ঋগ্বেদ ০৬।৪৫

ঋগ্বেদ ০৬।৪৫
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ৪৫
ইন্দ্র প্রথম ৩০টি ঋকের দেবতা, বৃহস্পতি অবশিষ্ট ২ট ঋকের দেবতা।। বৃহস্পতি অপত্য শংযু ঋষি

১। যিনি উৎকৃষ্ট নীতিদ্বারা তুর্বশ ও যদুকে দূরদেশ হইতে আনয়ণ করিয়াছিলেন, সেই তরুণ ইন্দ্ৰ যেন আমাদিগের সখা হন।

২। যে ব্যক্তি ইন্দ্রের স্তব করে না, ইন্দ্র তাহাকেও অন্নপ্রদান করেন। তিনি মন্থরগতি অশ্ব আরোহণপূৰ্ব্বক শক্রগণের মধ্যে নিহিত ধনসকল জয় করেন।

৩। এই ইন্দ্রের নীতি সকল উৎকৃষ্ট ও মহৎ; তদীয় স্তোত্ৰসকল নান প্রকার এবং তাহার রক্ষার কখনও অপচয় হয় না।

৪। হে বন্ধুগণ, তোমরা মন্ত্রদ্বারা আহ্বানযোগ্য সেই ইন্দ্রের অর্চনা ও স্তোত্ৰোচ্চারণ কর। কারণ তিনিই বস্তুতঃ আমাদিগকে প্রকৃষ্ট বুদ্ধি প্রদান করেন।

৫। হে বৃত্রনিহন্তা ইন্দ্ৰ! তুমি একজন বা দুইজন স্তবকারীর রক্ষক এবং তুমিই আমাদিগের মত ব্যক্তিবর্গের রক্ষাকারী।

৬। হে ইন্দ্ৰ! তুমি আমাদিগের নিকট হইতে বিদ্বেষকারীগণকে দূরীভূত কব এবং স্তবকারীগণের সমৃদ্ধি বিধান কর। হে ইন্দ্র! তোমাকে শোভনপুত্রপৌত্ৰাদি প্রদানকারী বলিয়া মনুষ্যগণ স্তব করিয়া থাকে।

৭। আমি স্তোত্র সহকারে মিত্রভূত, মহান, মন্ত্রদ্বারা আহ্বানযোগ্য, স্তবার্হ ইন্দ্রকে ধেনুর ন্যায় অভীষ্ট দোহন করিবার নিমিত্ত আহ্বান করিতেছি।

৮। বীর্য্যবান ও শত্রুসৈন্তগণের পরাভবকারী ইন্দ্রের হস্তদ্বয়ে দিব্য ও পার্থিব এই উভয়বিধ ধন আছে বলিয়া ঋষিগণ নিরন্তর কীৰ্ত্তন করেন।

৯। হে বজ্রধারী, যজ্ঞপতি! তুমি শক্রগণের দৃঢ় নগর সকল নিমূল কর। হে সৰ্ব্বোন্নত ইন্দ্ৰ! তুমি শক্রগণের মায়া সকলও উচ্ছিন্ন কর।

১০। হে সত্যস্বভাব, সোমপায়ী, অন্নরক্ষক ইন্দ্ৰ! আমরা অন্নাভিলাষী হইয়া এইরূপ গুণসম্পন্ন তোমাকেই আহ্বান করিতেছি।

১১। হে ইন্দ্ৰ! তুমি পূৰ্ব্বকালে আহ্বানযোগ্য ছিলে এবং সম্প্রতি শক্রগণের মধ্যে নিহিত ধনলাভার্থ আহত হও, আমরা তোমাকে আহ্বান করিতেছি। তুমি আমাদিগের আহ্বান শ্রবণ কর।

১২। হে ইন্দ্ৰ! তুমি আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণে প্রসন্ন হইলে তোমার অনুগ্রহে যেন আমরা অশ্বগণদ্বারা শক্রগণের অশ্বসমূহ, উৎকৃষ্ট অল্প ও গৃঢ়ধন জয় করিতে সমর্থ হই।

১৩। হে বীর ও স্থতিভাজন ইন্দ্র। ফলতঃ তুমি শক্রগণের মধ্যে নিহিত ধনলাভাথ সংগ্রামে শক্র জয় করিতে সমর্থ হইয়াছ।

১৪। হে শক্রসংহারক ইন্দ্র! তোমার নিরতিশয় বেগসম্পন্ন গতি আছে। তুমি সেই গতিদ্বারা শত্রুজয়াথ আমাদিগের রথ পরিচালিত কর।

১৫। হে জয়শীল, রথিশ্রেষ্ঠ ইন্দ্ৰ! তুমি আমাদিগের শক্রবিজয়ী রথ দ্বারা শক্রনিহিত ধন জয় কর।

১৬। যিনি সৰ্ব্বদশী ও বর্ষণশীল, যিনি একক মানবগণের অধিপতি রূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, সেই ইন্দ্রেরই স্তব কর।

১৭। হে ইন্দ্ৰ তুমি রক্ষাদ্বারা মুখদায়ক ও মিত্রভূত; আমরা স্তব করিলে তুমি পূৰ্ব্বকালে বন্ধুত্ব প্রকাশ করিয়াছ; সম্পতি আমাদিগকে মুখী কর।

১৮। হে বজ্ৰধর! তুমি রাক্ষস বধের জন্য নিজ হস্তদ্বয়ে বজ্রধারণ কর এবং স্পদ্ধাকারীদিগকে সৰ্ব্বতোভাবে পরাজিত কর।

১৯। যিনি ধনদাতা, স্তবকারীগণের উৎসাহদাতা ও মন্ত্রদ্বারা আহ্বানযোগ্য, আমি সেই প্রাচীন ইন্দ্রের আহ্বান করিতেছি।

২০। স্তুতিদ্বারা বন্দনীয়, অপ্রতিহত গতি, সেই একমাত্র ইন্দ্রই সমস্ত পার্থিব ধনের উপর একাধিপত্য করিতেছেন।

২১। হে গোসমূহের অধিপতি! তুমি বড়বাগণের সহিত আগমন পুৰ্ব্বক অন্ন, অসংখ্য অশ্ব ও ধেনুদ্বারা সৰ্ব্বতোভাবে আমাদিগের মনোরপ পূর্ণ কর।

২২। হে স্তোতৃবর্গ! ঘাস যেরূপে ধনুর সুখকর হয়, সেই রূপ সোমরস অভিযুত হইলে পর ইন্দ্রের মুখদায়ক স্তোত্র বহুলোকের বন্দনীয়, শত্রবিজয়ী ইন্দ্রের নিকট তোমরা সমবেত হইয়া গান কর।

২৩। গৃহদা ত ইন্দ্র যখন আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করেন, তখন তিনি ধেনুগণের সঙ্গিত অন্ন প্রদান করিতে বিরত হয়েন না।

২৪। দস্যুগণের নিধনকারী ইন্দ্র, কুবিৎসের অসংখ্য ধেনুযুক্ত গোষ্ঠে গমন করেন এবং নিজ বুদ্ধিবলে আমাদিগের জন্য সেই নিগূঢ় ধেয়রদশে প্রকাশিত করেন।

২৫। হে বিবিধকৰ্ম্মের অনুষ্ঠানকারী ইন্দ্র! গোজননীগণ যেরূপ বৎসের অভিমুখে পুনঃ পুনঃ গমন করে, তদ্রূপ আমাiদগের এই সমস্ত স্তুতি বারংবার ত্বদভিমুখে গমন করিতেছে।

২৬। হে ইন্দ্র! ত্বদীয় বন্ধুত্বের বিনাশ নাই। হে বীর! তুমি গোকাম ব্যক্তিকে গোদান কর এবং অশ্ব কাম ব্যক্তিকে অশ্বদান কর।

২৭। হে ইন্দ্ৰ! তুমি মহাধনের জন্য প্রদত্ত সোমরস পান করিয়া নিজদেহ পরিতৃপ্ত কর। তুমি নিজ উপাসককে নিন্দাকারীর বশীভূত করি ও না।

২৮। হে স্তুতিদ্বারা বন্দনীয় ইন্দ্র। দুগ্ধবতী গাভীগণ ম্বেরূপ বৎসের নিকট ধাবমান হয়, তদ্রূপ বারংবার সোমরস অভিযুত হইলে আমাদিগের এই স্তুতি সকল দ্রুতবেগে ত্বদভিমুখে গমন করে।

২৯। যজ্ঞস্থলে হৰ্যরূপ অন্নসহকারে প্রদত্ত অসংখ্য স্তবকারীর স্তোত্র যেন অসংখ্য শত্রুনিধনকারী তোমাকে বলশালী করে।

৩০। হে ইন্দ্ৰ! নিরতিশয় উন্নতিবিধায়ক অস্মদীয় স্তোত্ৰ যেন তোমার সন্নিহিত হয়। তুমি আমাদিগকে মঙ্গাধন লাভার্থ প্রেরণ কর।

৩১। গঙ্গার (১) উন্নত কূলের ন্যার পণিগণের মধ্যে উচ্চস্থানে বৃবু (২) অধিষ্ঠান করিয়াছিলেন।

৩২। আমি ধনার্থী; যিনি আমাকে বায়ুবেগে বদান্ততাপূর্বক সহস্ৰ সংখ্যক ধেনু সত্বর প্রদান করিয়াছেন,

৩৩। আমরা সকলে স্তব করিয়া সহস্ৰ ধেস্থ প্রদানকারী প্রাজ্ঞ ও সহস্ৰ স্তোত্রভাজন সেই বৃবুর নিরন্তর প্রশংসা করিতেছি। (২)

——————
(১) মূলে “উরুঃকক্ষঃ ন গাঙ্গ্যঃ” আছে। অর্থাৎ গঙ্গা সম্বন্ধীয় উন্নত কূল। এখানে কি গঙ্গা নদীর উল্লেখ পাওয়া গেল, না এ শব্দটা সাধারণ নদীবাচক, যেমন বাঙ্গলায় আমরা “গাঙ্‌” শব্দ ব্যবহার করি।

(২) “বৃবুর্নাম পণীনাং তক্ষা, সক্যসাৎলব্ধ ধন্যে ভরদ্বাজ স্তদীয়ং দানমনেন তৃচেনাস্তৌৎ”।–সায়ণ। শেষের তিনটা ঋক বৃব্যুর বদান্যতা সম্বন্ধীয় একটী ত্রিচ। বৃবুর বদান্যতার কথা মনুসংহিতায় (১০।১০৭) দেখিতে পাওয়া যায়। যে গল্পটী এই যে বৃবু একজন নিপূণ সূত্রধার ছিল এবং একদা বনে পথভ্রান্ত ক্ষুধার্ত ভরদ্বাজকে অনেক সাহায্য করিয়াছিল। আচার্য্য মক্ষমূলর বলেন এই বৃবু বংশীয় সূত্রধারগণ ঋত্মিক সম্প্রদায়ে প্রবেশ পাইয়া ঋভূগণের উপাসনা পরায়ণ হইলেন। কালক্রমে তাঁহাদিগের নৈপুণ্য হইতে তাঁহাদের উপাস্য দেব ঋভূগণ পাত্রাদি নির্ম্মাণে খ্যাতি লাভ করিলেন। — Chips from a German Workshop.