০৪. সেদিন কমনরুমে বসে

সেদিন কমনরুমে বসে নানা কথাবার্তার মধ্যেই হঠাৎ নমিতা ঘোষাল একটু কৌতুক মেশানো হাসি হেসে বলেন, আচ্ছা ভারতী, তোর বরের নাম সুব্রত, তাই না?

হ্যাঁ।

ছেলের নাম দেবব্রত?

হ্যাঁ।

তোর দেওরের নাম কি ছিল?

তপোব্রত।

ওর ছেলের নাম?

শুভব্রত।

নমিতা একটু হেসে বলেন, বাঃ! বেশ মিলতো সবার নামে! সবার নামের শেষেই ব্রত!

একটু পরেই উনি প্রশ্ন করেন, ছেলেদের নাম কে রেখেছে?

ওদের দুজনের নামই ঠাকুরপোর দেওয়া।

উনি ভুরু কুঁচকে বলেন, তোদের কাছেই শুনেছি, শিবানীর ছেলে হবার আগেই তোর দেওর মারা যায়।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছিস।

তাহলে সে ছেলের নাম রাখলে কী করে? ভারতী একটু হেসে বলেন, শিবানী প্রেগন্যান্ট হবার পরই ঠাকুরপো বলেছিল, ছেলে হলে নাম হবে…

আই সী।

নমিতা আবার চুপ করেন কিন্তু দুতিন মিনিট পরই প্রশ্ন করেন, তোরা তো সরকার।

হ্যাঁ।

কিন্তু শিবানী কি বিয়ের আগে ব্যানার্জী ছিল বলে এখনও…

ভারতী হাসতে হাসতে বলেন, না, না, শিবানী মুখার্জী পরিবারের মেয়ে।

তবে তুই সরকার আর তোর ঠাকুরমা ব্যানার্জী হলো কেমন করে?

ভারতী একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমার স্বামী আর ঠাকুরপো এক মায়ের ছেলে না হলেও ওরা আপন ভাইয়ের চাইতে শত গুণ বেশি আপন ছিল।

উনি একটু হেসে বলেন, আর ঠাকুরপো ছিল আমার আদরের স্নেহের ছোট ভাই, হি ওয়াজ মাই ডিয়ারেস্ট অ্যান্ড ক্লোজেস্ট ফ্রেন্ড। তুই বিশ্বাস কর নমিতা, অমন ভাই বন্ধু পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।

বুঝেছি।

এতক্ষণ চুপ করে থাকার পর পর্ণা মুখার্জী একটু হেসে ভারতাঁকে বলেন, তোমাকে আর শিবানীদিকে দেখেশুনে মনে হয়, তোমরা যেন যমজ বোন!

তার চাইতেও বেশি।

হ্যাঁ, সত্যিই বেশি।

হ্যাঁ, সত্যিই তাই মনে হয়।

একটু থেমেই পর্ণা আবার বলেন, আমাদের ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্টের লেখা তো তোমাদের সল্টলেকেই থাকে।

হ্যাঁ, ও তো মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়ি আসে।

হ্যাঁ, লেখা বলেছে।

পর্ণা না থেমেই বলেন, লেখার কাছে শুনেছি, তোমার স্বামী বুঝি শিবানীদিকে অত্যন্ত স্নেহ করেন।

ভারতী চোখ দুটো বড় বড় করে সারা মুখে খুশির হাসি ছড়িয়ে বলেন, পর্ণা, তুমি ভাবতে পারবে না, ওদের দুজনের সম্পর্ক। শিবানী ওর দাদাকে ঠিক নিজের বাবার মতই শ্রদ্ধা করে আর আমার স্বামী ওকে নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করে।

পর্ণা একটু হেসে বলেন, হ্যাঁ, লেখাও একই কথা বলছিল।

দাদার কথা শিবানীর কাছে বেদবাক্য আর শিবানী যদি ওনাকে কিছু বলতে বলে বা কোন ব্যাপারে কোন মতামত দেয়, তাহলে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বারণ করলেও উনি বৌমার কথাই মেনে নেবেন।

নমিতা আর পর্ণা দুজনেই প্রায় এক সঙ্গে বলেন, সত্যি, আজকাল এইরকম সম্পর্কের কথা ভাবাই যায় না।

মনোরমা তিন জনকেই চা দেয়।

চা খেতে খেতেই নমিতা প্রশ্ন করেন, হারে ভারতী, তোর ছেলে তো আই-আই-টি থেকে পাশ করেছে তাই না?

হ্যাঁ।

তার মানে বি. টেক?

না; ও মাস্টার্স করে এম. টেক হয়েছে।

সে তো দারুণ ব্যাপার!

পর্ণা সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, দারুণ বলে দারুণ ব্যাপার। আই-আই-টি’তে ভর্তি হওয়াই লটারীর ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়ার চাইতে কঠিন; তার উপর এম. টেক।

ও একবার খুব জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাসতে হাসতে বলেন, আই-আই টি’র এম. টেক, তো পৃথিবীর যে দেশে যাবে, সেখানেই ভাল চাকরি পাবে।

নমিতা বলেন, হ্যাঁ, পর্ণা, ঠিকই বলেছ। আমার এক ভাসুরপো খড়গপুর আই আই-টি’ থেকে এম. টেক, করে এখন আমেরিকায় খুব ভাল চাকরি করছে।

উনি মুহূর্তে জন্য থেমেই বলেন, অচ্ছা শিবানীর ছেলে তো ডাক্তারী পড়ছিল; ও কি পাশ করেছে?

ভারতী বলেন, ও এখন এম. এস. করছে। আর মাস ছয়েকের মধ্যেই পাশ করে বেরুবে।

ও কি কলকাতাতেই পড়ছে?

না, দিল্লীতে।

নমিতা না থেমেই বলেন, তার মানে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইনিস্টিটিউটে?

হ্যাঁ।

শুনেছি, ওখানে চান্স পাওয়া খুবই কঠিন।

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছিস।

ভারতী একটু হেসে বলেন, ওখানে এম. বি. বি. এস-এ মাত্র পঞ্চাশটা সীট। ভর্তি হবার জন্য সারা দেশ ছাড়াও বাংলাদেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালোশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও আরো কয়েটা দেশ থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ভর্তি হবার জন্য পরীক্ষা দেয়।

বাপরে বাপ!

শিবানীর ছেলে তাতাই শুধু ওখান থেকে ভালভাবে এম. বি. বি. এস. পাশ করেনি; সার্জারিতে হাইয়েস্ট নম্বর পেয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছে।

বলিস কিরে?

তোরা দেখিস, ও ওখান থেকে এম. এস. পাশ করার পর ঠিক ঠাকুরপোর মতই বিখ্যাত সার্জেন হবে।

যে ছেলে পেটে থাকতে শিবানী বিধবা হয়েছিল, সেই ছেলে ওর বাবার মতই সার্জেন হতে চলেছে শুনেও ভাল লাগছে।

পর্ণা বলেন, শিবানীদি পসথুমাস ছেলের মা হয়েও এবার একটু হাসতে পারবে।

ঘণ্টা পড়তে এখনও কয়েক মিনিট দেরি আছে দেখেই নমিতা বলেন, হারে ভারতী, ছেলে শিবানীকে চিঠি লিখে?

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ খুলেই একটু হেসে বলেন, দাঁড়া, তাতাই সোনার চিঠি দেখাচ্ছি।

ও তোকেও চিঠি দেয়?

ও একবার আমাকে লেখে একবার শিবানীকে…! হ্যাঁ, হ্যাঁ পেয়েছি।

চিঠিটা বের করেই নমিতার হাতে দিয়ে বলেন, নে, পড়ে দেখ।

চিঠি পড়েই উনি হো হো করে হেসে ওঠেন।

পর্ণা বলেন, নমিতাদি, হাসছেন কেন?

পড়ে দ্যাখ।

পর্ণা চিঠিটা হাতে নিয়েই জোর করে পড়তে শুরু করেন-আমার গত জন্মের এই জন্মের, আগামী পাঁচ শ’ এক জন্মের বড়মা, আজ গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া গেজেট বেরিয়েছে, তুমি তোমার ৭১২ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬১৩ টাকা আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছ। ব্যস! কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটে সে খবর ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে। তার ঠিক কয়েক মিনিট পরই বিল ক্লিনটন আমাকে ফোন করে বলে, হাই শুভ, তুমি তো জানো, দু’চারটে ছুকরীর সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে বেশ কয়েকটা মামলায় ফেসে গিয়েছি। তুমি কি আমাকে চার-পাঁচ মিলিয়ন ডলার দু’বছরের জন্য ধার দিতে পারো?

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, বিল, হ্যাঁ, ফাঁইভ মিলিয়নই পাঠাচ্ছি। পনের মিনিট পরই সিটি ব্যাঙ্কে গেলে হিলারী বৌদি টাকাটা পেয়ে যাবে। এই টাকা কখনই। তোমাকে ফেরত দিতে হবে না। হাজার হোক তুমি আমার বন্ধু আর হিলারী বৌদি কলকাতার বেথুন কলেজে বড়মা-র কাছে পড়েছে।

বলো বড়মা, তোমার ছেলে হিসেবে ঠিক কাজ করিনি?

তিন কোটি ছাপান্ন হাজার প্রণাম।

–তোমার তাতাই সোনা

পর্ণা চিঠি পড়া শেষ হতেই হো হো করে হেসে ওঠেন।

নমিতা হাসতে হাসতে বলেন, সত্যি ভারতী, ছেলেটা তো দারুণ ইন্টারেস্টিং।

ভারতীও হাসতে হাসতে বলেন, তাই সোনা মাঝে মাঝেই এইরকম চিঠি লেখে। ওর এর আগের চিঠিটাও খুব মজার ছিল।

কি লিখছিল?

দাঁড়া, হাতড়ে চিঠিটা বের করতেই পর্ণা বলে, আমাকে দিন; আমি পড়ছি।…বড়মা, বড়মা,ভীষণ ব্যস্ত। এখুনি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে। শুধু হেডলাইন গুলো লিখেছি-দিল্লী ইউনিভাসিটি, মিরান্ডা আর লেডি শ্রীরাম কলেজের ৬০৪ জন পরমা সুন্দরী ছাত্রী, ৩৭ জন যুবতী অধ্যাপিকা আর সর্বসাকুল্যে ১২৭ টি M.B.B.S. আর M.D/ M.S. পাশ করা ধনীর দুলালী আমাকে বিয়ে করার জন্য বিখ্যাত রামলীলা ময়দানে প্রজাপতি যজ্ঞ শুরু করেছে। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি আমাকে বিয়ে করতে না পারলে মাধুরী দীক্ষিত আত্মহত্যা করবে। তাছাড়া আমি বলেছি, ওকে বিয়ে করব।

বলো বড়মা, তোমার ছেলে হয়ে আমি কি মাধুরীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি?

ওয়ান মিলিয়ান অ্যান্ড ওয়ান প্রণাম।

–তোমার তাতাই সোনা

কখন যে ঘণ্টা পড়েছে আর কখন যে শিবানী ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তা কেউ টেরও পাননি।

শিবানী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ভারতী, তুই তাতাইয়ের চিঠি ওদের দেখালি কী করে?

নমিতা বলেন, শিবানী, তোর ছেলে তো দারুণ ইন্টারেস্টিং!

পর্ণা বলেন, সত্যি ভারী মজার চিঠি লেখে তোমার ছেলে। ওর চিঠি পড়ে তো আমরা হাসতে হাসতে…

ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই শিবানী ব্যাগ থেকে একটা পোস্টকার্ড বের করে বলেন, কলেজে যাবার জন্য বেরুচ্ছি, ঠিক তখনই ওর এই পোস্ট কার্ড পেলাম।

পর্ণা বলেন, দেখি, দেখি, কি লিখেছে।

দ্যাখ।

শিবানী পোস্টকার্ড ওর হাতে দিয়েই বলেন, এটা কোন চিঠি লেখার ছিরি।

সে কথায় কান না দিয়ে পর্ণা জোরে জোরে পড়ে—

আমার গ্রেট বড়মা, তুমি আমাকে বড্ড ভালবাসো।

–তোমার তাতাই সোনা

মা মাগো, তুমি আদর দিয়ে দিয়ে আমার মাথাটা খেয়েছ।

–তোমার তাতাই সোনা

পর্ণা আর নমিতা হো হো করে হেসে ওঠেন।

শিবানী বলেন, তোমরাই বলল, হাজার মাইল দূর থেকে ছেলে এইরকম চিঠি লিখলে কোন মায়ের ভাল লাগে?

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েই বলেন, শিবানী, এখন চল তো বাড়ি যাই। তোর জন্য অনেকক্ষণ বসে আছি।

হ্যাঁ, চল।

.

দিল্লী আর হায়দ্রাবাদ ঘুরে ছ’দিন পর কলকাতা ফিরলেও বাড়িতে গেলেন। মিঃ চৌধুরী এয়ার পোর্ট থেকে তারাতলায় ফ্যাক্টারী ঘুরে বাড়ি ফিরলেন প্রায় আটটা নাগাদ।

দুর্বা বলে, বাবা, তুমি খুব টায়ার্ড, তাই না?

খুব না হলেও একটু ক্লান্ত লাগছে।

উনি মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, হায়দ্রাবাদের ফ্যাক্টারীর এক্সপ্যানসান হবে কিন্তু কতকগুলো সমস্যার জন্য সব আটকে ছিল। তাই সকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা মিটিং করেছি অঙ্কু গভর্নমেন্টের ইন্ত্রী সেক্রেটারি আর স্টেট ব্যাঙ্ক অব হায়দ্রাবাদের এক ডিরেক্টরের সঙ্গে।

সুনন্দা প্রশ্ন করেন, তারপর কি খেয়েদেয়ে রেষ্ট নিতে পেরেছিলে?

রেষ্ট নেব কী করে? ফ্যাক্টারীতে কি কম কাজ ছিল?

মিঃ চৌধুরী আরো বলেন, ফ্লাইটটা যে ধরতে পেরেছি, সেটাই আমার ভাগ্য।

সুনন্দা বলেন, চা শেষ করেই বাথরুমে যাও। ভালভাবে চান করলে ক্লান্তিভাব অনেক কমে যাবে।

হ্যাঁ, যাচ্ছি।

চান-টান করার পর মিঃ চোধুরী ড্রইংরুমে বসেই সুনন্দার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলেন, রাত্রে কি খাওয়াবে?

সুনন্দা জবাব দেবার আগেই দুর্বা বলে, রাত্রে তুমি তোমার প্রিয় খাবারই খেতে পাবে।

প্রিয় মানে?

সুনন্দা বলেন, রাত্রে ফ্রয়েড রাইস আর খুব বড় বড় চিংড়ির মালাইকারী… লাভলি।

এবার উনি চাপা হাসি হেসে বলেন, রাত্রে তোমাকে শুধু লাভলি খাবারই খাওয়াবো না, একটা দারুণ ভাল খবরও শোনাবো।

কী দারুণ ভাল খবর?

আগে খেয়ে দেয়ে নাও, তারপর বলব।

না, না, এখুনি বলল, কি দারুণ ভাল খবর।

এখনি বলতে হবে?

হ্যাঁ, এখনি বলতে হবে।

ঠিক আছে; তাহলে শোনো।

দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে চলে যায়।

সুনন্দার কাছে সবিস্তারে সবকিছু শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মিঃ চৌধুরী আনন্দে খুশিতে চিৎকার করেন, হোয়াট এ গ্রেট নিউজ! বিলিভ মী সুনন্দা, আমি জানতাম, ভাল ছেলের সঙ্গেই ময়নার বিয়ে হবে কিন্তু স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, এত ভাল পাত্র এত সহজে পাওয়া যাবে।

উনি সঙ্গে সঙ্গে গলা চড়িয়ে হাঁক দেন, ময়না, কাম হিয়ার।

দুর্বা ধীর পদক্ষেপে ওনার কাছে গিয়েই বলে, বাবা, ডাকছো কেন?

মিঃ চৌধুরী দু’হাত দিয়ে মেয়ের মুখোনা ধরে চোখ দুটো বড় বড় করে বলেন, মা, এত ভাল ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে খুব ভাল লাগছে।

উনি এক নিঃশ্বাসেই বলেন, ছেলেটাকে তোর সত্যি পছন্দ হয়েছে তো?

দূর্বা, বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে বলে, হ্যাঁ, বাবা, ঐ ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে বলে আমি খুশি কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি খুশি ছেলেকে আর দু’জন মা পেয়ে।

ও মুখ তুলে মিঃ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা, তুমি বিশ্বাস করো, এই তিনজনের কোন তুলনা হয় না।

ময়না, তোর কথা শুনে খুব ভাল লাগছে।

মিঃ চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গেই সুনন্দার দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমরা মাঝে মধ্যে ওদের টেলিফোন করো তো?

ওনার কথা শুনে সুনন্দা হাসতে হাসতে বলেন, করি মানে? সারাদিন কতবার টেলিফোন আসছে আর কতবার আমরা করছি, তার কি ঠিক-ঠিকানা আছে।

তাই নাকি?

তবে কী?

সুনন্দা না থেমেই বলেন, দাদা, ভারতীদি আর শিবানীদি এখন কত খুটিনাটি ব্যাপারেও যে ময়নার পরামর্শ নেন, তা তুমি ভাবতে পারবে না।

মিঃ চৌধুরী হো হো করে হেসে উঠেই প্রশ্ন করেন, খুটিনাটি ব্যাপারে মানে? দুর্বা একটু হেসে বলে, পরশু দিনের কথা তোমাকে বলি।

পরশু কি হয়েছিল?

.

অফিসে পৌঁছবার একটু পরই ছেলে আমাকে ফোন করলো।–

মা জননী, তুমি এখন বাড়ি আছে তো?

হ্যাঁ, আছি।

তুমি কোথাও বেরুবে কি?

না, না, আমি কোথাও বেরুব না।

ভালই হলো। ছেলে, তুমি কি আসবে?

না, মা জননী, আমি আসব না। আমি কিছু টাকা দিয়ে আমার ড্রাইভারকে তোমার কাছে পাঠিয়েছি। তোমাকে আমার একটা কাজ করতে হবে।

তুমি বলো, কি করতে হবে।

আমার যে টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট তিনিও একজন ভাল এঞ্জিনিয়ার। অফিসে এসে মনে পড়লো, আজ তার মেয়ের বিয়ে।

মেয়েটির জন্য প্রেজেনটেশান কিনতে হবে?

হ্যাঁ, মা জননী।

তুমি কি জানো, মেয়েটি কি করে বা কতদূর লেখাপড়া…।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, মেয়েটি ডাক্তারী পাশ করেছে গত বছরেই বিয়ে করছে ওরই এক সহপাঠী বন্ধুকে।

ছেলে, তাহলে তো মেয়েটিকে একটা ভাল শাড়িই দিতে হবে।

হ্যাঁ, মা জননী, তা তো দিতেই হবে।

ঠিক আছে, ড্রাইভার এলেই আমি দোকান গিয়ে শাড়ি কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

মা জননী, তোমার একটু কষ্ট হবে কিন্তু…

কষ্ট আবার কি? ছেলে বিয়ে বাড়ি যাবে আর আমি একটা শড়ি কিনে দিতে পারবো না?

শুনে মিঃ চৌধুরী, একটু হাসেন।

সুনন্দা স্বামীকে বলেন, তুমি তো মাত্র একটা ঘটনা শুনলে। এখন ওদের সব ব্যাপারেই ময়নার সাহায্য, ময়নার পরামর্শ চাই।

এখন বলল, আমাকে কবে ওদের ওখানে নিয়ে যাবে।

মিঃ চৌধুরী না থেমেই বলেন, মনে হচ্ছে। এখনই ছুটে যাই ওদের কাছে। ওনার কথায় মা আর মেয়ে হেসে ওঠে।

সুনন্দা বলেন, কালই আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবো, কবে তোমাকে নিয়ে ওখানে…

ইয়েস! ডোন্ট ডিলে!

.

ওরা গাড়ি থেকে নামতেই সুব্রতবাবু এক গাল হেসে অভ্যর্থনা করেন, আসুন, ভাই, আসুন।

উনি না থেমেই বলেন, এসো বৌমা, এসো মা জননী।

ভারতী আর শিবানী পাশেই ছিলেন।

শিবানী দুর্বার একটা হাত ধরে বলেন, শিল্পী, চলো ভিতরে যাই। ভারতী, তুই আমার দুই দাদা আর সুনন্দাকে নিয়ে আয়।

ভারতী বলেন, আমরা তোর পিছন পিছনই আসছি।

ওরা সবাই শিবানীর ড্রইংরুমে ঢুকতেই দূর্বা ওর বাবার একটা হাত ধরে একটু এগিয়ে যায়। সামনের মালা দেওয়া ছবিটা দেখিয়ে ও বলে, বাবা, এই হচ্ছে কাকুর ছবি।

মিঃ চৌধুরী অপলক দৃষ্টিতে দু’এক মিনিট ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বলেন, দুটো চোখ দেখলেই বোঝা যায়, উনি কত ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন।

হ্যাঁ, বাবা, ঠিক বলেছ।

দূর্বা মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, কাকুর মুখের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি শুধু সুন্দর ছিলেন না, অসাধারণও ছিলেন।

ময়না, যাঁরা অসাধারণ, তাঁদের চোখে-মুখে সৌন্দর্য ফুটে উঠবেই।

ঘরের অন্যান্যরা চুপ করে দাঁড়িয়ে।

দুর্বা আবার ওর বাবার হাত ধরে বলে, কাকুর ঘর দেখবে, এসো।

মিনিট দশেক পর দুর্বা ওর বাবাকে নিয়ে ড্রইংরুমে আসতেই সুব্রতবাবু হাসতে হাসতে মিঃ চৌধুরীকে বলেন, দেখছেন তো ভাই, আপনার মেয়ে আমাদের দুটো বাড়ির উপর কেমন একচ্ছত্র অধিকার বিস্তার করেছে?

মিঃ চৌধুরীও হাসতে হাসতে বলেন, ময়নার কাণ্ড দেখে তো তাই মনে হলো।

ঠিক সেই সময় সারদা সবার কফি নিয়ে হাজির। ওকে দেখেই দুর্বা বলে, সারদা মাসী, আমার ইলিশ হয়েছে তো?

তুমি আসছো আর ইলিশ হবে না, তাই কখনো হয়?

সুনন্দা সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন, দেখছ, তোমার মেয়ের কাণ্ড?

মিঃ চৌধুরী হাসতে হাসতে সুব্রতবাবুকে বলেন, দাদা, আমার মেয়ে কি আপনাদের সবাইকেই হাতের মুঠোয়…

ওনাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সুব্রতবাবু বলেন, ভাই, আমরা এখন পরাজিত সেনাপতি, উই আর প্রিজনার্স অব ওয়ার। আপনার মেয়ের কথা না। শুনে তো উপায় নেই আমাদের।

মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, ময়নাকে নিয়ে আপনারা বেশ নাটক জমিয়েছেন দেখছি।

ভারতী বলেন, নাটক বলে নাটক।

কফি খেতে খেতেই টুকটাক কথাবার্তা হয়। সুনন্দা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন, বাবাই তো অফিসের কাজে বোম্বে গিয়েছে তুমি ওর ছবি দেখবে?

হ্যাঁ, দেখাও।

শিবানী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি ওর ছবি আনছি।

উনি তাতাইয়ের ঘর থেকে বাবাইয়ের ছবি এনে মিঃ চৌধুরীর হাতে দিয়ে বলেন, দাদা, বাবাইসোনার ছবি দেখুন।

ছবিটা হাতে নিয়ে দু’এক মিনিট ভাল করে দেখেই একটু হেসে বলেন, খুবই সুন্দর দেখতে।

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, দাঁড়ান, আমাদের ছোট ছেলের ছবি নিয়ে আসি।

তাতাইয়ের ছবি দেখতে দেখতেই মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, একেও দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু চোখ দুটো দেখলেই মনে হয় একটু দুষ্টু আছে।

দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে হাসতে হাসতে বলে, বাবা, তাতাই একটু দুষ্টু না, মহা দুষ্ট ছেলে! ওর কাণ্ডকারখানা শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে।

কেন? ও কি করে?

সুব্রতবাবু সঙ্গে সঙ্গে বলেন, একবার বিকেলবেলার দিকে ও আমাকে বলল, চলো, জ্যেঠু একটু ঘুরে আসি। বৌমাকে বলল, আমাকে নিয়ে একটু বেরুচ্ছে। তারপর কি করলো জানেন?

কী?

আমাকে নিয়ে সোজা পুরী…

মিঃ চৌধুরী অবাক হয়ে বলেন, পুরী? মানে উড়িষ্যার…

হ্যাঁ, হ্যাঁ, উড়িষ্যার পুরী।

বাড়িতে কিছু না জানিয়েই ও আপনাকে পুরী নিয়ে গেল?

হাওড়া স্টেশন থেকে ওর বড়মাকে ফোন করে জানিয়েছিল, আমাকে নিয়ে পুরী যাচ্ছে।

তারপর?

আমরা দুজনেই এক জামা-প্যান্ট পরে বেরিয়েছি। তাছাড়া আমাকে পকেটে একটা পয়সাও নেই।

শুনে অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন সুব্রতবাবুর দিকে।

সুব্রতবাবু বলে যান, আমাকে নিয়ে সোজা বি. এন. আর. হোটেলে। তারপর চা খেয়েই বাজারে গিয়ে চার সেট করে পায়জামা পাঞ্জাবি-আন্ডার ওয়ার ছাড়াও রুমাল, টুথব্রাশ-টুথ পেস্ট আর সেভিং সেট কেনা হলো।

কি আশ্চর্য!

বিশ্বাস করুন ভাই, কি আনন্দে আর শান্তিতে যে ওখানে একটা সপ্তাহ কাটিয়েছি, তা বলতে পারবো না।

উনি থামতেই ভারতী একটু হেসে বলেন, এইতো গতবার এসে দুপুরবেলায় খাওয়া-দাওয়ার একটু আগেই তাতাই সোনা বলল, বড়মা, আমি জেঠুকে নিয়ে একটু ঘুরে আসছি।

ভারতী এইটুক বলতেই সুব্রত বাবু বলেন, আমাকে নিয়ে সোজা নিজামে; ওখানে নান আর চাপ খাবার পর নিউ এম্পায়ারের ম্যাটিনী আর লাইট হাউসে ইভনিং শো’তে দুটো খুব ভাল ছবি দেখার পর পার্ক স্ট্রীটে ডিনার…

ফিরলেন কখন?

রাত সাড়ে এগারটায়।

মিঃ চোধুরী সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন, ও বললেই আপনি এইরকম বেড়িয়ে পড়েন?

হ্যাঁ, ভাই, ও যা বলে, আমি তাই করি।

সত্যি আশ্চর্যের ব্যাপার।

সুব্রতবাবু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আসল কথা কি জানেন ভাই, তাতাই সোনা আমার একটা খেলনা, আমার একটা স্বপ্ন। ওর কোন কথা আমি রাখব না, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।

কিন্তু আচ্ছা খামখেয়ালী ছেলে।

কিন্তু ভাই, এই খামখেয়ালী ছেলেটাই এম. বি. বি. এস-এ সার্জারিতে রেকর্ড নম্বর পেয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছে।

মিঃ চৌধুরী প্রায় অবিশ্বাস্য সুরে বলেন, বলেন, কী? ও প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছে?

হ্যাঁ, ভাই, ও রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পেয়েছে।

মাই গড! রিয়েলী এ গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট।

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমরা তো আশা করছি, তাতাই সেনা এম. এস. পরীক্ষাতেও আবার প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল পাবে।

ওদের কথা শেষ হতেই দুর্বা বলে, কবে যে এই পাগলা ছেলেটার সঙ্গে দেখা হবে, আমি শুধু তাই ভাবি। ওকে একটু কাছে পাবার জন্য মন ছটফট করে।

ভারতী হাসতেই বলেন, দুর্বা, তোমার সব দুঃখ ও ঘুচিয়ে দেবে। ও যদি এক জামা-প্যান্টে জ্যেঠুকে নিয়ে পুরী যেতে পারে, তাহলে তোমাকে নিয়ে যে আমার এই ছেলেটা কি করবে, তা শুধু ভগবানই জানেন।

সুনন্দা বলেন, এই শিবানী, এর মধ্যে ছেলের চিঠি এসেছে?

শিবানী কিছু বলার আগেই ভারতী উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাতাই সোনার দুটো চিঠি এসেছে পর পর, আমি সে চিঠি আনছি।

এক মিনিটের মধ্যেই ভারতী দুটো খাম হাতে নিয়ে শিবানীর শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সুনন্দার পাশে বসেই একটু হেসে বলেন, তাতাই সোনার চিঠি পড়ছি।

হ্যাঁ, পড়ো।

প্রথম চিঠিতে লিখেছে-মা-বড়মা মা-বড়মা মা-বড়মা, তোমরা অবিলম্বে একটা বোয়িং এয়ারক্রাফট কিনে আমাকে পাঠাও। আমি রোজ আধ ঘণ্টার জন্য কলকাতা যাবো।

-তোমাদের তাতাই সোনা

সুনন্দা অবাক হয়ে বলেন, ব্যস! চিঠি শেষ?

হ্যাঁ, এই হলো প্রথম চিঠি। পরশু যে চিঠি এসেছে সেটা পড়ছি।…মা, মা, মা, এবার কলকাতায় গেলে তুমি দিনরাত আমার কোলে চড়ে ঘুরে বেড়াবে।

–তোমার তাতাই সোনা।

শুধু সুনন্দা না, সবাই হাসেন।

ভারতী বলেন, এবার আমাকে লেখা চিঠিটা পড়ছি।…বড়মা, বড়মা, বড়মা এক মিনিটের মধ্যে অপারেশন থিয়েটারে যাচ্ছি।

–তোমার তাতাই সোনা।

এত ছোট চিঠি কেউ লেখে?

এত ছোট চিঠি লেখার প্রধান কারণ, সত্যি ও বড্ড ব্যস্ত থাকে। আমার মনে হয়, তাতাই সোনা বোধহয় তিন-চার ঘণ্টার বেশি ঘুমুবারও সময় পায় না।

দুর্বা বলে, বলো কি বড়মা? এত কম ঘুমুলে তোত ওর শরীর খারাপ হয়ে যাবে।

এবার সুব্রতবাবু বলেন, মা জননী, ও পড়াশুনার ব্যাপারে যেমন সিরিয়াস, সেইরকমই সিনসিয়ার।

উনি একটু থেমেই বলেন, ভারত-বিখ্যাত সার্জেন প্রফেসর রাও হচ্ছেন ওখানকার ডীন অব দ্য ফ্যাকাল্টী অব সার্জারি।

মিঃ চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমি জানি প্রফেসর রাও-এর কথা। সত্যি ওনার মতো সার্জেন বোধহয় আমাদের দেশে আর নেই।

সুব্রতবাবু একটু হেসে বলেন, প্রফেসর রাও-এর মানস পুত্র হচ্ছে তাতাই সোনা। পড়াশুনা, লাইব্রেরী, আউট ডোর বা সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের ডিউটি ছাড়াও প্রফেসর রাও ওকে দিয়ে প্রত্যেক দিন দুতিনটে অপারেশন করাবেনই।

সুনন্দা চোখ দুটো বড় বড় করে বলেন, বাবা! ওকে তো তাহলে সত্যি অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়।

শিবানী একটু হেসে বলেন, তাতাই সোনা কলকাতায় এলেই ভারতী সব সময় ওকে একটু বেশি ঘুমুবার আর ভাল করে খাওয়া দাওয়ার কথা বললেই ও বলবে, ভাল করে খাওয়া-দাওয়া আর ঘুমুবার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে।

মিঃ চৌধুরী বলেন, দিদি, ও ঠিকই বলেছে।

শিবানী আবার বলেন, তাতাই সোনা হচ্ছে বাবাই সোনার অন্ধ ভক্ত। ও ওর ভাইদাকে যেমন পড়াশুনা পরিশ্রম করতে দেখেছে, ও নিজেও ঠিক সেইরকম…

মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, ও বুঝি দেবব্রতকে খুব ভালবাসে?

ভারতী হাসতে হাসতে বলেন, খুব ভালবাসে বললে কিছুই বলা হয় না। বাবাই সোনা ওর ফ্রেন্ড-ফিলজফার অ্যান্ড গাইড। বাবাই যা যা পছন্দ করে, ও ঠিক তাই পছন্দ করে।

উনি মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, ভাইদার গলা জড়িয়ে না শুয়ে ও কোনদিন ঘুমুতেও পারতো না।

সুনন্দা একটু হেসে বলেন, তার মানে ওরা দুজনে একেবারে জগাই-মাধাই।

শিবানী একটু হেসে বলেন, তার চাইতেও বেশি।

হঠাৎ সারদা এসে বলে, আপনারা কি শুধুই গল্প করবেন? খাওয়া-দাওয়া করবেন না?

ভারতী আর শিবানী একই সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, চলো।

খেতে বসার আগে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসেই সুনন্দা বলে, আচ্ছা তোমরা কি করেছ বলো তো? এত কিছু রান্না করার কোন মানে হয়?

শিবানী বলেন, আমাদের ভাই আজ প্রথম এলো আর তার জন্য একটু ভাল মন্দ রান্না করা হবে না?

দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে বলে, ও ছোট মা, সব রান্নাবান্নাই বাবার জন্য আমার জন্য কিছু হয়নি?

সুব্রতবাবু বলেন, মা জননী, আসলে, সবকিছুই হয়েছে তোমার জন্য; তোমার বাবা যেহেতু এসে পড়েছেন, তাই তাকেও একটু ভাগ দেওয়া হবে।

ছেলে, তুমি ঠিক বলেছ। আমি তো দেখছি, সবই আমার পছন্দ মতো হয়েছে।

যাইহোক খেতে বসেও নানা কথাবার্তা হয়।

মিঃ চৌধুরী সুব্রতবাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, জানেন দাদা, ময়না এম. এ. পড়তে শুরু করার পরও আমরা ওর বিয়ে নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা করিনি কিন্তু ও ফাইন্যাল ইয়ারে উঠতেই সুনন্দা মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠলো।

হ্যাঁ, বৌমা বলেছেন।

বিশাখাপত্তনমে একটি আই-এ-এস ছেলেকে আমার খুব পছন্দ হয়েছিল…

শিবানী ওনার কথার মাঝখানেই বলেন, আমাদের সবাইকে দুঃখ দিয়ে শিল্পী কি করে ঐসব ছেলেদের কাউকে বিয়ে করবে?

মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, যাইহোক দিদি, এমন অপ্রত্যাশিত ভাবে ময়না যে আপনাদের পুত্রবধূ হতে পারবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

সুব্রতবাবু একটু হেসে বলেন, ভুলে যাবেন না, ম্যারেজেস আর হেলড ইন দ্য হেভেন। এ একেবারেই বিধির বিধান।

দাদা, এখন আর তা অস্বীকার করতে পারব না।

উনি সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করেন, দাদা, বিয়ে কবে নাগাদ হবে, সে বিষয়ে কি কিছু চিন্তা করেছেন?

সুব্রতবাবু সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তাতাই সোনার ফাঁইনাল পরীক্ষা আগস্ট, সেপ্টেম্বরের যে কোন সময় হবে; তারপর শীতকালের দিকে মানে মাঘ-ফাঙ্গুনে…

হ্যাঁ, হ্যাঁ, শীতকালে বিয়ে হওয়াই ভাল।

বেশ আনন্দে কাটল সারাদিন। বিকেলবেলায় চা-টা খেয়ে বিদায় নেবার আগে মিঃ চৌধুরী সুব্রতবাবুর দুটি হাত ধরে বলেন, দাদা, আমি দিন দশেক কলকাতায় আছি। আপনি দুই দিদিকে নিয়ে দয়া করে সামনের রবিবার আমাদের ওখানে আসুন। আপনারা এলে আমরা খুব খুশি হব।

আরে ভাই, ওভাবে বলবেন না। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা আসব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *