০৬. শ্ৰীকৃষ্ণই—শ্রীরাধিকার অঙ্গের ভূষণ

শ্ৰীকৃষ্ণই—শ্রীরাধিকার অঙ্গের ভূষণ

ওগো সাজাইতে আমার অঙ্গ, ভূষণে না দিবে অঙ্গ,
সজল-জলদ-অঙ্গ, এ অঙ্গে ভূষণ,—ওগো সখি।
করি মিথ্যা রঙ্গভঙ্গ, নিরখিতে শ্যাম ত্রিভঙ্গ,
করিম বুঝি যাত্রাভঙ্গ, ভঙ্গিম ভাবেতে তোদের দেখি ॥ ৪৭
গলে যার স্যমন্তকমণি, বন্দে সনকাদি মুনি,
নন্দের নীলকান্তমণি, সে মণি পরেছি আমি গলে।
এ কায় মোর বিকায়, সে নব-নীরদ-কায়,
সাজাইতে রাধিকায়, বল কায়, সজনি সকলে ! ॥ ৪৮
শ্ৰী আমার কেবল শ্ৰীহরি, অনন্ত-ভূষণ হরি,
অন্তরে লয়ে বিহরি, কত শোভা, অন্ত কেবা জানে ।
তোমরা, কি ভুষণ সাজাবে করে, শ্যামরত্ব যার করে,
রত্ন নাই কে রত্নাকরে, এ কর সাজাতে জানি মনে ॥৪৯
শ্যাম চন্দ্র,—আমি তারা, শ্যাম আমার নয়নের তারা,
জানে যারা ধন্য তারা, তারাকান্ত অন্ত কিছু জানে।
না করি মনে সন্দেহ, সামান্য ভূষণ দেহ,
সাজিবে না সাজিবে না দেহ, ওগো সখি! শ্যামরত্ব বিনে
বিধির সৃষ্টি জল-নিধি, তাতে জন্মে কত রত্ন-নিধি,
শ্ৰীকৃষ্ণ করুণা-নিধি, তুল্য কেবা মূল্য দিয়ে পাবে।
ব্ৰহ্মাদির অনুপায়, কেবল কিশোরী পায়,
মন সঁপে তাঁর রাঙ্গা পায়, বৃন্দাবনে ম’জে মধুভাবে ॥৫১

(অতএব অন্য ভূষণে প্রয়োজন নাই )
***
বিলম্ব দেখিয়ে, মনে হয় বড় ভয় ।
যদি জয় নিবি তো বল গো মুখে বল কৃষ্ণ-জয় ॥৫২
শুভকৰ্ম্মে বিঘ্ন বহু, কি কর সই ! হায় হায় !
মিছে কথায় কথায় বুঝি, দিন ব’য়ে যায় যায় ॥৫৩
কখন দেখিব হরি, কি হইল হরি হরি !
কৃষ্ণ-বিচ্ছেদ-হুতাশনে বুঝি প্রাণে মরি মরি ॥ ৫৪
পাছে, সাজ করিতে ফুরায় দোল, ঐ ভাবনা মনে ।
বুঝি, কৃষ্ণ-প্রেযের বাদী, তোরাই হলি জনে জনে ॥ ৫৫
আমার ভাবনা বড় হয় সখি ! তোদের ভাব দেখে ।
পাছে, এ-কুল ও-কুল দুকুল যায় তোদের সঙ্গে থেকে ॥ ৫৬
তোরা কাজের কথায় দিস্‌নে কাণ, বলিলে তোদের কাণে
মনের কথায় মন দিলে পর, আমি থাকি মানে ॥ ৫৭ ৷
***
( কৃষ্ণ আমার কেমন ভুষণ ?—)

যেমন পৃথিবীর ভূষণ রাজা, রাজার ভূষণ সভা।
সভার ভূষণ পণ্ডিত, সভা করে শোভা ।।
পণ্ডিতের ভূষণ ধৰ্ম্মজ্ঞানী, মেঘের ভূষণ সৌদামিনী,
কোকিলের ভূষণ মধুর ধ্বনি, সতীর ভূষণ পতি ।
যোগীর ভূষণ ভষ্ম, মৃত্তিকার ভূষণ শস্য, রত্বের ভূষণ জ্যোতি
বৃক্ষের ভূষণ ফল, নদীর ভূষণ জল, জলের ভূষণ পদ্ম ।
পদ্মের ভূষণ মধুকর,
মধুকরের ভূষণ গুণ-গুণ স্বর, উভয় প্রেমে বদ্ধ ৷
শরীরের ভূষণ চক্ষু, যাতে হয় জগৎ দৃষ্ট ।
দাতার ভূষণ দান করে, ব’লে বাক্য মিষ্ট ॥
পূজার ভূষণ ভক্তি যেমন, থাকে ইষ্টনিষ্ঠ ।
তেমনি ভূষণের ভূষণ আমি, আমার ভূষণ কৃষ্ণ ॥ ৫৮
প্যারী-মুখে শুনি সখী, কৃষ্ণের প্রসঙ্গ ।
ভ্রম দূরে যায়, প্রেয়ে পুলকিত অঙ্গ ॥ ৫৯
ভাসিল তরুণীগণে প্রেমের তরঙ্গে ।
কৃষ্ণদরশনে যায়, রাইকে লয়ে সঙ্গে ॥ ৬০
চতুর্দিকে বেষ্টিত যতেক সখীমালা ।
মধ্যে, রাধে গজেন্দ্রগামিনী রাজবালা ॥ ৬১
———————
ললিত–ঝাঁপতাল ।
নিরখিতে ব্রজরাজে, ত্যজি কুল-লাজে,
গতি নিন্দে গজরাজে, চলে ব্রজরাজ-রাণী ।
ভাবে অঙ্গ ঢল ঢল, প্রেমে আঁখি ছল ছল,
বলে, সখি ! চল চল, যেন চঞ্চল চরিণী ॥ (ঘ) ।