১.১৮ জষ্টিস ওয়েলস

জষ্টিস ওয়েলস

শিবকেষ্টোর মোকদ্দমার মুখে জষ্টিস ওয়েলস নতুন ইণ্ডেণ্ট হন। তাঁর সংস্কার ছিল, বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রায় সকলেই মিথ্যাবাদী ও জালবাজ; সুতরাং মোকদ্দমা করবার সময়ে যখন চার পা তুলে বক্তৃতা কত্তেন, তখন প্রায়ই বলতেন, “বাঙ্গালীরা মিথ্যাবাদী ও বর্বরের জাতি!” এতে বাঙ্গালীরা অবশ্যই বলতে পারেন, “শতকরা দশ জন মিথ্যাবাদী বা বব্বলে হল যে আশী নব্বই জনও মিথ্যাবাদী হবেন, এমন কোন কথা নাই।” চার দিকে অসন্তোষের গুজগাজ পড়ে গেল, বড় দলের মোড়লেরা হাতে কাগজ পেলেন, ‘তেঁই ঘোঁটের’ যত মাথালো মাথালো জায়গায় ঘোঁট পড়ে গেল; শেষে অনেক কষ্টে একটি সভা করে সার চার্লস কাষ্ঠ মহাশয়ের নিকট দরখাস্ত করাই এক প্রকার স্থির হলো। কিন্তু সভা কোথায় হয়, বাঙ্গালীদের তো এক পদও সাধারণের স্থান নাই; টাউনহল সাহেবদের, নিমতলার ছাতখোলা হল গবর্মেন্টের, কাশী মিত্তিরের ঘাটে হল নাই; প্রসন্নকুমার ঠাকুর বাবুর ঘাটের চাঁদনীতে হতে পারে, কিন্তু ঠাকুর বাবুর পাঁচজন সাহেব সুবোর সঙ্গে আলাপ আছে, সুতরাং তাও পাওয়া কঠিন। শেষে রাজা রাধাকান্তের নবরত্নের নাট-মন্দিরই প্রশস্ত বলে সিদ্ধান্ত হলো। কাগজে বিজ্ঞাপন বেরুলো, “অমুক দিন রাজা রাধাকান্ত বাহাদুরের নবরত্নের নাটমন্দিরে ওয়েলস জজের মুখরোগের চিকিৎসা করবার জন্যে সভা করা হবে। ঔষধ সাগরে রয়েছে।”

সহরের অনেক বড় মানুষ—তাঁরা যে বাঙ্গালীর ছেলে, ইটি স্বীকার কত্তে লজ্জিত হন; বাবু চুনোগলির আনড্রু পিদ্রুসের পৌত্তর বল্লে তারা বড় খুশী হন। সুতরাং যাহাতে বাঙ্গালীর শ্রীবৃদ্ধি হয়, মান বাড়ে, সে সকল কাজ থেকে দূরে থাকেন। তদ্বিপরীত নিয়তই স্বজাতির অমঙ্গল চেষ্টা করে থাকেন। রাজা রাধাকান্তের নাটমন্দির ওয়েলসের বিপক্ষে বাঙ্গালীরা সভা করবেন শুনে তারা বড়ই দুঃখিত হলেন; খানা খাবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় মনে পড়ে গেল; যাতে ঐ রকম সভা না হয়, কায়মনে তাই চেষ্টা কর্ত্তে লাগলেন। রাজা বাহাদুরের কাছে সুপারিশ পড়লো, রাজা বাহাদুর সত্যব্রত, একবার কথা দিয়েছেন, সুতরাং উঁচুদলের সুপারিশ হলেও সহসা রাজী হলেন না। সুপারিশওয়ালারা জোয়ারের গুয়ের মত সাগরের প্রবল তরঙ্গে ভেসে চল্লো। নিরূপিত দিনে সভা হলো, সহরের লোক রৈ রৈ করে ভেঙ্গে পড়লো, নবরত্নের ভিতরের বিগ্রহ ও নাটমন্দিরের সামনের যোড় হস্ত-করা পাথরের গড়ুরেরও আহ্লাদের সীমা রহিল না। বাঙ্গালীদের যে কথঞ্চিৎ সাহস জন্মেছে, এই সভাতে তার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেল। একবল সুপারিশওয়ালা বাবুরা ও সহরের সোণার বেণে বড়মানুষের এই সভায় আসেন নাই; সুপারিশওয়ালাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেল! বেণে বাবুরা কোন কাজেই মেশেন না, সুতরাং তাঁদের কথাই নাই। ওয়েলস হুজুকের অনেক অংশে শেষ হলো দশ লক্ষ লোকে সই করে এক দরখাস্ত কাষ্ঠ সাহেবের কাছে প্রদান কল্লেন; সেই অবধি ওয়েলসও ব্রেক হলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *