০৮. স্ত্রীলোকের স্বত্ব ও স্ত্রীধন – অষ্টম অধ্যায়

স্ত্রীলোকের স্বত্ব ও স্ত্রীধন  – অষ্টম অধ্যায়

স্ত্রীলোকের স্বত্ব ও স্ত্রীধন

এই অধ্যায়ে প্রথমতঃ, স্ত্রীলোকগণ সাধারণতঃ যে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন তাহাতে তাঁহাদের কিরূপ স্বত্ব জন্মায় তাহা বর্ণিত হইবে, এবং পরে ‘স্ত্রীধন’ নামক সম্পত্তির কথা লিখিত হইবে।

সম্পত্তি সম্বন্ধে স্ত্রীলোকের ক্ষমতা

কোনও স্ত্রীলোক কোনও পুরুষের বা স্ত্রীলোকের উত্তরাধিকারিণীস্বরূপ স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি প্রাপ্ত হইলে, অথবা এজমালী সম্পত্তির বিভাগে কোনও অংশ প্রাপ্ত হইলে বা অন্য বোনও প্রকারে কোনও সম্পত্তি প্রাপ্ত হইলে—বিধবা স্ত্রীই হউন, কি কন্যাক্ট হউন, কি মাত্রাঙ্গ হউন, কি পিতামহী প্রভৃতি অন্য স্ত্রীলোক হউন-তিনি নিবুর্গঢ় স্বত্ত্বে ঐ সম্পত্তি পাইবেন না। জীবিতকাল পর্য্যন্ত তিনি তাচ ভোগ করবেন এবং তাহার মৃত্যুর পর শেষ পুরুষ মালিকের যিনি ওয়ারিস থাকবেন তিনি সম্পত্তি পাইবেন।

স্ত্রীলোক তাঁহার জীবিতকাল পয্যন্ত সম্পত্তির আয়ের টাকা যেরূপভাবে ইচ্ছা ব্যয় করিতে পারেন, তাহাতে কেহ কোনও আপত্তি করিতে পরিবে না। মূল সম্পত্তিটা তিনি নষ্ট না করিলেই হইল। আসল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ তিনি যে উপায়ে ভাল বিবেচনা করেন, সেই উপায়ে করিতে পারেন। সম্পত্ত্বির আয় হইতে কোন টাকা সঞ্চিত করিয়া রাখা না রাখা তাহার ইচ্ছা; যদি তিনি টাকা সঞ্চিত করেন, তাহা হইলে সেই সঞ্চয়ের টাকাও তিনি যথেচ্ছ ব্যয় করিতে পারেন। সঞ্চয়ের টাকা যদি তিনি ব্যয় না করিয়া রাখিয়া দেন, তাহা হইলে উহা সম্পত্তির সামিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং তাহার মৃত্যুর পর ভাবী উত্তরাধিকারী তাহা পাইবে; তাহা তাহার স্ত্রীধন বলিয়া গণ্য হইবে না (ঈশ্বরী দত্ত ব: হংসবতী, ১০ কলিকাতা ৩২৪)। যদি তিনি সঞ্চয়ের টাকা হইতে কোনও সম্পত্তি খরিদ করেন, তবে তাহা আসল সম্পত্তির সামিল বলিয়া গণ্য হইবে, তাহা তাহার নিজের স্ত্রীধনরূপে গণ্য হইবে না, এবং তাহা তিনি বিন কারণে ইচ্ছামত হস্তস্তর করিতে পরিবেন না, এবং তাহার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তি শেষ পুরুষ মালিকের উত্তরাধিকারী পাইবেন (১৪ কলিকাতা ৩৮৭)। কিন্তু এই সম্পত্তি খরিদ করিবার সময়ে তিনি যদি উহা আসল সম্পত্তি হইতে পৃথক করিয়া নিজ সম্পত্তি স্বরূপ রাখিয়া থাকেন, তবে তাহা তাহার নিজ স্ত্রীধন সম্পত্তি স্বরূপ গণ্য হইবে ও তাহা তিনি ইচ্ছামত হস্তান্তর করিতে পারিবেন।

স্থাবর সম্পত্তি সম্বন্ধে স্ত্রীলোকের যেরূপ ক্ষমতা, অস্থাবর সম্পত্তি সম্বন্ধেও সেইরূপ। উভয় প্রকার সম্পত্তিতে তিনি একইরূপ স্বত্ব পাইয়া থাকেন।

হস্তাস্তরের ক্ষমতা

স্ত্রীলোক সাধারণত: সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন না। কিন্তু (ক) আইনসঙ্গত আবশুকতা থাকিলে, কিংবা (খ) ভাবী উত্তরাধিকারাঁর সম্মতি থাকিলে, হস্তান্তর করিতে পারেন।

আইন সঙ্গত আবশ্যকতা

আইনসঙ্গত আবশ্যকতা থাকিলে স্ত্রীলোক ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি না লইয়াও সম্পত্তি হস্তাস্তর করিতে পারেন। নিম্নলিখিত হেতুগুলিকে আইনের ভাষায় “আইনসঙ্গত আবশ্যকতা” বলে :–

(১) ষে কার্য্যে মৃত মালিকের আত্মার সদগতি হইবে এরূপ ধৰ্ম্মকাৰ্য্য বা দাতব্য কাৰ্য্যের জন্য স্ত্রীলোক উত্তরাধিকারিণী সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন; যথা, গৃহদেবতার পুঙ্গা এবং বহুকাল ধরিয়া যে সকল পূজা (দুর্গোৎসব প্রভৃতি) চলিয়া আসিতেছে তাতার ব্যয় নির্বাহাৰ্থ আবশুক মত সম্পত্তি বিক্রয় করিলে তাহা সিদ্ধ হইবে।

কোনও নুতন দেবালয় নিৰ্ম্মাণ, পুষ্করিণী প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কাৰ্য্য ধৰ্ম্ম কাৰ্য্য বটে কিন্তু এই কাৰ্য্যগুলি ঠিক মুত মালিকেব পারলৌকিক হিতার্থে ব্যয় বলা যায় না; এষ্টগুলি স্ত্রীলোকের নিজের পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য পুণ্যকাৰ্য্য; সুতরাং এজন্য তিনি সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে পারেন না (হুরমঙ্গল ব: রামগোপাল, ১৭ কলিকাতা উইক্‌লি নোট্স ৭৮২)। সেইরূপ, স্ত্রীলোক তাড়ার নিজের পুণ্যের জন্য তীর্থযাত্র প্রভৃতি কার্য্যে সম্প র বিক্রয় করিতে পারেন না (ইরিকিষেণ ব: বঞ্জরঙ্গ, ১৩ কলিকাতা উইক্‌লি নোটুস, ৫৭৪)। পারিলেও খুব সামান্য অংশষ্ট বিক্রয় করিতে পারিবেন।

(২) মৃত মালিকের অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া, শ্রাদ্ধ, সপিণ্ডীকরণ, গয়ায় পিণ্ড দান, ইভ্যাদি ব্যয়ের জন্য স্ত্রীলোক উত্তরাধিকারিণী প্রয়োজন হুইল সমস্ত সম্পত্তি হস্তাস্তর করিতে পারেন, কারণ এগুলি অবশ্বকৰ্ত্তব্য কাৰ্য্য। কিন্তু এমন কতকগুলি কাৰ্য্য আছে যাহাতে মৃত মালিকের আত্ম:ব সদগতি হয় বটে, কিন্তু সেগুলি অবগুকৰ্ত্তব্য নহে, স্বথা পুরীক্ষেত্রে স্বামীর নামে জগন্নাথের ভোগ দেওয়া, প্রভৃতি; এই সকল কায্যে স্ত্রীলোক সম্পত্তির কিয়দংশ মাত্র হস্তাস্তর করিতে পারেন, অধিক পরিমাণে পারেন না (৪৪ এলাহাবাদ ৫০৩ প্রিভিকৌন্সিল)। স্বামীব পিতা মাঙার শ্রাদ্ধাদি, যাহা স্বামী করিতে বাধ্য ছিলেন, তজ্জন্যও বিধবা কিয়দংশ সম্পত্তি হস্তস্তর,করিতে পারেন।

সমস্ত সম্পত্তির মূল্য ও অবস্থা বিবেচনা করিয়া এই সকল কার্য্যের জন্য কত ব্যয় হওয়া উচিত তাহা স্থির করিতে হইবে।

(৩) মৃত মালিকের ঋণ পরিশোধের জন্য স্ত্রীলোক উত্তরাধিকারিণী সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন। স্বামী যদি ঝুণ করিয়া গিয়া থাকেন এবং সেই ঋণ যদি তামাদিবারিত হইয়াও থাকে, অর্থাৎ নালিস করিয়া মহাজন আদায় করিতে পারেন ন৷ এরূপ হইলেও, বিধবা পত্নী ঐ ঋণ পরিশোধ করিবার জন্য স্বামীর সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে তাহা সিদ্ধ হইবে উদয়চন্দ্র ব; আশুতোষ, ২১ কলিকাতা ১৯০; ১৩ মাদ্রাজ ১৮৯)।

(৪) নিজের গ্রাসাচ্ছাদন, কন্যার বিবাহ, পুত্রের বিদ্যাশিক্ষা ও উপনয়ন, প্রভৃতি কাৰ্য্যের জন্য ও বিধবা তাঙ্গার স্বামীর সম্পত্তি হস্তাস্তুর করিতে পারেন। এমন কি, স্বামীর ভগ্নী ও পৌত্রীর বিবাহের জন্য এবং স্বামীর দরিদ্র ভাগিনেয়ার বিবাহের জন্যও উক্ত বিধবা স্বামীত্যক্ত সম্পত্তির এক অংশ বিক্রয় করিতে পারেন। ষদি কন্যা তাঙ্গার পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হন, এবং তাঁহার স্বামী যদি অত্যন্ত দরিদ্র হন, তাহা হইলে ঐ কন্যা নিজের প্রাসাচ্ছাদন, পুত্রের বিদ্যাশিক্ষা ও উপনয়ন, কন্যার বিবাহ প্রভৃতি ব্যয়ের জন্য পিতৃতাক্ত সম্পত্তির এক অংশ হস্তাস্তর করিতে পারেন (১৮ এলাহাবাদ ৭৪)।

৫) সম্পত্তি হইতে যে সকল ব্যক্তি ভরণপোষণ পাইতে স্বত্ববান আছেন, তাহদের ভরণপোষণ দিবার জন্য স্ত্রীলোক কিছু সম্পত্তি বিক্রয় করিতে পারেন।

(৬) এতদ্ব্যতীত, গবর্ণমেণ্টের প্রাপ্য রাজস্ব দিবার জন্য, সম্পত্তি সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় মোকৰ্দমার খরচের জন্য, প্রোবেট বা লেটাস অব এ্যাডমিনিষ্ট্রেষণ বা উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট লইবার খরচের জন্য, বা সম্পত্তির মেরামত খরচের জন্তু সম্পত্তির একাংশ হস্তাস্তর করিলে তাহা সিদ্ধ হইবে।

এই সকল কার্ষ্যের জন্য স্ত্রীলোক ইচ্ছা করিলে সম্পত্তি বিক্রয় করিতে পারেন বা বন্ধক দিতে পারেন; যদি তিনি বন্ধক না দিয়া সম্পত্তির কিয়দংশ বিক্রয় করেন তাহা হইলে আদালত তাহাতে কোন আপত্তি করিবেন না; কারণ বিক্রয় কর বা বন্ধক দেওয়া স্ত্রীলোকের ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে (১৮ বোম্বাই ৫৩৪।

যদি সম্পত্তির আয় হইতে উপরের লিখিত কাৰ্য্য সকল সম্পন্ন হইতে পারে, তাহা হইলে স্ত্রীলোক মূল সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পারেন না।

ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি

হস্তান্তর করিবার সময়ে যিনি ভাবী উত্তরাধিকারী থাকেন তাহার সম্মতি লইয়া যদি স্ত্রীলোক সম্পত্তি হস্তান্তর করেন তাহা হইলে সেই হস্তান্তর সিদ্ধ হইবে (নবকিশোর বঃ হরিনাথ, ১০ কলিকাতা ১১০২, হরিকিষেণ বঃ কাশীপ্রসাদ, ৪২ কলিকাতা ৮৭৬; রঙ্গস্বামী ব: নাচিয়াপ্প, ৪২ মাদ্রাজ ৫২৩ প্রিভিকৌন্সিল, বিজয়গোপাল বঃ গিরীন্দ্র, ৪১ কলিকাতা ৭৯৩ প্রিভিকৌপিাল)। যদি ঐ স্থালোকের ঠিক পরবর্তী উত্তরাধিকারীও স্ত্রীলোক হন তা হক্টলে তাতার সম্মতি লইলে চলিবে ন, পরবর্তী পুরুষ উত্তরাধিকারীর সম্মতি লওয়া চাই। যথা, যদি বিধবা স্ত্রী (উত্তরাধিকারিণী) কন্যা এবং দৌহিত্র থাকেন, এবং ঐ বিধবা স্ত্রী যদি সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে চাহেন, তাহা তই লৈ কন্যার সম্মতি লক্টলে চলিবে না, দৌহিত্রের সম্মতি লওয়া চাই।

কিন্তু যদি কোনও ব্যক্তি শুধু পত্নীকে এবং কন্যাকে রাশিয়। যান, এবং তিনি এইরূপ উইলু করিয়া গিয়া থাকেন যে, তাহার মৃত্যুর পর পত্নী জীবনস্বত্বে সম্পুক্তি পাইবে এবং পত্নীর পর কন্যা নিবুঢ়ি স্বত্বে পাইবে, সে স্থলে যদি সেই বিধবা পত্নী আইনসঙ্গত আবশ্যকতা ব্যতীত কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করেন এবং ঐ কন্যা তাহাতে সম্মতি দেন তাহা হইলেই যথেষ্ট হইবে, কারণ কন্যা স্ত্রীলোক হইলেও তাহাকে যখন পুরুষের তুল্য ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে, তখন তাহার সম্মতিষ্ট যথেষ্টরূপে কাৰ্য্যকর হইবে; এবং ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ হইবে না।

একাধিক ভাবী পুরুষ উত্তরাধিকারী থাকিলে সকলেরই সন্মতি লওয়া চাই, কতকগুলির সম্মতি লইলে চলিবে না (রাধাপ্তাম ব: জয়রাম, ১৭ কলিকাতা ৮৯৬)। যথা, যদি উপরোক্ত উদাহরণে তিন জন দৌহিত্র থাকে, তাহা হইলে সেই তিন জনেরই সম্মতি লইতে হইবে, একজনের বা দুই জনের সম্মতি লইলে সিদ্ধ হইবে না।

ভাবী উত্তরাধিকারী বলিতে ঠিক পরবত্তী পুরুষ উত্তরাধিকারীকে বুঝাইবে। কোনও দূরবত্তী ভাবী উত্তরাধিকারীর সন্মতি লইলে সিদ্ধ হইবে না (গুরুনারায়ণ ব; শিউলাল, ৪৬ কলিকাতা ৫৬৬, প্রিভিকৌন্সিল)। যথা, যদি কোনও বিধবা স্ত্রীলোক কর্তৃক সম্পত্তি হস্তান্তর করিবার সময়ে তাহার মৃত স্বামার দৌহিত্র এবং ভ্রাতা এই দুইজন থাকেন, তাহা হইলে দৌহিত্রকে ভাবী উত্তরাধিকারী বুঝাইবে, ভ্রাতাকে বুঝাইবে না; এবং ঐ বিধবা স্ত্রী দৌহিত্রের সম্মতি লইয়া হস্তাস্তর করিবেন, উক্ত ভ্রাতার সম্মতি লইলে সিদ্ধ হইবে না।

অনেক স্থলে এরূপ হয় যে যাহার সম্মতি লইয়া হস্তান্তর করা হইয়াছে তিনি গ্রীলোকের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হন না, অপর ব্যক্তি উত্তরধিকারী হন; কিন্তু তাহা হইলেও হস্তান্তর সিদ্ধ হইবে। যথা, উপরোক্ত উদাহরণে বিধবা পত্নী তাহার দৌহিত্রের সম্মতি লইয়া হস্তাঙ্গর করিলেন কিন্তু তাহার পর বিধবার জীবিতকালে ঐ দৌহিত্র মারা গেল; এবং ঐ বিধবার মৃত্যুর পর তাহার স্বামীর ভ্রাড়া উত্তরাধিকারী হইলেন। এস্থলে যদিও স্বামীর ভ্রাতার সম্মতি লওয়া হয় নাই, তথাপি তিনি ঐ হস্তান্তরে কোনও আপত্তি করিতে পারিবেন না, কারণ বিধবা যে সময়ে হস্তান্তর করিয়াছিলেন সে সময়ে তিনি তৎসময়কার ভাবী উত্তরাধিকারীর সন্মতি লইয়াছিলেন।

স্ত্রীলোক ষে সময়ে হস্তান্তর করেন, ভাবী উত্তরাধিকারী ঠিক সেই সময়ে সম্মতি না দিয়া যদি পরে কোন সময়ে সম্মতি দেন, ভাঙ্গা হইলেও সিদ্ধ হইবে (বজরঙ্গী বঃ মণিকণিকা, ৩০ এলাহাবাদ ১ প্রভি কৌন্সিল; ৩৮ মাদ্রাজ ৩৯৬)।

পূৰ্ব্বে লিখিত হইয়াছে বটে যে, ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি লচয়৷ হস্তাস্তর করিলে তাহা সিদ্ধ হইবে। কিন্তু ইহা স্মরণ রাখা উচিত যে, যে স্থলে হস্তাস্তরের কোনও আইনসঙ্গত আবশ্যকতা নাই, সে স্থলে ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি থাকা সত্ত্বেও আদালত এরূপ হস্তান্তর সন্দেহের চক্ষে দেখিয়া থাকেন। . সুতরাং কোনও স্ত্রীলোক যদি কোনও সম্পত্তি বিক্রয় করেন এবং তাহা লইয়। পরে মোকদ্দম। উপস্থিত হয়, ভক্ত। গুইলে আদালত প্রথমেই দেখেন ষে ঐ বিক্রয়ের কোনও আইনসঙ্গত আবশ্যকতা ছিল কি না; যদি আইনসঙ্গত আবশুকতা ছিল কি না এবিষয়ে কোনও প্রমাণ পাওয়া না যায়, তখন আদালত দেখেন ধে উহাতে ভাব” উত্তরধিকারীর সম্মতি ছিল কি না। আদালত যদি দেখেন যে ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি ছিল, তাহা হইলে আদালত অকুমান করিয়া লন ষে আইনসঙ্গত আবশ্ব কত ছিল এবং সেইজন্তই ভাবী উত্তরাধি কাব্য সম্মতি দিয়াছিলেন। অর্থাৎ ভাবী উত্তরাধিকবীর সম্মতি অপেক্ষা অগহনসঙ্গত আবশ্যকতার উপরই আদালত অধিক দৃষ্টিপাত করেন, এবং ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতিকে শুধু আইনসঙ্গত আবশ্ব্যকতাব প্রমাণরূপে গণ্য করেন। সুতরাং যদি অপর পক্ষ দেখাইতে পাবেন যে, ভাব উত্তরাধিকারীর সম্মতি থাকা সত্ত্বেও হস্তাস্তরের কিছুমাত্র আবশ্যকত। ছিল না, তাহা হইলে আদালত ঐ হস্তাস্তর সিদ্ধ বলিয়। গণ্য কfরবেন না। (দেবীপ্রসাদ বঃ গোলাপ ভগত, ৪০ কলিকাতা ৭২১, নজীরের ৭৫৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

যে স্থলে হস্তাস্তরের আবশ্যকতা না থাকে – সে স্থলে যদি ভাবী উত্তরাধিকারী হস্তান্তরে সম্মতি দেন, এবং ইহা প্রমাণিত হয় যে, এই ব্যাপারে প্রবঞ্চন বা যোগসাজস আছে, তাহা হইলে হস্তান্তর কখনই সিদ্ধ হইবে না (১৯ মাত্রাজ ৩৩৭)। কিন্তু স্ত্রীলোকের নিকট হইতে কিছু টাকা লইয়া যদি ভাবী উত্তরাধিকারী হস্তান্তরে সম্মতি দেন, তজন্ত হস্তান্তর অসিদ্ধ হইয়া যাইবে না (৩০ এলাহাবাদ ১ প্রিভিকৌন্সিল); কিন্তু সেই ভাবী উত্তরাধিকারী ভবিষ্যতে কখনও ঐ হস্তস্তরে কোন আপত্তি করিতে পারিবেন না (৩২ মাদ্রাজ ২১৬)।

ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি লইয়া সম্পত্তি শুধু বিক্রয় করিলে সিদ্ধ হইবে, বন্ধক দিলে সিদ্ধ হইবে না; যদি বন্ধক দেওয়া হয় এবং বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকমূলে নালিস করিয়া তাহার ডিক্ৰীতে সম্পত্তি বিক্রয় করান, তাহা হইলে নিলামখরিদদার শুধু ঐ স্ত্রীলোকের জীবিতকাল পৰ্যন্ত ঐ সম্পত্তিতে স্বত্ব পাইবেন, তাহার পর আর পাইবেন না (ইরিকিষেণ বঃ বজরঙ্গ, ১৩ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৫৪৪)। কিন্তু আর একটী মোকদ্দমায় এইরূপ সিদ্ধাস্ত হইয়াছে যে ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি থাকিলে আদালত অনুমান করিবেন যে উক্ত স্ত্রীলোক আইনসঙ্গত আবশুকতার জন্যই সম্পত্তি বন্ধক দিয়াছেন, এবং ঐ বন্ধক সম্পূর্ণরূপে সিদ্ধ হইবে; তবে অবশ্য যদি অপর পক্ষ প্রমাণ দ্বারা দেখান যে কোনও আবশ্যকতা ছিল না, তাহা iহইলে আর উহা স্ত্রীলোকের জীবিতকাল অপেক্ষা অধিক কালের জন্য সিদ্ধ হইবে না (দেবীপ্রসাদ বঃ গোলাপ ভগত, ৪০ কলিকাতা ৭২১)।

স্ত্রীলোক যে দলিল দ্বারা হস্তান্তর করেন সেই দলিল যদি ভাবী পুরুষ উত্তরাধিকারী এবং ঐ বিধবা উভয়ে একযোগে সম্পাদন করেন, তাহা হইলে ঐ হস্তান্তরে ভাৰী উত্তরাধিকারীর সন্মতি আছে বলিয়া গণ্য হইবে। ভাবী উত্তরাধিকারী যদি ঐ দলিল শুধু সাক্ষীরূপে দস্তখত করেন, তাহা হইলে উহাতে তাঁহার সম্মতি আছে বলিয়া অনুমান হইবে না, কারণ কোনও দলিলে সাক্ষী থাকিলেই তিনি যে ঐ দলিলের সমস্ত মৰ্ম্ম অবগত আছেন ইহা গণ্য করা হইবে না (হরিকিষেণ বঃ কাশীপ্রসাদ, ৪২ কলিকাতা ৮৭৬ প্রিভিকৌন্সিল; বঙ্গচন্দ্র ব: জগৎচন্দ্র, ss কলিকাতা ১৮৬ প্রিভিকৌন্সিল)।

ভাবী উত্তরাধিকারীকে সমর্পণ

স্ত্রীলোক ইচ্ছা করিলে তাঁহার সম্পত্তি ভাবী উত্তরাধিকারীকে সমর্পণ করিতে পারেন, এবং তাহা করিলে, ভাবী উত্তরাধিকারী সেই মুহূৰ্ত্ত হইতেই সম্পত্তিতে স্বত্ববান হষ্ট বেন। যথা, বিধবা স্ত্রীলোক যদি কোন সম্পত্তি তাঁহার দৌহিত্রকে (ভাবী উত্তরাধিকারী) দান করেন, তাহা হইলে সেই সময় হইতে ঐ দৌহিত্র সেই সম্পত্তির মালিক হইবেন; এমন কি, তাহার পর যদি আর একজন দৌহিত্র জন্মায়, তাহা হইলে সেই দ্বিতীয় দৌচিত্র সম্পত্তিতে কোনও অংশ পাইবে না। কিন্তু এইরূপে ভাবী উত্তরাধিকারীকে সমর্পণ করিতে হইলে সম্পূর্ণরূপে সমৰ্পণ করা চাই, উক্ত বিধবা যদি নিজের জন্য স্বার্থ রাখিয়া দেন তাক হইলে উক্ত সমর্পণ সিদ্ধ হইবে না। যথা, কোনও বিধবা স্ত্রীলোক তাতার সম্পত্তি ভাবী উত্তরাধিকারীকে সমর্পণ করিবার সময়ে তাহার সহিত এই চুক্তি করিলেন যে ঐ উত্তরাধিকারী উক্ত সম্পত্তির অৰ্দ্ধাংশ বিধবার মনোনীত কোনও ব্যক্তিকে (যথা, বিধবার কন্যাকে) দান করিবে; এইরূপ চুক্তিবিশিষ্ট সমর্পণ অসিদ্ধ হইবে। (স্বরেশ্বর বঃ মহেশরাণী, ৪৮ কলিকাতা ১ ০ ০ প্রিভিকৌন্সিল)। কিন্তু কোন বিধবা স্ত্রীলোক যদি ভাবী উত্তরাধিকারীকে সম্পত্তি সমর্পণ করেন এবং তৎপরিবর্তে তাঁহার যাবজ্জীবন ভরণ পোষণের জন্য ঐ ভাবী উত্তরাধিকারী তাহাকে কিছু সম্পত্তি দান করেন, তাহা হইলে ইঙ্গা সিদ্ধ হইবে (ভগবৎ ব: ধনুকধারী, ৪৭ কলিকাভা ৪৬৬ প্রিভিকৌন্সিল)।

স্ত্রীলোক যদি ভাবী উত্তরাধিকারীকে অৰ্দ্ধেক সম্পত্তি বিক্রয় করেন এবং তৎপরিবর্তে উক্ত ভাবী উত্তরাধিকারী বাকী অৰ্দ্ধেক সম্পত্তি ঐ স্ত্রীলোককে নির্ব্যূঢ় স্বত্বে দান করেন, তাহা হইলে এরূপ কাৰ্য্য সিদ্ধ হইবে (কামুরাম ব: কাশীচন্দ্র, ১৪ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ২২৬)।

অসিদ্ধ হস্তান্তরের ফল

কোন আইনসঙ্গত আবশ্যকতা ব্যতীত এবং ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি না লইয়। যদি স্ত্রীলোক কোনও সম্পত্তি হস্তাস্তুর করেন, তাহা হইলে ঐ হস্তাস্তর তাহার জীবিতকাল পর্য্যন্ত সিদ্ধ থাকিবে। তাহার পর তাহার মৃত্যু হইলে ভাবী উত্তরাধিকারী নালিস দ্বারা হস্তান্তর অসিদ্ধ সাব্যস্ত করাইতে পারিবেন। কিন্তু যে পৰ্য্যন্ত ভাবী উত্তরাধিকারী নালিস করিয়া ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ সাব্যস্থ না করাইবেন, ততদিন পৰ্য্যন্ত সেই হস্তান্তর সিদ্ধ থাকিবে। অর্থাৎ স্ত্রীলোকের মুতু্য হইলেই যে সেক্ট হস্তাস্তুর অসিদ্ধ হইয়া যাইবে তাহী নহে; ভাবী উত্তরাধিকারী যদি নালিস করিয়া অসিদ্ধ সাব্যস্ত করান, তাহা হইলেই উহা অসিদ্ধ হইবে; এবং যতদিন তিনি নালিস না করেন ততদিন উহা সিদ্ধ থাকিবে।

ভাবী উত্তরাধিকারী ইচ্ছা করিলে স্ত্রীলোকের জীবিতকালেও এই বলিয়া নালিস করিতে পারেন যে স্ত্রীলোক ষে হস্তান্তর করিয়াছেন তাহা তাহার জীবিতকাল পৰ্য্যন্ত সিদ্ধ থাকিবে এবং মুতু্যর পর অসিদ্ধ হইবে, এবং আদালতও সেই মৰ্ম্মে ডিক্ৰী দিবেন। এরূপ ডিক্ৰী থাকিলে স্ত্রীলোকের মৃত্যুর পরই হস্তান্তর অসিদ্ধ হইয়া যায়।

ভাবী উত্তরাধিকারী যদি স্ত্রীলোকের জীবিতকালে নালিস করেন তাহা হইলে হস্তান্তরের তারিখ হইতে ১২ বৎসরের মধ্যে নালিস করিবেন (তামাদি আইন, ১২৫ দফা); আর যদি তিনি স্ত্রীলোকের মৃত্যুর পর নালিস করিতে চাহেন, তাহা হইলে মৃত্যুর তারিখ হইতে ১২ বৎসরের মধ্যে করিতে হইবে (তামাদি আইন, ১৪১ দফা)।

দানের ক্ষমতা

সম্পত্তি বিক্রয় সম্বন্ধে যখন স্ত্রীলোকের ক্ষমতা এত কম, তখন দান সম্বন্ধে তাহার ক্ষমত যে আরও কম সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। স্ত্রীলোক সাধারণতঃ কোন সম্পত্তি দান করিতে পারেন না; তবে হিন্দু বিধবা তাঁহার স্বামীর পারলৌকিক মঙ্গলের জন্য কিছু সম্পত্তি ধৰ্ম্মার্থে দান করিতে পারেন বা তাহার স্বামীর গুরুদেবকে অল্প পরিমাণে সম্পত্তি দিতে পারেন। কন্যার বিবাহের সময় তিনি কন্যাকে বা জামাতাকে স্বামীত্যক্ত সম্পত্তির কিয়দংশ যৌতুকরূপে দান করিতে পারেন, কিন্তু বেশী পরিমাণে দিতে পারিবেন না (চূড়ামণ ব: গোপী, ৩৭ কলিকাতা ১; ২২ মাদ্রাজ ১১৩)।

সম্পত্তির ক্ষতি

স্ত্রীলোক যদি সম্পত্তি সম্বন্ধে ক্ষতির কার্য্য করেন, তাহা হইলে ভাবী উত্তরাধিকারী (পুরুষ হউক বা স্ত্রীলোক হউক) তাহার বিরুদ্ধে নালিস করিতে পারেন। তিনি যদি এত বেশী সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে থাকেন যে তাঁহাতে ভাবী উত্তরাধিকারীর অত্যস্ত ক্ষতি হইতে পারে, কিংবা এরূপ কাৰ্য্য করেন যাহাতে সম্পত্তির মূল্য কমিয়া যাইতে পারে, কিংবা তাহার বিশৃঙ্খলায় যদি সম্পত্তির অপচয় হইতে থাকে, তাহা হইলে ভাবী উত্তরাধিকারী নালিস করিতে পারেন, এবং আদালত ঐ স্ত্রীলোকের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রচার করবেন, কিংবা রিসিভার নিযুক্ত করিবেন। রিসিভার মিযুক্ত হইলে স্ত্রীলোক সম্পত্তির দখল হইতে বঞ্চিত হইবেন বটে, কিন্তু সমস্ত উপস্বত্ব তিনি পাইবেন।

একাধিক স্ত্রীলোক

যদি একাধিক পত্নী বা একাধিক কন্যা সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হন, তাহা হইলে তাহারা একত্রে এজমালীতে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন; এবং একজনের মৃত্যু হইলে অবশিষ্ট স্ত্রীলোকগণ সমস্ত সম্পত্তি ভোগ করিতে থাকিবেন (১১ মূরস ইণ্ডিয়ান আপীলস ৪৮৭)। যথা, যদি তিনজন কন্যা থাকেন, তাহা হইলে তিনজনেই একত্রে সম্পত্তি পাইবেন; পরে একজনের মৃত্যু হইলে দুইজনে মিলিয়া সমস্ত সম্পত্তি ভোগ করিতে পারিবেন, পরে তাহদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হইলে অবশিষ্ট কন্যা একাকীই সমস্ত সম্পত্তি ভোগ করিবেন।

একাধিক স্ত্রীলোক সম্পত্তি এজমালীরূপে ভোগ করিতে পারেন, অথবা তাহাদের নিজেদের সুবিধার জন্য পরস্পরের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ করিয়া লইতে পারেন (১ মাদ্রাজ ৪৯০; ১২ এলাহাবাদ ৫১); কিন্তু ঐ বিভাগ শুধু তাহাদের নিজেদের জীবিতকাল পৰ্য্যন্ত সিদ্ধ থাকিবে, তাহার পর সকল অংশগুলি এক হইয়া যাইবে।

একজন অপরের সন্মতি ব্যতিরেকে সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে পরিবেন না; করিলে অসিদ্ধ হইবে, এমন কি, তাঁহার জীবিতকাল পৰ্য্যন্তও সিদ্ধ থাকিবে না; এবং অপর স্ত্রীলোকগণ তৎক্ষণাৎ নালিস করিয়া ঐ হস্তান্তর অসিদ্ধ সাব্যস্ত করাইতে পারিবেন। কিন্তু যদি তাহারা পরস্পরের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করিয়া লন, তাহা হইলে একজন অপরের সম্মতি ব্যতিরেকে নিজ অংশ হস্তান্তর করিতে পারিবেন, কিন্তু উহা তাহার জীবিতকাল পর্য্যন্তই সিদ্ধ থাকিবে।

যদি একজন স্ত্রীলোকের অংশ তাহার বিরুদ্ধে ডিক্ৰীজারীতে বিক্রয় হইয়া যায়, তাহা হইলে ঐ বিক্রয় মাত্র তাহার জীবিতকাল পৰ্য্যন্ত সিদ্ধ থাকিবে।

স্ত্রীলোকগণ নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ করিয়া লউন বা না লউন, একজন যদি অপরের সম্মতি লইয়া হস্তান্তর করেন, তাহা হইলে উহ তাহার জীবিতকাল পৰ্য্যন্ত সিদ্ধ হইবে; তাহার মৃত্যুর পর উহা অপরের উপর বাধ্যকর হইবে না (১৬ মাদ্রাজ ১)। যথা, দুই কন্যার মধ্যে একজন যদি অপরের সম্মতিক্রমে সম্পত্তি হস্তম্ভির করেন, তাচ হইলে যতদিন তিনি জীবিত থাকিবেন ততদিন উহ। সিদ্ধ থাকিবে, কিন্তু তাহার মৃত্যুর পর তাহার ভগ্নী উহা খরিদদারের নিকট হইতে বিনামূলো ফিরাইয়া লইতে ক্ষমতাপন্ন হইবেন।

বিধবার পুনৰ্ব্বিবাহের ফল

হিন্দু বিধবা যদি পুনরায় বিবাহ করেন, তাহা হইলে হিন্দু বিধবাব পুনৰ্ব্বিবাহ আইনের ২ ধারা অনুসারে সম্পত্তি সম্বন্ধে উঠার নিম্নলিখিত ফল ফলিয়া থাকে :

(১) যদি তিনি তাঁহার পূর্ব স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হইয় থাকেন, তাহা হইলে ঐ সম্পত্তি হইতে তিনি তৎক্ষণাং বঞ্চিত হইবেন। এমন কি, তিনি যদি তাহার পুত্রের বা পৌত্রের বা প্রপৌত্রের উত্তরাধিকারিণী হন, কিন্তু যে সম্পত্তিতে তিনি উত্তরাধিকারিণী হইয়াছেন তাহা এককালে তাহার পূর্ব স্বামী ভোগ করিয়াছিলেন, তাহা হইলে৭ তিনি পুনরায় বিবাহ করিলেই ঐ সম্পত্তি হই, বঞ্চিত হইবেন।

কিন্তু তিনি যদি ঐ পুত্রের বা পৌন্ত্রের বা প্রপৌত্রের স্কোপাচ্চিত্র সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারিণী হইয়া থাকেন, তাহা হইলে পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি বঞ্চিত হইবেন না (২৯ বোম্বাই ৯১; ২৮ মাদ্রাজ ৪২৫)।

(২) তিনি তাহার পূর্ব স্বামীর সম্পত্তি হইতে আর ভরণপোষণ পাইবেন না।

(৩) যদি কেহ উইলে তাহাকে জীবনস্বত্বে সম্পত্তি দান করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি ঐ সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবেন। কিন্তু যদি তিনি উইলের দ্বারা ঐ সম্পত্তিতে নির্ব্যূঢ় স্বত্ব পাইয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহা হইতে তিনি বঞ্চিত হইবেন না।

(৪) হিন্দু বিধবা পুনরায় বিবাহ করিলে তিনি মৃত বলিয়া গণ্য হইবেন এবং তাহার পরবর্তী উত্তরাধিকারী সম্পত্তি পাইবেন।

(৫) হিন্দু বিধবা যদি সম্পত্তি পাইবার পর বিবাহ করেন তাহা হইলেই তিনি উহা হইতে বঞ্চিত হইবেন। কিন্তু তিনি যদি সম্পত্তি পাইবার পূর্বেই পুনরায় বিবাহ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে উহা হইতে বঞ্চিত হইবেন না (১১ উইক্‌লি রিপোর্টার ৮২)।

ভাবী উত্তরাধিকারীর দায়িত্ব

আইনসঙ্গত আবশ্যকতাহেতু কিংবা ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতিক্রমে স্ত্রীলোক কোনও সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে তাহা ভাবী উত্তরাধিকারীর উপর বাধ্যকর হইবে, এবং তাহাতে তিনি কোনও আপত্তি করিতে পরিবেন না, এ কথা পূৰ্ব্বে লিখিত হইয়াছে। এতদ্ভিন্ন স্ত্রীলোকের আরও কতকগুলি কাৰ্য্য দ্বারা ভাবী উত্তরাধিকারী বাধ্য থাকিবেন। যথা :—

(১) স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে যদি কোনও মোকদ্দমায় কোন ডিক্ৰী হইয়া থাকে তাহা হইলে ঐ ডিক্ৰী দ্বারা ভাবী উত্তরাধিকারী বাধ্য থাকিবেন।

(২) যদি কোনও মোকদম ঐ স্ত্রীলোক আপোষে মিটাইয়া থাকেন, এবং তাহা দ্বারা সম্পত্তির কোনও অনিষ্ট না হয়, তাহা হইলে ঐ ভাবী উত্তরাধিকারীর উপর ঐ সোলেনামা বাধ্যকর হইবে।

(৩) স্ত্রীলোক যদি আইনসঙ্গত আবশ্যকতার হেতুতে কোনও ঋণ করিয়া গিয়া থাকেন তাহা হইলে ভাবী উত্তরাধিকারী উহা পরিশোধ করিতে বাধ্য হইবেন।

(৪) স্ত্রীলোক যদি কোনও ব্যক্তির সহিত কোনও চুক্তি করিয়া থাকেন, এবং ঐ চুক্তি সম্পত্তির উপকারার্থে হয়, তাহা হইলে তদার ভাবী উত্তরাধিকারী বাধ্য থাকবেন। যথা, বাট মেরামতের জন্য স্ত্রীলোক চূণ স্বরক প্রভৃতি দ্রব্য খরিদ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার মূল্য দিবার পূৰ্ব্বেই তিনি পরলোক গমন করেন, এরূপ অবস্থায় ভাবী উত্তরাধিকার ঐ মূল্য দিতে বাধ্য হইবেন। (হরিমোহন বঃ গণেশচন্দ্র, ০ কলিকাতা ৮২৩।

কোন ডিক্ৰীজারীতে যদি স্ত্রীলোকের সম্পত্তি বিক্রয় হহয় যায়, তাহা হইলে ভাবী উত্তরাধিকারী ঐ বিক্রয়ে কোনও আপত্তি করিতে পরিবেন না। তবে যদি স্ত্রীলোকের নিজের প্রয়োজনের জন্য কোন দেনার দায়ে সম্পত্তি বিক্রয় হইয়া যায়, তাহা হইলে শুধু স্ত্রীলোকের জীবনস্বত্বই বিক্রয় হইবে, নিলাম খরিদদার স্ত্রীলোকের মৃত্যুর পর আর ঐ সম্পত্তি রাখিতে পারবেন না, এবং ভাবা উত্তরাধিকারী উহা পাইতে স্বত্ববান হইবেন (বৈজুন ব: ব্রিজভূখন, ১ কলিকাতা ১৩৩; ৪ এলাহাবাদ ৫২২, জীবনকৃষ্ণ বঃ ব্রজলাল, ২৬ কলিকাতা। ২৮৫; ৩০ কলিকাতা ৫৫০ প্রিভিকৌন্সিল)।

অন্যান্য কথা

স্ত্রীলোক যেস্থলে জীবনস্বত্বে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন, সেস্থলে তাহার নিকট হইতে কোনও সম্পত্তি ক্রয় করিবার সময়ে ক্রেতার খুব সাবধান হওয়া উচিত। যদি ভাবী উত্তরাধিকারী ও ঐ স্ত্রীলোক একত্রে এক যোগে সম্পত্তি বিক্রয় করেন, তাহা হইলে খরিদদার সম্পূর্ণ নিরাপদ; কিম্বা যদি বিক্রয়ের দলিলে ভুাবী উত্তরাধিকারী সম্মতি দেন, এবং সেই মৰ্ম্মে লিখিয়া দিয়া সাক্ষীরূপে স্বাক্ষর করেন, তাহা হইলেও ক্রেতা নিরাপদ। কিন্তু যদি স্ত্রীলোক ভাবী উত্তরাধিকারীর সম্মতি না লইয়া বিক্রয় করেন তাহা হইলে খরিদদারকে তদন্ত করিয়া দেখিতে হইবে যে সম্পত্তি বিক্রয় করিবার কোনও আইনসঙ্গত আবশ্যকতা আছে কি না (৬ মুরস ইণ্ডিয়ান আপীলস ৩৯৩); যদি তিনি দেখেন যে বাস্তবিক আবশ্যকতা আছে তাহা হইলে তাহার আর চিস্তার কোনও কারণ নাই। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রয় করিবার পরে ঐ স্ত্রীলোক বিক্রয়লব্ধ অর্থ আইনসঙ্গত আবশ্যকতার জন্য ব্যয় করেন কি না, তাহা খরিদদারের দেখিবার প্রয়োজন নাই। যথা, স্ত্রীলোক যদি বলেন যে কন্যার বিবাহের জন্য সম্পত্তি বিক্রয় করিবার প্রয়োজন এবং খরিদদার যদি তদন্ত করিয়া দেখেন যে বাস্তবিকই বিবাহযোগ্য৷ কন্যা আছে, তাহা হইলেই খরিদদার নিরাপদ; তাহার পর স্ত্রীলোক বিক্রয়লব্ধ অর্থ ঐ কন্যার বিবাহে ব্যয় করেন কি অন্য কার্ষ্যে ব্যয় করেন কি সঞ্চিত করিয়া রাখেন তাহা ক্রেতার দেখিবার প্রয়োজন নাই।

স্ত্রীধন

স্ত্রীলোক যে সম্পত্তি নিবুঢ়ি স্বত্বে প্রাপ্ত হন তাহা তাহার স্ত্রীধন বলিয়া গণ্য হয়। এই সম্পত্তি তিনি যে কোনও প্রকারে ভোগ করিতে পারেন, অনেক স্থলে তিনি ইচ্ছামত হস্তান্তর করিতে পারেন, এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার নিজের উত্তরাধিকারীতে উহা অশিয়া থাকে, তাঁহার স্বামীর পরবর্তী উত্তরাধিকারী উহা প্রাপ্ত হন না।

স্ত্রীধন নানা প্রকারের হইয়া থাকে, যথা –(১) যৌতুক, অর্থাৎ বিবাহের সময়ে স্ত্রীলোক যে সম্পত্তি পাইয়া থাকেন; দ্বিরাগমনের সময় তিনি যাহা প্রাপ্ত হন তাহাও যৌতুকের অন্তর্গত; (২) অন্বধেয়ক, অর্থাৎ বিবাহের পর তিনি পিতা বা স্বামীর নিকট হইতে যাহ। পাইয়া থাকেন; (৩) সৌদায়িক অর্থাৎ আত্মীয় স্বজনগণ যে সম্পত্তি (বিবাহের সময়ে হউক বা অন্ত সময়ে হউক) স্ত্রীলোককে স্নেহের সহিত দান করেন; (৪) স্বামীদত্ত স্থাবর সম্পত্তি; (৫) স্বামীদত্ত অস্থাবর সম্পত্তি; (৬) স্ত্রীলোকের নিজ পরিশ্রমে উপার্জিত সম্পত্তি; (৭) পিতৃদত্ত সম্পত্তি; (৮) পিতা স্বামী বা আত্মীয়স্বজন ব্যতীত অন্য ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত সম্পত্তি; (৯) বৃত্তি বা ভরণপোষণের মাসহারা; (১ -) অধিবেদনিক, অর্থাৎ প্রথম স্ত্রী থাকিতে স্বামী দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করিলে প্রথম স্ত্রীকে তাহার সান্তন স্বরূপ যে সম্পত্তি দান করেন; (১১) শুল্ক, অর্থাৎ আসুর মতে বিবাহ হইলে বর কন্যাকে মূল্যস্বরূপ যে সম্পত্তি দান করেন।

হস্তান্তরের ক্ষমতা

ভিন্ন ভিন্ন স্বাধন সম্পত্তিতে স্ত্রীলোকের ভিন্ন ভিন্ন প্রকার হস্তান্তরের ক্ষমতা আছে :–

(১) কতকগুলি স্ত্রীধন এরূপ আছে যে তাহাতে স্ত্রালোকের নির্ব্যূঢ় স্বত্ব হয় এবং তিনি ঐ স্ত্রীধন যেরূপভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করিতে পারেন, তাহাতে কেহ কোনও বাধা দিতে পারেন না। স্ত্রীলোকের স্বামী ভিন্ন অন্য আত্মীয় ব্যক্তি বিবাহের সময়ে যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি তাহাকে দান করেন এবং বিবাঙ্গের সময়ে স্বামী যে অস্থাবর সম্পত্তি দান করেন, তৎসমুদয়ই (অর্থাৎ সৌদায়িক, শুস্ক এবং যৌতুক) এই শ্রেণীর অন্তর্গত। ঐ সম্পত্তি তিনি ইচ্ছামত ব্যয় করিতে পারেন, এবং দান, বিক্রয় বা উইল করিতেও পারেন। ঐ সম্পত্তি তাঁহার স্বামীরও নিজে ব্যবহার করিবার অধিকার নাই এবং স্বামীর মহাজনও ঐ সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করিতে পারেন না।

উক্ত প্রকার স্ত্রীধনের আয় হইতে যদি স্থাবর সম্পত্তি আজ্জিত হয় তবে তাহাও ঐ স্ত্রীলোক যথেচ্ছ দান বিক্রয়াদি করিতে পারেন। তাহাতে তাহার স্বামী বাধা দিত্ত্বে পারেন না, এবং স্বামী নিজেও সাধারণতঃ তাহা ব্যবহার করিতে পারেন না। কিন্তু অত্যন্ত বিপদে পড়িলে তিনি তাহা লইতে পারেন। যথা, অত্যস্ত অভাবের সময়ে (অর্থাৎ যে সময়ে স্বামীর কিছুমাত্র অর্থ না থাকে এবং তজ্জন্য সমস্ত পরিবার অনশনে থাকিবার মত উপক্রম হয়) বা কোনও অনিবাৰ্য্য কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মের জন্য অন্য উপায় না থাকিলে, কিংবা পীড়ার সময়ে, বা তাঁহার মহাজন তাহাকে জেলে দিতে উদ্যত হইলে, স্বামী তাহার স্ত্রীর উক্তরূপ স্ত্রীধন লইতে পারেন। কিন্তু তাহা হুইলেও তিনি স্ত্রীকে উহা পরে ফেরৎ দিতে ধৰ্ম্মানুসারে বাধ্য। কেবলমাত্র স্বামীই এই সম্পত্তি লইতে পারেন—অন্য কেহ পারেন না। স্বামী যদি তাহা না লইতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে স্বামীর মহাজনও তাহাতে হস্তক্ষেপ করিতে পারেন না।

(২) কতকগুলি স্ত্রীধন এইরূপ আছে যে স্বামী যতদিন জীবিত থাকিবেন, ততদিন স্ত্রীলোক সেই সম্পত্তি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত হস্তান্তর করিতে পারিবেন না। কিন্তু বিবাহের পূৰ্ব্বে অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি যথেচ্ছকুপে উহা হস্তান্তর করিতে পারেন। যথা, নিজ পরিশ্রম দ্বারা অর্জিত সম্পত্তি, বা স্বামীর জীবিতকালে অন্য লোকে যে সম্পত্তি দান করে সেই সম্পত্তি, এই প্রকার স্ত্রীধনের অন্তর্গত। যতদিন স্বামী জীবিত থাকেন, ততদিন স্ত্রীলোক তাঁহার অনুমতি না লইয়া উহা দান বিক্রয়াদি করিতে পারেন না; স্বামীর অবর্তমানেই পারেন। কোনও স্ত্রীলোক অবিবাহিতাবস্থায় শিল্প কাৰ্য্যাদি দ্বারা যে অর্থ বা সম্পত্তি উপার্জন করেন তাহা তিনি বিবাহের পূৰ্ব্বে যথেচ্ছরপে ব্যয় বা হস্তাস্তর করিতে পারেন; কিন্তু বিবাহের পর স্বামীর অনুমতি ভিন্ন হস্তাস্তর করিতে পারেন না; পরে স্বামীর মৃত্যু হইলে তিনি আবার উহা যথেচ্ছরূপে ব্যয় বা হস্তান্তর করিতে পারেন।

(৩) স্বামী স্ত্রীকে স্থাবর সম্পত্তি দান করিলে বা উইল করিয়া দিলে এবং স্ত্রীকে ঐ সম্পত্তি সম্বন্ধে দান বিক্রয়াদি ইচ্ছামত হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা দেওয়া হইলে, ঐ সম্পত্তিতে স্ত্রীর নিবুঢ়ি স্বত্ব জন্মিবে এবং তাহা তাহার স্ত্রৗধনস্বরূপ গণ্য হইবে। তাহার মৃত্যুর পর তাহারই ওয়ারিস (কন্যা) ঐ সম্পত্তি পাইবেন—স্বামীর ওয়ারিস (পুত্র) পাইবেন না। কিন্তু ঐ সম্পত্তিতে স্ত্রীর ইচ্ছামত দান বিক্রয়াদি হস্তাস্তর করিবার স্বত্ব দেওয়: না থাকিলে উহ। তাহার স্ত্রীধন হইবে না, তিনি ভাই! জীবনম্বত্বে ভোগ করিবেন এবং কেবলমাত্র আইনসঙ্গত আবশ্যকতার জন্য হস্তান্তব করিতে পারিবেন।

স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার

অবিবাহিত কন্যার মৃত্যু হইলে তাহার স্ত্রীধন সম্পত্ত্বিতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ উত্তরাধিকারী হইবেন :–

(১) সহোদর ভ্রাতা;

(২) মাতা;

(৩) পিতা;

পিতাও না থাকিলে পিতার নিকটসম্পর্কীয় আত্মীয়; যথা ভ্রাতার পুত্ৰ, ভগ্নী, ভগীর পুত্র, বিমাতা, পিতামহ, পিতামহী, পিতৃহা, পিতৃব্যপুত্র, পিতৃস্বস, পিতামহীর ভগ্নী ইত্যাদি) ও তদভাবে মাতৃকুলের আত্মীয় (মাতামহ, মাতামহী, মাতুল, মাতুলপুত্র, মাতুস্বসা প্রভৃতি) পাইবেন।

বিবাহিত স্ত্রীলোকের স্ত্রীধন সম্পত্তির প্রকারভেদে উত্তরাধিক ব সম্বন্ধে অনেক প্রভেদ আছে। ঐ সম্পত্তি মোটামুটী দুই ভাগে বিভক্ত করা যায় –(১) যৌতুক (২) অযৌতুক।

যৌতুক স্ত্রীধন সম্বন্ধে উত্তরাধিকারের নিয়ম এই—

(১) অবিবাহিত কন্যা; (২) যে কন্যার বিবাহের সম্বন্ধ স্থির হইয়াছে; (৩) সধবা পুত্রবতী বা পুত্রসম্ভাবিতা) কন্যা এবং পুত্রবতী বিধবা কন্যা; (৪) সধবা বন্ধ্যা কন্যা এবং পুত্রহীনা বিধবা কন্যা; (৫) পুত্র; (৬) দৌহিত্র; (৭) পৌত্র; (৮) প্রপৌত্র; (৯) স্বামী, (১০) ভ্রাতা; (১১) মাতা; (১২) পিতা; (১৩) সপত্নীর পুত্র; (১৪) সপত্নীর কন্যা; (১৫) সপত্নীর পৌত্র; (১৬) দেবর; (১৭) স্বামীর ভ্রাতুষ্পপুত্র; (১৮) ভগ্নীর পুত্র; (১৯) স্বামীর ভাগিনেয়; (২) ভ্রাতুষ্পপুত্র; (২১) জামাতা; (২২) শ্বশুর; (২৩) ভাস্কর; (২৪) স্বামীর অন্যান্য সপিণ্ডগণ; (২৫) স্বামীর সকুল্যগণ; (২৬) স্বামীর সমানোদকগণ (২৭) পিতার সপিণ্ডগণ; (২৮) মাতৃকুলের আত্মীয়; তদভাবে গ্রামের ব্রাহ্মণগণ; তদভাবে রাজা অর্থাৎ গবর্ণমেণ্ট পাইবেন।

[যদি আসুর মতে বিবাহ হইয়া থাকে, তাহা হইলে উপরোক্ত স্থলে প্রপৌত্রের পর-(৯) মাতা; (১০) পিতা; (১১) ভ্রাতা; (১২) স্বামী; তাহার পর (১৩) সপত্নীর পুত্র ইত্যাদি, উপরোক্তমত পাইবেন।]

অযৌতুক স্ত্রীধন (যৌতুক ভিন্ন আর সকল প্রকার স্ত্রীধন ইহার অন্তর্গত) দুই প্রকারের—(ক) পিতৃদত্ত; (খ) অন্য ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত। (ক) পিতৃদত্ত আল্বৌতুক স্ত্রীধন সম্বন্ধে উত্তরাধিকারের নিয়ম এই –(১) অবিবাহিত কন্যা; (২) পুত্র; (৩) বিবাহিতা (পুত্রবর্তী এবং পুত্রসম্ভাবিত) কন্যা; (৪) বন্ধ্যা সধবা কন্যা, এবং বিধবা কন্যা; (৫) দৌহিত্র; (৬) পৌত্র; (৭) প্রপৌত্র; (৮) সপত্নীর পুত্ৰ; (৯) সপত্নীর কন্যা; (১০) সপত্নীর পৌত্র; (১১) ভ্রাতা; (১২) মাতা; (১৩) পিতা; (১৪) স্বামী; (১৫) দেবর; (৬) স্বামীর ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ; (১৭) ভগিনীর পুত্র; (১৮) স্বামীর ভাগিনেয়; (১৯) ভ্রাতুষ্পপুত্র; (২০) জামাতা; (২১) শ্বশুর; (২২) ভাগুর; (২৩) স্বামীর অন্যান্য সপি গুগণ; (২৪ স্বামীর সকুল্যগণ; (২৫) স্বামীর সমানোদকগণ; (২৬) পিতার সপিণ্ডগণ; (২৭) মাতৃকুলের আত্মীয়; তদভাবে গ্রামের ব্রাহ্মণগণ; ভদভাবে রাজা অর্থাৎ গভর্ণমেণ্ট।

(খ) অন্ম প্রকার অশ্ৰেণতুক লধন সম্পত্তিতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ উত্তরাধিকারী হন :–

(১-২) পুত্র এবং অবিবাহিত কন্যা একত্রে; পুত্র না থাকিলে অবিবাহিত কন্যা সমস্ত সম্পত্তি পাইয়া থাকে এবং অবিবাহিতা কন্যা না থাকিলে পুত্রই সমস্ত সম্পত্তি পাইয়া থাকে; উভয়েই থাকিলে তুল্যাংশে পায়; (৩ বিবাহিতা (পুত্রবর্তী বা পুত্রসম্ভাবিত) কন্যা; (৪) পৌল্ল; (৫) দৌহিত্র; (৬) বন্ধ্যা সধবা কন্যা ও বিধবা কন্যা; (৭) প্রপৌত্ৰ; (৮) ভ্রাতা; (৯) মাতা; (১০) পিতা; (১১) স্বামী; (১২) সপত্নীর পুত্র; (১৩) সপত্নীর কন্যা; (১৪) সপত্নীর পৌল; (১৫) দেবর; (১৬) স্বামীর ভ্রাতু-পুত্র; (১৭) ভগ্নীর পুত্র; (১৮) স্বামীর ভাগিনেয়, (১৯ ভ্রাতুষ্পত্র; (২) জামাতা; (২১) শ্বশুর; (২২) ভাশুর; (২৩) স্বামীর অন্যান্য সপিণ্ডগণ; (২৪) স্বামীর সকুল্যগণ; (২৫) স্বামীর সমানোদকগণ; (২৬) পিতার সপিণ্ডগণ; (২৭) মাতৃকুলের আত্মীয়; তদভাবে গ্রামের ব্রাহ্মণগণ; তদভাবে রাজা অর্থাৎ গভর্ণমেণ্ট।

হিন্দু আইনে স্ত্রীধনের উত্তরাধিকারের ঐরূপ নিয়ম লিখিত হইয়াছে। কিন্তু নজীরের দ্বারা উক্তার স্থানে স্থানে সামান্য সামান্য পরিবর্তন ঘটয়াছে; যথা, অযৌতুক স্ত্রীধনের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে সপত্নীপুত্র অপেক্ষা দৌহিত্র অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী বলিয়া গণ্য হইয়াছে (৮ কলিকাতা ল জাৰ্ণাল ৩৬৯); এবং বৈমাত্রেয় ভ্রাত। অপেক্ষী দেবর অগ্রগণ্য উত্তরাধিকরী বলিয়। স্থির হইয়াছে (৩৭ কলিকতা ৮৬৩)!

অন্যান্য কথা

স্ত্রীলোক যদি স্ত্রীধন সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হন, তাহা হইলে তিনি আর উহা স্ত্রীধনরূপে প্রাপ্ত হন না, জীবনস্বত্বেই প্রাপ্ত হন, এবং তাহার মৃত্যুর পর মৃত মালিকেল্প পরবর্তী উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত হন। (হরিদয়াল ব: গিরিশচন্দ্র, ১৭ কলিকুতি৷ ১১১; যোগেন্দ্র ব: ফণীভূষণ, ৪৩ কলিকাতা ৬৪ : মধুমালা বা লক্ষ্মণ, ২. কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ৬২৭; শিউশঙ্ক ব: দেবীসহায়, ২৫ এলাহাবাদ ৪৬৮ প্রিভি কৌন্সিল, হরেন্দ্র বঃ ফণীভূষণ, ২ কলিকাতা ৬৪)। মাতার মৃত্যুর পর কন্য। যদি তাহার স্ত্রীধনসম্পত্তি প্রাপ্ত হন, তাহা হইলে ঐ কন্যার মৃত্যুর পর ঐ সম্পত্তি মাতার ওয়ারিস পাইবেন, কন্যার ওয়ারিস পাইবেন না।

কোনও স্ত্রীলোক অসতী হইলেও তিনি স্ত্রীধন সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হইতে পারেন (১ এলাহাবাদ ৪৬; নগেন্দ্রনন্দিনী ব: বিনয় কৃষ্ণ, ৩০ কলিকাতা ৫২১; ২৬ মাদ্রাজ ৫০৯)। কিন্তু তিনি বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করিলে উত্তরাধিকারিণী হইতে পারিবেন না।

বেশ্যা

পূৰ্ব্বে সিদ্ধান্ত ছিল যে, কোনও স্ত্রীলোক বেশ্যা হইয়া গৃহ পরিত্যাগ করিলেই সে পতিত হয় বলিয়া স্বামী, পিতা, ভ্রাতা, পুত্র, কন্যা প্রভৃতির সহিত তাহার সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহারা তাহার স্ত্রীধনের ওয়ারিশ হইতে পারেন না (কামিনীমণি বেওয়া, ২১ কলিকাতা ৬৯৭; ত্রিপুরা বঃ হরিমতী, ৩৮ কলিকাতা ৪৯৫; ভূতনাথ ব: সেক্রেটারী অব ষ্টেট, ১০ কলিকাতা উইক্‌লি নোটস ১৯৮৫); কেবলমাত্র যে সকল আত্মীয়া তাহার ন্যায় বেখ্যাবৃত্তি অবলম্বন করিতেছে, তাহারাই তাহার স্ত্রীধনের ওয়ারিশ হইতে পরিবে, ইহাই স্থির ছিল (- ১ কলিকাতা ৬৯৭)।

কিন্তু এখন হাইকোর্ট এক মোকৰ্দমায় (হীরালাল বঃ ত্রিপুরাচরণ, ৪০ কলিকাতা ৬৫০ ফুলবেঞ্চ) নিষ্পত্তি করিয়াছেন যে, স্ত্রীলোক বেশ্যা হইলেও আত্মীয়কুটুম্বগণের সহিত তাহার সম্বন্ধ বিছিন্ন হইয়া যায় না এবং তাহার স্বামী পুত্রাদি আত্মীয়গণ তাহার স্ত্রীধনের ওয়ারিস হইতে পারেন অতএব, যে স্থলে একজন স্ত্রীলোক ও তাহার ভগ্নীর কন্যা উভয়েই গৃহ পরিত্যাগ করিয়া বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করে, এবং পরে ঐ স্ত্রীলোকের মৃত্যু হয়, সে স্থলে তাহার সম্পত্তি তাহার স্বামীর ভ্রাতুষ্পত্র পাইবেন—ঐ ভগ্নীর কন্যা পাইবেন না, কারণ স্ত্রীধন সম্পত্তিতে ভগ্নীব কন্য। অপেক্ষা স্বামীর ভ্রাতুষ্পুত্র অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারী। (কিন্তু পূৰ্ব্বেকার নজীর অনুসারে ভগ্নীর কন্যাই ওয়ারিস হইত, কারণ সেও তাহার মাসীর ন্যায় বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছে)।

বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন কবিলে কোনও স্ত্রীলোক তাহার আত্মীয়ণের ওয়ারিস হইতে পারে না, এই আইন পূর্ব্বেও ছিল, এখনও তাহাই আছে।  কিন্তু যদি কোনও স্ত্রীলোক সম্পত্তি পাইবার পূর্বের সতী থাকে এবং পবে বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করে, তাহলে সে সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত হইবে কি না তাহা বলা কঠিন। এ বিষয়ে এখনও কোনও মকদ্দমা হয় নাই।

বেশ্যাবৃত্তি দ্বারা অর্জিত সম্পত্তি অযৌতুক স্বাধন বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদনুসারে উত্তরাধিকারী নির্ণীত হইবে। কিন্তু যদি উত্তরাধিকারীগণের মধ্যে একজন  সতী স্ত্রীলোক হয় এবং একজন অসতী স্ত্রীলোক হয়, তাহা হইলে অসতী অপেক্ষা সতী স্ত্রীলোকই অগ্রগণ্য উত্তরাধিকারিণী; যথা, যদি বেশ্যার মাতা থাকে এবং কন্যা থাকে, কিন্তু কন্যা যদি বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করিয়া থাকে তার মাতা যদি সতী হয়, তাহা হইলে কন্যা অপেক্ষা মাতাই অগ্রগণা উত্তরাধিকারিণী হবেন।  সেইরূপ অধৰ্ম্মসম্পৰ্কীয় অপেক্ষা ধৰ্ম্মসম্পৰ্কীয় ব্যক্তি অগ্রগণ্য উত্তরাধিকার হইবে, যথা, যদি তাহার স্বামীর ঔরসজাত কন্যা থাকে, এবং বেশ্যাবৃত্ত অবলম্বন করার পর এক কন্যা জন্মগ্রহণ করিয়া থাকে, তাহা হইলে প্রথমোক্ত কন্যাই উত্তরাধিকারিণী হইবে, শেষোক্ত কন্যা হইবে না।

1 Comment
Collapse Comments

আমার দাদীর বাবা দাদীকে অন্নপ্রাশনের টাকা দিয়ে কিছু সম্পত্তি কিনে দেয়। দাদীর তিন ছেলে তিন মেয়ে। ২ মেয়ে বিবাহিত ও জীবিত অন্য জন মৃত। মৃত মেয়ের ২ পুত্র ২ কন্যা। ২ ছেলে মৃত ১ জন জীবীত। হিন্দু মতে মালিক কে কে হবে??

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *