে বসে এই সব ভাবছিলেন, ক্রমশ বাসটা যত ধর্মতলার দিকে এগোচ্ছিল, বাসে ভিড় বেড়েই যেতে লাগল। নির্মলা বসে বসে আরও ভাবছিলেন, এই রবিবারের সন্ধ্যাবেলায় এত লোক ধর্মতলায় কী করতে যাচ্ছে? এরা সবাই কি ময়দানে বেড়াতে যাচ্ছে, অথবা চৌরঙ্গিতে ফুর্তি করতে চলেছে? কিন্তু এদের দেখে তো সেরকম মনে হয় না, বেড়ানোর বা ফুর্তি করার লোকের চেহারা, সাজ-পোশাক, এমনকী মুখ-চোখ দেখলেই বোঝা যায়।

কলকাতার উত্তরে এক মফসল শহর থেকে এই বাসটা সরাসরি ধর্মতলা পর্যন্ত চলে আসে। এর যাত্রীদের অধিকাংশের চেহারা ও চালচলনে সেই মফসলি ছাপ। এই সব বহিরাগত প্রাইভেট বাসের যাত্রীদের মোট চেহারা প্রায় একরকম। স্টেট বাসের লোকদের চেহারা একটু আলাদা, তাতে খাস কলকাতার ছাপ। এই পার্থক্য চোখে দেখে যতটা বোঝা যায়, বলে বোঝানো কঠিন। সেই

একই রকম লম্বা-ফরসা, বেঁটে-কালো, নাইলন-টেরিলিন, হ্যান্ডব্যাগসানগ্লাস–কিন্তু কোথায়। একটা সূক্ষ্ম প্রভেদ রয়ে গেছে যা শুধু চোখের নজরে ধরা পড়ে। নির্মলা এই সব ভাবতে ভাবতে চলেছেন, ইতিমধ্যে বাস প্রায় বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে; নির্মলা উঠেছেন শ্যামবাজারের মোড় থেকে। ইতিমধ্যে অনেক লোক নেমেছে এবং তার চেয়ে বেশি লোক উঠেছে। ভাগ্যক্রমে প্রায় উঠেই নির্মলা সামনে একটা লেডিস সিট খালি পেয়ে যান, এবং নির্মলা এখন সেখানেই বসে আছেন।

সিটে বসেও অবশ্য নিস্তার নেই। ক্রমবর্ধমান জনমণ্ডলীর প্রচণ্ড চাপ নির্মলার সামনে দাঁড়ানো। এক ভদ্রলোকের হাঁটু বাহিত হয়ে বারে বারে নির্মলার হাঁটুতে এসে লাগছিল। এমন একটা কোণার দিকে নির্মলা বসেছেন যে ইচ্ছে হলেই হাঁটুটা সরিয়ে রক্ষা করতে পারবেন তার কোনও উপায় নেই।

নির্মলার হাঁটুর উপর চাপ ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছিল, তিনি বিরক্ত হয়ে সামনের ভদ্রলোকটির দিকে তাকালেন। ঠিক সাদা ভাষায়, কলকাতায় যাদের ভদ্রলোক বলে তেমন নয়, গ্রাম্য গৃহস্থ চেহারা, মোটা ধুতি মোটা শার্ট গলায় আধময়লা সুতির চাদর, বয়স বছর পঞ্চাশ বা কিছু কমের দিকেই হবে। ভদ্রলোকটিকে মৃদু তিরষ্কার করতে গিয়ে নির্মলার একটু বরং মায়াই হল, এঁর কোনও দোষ নেই, ইনি নিতান্তই অসহায়। আ-দরজা যাত্রীসাধারণের অদম্য চাপ কেন্দ্রীভূত হয়ে এঁর হাঁটুর উপরে পড়ছে, তারই কিছুটা ইনি চালান করে দিচ্ছেন নির্মলার হাঁটুতে, তবু তো নির্মলা বসে, ইনি ত্রিভঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

বাসটা ইতিমধ্যে কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে এসে গেছে, এইখানে আর একটা প্রচণ্ড ভিড়ের ধাক্কা সৃষ্টি হল, নামল মাত্র একজন লোক, উঠবার চেষ্টা করছে শতাধিক লোক। নির্মলার সামনে দাঁড়ানো যে ভদ্রলোক এতক্ষণ নির্মলার হাঁটুতে হাঁটু ঠেকিয়ে আত্মরক্ষা করছিলেন, এবার তিনি সত্যি সত্যি হুমড়ি খেয়ে পড়লেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বাস তীব্রগতিতে ছাড়ল এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটল।

প্রাইভেট বাসগুলোর জানলার উপরে ছাদ বরাবর লাল-নীল কাঁচের জাফরি লাগানো থাকে। সেইখানে হাতের চাপ রেখে নির্মলার হাটুতে আরেকটু চাপ ফেলতে গিয়ে হঠাৎ উপরের জাফরির কাঁচ ভেঙে একসঙ্গে ভদ্রলোকের বাঁ এবং ডান হাতের দশটা আঙুল সেই জাফরির মধ্যে ঢুকে গেল। জাফরি থেকে ভাঙা কাঁচের টুকরোগুলো ঝরঝর করে ভেঙে নির্মলার মুখের উপর পড়তে লাগল, সেই কাঁচের টুকরোগুলি সব রক্তে রক্তময়, এর উপরে ভদ্রলোকের আঙুল কাটা রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় প্লাবিত করে দিলে নির্মলার চোখ, মুখ, মাথার চুল।

সে এক বীভৎস দৃশ্য। ভদ্রলোক একবার আর্ত চিৎকার করেই নির্মলার মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দ হয়ে গেলেন। বাসের লোকেরা প্রচণ্ড হই হই শুরু করে দিল, নির্মলার মাথা, শরীর, শাড়ি সমস্ত রক্তে আর কাঁচে মাখামাখি, সবাই রোকখে রোকখে করে বাস থামিয়ে ফেলল।

অন্যের গায়ের রক্ত নাক দিয়ে, চোখ দিয়ে, ঠোঁট দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে আর মাথায়, ঘাড়ে কিছু ধারালো কাঁচের টুকরো, নির্মলা একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলেন। কিন্তু বাসের লোকেরা তাঁকে হতভম্ব হওয়ার অবকাশ দিল না, সামনেই মেডিক্যাল কলেজ, কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই মিলে হই-হই করে মেডিক্যাল কলেজের সদর দরজার ভিতর দিয়ে একেবারে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে এনে পুরো বাসটাকে দাঁড় করাল। কয়েকজন ছুটে ইমার্জেন্সির ভিতরে চলে গেল, আর কয়েকজন। পাঁজাকোলা করে নির্মলাকে সামনের একটা খালি হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিল। বাকি সবাই নির্মলার। ওই রক্তাক্ত মুখশ্রী দেখে, কী হয়েছে, কী হয়েছে বলে কলরব করতে লাগল।

ঘটনার আকস্মিকতায় নির্মলার তখন বিপর্যস্ত অবস্থা, সত্যিই তার কী হয়েছে, কোথাও সত্যি কেটে-টেটে গেছে কি না তাও বুঝতে পারছিলেন না। একটু দূরেই সেই গ্রাম্য ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, তার অবস্থা আরও নিদারুণ, তার হাত দিয়ে তখনও দরদর করে রক্ত পড়ছে, কিন্তু কেউই সেটা খেয়াল করছে না, তিনি একা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন, তার হাত দুটো থরথর করে কাঁপছে, বোধ হয় এতটা রক্তক্ষরণের জন্যেই।

হুইলচেয়ার ঠেলে নির্মলাকে ইমার্জেন্সির মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে একজন পৌর প্রশাসনের গর্তে পড়ে পা ভাঙা এবং একজন মিনিবাস চাপা পড়া লোকের পর্যবেক্ষণ করছিলেন দুজন তরুণ ডাক্তার। নির্মলার রক্তময় মুখ দেখে তাদের ফেলে তারা ছুটে এলেন। এসেই প্রথমে নার্সকে ডেকে তাড়াতাড়ি ধুয়ে মুছে ড্রেসিং করতে বললেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে?

ডাক্তারেরা যখন শুনলেন বাসে, স্পষ্টই ধরে নিলেন বাস থেকে পড়ে গিয়ে রাস্তায় মাথা থেঁতলে গিয়েছে; সবাই চুপ করুন, চুপ করুন, বাইরে দাঁড়ান, এটা হাসপাতাল, গোলমাল করবেন না, বলে, নার্সের ড্রেসিং শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলেন। ওই প্রান্তে তখন পা-ভাঙা এবং চাপা-পড়া লোক দুজন ভীষণ কেঁকাচ্ছে এবং বাইরে সিঁড়ির উপরে বসে সেই গ্রাম্য ভদ্রলোক, তার রক্ত পড়া তখনও থামেনি।

এদিকে যে নার্স নির্মলাকে ড্রেসিং করে বোয়াতে-মোছাতে গিয়েছিলেন, তিনি যত রক্ত মোছেন তারপর আর কিছুই পান না কোথাও, শুধু রক্ত আর রক্ত, দু-একটা কাঁচের টুকরো, কিন্তু কোথাও একটা কাটা নেই, একটু ছড়ে যাওয়া পর্যন্ত নেই।

বিব্রত নার্স ডাক্তারদের ডাকলেন। ডাক্তারেরা এসেও অবাক। তারা ভাবলেন, তা হলে বোধ হয় নাক বা মুখ দিয়ে এত রক্ত বেরিয়েছে, কিন্তু সে রক্ত কপালে, মাথায় চুলে লাগবে কী করে? কিছুক্ষণ বিমূঢ়তার পর একজন ডাক্তার নির্মলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এত রক্ত এল কোথা থেকে? নির্মলা বললেন, এ রক্ত আমার নয়, অন্য লোকের রক্ত। উত্তর শুনে ডাক্তারদ্বয় এবং নার্স স্তম্ভিত হয়ে নির্মলার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, তাদের চোখেমুখে প্রচণ্ড সন্দেহের ছায়া। একটু পরে একটু সরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কী আলোচনা করে একজন এসে কঠিন কণ্ঠে নির্মলাকে বললেন, আপনার কিছুই হয়নি। যান, বাড়ি চলে যান।

হাসপাতাল থেকে ধমক খেয়ে নির্মলা বেরিয়ে এলেন। বউবাজারে চলেছিলেন দিদির বাড়িতে। আর বউবাজারে গিয়ে দরকার নেই, সাতটা বেজে গেছে, রাত্রির শো-য় সিনেমার টিকিট কাটা আছে, গিয়েই তৈরি হতে হবে। বি টি রোডের ফ্ল্যাটে ফিরে চললেন নির্মলা।

বাসায় ফেরার পর নির্মলার স্বামী মহাদেব সব শুনে তো হই-চই লাগিয়ে দিলেন, তুমি যে রকম বোকা। নির্মলা যত বলেন, আমি কী করব? মহাদেব আরও ক্ষেপে যান কী সাংঘাতিক, এখনও তো কানে, ঘাড়ে রক্ত লেগে রয়েছে, কার না কার রক্ত, ছি ছি ছি।

নির্মলারও ঘেন্না করছিল, বাথরুমে গিয়ে ভাল করে সাবান মেখে স্নান করলেন। কিন্তু মহাদেব অত সহজে ছাড়বার লোক নন, কার কী ইনফেকশন আছে কে জানে, কার কীরকম রক্ত, হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করালে না কেন? নির্মলা বলেন, অন্যের রক্ত আমি কী পরীক্ষা করাব? অবশেষে অনেক তর্ক-বিতর্কের পর স্থির হল পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্যে নির্মলা সমস্ত মুখ, ঘাড়, পিঠ কোনও লোশন দিয়ে মুছে ফেলবে। কিন্তু ডেটল খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, শিশিতে একবিন্দু ডেটল। নেই। এদিকে সিনেমার সময় হয়ে এসেছে, দোকানে গিয়ে ডেটল কিনে আনতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। এ ছাড়া বাসায় কোনও অ্যান্টিসেপটিক লোশন নেই। পাশের ফ্ল্যাটে খোঁজ করতে গেলেন। নির্মলা, তাদের মলমের ব্যবসা, নিশ্চয়ই কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানেও কিছু নেই, তবে তাদের কাছে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল, যাকে র অ্যালকোহল বলে তা কয়েক বোতল আছে, তাই দিয়ে নাকি সব মলম তৈরি হয়। আধ শিশি তাই নিয়ে এল নির্মলা।

 মহাদেব তো অ্যালকোহল দেখে উত্তেজিত, দাও অর্ধেক আমি খাই, অর্ধেক তুমি মাখো। শেষ পর্যন্ত সত্যি অর্ধেক জল মিশিয়ে মহাদেব খেলেন, বাকি অর্ধেক নির্জলা নির্মলা মাখলেন। প্রথমে। নির্জলা মাখতে তিনি রাজি হননি, কিন্তু মহাদেব জোর করলেন, জল-টল মিশিয়ো না, এইভাবে মাখো, সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়ে যাবে।

অ্যালকোহল মাখবার ও পান করার পর মহাদেব-নির্মলা দম্পতি বেরোলেন সিনেমা দেখতে। ওই বিশুদ্ধ তরল পদার্থ মাখবার পর থেকে কীরকম অস্বস্তি বোধ করছিলেন নির্মলা। সিনেমা হলে বসে নিউজ-রিল শেষ হয়ে আসল বই আরম্ভ হওয়ার আগেই নির্মলার মুখে-চোখে কীরকম একটা ব্যথা করতে লাগল। আলগোছে মুখের উপর হাত বোলাতে বুঝতে পারলেন ফোঁসকা উঠছে: ক্রমশ। ফোঁসকা উঠতে লাগল; ফোঁসকা আরও ফোঁসকা, আরও ফোঁসকা।

ইন্টারভ্যালের আলো জ্বলতেই চমকে উঠলেন মহাদেব। নির্মলার মুখমণ্ডল ফোঁসকায় ছেয়ে গেছে, যেগুলো সদ্য উঠেছে সেগুলো গোলাপি রঙের, পরের গুলি টকটকে লাল আর কতকগুলি এরই মধ্যে কালচে রং ধরেছে।

সিনেমা আর দেখা হল না। মহাদেব আঁতকে লাফিয়ে উঠলেন, সর্বনাশ, তোমার মুখের কী অবস্থা হয়েছে! প্যাসেজ দিয়ে দ্রুত বেরোতে বেরোতে লম্বা টানা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নির্মলা নিজেও অস্থির হয়ে উঠলেন, কী সাংঘাতিক!

হল থেকে বাইরে এসে মহাদেব ট্যাক্সি ডাকলেন, এই চলো মেডিক্যাল কলেজ। নির্মলা মেডিক্যাল কলেজের কথা শুনে কী একটা প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ব্যথা-যন্ত্রণায় তখন তিনি অস্থির।

মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সির সামনে আবার এসে ট্যাক্সি দাঁড়াল। আবার সেই একই ওয়ার্ড, ডাক্তার দুজন এবং নার্স এখনও অপরিবর্তিত। নির্মলাকে দেখে এবার তারা চমকে উঠলেন, সন্ধ্যায় যাঁর রক্তাক্ত মুখ দেখে তারা বিচলিত হয়েছিলেন, এখন তার মুখে নানা বর্ণের, নানা আকারের ফোঁসকা। এবার কিন্তু তারা মুহূর্তের মধ্যে মনঃস্থির করে ফেলেছেন, একজন এগিয়ে এসে নির্মলাকে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিই না সন্ধ্যাবেলায় রক্ত মেখে এসেছিলেন? নির্মলা ক্ষীণ কণ্ঠে কী উত্তর দিলেন বোঝা গেল না। এবার ফোঁসকা লাগিয়ে এসেছেন? পরের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। নির্মলার জবাবের জোর নেই, মহাদেব নির্বাক। অবশেষে পিছন থেকে নার্সটি কাংস্যকণ্ঠে বললেন, এসব চালাকি এখানে চলবে না।

নির্মলা আর মহাদেব গুটি গুটি বেরিয়ে এলেন হাসপাতাল থেকে। ব্যথায় যন্ত্রণায় নির্মলা তখন অস্থির, তারই মধ্যে দেখতে পেলেন সেই গ্রাম্য ভদ্রলোকটি বারান্দায় দেয়ালে ঠেস দিয়ে পড়ে রয়েছে, তার হাতের তালুতে চাপ চাপ রক্ত জমাট ধরে তখন কালো হয়ে গিয়েছে, তবে নতুন করে আর রক্ত পড়ছে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *