কালান্তক লাল ফিতা

কালান্তক লাল ফিতা
শিবরাম চক্রবর্তী

আমি আত্মহত্যা করার পর দিনকতক তাই নিয়ে খুব জোর হৈচৈ হয়েছিল। গত ১৯৫৩ সালের দোসরা এপ্রিলের কাগজে-কাগজে কেবল এই কথাই ছিল। বেশি দিনের কাণ্ড নয়, অতএব তোমাদের কারো কারো মনে থাকতেও পারে।
আত্মহত্যার খবরটাই শুধু তোমরা পেয়েছ, কিন্তু কেন এবং কোন দুঃখে যে এ জন্য আর কাউকে না বেছে নিয়ে হঠাৎ নিজেকেই খুন করে বসলাম—তার নিগূঢ় রহস্য তোমরা কেউই জানো না। সেই মর্মন্তুদ কাহিনীই এখানে বলব। খুব সংক্ষেপেই সারব।
রেড টেপিজম কাকে বলে, জানো তোমরা হয়তো। যদি কোনো আপিসে কখনো গিয়ে থাক, তাহলে লাল ফিতার বাঁধা ফাইল নিশ্চয়ই তোমরা দেখেছ, ফাইলের পর ফাইল সাজানো, বড় বড় বান্ডিলের থাকও তোমাদের চোখে পড়েছে নিশ্চয়, কিন্তু সরকারি দপ্তরখানায় তোমরা কখনো ঢুকেছ কি না জানি না, আমার একবার সেখানে ঢোকার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। আর তখন ঐ রকম লাল ফিতার ফাইল—ফাইলের স্তূপাকার আর বান্ডিলের আন্ডিল দেখেই হঠাৎ কেমন আমার মাথা বিগড়ে গেল; আর আমি ঐ মারাত্মক কাণ্ড করে বসলাম।
লাল ফিতার একটা নিজস্ব ধর্ম আছে। পৃথিবীতে যত রংস আবিষ্কৃত হয়েছে, ইঁফফযরংস থেকে শুরু করে ৎযবঁসধঃরংস পর্যন্ত, জবফ-ঞধঢ়রংস তাদের কারুর থেকেই কম যায় না। আমার মতে লাল ফিতার ধর্মই সবচেয়ে বেশি পরাক্রান্ত, কেননা পরকে আক্রমণ করতে আর করে কাবু করতে এর জুড়ি নেই।
এখন আসল ঘটনায় আসা যাক—টিপু সুলতাই হন বা তাঁর বাবা হায়দার আলিই হন—অবশ্যি আজকের কথা নয়, কোম্পানির আমলের কাহিনী—যাই হোক, ওঁদের একজন ওয়ারেন হেস্টিংসের বেজায় বিরক্তির কারণ হয়ে পড়েন। হেস্টিংস সাহেব সেই বিরক্তি দমন করতে না পেরে হায়দার আলিকেই দমন করবেন—এই স্থির করলেন। স্থির করেই তিনি কর্নেল কূটকে সসৈন্যে পাঠিয়ে দিলেন হায়দারের উদ্দেশে। সেই সময় অর্থাৎ সতেরো শো সাতাত্তর খ্রিস্টাব্দের পয়লা এপ্রিল নাগাদ বিক্রমপুরের বলরাম পাঠকের সঙ্গে হেস্টিংসের সরকারের এই চুক্তি হয় যে, উক্ত পাঠক উক্ত কর্নেল কূটকে তাঁর গোরা পল্টনের রসদ বাবদ এক হাজার খাসি অথবা পাঁঠা সরবরাহ করবেন।
এই হলো গোড়ার ইতিহাস অথবা আদিম কাণ্ড।
এত আগে শুরু করবার কারণ এই যে, এর সঙ্গে আমার অন্তিম কাণ্ড ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্রমশই সেই রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।
এখন বলরাম পাঠক প্রাণান্ত পরিশ্রমে এক হাজার খাসি এবং পাঁঠা দিগ্বিদিক থেকে সংগ্রহ করে কলকাতার কেল্লার দরজা পর্যন্ত যখন তাড়িয়ে এনেছেন, তখন শুনতে পেলেন, কর্নেল কূট পাঁঠাদের জন্য প্রতীক্ষামাত্র না করে সসৈন্যে মহীশূরের দিকে সটকে পড়েছেন কখন।
বললাম ভাবিত হয়ে পড়লেন, কী করবেন? সরকারি চুক্তি তো অবহেলার বস্তু নয়। পাঁঠার জোগাড়ে টাকা জোগাতে হয়েছে (কম টাকা না!) আর অতগুলো পাঁঠা (কিংবা খাসিই হোক) একা কিংবা সপরিবারে খেয়ে খতম করা বলরামের একপুরুষের কম্ম নয়!
অনেক ভেবেচিন্তে বলরাম স্থির করলেন, পাঁঠাদের সমভিব্যহারে তিনিও কূটের অনুসরণ করবেন এবং কোথাও না কোথাও তাঁকে পাকড়াতে পারবেনই—তাহলেই তাঁর চুক্তি বজায় রাখা যাবে।
এতএব যেমন এসেছিলেন, তেমনি তিনি চললেন পাঁঠা তাড়িয়ে কূটের পেছন পেছন ধাওয়া করে মহীশূরের দিকে।
কটকে উপনীত হয়ে তিনি শুনলেন, কূট আরো দক্ষিণে বহরমপুরের দিকে পাড়ি মেরেছেন। তখন তিনিও পাঁঠাদের সঙ্গে নিয়ে বহরমপুরের উদ্দেশ্যে ধাবিত হলেন, কিন্তু সেখানেও পৌঁছলেন দেরি করে—দিন কয়েক আগে কূট চলে গেছেন হায়দ্রাবাদের অভিমুখে। অদ্ভুত এই কূটনীতি। কূটের চালচলনে বলরাম তো নাজেহাল হয়ে পড়লেনই, পাঁঠারাও হিমশিম খেয়ে গেল।
তারপর—তারপর আর কী? হায়দ্রাবাদ থেকে এলোর, এলোর থেকে মছলি-পত্তন, সেখান থেকে কোদ্দাপা (হাঁটতে হাঁটতে পাঁঠাদের চার পায়ে খিল ধরে গেল, বলরামের তো মোটে দুটো পা)। এই রকমে তিনি কর্নেলের পশ্চাদ্ধাবন করে চললেন কিন্তু গোদা পা নিয়ে কোদ্দাপা পার হয়েও কর্নেলের পাত্তা তিনি পেলেন না। পল্টনের নাগাল পাওয়া তাঁর আর হলো না। তিনি তো হয়রান হয়ে হাঁপিয়ে উঠলেনই, পাঁঠারাও ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল।
বাহাত্তর দিন এইভাবে দারুণ দৌড়াদৌড়ির পর মহীশূরের প্রায় সীমান্তে এসে অবশেষে যখন তিনি কর্নেল কূটের কাছাকাছি অর্থাৎ তাঁর ফৌজের ছাউনির চার-পাঁচ মাইলের মধ্যে পৌঁছেছেন তখন এক বর্গীর দল এসে তাঁর দলে হানা দিল।
আক্রান্ত হয়ে তাঁর দলবল এমন চ্যাঁ-ভ্যাঁ শুরু করল যে, সে আর কহতব্য নয়। সেই দারুণ গণ্ডগোল আর ছত্রভঙ্গের ভেতর পাঠক মহাশয় (পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে তখন তাঁরই এক সহযাত্রী ঝোল বানিয়ে সবেমাত্র মুখে তুলতে যাচ্ছিলেন!) ভাতের থালার অন্তরালে আত্মগোপন করতে যাবেন, এমন সময় অতর্কিতে বর্শাবিদ্ধ হয়ে তাঁকে প্রাণ ত্যাগ করতে হয়।
বর্গীরা পাঁঠাদের নিয়ে পিঠটান দিল। সেই পলায়নের মুখে কয়েকটা পাঁঠা (অথবা খাসি) পথ ভুলেই হোক বা বর্গীদের সঙ্গে না পছন্দ করেই হোক (সংখ্যায় অবশ্যি তারা মুষ্টিমেয়), কর্নেল কূটের ছাউনির মধ্যে গিয়ে পড়ে এবং ধৃত হয়। বলা বাহুল্য, কর্নেল সাহেব সসৈন্যে তাদের উদরসাৎ করতে দ্বিধা করেননি। সুতরাং রসদরূপে তাদের সদ্ব্যবহার হয়েছিল বলতে হবে। এই রূপে বীর বলরাম পাঠক মারা গিয়েও পাঁঠাদের সাহায্যে কোনো প্রকারে আংশিকভাবে নিজের চুক্তি বজায় রেখেছিলেন।
পাঠক মহাশয় মহীশূর মহাপ্রস্থানের প্রাক্কালেই সরকারি চুক্তিপত্রটি তাঁর ছেলে বাবুরামকে উইল করে দিয়ে যান। বাবুরাম তাঁর বাবা মারা যাওয়ার খবর পাবামাত্র নিম্নলিখিত বিলটি ওয়ারেন হেস্টিংসের দরবারে পেশ করেন, করবার পর তিনিও খতম হন। বিলটি এইরূপ—
মহামান্য কম্পানি সরকার বরাবরেষু-বিক্রমপুরের বাবু বললাম পাঠক, সম্প্রতি বিগত, উক্ত মহাশয়ের প্রাপ্য সম্পর্কে হিসাব … হিঃ—
বাবুরাম তো মরলেন, কিন্তু মরবার আগে তাঁর ভাগনে ত্রিবিক্রম মহাপাত্রকে ডেকে তাঁর ওপর ভার দিয়ে গেলেন বিলের টাকাটা আদার করার। ত্রিবিক্রম উপযুক্ত পাত্র; আদায়ের জন্য তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বিক্রমের সূত্রপাতেই তাঁকে দেহ রক্ষা করতে হয়। তাঁর থেকে দিগম্বর তরফদারের হাতে এলো ঐ বিল। কিন্তু তিনিও বেশিদিন টিকলেন না। তস্যভ্রাতা সুদর্শন তরফদার ঐ উত্তরাধিকার সূত্রটি লাভ করলেন। কিছুদূর ঐ সূত্র টেনেও তিনি, এমনকি খাজাঞ্চিখানার সপ্তম সেরেস্তাদার পর্যন্ত তিনি পৌঁছেছিলেন, কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে কালের কঠোরহস্ত এমন আদর্শ-অধ্যবসায়ের মাঝখানে অকস্মাৎ পূর্ণচ্ছেদ টেনে দিল।
সুদর্শন তাঁর এক আত্মীয়ের হাতে এই বিল সমর্পণ করে যান, সে বেচারা তার ঠেলায় মাত্র পাঁচ হ্না পৃথিবীতে টিকতে পারল। তবে এই অল্প সময়ের ভেতরেই সে রেকর্ড রেখে গেছে। লাল ফিতা দপ্তরখানার তেরো নম্বর সেরেস্তা সে পার হয়েছিল। তার উইলে এই বিল সে নিজের মামা আনন্দময় চৌধুরীকে উৎসর্গ করে যায়। আনন্দময়ের পক্ষে এই আনন্দের ধাক্কা সামলানো সহজ হয়নি। তারপর খুব অল্পদিনই তিনি এই ধরাধামে ছিলেন। অন্তিম নিঃশ্বাসের আগে তাঁর বিদায়-বাক্য হচ্ছে এই—’তোমরা আমার জন্যে কেঁদো না, বড় আনন্দেই আমি যেতে পারছি। মৃত্যু—হ্যাঁ—মৃত্যুই আমার পক্ষে এখন একমাত্র কাম্য।’
তিনি তো মরে বাঁচলেন, কিন্তু মেরে গেলেন আরো অনেককে। তারপর সাতজনের দখলেই এই বিল আসে, কিন্তু তাদের কেউই আর এখন ইহলোকে নেই। সবশেষে এই বস্তু এলো আমার হাতে, আমার এক মামার হাত হয়ে।
আমার দূর সম্পর্কের খুড়তুতো মামা—গুরুদাস গাঙ্গুলী—হঠাৎ এলাহাবাদ থেকে আমাকে তার পাঠালেন। কোনোদিনই যে আমাদের মধ্যে প্রাণের টান ছিল, এমন কথা বলা যায় না; বরং বলতে গেলে বলতে হয়, বরাবরই তিনি আমার প্রতি অহেতুক বিরাগ পোষণ করতেন; কখনো তিনি সইতে পারতেন না আমাকে, চিরকাল এইটেই দেখেছি, কাজেই টেলিগ্রাম পেয়ে অবাক হয়ে ছুটলাম। গিয়ে দেখলাম, তিনি মৃত্যুশয্যায়। কিন্তু অবাক হবার তখনো বুঝি কিছুটা বাকি ছিল। তিনি তো সর্বান্তকরণে আমাকে মার্জনা করলেনই, এমনকি তাঁর প্রিয়পাত্রদের আর নিজের প্রিয়পুত্রদের বঞ্চিত করেই এই মূল্যবান সম্পত্তি অশ্রুপূর্ণ নেত্রে আমার হাতে সঁপে দিয়ে গেলেন।
আমার কবলে আসা পর্যন্ত এর ইতিহাস হচ্ছে এই। মামাতো ভাইদের ডবল-শোকাতুর করে একুশ হাজার টাকার এই বিল নিয়ে তো আমি লাফাতে লাফাতে কলকাতা ফিরলাম।
ফিরেই উঠেপড়ে লেগে গেলাম টাকা উদ্ধারের চেষ্টায়। এক-আধ টাকা নয়, একুশ হাজার! ইয়াল্লা!
প্রথমেই গিয়ে লেজিস্লেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করলাম। কার্ড পাঠালেই কিছু পরে আমাকে তাঁর খাসকামরায় নিয়ে গেলেন।
আমাকে দেখবামাত্র তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘হ্যাঁ, কী দরকার আমার কাছে? আমার সময় খুব কম, ভারি ব্যস্ত আমি; তা কী করতে পারি আমি তোমার জন্যে বলো দেখি?’
সবিনয়ে বললাম, ‘আজ্ঞে হুজুর, সতেরো শো সাতাত্তর খ্রিস্টাব্দের পয়লা এপ্রিল তারিখে বা ঐ রকম সময়ে বিক্রমপুর জিলার বাবু বলরাম পাঠক কর্নেল কূট সাহেবের সঙ্গে মোট এক হাজার পাঁঠা কিংবা খাসি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন—’
এই পর্যন্ত শোনামাত্র তিনি আমাকে বিদায় নিতে বাধ্য করলেন। এর বেশি কিছুতেই তাঁকে শোনানো গেল না। আমাকে থামিয়ে দিয়ে তিনি তাঁর টেবিলের কাগজপত্রে এমন গভীরভাবে মন দিলেন যে, স্পষ্ট বোঝা গেল—বলরাম, আমার বা পাঁঠার—কারো ব্যাপারেই তাঁর কিছুমাত্র সহানুভূতি নেই।
পরের দিন আমি কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে মুলাকাত করলাম।
‘কী চাই?’ দেখেই আমাকে প্রশ্ন হলো তাঁর।
‘আজ্ঞে মহাশয়, সতেরো শো সাতাত্তর খ্রিস্টাব্দের পয়লা এপ্রিল নাগাদ বিক্রমপুর জেলার বাবু বলরাম—’
তিনি আমাকে বাধা দিলেন, ‘আমার মন্ত্রিত্ব তো মাত্র তিন বছরের, তিন শতাব্দীর তো নয়! আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন।’
তবে? তিন শো বছরের প্রাচীন লোক আর কে আছে এখন? কার কাছে যাব আমি? ওয়ারেন হেস্টিংসও তো এখন বেঁচে নেই। তবে? তাহলে? আমি মনে মনে ভাবি।
কী করব? নমস্কার করে সেখান থেকে সরে পড়লাম।
পরের দিন ভয়ানক ভেবেচিন্তে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়ে হাজির হলাম। তিনি মন দিয়ে আনুপূর্বিক শুনলেন। একটু চিন্তাও করলেন মনে হলো। শেষে বললেন, ‘চতুষ্পদ পাঁঠা তো? তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী সম্পর্ক? তারা তো আর আমাদের ছাত্র না! ও ব্যাপারে আমরা কী করতে পারি বলো?’
অগত্যা সেখান থেকেও চলে আসতে হলো।
কন্ট্রাক্ট নিয়ে করপোরেশন চলে, এই রকম একটা কথা কানে এসেছিল, সেইখানেই হয়তো এই বিলের ব্যবস্থা না হোক, এর সুরাহার একটা হদিস মিলতে পারে, এই রকম ভেবে মেয়রের সঙ্গে দেখা করলাম তার পরদিন।
‘মহাশয়, সতেরো শো সাতাত্তর খ্রিস্টাব্দের পয়লা এপ্রিল বা ওর কিছু আগে বা পরে বিক্রমপুর জিলানিবাসী, সম্প্রতি বিগত শ্রীযুক্ত বাবু বলরাম পাঠকের সঙ্গে কর্নেল কূট সাহেবের এক চুক্তি হয় যে—’
এই পর্যন্ত কোনো রকমে এগোতে পেরেছি, মেয়র মহাশয় আমাকে থামিয়ে দিলেন—’কর্নেল কূটের সঙ্গে করপোরেশনের কী? ওসব ব্যাপার এখানে নয়। তা ছাড়া, কোনো রাজনৈতিক কূটনীতির মধ্যে আমরা নেই।’
সবাই একই কথা বলে। এখানে নয়, ওখানে নয়, সেখানে নয়,—তবে কোন্খানে? চুক্তি হয়েছিল, এ তো আলবত; সে চুক্তি পাঁঠাদের তরফ থেকে যদ্দূর সম্ভব বজায় রাখা হয়েছে। এখন টাকা দেবার বেলায় এইভাবে দায় এড়ানোর অপচেষ্টা আমার আদপেই ভালো লাগে না। এ যেন আমার একুশ হাজারের দাবি না মিটিয়ে টাকাটা মেরে দেবার মতলব! আমাকেই দাবিয়ে মারার ফিকির।
পরদিন জেনারেল পোস্টাপিসের দরজায় গিয়ে হাজির হলাম। পোস্টমাস্টার জেনারেল তখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর মোটরের সম্মুখে গিয়ে ধরনা দিয়ে পড়লাম।
‘কী চাও বাপু, চাকরি?’ গাড়ির জানালা দিয়ে তিনি মুখ বাড়ালেন—’দুঃখের বিষয়, এখন কিছুই খালি নেই।’
‘আজ্ঞে না চাকরি নয়।’
ভরসা পেয়ে তখন তিনি আরো একটু মুখ বাড়ান, ‘তবে কী চাই?’
‘আজ্ঞে ১৭৭৭ সালের ১লা এপ্রিল তারিখে—’
‘১৭৭৭ সাল?’ ঈষৎ যেন ভ্রূকুঞ্চিত হলো ওঁর— ‘সে তো এখানে নয়, ডেড লেটার আপিসে। সেখানে খোঁজ করো গিয়ে।’
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মোটর দিল ছেড়ে।
এরপর আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম। যেমন করে পারি এই বিলের কিনারা করবই, এই আমার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা হলো। যদি প্রাণ যায় সেই দুশ্চেষ্টায়, সেও স্বীকার। হয় বিলের সাধন, নয় শরীর পাতন। বিল নিয়ে আমি দিগ্বিদিকে হানা দিতে লাগলাম; একে-ওকে ধড়পাকড় শুরু করে দিলাম তারপর।
কোথায় না গেলাম? ক্যাম্বেল হাসপাতাল, গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল, ডেড লেটার আপিস, কমার্শিয়াল মিউজিয়াম, মেডিক্যাল কলেজ, ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি, টেকস্টাইল ডিপার্টমেন্ট, টেঙ্ট্বুক কমিটি, পলতা ওয়াটার ওয়ার্কস—কত আর নাম করব? আলিপুরের আবহাওয়াখানা থেকে আরম্ভ করে (অ্যাসপ্ল্যানেডের ট্রাম ডিপোর আপিস ধরে) বেলগাছের ভেটারিনারি কলেজ পর্যন্ত কোনখানে না ঢুঁ মারলাম। এক কথায়, এক জেলখানা ছাড়া কোথাও যেতে আর বাকি রাখলাম না।
ক্রমশ আমার বিলের ব্যাপারে কলকাতার কারু আর অবিদিত রইল না। টাকাটা কেউ দেবে কি না, কে দেবে এবং কেনই বা দেবে, আর যদি সে না দেয় তাহলেই বা কী হবে, এই নিয়ে সবাই মাথা ঘামাতে লাগল; খবরের কাগজে কাগজেও হৈচৈ পড়ে গেল দারুণ। এক হাজার পাঁঠা আর একুশ হাজার টাকা—সামান্য কথা তো নয়। ভাবতে গেলে আপনা থেকেই জিহ্বা লালায়িত আর পকেট বিস্ফারিত হয়ে ওঠে।
অবশেষে একজন অপরিচিত ভদ্রলোকের অস্বাক্ষরিত পত্রে একটু যেন আশার আলোক পাওয়া গেল।
তিনি লিখেছেন—’আমি আপনার ব্যথার ব্যাথী। আপনার মতোই ভুক্তভোগী একজন। আমারও এক পুরনো বিল ছিল, এখন তা খালে পরিণত হয়েছে। এখন আমি সেই খালে সাঁতার কাটছি, কিন্তু কতক্ষণ কাটব? কতক্ষণ কাটতে পারব আর? আমি তো শ্রীবোকা ঘোষ নই! শিগগিরই ডুবে যাব, এরূপ আশা পোষণ করি। যাই হোক, আপনি সরকারি দপ্তরখানাটা দেখেছেন একবার?’
তাই তো, ঐটেই তো দেখা হয়নি। গোলেমালে অনেক কিছুই দেখেছি—দেখে ফেলেছি, কেবল ঐটা বাদে। খোঁজখবর নিয়ে ছুটলাম। দপ্তরখানায় গিয়ে সোজা একেবারে সেখানকার বড়বাবুর কাছে আমার সেলাম ঠুকলাম।
‘মশাই, বিগত ১৭৭৭ সালের ১লা এপ্রিলে বিক্রমপুরে স্বর্গীয়—’
‘বুঝতে পেরেছি, আর বলতে হবে না! আপনি সেই পাঁঠা তো?’
‘আজ্ঞে, আমি পাঁঠা…? আমি…’ আমতা আমতা করি আমি— ‘আজ্ঞে, পাঁঠা ঠিক না হলেও পাঁঠার তরফ থেকে আমার একটা আর্জি আছে। বিগত ১৭৭৭ সালের পয়লা—’
‘জানি, সমস্তই জানি। ওর হাড়হদ্দ সমস্তই আমার জানা। সব এই নখদর্পণে। কই, দেখি আপনার কাগজপত্র?’
এ রকম সাদর আপ্যায়ন এ পর্যন্ত কোথাও পাইনি। আমি উল্লসিত হয়ে উঠি। বলরামের আমলের বহু পুরনো চুক্তিপত্রটি বাড়িয়ে দিই। বাবুরামের আমলের বিলও। হাতে নিয়ে দেখেশুনে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, এই কনট্রাক্টই বটে।’
তাঁর প্রসন্ন হাসি দেখে আমার প্রাণে ভরসার সঞ্চার হয়। হ্যাঁ, এতদিনে ঠিক জায়গায়, একেবারে যথাস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি বটে। তখন সেই ভুক্তভোগীটিকে আমি মনে মনে ধন্যবাদ জানাই।
তার পরই তিনি কাগজপত্র ঘাঁটতে শুরু করলেন। এ-ফাইল সে-ফাইল, এ-দপ্তর, সে-দপ্তর। এর লাল ফিতা খোলেন, ওর লাল ফিতা বাঁধেন। দপ্তরিকে তলব দেন, আরো ফাইল আসে। আরো আরো ফাইল। গভীরভাবে দেখাশোনা চলে। আবার তলব, আরো আরো বহু পুরনো বান্ডিলরা এসে পড়ে।
হ্যাঁ, এইবার কাজ এগুচ্ছে বটে। আমারই কাজ। সমস্ত মন ভয়ানক খুশিতে ভরে ওঠে। সারা কড়িকাঠ জুড়ে যেন ঝমাঝম আওয়াজ শোনা যায় টাকার। এক্ষুণি সশব্দে আমার মাথায় ভেঙে পড়ল বলে। আমিও সেই দৈব দুর্ঘটনার তলায় চাপা পড়বার জন্যে প্রাণপণে প্রস্তুত হতে থাকি। হৃদয়কে সবল করি।
অনেক অন্বেষণের পরে বলরামী চুক্তিপত্রের সরকারি ডুপ্লিকেটের অবশেষে আত্মপ্রকাশ হয়। অর্থাৎ আত্মপ্রকাশ করতে বাধ্য হয়।
পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সব মিলিয়ে দেখে তিনি ঘাড় নাড়েন, ‘কাজ তো অনেকটা এগিয়েই রয়েছে, তা এতদিন আপনারা কোনো খবর নেননি। কেন?’
‘আজ্ঞে, আমি নিজেই এ বিষয়ের খবর পেয়েছি খুব অল্পদিন হলো।’
সরকারি দপ্তরের ডুপ্লিকেটটা সসম্ভ্রমে হাতে নিই। হ্যাঁ, এই সেই দুর্ভেদ্য চক্রব্যুহ, যার দরজায় মাথা ঠুকে আমার ঊর্ধ্বতন চতুর্দশ পুরুষ ইতিপূর্বে গতাসু হয়েছেন এবং আমিও প্রায় যাবার দাখিল! ভাবের ধাক্কায় আমার সমস্ত অন্তর যেন উথলে ওঠে—যাক, এই রক্ষে যে, আমাকে তাঁদের অনুসরণ করতে হবে না। এ আনন্দ আমার কম নয়! আমি তো বেঁচেই গেছি এবং আরো ঘোরতরভাবে বাঁচব অতঃপর—বালিগঞ্জের বড়লোকদের মধ্যে সটান নবাবি স্টাইলে। পুলকের আতিশয্যে কাবু হয়ে পড়ি আমি।
ভদ্রলোক সবই উল্টেপাল্টে দেখেন—হ্যাঁ, সুদর্শন তরফদার। সুদর্শনবাবুই তো কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছেন দেখছি। সাতটা সেরেস্তায় সই তাঁর সময়েই হয়েছে। তাঁর পরে এলেন—কী নাম ভদ্রলোকের। ভালো পড়াও যায় না। পুরন্দর পত্রনবিশ? হ্যাঁ, পুরন্দরই বটে, তা তিনিও তো ছটা সই বাগাতে পেরেছেন দেখছি। আর বাকি ছিল মাত্র চারটে সই। চারজন বড়কত্তার। তার পরের ভদ্রলোক তো আনন্দময় চৌধুরী। আপনার কে হন তিনি?’
‘আজ্ঞে তা ঠিক বলতে পারব না।’ আমি নিজের মাথা চুলকাই—’অনেকদিন আগেরকার কথা। তবে কেউ হন নিশ্চয়ই।’
‘তা, তিনিও দুটো সই আদায় করেছেন। বাকি ছিল আর দুটো সই। তিনি আর একটু উঠেপড়ে লাগলেই তো কাজটা হয়ে যেত। তা, তিনি আর চেষ্টা করলেন না কেন? এ রকম করে হাল ছেড়ে দিলে কি চলে?’
‘খুব সম্ভব তিনি আর চেষ্টা করতে পারলেন না। কারণ তিনি মারা গেলেন কিনা। চেষ্টা করতে করতেই মারা গেলেন।’
‘ও, তাই নাকি? কিন্তু তারপরে কাজ আর বিশেষ এগোয়নি। দুজন বড়কত্তার সই এখনো বাকিই রয়েছে। তবে এইবার হয়ে যাবে সব।’
আমি উৎসাহিত হয়ে উঠলাম—’আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, যাতে একটু তাড়াতাড়ি হয়, অনুগ্রহ করে—’
তিনি বাধা দিয়ে বললেন, ‘দেখুন, তাড়াতাড়ির আশা করবেন না। এসব হচ্ছে সরকারি কাজ—দরকারি কাজ—বুঝতেই তো পারছেন? অতএব ধীরেসুস্থে হবে। স্লোলি, বাট শিওরলি। এর বাঁধাদস্তুর চাল আছে, সবই রুটিনমাফিক—একটু এদিক-ওদিক হবার জো নেই। একেবারে কেতাদুরস্ত।’ এই বলে মৃদ্যু হাস্যে তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিলেন—’আস্তে আস্তে হয়ে যাবে সব, কিচ্ছু ভয় নেই আপনার।’
অভয় পেয়ে আমার কিন্তু হৃৎকম্প শুরু হলো। ‘তবু একটু স্মরণ রাখবেন অধমকে, যাতে ওর মধ্যেই একটু চটপট্—’ করুণ সুরে বলতে গেলাম।
‘বলতে হবে না, বলতে হবে না অত করে। সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকে বৈকি। এতে বড় দপ্তরখানা তবে হয়েছে কী জন্যে বলুন? আর আমরাই বা এখানে বসে করছি কী? রয়েছি কী জন্যে? তবে আর একবার আগাগোড়া সব চেক হবে কিনা, সেইটুকু হলেই যথাসময়েই আপনি কল পাবেন। আপনাকে বারবার আসতে হবে না কষ্ট করে, আমরাই চিঠি দিয়ে জানাব আপনাকে। আর দুটো সই বৈ তো নয়। এ আর কী?’
অন্তরে বল সঞ্চয় করে বাড়ি ফিরি। তারপর একে একে দশ বছর কেটে যায়। খবর আর আসে না। বিলের ভাবনা ভেবে ভেবে চুল-দাড়ি সব পেকে ওঠে,—পেকে ঝরে ফাঁকা হয়ে যায় সব। কেবল থাকে—মাথার ওপরে টাক, আর মাথার মধ্যে টাকা; কিন্তু খবর আর আসে না।
বিলক্ষণ দেরি দেখে আর বিলের কোনো লক্ষণ না দেখে মাঝেমধ্যে আমি নিজেই তাড়া করে যাই, খবরের খোঁজে হানা দিই গিয়ে। ‘অনেকটা এগিয়েছে’, ‘আর একটু বাকি’, ‘আরে হয়ে এলো মশাই, এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন’, ‘ঘাবড়াচ্ছেন কেন, হয়ে যাবে—হয়ে যাবে।’ ‘সময় হলেই হবে, ভাববেন না, ঠিক হবে!’ ‘সবুরে মেওয়া ফলে, জানেন তো?’ ইত্যাদি সব আশার বাণী শুনে চাঙ্গা হয়ে ফিরে আসি। তারপর আবার বছর ঘুরে যায়।
অবশেষে ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে শেষ সপ্তাহে বহুবাঞ্ছিত চিঠি এলো। তাতে পরবর্তী মাসের পয়লা তারিখে উক্ত বিল সম্পর্কে দপ্তরখানায় দেখা করার জন্যে আমাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
যাক, এত দিনে তাহলে বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। আমি মনে মনে লাফাতে শুরু করে দিলাম। আর কী, মার দিয়া কেল্লা, কে আর পায় আমায়! সটান বালিগঞ্জ! কি সোজা নিউ ইয়র্ক! কিংবা হলিউডই বা মন্দ কী? জীবনের ধারাই এবার পাল্টে দেব বিলকুল—বিলের যখন কূল পেয়েছি? হ্যাঁ। আধঘণ্টা পরে পা মচ্কে বসে পড়ার পর খেয়াল হলো যে, ও হরি! কেবল মনেই নয়, বাইরেও লাফাতে শুরু করেছিলাম কখন!
পয়লা এপ্রিল তারিখে দুরু দুরু বক্ষে দপ্তরখানার দিকে এগোলাম। সতেরো শো সাতাত্তর সালের পয়লা এপ্রিল যে নাটক শুরু হয়েছিল, আজ উনিশ শো তিপান্ন সালের আর-এক পয়লা এপ্রিলে সেই বিরাট ঐতিহাসিক পরিহাসের যবনিকা পড়ে কিনা, কে জানে।
দপ্তরখানার সেই বাবুটি সহাস্যমুখে এগিয়ে আসেন: ‘ভাগ্যবান পুরুষ মশাই আপনি! কাজটা উদ্ধার করেছেন বটে!’ বলে সজোরে আমার পিঠ চাপড়ে দেন একবার।
‘একুশ হাজার পাব তো মশাই?’ ভয়ে ভয়ে আমি জিজ্ঞেস করি।
‘একুশ হাজার কী মশাই!’ এই দেড় শো বছরে সুদে-আসলে আড়াই লাখের ওপর দাঁড়িয়েছে যে! বলছি না—আপনি লাকি!’ তিনি বলেন।
‘আড়াই লাখ!’ আমার মাথা ঝিম ঝিম করে—’তা চেকটা আজই পাচ্ছি তাহলে তো?’
‘চেক? এখনই? তবে হ্যাঁ, আর বেশি দেরি নেই।’
‘বেশ, আমি অপেক্ষা করছি—সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত।’
‘না আজ হবার আশা কম। আপনি শুধু সই করে যান এখানে। পরে আমরা খবর দেব আপনাকে।’
অ্যাঁ, এখনো পরে? পরে খবরের ধাক্কায় তো দশ বছর কাটল—আবার পরে খবর? সসঙ্কোচে বলি—’আজ্ঞে, আজ আপনাদের অসুবিধেটা কী হচ্ছে জানতে পারি কি?’
‘এখনো একটা সই বাকি আছে কিনা!’ গূঢ় রহস্যটা অগত্যা তিনি ব্যক্ত করেন।
‘এখনো একটা সই বাকি।’ শুনে আমার মাথা ঘুরে যায়। এখনো আরো একটা! তবেই হয়েছে। ও আড়াই লাখ আমার কাছে তাহলে আড়াই পয়সার শামিল।
ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখের দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণে একটু হাসবার ভান করি—’পয়লা এপ্রিল বলে পরিহাস করছেন না তো মশাই?’
‘না-না, পরিহাস কিসের।’ তিনি গম্ভীরভাবেই বলেন—’শুধু সেই ফাইন্যাল সইটা হলেই হয়ে যায়।’
ততক্ষণে আমার মাথায় খুন চেপে গেছে; আমি বলতে শুরু করেছি—’তবে দিন মশাই, দিন আমাকে কাগজ-কলম! আমার এই বহুমূল্য সম্পত্তি আমি এই দণ্ডে আপনাকে ও ভগবানকে সাক্ষী রেখে উইল করে দিয়ে যাচ্ছি আমার জাতিকে, মানে—আমার দেশবাসীকে—অনাগতকালের যত ভারতীয়দের। দেখুন আমরা সব নশ্বর জীব। অল্প দিনের আমাদের জীবন, বেশিদিন অপেক্ষা করা আমাদের পক্ষে অসাধ্য। বিল মানেই বিলম্ব—বিলক্ষণ বিলম্ব। কিন্তু জাতির পরমায়ু—কেবল সে-ই অপেক্ষা করতে পারে অনন্তকাল, মানে—যদ্দিন তার খুশি।’
এই কথা বলে সামনের টেবিল থেকে পেন্সিল-কাটা ছুরিটা তুলে আমূল বসিয়ে দিই আমার নিজের বুকে অম্লানবদনে।
‘উইল করে দিচ্ছি বটে, তবে আমার স্বদেশবাসী যেন না ভুল বোঝে যে, তাদের ওপর আমার খুব রাগ ছিল, তারই প্রতিশোধ নেবার মানসে এই বিল তাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম—আমাকে তারা যেন মার্জনা করে।’ এই বলে অবশেষে সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস দিয়ে আমার অন্তিম বাণীর উপসংহার করি। আড়াই লাখের বিল আমার দেশবাসীকে বিলিয়ে দিয়ে সেই-ই আমার শেষ বিলাসিতা। বিল-আশীতার চরম!
মান্যবর, কর্নেল কূট সাহেবের ফৌজের রসদের জন্য এক হাজার পাঁঠা কিংবা খাসি প্রত্যেকটির মূল্য পাঁচ টাকা হিসেবে— ৫০০০ টাকা
মহীশূর পর্যন্ত তাদের যাতায়াত এবং খোরপোষের খরচা বাবদ ৬০০০ টাকা
একুনে মোট —২১০০০ টাকা

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *