১৩. বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য আদর্শ

বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য আদর্শ

বস্তুতঃ, ইহাতে আশ্চর্য্য হইবার কিছু নাই। পূর্ব পর্ব যুগে যাহাই হউক, এই যুগে সমাজ-ব্যবস্থা ব্যাপারে বৌদ্ধ-ব্রাহ্মণে কিছু পার্থক্য ছিল না। সামাজিক ব্যাপারে বৌদ্ধেরা ও মনুর শাসন মানিয়া চলিতেন, ঠিক আজও বৌদ্ধধর্মানুসারী ব্রহ্ম ও শ্যামদেশ সামাজিক শাসনানুশাসনের ক্ষেত্রে যেমন কতকটা ব্রাহ্মণ্য শাসনব্যবস্থা মানিয়া চলে। তারানাথের বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস এবং অন্যান্য তিব্বতী বৌদ্ধগ্রন্থের সাক্ষ্য হইতে ও অনুমান হয়, বর্ণাশ্রমী হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে কোন সামাজিক পার্থক্যই ছিল না। যাঁহারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা লইয়া প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিতেন, বিহারে সংঘারামে বাস করিতেন, তাঁহাদের ক্ষেত্রে বর্ণাশ্রম-শাসন প্রযোজ্য ছিল না, থাকিবার কোন ও প্রযোজনও ছিল না। কিন্তু যাঁহার উপাসক মাত্র ছিলেন, গৃহী বৌদ্ধ ছিলেন তাঁহারা সাংসারিক ক্রিয়াকর্মে প্রচলিত বর্ণ-শাসন মানিয়াই চলিতেন। বৌদ্ধপণ্ডিতে ব্রাহ্মণপণ্ডিতে ধর্ম ও সামাজিক মতামত লষ্টয়া দ্বন্দ্ব-কোলাহলের প্রমাণ কিছু কিছু আছে, কিন্তু বৌদ্ধর পৃথক সমাজ সৃষ্টি করিয়াছিলেন এমন কোনও প্রমাণ নাই। বরং সমসাময়িক কাল সম্বন্ধে তারানাথ এবং অন্যান্য বৌদ্ধ আচাৰ্যর যাহা বলিতেছেন, তাহাতে মনে হয়, পালযুগের মহাযানী বৌদ্ধধর্ম ক্রমশ তন্ত্রধর্মের কুক্ষিগত হইয়া পড়িতেছিল, এবং ধর্মাদর্শ ও ধর্মানুষ্ঠান, পূজা প্রকরণ প্রভৃতি ব্যাপারে নূতন নূতন মত ও পথের উদ্ভব ঘটিতেছিল। তন্ত্রধর্মের স্পর্শে ব্রাহ্মণ্যধর্মেরও অনুরূপ বিবর্তন ঘটিতেছিল, এবং বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভেদ কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘুচিয়া যাইতেছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *