11 of 11

৬২ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের শব্দার্থ

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের শব্দার্থ

অগস্ত্য যাত্রা — অগস্ত্যমুনি ভাদ্রমাসের প্রথম দিনে বিন্ধ্যপর্বত লঙ্ঘন করিয়া দাক্ষিণাত্যে যাত্রা করেন, আর ফিরেন নাই। এই হেতু ওই দিনে যাত্রা নিষিদ্ধ। লৌকিক আচারে ইহা হইতে মাসের প্রথম দিবস যাত্রায় নিষিদ্ধ।

অঙ্কা তারে বঙ্কা তারে — অঙ্কা বঙ্কা দুইজন দুর্ধর্ষ ডাকাতের নাম। (‘হরিষে লাগি রহ রে ভাই’ গান-এর অংশবিশেষ)

অজপা — যাহা জপনীয় নহে, অর্থাৎ যাহা জপ করিতে হয় না; উচ্ছ্বাসের অন্তর্গমন ও নিঃশ্বাসের নির্গমন দ্বারা স্বভাবতঃযে মন্ত্রের জপ (অক্ষরোচ্চারণ-রূপ ক্রিয়া) হয়; স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস ও নিঃশ্বাস দ্বারা নিষ্পাদিতবর্ণ জপ্য ‘হংস’ মন্ত্র। সুতরাং, ‘হংস’ মন্ত্র জপ করিতে হয় না, ইহা প্রাণিমাত্রেরই স্বাভাবিক বা অযত্নসিদ্ধ। এই হেতু ইহার নাম অজপা। ‘হংস’ উচ্ছ্বাস-নিঃশ্বাসরূপ প্রাণ এবং প্রাণ আত্মরূপে দেহে অবস্থিত। প্রাণী প্রত্যহ উচ্ছ্বাস ও নিঃশ্বাস দ্বারা ২১৬০০ বার ‘হংস’ মন্ত্র জপরূপ প্রাণায়াম করে; ইহা জীবের আয়ু। সুতরাং অজপা-জপ ফুরাইলে আয়ুঃ শেষ হয়।

অজামিল — ভাগবত পুরাণোক্ত কান্যকুব্জবাসী ব্রাহ্মণ বিশেষ। ইনি দাসীসংস্পর্শে দূষিত হইয়া দ্যূতচৌর্য প্রভৃতি অসদ্‌বৃত্তি দ্বারা জীবিকার্জন করিতেন। দাসীগর্ভজাত দশ পুত্রের মধ্যে নারায়ণ কনিষ্ঠ। নারায়ণের প্রতি আজামিলের অতিশয় স্নেহ ছিল। মৃত্যুকালে দূরে ক্রীড়ারত নারায়ণকে তক্‌গতচিত্তে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করিয়া পাপমুক্ত হইয়া ইনি বিষ্ণুলোকে গমন করেন।

অনুলোম বিলোম — অনুক্রম ও বিপরীতক্রম; স্থূল থেকে সূক্ষ্মে যাওয়া এবং সূক্ষ্ম থেকে স্থূলে আসা।

অন্নকূট — বৃহদাকারে অন্ন পুঞ্জীভূত করিয়া রবাহূত অনাহূতদের ভোজন করানো।

অবধূত — বর্ণাশ্রমাচারের অতীত এবং সর্বসংস্কারমুক্ত সন্ন্যাসী। তন্ত্রমতে অবধূত চারিপ্রকার — ব্রহ্মাবধূত, শৈবাবধূত, ভক্তাবধূত, হংসাবধূত।

অম্বুজে আকাশ — বিশুদ্ধ চক্রে ধূম্রবর্ণের পদ্মমধ্যস্থিত আকাশ।

অষ্টধাতু — স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, পিত্তল, কাংস্য, ত্রপু (রাং), সীসক ও লৌহ। মতান্তরে স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, রঙ্গ, যশদ (দস্তা), সীসক, লৌহ ও পারদ।

অষ্টপাশ — (মায়াবন্ধন) ঘৃণা, লজ্জা, মান, অপমান, মোহ, দম্ভ, দ্বেষ, পৈশুণ্য (ক্রূরতা)।

অষ্টবসু — ভব, ধ্রুব, সোম, বিষ্ণু, অনিল, অনল, প্রত্যূষ, প্রভব। গঙ্গা ও শান্তনুর পুত্র এই অষ্ট গণদেবতা। প্রভব বশিষ্ঠমুনির শাপে ভীষ্মরূপে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন।

অষ্টসিদ্ধি — অণিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, মহিমা, ঈশিত্ব, বশিত্ব, কামবসায়িতা: যোগের এই অষ্টপ্রকার ঐশ্বর্য।

আউটা, আওটা — দুগ্ধাদি জ্বাল দিয়া নাড়িয়া ঘন করা।

আণ্ডিল — মহাধনশালী।

আখেরে — পরিণামে, শেষকালে।

আগম নিগম — তন্ত্র ও বেদ।

“আগতং শিববক্ত্রেভ্যো গতঞ্চ গিরিজামুখে।
মতং শ্রীবাসুদেবস্য তস্মাদাগম উচ্যতে।” — রুদ্রযামলবচন

“নির্গতো গিরিজাবক্ত্রাৎ গতশ্চ গিরিশশ্রুতিম।
মতশ্চ বাসুদেবস্য নিগমঃ পরিকথ্যতে।” — আগমবচনদ্বৈতনির্ণয়বচন

আটপিটে, আটপিঠে — কষ্টসহিষ্ণু; সকল ভারবহনে সমর্থ; সর্বদিকে দক্ষ, চৌকস; অষ্টপৃষ্ঠযুক্ত; অষ্টতলযুক্ত।

আটাশে — গর্ভের অষ্টম মাসে জাত; দুর্বল। (আটাশে ছেলে ভীরু হয়।)

আড়া — (১) উচ্চতীর; পাড়; ডাঙ্গা। (২) বৃষ্টিজলের পরিমাণবিশেষ।

আদাড়ে — (১) জঞ্জালে বা বনজঙ্গলে উৎপন্ন, নিকৃষ্টজাতীয়। (২) বেপরোয়া।

আধপো (অন্তর) — এক ক্রোশের আটভাগের একভাগ দূরত্ব (সিকি মাইল)।

আনন্দ আসন — তন্ত্রোক্ত সাধনবিশেষ। বীরভাবের শেষ সাধন।

আপ্তভাবে — মিত্রভাবে; বিশ্বস্তভাবে। অন্তরঙ্গদের নিয়ে।

আবচারা — (আঁব = আম, চারা = ছোট গাছ) আমের ছোট গাছ।

আবাঠা, আবাটা — অঙ্গপরিষ্কারক; আমলকী, হরিদ্রা প্রভৃতি বাটা।

আঁবের কশি (কষি) — কাঁচা আমের আঁঠি। (কুশি আম = অত্যন্ত কচি আম)

আমমোক্তার — বিষয়কর্ম নির্বাহের জন্য আইন অনুসারে নিযুক্ত প্রতিনিধি। আদালতে মকদ্দামাদির তদ্বির করিবার ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি; attorney।z

উদম সাঁড়ী (ষাঁড়ি) — উচ্ছৃঙ্খল মেয়ে। (উদম = উচ্ছৃঙ্খল; স্বেচ্ছাবিহারী; অনাবৃত; উলঙ্গ। ষাঁড় = বৃষ; লম্পট পুরুষ; যথেচ্ছ বিহার বা বিচরণকারী; অসংযত)

উন্মস্ত — (ফরাসী-মস্ত্‌) মস্ত্‌ মানে মাতাল, উন্মত্ত।

উভরায় — উচ্চরবে।

উমেদার — চাকুরীপ্রার্থী।

উমেদারী — কর্মপ্রাপ্তির জন্য সাধনা।

ঊনপাঁজুরে, (কথ্য) উনপাঁজুরে — যাহার পাঁজরের হাড় কম বা খাট। (গৌণার্থে) অলক্ষণীয়; (গালিতে) লক্ষ্মীছাড়া।

ঊর্জিত — বৃদ্ধিপ্রাপ্ত; অধিক, অতিশয়িত।

একতারে — (এখতিয়ার-এর রূপভেদ) ক্ষমতা, অধিকার।

একোয়া — (ল্যাটিন শব্দ — Aqua) জল।

ওলম্বাকুল — কুলের আকৃতি একপ্রকার বন্য কুল। (যাহাতে শুধু আঁঠি আর খুব পাতলা খোসা, একটুও শাঁস নাই)

কন্দর্প — মদন; কামদেব।

কড়েরাঁড়ী — বালবিধবা; কন্যাবয়সে বিধবা।

কর্তাভজা — উদাসীন আউলচাঁদ কর্তৃক প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মসম্প্রদায়বিশেষ। ঘোষপাড়ানিবাসী রামশরণ পাল ইহার প্রচারক। ইঁহাদের মতে আউলচাঁদ ঈশ্বরের অবতার; কৃষ্ণচন্দ্র, গৌরচন্দ্র ও আউলচন্দ্র — তিনে এক, একে তিন; মহাপ্রভু তিরোহিত হইয়া আউলমহাপ্রভু-রূপে আবির্ভুত হন। শ্রীকৃষ্ণই ইঁহাদের উপাস্য দেবতা। ইঁহাদের গুরুর নাম ‘মহাশয়’, শিষ্যের নাম ‘বরাতি’। এই সম্প্রদায়ের জাতিবিচার নাই। ইঁহাদের কোন ধর্মগ্রন্থ নাই। দোল ও রাসযাত্রাই ইঁহাদের প্রধান মহোৎসব। ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমাতে কাঁচড়াপাড়া ষ্টেশনের অদূরবর্তী ঘোষপাড়া গ্রামে ইঁহাদের মহোৎসব হয়।

কলহান্তরিতা — [কলহ (বিবাদ) দ্বারা অন্তরিতা (ব্যবধানে স্থিতা)] কীর্তনগানের পালাবিশেষ। নায়কের সহিত কলহজনিত বিচ্ছেদে নায়িকার অনুতাপ এই পালার বিষয়বস্তু।

কলমবাড়া — (Sloping) ঢালু রাস্তা।

কট্‌কেনা — নিয়মের কঠোরতা; মেয়দী; প্রতিজ্ঞা; কষ্ট, দুঃখ, দুরবস্থা।

করোয়া — জলপাত্রবিশেষ; কমণ্ডলু।

কসুর — ত্রুটি; অপূর্ণতা; বাকি।

কচে বারো — কচ (পাশার একবিন্দু) এবং এগার (পাঁচ ও ছয় বিন্দু)। মোট বারো বিন্দু।

কাকীমুখ-আচ্ছাদিনী — জীবের জ্ঞানমুখ আচ্ছাদনকারী অবিদ্যা। (ক = সুখ, অক = দুঃখ। ক + অক = কাক, সুখদুঃখযুক্ত জীব — কাকী।)

কালাপানি — ভারত মহাসাগরের কৃষ্ণবর্ণ জল; সমুদ্র।

কামারশালের নাই — কামারের নেহাই। যে লৌহখণ্ডের উপর ধাতু তাতাইয়া পেটা হয়। (anvil)

কাঁড়া — ছাঁটা, তুষহীন করা, পরিষ্কার করা।

কাঁড়ি — স্তূপ, রাশি।

কাঁদি — ফলের বড় গুচ্ছ। বৃহৎ।

কারণ — তান্ত্রিক সাধনার উপকরণরূপে ব্যবহৃত মদ্য। (কারণবারি পান করা।)

কারণ করত — মদ খেত। তান্ত্রিক সাধকগণ মদকে কারণবারি বলেন।

কাঁকাল ভাঙা (ভাঙ্গা) — কটিভঙ্গ হওয়া। নৈরাশ্যাদিতে কটি অবসন্ন বা দুর্বল হওয়া; মাজা-ভাঙা হওয়া।

কাকনিদ্রা — কাকের ন্যায় অতি সতর্ক ও পাতলা ঘুম; কপটনিদ্রা।

কুঁকড়ো — মোরগ।

কুমুরে পোকা — এই পোকা মুখে মাটি আনিয়া বাসা নির্মাণ করে এবং তাহার মধ্যে ডিম ছাড়িয়া সরিয়া যায়। কুমারের মত মাটির কাজ করে বলিয়া এই নাম।

কুপো — মাটি বা চামড়ার তৈয়ারি গলা-সরু পেট মোটা পাত্রবিশেষ।

কুইন — ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়া।

কুটিলা — (১) আয়ানের ভগিনী ও রাধিকার ননদিনী। (২) ক্রূরচিত্ত, খল।

কূটস্থ — সর্ব অবস্থায় ও সর্বকালে একভাবে স্থিত, নির্বিকার; গিরিশৃঙ্গবৎ নিশ্চল।

কেঁড়েলি — অকালপক্কতা; ছেলের মুখে বৃদ্ধের ন্যায় বচন; বৃথা বাহাদুরি।

কোকিলাক্ষ — কোকিলের অক্ষিতুল্য যাহার পুষ্প লোহিত; বৃক্ষবিশেষ। (Capparis Spinosa)

কোঁয়ারি — কুমারী, কন্যা।

কোম্পানি — ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি নামে ইংরেজ-বণিকদল ইংলণ্ড হইতে ভারতবর্ষে বাণিজ্য করিতে আসিয়া ক্রমে এদেশে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন হইতে কোম্পানি বলিলে ইংরেজ রাজত্ব বুঝাইতে থাকে। পরে মহারানী ভিক্টোরিয়া রাজ্যভার গ্রহণ করিলেও কোম্পানির নাম চলিয়া আসিতেছে।

কোটা, কোঠা — অট্টালিকা; দেহ।

কোম্পানির কাগজ — (সাধারণের নিকট হইতে) ইংরেজ রাজ্যের ঋণগ্রহনার্থ স্বীকারপত্র। (Government Promissory Note)

কোম্পানির বাগান — বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিবপুর। শহরের উদ্যান বা পার্ক।

কোদণ্ড — ধনু। এখানে কোদালি।

কোঁস্তা — তৃণনির্মিত মার্জনীবিশেষ, ঝাঁটা।

কৌচ — গদিযুক্ত বসিবার আসনবিশেষ; পালঙ্ক।

খ — আকাশ।

খয়েরের বাগানটি — বিবাহকালীন স্ত্রী-আচারের অঙ্গবিশেষ।

খড়কে কাঠি — দাঁত পরিষ্কার করিবার কাঠি।

খানসামা — ভৃত্য; সেবক।

খাজাঞ্চী — কোষাধক্ষ। সদর কাছারীর তহবিলরক্ষক অর্থাৎ যে কর্মচারী মফস্বলের খাজনার চালান প্রভৃতি বুঝিয়া জমাখরচ রাখেন ও তহবিল রক্ষা করেন।

খানকী — বারনারী; বেশ্যা।

খ্যাঁট — ভোজন বা ভোজ; আহার; খোরাক।

খাদি কাঠ — ছোট টুকরা কাঠ।

খানা — খাত; লম্বা গর্ত; পরিখা।

খাঁদী-ফাঁদি — খাঁদি = নাক-থেবড়া; সৌন্দর্যহীনা। ফাঁদি = চওড়া মুখোয়ালা বা পেটোয়ালা; বৃহদাকার।

খিড়কি ফটক — বাড়ির পিছনের দরজা।

খেই — সুতার অগ্রভাগ; সূত্র, প্রসঙ্গ।

খেই ধরা — সুতার প্রান্ত বাহির করা। তাঁতে কাপড় বুনুবার সময় সুতা ছিঁড়িয়া গেলে উহার প্রান্ত বাহির করিয়া জুড়িয়া দিতে হয়।

খেউড় — অশ্রাব্য গালাগালি; অশ্লীল গ্রাম্য গান বা কবিতা।

গরগর — গদ্‌গদ্‌, বিহ্বল, অভীভূত। (গর্‌গর্‌ = ক্রোধাদির লক্ষণ-প্রকাশক। গর্গর = কলস, ঘড়া; দধিমন্থনপাত্র)

গণেশ গর্জী — নিজের দিকেই দৃষ্টি, অপরের প্রতি খেয়াল নাই। অর্থাৎ যিনি দুনিয়াকে উপেক্ষা করিয়া চলেন। কেহ কেহ বলেন, গর্জী মহারাষ্ট্রের অধিবাসীর পদবীবিশেষ; এবং গণেশ একজন ব্যক্তির নাম।

গণ্ডযোগ — (জ্যোতিষ) রাশিচক্রের একসপ্তবিংশতিতম অংশ অর্থাৎ ২৭ যোগের মধ্যে দশম যোগ। এই যোগে জন্ম হলে জাতকের মাতাপিতার মৃত্যু হয়।

গড্ডি — ‘গোরুটি’ শব্দের পরিবর্তিত রূপ।

গাড়োল, গাড়ল — মেষ, ভেড়া।

গুজরিপঞ্চম — সেকেল মেয়েদের রৌপ্যনির্মিত ঘুঙুরযুক্ত পায়ের মলবিশেষ।

গুজরাইব — দাখিল করিব।

গুটিকা সিদ্ধি — যোগলব্ধ শক্তিবিশেষ। মন্ত্রপূত গুটিকাটি (বাটিকা) অঙ্গে ধারণ করিয়া সাধক সাধারণের নয়নের দৃষ্টিবহির্ভূত বা অদৃশ্য হইতে পারেন এবং ওইরূপ অদৃশ্য হইয়া সযত্নে রক্ষিত দুর্গম স্থানেও গমনাগমন করিতে পারেন।

গুচ্ছির, গুচ্ছের — (বিরক্তিসূচক) অনেকগুলি; অবাঞ্ছিত ও প্রয়োজনাতিরিক্ত।

গেড়ে — গর্ত, ডোবা।

গোলকধান্দা, গোলকধাঁধা — যে বাড়ি বা বেষ্টনীর মধ্যে প্রবেশ করিলে শতপাক খাইয়াও বাহির হইবার পথ পাওয়া যায় না, একই পথে পুনঃপুনঃ আসিতে হয়।

গোর — সমাধি, কবর।

গোড়ে মালা — মোটা করিয়া গাঁথা ফুলের মালা।

গোট — কোমরের শিকলাকৃতি অলঙ্কারবিশেষ।

গোধিকা — গোসাপ।

গোঁড়া — (১) যে প্রাচীন ধর্মের মূল আঁকড়াইয়া থাকে; প্রাচীন ধর্ম মতাবলম্বী। (২) ধম্রসম্বন্ধে যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসী। (৩) অতিরিক্ত পক্ষপাতী। (৪) ভক্ত; অতিশয় অনুরক্ত। (৫) চাটুকার; স্তাবক; খোসামোদকারী; তোষামুদে।

গৌরচন্দ্রিকা — মূল গীতের পূর্বে গৌরচন্দ্রের অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যদেবের বন্দনা।

ঘুনি — মাছ ধরিবার ফাঁদবিশেষ।

ঘুসকী, ঘুষকী — লোকাবপাদ ভয়ে গোপনে পরপুরুষগামিনী স্ত্রী।

ঘুপটি (ঘাপটি) মেরে থাকা — (১) লুকাইয়া থাকা। (২) ওঁত পেতে থাকা।

চকোর — (জ্যোৎস্না পান করিয়া তৃপ্ত হয় বলিয়া কথিত) পক্ষিবিশেষ।

চতুর্বিংশতি তত্ত্ব — সাংখ্যদর্শন মতে চব্বিশটি মূল পদার্থ: প্রকৃতি, মহৎ (বুদ্ধি), অহংকার, পঞ্চতন্মাত্র (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ), পঞ্চমহাভূত (ক্ষিতি, অপ্‌, তেজ, মরুৎ, ব্যোম্‌), পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক), পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় (হস্ত, পদ, মুখ, পায়ু, লিঙ্গ) ও মন।

চটকা — ঘুমের আবেশ, তন্দ্রা, আচ্ছন্নতা; অন্যমনস্কতা। (চটকা ভাঙা = বাহ্যজ্ঞান হওয়া; সতর্ক হওয়া)

চকমিলান উঠান — চতুষ্কোণ মিলিত চতুর্দিকে সম উচ্চ কক্ষমধ্যে সমচতুষ্কোণ প্রাঙ্গণ।

চাঁচর (কেশ) — কুঞ্চিত, কোঁকড়া।

চাতরে হাঁড়ি ভাঙা — সর্বসমক্ষে রহস্য ভেদ করা, সর্বসমক্ষে গুপ্তকথা প্রকাশ করিয়া দেওয়া। (চাতর = চৌরাস্তা, চৌমাথা)

চাপরাসী — আরদালী, পেয়াদা, পিয়ন।

চানকে — কলিকাতার স্থানবিশেষ। (বারাকপুরের দক্ষিণে, গঙ্গার পূবাঁধারে)

চারধাম — কাশী, পুরী, বৃন্দাবন ও ব্রজ। মতান্তরে রমানাথ, বৈদ্যনাথ, জগন্নাথ ও দ্বারকানাথ মথুরামণ্ডলস্থ এই চারি ধাম। (ভক্তমাল)

চাঁদনি — মণ্ডপ অর্থাৎ ছাদযুক্ত প্রশস্ত চত্বর।

চিক — গলার গহনাবিশেষ। বাঁশের শলা দ্বারা নির্মিত পর্দা।

চিটে গুড় — কালো চটচটে ঘনরস গুড়।

চুটকি — পদাঙ্গুলির ঝুমকাপরানি আংটিবিশেষ।

চুটিয়ে ফসল কাটা — যথাশক্তি বা সাধ্যানুসারে শস্য কাটা।

চোঁয়ার ভাটি — মদ চুইবার পাত্র।

চোরকুঠুরি (কুঠুরি, কুঠুরী) — (১) গুপ্তকক্ষ। (২) হৃদয়।

চৌদানি — চারদানা মোতিবসানো কানবালাবিশেষ।

চৌদ্দ পোয়া — সাড়ে তিনহাত মানবদেহ।

ছানাবড়া — চিনির রসে পক্ক ছানার বড়া।

জটিলা — (১) আয়ানের মাতা ও রাধিকার শাশুড়ি। (২) অনিষ্টকর কূটবুদ্ধিসম্পন্না; কলহপরায়ণা, বধূদের গঞ্জনাদাত্রী।

জাঁতি — সুপারি কাটিবার যন্ত্রবিশেষ।

জেলেডিঙি — মাছ ধরিবার ছোট নৌকা।

ঝারি — লম্বা-গলা নলযুক্ত জলপাত্রবিশেষ; গাড়ু, ভৃঙ্গার। (পূর্বে সোনা, রূপা নির্মিত ঝারির প্রচুর ব্যবহার ছিল)

টোসা — বিন্দু, ফোঁটা।

ঠেক — তণ্ডুলাদির আধারবিশেষ।

ডঙ্কামারা — বিখ্যাত; প্রসিদ্ধ, বিদিত। ডঙ্কামারা নাম — সর্বত্র বিদিত নাম। ডঙ্কামারা (আলঙ্কারিক অর্থে) — সগর্বে প্রচার করা।

ডাকুর — এক প্রকার বিষাক্ত মাকড়সা।

ডোঙ্গা ঠেলা গান — ডোঙ্গা অর্থাৎ তালগাছের গুঁড়ি খুদিয়া প্রস্তুত ছোট নৌকাবিশেষ। ঠেলা গান অর্থাৎ সারিগান (মাঝি মাল্লারা সমস্বরে যে গান গায়)।

ডি. গুপ্ত — জ্বরের একটা পেটেন্ট ঔষধ।

ঢঙ কাচ — কপটবেশী, কপটচারী, ছদ্মবেশী।

ঢরঢর — ঢলঢল; ভরপুর।

ঢ্যামনা, ঢেমনা — (১) গালিবিশেষ। (২) লম্পট। (৩) নির্বিষ সাপবিশেষ; দাঁড়াশ সাপ। (৪) অকর্মণ্য। (ঢেম্‌না — যে মেয়ে, জেনেশুনে বদমায়েসী করে।)

তড়াগ — বড় ও গভীর পুকুর, দীঘি।

তন্ত্রসার — সর্বশুদ্ধ ১৯২ খানি তন্ত্র, তন্মধ্যে ৬৪ খানি বঙ্গদেশে প্রচলিত। কৃষ্ণানন্দ ওইগুলি সংগ্রহ করিয়া তন্ত্রসার প্রণয়ন করেন।

তাড় — হস্তাভরণবিশেষ, তাড়বালা।

তারাহার — স্থূল মুক্তাহার।

তুম্বা — লাউ। একপ্রকার লাউ অত্যন্ত তেতো, উহার খোল সাধুরা কমণ্ডলুর ন্যায় ব্যবহার করেন।

তেজিমন্দি — চাহদার অনুপাতে বাজারে দরের হ্রাসবৃদ্ধি।

তেলধুতি — যে কাপড় পরিয়া স্নানের পূর্বে গায়ে তেল মাখা হয়।

থানা দেওয়া — যুদ্ধার্থ সসৈন্যে অবস্থান করা।

থিওজফি — গ্রীক দার্শনিক ‘ইয়ামব্লিখস্‌’ (Iamblichus) সর্বপ্রথম থিওসফি শব্দটি ব্যবহার করেন। প্রাচ্যের অতীন্দ্রিয়বাদ বা অলৌকিকবাদের দ্বারা ইহা বিশেষভাবে প্রভাবিত। এই মতানুসারে প্রকট এবং অপ্রকট সমগ্র চরাচর বিশ্বের পশ্চাতে সর্বব্যাপী শাশ্বত অসীম ও অপরিবর্তনীয় একটি মৌলতত্ত্ব রহিয়াছে। জগৎ ও মনুষ্য এই তত্ত্বে হইতে উদ্ভূত ও ইহার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে থিওসফি ভারতবর্ষের বুদ্ধিজীবি হিন্দুসম্প্রদায়কে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করিয়াছিল। ভারতবর্ষে এই মতবাদ প্রচারে অ্যানি বেসান্তের অবদান উল্লেখযোগ্য।

থোলো, থলো — গোছা, গুচ্ছ, স্তবক।

দক্ষিণে কলাগাছ উত্তরে পুঁই, একলা কালো বিড়াল কি করব মুই — কালো বিড়াল অমঙ্গলসূচক; এবং দক্ষিণে কলাগাছ ও উত্তরে পুঁইও অমঙ্গলসূচক। সেইজন্য কালো বিড়ালকে অমঙ্গলসূচক বলিয়া অপবাদ দেওয়ার জন্য তাহার মুখ দিয়া বলানো হইতেছে যে, বাড়ির দক্ষিণে কলাগাছ ও উত্তরে পুঁই তো রয়েইছে; সুতরাং ‘আমি কেন অপবাদগ্রস্ত হই?’

দরগা — (১) পীরের কবর ও তৎসংলগ্ন পবিত্র স্মৃতিমন্দির; মসজিদ। (২) দারগা-র রূপভেদ — বড়দারগা = থানার ভারপ্রাপ্ত ইন্‌স্‌পেক্‌টর। ছোট দারগা = বড় দারগার সহকারী ইন্‌স্‌পেক্‌টর।

দস্তাবিজ, দস্তাবেজ — দলিল।

দরকচা, দড়কচা, দড়কাঁচা, দড়কাঁচা — (১) আধা পাকা আধা কাঁচা, জামড়াপড়া। (২) পরিপূর্ণ সিদ্ধ না হওয়া।

দরবেশ — ভিক্ষুক; ফকির।

দশা — অবস্থা; ভাবাবেশ; সমাধি।

দশম দশা — দশম ভাব। (বৈষ্ণব শাস্ত্রে) শ্রবণ, কীর্তণ, স্মরণ, অর্চন, বন্দন, পাদসেবন, দাস্য, আত্মনিবেদন, স্বীয়ভাব: এই দশটি ভক্তিভাব।

দ্যালগিরি (দেয়ালগিরি, দিয়ালগিরি) — যে প্রদীপ প্রাচীর-গাত্রে সংলগ্ন করিয়া ঝুলাইয়া রাখা যায়।

দেউড়ি — প্রধান প্রবেশদ্বার, তোরণ, ফটক; সদর দরজা।

দোলো, দলো, দলুয়া — রস-ঝরানো গুড় হইতে প্রস্তুত লাল আভাযুক্ত চিনিবিশেষ।

ধান্যমেরু (অন্নমেরু) — অন্নের মেরুতুল্য স্তুপ; প্রচুর অন্নরাশি। রানী রাসমণির জামাতা মধুরামোহন সন ১২৭০ সালে বহুব্যয়সাধ্য অন্নমেরুব্রতানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। ওই ব্রতকালে প্রভুত স্বর্ণরৌপ্যাদি ব্যতীত সহস্র মণ চাউল ও সহস্র মণ তিল ব্রাহ্মণপণ্ডিতদিগকে দান করা হইয়াছিল এবং সহচরী নাম্নী প্রসিদ্ধ গায়িকার কীর্তন, রাজনারায়ণের চণ্ডির গান ও যাত্রা প্রভৃতিতে দক্ষিণেশ্বর-কালীবাটী কিছুকালের জন্য উৎসবক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছিল। (লীলাপ্রসঙ্গ, সাধকভাব, দ্বাদশ অধ্যায়, )

ধূলহাঁড়ি — প্রসূতির নোংরা কাপড়-চোপড় ও ফুল একটি হাঁড়িতে করিয়া মাঠে দূরে ফেলিয়া দেওয়া হয়। যাহারা অভিচারাদি করে তাহারা হাঁড়ি লইয়া যায়।

ধোঁকার টাটি — মায়ার আবরণ; মায়ার ঘর বা রচনা।

নক্স খেলা — (১) একপ্রকার তাসের জুয়াখেলা। (২) (নকসা কেটে বাড়ি দিয়ে) এক ধরনের খেলা।

নবরত্ন — নবচুড়াযুক্ত দেবমন্দির।

নহবত, নওবত, নবত — সানাই ইত্যাদির ঐকতান বাদ্য।

নহবতখানা — যে স্থানে বসিয়া নহবত বাজান হয়।

নববিধান — কেশবচন্দ্র সেন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মধর্মসম্প্রদায়ের শাখাবিশেষ।

নাচদুয়ার — সদর দ্বার; গৃহ-প্রবেশের প্রধান দ্বার।

নারিকেলের ছাঁই — নারিকেল কোরার সহিত গুড়ের মিশ্রণে প্রস্তুত পিষ্টকাদির পুর। (গ্রাম্যদেশে নারিকেল কুরিয়া গুড়ে পাক করিলে বলে, ‘ছাঁই’, চিনিতে পাক করিলে বলে ‘সন্দেশ’।)

ন্যাবা — পাণ্ডুরোগ, কমলারোগ (Jaundice)

ন্যাতাক্যাতার (নাতাকাতার) হাঁড়ি — বাজে জিনিস সঞ্চয় করিয়া রাখার হাঁড়ি।

নারদীয় ভক্তি — এ-পথে প্রথমে ভক্তি, ভক্তি পাকিলে ভাব, ভাবের চেয়ে উচ্চ মহাভাব আর প্রেম। মহাভাব আর প্রেম জীবের হয় না। যার হয়েছে তার বস্তুলাভ অর্থাৎ ঈশ্বরলাভ হয়েছে।

ন্যাংটা — শ্রীরামকৃষ্ণের অদ্বৈতভাবসাধনের গুরু তোতাপুরী।

নিখাদ — খাদহীন, বিশুদ্ধ।

নিকষা — রাবণ, কুম্ভকর্ণ, বিভীষণ ও শূর্পনখার জননী।

নির্মলী — জলপরিষ্কারক ফল বা বীজবিশেষ।

নিধুর টপ্পা — রামনিধি গুপ্ত (‘নিধুবাবু’) ১১৪৮ সালে হুগলীর চাপতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘সরি মিঞার’ টপ্পার অনুকরণে বাঙ্গালা টপ্পা বা প্রণয়সঙ্গীত রচনার প্রবর্তক।

নেকো আম — (১) টক আম। (২) নেকো = নাকযুক্ত। অনেক আমের আকৃতিতে একটি নাকচিহ্ন থাকে। ওই জাতীয় আমগাছের প্রত্যেকটি আমেই এই চিহ্ন থাকে।

নেওটা, নেউটা, নেঅটা, ন্যাওটো — অত্যন্ত অনুরক্ত, স্নেহদ্বারা বশীভূত।

নেতিধৌতি — হঠযোগের ক্রিয়াবিশেষ। লম্বা একটি ভিজা ন্যাকড়ার ফালি আস্তে আস্তে গিলে ফেলে পুনরায় টেনে বার করার নাম নেতি এবং আকণ্ঠ জলপান করে পুনরায় বমি করে বার করার নাম ধৌতি। মলদ্বার দিয়া উদরে জলগ্রহণ ও পুনঃ নিষ্কাসনকেও ধৌতি বলে।

পঁইচে, পঁইছে, পঁইছা — মণিবন্ধে পরিধেয় স্ত্রীভূষণবিশেষ।

পঞ্জুড়ি, পঞ্জড়ি — (১) পাশাখেলার দানবিশেষ। পাশাখেলায় পাঁচের দান অর্থাৎ দুই জুড়ি ও পোয়া: ইহা অত্যন্ত ছোট দান। প্রথমে পঞ্জুড়ি পড়া — আরম্ভেই বে-পড়তা পড়া। (২) পঞ্চভূত।

পঙ্খের কাজ — ঘরের মেঝে বা দেওয়ালে চুনের প্রলেপদ্বারা কারুকার্য।

পঞ্চতত্ত্ব — [সাংখ্য মতে] ক্ষিতি, অপ, তেজঃ, মরুৎ, ব্যোম। [বৈষ্ণব শাস্ত্র] গুরুতত্ত্ব, দেবতত্ত্ব, মন্ত্রতত্ত্ব, মনতত্ত্ব, ধ্যানতত্ত্ব। পঞ্চমকার — মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন।

পঞ্চনামী মত — স্ত্রী-পুরুষ একত্রে উপাসনাকারী ধর্মসম্প্রদায়বিশেষ।

পঞ্চদশী — বেদান্ত প্রতিপাদক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ।

পঞ্চমকার — মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন — তান্ত্রিক সাধনার এই পাঁচটি অঙ্গ।

প’বার — পোয়া বার। (পাশায়) এক ও বার বিন্দু। (‘প’ = পাশার একবিন্দু)

পঞ্জা ছক্কা — (১) তাসের খেলায় ছক্কা পাঞ্জা। (২) পাশা খেলায় পাশার দানবিশেষ। (পঞ্জা = পাঁচফোটা চিহ্নিত তাস। ছক্কা = ছয় ফোঁটা চিহ্নিত তাস)

পঞ্জা ছক্কায় বন্দী হওয়া — পঞ্চভূত ও ছয় রিপুর বশ হওয়া।

পইরাগ — প্রয়াগ-এর রূপভেদ।

পাঁজেব — চরণের অলঙ্কারবিশেষ; নূপুর।

পামরী — পাপিষ্ঠা।

পাঠ্‌ঠা — কুস্তির আখড়ায় যাহারা সবেমাত্র শিখিতে আসিয়াছে।

পাটোয়ার — (১) যে কর্মচারী খাজনা আদায় করে ও তাহার হিসাব রাখে। (২) অতি হিসাবী (পাটোয়ার লোক)

পাটোয়ারী — পাটোয়ারসুলভ। (পাটোয়ারী বুদ্ধি)

প্যালা (পেলা) — পালাগানে বা যাত্রায় গায়কাদির পুরস্কার্থে দেয় অর্থ। [ইহা রুমালে বাঁধিয়া গায়কের নিকটে ‘পেলা’ (প্রেরিত) হইত, সেই হেতু ইহা ‘পেলা’]

পীর — মুসলমান সাধু মহাপুরুষ।

পুরশ্চরণ — (তন্ত্রে) স্বীয় ইষ্টদেবতার মন্ত্রসিদ্ধ্যর্থ ইষ্টদেবতাপূজাপূর্বক মন্ত্রজপ, হোম, তর্পণ, অভিষেক, ব্রাহ্মণভোজনরূপ পঞ্চাঙ্গসাধনা।

পোস্তা — দেওয়াল, বাঁধ প্রভৃতি মজবুত করিবার জন্য গাঁথনি বা ঠেস।

পোঁ — সানাইয়ের সকল সুরের সঙ্গেই যে এক অপটিবর্তনীয় টানা সুর বাজে।

পৌগণ্ড, পোগণ্ড — পাঁচ হইতে পনেরো বৎসর বয়স্ক, (মতান্তরে ছয় হইতে দশ বৎসর বয়স্ক)

ফরাশ, ফরাস — (১) যে ভৃত্য বিছানা পাতা, ঘর ও আসবাবপত্র ঝাড়া-মোছা করা, বাতি জ্বালা ইত্যাদি করে। (২) মেঝেয় পাতা বড় চাদর।

ফলে ফলে — রাশি, রাশি (অনেক)

বকল্‌মা — অন্যের উপর সব বিষয়ে সম্পূর্ণ ভার দেওয়া।

বনাত — একপ্রকার পশমী মোটা কাপড়বিশেষ।

বাজু — তাগাজাতীয় হাতের গহনাবিশেষ।

বাজী (বাজি) ভোর — [বাজী = লীলা, ভোর = অবসান] লীলা শেষ; ভবলীলার অবসান

বার্ডসাই — সিগারেট, ধূমপান।

ব্যালী — সর্পী।

বাহাদুরী কাঠ — শাল, সেগুন প্রভৃতি গাছের বড় গুঁড়ি।

বাছুরে গাল — বাছুরের ন্যায় গাল।

বাঁখারি (বাখারি, ব্যাঁকারি, বাঁকারি) — বাঁশের ফালি; বাতা, চটা।

বাউটি — বলয়জাতীয় বাহুর গহনাবিশেষ।

বাচখেলা (বাইচ) — নৌচালন-প্রতিযোগিতা (boat-race) অবতার বাচখেলার ন্যায় সীমা ও অসীমের মধ্যে ইচ্ছানুযায়ী একবার একদিক, আবার অন্যদিকে যাইতে পারেন।

বাধা — পাদুকা।

বামাচার — তান্ত্রিক আচার বা শক্তিপূজার প্রকারবিশেষ; তন্ত্রোক্ত পঞ্চসাধন বা পঞ্চ ‘ম’কারযুক্ত সাধনাবিশেষ।

বিশালাক্ষির দ — দ (দহ) = নদ্যাদির অতলস্পর্শ ও ঘূর্ণিময় অংশ। (আলঙ্কারিক অর্থে) কঠিন সঙ্কট। (দহে পড়া, দহে মজানো) বিশালাক্ষী = স্রোতস্বতী নদীবিশেষ।

বিল করে — গর্ত করে।

বিড়বার — পরীক্ষা করিবার।

বিপরীত রতাতুরা — বিপরীত বিহার।

বেল্লো (বালদো, বাইল) — তাল, নারিকেল প্রভৃতি বৃক্ষের সবৃন্ত পাতা।

বেশর, বেসর — অর্ধচন্দ্রাকার নাকের গহনা।

বেহেড (বে + head) — মতিভ্রষ্ট; কাণ্ডজ্ঞানহীন; চিন্তাশক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছে এমন।

ভগবতী তনু — (১) কারণ শরীর, যাহার দ্বারা ভগবদ্‌ আনন্দ অনুভব হয়। (২) সাধনার ফলে সাধকের অন্তরে উপলব্ধ স্বীয় শুদ্ধসত্ত্বময়ী প্রেমের দেহ।

ভাঙ্গর, ভাঙ্গড় — সিদ্ধিখোর। (ভাঙ্গরভোলা = শিব)

ভাতার — স্বামী।

ভাবরা (ভাপরা) — গরম বাষ্প; উত্তাপ; গরম সেক।

ভূচরী ও খেচরী মুদ্রা — আভিচারিক ক্রিয়াবিশেষ।

ভেক, ভেখ — সন্ন্যাসী বা বৈরাগীর বেশ।

মঙ্গলবার — অভীষ্ট সিদ্ধিমানসে হিন্দু মহিলাগণ মঙ্গলবারে মঙ্গলচণ্ডী দেবীর অর্চনা ও ব্রত উপসাবাদি করিয়া থাকেন। [ধনপতি সওদাগরের পত্নী খুল্লনা প্রথম মঙ্গলচণ্ডীদেবীর পূজার প্রবর্তন করেন।]

মলয় — দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা; মালাবার দেশ; মালয় উপদ্বীপ; স্বর্গীয় উদ্যান, নন্দন কানন।

মলয়ের হাওয়া — মলয়পর্বত হইতে আগত স্নিগ্ধ, দখিনা বায়ু।

মনুমেন্ট — বর্তমান নাম শহীদ মিনার। কলিকাতার ময়দানে বৃটিশ সেনাপতি অক্‌টারলোনির নামে ৪৮ মিটার উচ্চ সমৃতিস্তম্ভ।

মটকা — কাঁচা ঘরের চালের শীর্ষদেশ।

মজার কুটি — আনন্দের আগার [মজা = আনন্দ; আমোদ, কৌতুক। কুটি = ভাণ্ডার; আগার]

মদনের যাগযজ্ঞ — মদন এখানে কামদেব নহেন, গানের রচয়িতার নাম।

মতুয়ার বুদ্ধি — (dogmatism) মতাদি-সম্পর্কে অন্ধবিশ্বাস।

মনোহর সাঁই (মনোহর শাহী) — মনোহর শাহের প্রবর্তিত কীত্রনের সুরবিশেষ। [রামানন্দ রায়ের বংশধর মনোহর হুগলী দশঘরা গ্রামে বাস করিতেন। ধার্মিক বলিয়া তাঁহার উপাধি ‘শাহ’ হইয়াছিল]

মানোয়ারী গোরা — যুদ্ধজাহাজের নাবিক। [মানোয়ার (man-of-war) = যুদ্ধ-জাহাজ। মানোয়ারী = যুদ্ধ-জাহাজে কর্মরত অর্থাৎ নৌযোদ্ধা। গোরা = (গৌরবর্ণ বলিয়া) ইংরেজ সৈন্য।]

মার্দব — (১) মৃদুভাব, কোমলভাব। (২) দয়া, কৃপা, অনুগ্রহ।

ম্যাদ (মিয়াদ, মেয়াদ) — কারাদণ্ড, কয়েদ। [ম্যাদ খাটা — নির্দিষ্টকাল কারাদণ্ড ভোগ করা।]

মাথুর — (১) মথুরা-সম্বন্ধীয়। (২) কৃষ্ণ বৃন্দাবন ছাড়িয়া মথুরায় গেলে ব্রজবাসিগণের মনে যে বিরহতাপ জাগে তাহা অবলম্বন করিয়া রচিত গীতি-কবিতা।

মিছরীর পানা — মিছরীর শরবত।

মিছিল — মামলা, মকদ্দমা বা তৎসংক্রান্ত নথিপত্র। [মিছিল কালে — মকদ্দমার সময়ে]

মুহুরী (মুহুরি) — কেরানি।

মুক্তকেশী — (১) কালী। (২) এক রকম গাছ, তাহাতে শক্ত বেড়া হয়।

মুণ্ডি — ছোটমণ্ডা বা সন্দেশ।

মুণ্ডী — মুণ্ড; মাথা।

মুষলং কুলনাশনম্‌ — কুলনাশক মুষলের কাহিনী (শ্রীমদ্ভাগবত ১১ স্কন্ধ ১ অধ্যায় দ্রষ্টব্য) অর্থাৎ ভক্তের হৃদয়ে যদি ভক্তি থাকে, জ্ঞানরূপ পাথরে যতই ঘষা হোক না কেন সে ওই মুষলের ন্যায়, নষ্ট হয় না। ভিতরে একটু থাকে, আবার তাহা পরিস্ফুট হয়।

মুদ্দফরাস, মুদ্দাফরাশ, মুদ্দোফরাশ (মুর্দাফরাস-এর কথ্য রূপ) — শবদাহনকারী, ডোম।

মূলাধার — মূল কারণ, প্রধান আশ্রয়; (তন্ত্রে ও যোগশাস্ত্রে) দেহমধ্যেস্থ সুষুম্না নাড়ির ছয়টি চক্রের প্রথম। সুষুম্নার ‘মূল’ ও কুণ্ডলিনীশক্তির ‘আধার’ বলিয়া এই নামে অভিহিত। ইহা মেরুদণ্ডের নিম্নসীমায়, পায়ু ও লিঙ্গের মধ্যবর্তী দুই অঙ্গুলি পরিমিত স্থান। ইহা লোহিত ও চর্তুদল, ব, শ, ষ, স চর্তুদলের মাতৃকাবর্ণ। ইহাতে ইচ্ছাজ্ঞানক্রিয়ারূপ ত্রিকোণমধ্যে স্বয়ম্ভুলিঙ্গ অদস্থিত। এই স্বয়ম্ভুকে সার্ধত্রিবলয়াকারে বেষ্টিত ও তাহার অমৃতনির্গমন-স্থানে মুখ লগ্ন করিয়া ভুজগরূপা কুণ্ডলিনী নিদ্রিতা আছেন। সাধক সাধনাবলে কুণ্ডলিনীকে জাগরিতা করিয়া সহস্রারে সদাশিবের সহিত সম্মিলিতা করেন। ইহা সাধনার চরম ফল।

মেলেনি মাসী — মালিনী মাসী; সাধারণ নারী।

মোলেস্কিন (মোলস্কিন) — (১) (mole-skin) গন্ধমূষিকের চর্ম (ইহার দ্বারা পোশাক তৈয়ারী হয়।) (২) mole — ছুঁচোর ন্যায় একপ্রকার ক্ষুদ্র জীব। তাহার অতি কোমল চর্মের ন্যায় একপ্রকার সুতার কাপড়।

মৌতাত — নির্দিষ্ট সময়ে নেশা করিবার প্রবল স্পৃহা। (মৌতাত ধরা — দেহে মাদকের কার্য আরম্ভ হওয়া। মৌতাত লাগা — অভ্যস্ত সময়ে নেশা করিবার ক্ষুধা হওয়া।)

যাঁতি (জাঁতি, জাঁতী) — সুপারি কাটিবার যন্ত্রবিশেষ।

যোষিৎ — স্ত্রী, নারী।

রামজীবনপুরের শীল — (১) কেহ কেহ বলেন, কামারপুকুর সন্নিকটস্থ রামজীবনপুর গ্রামে ‘শীল’ উপাধিকারী এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁহার স্বভাব অর্ধেক নরম, অর্ধেক গরম।

রাঁড় — (১) বেশ্যা; উপপত্নী। (২) বিধবা।

র‌্যাপার (রেপার) — গরম চাদর, আলোয়ান (wrapper)z

রেল (রেলিং, railing) — লোহা, কাঠ প্রভৃতি সাহায্যে নির্মিত কাঠগড়া বা বেড়া।

রোশনচৌকি — সানাই ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে ঐকতানবাদ্য।

রোউত — রোদন করা।

শশী বশীভূত — কামজয়, ব্রহ্মচর্য।

শঙ্করা — অপরিচিত ব্যক্তি।

শবসাধন — (তন্ত্রে) শ্মশানে তান্ত্রিকের শব দ্বারা কালীসাধনবিশেষ। মতান্তরে অপঘাত মৃতের মড়ার উপর উপবিষ্ট হইয়া মন্ত্র জপকরণ। আবার কোনও কোনও মতে (সদ্যোমৃত পুরুষের) শবের উপরে অশ্বারোহণের ভঙ্গিতে উপবেশনপূর্বক তান্ত্রিক সাধনাবিশেষ।

শিবের মাথায় বজ্র — (১) মৃত্তিকা নির্মিত শিবলিঙ্গের মস্তকে যে গোলাকার ক্ষুদ্র মৃত্তিকাপিণ্ড স্থাপিত হয় তাহাই বজ্র। (২) শিবের ত্রিশূল।

শুভঙ্করী আঁক — শুভঙ্কর = অঙ্কশাস্ত্রবিৎ পণ্ডিত। আঁক = গণিতের অঙ্ক। [ইঁহার নাম ভৃগুরাম দাস, নিবাস বাঁকুড়া জেলা। সাধারণের দৈনিক সাংসারিক কার্যে প্রয়োজনীয় হিসাবের সহজ নিয়ম বাহির করিয়া ইনি ‘শুভঙ্কর’ নামে অভিহিত হন। ইঁহার কৃত অঙ্কশাস্ত্র ‘শুভঙ্করী’ এবং পয়ারে রচিত অঙ্ক কষার নিয়ম ‘শুভঙ্করী আর্য্যা’]

ষটচক্রভেদ — মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা: যোগশাস্ত্রে কথিত শরীরে সুষুম্নানাড়ীমধ্যস্থ পদ্মাকৃত এই ছয় চক্র। মূলাধারস্থ কুণ্ডলিনীশক্তির এই ছয় চক্ত অতিক্রম করিয়া সহস্রারপদ্মে গমনের নাম ষট্‌চক্রভেদ।

মুলাধার — কুণ্ডলিনীশক্তির আধার। সুষুম্নার অধোমুখে সংলগ্ন, গুহ্যের অধোদেশে স্থিত, রক্তবর্ণ ও চতুর্দল। চারি দলে মাতৃকাবর্ণ — ব শ ষ স।

স্বাধিষ্ঠান — লিঙ্গমূলে স্থিত, সিন্দূররাশিবৎ অরুণবর্ণ ও ষড়দল। মাতৃকাবর্ণ — ব ভ ম য র ল।

মণিপুর — নাভিমূলে স্থিত, মেঘবৎ নীলবর্ণ ও দশদল। মাতৃকাবর্ণ — ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ।

অনাহত — হৃদয়ে স্থিত, বন্ধুক পুষ্পবৎ লোহিত ও দ্বাদশদল। মাতৃকাবর্ণ — ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ।

বিশুদ্ধ — কণ্ঠদেশে স্থিত গাঢ় ধূম্রবর্ণ ও ষোড়শদল। মাতৃকাবর্ণ — অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ ৠ ৯ ৡ এ ঐ ও ঔ অং অঃ।

আজ্ঞা — ভ্রূমধ্যে স্থিত। চন্দ্রসদৃশ শুভ্র ও দ্বিদল। মাতৃকাবর্ণ — হ ক্ষ

ষড়্‌দর্শন — সাংখ্য, পাতঞ্জল, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা বা বেদান্ত, ন্যায় ও বৈশেশিক — এই ছয়টি দর্শন শাস্ত্র।

ষড়ৈশ্বর্য — ভগবানের ঐশ্বর্যাদি (ঐশ্বর্য, বীর্য, যশঃ, শ্রী, জ্ঞান, বৈরাগ্য) ছয়প্রকার মহিমা।

স্বর্ণপটপটি — আয়ুর্বেদীয় ঔষধবিশেষ।

সমুদ্রের ফেনা — সমুদ্রতীরে একপ্রকার জলজন্তুর হাড় পাওয়া যায়, তাহা দেখিতে ফেনার মত, টোটকা ঔষধে ব্যবহার হয়। [সমুদ্রফেন = white cuttle-fish bone — স্বীয় দেহ হইতে মসীবর্ণ তরলপদার্থ-নিঃসারক সামুদ্রিক প্রাণিবিশেষের দেহান্তর্গত খোলা]

স্বস্ত্যয়ন — আপৎশান্তি, পাপমোচন, অভীষ্টলাভ প্রভৃতি কামনায় পূজানুষ্ঠানবিশেষ।

সদাব্রত — নিত্যনিয়মপূব্রক অন্নাদিদানরূপ ব্রত; অন্নসত্র।

সদরওয়ালা, সদরআলা — সাবজজ।

সহস্রার — শিরোমধ্যস্থ সুষুম্নানাড়ীস্থিত অধোমুখ সহস্রদল পদ্ম, পরম শিবের অধিষ্ঠান। [যোগী মূলাধারস্থিত কুণ্ডলিনীশক্তিকে জাগরিত ও ষট্‌চক্রভেদপূর্বক সহস্রারস্থ শিবের সহিত মিলিত করিয়া সহস্রারক্ষরিত অমৃতধারা পান ও অনির্বচনীয় পরমানন্দ উপভোগ করেন।]

সাততলা — মনের সাতটি কেন্দ্র আছে যাহার উপর দিয়া ধাপে ধাপে মন উপরে উঠে। সাততলায় ওঠা = মহকারণে লয় হওয়া।

সাতনর — সাত পেঁচওয়ালা কণ্ঠহার।

সাচ্চা (সাঁচ্চা) জরি — বিশুদ্ধ জরি।

সাঁকো — সেতু; পুল।

সানকি — চীনামাটির থালা, রেকাবি বা ডিশ্‌ (plate)

সারে মাতে — গুড়ের শক্তভাগকে সার এবং যে অংশ গলিয়া তরল হইয়া যায় উহাকে মাত বলে; শক্তগুড় জলোগুড়। কোন কোন নাগরীতে কিছু ঝোলাগুড়ও থাকে, আবার কিছু দানাগুরও থাকে। তাকে বলে সারে মাতে থাকা।

সাত চোনার বিচার (এক চোনায় যায়) — (চোনা = চুনা / চয়ণ / নির্বাচন) সাতবার বিচার করে যা নির্ধারণ করা হয়, বিশ্বাস হলে তাহা একেবারেই হয়।

সার্জন (সার্জেন্ট) সাহেব — [Sergeant] পুলিসের উচ্চ কর্মচারিবিশেষ।

সার্জন — [Surgeon] অস্ত্রচিকিৎসক।

সাষ্টাঙ্গ — (১) মস্তক, গ্রীবা, বক্ষ, পার্শ্ব, পৃষ্ঠ, উদর, হস্ত ও পদ — দেহের এই অষ্ট অঙ্গের সহিত। (২) জানু, পদ, পাণি, বক্ষ, বুদ্ধি, মস্তক, বাক্য, দৃষ্টি — এই অষ্ট অঙ্গের সহিত কৃত (সাষ্টাঙ্গ প্রণাম)

সিধা (সিধে) — পাক করিয়া খাইবার মত দত্ত চাউল, ডাল, ঘৃত, লবণ, আলু প্রভৃতি ভোজ্য।

সিদ্ধাই — যোগলব্ধ শক্তি।

সুঁদরী — [সিন্দূরবর্ণ বলিয়া অথবা সুন্দরবনজাত বলিয়া সুন্দরী — সুঁদরী] বৃক্ষবিশেষ; ইহার শাখা-প্রশাখায় জ্বালানি কাষ্ঠ হয়।

সুবচনী — মঙ্গলদায়িনী দেবীবিশেষ; শুভচণ্ডী।

সেঁকুল — (শেয়াকুল, সেয়াকুল) — কুলজাতীয় বন্য কাঁটাগাছবিশেষ।

সেঙ্গাত (সাঙ্গাত, স্যাঙ্গাত) — সখা; সুহৃদ্‌; মিত্র।

সেথো — সহচর, সাথী।

সোঁধোগন্ধ (সোঁদা, সোঁধা) — দগ্ধ বা শুষ্ক মৃত্তিকায় জল পড়িলে যে সৌগন্ধ (সৌরভ, সদ্‌গন্ধ, সুবাস) বাহির হয়।

হ-ছ-না, রা-ছ — (ভাবাবস্থায়) হরিশ ছুঁইতে পারে না, রাখাল পারে।

হনুমান পুরী — হিন্দুস্থানী পালোয়ানের নাম।

হাবাতে কাঠ — খুব হালকা অসার কাঠ।

হাতে খড়ি — খড়ি দিয়া লিখাইয়া শিশুর বিদ্যারম্ভ।

হাতছিনে — সূতার মত পাকান হাত; শীর্ণ, কৃশ, সরু।

হাড় পেকে — অনাহারে ও কষ্ট সহিয়া যাহার হাড় দড়ির মত পাকাইয়া হাড়সার হইয়া গিয়াছে; অতি কৃশ।

হাজাশুখা — হাজা = অতিবৃষ্টি বা জলপ্লাবনাদির ফলে শস্যের পচন। শুখা = অনাবৃষ্টি।

হাবাতে — ভাগ্যহীন ব্যক্তি।

হাঁড়ি ভাঙ্গা — গুপ্তকথা প্রকাশ করিয়া দেওয়া। (হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গা)

হিস্যা (হিস্‌সা, হিস্যে, হিস্‌সে) — প্রাপ্য ভাগ বা অংশ; ভাগ (সম্পত্তির হিস্‌সা)।

হেদিয়ে — দৈহিক বা মানসিক কষ্টহেতু ব্যাকুলতা প্রকাশ করা। (হেদিয়ে পড়া)

হোমাপাখি — শ্রীরামকৃষ্ণ বহু বৈদিক, তান্ত্রিক ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের পণ্ডিতদের সহিত নানাবিধ প্রসঙ্গাদি করিতেন। হয়তো কোন বৈদিক পণ্ডিত তাঁহাকে এই হোমাপাখির কথা বলিয়াছিলেন। এবং সেইটিই তিনি এইখানে বলেছেন যে ‘বেদে আছে হোমাপাখির কথা’ ইত্যাদি।

“ব্যোম্নৈব জাতনষ্টানাং মহতাং ব্যোমপক্ষিণাম্‌ ।
বন্ধুনাবন্ধনিলয়ান্‌ শরদভ্রসমাকৃতীন্‌ ।। — যোগবাশিষ্ঠ, রামায়ণ নির্বাণ প্রকরণ, পূর্বার্ধ ১৫.১৯

(ব্যোমপক্ষীরা আকাশেই উৎপন্ন হয় এবং আকাশেই মরিয়া থাকে। তাহারা কদাচ ভূমিতে অবতীর্ণ হয় না। শারদ-নীরদের ন্যায় বিরিঞ্চিহংসসন্তানেরা ওই ব্যোমপক্ষীদিগের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপন করিয়া বাস করিতেছে।)

মারাঠী ভাষার সুপ্রসিদ্ধ জ্ঞানেশ্বরী ও দাসবোধ গ্রন্থদ্বয়ে ওই জাতীয় পাখির উল্লেখ আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *