০৮. দুঃসংবাদের সঙ্গে সঙ্গে

দুঃসংবাদের সঙ্গে সঙ্গেই অন্দরে কান্নার রোল উঠল। এ কী হরিষে বিষযাদ! এ কী বিনামেঘে বজ্রাঘাত! এমন দুর্ঘটনা আর কবে কার সংসারে ঘটেছে? এত বড় সর্বনাশের কল্পনা দুঃস্বপ্নেও কে কবে করেছে?

এই তো এইমাত্র মেয়ে কলাতলায় শিলে দাঁড়িয়ে স্নান করে আইবুড়ো মুচি ভেঙে, গায়ে-হলুদের দরুন কোরা লালপাড় শাড়িটুকু পরে চুল বিঁধতে বসেছে, পাড়ার শিল্পী মহিলার ঝাঁক কনের কেশ-রচনায় কে কত নৈপুণ্য দেখাতে পারেন তারই আলোচনায় অন্দরের দালান মুখর করে তুলেছেন, হঠাৎ বাইরের মহল থেকে আগুনের হলকার মত এই সংবাদ এসে ছড়িয়ে পড়ল।

পরিণামে? দাবানল!

অতি বড় অবিশ্বাস্য হলেও এ যে বিশ্বাস না করে উপায় নেই। কারণ সংবাদ এনেছেন। আর কেউ নয় স্বয়ং রামকালী। যার সম্পর্কে বিন্দুমাত্ৰও সন্দেহ পোষণ করা অসম্ভব। নচেৎ মিথ্যা দুঃসংবাদ বুট কুর বিয়ে ভাল করে দিয়ে মজা দেখবে এমন আখীয়েরও অভাব নেই। কিন্তু ইনি হচ্ছেন রামকাল।

কাজেই সংবাদ মিথ্যা হতে পারে, এমন আশার কণিকামাত্ৰও নেই। নাঃ, কোন আশাই নেই। তা ছাড়া কবরেজ নিজের চোখে দেখে এসেছেন। পাত্রের শিয়রে শিমন।

অতএব কোরা শাড়ি জড়ানো বছর আষ্টেকের সেই হতভম্ব মেয়েটাকে ঘিরে প্রবল দাপটে কান্নার যা রোল উঠেছে তাতে ভয়ে মেয়েটার নাড়ি ছেড়ে যাবার যোগাড় হচ্ছে।

বিয়ের দিন যাত্ৰা-করা-বর মৃত্যুরোগ নিয়ে যাত্ৰা ভঙ্গ করে বাড়ি ফিরে গেলে এবং বিয়ের লগ্ন ভ্ৰষ্ট হলে এমন কি সর্বনাশ সংঘটিত হতে পারে, সেটা বেচারার বুদ্ধির অগম্য, অনিষ্ট যদি কিছু হয় সে নয়। তার ঠাকুর্দার হবে, তার কি?

কিন্তু তার কি, সে কথা সে কিছু না বুঝলেও মহিলার দল তাকে ধরে নাড়া দিয়ে দিয়েই তারস্বরে চেঁচিয়ে চলেছেন, ওরে পটলী, তোর কপালে এমন ছাই পোরা ছিল, একথা তো কেউ কখনও চিন্তে করি নি রে। ওরে লগ্ন-ভ্রেষ্ট মেয়ে গলায় নিয়ে আমরা কী করব রে! ওরে এর চাইতে ৩োকেই কেন শমনে ধরল না রে, সে যে এর থেকে ছিল ভাল! ওঁরা লুটোপুটি করতে থাকেন, আর প৮লী কাঠ হয়ে বসে থাকে। বসে বসে শুধু এইটুকু বিচার করতে পারে সে যে এত সব কাণ্ডকারখানা কিছুই হত না, যদি পটলীই রাতারাতি ওলাউঠো হয়ে মরত!

ওদিকে চণ্ডীমণ্ডপে লক্ষ্মীকান্ত বাড়ুযে মাথায় হাত দিয়ে পাথরের পুতুলের মত বসে আছেন, আর সেই পুতুলের মস্তিষ্কের কোষে কোষে ধ্বনিত হচ্ছে, এ কী করলে ভগবান! এ কী করলে ভগবান!

রামকালী চলে যাওয়ার পর থেকে লক্ষ্মীকান্ত আর একটিও কথা বলেন নি, অপর কেউ তাঁকে সম্বোধন করতে সাহস পায় নি। ওদিকে বড় ছেলে শ্যামকান্তও বিশুষ্ক মুখে ঘাটের ধারে শিবতলায় গিয়ে বসে আছে চুপচাপ, বাপের দিকে যাবার সাহস তার নেই। তার জামাই হচ্ছে বটে কিন্তু বয়সটা আর তার কি? এখনও তো তিরিশের নিচে। বাপকে সে যমের মত ভয় করে।

পটলীর মা বেহুলাও মুখ লুকিয়েছে ভাড়ার ঘরের কোণে। নিজেকেই তার সব চেয়ে অপরাধিনী মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই মহাপাপিষ্ঠা সে, নইলে তার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারেই এত বড় দুর্লক্ষণ দুর্ঘটনা! সকলেই ফিসফাস বলাবলি করছে মেয়ে নাকি তার আস্ত রাক্ষসী, তাই বাসায় না। উঠতেই সোয়ামীটার মাথা কড়মড়িয়ে চিবিয়ে খেল। থাকুক এখন বেহুলা চিরজন্ম ওই দ’পড়া সর্বনাশী মেয়েকে গলায় গেঁথে। জাত ধৰ্ম কুল সবই গেল, রইল। শুধু আমরণ যম-যন্ত্রণা।…

হ্যাঁ, বিয়ের রাত্রে বর-বিভ্ৰাট কি আর হয় না? ছাঁদনাতলা থেকেও বর উঠে যেতে দেখেছে অনেকে, কিন্তু সে সব অন্য কারণে। হয়তো পণের টাকা ঠিক সময়ে হাজির করতে না পারার জন্যে বাচসার ফলে, নয়তো বা কোন হিতৈষীর দ্বারা কোন পক্ষের কুলের ঘাটতির কথা প্ৰকাশ হয়ে পড়ায়, অথবা কন্যাপক্ষের কনেকে বদলে ফেলে কালো কুশ্ৰী কনে গছিয়ে দেবার চেষ্টার ফলে, বাচসা থেকে হাতাহাতি মারামারি হতে হতে বরপক্ষ রেগো-টেগে বর উঠিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তখনি তার পারাপারও হয়ে যায়।

কারণ লগ্ন ভ্ৰষ্ট হয়ে গেলেই মেয়ে চিরকালের মত আধাবিধবা হয়ে বাপের ঘরে বসে থাকবে, এই আক্ষেপে পাড়ার কেউ না কেউ করুণাপরবশ হয়ে কোমর বেঁধে লেগে গিয়ে রাতারাতি অন্য পাত্তর যোগাড় করে আনেন। অতএব ভদ্রলোকের জাত মান রক্ষা পায়।

কিন্তু এ যে একেবারে বিপরীত কাজ! এ যে সদ্য রাক্ষসী কন্যা!

এ হেন পতিঘাতিনী মেয়ের জন্যে আপনার ছেলেকে ধরে দেবে এমন মহানুভব ত্ৰিজগতে কে আছে?

না, বেহুলার এই মেয়ের জন্যে রাতারাতি পাত্রসংগ্ৰহ হওয়ার আশা দূরাশা। রামকালী কবরেজ অবশ্য একটু নাকি আশ্বাস দিয়ে গেছেন, চেষ্টা দেখছি বলে; কিন্তু বোঝাই তো যাচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ স্তোকবাক্য! এত বড় দুঃসংবাদটা বাড়ি বয়ে এসে দিয়ে গেলেন, মুখটা একটু হেট হল তো, তাই একটা অলীক স্তোক দিয়ে পালিয়ে গেলেন।

বেহুলা বোকা হতে পারে, কিন্তু একটু বুদ্ধি ধরে।

হায় মা ভগবতী, পটলী যে এত বড় অপয়া মেয়ে এ কথা তো কোনদিন বুঝতে দাও নি? ফুলের মত দেখতে মেয়ে, বাড়ির প্রথমা সন্তান, সকলের আদরের আদরিণী। আগানে-বাগানে হেসে খেলে বেড়িয়েছে এতদিন, ইদানীং সম্প্রতি ডাগরটি হয়েছে বলেই যা বাড়ির মধ্যে আটক ছিল। তা যেমন সুন্দরী তেমনি হাস্যবন্দনী, কে বলতে পেরেছে। এ মেয়ে সর্বনাশী রাক্ষসী?

শ্বশুর ঠাকুর তো বলেন পটলীর নাকি দেবগণ, তবে? দেবগণ কন্যে রাক্ষসগণের কপাল পেল কি করে? আর শুধুই কি আজ? ও মেয়ে যদি ঘরে থাকে সংসার তো ছারখারে যাবে।

মানদার পিসী তো স্পষ্টই বললেন সে কথা, কে নেবে মা ও মেয়েকে? কার বাসনা হবে সংসারটা ছারে-গোল্লায় দিই? ও চিরটা কাল এই দপড়া হয়ে পড়ে থাকবে। আর ঠাকুদার সংসারটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে, এই আর কি!

বেহুলা ড়ুকরে কেঁদে ওঠে।

কাঁদতে কাঁদতে বলে, হে মা ওলাই বিবি, হে মা শেতলা, পটলীকে তোমরা নাও, ওরা যেন এ ভিটেতে তেরাত্তির না পোহায়।

মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে বেহুলা!

কাঁদছে সবাই।

বাড়ির গিন্নী থেকে শুরু করে বিচুলিকাটুনি বাগদী মাগীটা পর্যন্ত। পরের দুঃখে কাঁদবার এত বড় সুযোগ জীবনে কবার আসে?

কাঁদছে না শুধু পটলী, যে হচ্ছে এই বিবাহবিভ্ৰাট নাটকের প্রধানা নায়িকা। সে শুধু অনেকক্ষন কাঠ হয়ে বসে থেকে সবে এইমাত্ৰ ভাবতে শুরু করেছে বিয়েটাই যদি না হয়, তা হলে এখনও পটলীকে উপুসী রেখেছে কেন এরা? কেন কেউ একবারও বলছে না, ওরে তোরা। তবে এখন পটলীকে দুটো মতিচুর কি দেদোমণ্ডা দিয়ে জল খেতে দে। পটলীর বুক থেকে পেট অবধি যেন মাঠের ধুলোর মতো শুকনো লাগছে।

কিন্তু পটলীর মুখে বুকে ধুলো বেটে যাচ্ছে, এ তুচ্ছ খবরটুকু ভাবতে বসবার সময় কার আছে? বরং পটলীর ওপর রাগে ঘৃণায় রি রি করছে সবাই!

শ্যামকান্ত বার দুই-তিন পুকুরপাড়ের দিক থেকে এসে উঁকি মেরে বাবাকে দেখে গেছে এবং যতবারই দেখেছে। বাবা তামাক খাচ্ছেন না, বাবার হাতে হুঁকো নেই, ততবারই তার প্রাণীটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সাহস করে তামাক সেজে এনে সামনে ধরে দেবে এত বুকের বল নেই, অপেক্ষা শুধু পাড়ার কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি এসে পড়েন। হয়তো তেমন কেউ এলে লক্ষ্মীকান্তের মৌনভঙ্গ হবে।

নিজের যতবড় বিপত্তিই হোক, মানীর মান অবশ্যই রাখবেন লক্ষ্মীকান্ত।

কিন্তু পাড়ার ভদ্রলোকদের আর আসতে বাকী আছে কার? তারা তো সবাই একে এসে গেছেন।

বেলা পড়ে এল।

অর্থাৎ সর্বনাশের সময় ঘনিয়ে এল।

এ হেন সময় শ্যামকান্তর প্রার্থনা পূর্ণ হল। এলেন রাখহরি ঘোষাল। রীতিমত বয়স্ক ব্যক্তি, অপেক্ষাকৃত দূরের পাল্লায় থাকেন, তাই এতক্ষণে এসে উঠতে পারেন নি। তিনি এসে নীরবে খড়ম খুলে ফরাসে উঠে বসলেন, ট্যাঁক থেকে শামুকের খোলের নস্যদানি বার করে দুটিপ নিলেন, তারপর ধীরে সুস্থে বললেন, ব্যাপার তো সব-ই শুনলাম লক্ষ্মীকান্ত, কিন্তু তুমি এভাবে মচ্ছিভঙ্গ হয়ে বসে থাকলে তো চলবে না।

লক্ষ্মীকান্ত বাঁড়ুয্যে বয়সের সম্মান রাখতে জানলেও ঘোষাল-ব্রাহ্মণের পায়ের ধুলো তো আর নেবেন না, তাই মাথাটা একটু নিচু ভাব করে ক্লান্ত স্বরে নেপথ্যের দিকে গলা বাড়িয়ে বলেন, ওরে কে আছিস, ঘোষাল মশাইকে তামাক দিয়ে যা।

থাক থাক, ব্যস্ত হতে হবে না। রাখহরি ঘোষাল বলেন, সন্ধ্যা তো আগতপ্ৰায়, এখন কি করবে। স্থির করলে?

স্থির আর আমি কি করব ঘোষাল মশাই, লক্ষ্মীকান্ত হতাশভাবে বলেন, স্বয়ং যজ্ঞেশ্বরই যে যজ্ঞ পণ্ড করতে বসলেন–

তা বলে তো ভেঙে পড়লে চলবে না লক্ষ্মীকান্ত, কোমর বাঁধতে হবে। কন্যাকে নির্দিষ্ট লগ্নে পাত্ৰস্থ করতেই হবে। লগ্ন কখন?

মধ্যরাত্রের পর।

উত্তম কথা। সব কিছু পাচ্ছি। তুমি। আমি বলি কি, তুমি আমার সঙ্গে একবার দয়ালের ওখানে চল–

দয়াল? দয়াল মুখুয্যে?

হ্যাঁ, দেখা যদি হাতেপায়ে ধরে রাজী করাতে পারো। এমনিতেই তো কালবিলম্ব হয়ে গেছে।

লক্ষ্মীকান্ত বিস্মিত দৃষ্টি মেলে বলেন, মুখুয্যে মশায়ের কাছে কার আশায় যাব ঠিক বুঝতে পারছি না তো ঘোষাল মশাই?

কার আশায় আবার লক্ষ্মীকান্ত, তুমি নেহাৎ শিশু সাজছ দেখছি। মুখুয্যের আশাতেই যাবে। নইলে রাতারাতি আর তোমার স্ব-ঘর পাত্র পাচ্ছি কোথায়?

লক্ষ্মীকান্ত কাতর মুখে বললেন, মুখুয্যে মশায়ের সঙ্গে পটলীর বিয়ে? পলটীকে আপনি দেখেছেন ঘোষাল মশাই?

দেখেছি বৈকি, রাখহরি একটু রসিকহাসি হাসেন, নাতনীকে তোমার দেখলে ওর নাম গিয়ে মুনিরও মন টলে, ঘরে মিললে আমিই এই বয়সে টোপর মাথায় নিতে চাইতাম। মুখুয্যেও তোমার গিয়ে, বয়েস হলে কি হয়, রসিক ব্যক্তি। সেই সেদিনও পথে পটলীকে দেখে বলছিল—

রাখহরি একটু থামেন।

লক্ষ্মীকান্ত কিঞ্চিৎ বিরক্তভাবে বলেন, কি বলছিলেন?

আহা দুষ্য কিছু নয়, তামাশা করে বলছিল, বাঁড়ুয্যের নাতনীটিকে দেখলে ইচ্ছে হয় আমার তৃতীয় পক্ষটিকে ত্যাগ করে ফেলে ফের ছাঁদনাতলায় গিয়ে দাঁড়াই।

লক্ষ্মীকান্ত এবার ঘোরতর বিরক্তির স্বরে বলেন, এ প্রসঙ্গ ত্যাগ করুন ঘোষাল মশাই।

বটে? ও! রাখহরি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান, বুঝতে পারি নি, কলি পূর্ণ হতে এখনও কিছু বিলম্ব  আছে ভেবেছিলাম। যাক শিক্ষা হয়ে গেল। আর যাই করি কারুর হিত করবার চেষ্টা করব না…

লক্ষ্মীকান্ত এবার ত্ৰস্ত কাতরতায় বলে ওঠেন, আপনি অযথা কুপিত হবেন না ঘোষাল মশাই, য়ামার অবস্থাটা বিবেচনা করুন। মুখুয্যে মশাই আমার চাইতেও প্রায় চার পাঁচ বৎসরের বয়োধিক, তা ছাড়া হাপানি রোগগ্ৰস্ত।

হাপানিটা যমরোগ নয় লক্ষ্মীকান্ত,  রাখহরি সতেজে বলেন, আয়ুৰ্বেদমতে ওটা হচ্ছে জীওজ ব্যাবি। তাছাড়া বয়সের কথা যা বলছি। ওটা কোন কথাই নয়, পুরুষের আবার বয়েস! বরং মুখুয্যের আর দুটি পত্নীর ভাগ্য-প্ৰভাবে তোমার ঐ অলক্ষণা পৌত্রীটির বৈধব্য-যোগ খণ্ডন হয়েও যেতে পারে।

কিন্তু ঘোষাল মশাই—

থাক, কিন্তুতে আর কাজ কি লক্ষ্মীকান্ত? তবে এটা জেনো, নিজেকে সমাজের শিরোমণি ভেবে যতই তুমি নিৰ্ভয়ে থাক, এর পর অর্থাৎ তোমার ওই পৌত্রীকে নির্দিষ্ট লগ্নে পাত্ৰস্থ করতে না পারলে সদব্ৰাহ্মণের তোমার গৃহে জলগ্ৰহণ করবেন। কিনা সন্দেহ। এই দুঃসময়ে অপোগণ্ড একটা ষ্টুড়ির বুড়ো বর যুবো বরের ভাবনা তুমি ভাবতে বসছ, কুলমর্যাদা ধর্মসংস্কার জাতি-মান এসব বিস্মৃতি হচ্ছে, এ একটা তাজ্জব বটে!

ঘোষাল মশাই আপনি আমায় মার্জন করুন, বরং পটলীকে নিয়ে আমি কাশীবাসী হব-

তা হবে বৈকি, রাখহরি একটু বিষহাসি হেসে বলেন, বে-মালিক সুন্দরী যুবতীর পক্ষে কাশীর মত উপর্যুক্ত স্থান আয় কোথায় আছে? নাতনী হতে কাশীবাসের সংস্থানটাও তোমার হয়ে

ঘোষাল মশাই! লক্ষ্মীকান্ত বিদ্যুৎবেগে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি আমার গুরুজনতুল্য, তাই এযাত্রা রক্ষা পেয়ে গেলেন। নচেৎ–

নচেৎ কি করতে লক্ষ্মীকান্ত, বিদ্রেরূপহাস্যে মুখ কুঁচকে রাখহরি বলে ওঠেন, নচেৎ কি মারতে নাকি?

শোধ নেবার দিন এসেছে, শোধ নেবেন বৈকি ঘোষাল। ঘোষাল-বামুনদের প্রতি লক্ষ্মীকান্ত বাঁড়ুয্যের অন্তঃসলিলা তাচ্ছিল্য ভাবটা তো আর অবিদিত নেই রাখহরির! যতই বিনয়ের ভাব দেখাক বাঁড়ুয্যে, ওর চোখের দৃষ্টিতেই সেই উচ্চনীচ ভেদাভেদটা ধরা পড়ে যায়। আজ সেই প্রতিশোধ নেবার সময় এসেছে, ছাড়বেন কেন রাখহরি?

ঘোষাল মশাই, আমাকে রেহাই দিন। দুই হাত জোড় করে লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ভগবান যদি আমার জাতি ধর্ম রক্ষা করতে ইচ্ছুক থাকেন, লগ্নের আগেই উপর্যুক্ত পোত্র পেয়ে যাব, নচেৎ মনে করব।–

লগ্নের আগেই উপর্যুক্ত পোত্র! রাখহরি। আর একবার বিদ্রপহাস্যে মুখ বাকিয়ে বলেন, পাত্রটিকে বোধ হয়। স্বয়ং তিনি বৈকুণ্ঠ থেকে পাঠিয়ে দেবেন!

লক্ষ্মীকান্ত কী একটা উত্তর দিতে উদ্যত হচ্ছিলেন, সহসা শ্যামকান্ত নিজের স্বভাববিরুদ্ধ উত্তেজনায় ছুটে এসে বলে, বাবা, কবরেজ চাটুয্যে মশাই আসছেন ঘোড়ায় চেপে পিছনে কাকে যেন নিয়ে।

অ্যাঁ! নারায়ণ!

লক্ষ্মীকান্ত উঠে দাঁড়াতে গিয়ে বসে পড়েন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *