• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Book । বাংলা লাইব্রেরি

Read Bengali Books Online @ FREE

  • লেখক
  • অনুবাদ
  • সেবা
  • কৌতুক
  • লিরিক
  • ডিকশনারি
  • PDF

লেখক

অনুবাদ

সেবা

কৌতুক

লিরিক

ডিকশনারি

PDF

০৫. এতদিনে নিঃসন্দেহ হয়েছি

লাইব্রেরি » নারায়ণ সান্যাল » অলকনন্দা (উপন্যাস) » ০৫. এতদিনে নিঃসন্দেহ হয়েছি

এতদিনে নিঃসন্দেহ হয়েছি, এ ডেনমার্কে কোথাও কিছু একটা পচেছে। কিন্তু কোথায়? প্রথমে ভেবেছিলুম সেটা ফ্যাক্টরিতে, পরে মনে হল, না—সেটা আমার মনের ভেতর। এখন মনে হচ্ছে, তাও না–পচনক্রিয়া শুরু হয়েছে সুনন্দার মনে। আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কুমুদ।

যদি নিজের চোখেই আগে দেখা না থাকত তাহলে বিশ্বাস করতে পারতুম না। হয়তো বন্ধু-বিচ্ছেদ হয়ে যেত। তবু আমাকে বিস্ময়ের অভিনয় করতে হয়—তুমি ভুল দেখেছ কুমুদ! তাই কখনও হয়?

কুমুদ অ্যাশট্রেতে চুরুটের ছাইটা ঝাড়তে ঝাড়তে বললে—প্রথমটা আমিও তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু নমিতা আমার কাছে স্বীকার করেছে।

–কী স্বীকার করেছে? ও বেশে সুনন্দা কোথায় যায়?

–কোথায় যায় তা সে জানে না—কিন্তু যায়।

–ওকেই জিজ্ঞাসা করব?

চমকে ওঠে কুমুদ–পাগল! তাছাড়া নমিতা আমাকে বিশেষ করে বারণ করে দিয়েছে তোমাকে বলতে। তা সত্ত্বেও আমি বলতে বাধ্য হলুম। তোমাকে যে বলেছি, তাও নমিতার কাছে স্বীকার করব না আমি।

একটু চুপ করে থেকে বলি–তোমার কী মনে হয়?

কুমুদ বলে–আমার কী মনে হয় সে আলোচনা করার আগে বরং মিসেস মুখার্জি নমিতার কাছে যে কৈফিয়ত দিয়েছেন সেটাই বলি

–বল।

–মিসেস মুখার্জি নাকি তাঁর এক গরিব বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যান।

—দ্যাটস অ্যাবসার্ড! তাহলে আমার কাছে গোপন করবে কেন?

—ঠিক তাই। ও কথা নমিতাও বিশ্বাস করেনি, আমিও না।

–তাহলে?

—তাহলে স্টেটমেন্টটাকে একটু সংশোধন করতে হয়। ঐ বান্ধবীর স্ত্রীয়া ঈপটাকে বাদ দিতে হয়।

আমি চুপ করে থাকি।

কুমুদই ফের বলে–দেখ অলক, আমরা যে সমাজে বাস করি তাতে এ নিয়ে হৈ-চৈ করার কিছু নেই। আজ যদি আমি জানতে পারি নমিতা তার প্রাকবিবাহ জীবনের কোনো বন্ধুর সঙ্গে গোপনে দেখা করে তাহলে আমি সুইসাইড করব না। কিংবা আজ যদি মিসেস মুখার্জি জানতে পারেন তুমি তোমার লেডি-স্টেনোকে নিয়ে একটু ফুর্তি করেছ কোনও হোটেলে উঠে–

–লেডি স্টেনো? মানে? চমকে উঠি আমি।

——আহা, একটা কথার কথা। তোমার কফিডেনশিয়াল স্টেনো পুরুষ কি স্ত্রী তাই তো জানি না আমি। আমি বলছি, এ সব আমাদের সমাজে এমন কিছু ভয়াবহ না। কিন্তু তবু বলব, ঐ সব সাজ পোশাক বদলানো, ট্রামে-বাসে যাওয়া, এ সব ঠিক নয়। হয়তো এত কথা আমি বলতুমই না। কিন্তু ঘটনাচক্রে আমি জড়িয়ে পড়ায়–আই মীন মিসেস মুখার্জি আমার বাড়িটিকেই তার সেন্টার অব অ্যাকটিভিটি করায় সব কথা বলতে হচ্ছে। পাছে তুমি না ভেবে বসো আমরাও পার্টি-টু-ইট।

—কিন্তু আমি কী করি বল ত?

–তোমাকে দুটি পরামর্শ দিতে পারি আমি। একটা শর্ট টার্ম, একটা লং টার্ম!

–বল।

–ইম্মিডিয়েট স্টেপ হিসাবে আমি বলব, সব কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মাস দু-তিন কোনও টুরিস্ট-স্পট ঘুরে এস, সস্ত্রীক।

কথাটা মনে লাগে। বলি–ঠিক বলেছ। অগষ্টিনের একটা কথা আছে–দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ এ গ্রেট বুক, অব হুইচ দে হু নেভার স্টার ফ্রম হোম রীড ওনলি এ পেজ।

আমার কথায় কান না দিয়ে কুমুদ বলে–আর আমার লং টার্ম সাজেশন হচ্ছে, বছরখানেকের মধ্যেই কোনো একটা মেটার্নিটি হোমে একটা কেবিন ভাড়া কর।

অবাক হয়ে বলি—তার মানে?

–তার মানে, ফর হেভেনস্ সেক, স্টপ দিস্ ফ্যামিলি-প্ল্যানিং নুইসেন্স।

খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলি—দুটোই দামি কথা বলেছ তুমি! এই বিশ্বকর্মা পুজো আর স্ট্রাইকের হাঙ্গামাটা মিটে গেলেই একটা লম্বা ছুটিতে বেরিয়ে পড়ব। এখানে জীবন বড় একঘেঁয়ে হয়ে উঠেছে। আর, আরও কথাও ঠিকই বলেছ। বাড়িতে ছেলেপিলে ছাড়া আর মানাচ্ছে না। হয়তো একটা বাচ্চা কোলে এলে এ সব খেয়াল ঘাড় থেকে নামবে। সাউদে ঠিকই বলেছেন—কল নট দ্যাট ম্যান রেচেড, হু, হোয়াটেভার ইলস্ হি সাফার্স, হ্যাজ এ চাইল্ড টু ল্যভ।

কুমুদ আমাকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলে–আমার আর একটি সাজেশন আছে বন্ধু; অ্যান্ড দ্যাটস্ এ রীয়াল পীস অ অ্যাডভাই।

–বল!

–স্টপ প্লেয়িং দ্যাট অফুল গেম অব কোটেশান্স! ঐ কোটেশানের ভূত তোমার ঘাড় থেকে না নামলে, আমি বলে দিচ্ছি, একদিন ডাইভোর্স মামলার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তোমাকে।

আমি জবাব দিইনি। কুমুদের লেখাপড়া কম টাকা আছে অগাধ—পৈতৃিক সম্পত্তি; কিন্তু পেটে নেই বিদ্যে। বায়রনের ভাষায় ওর হচ্ছে জাস্ট এনাফ অব লার্নিং টু মিস-কোট। ও এ খেলার মর্ম কী বুঝবে? জুতসই একটা উদ্ধৃতি দিতে পারা একটা বড় আর্ট! বেইলি বলেছেন, দেয়ার ইজ নো লেস ইনভেশন ইন অ্যাপ্টলি অ্যাপ্লাইং এ থট ফাউন্ড ইন এ বুক দ্যান ইন বিইং দ্য ফার্স্ট অথার অব দ্য থট! কুমুদ তার মর্ম কী বুঝবে?

কুমুদ না বুঝুক, পর্ণা বোঝে। কথার পিঠে চমৎকার কথা সাজাতে পারে সে। মোহিত করে দেয় একেবারে।

কিন্তু!

নিজের মনকে আজ জিজ্ঞাসা করবার সময় এসেছে—আমি কোথায় যাচ্ছি? এ কী ভীষণ খেলায় মেতে উঠেছি আমি! মনকে চোখ ঠেরেছিলুম, কিন্তু মনের অগোচরে যে পাপ নেই। আমি কি জড়িয়ে পড়ছি? পড়েছি? এতদূর এগিয়ে গেলুম কিসের টানে? এগিয়ে যেতে দিলুম ওকে? যন্ত্র হিসাবে যাকে ব্যবহার করব মনে করেছিলুম–সে তো যন্ত্র নয়। সে যে রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষ। তারও যে একটা সত্তা আছে। শুধু তারই বা কেন, আমারও যে একটা সত্তা আছে। আমার মনের একটা কোনা কি এতদিন খালি ছিল—যা ভরিয়ে তুলতে পারেনি সুনন্দা? কথাটা ভাবতেও বুকে বাজে। কিন্তু কথাটা বোধহয় সত্যি। না হলে এতটা অভিভূত আমাকে করতে পারত না ঐ একফোটা একটা কালো মেয়ে। সে ধরা দিল না, অথচ ধরে রাখল আমাকে।

আর নয়। এবার সাবধান হতে হবে। না হলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে আমার এ সুখের নীড়। ঠিকই বলে নন্দা ও মেয়ে বিষকন্যা। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে একেবারে। অথচ কী আশ্চর্য! সব জেনে সব বুঝেও আমি কিছুতেই সাবধান হতে পারি না, সংযত হতে পারি না।

এবার নন্দার ব্যাপারটায় চোখ খুলে গেছে আমার। লম্বা ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ব যেদিকে দুচোখ যায়। ধর্মঘটের এ হাঙ্গামাটা মিটলেই আমার ছুটি। কারখানা থেকে ছুটি, দুশ্চিন্তা থেকে ছুটি, আর ছুটি মেয়েটির নাগপাশ থেকে। ছুটিতে যাবার আগে মেয়েটিকে বরখাস্ত করে যেতে হবে। ও মেয়ে সব পারে! যে আমার কাছে টাকা খেয়ে শ্রমিকদের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করে আনতে পারে, সে আর কারও কাছে টাকা খেয়ে আমার সর্বনাশও করতে পারে। আর কিছু না পারুক আমাকে ব্ল্যাকমেইলও তো করতে পারে।

কিন্তু না, এ আমি অন্যায় করছি। পর্ণা সে জাতীয় মেয়ে নয়। তাকে বিশ্বাস করেছি আমি। অফিসের অনেক গোপন খবর আজ সে জানে। আমিই জানিয়েছি। নির্ভয়ে জানিয়েছি। দুটি কারণে। সে আমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবে না। প্রথমত, সে শ্রমিকদের কাছে আমার গোপন কথা বলতে পারবে না। কারণ সে যে ওদের গোপন সংবাদ আমাকে সরবরাহ করেছে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমার কাছে আছে। সে কথা আমি ওদের জানালে এ অফিসে তাকে চাকরি করতে হবে না। শ্রমিকরাই তাকে কেটে ভাসিয়ে দেবে গঙ্গায়। বিশ্বাসঘাতকের স্থান নেই শ্রমিক য়ুনিয়ানে। দ্বিতীয়ত, আমি পর্ণার প্রেমে না পড়লেও সে নিঃসন্দেহে আমার প্রেমে পড়েছে। যৌবনের মাঝামাঝি এসেও সে অনূঢ়া। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার মতো ছেলে ওর কাছে স্বপ্নকথা। রূপকথার রাজপুত্র। ও জানে আমি বিবাহিত—তা হোক, তবু পুরুষের সঙ্গ, পুরুষের কাছ থেকে ফ্ল্যাটারি শুনবার জন্যে যে ঐ অতিক্রান্ত-যৌবনা মেয়েটি আজ লালায়িত। অগাধ সম্পত্তির মালিক, রাজপুত্রের মতো চেহারার একটি ছেলে যদি ঐ আকৈশোর উপেক্ষিতার কানে নিত্য গুঞ্জরণ করে যায়, তাহলে তার পক্ষে বিশ্বাসঘাতকতা করার অবকাশ কোথায়? পর্ণাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না। নিজের স্বার্থেই আটকে রাখতে হবে ওকে।

« পূর্ববর্তী:
« ০৪. কোথায় যেন গল্প শুনেছিলাম
পরবর্তী: »
০৬. পরশু উৎসব »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি – জোক্স – লিরিক – রেসিপি – কামসূত্র – হেলথ

Return to top