নকশী কাঁথার মাঠ – ০১

এক

বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে ক্ষীর নদী,
উইড়া যাওয়ার সাধ ছিল, পাঙ্খা দেয় নাই বিধি |
— রাখালী গান

এই এক গাঁও, ওই এক গাঁও — মধ্যে ধু ধু মাঠ,
ধান কাউনের লিখন লিখি করছে নিতুই পাঠ |
এ-গাঁও যেন ফাঁকা ফাঁকা, হেথায় হোথায় গাছ ;
গেঁয়ো চাষীর ঘরগুলি সব দাঁড়ায় তারি পাছ |
ও-গাঁয় যেন জমাট বেঁধে বনের কাজল কায়া,
ঘরগুলিরে জড়িয়ে ধরে বাড়ায় বনের মায়া |

এ-গাঁও চেয়ে ও-গাঁর দিকে, ও-গাঁও এ-গাঁর পানে,
কতদিন যে কাটবে এমন, কেইবা তাহা জানে!
মাঝখানেতে জলীর বিলে জ্বলে কাজল-জল,
বক্ষে তাহার জল-কুমুদী মেলছে শতদল |
এ-গাঁর ও-গাঁর দুধার হতে পথ দুখানি এসে,
জলীর বিলের জলে তারা পদ্ম ভাসায় হেসে!
কেউবা বলে — আদ্যিকালের এই গাঁর এক চাষী,
ওই গাঁর এক মেয়ের প্রেমে গলায় পরে ফাঁসি ;
এ-পথ দিয়ে একলা মনে চলছিল ওই গাঁয়ে,
ও-গাঁর মেয়ে আসছিল সে নূপুর-পরা পায়ে!

এইখানেতে এসে তারা পথ হারায়ে হায়,
জলীর বিলে ঘুমিয়ে আছে জল-কুমুদীর গায়ে |
কেইবা জানে হয়তো তাদের মাল্য হতেই খসি,
শাপলা-লতা মেলছে পরাগ জলের উপর বসি |
মাঠের মাঝের জলীর বিলের জোলো রঙের টিপ,
জ্বলছে যেন এ-গাঁর ও-গাঁর বিরহেরি দীপ !
বুকে তাহার এ-গাঁর ও-গাঁর হরেক রঙের পাখি,
মিলায় সেথা নতুন জগৎ নানান সুরে ডাকি |
সন্ধ্যা হলে এ-গাঁর পাখি ও-গাঁর পানে ধায়,
ও-গাঁর পাখি এ-গাঁয় আসে বনের কাজল ছায় |
এ-গাঁর লোকে নাইতে আসে, ও-গাঁর লোকেও আসে
জলীর বিলের জলে তারা জলের খেলায় ভাসে |

এ-গাঁও ও-গাঁও মধ্যে ত দূর — শুধুই জলের ডাক,
তবু যেন এ-গাঁয় ও-গাঁয় নেইকো কোন ফাঁক |
ও-গাঁর বধু ঘট ভরিতে যে ঢেউ জলে জাগে,
কখন কখন দোলা তাহার এ-গাঁয় এসে লাগে |
এ-গাঁর চাষী নিঘুম রাতে বাঁশের বাঁশীর সুরে,
ওইনা গাঁয়ের মেয়ের সাথে গহন ব্যথায় ঝুরে!
এ-গাঁও হতে ভাটীর সুরে কাঁদে যখন গান,
ও-গাঁর মেয়ে বেড়ার ফাঁকে বাড়ায় তখন কান |
এ-গাঁও ও-গাঁও মেশামেশি কেবল সুরে সুরে ;
অনেক কাজে এরা ওরা অনেকখানি দূরে |

এ-গাঁর লোকে দল বাঁধিয়া ও-গাঁর লোকের সনে,
কাইজা ফ্যাসাদ্ করেছে যা জানেই জনে জনে |
এ-গাঁর লোকেও করতে পরখ্ ও-গাঁর লোকের বল,
অনেকবারই লাল করেছে জলীর বিলের জল |
তবুও ভাল, এ-গাঁও ও-গাঁও, আর যে সবুজ মাঠ,
মাঝখানে তার ধূলায় দোলে দুখান দীঘল বাট ;
দুই পাশে তার ধান-কাউনের অথই রঙের মেলা,
এ-গাঁর হাওয়ায় দোলে দেখি ও-গাঁয় যাওয়ার ভেলা |

8 Comments
Collapse Comments

খুব ই ই ভাল লাগল এ রখম একটা সাইট পেয়ে।
ধন্যবাদ

লব কুশ নামে হবে সীতার নন্দন।
উভয়ে শিভাবে তুমি বেদ রামায়ণ।।

এগার সহস্র বর্ষ পালিবেন ক্ষিতি।
পুত্রে রাজ্য গিয়া স্বর্গে করিবেন গতি।।

এতদিন পরে আর উত্তর পাওয়ার কোন প্রয়োজন বা ইচ্ছা আপনার আছে কিনা জানি না, কিন্তু মনে হল উত্তরটা দেওয়া দরকার। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে ১০৮টি নীলপদ্মে দেবী দুর্গার পূজা করলে মনস্কামনা পূর্ণ হতে বাধ্য। রামায়ণে আছে রামচন্দ্র রাবণবধের মানসে ১০৮ টি নীলপদ্মে দেবীর পূজার ব্রত নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ১০৬টির বেশি জোগাড় করতে পারেন নি। তখন নিজের নীলপদ্মতুল্য চোখদুটি উপড়ে তিনি দেবীর পূজা করেন। দেবী সন্তুষ্টা হয়ে তাঁর চোখদুটি ফিরিয়ে দেন এবং রাবণবধের উপায় বলে দেন। এখানেও এক দেবীর সন্তুষ্টি বিধায় আর নিজের মনোকামনা পূরণের ইচ্ছার কথা রয়েছে, সম্ভবত তাই ১০৮ পদ্মের কথা এসেছে। 🙂

asadharon uttor..

জাব্বার খান February 6, 2018 at 8:47 pm

অপুর্ব

মিষ্টি মিষ্টি গল্প February 6, 2018 at 8:54 pm

অনেক অনেক সুন্দর লাগলো পদ্মটা আমার প্রিয় পল্লি কবি জসিমউদ্দীনতো।

বলার কিছুই নাই।একেবারে অসাধারণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *