০৫. শ্রীরাধিকার বনগমন-সজ্জা

শ্রীরাধিকার বনগমন-সজ্জা

শুনে বাক্য কিশোরীর, প্রেমে পুলক শরীর,
চক্ষে বহে প্রেমনীর, বলে, চল যতনে !
তেয়াগিয়া কুললাজ, সবে বলে সাজ সাজ,
করিব না কাল-ব্যাজ, দেখতে কালোরতনে ॥ ৩৪
অলসে অবশ কায়, যায় তত গোপজায়,
লইতে কৃষ্ণপদ-ছায়া, দ্রুত কুঞ্জ-কাননে ।
ত্যজে শঙ্কা পরস্পর, সংসার ভাবিয়া পর,
হরি ব্রহ্ম পরাৎপর, চিন্তা করে মননে ॥৩৫
বৃন্দে মনে পেয়ে প্রীতি, কহিছে সঙ্গিনী প্রতি,
শুনগো সখি ! সম্প্রতি,
মন মত্ত হ’লে কিছু মানে না।
বিনে সজ্জায় গেলে প্যারি ! লজ্জা দিবেন বংশিধারী,
দুখে করিবেন মন ভারি,
মনোহরের মনতো তোমরা জান না ॥ ৩৬
শুনিয়া সঙ্গিনীগণে, গ্রাহ করি মনে গণে,
রাই-অঙ্গ সাজাতে মনে, পরম্পর পুলকে।
বলে, কোথা গো শ্ৰীমতি ! ভাবেতে উল্লাস-মতি,
আনে নানা রত্ন-মতি, নয়নাৰ্দ্ধ-পলকে ॥ ৩৭
আনিল গোপ-রমণী, উজ্জ্বল হীরক-মণি,
সাজাতে রাই চন্দ্রাননী, চঞ্চল অবল-কুল গোকুলে।
কাঞ্চন আভরণ কত, পরশ-আদি মরকত,
মুক্তাহার আর কত, নীলকান্ত মণি আনে সকলে ॥ ৩৮
প্রেমেতে হইয়া আকুল, ভ্রমণ করে গোকুল,
চম্পক বক বকুল, নানা ফুল আনে ব্রজ-গোপিনী।
কোলে লইয়া কমলিনী, বেঁধে দেয় বৃন্দে ধনী,
চাঁচর চিকুর বেশী, যেন কাল-সাপিনী ॥৩৯
গাঁথে সুখে ব্রজবালা, পুঞ্জ পুঞ্জ গুঞ্জমালা,
বিশাখাদি চন্দ্রমালা, যায় পুষ্পচয়নে।
জাতী যূথী আনি যূথে, গাথি মালা বিনি-সূতে,
ভুলাইব নন্দসুতে, বলি, গোপীর প্রেমধারা নয়নে ॥ ৪০
তখন সাজাইতে রাই-স্বর্ণলতা, স্বর্ণে হইল বিবর্ণত,
ললিতে চম্পক-লত, দেখি রূপ চমকে ।
বলে, রাষ্ট-অঙ্গে সাজে না হীরে, হীরে রূপের বাহিরে,
ভূষণকে ভূষিত করে,—রূপ ধরে রাধিকে। ৪১
মুক্ত না পাইল যশ, প্রবালের অপৌরুষ,
পরশ হয়ে বিরস, কাঁদে অধোবদনে ।
কাঁদিছে নীলকান্ত-মণি, রাই-অঙ্গে পড়ি আমনি, ।
নিরখি ব্ৰজ-রমণী, বলে বৃন্দের সদনে ॥ ৪২
ওগো বৃন্দে একি দায়, সাজাতে রাই-প্রমদায়,
ভূষণ মাগে বিদায়, সাধা কি মিশাতে রূপ-সাগরে।
এখন বল গো ! করি কিরূপ, কি দিয়ে সাজাই রূপ,
ভুলাব সে বিশ্বরূপ, ব্ৰজগোপীর নাগরে। ৪৩
তরুণ অরুণ জিনি, জিনি রক্ত-সরোজিনী,
কেশব-মনোরঞ্জিনী,–কত শোভা চরণে ।
সরোজ-নিন্দিত কর, স্থধামুখীর শোভাকর,
সলজ্জিত সুধাকর, পদনখ-কিরণে ॥ ৪৪
কিশোরীর কি মধ্যদেশ, কেশরী তায় করি দ্বেষ,
বনে যায় ছাড়ি দেশ, বলে, লাজে মরি রে!
কিবে নাভির গভীর, কিশোরীর কি শরীর,
মদনের গেল শরীর, পেয়ে তাপ শরীরে ॥ ৪৫
তিল ফুল জিনি নাসা, খগপতির দর্প-নাশ,
পূরাইতে কৃষ্ণের আশা, বিধি রূপ গড়িলে ।
চক্ষে হেরি পেয়ে তাপ, হরিণীর হরিল দাপ,
থাকে না চক্ষের পাপ, চক্ষে চক্ষু হেরিলে ॥ ৪৬
—————————

সখি ! সংসারে এমন কি আভরণ আছে যে, রাই অঙ্গ সাজাইব?
খাম্বাজ-যৎ।!

ওগো সজনি । রাই-অঙ্গ সাজাব, দিয়ে কি ভূষণ ।
ও যার, রূপে রইল ঢাকা, রাকা-শশীর কিরণ ॥
রাই রমণীর শিরোমণি, ও-অঙ্গে সাজে না মণি,
যার ভূষণ শ্যাম-চিন্তামণি, চিন্তে মুনিগণ ॥
বর্ণনে যার বর্ণ হারে, তায় সাজে কি স্বর্ণ-হারে,
যেরূপ হেরিয়ে হরে, মুনি জনার যন। (গ)