১০. দশম অধিবেশন

দশম অধিবেশন

আজকে আমরা কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমাদের এই সভায় এনেছি। আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দি। ইনি স্বামী মুগ্ধানন্দ। নমাসে হিমালয়ে থাকেন। তিন মাস ভ্রমণ করেন।

নমস্কার মহারাজ!

জয়স্তু।

ইনি ডক্টর সিদ্ধান্ত। সাইকোলজিস্ট। সারা ভারতে এঁর নাম। বহু পাগলকে সুস্থ করেছেন। বহু খুনিকে সাধু করেছেন। বহু ডিকটেটারকে ডেমোক্র্যাট করে ছেড়েছেন।

নমস্কার।

নমস্কার।

এই ভদ্রলোকের নাম অমল বোস। ইনি ডগট্রেনার। ব্যারাকপুরে কুকুরের স্কুল খুলেছেন। কুকুরকে ইনি মানুষের বাবা বানাতে পারেন।

নমস্কার।

নমস্কার।

ইনি হলেন চৈতন্য মুখোপাধ্যায়। গণিতের শিক্ষক। অঙ্ক কেটে জোড়া লাগান। বহু গাধাকে পিটে-পিটে গরু করেছেন।

নমস্কার।

নমস্কার নমস্কার।

ইনি হলেন নরেশ বেদান্ত। দার্শনিক। জগৎ মিথ্যা ব্রহ্ম সত্য, ব্রহ্ম মিথ্যা জগৎ সত্য, এইসব মারাত্মক-মারাত্মক বিষয় নিয়ে ইনি গবেষণা করেন। পথ চলতে-চলতে গীতার শ্লোক আওড়ান। বেদ-বেদান্ত এঁর কণ্ঠস্থ।

নমস্কার।

শুভায় ভবতু।

এঁর নাম হরিসাধন ভট্টাচার্য। পুরোহিত। ভাটপাড়ায় টোল ছিল। জুটমিলের শব্দে শ্যামনগরে চলে এসেছেন। টোল উঠে গেছে। জীবনে অসংখ্য শ্রাদ্ধ ও বিবাহকর্ম করিয়েছেন। সুপণ্ডিত মানুষ। একটি সংস্কৃত শব্দও ভুল উচ্চারণ করেন না। উপনয়ন ও বিবাহের সময় যজমানকে সংস্কৃত মন্ত্রের অর্থ বলে দেন।

নমস্কার।

কল্যাণ হোক।

ইনি হলেন রামরাম বাটপাড়িয়া। ব্যাবসাদার মানুষ। স্বাধীনতার আগে কোটিপতি ছিলেন। বর্তমানে অবুদপতি।

নমস্কার।

নমস্তে জি।

হাঁ জি।

ইনি হলেন পন্টু হালদার। ফেমাস মাস্তান। হ্যাঁ, মাস্তান বললে ইনি অসন্তুষ্ট হন না, বরং গর্ববোধ করেন। কারণ মাস্তানী এখন জাতে উঠেছে। ভেরি ডিগনিফায়েড প্রফেশান।

নমস্কার।

ঠিক আছে, ঠিক আছে।

ইনি হলেন বটু পাল। নেতা। ছবার এম এল এ হয়েছেন। ট্রেড ইউনিয়ন করেন। এঁর কথায় দেশীয় শিল্পের চাকা চলে, চাকা বন্ধ হয়। ডজনখানেক বন্ধের সফল শিল্পী।

নমস্কার।

সেলাম। শ্রমিক ঐক্য জিন্দাবাদ। চলবে না, চলবে না। ও সরি।

সরি।

ইনি হলেন অ্যাডভোকেট এ. এন. ঘোষ। ইনি দোষীকে নির্দোষী, নির্দোষীকে দোষী প্রমাণ করায় সিদ্ধ।

নমস্কার।

থ্যাঙ্ক ইউ।

এইসব গুণী মানুষকে আজ আমরা এক ছাদের তলায় একসঙ্গে উপস্থিত করেছি একটি মাত্র উদ্দেশ্যে–পথের সন্ধান পাব বলে। মানুষ হয়ে জন্মেছি, যতদিন না মৃত্যু আসছে ততদিন এই জীবন টেনে-টেনে চলতে হবে। আমাদের মৃত্যুর পরও মানুষ আসবে, মানুষ থাকবে। জীবন মানেই ক্লেশ। তবু চেষ্টা ক্লেশহীন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় কিনা। শঙ্করাচার্য বলেছেন–যাবৎ জনমং তাবৎ মরণং যাবৎ জননী জঠরে শয়নং ক্ষণপতি সজ্জন সঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবে তরণে নৌকা। এঁরা একে-একে আমাদের পথ বাতলান। গৃহিনীরা জানেন পেঁয়াজ ছাড়াতে গেলেই চোখে জল আসে। বাঁচার উপায়ও জানেন–বটির ডগায় একটি পেঁয়াজ গেঁথে রেখে পেঁয়াজ ছাড়ালে চোখে জল আসে না। সেইরকম ভাণমুক্ত, ক্লেশমুক্ত, জীবনযাপন পদ্ধতি হয়তো এঁদের জানা থাকতে পারে। স্বামী মুগ্ধানন্দ, আপনি আলোকপাত করুন প্রভু।

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরষ্ণৈব নরত্তোমম
দেবীং সরস্বতীবৈষ্ণব ততোজয়মুদীরয়েৎ।

আপনারা মনুষ্যক্লেশ নিবারণের চেষ্টা করেছেন। উত্তম কার্য। তবে গোড়াতেই আমার মনে একটি সংশয় জাগছে–কীসের ক্লেশ, কার ক্লেশ। জগৎ একটি মায়া। ব্রহ্মই সত্য। মায়ার পরদার মধ্যে দিয়ে দেখছি বলেই জগৎকে সত্য বলে মনে হচ্ছে। জগৎ বলে কিছু নেই। সবই একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বপ্ন মাত্র। সত্য মনে করলেই সত্য, মিথ্যা মনে করলেই মিথ্যা। ক্লেশ মনে করলেই ক্লেশ, অক্লেশ মনে করলেই অক্লেশ। সবই এক বিরাট খেলা। ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছেন–পাঁকে থাকবি পাঁকাল মাছের মতো। গায়ে পাঁক লাগবে না। এ দুনিয়া ধোঁকার টাটি, খাই দাই আর মজা লুটি। তবে হা ব্রহ্মজ্ঞান তো আর সকলের হয় না, হতে পারে না। আমাদের সব মতুয়ার বুদ্ধি। গরু যতক্ষণ হাম্বা হাম্বা করে ততক্ষণে তার মুক্তি নেই। যেই মরল অমনি তার নাড়ি শুকিয়ে একতারার তাঁত হল, অমনি সে তুঁহুঁ-তুঁহুঁ করে বেজে উঠল। চিরমুক্তি। আমি-আমি, হাম্বা-হাম্বা তখনই দাসত্ব। আমি যেই শেষ হল গরুর তখন তুঁহুঁ অবস্থা। তুঁহুঁতেই মুক্তি। সব ছাড়া যায়, আমি ছাড়া যায় না। জগৎকে সত্য ভেবে যারা রোগ শোক জরার দাসত্ব করছেন, প্রতিদিন সংসারে মার খাচ্ছেন তাঁর এই গানটি শুনুন–

ভবে কে বলে কদর্য শ্মশান
পরম পবিত্র চরম যোগের স্থান
পাপী পুণ্যবান মুখ কি বিদ্বান
সমান ভাবে হেলায় সকলি শয়ান।
অন্ধ খঞ্জ বধির গলিত কুষ্ঠধারী
কন্দর্প সমান রূপের দর্পহারী
সজ্জন তস্কর গৃহ বনচারী।
রাজা আর ভিখারী সকলে সমান।
হেথা এলে পরে যায় মায়া সব
রয় না ভবজরার কোনও উপদ্রব।
শ্মশান মাত্র নাম কিন্তু শান্তিধাম
সুখ দুখ শান্তির চির অবস্থান।
ভবে কে বলে কদর্য শ্মশান!

এসেছি, চলে যাব। কিংবা আসিনি যাবও না, ভ্রম মাত্র। তবু ভাবতে দোষ কি আমি অমৃতের সন্তান, আমার জন্ম, নেই মৃত্যু নেই, বন্ধন নেই, জরা নেই, যৌবন নেই। সাত্ত্বিক জীবন যাপনেই শান্তি। জপ ধ্যান, নিরামিষ আহার, সপ্তাহে একদিন উপবাস, সৎসঙ্গ, কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ, এই হল ক্লেশমুক্তির উপায়। দিনরাত শুধু সৎচিন্তা, প্রেম।

সভায় ঘনঘন হাততালি।

পেয়ে গেছি। পথ পেয়ে গেছি। নিরামিষ মানে কতটাকা বাঁচল, একবার ভাবুন। ডেলি অ্যাট লিস্ট চার টাকা, মাসে একশো কুড়ি। একদিন উপবাস। আরও গোটা দশেক টাকা। একশো তিরিশ। কামিনী ত্যাগ মানে বউকে বাপের বাড়ি পাঠান, চ্যাঁ ভ্যাঁ সমেত।।

সাইলেন! সাইলেন! ডক্টর সিদ্ধান্ত এবার বলছেন।

লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলমেন। না, শুধু জেন্টলমেন, লেডিজ নেই। আমি বেদ-বেদান্ত ভ্রম মায়া, এসব বুঝি না, বুঝতেও চাই না। আই নো ম্যান, হিজ ওয়ার্ল্ড অ্যানড এনভায়রনমেন্ট। মানুষের বাইরেটা কিছুই নয়, ভেতরটাই সব। কনসাস নয়, সাব কনসাসেই যত গেঁড়াকল। মানুষ হল আইসবার্গ। মনের তিনের চার অংশ ভাসমান বরফের মতো সাবকনসাসে তলিয়ে, একের চার ভেসে যাচ্ছে বাইরে।

এই যে মগ্নচৈতন্য, এটা মানুষের নিজের তৈরি নয়, অন্যের সৃষ্টি। সেই অন্যের সৃষ্টি। সেই অন্যের মধ্যে আছে পিতা মাতা, শিক্ষক, সমাজ, ঘটনা। আজকে আমরা জানতে পেরেছি, ম্যানস হিস্ট্রি ইজ রিটন বাই দি জিনস। রিসার্চ চলছে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে কালে আমরা পছন্দমতো মানুষ তৈরি করতে পারব। তখন পৃথিবী হবে প্যারাডাইস। হাক্সলির ব্রেভ নিউ ওয়ার্লর্ড সফল হবে। কিন্তু যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন অপ্রেসান থাকবে, ডিপ্রেসান থাকবে, মেলাঙ্কলি থাকবে, ফ্রাসট্রেসান থাকবে। নিউরোসিস, ইনিউরসিস থাকবে। হোমিসাইড, জেনোসাইড, রেপ থাকবে। ম্যানিয়াক থাকবে। কমপ্লেক্স থাকবে।

মানুষে-মানুষে খাঁচাখাই লেগেই থাকবে, হত্যা থাকবে, আত্মহত্যা থাকবে। নিপীড়ন থাকবে, নিষ্ঠুরতা থাকবে। ঘর ভাঙবে, ঘর গড়বে। কেউ রুখতে পারবে না। বদহজম, অম্বল, টাক, মাথা ধরা সবই থাকবে। আমরাও থাকব। ম্যানহোল খুলে পাক পরিষ্কারের মতো আমরা সাবকনসাস থেকে গাদা বের করার চেষ্টা করব। স্বামীকে স্ত্রী ফিরিয়ে দেব, স্ত্রীকে স্বামী, পিতাকে পুত্র, পুত্রকে পিতা। সৃষ্টির শেষদিন পর্যন্ত এইভাবেই চলতে থাকবে! অ্যালোপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট। রোগ চাপা থাকবে, সারবে না। এক ক্লেশ যাবে আর-এক ক্লেশ আসবে। ক্লেশ আর ক্লেশ নিয়েই জীবন। লিবিডো। লিবিডো মানে জীবনীশক্তি, লাইফ ফোর্স। এই বাক্যটি ফ্রয়েড সাহেবের উদ্ভাবন। মানুষ পেতে চায়, ভোগ করতে চায়, উত্তেজনা চায়, উত্তেজনার প্রশমন চায়। দেহে চায়, মনে চায়। চাহিদার পরিতৃপ্তিতে শান্তি, সন্তুষ্টি। অপরিতৃপ্তিতে বিষাদ, ক্রোধ, বিভ্রান্তি। ক্রোধী মানুষ, অসন্তুষ্ট মানুষ, অতৃপ্ত মানুষ সংসারে শান্তি দিতে পারে না, শান্তি পেতে পারে না। ক্লেশমুক্ত হতে হলে নেতি চিন্তা, নেগেটিভ ফিলিংস ছাড়তে হবে। খণ্ডিত বিভক্ত মানুষ না হয়ে অখণ্ড মানুষ হতে হবে। উৎকণ্ঠা ভুলে যেতে হবে। হাত-পা ছড়িয়ে শ্লথ হয়ে বিশ্রাম নিতে শিখতে হবে। ফ্ল্যাট হয়ে শুয়ে পড়ুন। চোখ বোজান। মনে-মনে বলুন, বিশ্রাম, বিশ্রাম চাই। আমার দিন আর রাত উৎকণ্ঠায় ভরা। নেভার মাইন্ড। পনেরো কি তিরিশ মিনিট সময় আমি সব কিছুর বাইরে। তালে-তালে, লয়েলয়ে নিশ্বাস নিতে থাকুন। এরই নাম শবাসনে প্রাণায়াম।

আধুনিক সভ্যতার দান উৎকণ্ঠা, দুর্ভাবনা। দুর্ভাবনার চেয়ে দুরারোগ্য ব্যাধি আর কিছু নেই। বুদ্ধদেব বলেছিলেন, চিতা দহতি নির্জীব, চিন্তা দহতি সজীব। মুক্তির উপায়, ভয়ে দেখে পেছিয়ে। যেও না, ভয়ের মুখোমুখি হয়ে লড়ে যাও। অ্যাক্ট, অ্যাকসান ইজ দি রেমিডি। ওয়ার্ক অ্যান্ড নো ওরি ইজ দি রেসিপি।

আত্ম সমীক্ষা। নিজেকেই নিজে বিচার করুন। প্রত্যেকের মধ্যেই মাইনাস পয়েন্ট, প্লাস পয়েন্ট আছে। মাঝে-মাঝে নিজের বিবেকের মুখোমুখি দাঁড়ান। নিজের অক্ষমতা, সক্ষমতা, নিজের ভালো দিক, মন্দ দিক সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখুন। নিজেকে জানা মানেই নিজেকে সংযত করা, শুদ্ধ করা, সুন্দর করা। প্রতিদিন নিজেকে আবিষ্কার করুন, ভেঙে ফেলে নতুন করে গড়ুন। গ্যেটে বড় সুন্দর কথা বলেছিলেন, আমরা যখন বলি দুনিয়াটা পালটে গেছে, আগের মতো আর নেই তখন ভুলে যাই নিজেও কত পালটে বসে আছি।

আমাদের শাস্ত্রে একটা কথা আছে সুইট লেমন মেন্টালিটি। পাতিলেবু কখনও মিষ্টি হতে পারে না। জীবন একটা টক-মিষ্টি অনুভূতি। কখনও শূন্য, কখনও পূর্ণ। জীবনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ হতে পারে না। শুধু গোলাপ নয়, গোলাপ আর কাঁটা। সুমিষ্ট পাতিলেবুর আশায় যাঁরা ঘুরছেন তাদের ক্লেশ কে নিবারণ করবে! সুইট লেমন মেন্টালিটি ছেড়ে পৃথিবীর সব কিছু মেনে নিতে হবে হোল লিভিং উইথ অল ইটস গিফটস, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার। পৃথিবীতে আমাদের চাওয়ার শেষ নেই। পাওয়াতে আমাদের চাওয়ার নিবৃত্তি নেই। আমি কিছুই চাই না এই হল ক্লেশ নিবারণের। শেষকথা।

বক্তা বসলেন। চেটাপ্যাট হাততালি।

এইবার বলবেন শ্রীঅমল বোস ডগট্রেনার।

আমি কুকুর চরাই, অবশ্য বিলিতি কুকুর। কুকুর মানুষে বিশেষ তফাত নেই। মানুষের মতো কুকুরের সব আছে কেবল মানুষের ভাষাটাই নেই। ট্রেনিং মেকস এ ম্যান, ট্রেনিং মেকস এ ডগ। শৈশব থেকেই মানুষকে যদি উপযুক্ত কায়দায় শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে মানুষও কুকুরের মতোই বুদ্ধিমান, কর্তব্য পরায়ণ, বিশ্বাসী, বিচক্ষণ ও প্রভুভক্ত হতে পারে। আমরা কুকুরকে বলি ফেথফুল ফ্রেন্ড। কজন মানুষকে বলতে পারি আমার বিশ্বাসী বন্ধু, প্রাণের বন্ধু! কজন মানুষকে বলতে পারি আমার বিশ্বাসী, কর্তব্যপরায়ণ কর্মী! পারি না। তার কারণ মানুষ এখনও পুরোপুরি শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেনি। মানুষের সংখ্যা অনেক, সেই তুলনায় বিলিতি কুকুরের সংখ্যা অনেক কম। তা ছাড়া কুকুরের শিক্ষিত হওয়ার প্রবণতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। কুকুর রেগে যেতে পারে, খেপে যেতে পারে কিন্তু মানুষের মতো দেখো তো না দেখে বখে যেতে পারে না। কুকুরের কামড়ের ইঞ্জেকশান আছে, অহরহ মানুষের কামড়ের কোনও প্রতিকার নেই।

মানুষ ভাবে বই পড়ে বি এ, এম এ পাশ করলেই মানুষ হওয়া যায়। অত সহজ! একেই তো মানুষের মধ্যে সদগুণের বড়ই অভাব। আলস্য, প্রতিহিংসা, বিশ্বাসঘাতকতা, বেইমানি, পরশ্রীকাতরতা, পরস্ত্রীকাতরতা, হিংসা, দ্বেষ, চুরির প্রবণতা, মুনাফার লোভ, ক্ষমতালিপ্সা, সব মিলিয়ে মানুষ একটা ক্যাডাভেরাস জীব। কুকুর সেই তুলনায় অনেক পারফেক্ট প্রাণী। আমি দেখেছি এক একটা কুকুর সারাজীবন ব্রহ্মচারী থেকে গেছে। সুপ্তিস্থলন নেই, স্বমেহন নেই। বিপরীত লিঙ্গের কুকুর দেখে সামান্য ছটফট করেছে, কুঁই-কুঁই করেছে, কিন্তু প্লেবয় ম্যাগাজিন খুলে মদের গেলাস নিয়ে বসেনি। বেশ্যালয়ে গমন করেনি।

মানুষের মতো ইমপারফেক্ট প্রাণীকে কুকুরের মতো মানুষ করতে হলে কি করতে হবে বুঝতে পারছেন? প্রাণীর পরিতৃপ্তির প্রথম শর্তই হল পেটপুরে খাওয়া, পরিশ্রম আর বিশ্রাম। দুর্ভাগ্যের কথা অধিকাংশ মানুষই অভুক্ত। যাঁরা প্রচুর খান তারা ধনী, শ্রম বিমুখ এবং অসুস্থ। ভারতবর্ষে ভোগের অনেক খরচ। খরচ মানেই উপার্জন। সোজাপথে প্রচুর উপার্জন অসম্ভব। আর সেইখানেই মরালিটির বিসর্জন। মানুষের তিনটি শ্রেণি ইমমরাল রিচ, ডিসকনটেনটেড হ্যাঁগার্ডস, অ্যান্ড মিডলক্লাস মাউস। উচ্ছিষ্ট ভোজন করে, মোসায়েবি করে, কুড়িয়ে বাড়িয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা। গুড়ের নাগরি উলটে যাচ্ছে ভ্যান-ভ্যান করে মাছি বসছে। কুকুর অনেক বলিষ্ঠ প্রাণী। কুকুরকে ট্রেন আপ করা যায়, মাছিকে করা যায় না।

তবু আমাদের চেষ্টা করতে হবে। শৈশব থেকেই মানুষকে ধরতে হবে। মেরে ধরে নয়, কুকুরের কায়দায় ট্রেনিং দিতে হবে। সে কায়দাটা হল, পুরস্কার, তিরস্কার। ভালো কাজে পুরস্কার, খারাপ কাজে তিরস্কার। একটা অবজেক্ট অফ ফিয়ার তৈরি করে রাখতে হবে। কুকুরের বেলায় আমরা হাতের কাছে রাখি পাকান খবরের কাগজ, ফোলডেড নিউজ পেপার। আর্মিতে ব্যাটন, মিডল ইস্টে চাবুক, মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে খেটে লাঠি আর একজন ফাদার ফিগার। প্রহার নয়, প্রহারের ভয়, মাঝে-মাঝে হুঙ্কার। দাঁড়াও, তোমার বাবা আসুক! দেখতে-দেখতে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হবে–এইরে বাবা আসছে মনে করেই সব ঠান্ডা। তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রথমেই বাবা তৈরি করতে হবে, বাবার মতো বাবা। শুধু বাড়িতে নয়, সর্বত্রই একটা করে বাবা চাই। রাস্তায় ঘাটে, স্কুলে কলেজে, অফিস কাছারিতে। বাবার অভাবে দেশ উচ্ছন্নে গেল।

অবজেক্ট অফ ফিয়ার তৈরি হলেই শুরু হবে আসল ট্রেনিং। ট্রেনিং এর মূল কথাই হল বশ মানান। জৈনদের সাধনায় অনেক যোগ আছে। তার মধ্যে একটি হল স্থান যোগ। দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকা ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা। নট নড়নচড়ন। নড়লেই যোগ নষ্ট। তারপর অভ্যাস করো একপায়ে দাঁড়ান। এর নাম ধৈর্য।

কুকুরকে আমরা প্রথমে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকার ট্রেনিং দি। সিট ডাউন। নড়লে বা ওঠার চেষ্টা করলেই সেই অবজেক্ট অফ ফিয়ার, পাকানো খবরের কাগজ চোখের সামনে আস্ফালন। করে ভয় দেখাই। তারপর আদেশ তামিল করার ট্রেনিং। দূরে একটা বল রেখে বলি নিয়ে আয়। আনলেই উৎসাহ দেওয়ার জন্যে পুরস্কার, এক টুকরো বিস্কুট। বলটা সামনে রেখে বলি, পাহারা দে, কাউকে ছুঁতে দিবি না। সামনে খাবার রেখে বলি, খাবি না।

ওই একই কায়দায় ছেলে মানুষ করতে হবে। নরমগরম ট্রিটমেন্টে চরিত্রে টেম্পার লাগাতে হবে। ইস্পাত আর চরিত্র একই জিনিস। বেশি আদর না, বেশি শাসন না। বশ্যতা স্বীকার করো। আমরা চাই দ্বিতীয় ভাগের সুবোধ বালক, যাহা পায় তাহাই খায়, কদাচ অবাধ্যতা করে না। সংসারের নিয়ম হল প্রথমে দাসত্ব তারপর নেতৃত্ব। দাস থেকেই নেতা। আমাদের সকলের মধ্যেই হিরো ওয়ারশিপের মনোভাব লুকিয়ে আছে। অস্বীকার করে লাভ নেই। পলিটিক্যাল হিরো, ফিল্ম হিরো, স্পোর্টস হিরো, হিরো হলেই হল, শতশত ফ্যান কাতারে কাতারে রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগল–যুগযুগ জিও। অফিসে সেরেস্তায় বড় কর্তাদের কি সাংঘাতিক দাপট! কে কার ঝাড়ে বাঁশ কাটে! কার ধনে কে পোদ্দারি করে! কে কাকে ক্ষমতায় বসায়! তবু যে বসে গেল তাকে সবাই মানতে বাধ্য। তিনি তখন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ভাগ্যবিধাতা গড। সরকারি অফিস হলে তিনি তখন সাহেব, স্যার। হায়ারর্কি তখন এইরকম–দাসের দাস, দাসের দাসের দাস, তস্য দাস। সেই গডকে তখন নানাভাবে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা, তেল দিয়ে, ব্যক্তিগত খিদমত খেটে। উঠতে স্যার বসতে স্যার। কলা নিন মূলো নিন। দিন স্যার ইলেকট্রিক বিলটা আপনার তিন মাইল লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে জমা দিয়ে আসি। দিস ইজ মাই সেক্রেড টাস্ক। টেলিফোন বিল? ও দ্যাটস এ প্লেজার। বাড়িতে কাজ আছে? সো হোয়াট। আমি তো আছি! ভোর রাতে উঠে শেয়ালদা থেকে আমি মাছ কিনে এনে দেব। একদম ভাববেন না স্যার, নতুনবাজার থেকে ঘাড়ে করে ছানা কিনে এনে দেব। পরিবেশন? নো প্রবলেম। কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে লেগে যাব। যে নিজের বাড়িতে কুটোটি নেড়ে উপকার করে না সে বসের বাড়িতে হাসি-হাসি মুখে গাধার চেয়ে বেশি খাটে। বাড়ির কাজে মুখ ভার করে বলে– আমি একটা ডিগনিফায়েড সার্ভেন্ট ভাই! বড় কত্তার বাড়িতে গ্লোরিফায়েড দাস। এর দুটো কারণ, গড় সন্তুষ্ট হলে প্রসাদ মিলতে পারে। দ্বিতীয় কারণ, দাসত্বে নিজের ব্যক্তিত্বকে খোঁটা বেঁধে ঠেলে ঠুলে দাঁড় করাতে হয় না। সোজা হয়ে বসার সাধনা করতে হয়, কষ্ট আছে। কুঁজো হয়ে বসা বড় আরামপ্রদ। আত্মবিসর্জনে ঝামেলা কম। প্রসাদ জুটে গেল তা ভালোই, না জুটলেও কোনও ক্ষতি নেই। বঞ্চনা সহজে হজম করা যায়। যুগযুগ ধরে মানুষ তাইতেই অভ্যস্ত। ব্যক্তিত্ব ফলাতে গিয়ে যে সংঘর্ষ তা সহ্য করা শক্ত। টেনসনে ইরিটেসান, অংসাইটি, নার্ভাস ব্রেকডাউন! উঁচতে উঠতে চিতপাত হওয়ার ভয়। জমিতে ফ্ল্যাট হয়ে থাকলে সরীসৃপের আনন্দ! সেই জন্যেই আমাদের প্রবাদ, অতি বড় হোয়য়া না ঝড়ে পড়ে যাবে, অতি নিচু হোয়য়া না ছাগলে মুড়োবে। ব্যক্তিত্বকে কুঁজো করে, মোসায়েব হয়ে তালে তাল মিলিয়ে দিনগত পাপক্ষয় করে যাও। রামপ্রসাদ গান বেঁধেছিলেন– আমি চাই না মা গো রাজা হতে, রাজা হওয়ার সাধ নাই মা চিতে, দুবেলা যেন মা পাই গো খেতে। আমাদের ধর্মও বলছে, তুমিই সব, আমি তোমার দাস। আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী, আমি ঘর তুমি ঘরণী, যেমন করাও তেমনি করি, যেমন চালাও তেমনি চলি। বীরভাবের বীরাচারীর শেষে স্ত্রী আচারী হয়ে গাঁজা ভাং খেয়ে শ্মশানে লুটোপুটি। বীরের পতন অনিবার্য। দাসের পতন নেই। মানুষ নিপীড়িত, অত্যাচারিত হতে ভালোবাসে। সুখের চেয়ে যন্ত্রণার আনন্দ অনেক বেশি। ডিকটেটাররা তাই এত ভালো শাসক। গণতন্ত্র সর্বত্রই ফেলিওর। হার্ডি বোধহয় সেইকারণেই বলেছিলেন, ডেমোক্র্যাসি হ্যাঁজ অল দি ভারচুস সেভ ওয়ান ইট ইজ নট অ্যাট অল ডেমক্রেটিক। ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর প্রান্তে-প্রান্তে এক ডিকটেটার যায় তো আর-এক ডিকটেটার আসে। অসংখ্য মানুষ অম্লান বদনে তার প্রভুত্ব মেনে নিয়ে বসে থাকে। ডিকটেটারে ডিকটেটারে লড়াই হয়, সাধারণ মানুষ প্রাণ দিতে বাধ্য হয়। নেতারা বসে থাকেন ঠান্ডা ঘরে, জলচৌকিতে। সাধারণ মানুষ বোমা, পটকা, ছোরাছুরি নিয়ে অলিতে-গলিতে মারামারি করে মরে। একদল বলে, অমুক যুগযুগ জিও, আর-একদল বলে তমুক যুগযুগ জিও। অমুকে তমুকে বিশেষ ফারাক নেই। একই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। দুজনেই এক গেলাসের ইয়ার। একই হোটেলে একই টেবিলে মুখোমুখি বসে রাইট আর লেফট। সুগারকোটেড বুলি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, স্বপ্নের জাল বুনে বুনে জনতাকে হাতে রাখা। বল রয়েছে মাঠে খেলোয়াড়দের পায়ে। গ্যালারিতে ফ্যানরা উত্তেজনায় ফেটে পড়ছে। খেলার প্রতিযোগিতা মাঠ ছেড়ে গ্যালারিতে, গ্যালারি থেকে রাস্তায়, রাস্তা থেকে স্টেশানে, সেখান থেকে পাড়ায়, ভাঙচুর, গুলি, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, মৃত্যু। যা নিয়ে কাণ্ড, যাদের নিয়ে কাণ্ড, তারা প্রোফেসনাল। তাদের কাছে খেলা উপলক্ষই, টাকাটাই সব। তারা যখন নরম বিছানার গরম ঘুমে, ভরা পেটের স্বপ্নে তখন অসহায় মানুষ স্টেশান প্ল্যাটফর্মে, পিঠে লাঠি, চোখে কাঁদানে গ্যাসের জল। রাত তিনটের সময় ছোঁড়াখোঁড়া বিরিঞ্চিবাবু শহর থেকে ফিরছেন সেরেস্তায় খাতা ঠেলে।

.

এই জীবনেরও কত মোহ। মৃত্যু তাড়া করলে ন্যাজ তুলে ছুটে পালায়। এই হল ফাউন্ডেশন অফ স্টেট। নেতারা জানেন এই প্রতিযোগিতার, এই উত্তেজনায় জনমানসিকতাকে ম্যানিপুলেট করেই বারেবারে ক্ষমতায় ফিরে আসতে হবে, উত্তেজনায় আগুনে শুকনো কাঠ গুঁজে খুঁজে আখের গুছোতে হবে। অসুস্থ উত্তেজনায় মানুষকে মাতিয়ে রেখে, মানুষকে শিবিরে-শিবিরে বিভক্ত যুদ্ধমান করে রাখতে হবে। দেয়ার ইজ নাথিং লাইক ওয়ার। ওরা লড়ে মরুক আমরা ইতিমধ্যে কোমরের কাপড়টা খুলে নি। অত্যাচারী রোমান সম্রাট কালিগুলা থেকে শুরু করে এই আশির ডেমোক্র্যাট, সকলেরই এক স্ট্রাটেজি। আমি হিরো তোমরা আমাকে ওয়ারশিপ করো। আমি আসনে বসি। তারপর এই নাও তোমাদের ব্রেড, ওয়াইন, ওয়াইফ, মেয়েছেলে, থিয়েটার সিনেমা সেক্স, এরিনায় রক্তাক্ত গ্ল্যাডিয়েটার, রথের দৌড়, ঘোড়দৌড়, মাঠে ফুটবল, রাস্তায় মিছিল, শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন, কে জি বি, সি আই এ, পুলিশ, সিক্রেট পুলিশ, লকআপ, থার্ড ডিগ্রি, রেপ, মার্ডার, ছিনতাই, ক্যাবারে। পঙ্ককুণ্ড তৈরি করে ফুটে থাকি পদ্মফুলের মতো।

এই যখন অবস্থা, অবস্থা যখন কিছুতেই পালাটাবে না, ক্ষমতায় যখন ভ্যাকুয়াম থাকবে না, তখন শৈশব থেকেই সকলকে কুকুরের মতো ট্রেনিং দিয়ে ওবিডিয়েন্ট করো, ওয়াচফুল করো, অ্যালার্ট করো। ভালো প্রভু হয় না, ভালো দাস হয়। ইতিহাস বলছে। নেচারের বিরুদ্ধে না যাওয়াই ভালো। ভালো কুকুর প্রভুর বড় পেয়ারের, বড় আদরের।

এবার আপনাদের সামনে আসছেন গণিতের শিক্ষক।

হ্যাঁ, আমি একজন শিক্ষক। ম্যাথেমেটিক্স আমার বিষয়, আমার ভালোবাসা। জীবনে এক গণিতে বিশেষ তফাত নেই। হিসেব করে খরচ, হিসেব করে প্রয়োগ, হিসেব করে পা ফেলা, হিসেব করে কথা বলা, হিসেবেই সুখ, বেহিসেবেই দুঃখ। গাণিতিক বুদ্ধির অভাবেই মানুষের যত ক্লেশ। শুধু কাব্য, শুধু সাহিত্যে, শুধু ভাবালুতায় মানুষের যত দুর্ভোগ। ইমোশান, সেন্টিমেন্ট হল গর্দভের লক্ষণ। মানুষকে হতে হবে কুল, ক্যালকুলেটিং। পৃথিবীটা কি? গিভ অ্যান্ড টেক। এক হাতে নেবে, এক হাতে দেবে। ডেবিট আর ক্রেডিট। বুক কিপিং। অঙ্কে মোটা মাথা হলেই ঠকে মরতে হবে। পৃথিবীর মানুষকে দু-ভাগে ভাগ করতে হবে, একদল ঠকায় আর একদল ঠকে। একদল মারে আর একদল মরে।

অঙ্কে কঁচা হলে মানুষ প্রেমে পড়ে। প্রেম হল ন্যাবার মতো। দৃষ্টি হলুদ, জগৎ হলুদ নিজে হলুদ, যা দেখেছি সব হলুদ। দুই আর দুয়ে যেমন পাঁচ হয় না, মানুষে মানুষে, মানুষে মানুষীতে তেমনি প্রেম হয় না। প্রেম একটা ফ্যালাসি, একটা কল্পনা, এ ফিউমিং ইম্যাজিনেসান, হ্যাঁলুসিনেসান। যা নেই তাকে সত্য বলে মেনে নেওয়ার নির্বুদ্ধিতা। গণিতে এসবের স্থান নেই। ইট ইজ সো প্র্যাকটিক্যাল। প্রেমে কানা ছেলে পদ্মলোচন হয়, পেঁচি, হয়ে ওঠে ক্লিওপেট্রা। ফাটা কাঁসরের মতো গলাকে মনে হয় বীণানিন্দিত কণ্ঠ। সেই ঘোরে মানুষ বেমক্কা ফাঁদে পড়ে ফেঁসে যায়। প্রেম-প্রেম ভাব হলেই অঙ্ক করো।

রাসেল বলেছিলেন, ছেলেবেলায় তার প্রচণ্ডই দুঃখকষ্ট ছিল। মাঝে-মাঝে মনে হতো আত্মহত্যা করি। সেই আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বাঁচার জন্যে তিনি গণিতের আশ্রয় নিয়েছিলেন। গণিত তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। কিন্তু দিস গবেট ইউনিভার্স সে কথায় সহজে কান দিতে চায় না। ইউনিভার্সিটিতে, ইউনিভার্সিটিতে বছরের-পর-বছর ধরে কপচে চলেছে শেলির রোমান্টিসিজম, কিটসের আর্ট ফর আর্টস শেক, সুইনবার্নের লাভ, বায়রনের ডিবচারি। পো-ওঁপো ছেলে, ধুমসো ধুমসো মেয়েরা বাপের অন্ন ধ্বংস করে সেই নেশার জগতে বছরের পর বছর জীবন নষ্ট করছে। ও মাই লাভ ও মাই রোমানস্ বলে একজনের হাত ধরে ছজনে টানাটানি। গলায় দড়ি, বিষ, ঘুমের ওষুধ। তারপর বাবু-বিবিরা কলেজের বাইরে এসে শেলিকে সের দরে বেচে দিয়ে মার্চেন্ট অফিসে ঢুকে দুই আর দুয়ে চার করছেন। কলেজে অধ্যাপক হয়ে ঢুকে বছরের-পর-বছর সেই একই বুলি কপচে চলেছেন। সেই এক হ্যাঁমলেট, সেই এক ওথেলো। টুমরো অ্যান্ড টুমরো, ব্রিফ ক্যান্ডল, টু বি নট টু বি। প্রেমপত্র আর লিখতে হল না। নোট লিখে লিখে আঙুল ক্র্যাম্প। লেকচার কপচে কপচে গলা ভাঙা, মাথায় টাক, চোখে চশমা, রক্তে সুগার। এদিকে প্রেমিকা প্রেমপর্বের কোটেশান লাঞ্ছিত প্রেমপত্র পুড়িয়ে শাঁসালো মক্কেলের গলায় ঝুলে পড়ে ইয়া বিশাল এক গিন্নি। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অঙ্কে অনেক পাকা। ডেবিট ক্রেডিট ভালো বোঝে। গিভ অ্যান্ড টেকে ওস্তাদ। তারা বলে, ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর।

অঙ্কে সেন্টিমেন্টাল প্র্যাকটিকাল হয়। এই বেনিয়ার জগৎকে ভালো করে বুঝতে শেখে। অ্যাভারেজ, রুল অফ থ্রি, ইন্টারেস্ট, টাইম অ্যান্ড মোশান, রিলেটিভ স্পিড, মিকশ্চার, কমপাউন্ড ইন্টারেস্ট না বুঝলে ঝানু হওয়া যায় না। পারমুটেশান কম্বিনেশান জীবনের সর্বক্ষেত্রের এক চরম সত্য। অঙ্কে মাথা ভালো হলে মানুষ বুঝতে শেখে, অলওয়েজ, ওয়ারশিপ দি রাইজিং সান। অঙ্কের ভালো ছাত্র কখনও চুলে কলপ লাগিয়ে বার্ধক্যে যুবক সেজে লম্ফঝম্ফ করতে গিয়ে কোমর ভাঙে না। অঙ্ক হি কেবলম। নমস্কার।

এইবার মস্তান শ্ৰীযুক্ত…

ঠিক আছে ঠিক আছে। আমার বেশি কিছু বলার নেই। আমার হল এক বাত, হাত থাকতে মুখে কেন! ঝামেলা দেখলেই লাশ ফেলে দাও। ও সব সাহিত্য, দর্শন, ধম্ম-ফল্ম বুঝি না শালা, পকেট গরম থাকলে শরীর গরম, মেজাজ শরিফ! কেউ কাউকে অ্যায়সা কিছু দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। আদায়ের অস্ত্র ইস্পাত। পেটের কাছে ফলাটা ধরো, মাল শালা আপসে বেরিয়ে আসবে। কায়দা জানলে কৃপণও দাতা হয়ে যাবে। শাস্ত্র-ফাস্ত্র অনেক শুনেছি মশাই, ক্যাপিটালিজম, মার্কসিজম, সোস্যালিজম, মাছের ডিমপাড়ার মতো লাইব্রেরি-ফাইব্রেরি সব ছোট-বড় বইয়ে ভরে গেল, পড়ে-পড়ে পণ্ডিতদের ডিসপেপসিয়া হয়ে গেল, পৃথিবীর চেহারা, মানুষের চেহারা কিছুই বদলাল না। গরিব সেই গরিব, বড়লোক সেই বড়লোক। রঘু ডাকাতই সেভিয়ার। রবিন হুডই আদর্শ। বেচাল দেখলেই শালা প্যাদাও। দুটো লাশ ফেলে দাও, সব ঠান্ডা। ছুরিটা দাঁতে চেপে লুঙ্গির কষি বাঁধতে-বাঁধতে দাঁত চাপা মুখেই বলো, কোন শুয়োরের বাচ্চা, বাস সব ঠান্ডা। কার ঘাড়ে কটা মাথা! একবার এগিয়ে আসুক তো দেখি। ভয় হল মূলধন, ছুরি হল ম্যাজিক। রাজনীতি, আইন, ভোট, ধর্ম, আদর্শ, নীতি, সব ছুরির কন্ট্রোল। ক্ষমতাই হল ক্লেশ নিবারণের একমাত্র উপায়। সকলের সব সিক্রেট আমার জানা। বেশি ঘাঁটলেই হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেব।

এবার শ্রীবাটপাড়িয়া।

জয় শ্রীরামচন্দ্র, পবনসূত হুঁড়মারচন্দ্রজি কী জয়। রামরাজত্ব এসে গেছে বাবুজি। হামার কোনও ক্লেশ নেই। সিরিফ বাত ঔর থোড়িসি অ্যাসিড, সামটাইমস প্রেশার, বিলকুল সব ঠিক। আউর কুছ নেহি। দুনিয়া চল রহে, হামভি চলরহে মজেসে। হামি কুছ সমঝে না। আংরেজি না, বাঙলা না, চুনাও না। হামি সমজে ভাও। সিরিফ এক প্রশ্ন–কেতনা ভাও। এম. এল. একা কেতনা ভাও, এম. পি.কা কেতনা। জুটকা কেতনা ভাও, স্টিলকা কেতনা, দুনিয়ামে একই চিজ হ্যায় ভাও। পিতাজিকা কেতনা মাতাজিকা কিতনা জরুকা কিতনা গরুকা কিতনা। লেলিন কেয়া ভাও, কার্টারকা কেয়া ভাও, খোমেইনিকা কেয়া ভাও। একই চিজ হাম পুছতা, কেতনা ভাও পহেলে বাতাও। দোনো চিজ এক সাথ মিলা কর, কস্টিং করকে বাজারমে ছোড়দে। হোর্ডিং, পাইলিং, লেবেলিং, সেলিং বাস। ইসসে জিয়াদা কুছ নেহি হায়। গঙ্গামে পানি বইবে, শীত আসবে, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত, যানে দো আনে দো। হামারা কেয়া। জনতা যায়েগা তো কংগ্রেস আই আয়েগা, ও জায়েগা তো দোসরা কোই আয়েগা, হামারা কেয়া। হামি জানে, ভাও কেতনা। রুপিয়া চেয়ে বড়িয়া কুছু নেই। হামি আসন কিনতে পারে, এম. এল. এ-এম. পি মেলতে পারে, পুলিশ হামার, নেতা হামার, সরকার হামার, জগৎ হামার, হামি জগৎ শেঠ। লেকিন কেমন কোরে হামি এমন হোয়েচি? ও তো সিক্রেট ভাইসাব। দুনিয়ামে দোনো চিজ হ্যায়, এক খরিদনে কা, এক বিকনে কা। বাই অ্যান্ড সেল অ্যান্ড গো অন মেরিলি। সেল দেম অল। ওয়ার্লর্ড ইজ ফর সেল।

এইবার আমাদের কিছু বলবেন অ্যাডভোকেট।

ইয়েস থ্যাঙ্ক ইউ। একটা কথা আছে চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা। বড় খাঁটি কথা। যদি কেউ ধরা পড়ে তখন আছি আমরা। এখন কথা হল আইনের সাহায্যে আমাদের ক্লেশ নিবারণ কতটা সম্ভব। আমরা মানে কারা? যে আমির টাকার জোর নেই সে আমির জন্যে আইনও নেই আদালতও নেই। সে আমি হল বুড়বাক আমি। আইন হয় তো পারচেজ করা যায় না কিন্তু আইনজীবীকে পারচেজ করা যায়। আইন ভীষণ ফ্লেকসিবল, ব্রহ্মের মতো তার শত ব্যাখ্যা। আইনবিদ সহায় হলে অপরাধ বলে কিছু থাকে না। তবে বেআইনি ঘটনা এতই বেড়ে চলেছে যে আইন। দিয়ে আর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ক্রিমিন্যাল সাইডে তুলকালাম কাণ্ড চলেছে। ল লেস অবস্থাটাই হয়তো ল হয়ে যাবে। হত্যা আর ক্রাইম বলে স্বীকার না করা যেতে পারে। হত্যা এ ফর্ম অফ ভায়োলেন্ট ডেথ নট পানিশেবল। অ্যানিহিলেসান। আমেরিকান ভাষায়, চাক হিম আউট। ইরেজ হিম। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জাস্ট মিউচ্যুয়াল ট্রান্সফার অফ প্রপার্টির্স। যার আছে ভুরিভুরি তার কাছে থেকে কিছু আদায় করে নেওয়া। জমিজমা সংক্রান্ত মামলা সিভিল সাইডে থাকতেও পারে, না থাকলেও ক্ষতি নেই। দখল আর জবরদখল পাশাপাশি চলছে। আমাদের পারিবারিক অশান্তি ক্রমশই বাড়ছে।

বিগ্যামি অ্যাডালটারি শব্দ দুটো এখনও জ্বালাচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো আর জ্বালাবে না। ডিভোর্সের মামলাও খুব আসছে। কালে ওটাকেও আমরা তিনবার তালাক, তালাক, তালাক বলে চটপট স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করে দিতে পারব। পারমিসিভ সোসাইটিতে সামান্যতম বাধাও যাতে না থাকে সেই চেষ্টাই আমাদের করা উচিত। শেষ কথা বলং, বলং বাহুবলং। আইন দিয়ে অ্যামপুট করা যায়, ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যায়, উঁকিলের চিঠি দিয়ে ভয় দেখানো যায়, লাভ কি হয় বলা শক্ত। মামলা করে ডিক্রি পাওয়া যায়, ভাড়াটে উচ্ছেদ করতে হলে সেই দিশি দাওয়াই দিতে হয়। ডিগ্রি থাকলে আজকাল চাকরি হয় না, মুরুব্বি ধরতে হয়। লিটিগেশান ইজ এ লেংদি প্রসেস। মামলা যখন ফয়সালা হয় উভয় পক্ষই কাত। বাঘের লড়াইয়ে শৃগাল লাভবান। আমেন।

আমি দার্শনিক। আমার কথা হল পড়ে নয়, দেখে শিখুন। যত দেখবেন তত শিখবেন। কি শিখবেন? এখানে ধনী দরিদ্র হয়, দরিদ্র ধনী হয়, সৎ অসৎ হয়, অসৎ সম্মান পায়। এক আসে, আর-এক যায়। যৌবন বার্ধক্যে ঢলে পড়ে! সুখে থাকলেও মৃত্যু, দুঃখে থাকলেও মৃত্যু। সাকারে বিশ্বাসী হবেন কি নিরাকারে বিশ্বাসী হবেন যার-যার নিজের অভিরুচি, তবে একটা কিছু ধরা চাই। গুরু ধরুন, চেলা ধরুন, মতবাদ ধরুন, ফুটবল ধরুন, ক্রিকেট ধরুন, রেস ধরুন, ফাটকা ধরুন, যা হয় কিছু একটা ধরার চেষ্টায়, ধরি ধরি করি ধরতে না পারি, জীবন শেষ। খেল খতম, পয়সা হজম।

রাজনীতিবিদ আপনি কিছু বলুন।

আমার একটাই কথা, আমাকে ভোট দিন। আপনারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। ভোটের অধিকার পেয়েছেন, সে অধিকার হারাবেন না। আমি যখন যে দলেই থাকি না কেন আমাকে ভোট দিন। টাকাকড়ি, ধনদৌলত চাইছি না, চাইছি একটা ভোট। আপনারা আমাকে ভোট দিলে আমি সুখী হব। বিবেকানন্দ বলে গেছেন, জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। আমি একটা জীব, পলিটিক্যাল জীব, সেই জীবে দয়া মানে ঈশ্বরের সেবা, পরকালের কাজ। রাজনীতিতে বিশ্বাস হারালেও ঈশ্বরে বিশ্বাস হারাবেন না। ঈশ্বর কখনও কারুর কিছু করছেন কি? আমরা মনে করি তিনিই সব করছেন, তিনি সব করতে পারেন, তিনি নির্ধনকে ধনী করতে পারেন, অপুত্রককে পুত্রক, অসফলকে সফল। একজন রাজনীতিকও তাই। ইলেকশনের পর তাঁকে দেখা যায় না, ছোঁয়া যায়। না। ধরা যায় না। তিনি কি করেন, তিনি কি করবেন, তিনি কি করতে পারেন কেউ জানে না। অতএব ভোট দিয়ে সেই ঈশ্বরতুল্য রাজনীতিবিদের সেবা করুন। সেবা পরমধর্ম। ফ্লোরেন নাইটিঙ্গে ল, হেলেন কেলার, মাদার টেরেসা সেবা ধর্মের জন্যে জগতে বিখ্যাত! আপনারাও সেবা করুন। পরশ্রীকাতর বলে বাঙালির বড় দুর্নাম। সেই দুর্নাম কাটাতে হবে। আমি যদি মন্ত্রী হই, বাড়ি করি, গাড়ি করি, টাকা করি, আমার আত্মীয় স্বজন চামচাঁদের অবস্থার উন্নতি করি তাতে আপনারা দুঃখ করবেন কেন, ঈর্ষা করবেন কেন, খুশি হবেন, সুখী হবেন, আমাদের গর্ব বলে লাফাতে থাকবেন, বলবেন, আহা আরও বড় হোক, আরও বোলবোলা হোক। বাঙালির উন্নতি হোক। আগেকার দিনের জমিদারদের কথা ভাবুন। নিরন্ন প্রজারা পড়ি কি মরি করে নজরানা দিয়ে যেত? জমিদারদের বাড়ির ঝাড়লণ্ঠন দেখে, বিশাল বাড়ি দেখে, চেহারা দেখে, বোলবোলা দেখে, ব্যাভিচার দেখে, অত্যাচার দেখে কি খুশিই না হতো! সেই খুশির ভাবটা আবার ফিরিয়ে আনুন।

ত্যাগই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তুলসীদাস বলেছেন সব ছাড়ো সব পাওএ। সব ছাড়লেই সব পাওয়া যায়। রাজনীতি অতি নোংরা জিনিস। সেই নরকে আপনাদের ভোট নিক্ষেপ করে আমাদের নরকবাসকে দীর্ঘ করুন। আপনাদের স্বার্থে আমরা নরকে যেতে প্রস্তুত আছি। নরক ভরতি থাকলে আপনাদের আর সেখানে স্থান দেওয়ার জায়গা থাকবে না, তখন স্বর্গের পথ অটোমেটিক্যালি খোলা থাকবে। আমরা মস্তান নিয়ে, রক্তাক্ত রাজনীতি নিয়ে, দলাদলি, দল ভাঙাভাঙি নিয়ে, কালোয়ার, কালোবাজারি, ব্যাবসাদার, মুনাফাখোর নিয়ে নরক গুলজার করে বসে থাকি। সমাজে বেশ্যালয় রাখা হয় যাতে লম্পটরা যার-তার হাত ধরে টানাটানি না করতে পারে। বারনারী সামাজিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে চলেছে। রাজনীতিও তাই। রাজনীতির ম্যানহোলে আমরা পাঁক জমা করে আপনাদের পবিত্র রেখেছি। আপনারা ত্যাগে, তিতীক্ষায়, ধৈর্যে, উদারতায়, দারিদ্র্যে, সততায়, উদাসীনতায় সংসার ধর্ম পালন করে মহাপ্রস্থানের পথে চলে যান। বাজে ব্যাপারে মাথা ঘামাবেন না। শুধু ভোটের সময় ভোট দিয়ে পবিত্র নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা সকলেই দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠুন। একটা কথা জেনে রাখুন, আমরা যত অসৎ হব আপনারা রিলেটিভলি ততই সৎ হয়ে উঠবেন। আর একটা কথা, আপনারা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী হতে পারেন। খুবই স্বাভাবিক, ফ্রিডাম অফ স্পিচ, ওপিনিয়ান, আইডিয়া, সংবিধানের মূল কথা। সেই কারণে আমি আপনাদের সুবিধের জন্যে অনবরতই দল পালটে-পালটে সর্বদলীয় চেহারা পেয়েছি। আমাকে ভোট দেওয়া মানেই সব দলকেই ভোট দেওয়া। আচ্ছা আপনারা সুখে থাকুন। আমরা দুঃখেই থাকি। গলায় বিষ ধারণ করে নীলকণ্ঠ। আনইজি লাইজ দি হেড দ্যাট ওয়্যারস দি ক্রাউন।

সভা শেষ। সভাপতি উঠলেন। চা এসেছে। সমিতির পয়সা কম, সঙ্গে ডগ বিস্কুট। সভাপতি বললেন, মনুষ্যক্লেশ নিবারণী সমিতির আপাতত আর কোনও অধিবেশন হবে না। আমার ধারণা ক্লেশ নিবারণ করা সম্ভব নয়। ক্লেশ না থাকলে অক্লেশ মধুর হয় না। অন্ধকার আছে বলেই আলো, অসৎ আছে বলেই সৎ-এর কদর, রোগ আছে বলেই আরোগ্য সুখের। ক্লেশ আছে বলেই ধর্ম আছে, বিশ্বাস আছে, বন্ধুত্ব আছে, আদৰ্শ আছে, সাধনা আছে, সমাজ আছে, সংসার আছে। ক্লেশ মোচনের চেষ্টাটাই ক্লেশদায়ক। অস্কার ওয়াইলড বলেছিলেন? Philanthropy seems to have become simply
the refuge of people who wish to annoy their
fellow creatures.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *