০৯. ভরণপোষণ – নবম অধ্যায়

ভরণপোষণ – নবম অধ্যায়

ভরণপোষণ করিবার দুইপ্রকার দায়িত্ব আছে :–(ক) প্রথমতঃ, কতকগুলি ব্যক্তিকে ভরণপোষণ করা অবহু কৰ্ত্তব্য; কোনও পারিবারিক সম্পত্তি যদি না থাকে, তাহা হইলেও স্কোপাজ্জিত সম্পত্তি হইতেও তাঁহাদিগকে ভরণপোষণ করিতে হইবে। (খ) দ্বিতীয়তঃ, কতকগুলি ব্যক্তিকে ভরণপোষণ করা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের উপর নিভর করে; অর্থাৎ যদি কেহ পারিবারিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হয়, তাহা হইলে সে ঐ পরিবারের কতকগুলি ব্যক্তিকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হয়।

(ক) নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণকে ভরণপোষণ করা অবশ্য কৰ্ত্তব্য :–

(১) বৃদ্ধ পিতামাতা। এমন কি, বিধবা মাতা বুদ্ধা না হইলেও পুত্র তাঁহাকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য, কিন্তু সধবা বিমাতাকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে।

(২) নাবালক ও অক্ষম পুত্র। পুত্র উপাৰ্জ্জনক্ষম হইবার মত হইলে তাহাকে ভরণপোষণ করিতে পিতা বাধ্য নহেন। কিন্তু পুত্র যদি জন্মাবধি অন্ধ, খঞ্জ, বধির, উন্মাদগ্ৰস্ত ইত্যাদি হয়, তাহা হইলে সে পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হয় না, এবং সে সাবালক হইলেও পিতা তাহাকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য।

সন্তান যদি উপপত্নীগভজাত হয় তাই হইলেও যতদিন ঐ সন্তান নাবালক থাকে, ততদিন তাহাকে ভরণপোষণ করিতে পিতা হিন্দু আইন অনুসারে বাধ্য (৩২ কলিকাতা ৪৭৯)। এতদ্ভিন্ন ফৌজদারী কাৰ্য্যবিধি আইনের ৪৮৮ ধারা অনুসারেও পিতার ঐরূপ দায়িত্ব আছে।

(৩) অবিবাহিত কন্যা। কন্যার বিবাহ না হওয়া পৰ্য্যন্ত পিতা তাহার ভরণপোষণ দিতে বাধা। বিবাহের পর ঐ কন্যার স্বামীই তাহাকে ভরণপোষণ করিবে, তাহার পিতা ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে। এমন কি, কন্যার স্বামী যদি দরিদ্র হয়, তাহা হইলেও সেই কন্যা পিতার নিকট হইতে বা পিতার মৃত্যুর পর পিতার ওয়ারিসগণের নিকট হইতে ভরণপোষণ আদায় করিতে পারিবে না (মোক্ষদা বঃ নন্দলাল, ২৮ কলিকাতা ২৭৮)।

(৪) স্ত্রী। বিবাহের সময় হইতেই স্বামী নিজ স্ত্রীকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য। স্ত্রী যতদিন অল্পবয়স্ক থাকেন, ততদিন প্রথানুসারে প্রায়ই তিনি পিত্রালয়ে বাস করেন, এবং পিতা তাহাকে স্নেহের সহিত প্রতিপালন করেন; কিন্তু তিনি আইনমতে বিবাহের পর কন্যার গ্রাসাচ্ছাদন দিতে বাধ্য নহেন; সুতরাং যদি পিতা অক্ষম হন বা অসম্মত হন, তা হইলে পিতৃগৃহে ও স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য হইবেন; স্বামী বর্তমানে স্বামী ভিন্ন আর কাহারও বিরুদ্ধে স্ত্রীর গ্রাসাচ্ছাদনের দাবী চলিতে পারে না; কিন্তু যদি স্বামী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেন এবং স্বামীর সম্পত্তি অন্য কেহ দখল করেন, তাই হইলে তাহর বিরুদ্ধে স্ত্রীর ঐ দাবী চলিবে।

স্ত্রী স্বামীর সহিত এক সঙ্গে বাস করিতে বাধ্য, এবং স্ত্র স্বামীর সহিত বাস করিয়া তাহার কৰ্ত্তব্য কাৰ্য্য সম্পাদন করিতে থাকিলে স্বামী অবশ্ব তাকার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য হইবেন। যদি স্ত্রী আপন ভটছাঘ বিন কাবণ, কিংব। সংসার, করিতে গেলেই যেরূপ কলহ স্ত্রী-পুরুষে সচরাচর হইয়া থাকে সেটুরূপ কলহের জন্য স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়ু। অন্যত্র চলিয়া যান, তাহা হইলে তিনি পৃথক মাসহারার দাবী করিতে পারেন না। তবে স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি এরূপ নৃশংস ব্যবহার (প্রহার) করেন যে স্ত্রী স্বামীগৃহে থাকিলে তাহার অত্যন্ত শারীরিক বিপদের সম্ভাবনা (মাতঙ্গিনী বঃ যোগেন্দ্র, ১৯ কলিকাতা ৮৪; দুলার বঃ দ্বারক, ৩৪ কলিকাতা ৯৭১) অথবা স্ত্রীকে মৰ্ম্মান্তিক কষ্ট দেন (যথা, গৃহে উপপত্নী রাথ, ৯ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৫১০) তাহা হইলে স্ত্রী স্বামী হইতে পৃথক থাকিয়া ভরণপোষণের দাবী করিতে পারেন। স্বামী পুনরায় বিবাহ করিলেও যদি প্রথম স্ত্রীকে বাটতে রাখিতে ইচ্ছা করেন তাহা হইলে তিনি স্বামীগৃহ ত্যাগ করিলে পৃথক ভরণপোষণ পাইবেন না (১ মাদ্রাজ ৩৭৫)। স্ত্রী যদি কুচরিত্রা হইয়া স্বামীগৃহ ত্যাগ করেন তাহা হইলে স্বামী তাহাকে বাটীতে আনিতে বা তাহার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নহেন স্বামী বিধৰ্ম্মী হইলে স্ত্রী পৃথক ভরণপোষণ পাইতে পারেন (৫ উইক্‌লি রিপোটার ২৩৫)।

উপরোক্ত ব্যক্তিগণকে প্রতিপালন কর। প্রত্যেক ব্যক্তিরক্ট কর্তব্য। এই কৰ্ত্তব্য এরূপ গুরুতর ষে যদি ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তাহা হইলেও তাহার উত্তরাধিকারী মৃত ব্যক্তির ঐ সকল সম্পৰ্কীয় ব্যক্তিগণকে প্রতিপালন করিতে বাধ্য হইবেন। অর্থাৎ আনন্দের মৃত্যুর পর যদি আনন্দেব পুত্ৰগণ তাঁহার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন, তাঙ্গ হইলে ঐ পুত্রগণ আনন্দের বৃদ্ধ পিতামাতাকে, আনন্দের অবিবাহিত কন্যাগণকে এবং আনন্দের বিধবা পত্নীকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন।

(খ) এইবার, পারিবারিক সম্পত্তি থাকিলে যে সকল ব্যক্তিকে ভরণপোষণ করা কর্তব্য তাঁহাদের কথা লিখিত হইতেছ। কেহ যদি পারিবারিক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হন, তাহা হইলে তিনি পরিবারেব নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন।

শুধু তাহাই নহে; কেহ যদি তাহার সমস্ত সম্পত্তি অপর কাহাকেও উইল করিয়া দিয়া যান, তাহা হইলেও উইলমূলে যে ব্যক্তি সম্পত্তি প্রাপ্ত হইবেন, তিনি উইলকর্তার নিম্নলিখিত সম্পৰ্কীয় ব্যক্তিগণকে প্রতিপালন করিতে বাধ্য হইবেন। অর্থাৎ আনন্দ যদি তাহার সমস্ত সম্পত্তি উইল দ্বারা তাহার ভ্রাতুষ্পুত্রকে দিয়া যান, তাহা হইলে সেই ভ্রাতুষ্পুত্র ঐ সম্পত্তি হইতে আনন্দের বৃদ্ধ পিতামাতাকে, নাবালক পুত্রকে, অবিবাহিত কন্যাকে, বিধবা পত্নীকে, এবং বিধবা পুত্রবধূকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন।

১) মৃত মালিকের বিধবা পত্নী। পুত্র যদি পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হন, তাহা হইলে তিনি মৃত মালিকের বিধবা পত্নীগণকে (অর্থাৎ তাহার নিজের মাতা ও বিমাতাকে। ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন। মাতাকে ভুরণপোষণ করিতে পুত্র সকল সময়েই (অর্থাৎ পৈতৃক সম্পত্তি না থাকিলেও) বাধ্য; কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তি থাকিলেই পুত্র তাহার বিধবা বিমাতাকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য, নচেৎ নহে। যদি মৃত মালিকের দুই পত্নী থাকে, এবং দুই পত্নীর গর্ভেই পুত্র জন্মিয় থাকে, তাহা হইলে, যতদিন পুত্ৰগণ এজমালীতে থাকে, ততদিন সমস্ত সম্পত্তি হইতে দুই পত্নীর ভরণপোষণ নিৰ্ব্বাঙ্গ হইবে। কিন্তু যদি পুত্ৰগণের মধ্যে বিভাগ হয় তাহা হইলে প্রত্যেক পত্নী তাহার নিজ গর্ভজাত পুত্রের নিকট হইতে ভরণপোষণ পাইবেন, সপত্নীপুত্রের নিকট হইতে পাইবেন না।

পৌত্র যদি পিতামহের সম্পত্তি পাইয়া থাকেন তাত। হইলে তিনি বিধবা পিতামহীকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য। প্রপিতামীর সম্বন্ধেও ঐরূপ।

স্বামীর মৃত্যুর পরও স্বামীর বাটতেই বাস কর। বিধবার পক্ষে অনেক সময়েই কৰ্ত্তব্য। অন্যায় বা অসৎ অভিপ্রায়ে তিনি স্বামার বাট পরিত্যাগ করিতে পারেন না। কিন্তু তিনি যদি অসতী না হন তাহা হইলে অন্যত্র থাকিলেও ভরণপোষণ পাইবেন . বিধবা ইচ্ছা করিলেই যে অন্যত্র থাকিয়া ভরণপোষণ পাইবেন এমন নহে; পারিবারিক অবস্থা, সংসারের আয় ব্যয় ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া, বিধবা অন্যত্র থাকিলে তাহাকে ভরণপোষণ দেওয়া যাইতে পারে কি না তাহা স্থির হইবে। যে স্থলে স্বামী উইলে লিখিয়া যান যে, তাহার স্ত্রী তাহার বাটীতে বাস না করিলে ভরণপোষণ পাইবে না, যে স্থলে সেই বিধবা স্বামীর বাটীতে না থাকিলে ভরণপোষণের দাবী করিতে পারেন না।

বিধবা স্ত্রী তাহার স্বামীর বাটীতে বাস করিতে স্বত্ববতী। তাহার পুত্র যদি পারিবারিক বাটী বিক্রয় করেন, তাহা হইলেও যতদিন ঐ বিধবার থাকিবার উপযুক্ত আর একটী বাটীর যোগাড় না হয় ততদিন খরিদদার বিধবাকে ঐ বাট হইতে তাড়াইয়া দিতে পারেন না (মঙ্গল বঃ দীননাথ, ১২ উইক্‌লি রিপোর্টার ৩৫)। কিন্তু যদি পিতার ঋণ পরিশোধ করিবার জন্য পুত্র ঐ বাটী বিক্রয় করিতে বাধ্য হন বা পিতার ঋণের জন্য ঐ বাট নিলাম হইয় যায়, তাহা হইলে বিধবার ঐ স্বত্ব থাকিবে না।

(২) অবিবাহিত ভগ্নী। পৈতৃক সম্পত্তি হইতে ভ্রাতা তাহার অবিবাহিত ভগ্নীগণকে ভরণপোষণ করিবেন এবং তাহণদের বিবাহের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করিবেন।

(৩) কন্যাগণ। পরিবারের মধ্যে অবিবাহিত কন্যা থাকিলে তাহাদিগকে ভরণপোষণ করিতে এবং পারিবারিক সম্পত্তি হইতে তাহাদের বিবাহের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ করিতে হইবে। কিন্তু বিবাহিত কন্যাগণ বা দরিদ্র বিধবা কন্যাগণ ভরণপোষণ পাইতে স্বত্ববতী হইবে না (২৮ কলিকাতা ২৭৮; ২৩ বোম্বাই ২৯১)।

(৪) পরিবারের কোনও মেম্বর যদি জন্মান্ধ, জন্মবধির, জন্মমূক, উন্মাদগ্ৰস্ত বা কুষ্ঠগ্রস্ত হওয়ার জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হন, তাহা হইলে অন্য যে ব্যক্তি ঐ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবেন, তিনি ঐ সম্পত্তি হইতে উক্ত অক্ষম মেম্বরকে ও তাঁহার বৃদ্ধ পিতামাতাকে, পত্নীকে, নাবালক পুত্রকে ও অবিবাহিত কন্যাকে ভরণপোষণ করিবেন, এবং ঐ সম্পত্তি হইতে ঐ কন্যার বিবাহ দিবেন।

(৫) পরিবারে যদি কোনও ব্যক্তি দত্তকরূপে গৃহীত হইয়া থাকে এবং যদি ঐ দত্তকগ্ৰহণ আসিদ্ধ হয় এবং দত্তকপুত্র তাহার জন্মদাতা পিতার নিকট ফিরিয়া যাইতে না পাবে, তাহা হইলে পারিবারিক সম্পত্তিতে অপর যে ব্যক্তি উত্তরাধিকারী হইবেন, তিনি ঐ দত্তকপুত্রকে ভরণপোষণ করিবেন; তাহার যদি বিবাহ হইয়া থাকে তাহা ইলে তাহার স্ত্রী ও নাবালক পুত্র প্রভৃতিকে ও ভরণপোষণ করবেন :

(৬) ঘরজামাই। ঘরজামাই তাহার শ্বশুরের পরিবাবের মেম্বরেব মতই গণ্য হইবেন, এবং তাহাকে ভরণপোষণ করিতে সক্টবে; তাহাকে তাড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। যতদিন তিনি পরিবারের মধ্যে বাস করিবেন, ততদিন তিনি শ্বশুরের সম্পত্তি হইতে ভরণপোষণ করিবেন, তিনি স্বেচ্ছায় অন্যত্র চলিয়া গেলে আর পৃথক ভরণপোষণ পাইবেন না। তবে অবস্থাবিশেষে তিনি পৃথক ভরণপোষণ পাইতে ও পারেন। গোবিন্দ বঃ রাধাবল্লভ, ১২ কলিকাতা ল জাৰ্ণাল ১৭৩)।

(৭) বিধবা পুত্রবধূ। পিতা যখন সাবালক পুত্রকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহেন, তখন তিনি তাহার পুত্রের বিপবী স্ত্রীকেও প্রতিপালন করিতে বাধ্য নহেন; তবে যদি পিতা পুত্রের সম্পত্তি কোনরূপে প্রাপ্ত হইয়া থাকেন তাহা হইলে তিনি অবশ্য তার বিধব: পুত্রবধূকে ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন, (ক্ষেত্রমণি ব; কাশীনাথ, বেঙ্গল ল রিপোট ১৫)। এরূপ ক্ষেত্রে ঐ শ্বশুরের মৃত্যুর পর সম্পত্তি যাহার হাতে যাইবে, তাহার নিকট হওতেও বিধবা পুত্রবধু ভরণপোষণ আদায় করিতে পারিবেন। পুত্রের সম্পত্তি না পাইলে শ্বশুর বিধবা পুত্রবধূকে ভরণপোষণ করিতে আইনতঃ বাধ্য নহেন বটে, কিন্তু ধৰ্ম্মতঃ ইহ, তাহার কৰ্ত্তব্য কাৰ্য, এবং তাহার মৃত্যুর পর যে ব্যক্তিগণ তাহার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হইবে তাহারা উক্ত বিধবা পুত্রবধুকেও ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন (কামিনীদাসী বঃ চন্দ্র, ১৭ কলিকাতা ৩৭৩)। বিধবা পুত্রবধু যদি শ্বশুরের সহিত কোন প্রকার কলহ না করিয়া তাহার পিতৃগৃহে গিয়া বাস করে তাহা হইলেও সে পৃথক ভরণপোষণ পাইবে; কিন্তু সে যদি তাহার স্বামীত্যক্ত টাকা, কোম্পানীর কাগজ প্রভূতি সমস্ত দ্রব্য লইয়া গিয়া শ্বশুরের সংসার পরিত্যাগ করিয়া পিতৃগৃহে গিয়া বাস করে, তাহা হইলে আর সে শ্বশুরের নিকট হইতে (বা শ্বশুরের মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের নিকট হইতে) পৃথক ভরণপোষণ দাবী করিতে পারিবে না (সিদ্ধেশ্বরী বং জনাৰ্দ্দন, ২৯ কলিকাতা ৫৫৭)।

ভরণপোষণের পরিমাণ

ভরণপোষণের জন্য মাসহার স্থির করিতে হইলে পারিবারিক সম্পত্তির আয়ব্যয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখিতে হইবে। এতদ্ভিন্ন, যে ব্যক্তিকে মাসহার দিতে হইবে তাহার অবস্থা, এবং সম্পত্তি হইতে আরও কতজন ব্যক্তিকে ভরণপোষণ করিতে হইবে, এই সকল বিষয়ও পৰ্য্যালোচনা করিয়া মাসহারা স্থির করিতে হইবে (১২ এলাহাবাদ ৫৫৮; করুণাময়ী বঃ এডমিনিষ্ট্রেটর জেনারেল, ৯ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস, ৬৫১)। কিন্তু সকল ব্যক্তিই যদি পৃথক মাসহারার টাকা চাহেন, তাহা হইলে সকল সময়ে তাহা দেওয়া সম্ভবপর নহে। সকলে মিলিয়া যদি পরিবারের মধ্যে থাকিয়া প্রতিপালিত হন, তাহা হইলে তাহাতে অনেক অল্প টাকায় ভরণপোষণের ব্যয় নির্বাহ হয়; কিন্তু সকলে পৃথক থাকিয় টাকা লইতে চাহিল, অনেক বেশ খরচ পড়িয়া যায়। সুতরাং সম্পত্তির আয় কম হইলে সকলকে পৃথক মাসহারার টাকা দেওয়া সম্ভবপর নয়। সকলেই পরিবারের মধ্যে একত্রে থাকিয়া প্রতিপালিত হইলেই সুবিধাজনক।

পরিবারের মৃত মেম্বরের বিধবা পত্নীর ভরণপোষণের জন্য মাসহারা স্থির করিতে হইলে অনেকগুলি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। যদিও হিন্দুশাস্ত্রে বিধবাকে গ্রাসাচ্ছাদন সম্বন্ধে খুব সংযত হইয়া থাকিতে আদেশ করা হইয়াছে, তথাপি তাহাকে শুধু গ্রাসাচ্ছাদনের উপযোগী টাকা দিলে চলিবে না। তিনি তাহার স্বামীর জীবিতকালে যেরূপ স্বচ্ছন্দে ছিলেন, এখনও যাহাতে তিনি সেইরূপ স্বচ্ছন্দে থাকিতে পারেন তাঁহাকে তদুপযোগী অর্থ দিতে হুইবে (৯ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৬৫১)। যাহাতে তিনি অর্থাভাবে কষ্ট পাইয়া অসৎ পথ অবলম্বন ন: করেন, তাহাকে এরূপ যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ দেওয়া কৰ্ত্তব্য (১২ এলাহাবাদ ৫৫৮)। যদি তিনি পূজা, ব্রত, তীর্থভ্ৰমণ আদি ধৰ্ম্মকাৰ্য্য করেন, তাহা হইলে,তজ্জন্য তাঁহাকে সঙ্গতমত অর্থ দিতে হইবে (প্রমথ ব: নগেন্দ্রবাল ১২ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৮০৮); পক্ষাস্তরে, তাহার নিজের স্ত্রীধন কিরূপ প্রকারের আছে তাহাও বিবেচনা করিতে হইবে। বস্ত্র এবং অলঙ্কারাদি দ্রব্য হিসাবের মধ্যে ধরা উচিত নহে; কিন্তু তাহার স্বাধন হষ্টতে যদি কিছু আয় থাকে (যথা, কোম্পানীর কাগজের সুদ ইত্যাদি) তবে তাহা ধরা উচিত (২ বোম্বাই, ৫৭৮)। স্ত্রীধন হইতে ভরণপোষণের যোগ্য যথেষ্ট আয়ু থাকিলে তিনি আব ভরণপোষণের জন্য পৃথক টাকার দাবী করিতে পারেন না।

মাসহারার টাকা একবার স্থির হইলেও (এমন কি, ডিক্রীর দ্বার স্থির হইলেও) পরে তাহার পরিবর্তন হইতে পারে। সম্পত্তির হ্রাস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাসহারার টাকার হ্রাস বৃদ্ধি হইতে পারিবে (দেবীপ্রসাদ বঃ গুণবতী, ২২ কলিকাতা ৪১০; রত্নমাল ব; কামাখ্যা, ৩১ কলিকত: ল জগনর্ণল ৩৫১, ৮ মাদ্রাজ ৯৪, ২২ মাদ্রাজ ১৭৫, ১৭ বোম্বাই ৪৫)।

ভরণপোষণের দায়িত্ব

সম্পত্তি হইতে য়ে সকল ব্যক্তি ভরণপোষণ পাইতে স্বত্ববান, তাঁহাদিগকে ভরণপোষণ করিবার দায়িত্ব সমস্ত উত্তরাধিকারীগণের (স্ত্রীলোকই হউন, বা পুরুষই ইউন) উপর পড়িবে। এমন কি, যদি উত্তরাধিকারীর অভাবে ঐ সম্পত্তি গবৰ্ণমেণ্টে অৰ্শায়, তাহা হইলে গবৰ্ণমেণ্টেরও নিকট হইতে ঐ সকল ভরণপোষণ পাইতে স্বত্ববান হইবেন (১ কলিকাতা ৩৯১)।

কোন উত্তরাধিকারী যদি ঐ সম্পত্তি বিক্রয় করেন, এবং ঐ সম্পত্তির উপর এতগুলি ব্যক্তির ভরণপোষণের দাবী আছে, তাহা যদি খরিদদার তদন্ত করিয়াও না জানিয়া সরল বিশ্বাসে ঐ সম্পত্তি ক্রয় করেন তাহা হইলে খরিদদারের বিরুদ্ধে ঐ সকল ব্যক্তির আর ভরণপোষণের দাবী চলিবে না (২০ উইক্‌লি রিপোর্টার ১২৬)। তবে যদি কেহ বিক্রয়ের পূর্বেই ভরণপোষণের জন্য নালিশ করিয়া ঐ সম্পত্তির উপর দায় স্থা করিয়া এক ডিক্ৰী প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে খরিদ্দার সরল বিশ্বাসে খরিদ করিলেও ঐ ডিক্ৰী দ্বারা বাধ্য থাকিবেন (৯ কলিকাতা ৫৩৫)।

কেহ যদি দানপত্রমূলে বা উইলমূলে (অর্থাৎ বিনামূল্যে) কোনও সম্পত্তি প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে ঐ সম্পত্তি হইতে যে সকল ব্যক্তির ভরণপোষণ পাইবার স্বত্ব আছে, তাহাদিগকে তিনি ভরণপোষণ করিতে বাধ্য হইবেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *