১১. পরিশিষ্ট – মিতাক্ষরা

পরিশিষ্ট – মিতাক্ষরা

এই গ্রন্থের উপক্ৰমণিকায় লিখিত হইয়াছে যে বঙ্গদেশে দায়ভাগের নিয়মই প্রচলিত। কিন্তু এই প্রদেশে এমন বহুব্যক্তি বাস করেন যাহার পূৰ্ব্বে বিহার বা পশ্চিমবাসী ছিলেন, এখন বঙ্গদেশে বহুপুরুষাবধি বাস করিয়া বাঙ্গালীভাবাপন্ন, এমন কি বাঙ্গালীরই মধ্যে পরিগণিত হইয়াছেন, কিন্তু তাহারা তাহদের পূর্বতন রীতিনীতি পরিত্যাগ করেন নাই। তাহারা এখনও মিতাক্ষরা কর্তৃক অনুশাসিত। তাঁহাদের অবগতির জন্য মিতাক্ষরার বিধিগুলি এই পরিশিষ্টে লিখিত হইল।

দত্তক গ্রহণ, বিবাহ, নাবালক ও অভিভাবক, উইল, স্ত্রীলোকের স্বত্ব, ভরণপোষণ ও ধৰ্ম্মার্থে সম্পত্তি দান—এই কয়ট বিষয়ে মিত্তাক্ষরা ও দায় ভাগে কোন প্রভেদ নাই। কেবল এজমালী সম্পত্তি, বিভাগ, ঋণ পরিশোধ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তি হস্তাস্তুর, স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার, এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে মিতাক্ষরার বিধানগুলি দায়ভাগ হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। এই গুলি নিম্নে লিপিবদ্ধ হইল।

এজমালী সম্পত্তি

কোন ব্যক্তি এবং তাহার নিয়তন তিন পুরুষ একত্রে এজমালী রূপে সম্পত্তির অধিকারী হন। দায়ভাগ অনুসারে যেমন পিতা জীবিত থাকিতে পুত্রের কোন অধিকারই নাই, মিতাক্ষধার নিয়ম সেরূপ নহে; মিতাক্ষরা অনুসারে, কোন ব্যক্তি তাহার পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র সহ একসঙ্গে সম্পত্তি ভোগ দখল করিয়া থাকেন। মিত্তাক্ষরার মূল সূত্র এই –“ভূধা পিতামহোপাত্ত নিবন্ধে দ্রব্যমেব বা। তত্ৰ স্ত্যং সদৃশং স্বাম্যং পিতুঃ পুত্রস্ত চোভয়েঃ” অর্থাৎ যে স্থাবর সম্পত্তি বা অস্থাবর দ্রব্য পিতামহ কর্তৃক অজিত হইয়াছে, তাহাতে পিতা এবং পুত্র উভয়ের তুল্যরূপ অধিকার হইবে।

এজমালী সম্পত্তিতে কাহারও কোন নির্দিষ্ট অংশ নাই৷ এজমালী পরিবারের মেম্বরগণের জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগতই সকলের অংশের পরিমাণের হ্রাসবুদ্ধি হইয়া থাকে। যে সময়ে বিভাগ হয়, সেই সময়কার অবস্থা দেখিয়া অংশ নির্ণয় করিতে হইবে। কেবল এইটুকু বলা যাইতে পারে যে পিতা এবং তাহার পুত্ৰগণ তুল (২শে অধিকারী হইয়া থাকে। নিম্নলিখিত উদাহরণ দ্বারা বিষয়টী বুঝিতে পাড়া যাইবে :–

  • আনন্দ
    • বলরাম
    • চন্দ্র
    • দীনেশ

আনন্দ এবং তাঁহার তিন পুত্র বলরাম, চন্দ্র ও দীনেশ আছে, আর কেহ নাই; এরূপ ক্ষেত্রে বিভাগ হইবার সময়ে সম্পত্তি চারিভাগে বিভক্ত হইবে, এবং প্রত্যেকে একচতুর্থাংশ পাইবেন। যদি চন্দ্রের মৃত্যু হয়, এবং তাহার পর সম্পত্তির বিভাগ হয়, তাহা হইলে আনন্দ, বলরাম ও দীনেশ প্রত্যেকে এক তৃতীয়াংশ পাইবে। যদি আনন্দের আর একটী পুত্র ঈশান জন্মগ্রহণ করে, এবং পরে সম্পত্তির বিভাগ হয়, তাহা হইলে আনন্দ এক তাহার চারি পুত্র, এই পাঁচজনের প্রত্যেকেই এক পঞ্চমাংশ পাইবেন।

পৌত্র প্রপৌত্রাদি থাকিলে বিষয়টা আরও জটিল হয় তাহা নিম্ন উদাহরণ দ্বারা বুঝান যাইতেছে —

  • আনন্দ
    • বলোরাম
      • দীনেশ
      • ঈশান
        • গণেশ
          • হরেন্দ্র
        • ফণী
      • চন্দ্র

যদি শুধু আনন্দ, বলরাম এবং চন্দ্র থাকে, তাহা হইলে বিভাগের সময়ে তিনজনের প্রত্যেকে এক তৃতীয়াংশ পাইবে। যদি চন্দ্র অপুত্ৰক অবস্থায় পরলোক গমন করে, এবং শুধু আনন্দ ও বলরাম থাকে, আর কেহ না থাকে, তাহা হইলে বিভাগের সময়ে আনন্দ অৰ্দ্ধাংশ এবং বলরাম অৰ্দ্ধাংশ পাইবে। যদি আনন্দ, চন্দ্র, দীনেশ, ঈশান ও ফণী থাকে এবং বলরামের মৃত্যু হইয়া থাকে, তাহা হইলে বিভাগের সময়ে আনন্দ ১/৩ অংশ, চন্দ্র ১/৩ অংশ পাইবে এবং দীনেশ, ঈশান ও ফণী এই তিনজন তাহাদের পিতার ১/৩ অংশ তুল্যরূপে পাইবে, অর্থাৎ প্রত্যেকে ১/৯ অংশ পাইবে। যদি বিভাগের পূৰ্ব্বে ঈশানের মৃত্যু হইয়া থাকে, তাহা হইলে দীনেশ ১/৬, এবং ফণী ১/৬ অংশ পাইবে। যদি আনন্দের জীবিতকালে বলরাম, ঈশান এবং গণেশ মরিয়া গিয়া থাকে, এবং আনন্দ, চন্দ্র, দীনেশ, ফণী এবং হরেন্দ্র থাকে, তাহা হইলে হরেন্দ্র কিছুই পাইবে না, কারণ আনন্দ এবং তাহার নিম্নতম তিনপুরুষ (প্রপৌত্র) পৰ্য্যন্ত এজমালী পরিবারের সম্পত্তির অংশী হইবে, হরেন্দ্র আনন্দের বৃদ্ধ প্রপৌত্র, সুতরাং আনন্দের জীবিতকালে সে এজমালী সম্পত্তিতে অধিকারী হইবে না; আনন্দ এক তৃতীয়াংশ, চন্দ্র এক তৃতীয়াংশ, দীনেশ এক-ষষ্ঠাংশ, এবং ফণী এক ষষ্ঠাংশ পাইবে।

উপরিলিখিত উদাহরণগুলি হইতে বুঝা যাইবে যে দায়ভাগ অনুসারে যেমন সম্পত্তির মালিকের মৃত্যুতে তাঁহার পুত্ৰগণ “উত্তরাধিকারী” হইয়া থাকে, মিতাক্ষরা আইনমতে পৈতৃকসম্পত্তি সম্বন্ধে সেরূপ উত্তরাধিকারেব (inheritance) নিয়ম নাই; একজনের মৃত্যুতে তাহার সম্পত্তি কোন উত্তরাধিকারে অশায় না, তাহার অংশটা অপর জীবিত ব্যক্তিগণের অংশের মধ্যে চলিয়া যুায়। যথা, আনন্দ এবং তাহার পুত্র বলরাম ও চন্দ্র থাকিলে, সম্পত্তিতে তিনজনের প্রত্যেকের এক তৃতীয়াংশ থাকে; তাহার পর আনন্দের মৃত্যু হইলে, বলরাম ও চন্দ্র প্রত্যেকে সম্পত্তির অৰ্দ্ধাংশ পাইবে; কিন্তু এস্থলে এইরূপ বলা যাইবে না যে আনন্দের মৃত্যুতে বলরাম এবং চন্দ্র তাহার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হইলেন; এস্থলে বলা হইবে যে আনন্দের মৃত্যুতে তাহার অংশটা তাহার দুই পুত্রের মধ্যে চলিয়া গেল।

মিতাক্ষরা মতে পৈতৃক ও স্বোপাজ্জিত এই দুই প্রকার সম্পত্তি হয়; এবং এই দুই প্রকার সম্পত্তিতে বিশেষ প্রভেদ আছে। উপরে যে নিয়ম গুলি উদাহরণ দ্বারা বুঝান গেল, তাহা পৈতৃক সম্পত্তি সম্বন্ধে, স্বোপাজিত সম্পত্তি সম্বন্ধে নহে। অর্থাৎ উপরোক্ত উদাহরণ গুলিতে যে সম্পত্তির কথা লেখা হইয়াছে, তাহা যদি আনন্দের পৈতৃক সম্পত্তি হয় তাহা হইলে আনন্দ এবং তাহার পুত্ৰগণ একত্রে ভোগ ও অধিকার করিবে; কিন্তু যদি আনন্দের স্বোপঞ্জিত সম্পত্তি হয়, তাহা লইলে আনন্দই শুধু ঐ সম্পত্তির মালিক হইবে, এরং তাহার জীবিতকালে বলরাম বা চন্দ্র প্রভৃতি পুত্ৰগণ কোন অংশেরই দাবী করিতে পরিবে না।

দুইভ্রাতা যদি একত্রে মতামহের সম্পত্তি পাইয়া থাকে, তাহা হইলে তৎসম্বন্ধে কতকটা পৈতৃক সম্পত্তির এবং কতকটা স্বোপাজ্জিত সম্পত্তির নিয়ম খাটিবে। ঐ সম্পত্তি দুই ভ্ৰাতাই একত্রে ভোগ করিবে, কিন্তু তাহাদের পুত্ৰগণ পিতার জীবিতকালে কোন দাবী করিতে পরিবে না। পক্ষান্তরে, যদি দুই ভ্রাতার মধ্যে একজনের অপুত্রক অবস্থায় স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যু হয়, তাহা হইলে ঐ মৃত ভ্রাতার সম্পত্তি তাহার বিধবা স্ত্রী পাইবে না, জীবিত ভ্রাতাই পাইবে (২৩ মাদ্রাজ.৩৭৮ প্রিভি কৌন্সিল)।

যিনি সম্পত্তি অর্জন করেন, তাহার হস্তে যতদিন সম্পত্তি থাকে, ততদিন উহা তাহার স্বোপাজ্জিত সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হয়, এবং তাহার জীবিত কালে পুত্ৰগণ কোন অংশের দাবী করিতে পারে না। কিন্তু তাঁহার মৃত্যুর পর তাহার পুত্রদের হস্তে যখন সম্পত্তি পড়িবে, তখন তাহা তাহাদের পক্ষে পৈতৃক সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হইবে, এবং তখন হইতে পৈতৃক সম্পত্তির নিয়মগুলি প্রযোজ্য হইবে (রাজ মোহন বঃ গৌর মোহন ৮ মূরস্ ইণ্ডিয়ান আপীলস ৯১)।

এজমালি সম্পত্তির অংশীগণ সকলেই সম্পত্তি বিভাগের জন্য দাবী ও নালিস করিতে পারেন। পুত্র তাহার পিতার বিরুদ্ধে বা পিতৃব্যের বিরুদ্ধে নালিস করিতে পারে; কিন্তু তাহার পিতা ও পিতৃব্য যৌথরূপে থাকিতে ইচ্ছা করিলে সে শুধু পিতা হইতে পৃথক হইতে পারে, পিতাকে ও পিতৃব্যকে পৃথক হইতে বাধ্য করিতে পারে না। সে তাহার পিতা জীবিত থাকা কালে পিতামহের বিরুদ্ধে বিভাগের দালী করিতে পারে না।

এজমালী পরিবারের মধ্যে যিনি সৰ্ব্বাপেক্ষ জ্যেষ্ঠ তিনই (যথা পিতা, বা পিতৃব্য বা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা) কৰ্ত্তাস্বরূপ এজমালী সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিয়া থাকেন। সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ সম্বন্ধে তাহার ক্ষমতা খুব অধিক। এজমালী পরিবারের উপকারার্থে ঠুিনি সম্পত্তির আয় হইতে নিজের বিবেচনামত ব্যয় করিতে পারেন, এমন কি সমুদয় আয়ের টাকা ব্যয় করিতে পারেন, তাহাতে কেহ তাহাকে বাধা দিতে পারে না।

ঋণপরিশোধ

কোন ব্যক্তি ঋণ করিয়া মরিয়া গেলে পর তাহার পুত্র বা পৌত্র মুতব্যক্তির সম্পত্তি হইতে ঐ ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য। তবে যদি মৃত ব্যক্তি মদ্যপান, বারাঙ্গনা-গমন, জুয়াখেল প্রভৃতি অসৎকার্যোর জন্য ব্যয় করিয়া ঋণ করিয়া গিয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহা পরিশোধ করিতে পুত্র বা পৌত্র বাধ্য নহে।

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জীবিতকালেই তৎকৃত ঋণের টাকা আদায়ের জন্য পাওনাদার নালিস করিতে পারেন, এবং এই নালিসে ঐ ব্যক্তির পুত্র বা পৌত্রগণকে পক্ষভুক্ত না করিলেও চলে। তাহাদিগকে পক্ষভুক্ত না করিলেও তাহার মোকদ্দমার নিষ্পত্তির দ্বারা বাধ্য থাকিবে। (মদনঠাকুর ব; কাস্তলাল, ২২ উইক্‌লি রিপোর্টার ৫৬ প্রিভিকৌন্সিল)।

পুত্র এবং পৌত্র ভিন্ন আর কোন ব্যক্তি সম্পত্তির ওয়ারিস হইলে সে মৃতব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য; এমন কি, ঐ ঋণ যদি অসৎব্যয়ের জন্য কৃত হইয় থাকে, তাহা হইলেও সে তাহা পরিশোধ করিতে বাধ্য হইবে।

সম্পত্তি হস্তান্তর

কোন ব্যক্তি তাঁহার স্বোপাজ্জিত সম্পত্তি (স্থাবর হউক বা অস্থাবর হউক) আপন ইচ্ছামত হস্তান্তর করিতে পারেন, তাহাতে তাহার জীবিতকালে তাঁহার পুত্র পৌত্রাদির কোন অধিকার নাই, এবং তাহার। হস্তান্তরে কোন আপত্তি করিতে পারে না (বলবস্ত ব: রাণী কিশোরী, ২০ এলাহাবাদ ৬৭ প্রি; কৌ:)। তিনি ইচ্ছা করিলে ঐ সম্পত্তি তাঁহার পুত্ৰগণের মধ্যে অসমানভাবে বিভাগ করিয়া দিয়া যাইতে পারেন।

কোন ব্যক্তি তাঁহার পৈতৃক অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন না, তবে ঐ সম্পত্তি হইতে সামান্য কিছু অংশ তাহার কোন স্নেহের পাত্রকে দান করিতে পারেন; যথা পুত্রবধূকে সামান্য কিছু অলঙ্কার বা অন্ত অস্থাবর দ্রব্য দান (২৪ বোম্বাই ৬৪৭) বা স্থাবর সম্পত্তির আয় হইতে কন্যাকে কিছু অর্থ দান (৩১ বোম্বাই ৩৭৩)।

পৈতৃক স্থাবর সম্পত্তি কেহ হস্তাস্তর করিতে পারেন না, কারণ তাহাতে পুত্ৰগণের অংশ আছে। তবে নিম্নলিখিত স্থলে হস্তান্তর সিদ্ধ হয়, যথা :–

(১) পুত্ৰগণের সম্মতি লইয়া পিতা পৈতৃক স্থাবর সম্পত্তি দান বিক্রয়াদি করিতে পারেন। পুত্ৰগণ হস্তান্তরের পরে সম্মতি দিলেও চলে। (২) কেহ তাহার কোন পুত্র জন্মিবার পূৰ্ব্বে পৈতৃক স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন। (৭ কলিঃ ল রিপোর্টস, ২৯৪)

(৩) আইনসঙ্গত আবশ্যকতা থাকিলে পিতা পুত্ৰগণের সম্মতি না লইয়াও পৈতৃক স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিতে বা বন্ধক দিতে পারেন। কন্যাগণের বিবাহ, পরিবারের মেম্বরগণের ভরণপোষণ, পুত্ৰগণের বিদ্যাশিক্ষা, গবর্ণমেণ্টের রাজস্ব দান, বাৎসরিক পূজা পাৰ্ব্বণাদির ব্যয়, উপনয়ন শ্রাদ্ধাদির জন্য ব্যয়, মামলা মোকদ্দমা পরিচালন প্রভৃতি কাৰ্য্যকে আইনসঙ্গত আবশ্যকতা বলে।

(৪) স্বীয় ঋণ পরিশোধের জন্য পিতা সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে তাহা সিদ্ধ হইবে, এবং পুত্রগণ তাহাতে আপত্তি করিতে পারে না। তবে ঐ ঋণ যেন অসৎ ব্যয়ের জন্য না হয়। (গিরিধারী” বঃ কান্তলাল, ২২ উইক্‌লি রিপোর্টার ৫৬ প্রি কৌ:)

(৪) গৃহদেবতার নিত্যসেবার জন্য স্থাবর সম্পত্তির কিয়দংশ হস্তান্তর করিতে পারা যায় (৮ এলাহাবাদ ৭৬)।

সম্পত্তিবিভাগ হইবার পূৰ্ব্বে কোন মেম্বর তাহার অবিভক্ত অংশ হস্তান্তর করিতে পারেন না। যদি কেহ করেন, তাহা হইলে অপর কোন মেম্বর নালিস করিলে ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ সাব্যস্ত হইবে। (সদাবৰ্ত্ত বঃ ফুলবাস, ২২ উইক্‌লি রিপোর্টার ১ ফুলবেঞ্চ)। তবে কোন মেম্বরের বিরুদ্ধে টাকার ডিক্রীর বলে তাহার অবিভক্ত অংশ ক্রোক ও নিলাম করাইতে পারা যায় (দীনদয়াল বঃ জগদীপ, ৩ কলিকাতা ১৯৮ প্রি: কৌ:)।

দান সম্বন্ধে যে নিয়মগুলি পূৰ্ব্বে (৬৮—৭১ পৃষ্ঠায়) লিখিত হইয়াছে, তাহা মিতাক্ষরা সম্বন্ধেও খাটিবে।

বিভাগ

বিভাগের সময় নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ অংশ পাইয়া থাকেন –

(১) পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র। পূর্বেই লিখিত হইয়াছে যে দায়ভাগে যেমন পিতা বৰ্ত্তমানে পুত্রের কোন অধিকার নাই, মিতাক্ষরার নিয়ম সেরূপ নহে। মিতাক্ষরায় পিতা ও পুত্ৰগণ একত্রে সম্পত্তি ভোগ দখল করিয়া থাকে এবং পুত্ৰগণ পিতার তুল্যাংশ প্রাপ্ত হয়।

(২) স্ত্রী। পিতা এবং পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হইলে, পিতার স্ত্রীগণ তাহাদের স্বামীর তুল্যাংশ পাইবে। যথা, আনন্দ, তাহার দুই স্ত্রী, এবং পাঁচ পুত্র (এক স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র এবং অপর স্ত্রীর গর্ভে ৪ পুত্র) এই কয়জন মধ্যে বিভাগ হইতেছে। এস্থলে প্রত্যেক স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ পাইবে (দুলার বঃ দ্বারকানাথ, ৩২ কলিঃ ২৩৪)। তবে ইহা জানা আবশ্যক যে স্ত্রীগণু যে অংশ পাইতেছেন, তাহা শুধু ভরণপোষণ স্বরূপ; ইহাতে০ তাহদের জীবনস্বত্ব মাত্র হইবে (সুন্দর ব: মনোহর, ১. কলি লরিপোর্টস, ৭৯)। স্ত্রী সম্পত্তির বিভাগের জন্য দাবী করিতে পারে না।

(৩) মাতা, বিমাতা। পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগের সময়ে মাতা তাঁহার পুত্ৰগণের সমান অংশ পাইবেন; বিমাতাও তাহার সপত্নীপুত্রের সমান অংশ পাইবেন। কোন ব্যক্তি দুই স্ত্রী এবং চারি পুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করিলেন—এক স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র, এবং অপর স্ত্রীর গর্ভে তিন পুত্র; এস্থলে বিভাগের সময়ে প্রত্যেক পুত্র এবং তাহদের মাতা ও বিমাতা তুল্যাংশে পাইবে; অর্থাৎ প্রত্যেকে এক-ষষ্ঠাং পাইবে (দামোদর ব; সেনাবতী, ৮ কলিঃ ৫৩৭)। এক ব্যক্তি তিন স্ত্রী এবং প্রত্যেক স্ত্রীর গর্তে একটী করিয়া পুত্র রাখিয়া পরলোক গমন করিলেন; এস্থলে বিভাগের সময়ে প্রত্যেক স্ত্রী এবং প্রত্যেক পুত্র এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে।

(৪) পিতামহী। যদি পিতামহী এবং পৌত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হয়, এবং মধ্যে পুত্র না থাকে, তাহা হইলে পিতামহী এবং পৌত্রগণ তুল্যাংশে পাইবে।

(৫) কন্য। পিতার মৃত্যুর পর পুত্ৰগণের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ হইবার সময়ে অবিবাহিত কন্যা পুত্রের অংশের এক-চতুর্থাংশ পাইয়া থাকে। যথা, যদি এক অবিবাহিত কন্যা এবং এক পুত্র থাকে, তাহা হইলে কন্যার অংশ এইরূপ হইবে —কন্যা যদি পুত্র হইত তাহা হইলে সে ১/২ অংশ পাইত; তাহার ১/৪ অংশ, অর্থাৎ সম্পত্তির ১/৮ অংশ সে পাইবে; বাকী ৭/৮ অংশ পুত্ৰ পাইবে।

উপরোক্ত স্ত্রীলোকগণ কেহই নিজে সম্পত্তি বিভাগের দাবী করিতে পারে না, তবে পুরুষ ব্যক্তিগণের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগের সময়ে তাহারা আইনমত অংশ পাইবেন।

উত্তরাধিকার

নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ পর পর (অর্থাৎ একের অভাবে পরবর্তী ব্যক্তি) উত্তরাধিকারী হইবেন —

(১-৩) পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, একত্রে;

(৪) বিধবা পত্নী;

(৫) কন্যা; কন্যাগণের মধ্যে কেহ অবিবাহিভা থাকিলে সে-ই সমস্ত সম্পত্তি পাইয়া থাকে, বিবাহিতাগণ পাইবে না।

(৬) দৌহিত্র;

(৭) মাতা;

(৮) পিতা;

(৯) ভ্রাতা;

(১০) ভ্রাতুষ্পুত্র;

(১১) ভ্রাতার পৌত্র;

(১২) পিতামহী; (১৩) পিতামহ; (১৪) পিতৃব্য (অর্থাৎ পিতার ভ্রাতা), (১৫) পিতৃব্যপুত্র : (১৬) পিতৃব্যের পৌত্র; (১৭) প্রপিতামহী; (১৮) প্রপিতামহ; (১৯) প্রপিতামহের পুত্র (অর্থাৎ পিতার পিতৃব্য); এইরূপে সপ্তম পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতিগণ { সপিণ্ডগণ) পাইবে। তাহার পর সমানোদকগণ (৮ম হইতে ১৪শ পুরুষ পৰ্য্যন্ত জ্ঞাতিগণ) পাইবে।” সম্প্রতি এই মৰ্ম্মে একটী আইন বিধিবদ্ধ হইতেছে যে পিতামহের পর এবং পিতুর ভ্রাতার পূর্বে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ পর পর উত্তরাধিকারীsহইতে পারিবে, যথা—পৌত্রী, দৌহিত্রী, ভগ্নী, ভাগিনেয়। স্ত্রীলোকগণ অবশ্য জীবনস্বত্বে পাইবে।

সমানোদকগণের অভাবে বন্ধুগণ। ‘বন্ধু’ অর্থে ভিন্নগোত্র সপিণ্ডগণকে বুঝায়। যথা—পুত্রের দৌহিত্র, মাতুল, মাতামহ, পিতামহের দৌহিত্র প্রভৃতি।

বন্ধুগণ তিনপ্রকার-আত্মবন্ধু অর্থাৎ নিজের বংশজ বন্ধু (যথা পুত্রেব দৌহিত্র, পৌত্রের দৌহিত্র), পিতৃবন্ধু, অর্থাৎ পিতার বংশজ বন্ধু (যথা, পিতার দৌহিত্র, পিতার মামাতো ভাই, প্রভৃতি), মাতৃবন্ধু (যথা, মাতার মাসতুতো ভাই, মাতার মামাতে৷ ভাই, প্রভৃতি)৷ বন্ধুগণের মধ্যে আত্মবন্ধুগণ অগ্রগণ্য, তদভাবে পিতৃবন্ধু এবং তদভাবে মাতৃবন্ধুগণ পাইবেন। তদভাবে গুরু, শিস্য, পুরোহিত, স্বজাতিবর্গ, গ্রামের ব্রাহ্মণগণ, তদভাবে গবর্ণমেণ্ট।

দায়ভাগের স্থায় মিতাক্ষরা আইনেও পূৰ্ব্বে নিয়ম ছিল যে জন্মান্ধ, জন্মবধির, জন্মখঞ্জ, জন্মমূক, কুষ্ঠগ্রস্ত বা ক্লীব ব্যক্তি সম্পত্তিতে অধিকারী হইতে পারে না। কিন্তু সম্প্রতি ১৯২৮ সালের ১২ আইনে (উত্তরাধিকারে অক্ষমতা দূরীকরণ বিষয়ক আইন) এই বিধান করা হইয়াছে যে কোন শারীরিক রোগ বা বিকৃতি বশত: কোন ব্যক্তি সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি উন্মাদগ্রস্ত বা জড়বুদ্ধি সে সম্পত্তিতে অধিকারী হইতে পরিবে না।

স্ত্রীধন

অবিবাহিত কন্যার স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে দায়ভাগের যে নিয়ম (১২৫ পূঃ দ্রষ্টব্য) মিতাক্ষরারও সেই নিয়ম।

বিবাহিত কন্যার স্ত্রীধন সম্পত্তিতে মিতাক্ষরা অনুসারে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ পর পর ওয়ারিশ হইবেন :–

(১) অবিবাহিত কন্যা; (২) বিবাহিত দরিদ্র কন্যা; (৩) বিবাহিত অবস্থাপন্ন কন্যা; (৪) দৌহিত্রী; (৫) দৌহিত্র; (৬) পুত্ৰ; (৭) পৌত্র; (৮) স্বামী; (৯) স্বামীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ। [ যদি বিবাহ আসুরমতে হইয়া থাকে, তাহা হইলে (৮) মাতা; (৯) পিতা; (১০) পিতার অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ–এইরূপ হইবে। ]

তদভাবে-মাত, মাসী, মামী, জ্যেঠাই বা খুড়ী, পিসী, শ্বাশুড়ী, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার স্ত্রী। তদভাবে স্বামীর ভাগিনেয়, স্বীয় ভগ্নীর পুত্র, স্বামীর ভ্রাতুষ্পুত্র, স্বীয় ভ্রাতুপুত্র, জামাতা, দেবর।

সপত্নীপুত্র অপেক্ষা স্বামী অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী (৩৩ বোম্বাই ৪৫২)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *