2 of 2

৭৭. বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা

বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মর্যাদা

এ সংক্রান্ত অধ্যায়ে ইমাম বুখারী বলেন, : আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ… আনাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হারিছা ছিল একজন অল্প বয়সী যুবক। বদর যুদ্ধে সে শহীদ হয়ে গেলে তার মা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। হারিছা আমার কত আদরের সন্তান তা আপনি জানেন। সে যদি জান্নাতী হয় তা হলে আমি ধৈর্য ধারণ করবো এবং এ জন্যে ছওয়াবের আশা পোষণ করবো। আর যদি ভিন্ন কিছু হয়, তবে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি কি করছি। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, থাম, পাগল হয়েছ নাকি। জান্নাত কি মাত্র একটি? অনেক জান্নাত আছে। সে তো জান্নাতুল ফিরদাউসে আছে। এ হাদীছটি অন্য সূত্রে ছাবিত, কাতাদা ও আনাস থেকে বর্ণিত। তাতে আছে, “হারিছা ছিল যুদ্ধের ময়দানের পর্যবেক্ষণকারী এবং “তোমার ছেলে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত আছে।” এ কথাটির মধ্যে বদরী সাহাবীদের মর্যাদার ব্যাপারে এক নিগৃঢ় তত্ত্ব লুক্কায়িত আছে। কেননা, হারিছা রণক্ষেত্রে বা যুদ্ধের সারিতে ছিলেন না। বরং দূর থেকে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি হাওয থেকে পানি পান করার সময় হঠাৎ এক তীর এসে তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। যুদ্ধের সাথে এতটুকু সংশ্লিষ্টতার জন্যে পুরস্কার স্বরূপ তাঁকে সেই ফিরদাউসে স্থান দেয়া হয়, যা সকল জান্নাতের সেরা জান্নাত, সর্বোত্তম জান্নাত, যেখান থেকে নহর প্রবাহিত হয়ে চলে গিয়েছে অন্যান্য জান্নাতে, যে জান্নাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর উম্মতকে বলেছেন, তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাতের প্রার্থনা কর, তখন জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করবে।

এমতাবস্থায় হারিছার মর্যাদা যদি এতো বড় হয়, তা হলে যারা তিনগুণ বেশী সৈন্য ও অস্ত্ৰে সজ্জিত শক্ৰদের মুখোমুখি হয়ে লড়াই করেছিলেন, তাদের মর্যাদা যে কত উচু হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

এ ছাড়া ইমাম বুখারী ও মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে ইসহাক ইবন রাহওয়ায়হ সূত্রে. আলী ইবন আবু তালিব (রা) বর্ণিত হাতিব ইবন আবু বালতা আর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। হাতিব ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের বছর মক্কাবাসীদের নিকট এক গোপন চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। এতে হযরত উমর ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে হত্যা করার জন্যে রাসূলুল্লাহর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন এবং বলেন, সে আল্লাহ, রাসূল ও মু’মিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, সে তো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লোক। তুমি কি জান? আল্লাহ নিশ্চয়ই বদরী সাহাবীদের প্রতি সদয় হয়ে বলে দিয়েছেন, “তোমাদের যা ইচ্ছা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” বুখারীর শব্দমালা হচ্ছে এরূপ–“সে কি বদরী সাহাবী নয়? আল্লাহ নিশ্চয়ই বন্দরীদের প্রতি লক্ষ্য করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, তোমরা তোমাদের যা ইচ্ছা! কর। জান্নাত তোমাদের জন্যে অবধারিত কিংবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এ কথা শুনে উমরের দু’-চোখ অশ্রু সজল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। ইমাম মুসলিম কুতীয়বা সূত্রে. জাবির থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা হাতিব-এর এক গোলাম এসে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট হাতিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল এবং বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাতিব অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো, সে জাহান্নামে যাবে না, কারণ সে বদর ও হুদায়বিয়ায় উপস্থিত ছিল। ইমাম আহমদ মুসলিমের শর্তে নিম্নোক্ত হাদীছটি উল্লেখ করেছেন : সুলায়মান ইবন দাউদের সূত্রে. জাবির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি বদর কিংবা হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। ইমাম আহমদ বলেন, ইয়াখীদ….. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) বলেন, : আল্লাহ তা’আলা বদরীদের প্রতি সদয় দৃষ্টি রেখে ঘোষণা করেছেন :

“তোমরা যা ইচ্ছে কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।” এ হাদীছটি আবু দাউদও তাঁর কিতাবে ইয়াদীদ ইবন হারূন সূত্রে উল্লেখ করেছেন। বাযযার তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবন মারযুক সূত্রে. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : যারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, আশা করি আল্লাহ চাহেন তো তারা কেউই দোযখে যাবে না। হাদীছটি আবু হুরায়রা (রা) থেকে এই একটি সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে। লেখক বলেন, এ হাদীছটি কেবল বাযযারই বর্ণনা করেছেন, অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। এবং এটা সহীহ হাদীছের শর্ত অনুযায়ী বৰ্ণিত। ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে বদর যুদ্ধে ফেরেশতাদের অংশগ্রহণ অনুচ্ছেদে ইসহাক ইবন ইবরাহীমের সূত্রে … মুআয ইবন রাফি” আযরাকী থেকে বর্ণনা করেন

যে, তাঁর পিতা রাফি” একজন বন্দরী সাহাবী। তিনি বলেন, একদা জিবরাঈল ফেরেশতা নবী করীম (সা)-এর নিকট এসে বললেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরকে আপনারা কিরূপ গণ্য করেন? তিনি বললেন, মুসলমানদের মধ্যে তারা সর্বোত্তম শ্রেণী। (রাবীর সন্দেহ) অথবা এরূপ কোন বাক্য তিনি বললেন। তখন জিবরাঈল বললেন, ফেরেশতাদের মধ্যে যারা বদর যুদ্ধে এসেছিলেন, তাদের মর্যাদাও অনুরূপ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *