উইলিয়াম শেক্সপিয়ার : ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তি

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার : ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তি

ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তি আর সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধেয় কবি ও সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকে মাত্র তেরো বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। একদিন শ্রেণীকক্ষে বালক শেক্সপিয়ার আনমনা হয়ে গালে হাত দিয়ে জানলার খিড়কি গলিয়ে নীলাকাশে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কিছু একটা ভাবছিলেন। তা দেখে শিক্ষক তাকে বলেছিলেন, বাবা, তোমার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত অন্ধকার। বলা বাহুল্য শিক্ষকের এই ভবিষ্যদ্বাণী যে সঠিক হয় নি তা আপনারা সকলেই জানেন।

স্কুল ছেড়ে বালক শেক্সপিয়ার গরুর দুধ দোয়াতেন, ভেড়ার লোম ছাড়াতেন, মাখন বানাতেন আর কাঁচা চামড়া প্রস্তুত করতে বাবাকে সাহায্য করতেন। তাঁদের পরিবারের মধ্যে বাবা-মা, বোন, নাতনী কেউই লিখতে পড়তে জানতেন না। অথচ তিনিই বিশ্বসাহিত্যাঙ্গনে এক অভূতপূর্ব প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

শেক্সপিয়ার যতদিন জীবিত ছিলেন তখন তাঁর প্রতি এবং সৃষ্টির প্রতি কেউ মনোযোগ দেয় নি। তার মৃত্যুর একশ বছর পরেও তার নাম ছিল প্রায় অজ্ঞাত। তারপরে তার সম্পর্কে লক্ষ লক্ষ শব্দ রচনা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যত লেখক হাঁসের পালকের কলম দিয়ে তাদের বিদ্যে শানিয়েছেন তাদের সবার সেক্সপিয়ারের উপরই আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে সর্বাপেক্ষা অধিক। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক তাঁর জন্মতীর্থ দর্শনে যান। তাদের মধ্যে আমিও একজন-আমি খোলা মাঠের মধ্য দিয়ে স্লেটারিতে হেঁটে যেতাম, যে মাঠ দিয়ে এক আনাড়ী গ্রাম্যবালক একসময় দ্রুত হেঁটে যেত তার প্রণয়িনী এ্যান ওয়েটলির সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। শেক্সপিয়ার ভাবতেও পারেন নি যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লোকে তার গান গাইবে।

শেক্সপিয়ারের জীবনে তার বিয়েটা ছিল ট্রাজেডিপূর্ণ। তিনি এ্যান ওয়েটলিকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন কিন্তু তাঁর চন্দ্রালোকিত সুষমাপূর্ণ রজনীগুলির শেষদিকে তিনি এ্যান হেথাওয়ে নামী অপর এক তরুণীর সাহচর্যে তার নিয়তিকে প্রলুব্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ মহিলা যখন জানতে পারল যে তার প্রেমিক আরেকজনকে বিয়ে করার জন্য অনুমতিপত্র নিয়েছেন তখন সে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। শেক্সপিয়ারের স্ত্রী ছিল তার চেয়ে আট বছরের বড় এবং প্রথম থেকেই তাদের বিয়েটা ছিল একটা নিদারুণ প্রহসন। তাই শেক্সপিয়ার তাঁর অনেক নাটকে ছেলেদেরকে নিজের চেয়ে বেশি বয়সের মহিলাদের বিয়ে করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

শেক্সপিয়ার যখন মারা যান তখন সে সময়কার বিচারে তিনি একজন ধনী ব্যক্তি। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় লন্ডনে অতিবাহিত করেছিলেন। লন্ডন আসার পাঁচ বছরের মধ্যে একজন অভিজ্ঞ অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ও অর্থ উপার্জন করতে থাকেন। তিনি দুটো থিয়েটারের শেয়ার ক্রয় করেন। এবং চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে প্রতি বছরে প্রায় ২০,০০০ ডলার করে আয় করতে থাকেন। কিন্তু তিনি তার উইলে স্ত্রীর নামে একটি সেন্টও লিখে যান নি। তার স্ত্রীর কপালে ছিল তার বিষয় সম্পত্তির মধ্যে শুধু একটা বড় পালঙ্ক। তাও শেক্সপিয়ার এটা তাঁর নামে লিখেছিলেন বেশ কয়েকবার ভেবে। কারণ কথাটা উইল শেষ করার পর কোনো এক লাইনের ফাঁকে লিখে দিয়েছিলেন।

শেক্সপিয়ারের মৃত্যুর সাত বছর গত হয়ে হাওয়ার পর তাঁর নাটকগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। আপনি যদি নিউইয়র্কে তাঁর প্রথম সংস্করণটি কিনতে চান তা হলে আপানকে সিকি মিলিয়ন ডলার মূল্য দিতে হবে। অবশ্য শেক্সপিয়ার নিজেও সম্ভবত হ্যামলেট, ম্যাকবেথ ও মিডসামার নাইটস ড্রিম-এর মতো নাটকের জন্য ছয়শ ডলার পান নি। নিজ গ্রামের ছোট এক গির্জার সামনে ধর্মপ্রচার বেদীর পাশে তাকে কবর দেয়া হয়েছিল। এই সম্মানিত স্থানে তাকে কবর দেয়ার অর্থ তার প্রতিভার প্রতি সকলের সম্মান বোধও নয় অথবা তার প্রতি ভালোবাসার বহিপ্রকাশও নয়। যার কপালে লেখা আছে ইংরেজি সাহিত্যের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হওয়ায় তাঁকে গির্জায় কবর দেওয়া হয়েছিল এজন্য যে, তিনি নিজের শরহটাকে টাকা ধার দিয়েছেন। যদি সাইলক চরিত্রের স্রষ্টা তার নিজের শহরটাকে ধার দিতেন তাহলে কোনো পরিচয়হীন কবরে তার হাড়গুলোর কথা হয়তো লোকে আজ ভুলেই যেত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *