ঋগ্বেদ ০৬।১৮

ঋগ্বেদ ০৬।১৮
ঋগ্বেদ সংহিতা । ৬ষ্ঠ মণ্ডল । সূক্ত ১৮
ইন্দ্র দেবতা । ভরদ্বাজ ঋষি ।

১ । হে ভরদ্বাজ ! তুমি অভিভবকারী, তেজোবিশিষ্ট, শত্রুনিধনকারী, অধৃষ্য ও বহুলোকের আহূত ইন্দ্রেরই স্তব কর ; তুমি এই সমস্ত স্তোত্রদ্বার অপ্রতিহতপ্রভাব, ওজস্বী, শত্রুবিজয়ী ও মনুষ্যগণের অভীষ্টপূরক ইন্দ্রের সংংবৰ্দ্ধনা কর ।
২ । তিনি যোদ্ধা, দানশীল, যুদ্ধব্যাপৃত, সহানুভূতিসম্পন্ন, বহুলোকের উপকারক, শব্দকারী, ঋজীব, সোমপায়ী, সংগ্রামে ধূলি উত্থাপক, বলশালী এবং মনুর সন্তানগণের প্রধান রক্ষাকারী।
৩। হে ইন্দ্ৰ ! তুমি দস্যুদিগকে শীঘ্র স্ববশে আনয়ন করিয়াছ এবং তুমিই প্রধানতঃ আৰ্য্যদিগকে পুত্রদাসাদি প্রদান করিয়াছ (১)। হে ইন্দ্ৰ ! তোমার তাদৃশ বীৰ্য্য আছে। তুমি সময়ে সময়ে সেই বীৰ্য্যের বিশেষ পরিচয় প্রদান করিও ।
৪ । তথাপি হে বলবত্তম ইন্দ্ৰ ! তুমি বহুযজ্ঞে প্রাদুর্ভূত ও অস্মদীয় শক্ৰগণের হিংসাকারী ; তোমার তাদৃশ প্রচণ্ড ও প্রবৃদ্ধ বল আছে, আমি এইরূপ বিশ্বাস করি। কারণ তুমি ওজস্বী, সমৃদ্ধিসম্পন্ন, শক্রগণের অজেয়, অথর জেয়শক্রগণের নিধনকারী ।
৫ । হে অবিচলিত পৰ্ব্বতাদির সঞ্চালনকারী, মনোজ্ঞদর্শন ইন্দ্ৰ ! আমাদিগের পুরাতন বন্ধুত্ব যেন চিরস্থায়ী হয়। তুমি স্তবকারী অঙ্গিরাগণের সহিত অস্ত্র নিক্ষেপকারী বলকে বধ করিয়াছ এবং তদীয় নগর ও নগরদ্বার সকল উদঘাটিত করিয়াছ ।
৬ । ওজস্বী, স্তোতৃগণের সামর্থ্য বিধায়ী ইন্দ্র, মহাসংগ্রামে স্তোতৃবর্গের আহ্বানার্থ ; বজ্রধারী ও সংগ্রামে স্তোত্রদ্বারা বিশিষ্টরূপে বন্দনীয় সেই ইন্দ্র পুত্র ও পৌত্রগণের লাভার্থও বন্দনীয় হয়েন ।
৭ । তিনি অক্ষয়, শত্রুদমনকারী ও বলদ্বারা মানব জন্মের উন্নতিসাধন করিয়াছেন । নেতৃশ্রেষ্ঠ সেই ইন্দ্র কীৰ্ত্তি, বল, ধন ও বীরত্বের সহিত একত্র অবস্থিতি করেন ।
৮ । যিনি কখনও হতবুদ্ধি হয়েন নাই, যিনি কখনও নিষ্ফল বস্তুর উৎপাদক হয়েন নাই, প্রসিদ্ধনামা যিনি শত্রুদিগের পুরীনাশে এবং নিধনে বিশেষ সচেষ্ট ; হে ইন্দ্র ! সেই তুমি চুমুরি, ধুনি, পিপ্র, শবর ও শুষ্ণকে সংহার করিয়াছ ।
৯ । হে ইন্দ্ৰ ! তুমি ঊর্দ্ধগামী, শক্রহ্রাসকারী, প্রশস্যতর বল সহকারে সংহারার্থ রথোপরি আরোহণ কর। দক্ষিণ হস্তে বজ্র ধারণ কর। হে ধনপ্রদাতা, তুমি গমনপূর্বক শত্রুদিগের মায়া একবারে উচ্ছেদ কর ।
১০ । হে ইন্দ্র । অগ্নি যেরূপ নীরস বৃক্ষসমূহকে দগ্ধ করে, তদ্রুপ ত্বদীয় বজ্ৰ শত্রু সংহার করে, তুমি বজ্রের ন্যায় ভয়ঙ্কর ৷ তুমি নিঃশেষরূপে রাক্ষস সকলকে ভস্মসাৎ কর। তুমি অনিবাৰ্য্য ও বিপুল বজ্র দ্বারা শক্রগণকে পেষণ করিয়াছ, সিংহনাদ করিয়াছ এবং সমস্ত দূরিত নষ্ট করিয়াছ ।
১১। হে ঐশ্বৰ্য্যসম্পন্ন, বহুলোকের বন্দনীয় শক্তিপুত্র ইন্দ্র ! কেহ বলদ্বারা তোমাকে বিযুক্ত করিতে সমর্থ হয় না। তুমি অসংখ্য বলশালী, বাহনদ্বারা ধন সহকারে আমাদিগের নিকট আগমন কর ।
১২। ঐশ্বৰ্য্যশালী, শক্র নিহন্তা, প্রাচীন ইন্দ্রের মহিমা স্বর্গ ও পৃথিবীর মাহাত্ম্য অতিক্রম করিয়াছে । এই ইন্দ্রের প্রতিপক্ষ, উপমাম, অথবা আদর্শ নাই।
১৩। হে ইন্দ্ৰ ! তুমি কুৎস, আয়ূত্ত অতিথিগ্ব দিবোদাস এই তিন জনের জন্য যে মহৎ কাৰ্য্য সাধন করিয়াছ, তাহ অদ্যাপি প্রকাশিত আছে, তুমি অতিথিশ্বকে বহু সহস্ৰ ধন প্রদান করিয়াছ, এবং বিজয়ী বস্ত্র দ্বারা পৃথিবীস্থিত দ্রুতগামী অতিথিগ্বকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছ ।
১৪। হে দ্বীপ্তিসম্পন্ন ! অখিলস্তোতৃগণ অহি সংহারের নিমিত্ত তোমার স্তব করিয়াছেন। স্তোতৃবর্গের স্তবে প্রসন্ন হইয়া তুমি দারিদ্র্য পীড়িত যজমান ও তদীয় পুত্রকে ধন প্রদান করিয়াছ।
১৫ । হে ইন্দ্ৰ ! স্বর্গ, পৃথিবী ও অমর দেবগণ ত্বদীয় বল স্বীকার করে। হে বহুকৰ্ম্মের অনুষ্ঠানকারী ইন্দ্ৰ ! তুমি অসম্পাদিত কার্য্যের অনুষ্ঠান কর এবং ত্বদীয় যজ্ঞ সকলে নূতন স্তোত্রের উৎপত্তি বিধান কর।

———————
(১) এখানে আর্য্যকর্ত্তৃক দস্যুর বশীকরণের পরিচয় পাওয়া যায়।