ঋগ্বেদ ০৬।৪৪

ঋগ্বেদ ০৬।৪৪
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ৪৪
ইন্দ্র দেবতা। বৃহস্পতির অপত্য শংযু ঋষি।

১। হে ধনসম্পন্ন, সোমরূপ অন্নের রক্ষাকারী ইন্দ্র! যে সোম নিরতিশয় ধনশালী ও যাহা দীপ্তি দ্বারা সমুজ্জল, সেই সোম অভিযুত হইয়া তোমাকে উল্লাসিত করিতেছে।

২। হে বিপুল সুখশালী, সোমরূপ অন্নের রক্ষাকারী ইন্দ্র! যে সোম তোমার প্রীতি প্রদ ও ত্বদীয় স্তোতৃবর্গের ঐশ্বর্য্যবিধায়ক, সেই সোম অভিযুত হইয়া তোমাকে উল্লাসিত করিতেছে।

৩। হে সোমরূপ অন্নের রক্ষণকারী ইন্দ্র! যে সোম পান করিয়া প্রবৃদ্ধ বল হইয়া নিজ রক্ষাকারী মরুৎগণের সহিত শক্ৰ সংহার কর, সেই সোম অভিযুত হইয়া তোমাকে উল্লাসিত করিতেছে।

৪। হে যজমানগণ! আমি তোমাদিগের জন্য সেই ইন্দ্রের স্তব করিতেছি, যিনি ভক্তগণের অনুগ্রাহক, বলের অধিপতি, বিশ্ববিজয়ী, যাগাদিক্রিয়ার নায়কভূত, দাতৃশ্রেষ্ঠ ও সৰ্ব্বদর্শী।

৫। অমাদিগের স্তুতি সকল ইন্দ্রেব শক্ৰধনাপচারক যে বল বর্দ্ধিত করিতেছে, দেব স্বর্গ ও দেবী পৃথিলী আগ্রহসন্ত্রকারে ইন্দ্রের সেই বলের পরিচর্য্যা করেন।

৬। হে স্তোন্তগণ! তোমাদিগের স্তোত্র ইন্দ্রের নিমিত্ত বিস্তার কর; কারণ মেধাবী ব্যক্তির ন্যায় ত্বদীয় রক্ষ। তাঁহার সহিত একত্র অবস্থিত বলিয়া প্রকটিত হয়।

৭। যে ঘজমান যাগাদি কার্ম্যে দক্ষ, ইন্দ্র তাহার বিষয় অবগত হন। মিত্রভূত, নবীনতর সোমপারা সেই ইন্দ্র স্তোতৃবর্গকে শ্রেষ্ঠ ধন প্রদান করেন। হবান্নভোজী সেই চন্দ্র প্রবৃদ্ধ ও পুথিবীর কম্পন বিধায়ী অশ্বগণের সহিত স্তোতৃগণের রক্ষণে স্থার উপস্থিত হইয়া তাহাদিগের রক্ষা বিধান করেন।

৮। যজ্ঞপথে সৰ্ব্বদশী সোম পীত হইয়াছে। ঋত্বিগগণ সেই সোম ইন্দ্রের চিত্ত আকর্ষণ করিবার নিমিত্ত প্রদর্শন করিতেছেন। শত্রুবিজয়ী বিপুল দেহধারী সেই ইন্দ্ৰ যেন আমাদিগের স্তবে প্রসন্ন হইয়া আমাদিগের দৃষ্টিপথে আবির্ভূত হন।

৯। হে ইন্দ্র! তুমি আমাদিগকে নিরতিশয় দীপ্তিসম্পন্ন বলপ্রদান কর। ত্বদীয় উপাসকগণের অসংখ্য শত্রু নিবারণ কর। নিজ বুদ্ধিদ্বারা আমাদিগকে প্রচুর অন্ন প্রদান কর। ধনভোগাথ আমাদিগকে রক্ষা কর।

১০। হে ধনসম্পন্ন ইন্দ্র! আমরা তোমারই জন্য হব্যদানে প্রবৃত্ত হইয়াছি। হে অশ্বগণের অধিপতি! তুমি আমাদিগের প্রতিকূল হইও না, মর্ত্যগণের মধ্যে আমরা তোমা ভিন্ন অন্য কোন বন্ধু দেখিতে পাই না, হে ইন্দ্র! নতুবা প্রাচীনগণ তোমাকে কি জন্য ধনদ এই সংজ্ঞা প্রদান করিবেন?

১১। হে অভীষ্টবর্ষি ইন্দ্র। তুমি আমাদিগকে কাৰ্য্যবিঘাতকগণের নিকট পরিত্যাগ করিও না, তুমি ধনসম্পন্ন, আমরা তোমার বন্ধুত্বের উপর নির্ভর করিয়া যেন কোন বিঘ্ন না পাই। মানবগণের মধ্যে নানা বিস্ত্র তোমার উদেশে উৎপাদিত হয়। তুমি অনভিযবকারীগণকে সংহার কর এবং যাহার হব্য প্রদানবিমুখ তাহাদিগকে উন্মূলিত কর।

১২। গর্জনকারী পর্জন্য যেরূপ মেঘ সকল উৎপাদিত করে, ইঞ্জ সেইরূপ স্তোতৃবর্গকে প্রদান করিবার নিমিত্ত অশ্ব ও গোধন উৎপাদিত করেন। হে ইন্দ্ৰ! তুমি স্তোতৃবর্গের প্রাচীন রক্ষক, ধনিগণ হব্য প্রদান না করিয়া তোমার প্রতি যেন অযথাচরণ না করে।

১৩। হে ঋত্বিগ্‌গণ! তোমরা এই মহেন্দ্রকে অভিযুত সোম অর্পণ কর, কারণ তিনি সোমের অধিপতি। সেই ইন্দ্র স্তবকারী ঋষিগণের প্রাচীন ও ইদানী স্তন স্তোত্রদ্বারা বৰ্দ্ধিত হইয়াছেন।

১৪। জ্ঞানসম্পন্ন ও অপ্রতিহত প্রভাব ইন্দ্র এই সোম পান করিয়৷ উল্লাসিত হইয়া অসংখ্য প্রতিকুলাচারী শক্র বিনাশ করিয়াছেন। শোভন হনুযুক্ত বীর ইন্দ্রের পান করিবার নিমিত্ত প্রচুর পরিমাণে সেই সুমধুর সোম অর্পণ কর।

১৫। ইন্দ্ৰ যেন এই অভিযুত সোম পান করেন এবং ইহা দ্বারা উল্লাসিত হইয়া বজ্রদ্বারা বৃত্র সংহার করেন। গৃহদাতা, স্তোতৃরক্ষক ও যজমানপালক সেই ইন্দ্ৰ যেন দূরদেশ হইতেও আমাদিগের যজ্ঞাভিমুখে আগমন করেন।

১৬। ইন্দের পানাহ ও প্রিয় এই সোমাত্মক অমৃত তাহা কর্তৃক এরূপে পীত হউক, যাহাতে তিনি উল্লাসিত হইয়া আমাদিগের প্রতি অনুগ্রহ করিবেন এবং অন্মদীয় শক্রবর্গ ও পাপকে আমাদিগের নিকট হইতে দূরীভূত করিবেন।

১৭। হে শৌৰ্য্যশালী মঘবা! তুমি এই সোমপানে হৃষ্ট হইয়া আমাদিগের আত্মীয় ও অনাত্মীয় সমুদয় প্রতিকুলাচারী শক্রকে বিনাশ কর। হে ইন্দ্র! আমাদিগের সন্মুখীন অস্ত্র বিমোচনকারী শক্র সৈন্তগণকে পরাম্মুখ ও উচ্ছিন্ন কর।

১৮। হে মঘবা। আমাদিগের এই সমস্ত সংগ্রামে অতুল ধন আমাদিগের স্বপ্রাপ্য কর। জয়লাভ করিতে আমাদিগকে সমর্থ কর। বৃষ্টি, পুত্র ও পৌত্রদ্বারা আমাদিগকে সমৃদ্ধ কর।

১৯। হে ইন্দ্র! ত্বদীয় অভীষ্টবৰ্ষী, স্বেচ্ছানুসারে রথে নিযুক্ত, অভীষ্টপূরক রথের বহনকারী, বার বর্ষক, রশ্মিদ্বারা সংযুত, দ্রুতগামী, অষ্মদভিমুখবর্তী, নিত্য তরুণ, বজ্ৰবাহক, শোভনরূপে যোজিত অশ্বগণ প্রচুর মদকর সেমি পানার্থ তোমাকে আনয়ন করুক।

২০। হে অভীষ্টবৰ্ষী ইন্দ্র। ত্বদীয় বারিবর্ষণকারী, তরুণ অশ্বগণ জলসেচনকারী সমুদ্র তরঙ্গ সকলের ন্যায় উল্লাসিত হইয়া ত্বদীয় রথে যোজিত রচিয়াছে। তুমি তরুণ ও কামবর্ষী। ঋত্বিকগণ তোমাকে পাষাণদ্বারা অভিষুত সোমরস অর্পণ করিতেছেন।

২১। হে ইন্দ্র? তুমি স্বর্গের সেচনকারী, পৃথিবীর বর্ষণকারী, নদী সকলের পূরণকারী এবং একত্র সমবেত -স্থাবর জঙ্গমাত্মক ভূত নিচয়ের অভীষ্টপূরক। হে অভীষ্টপ্রদায়ক ইন্দ্ৰ! তুমি শ্রেষ্ঠ সেচনকারী, তোমার জন্য মধুর স্তায় পেয় সুমিষ্ট সোমরস বৃদ্ধি পাইতেছে (১)।

২২। দীপ্তিমান এই সোম মিত্রভূত ইন্দ্রের সহিত জন্ম পরিগ্রহ করিয়া বলপূৰ্ব্বক পণিকে স্তব করিয়াছিল। এই সোম গোরূপ ধনাপহরণকারী দ্বেষকারীর মায়া ও অস্ত্র সকল ব্যর্থ করিয়াছিল।

২৩। এই সোম ঊষা সকলের পতিস্বরূপ সূর্য্যকে শোভাসম্পন্ন করিয়াছে। এই সোম সূর্য্যমণ্ডলে দীপ্তি সংস্থাপন করিয়াছে। এই সোম দীপ্তি সম্পন্ন ভুবনত্রয়ের মধ্যে স্বর্গে গৃঢ়ভাবে অবস্থিত ত্ৰিবিধ অমৃত লাভ করিয়াছে।

২৪। এই সোম স্বর্গ ও পৃথিবীকে স্ব স্ব স্থানে সংস্থাপিত করিয়াছে। এই সোম সূর্য্যের সপ্তরশ্মি রথ যোজিত করিয়াছে। এই সোম স্বেচ্ছানুসারে ধেনুগণের মধ্যে পরিণত দুগ্ধের দশযন্ত্র উৎস(২) স্থাপন করিয়াছেন।

—————-
(১) ২০ ও ২১ ঋকে বৃয শব্দের অনুপ্রাস।
(২) দশযন্ত্র উৎসের অর্থ কি? “I.iterally a well with ten machines.”—Wilson. বোধ হয় বহুধারা বিশিষ্ট প্রস্রবণ। গরুর বাঁট গুলি হইতে বহুধারায় দুধ বাহির হয় তাহাকেই বোধ হয় যন্ত্র বলিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে।