০৬. বজ্ৰপাতটা হল পরের দিন

॥ ৬ ॥

বজ্রপাতটা হল পরের দিন, তবে আসল ঘটনাটা সরাসরি না বলে আগে দিনটা কিভাবে গেল বলি।

দিনটা মেঘলা, তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা রয়েছে আড়ালে। আমি ফেলুদার সঙ্গে সকালে বেরিয়ে একটু কেনাকাটা সেরে, বার্চ হিল রোড দিয়ে খানিকদূর বেড়িয়ে এগারোটা নাগাত রওনা দিলাম নয়নপুর ভিলা। গতকাল রাত্রেও ফেলুদা লালমোহনবাবুকে তালিম দিয়েছে। এবারে সাড়ে তিনের জায়গায় সবশুদ্ধ পাঁচ লাইন ডায়ালগ। আজ আর চুরুট-সিগারেট ধরানোর ব্যাপার নেই, তাই সেদিক থেকে বাঁচোয়া।

লালমোহনবাবুর সাতটা শট ছিল। সাড়ে নটায় কাজ আরম্ভ হয়েছে। আড়াইটেয় লাঞ্চ ব্রেক হয়েছে। লাঞ্চের আগে চারটে, পরে তিনটে শট হয়ে সাড়ে চারটের সময় লালমোহনবাবু ফ্রী হয়ে গেলেন। পুলক ঘোষাল বলল, ‘জীপের ব্যবস্থা আছে লালুদা, আপনি এনি টাইম যেতে চাইলে যেতে পারেন।’

লালমোহনবাবু বললেন, ‘আজ যখন তাড়াতাড়ি শেষ হল, তখন ভাবছি হেঁটেই ফিরব; গাড়ির দরকার নেই।’

‘জাস্ট অ্যাজ ইউ লাইক,’ বলল পুলক ঘোষাল।

পুলক ঘোষাল চলে গেলে পর লালমোহনবাবু বললেন, ‘এদের চা-টা বেশ ভালো; এক্ষুনি চা দেবে, সেটা খেয়ে বেরিয়ে পড়ব।’

দেড় মাইলের উপর রাস্তা, তাই চা খেয়ে পাঁচটা নাগাত বেরিয়ে হোটেল পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাঁচটা হয়ে গেল।

ঘরে ঢুকেই দেখি ফেলুদা গায়ে জ্যাকেট চাপাচ্ছে।

‘বেরোচ্ছ নাকি?’ আমি জিগ্যেস করলাম।

ফেলুদা আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, ‘তোরা ছিলি না ওখানে? তোরা শুনিস্‌নি?’

‘আমরা ত আধ ঘণ্টা হল বেরিয়েছি, তখন পর্যন্ত ত কিছু শুনিনি। কী ব্যাপার?’

‘মিঃ মজুমদার খুন হয়েছেন।’

‘অ্যাঁ।’

আমরা দুজনেই সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম।

‘ভদ্রলোক সাড়ে বারোটা নাগাত আমায় ফোন করেছিলেন। বললেন আমার সঙ্গে জরুরী কথা আছে, সেটা সন্ধ্যায় আমার এখানে এসে বলবেন। আর তারপর এই ব্যাপার।’

‘তুমি খবর কী করে পেলে?’

‘ওঁর ছেলে ফোন করেছিলেন এই পাঁচ মিনিট আগে। পুলিশে খবর দিয়েছেন, কিন্তু আমাকেও যেতে বললেন। পাঁচটার পরেও ভদ্রলোকের ঘুম ভাঙছে না দেখে সমীরণবাবু ওঁর ঘরে ঢোকেন; বাবাকে কী যেন একটা বলার ছিল। দরজাটা কেবল ভেজানো ছিল; মিঃ মজুমদার ছিটকিনি লাগাতেন না কখনো। ঢুকে দেখেন রক্তাক্ত কাণ্ড। বুকে ছোরা মেরেছে ঘুমন্ত অবস্থায়। ওঁর বাড়ির ডাক্তার এসে বলে গেছেন ছুরির আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে। শুটিং অবশ্যই বন্ধ হয়ে গেছে, এবং স্বভাবতই কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে। কারণ পুলিশ তদন্ত করবে। যাই হোক—আমি ত চললাম। তোরা কি থাকবি না আমার সঙ্গে যাবি?’

‘থাকব কী!’ বললেন লালমোহনবাবু। ‘এর পরে কি আর থাকা যায়? চলুন বেরিয়ে পড়ি।’

আমরা তিনজন যখন নয়নপুর ভিলা পৌঁছলাম, তখন সোয়া ছটা। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, আকাশে মেঘ, টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। শুটিং-এর দলের সকলেই রয়েছে। পুলক ঘোষাল কাছেই ছিলেন, আমাদের দেখে এগিয়ে এসে বললেন, ‘কী বিশ্রী ব্যাপার বলুন ত! ভারী মাই ডিয়ার লোক ছিলেন মিঃ মজুমদার। এক কথায় কাজ করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন।’

বাড়ির বাইরে পুলিশের জীপ দাঁড়িয়ে আছে সেটা আগেই লক্ষ করেছি।

আমরা বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। সামনের বারান্দায় একজন ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে আছেন। বছর চল্লিশেক বয়স, ফেলুদার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘আপনার নাম অনেক শুনেছি। আমি ইন্সপেক্টর যতীশ সাহা।’

করমর্দন শেষ হবার পর ফেলুদা বলল, ‘কী ব্যাপার? কী বুঝলেন?’

‘ঘুমের মধ্যেই খুনটা হয়েছে, যতদূর মনে হয়।’

‘কী দিয়ে মেরেছে?’

‘একটা ভুজালি। সেটা বুকেই ঢোকানো রয়েছে। ওটা নাকি মিঃ মজুমদারের ঘরেই থাকত।’

‘আপনাদের ডাক্তার এসেছেন কি?’

‘এই এলেন বলে। আসুন না ভিতরে।’

মিঃ মজুমদারের শোবার ঘরটা বেশ বড়। আমি আর লালমোহনবাবু দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে রইলাম, ফেলুদা ভিতরে গেল। মৃতদেহ সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে।

‘একটা কথা আপনাকে বলে দিই,’ ফেলুদাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন যতীশ সাহা, ‘আমরা ত যথারীতি আমাদের ইনভেসটিগেশন চালিয়ে যাব, তবে আপনি যখন এখানে রয়েছেন তখন আপনিও আপনার নিজের তরফ থেকে যা করতে চান করতে পারেন। কেবল আমাদের ফাইণ্ডিংসগুলো পরস্পরকে জানালে বোধ হয় কাজের দিক দিয়ে সুবিধা হবে।’

‘সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন,’ বলল ফেলুদা। ‘আর আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমি এগোতেই পারব না।’

সমীরণবাবু এসেছেন ঘরে, তাঁর মুখ ফ্যাকাশে, চুল উস্‌কোখুস্‌কো।

ফেলুদা তাঁর দিকে ফিরে বললেন, ‘ব্যাপারটা ত আপনিই ডিসকাভার করেন?’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ’, বললেন সমীরণবাবু। ‘বাবা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঠিক পাঁচটায় উঠে গিয়ে বারান্দায় বসতেন। তারপর লোকনাথ চা এনে দিত। আজ সোয়া পাঁচটায় বাবাকে জায়গায় না দেখে ভাবলাম ব্যাপার কী। খট্‌কা লাগল, তারপর বাবার শোবার ঘরে গেলাম। ঘরে ঢুকেই দেখি এই কাণ্ড।’

‘এই খুন সম্বন্ধে আপনার কিছু বলার আছে? আপনার নিজের কোনো ধারণা হয়েছে এ সম্বন্ধে?’

ফেলুদা প্রশ্ন করতে করতে ঘরটা পায়চারি করে দেখছে, কোনো কিছুই তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াচ্ছে না।

‘কেবল একটা কথা বলার আছে,’ বললেন সমীরণবাবু।

‘কী?’

‘ঘরে একটা জিনিস মিসিং।’

‘কী জিনিস?’

আমরা সকলেই কৌতূহলী দৃষ্টি দিলাম ভদ্রলোকের দিকে।

‘অষ্টধাতুর একটা বালগোপাল,’ বললেন সমীরণবাবু। ‘এটা ছিল আমাদের নয়নপুরের বাড়ির মন্দিরে। অনেকদিনের সম্পত্তি, এবং অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস।’

‘কোথায় থাকত এটা?’

‘ওই তাকের উপর। ভুজালিটার পাশেই।’

সমীরণবাবু ঘরের একটা সেল্‌ফের দিকে ইঙ্গিত করলেন।

যতীশ সাহা বললেন, ‘এমন একটা জিনিস সিন্দুকে না রেখে বাইরে রাখা হত কেন?’

‘তার কারণ বাবা তো রাত্রে ঘুমোতেন না, আর সঙ্গে রিভলবার থাকত, তাই কোনো বিপদ আছে বলে মনে করেননি।’

‘তাহলে ত রবারিই মোটিভ বলে মনে হচ্ছে,’ বললেন সাহা। ‘জিনিসটার দাম কত হবে?’

‘তা ষাট-পঁয়ষট্টি হাজার ত হবেই। সোনার অংশ বেশ বেশি ছিল।’

ফেলুদা খাটের পাশের টেবিল থেকে একটা পেনসিল তুলে নিয়ে বলল, ‘শিসটা ভাঙা, এবং ভাঙা টুকরোটা পাশেই পড়ে আছে।’

আমি দেখলাম পেনসিলের পাশে একটা ছোট্ট প্যাডও রয়েছে।

ফেলুদা নীচু হয়ে প্যাডের উপরের কাগজটা দেখছিল। তারপর বিড়বিড় করে বলল, ‘ওপরের কাগজটা ছিঁড়েছে বলে মনে হচ্ছে…’

এবারে ও আরো নীচু হয়ে টেবিলের চার পাশের মেঝেটা দেখতে লাগল। তারপর মেঝে থেকে একটা কাগজ তুলে নিয়ে বলল, ‘পেয়েছি।’

আমি দূর থেকেই বুঝলাম প্যাডের কাগজের উপর কী যেন একটা লেখা রয়েছে।

কাগজটা নিজে ভালো করে দেখে সেটা সাহার দিকে এগিয়ে দিল। সাহা কাগজটা হাতে নিয়ে লেখাটা পড়ে চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘বিষ?’

‘তাই ত লিখছেন ভদ্রলোক’, বলল ফেলুদা। ‘আর যে ভাবে “ষ”-এর পেট কাটা হয়েছে, মনে হয় তার পরেই মৃত্যুটা হয়, এবং শিস ভেঙে পেনসিলটা হাত থেকে পড়ে যায়, আর কাগজটাও প্যাড থেকে আলগা হয়ে মাটিতে পড়ে।’

‘কিন্তু বিষ কথাটা লিখবার অর্থ কী?’ বললেন সাহা, ‘যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ছুরি দিয়ে মারা হয়েছে?’

‘সেটাই ত ভাবছি’, ভ্রূকুটি করে বলল ফেলুদা। তারপর সমীরণবাবুর দিকে ফিরে বলল, ‘মিঃ মজুমদারের ঘুমের ওষুধ কোথায় থাকত জানেন?’

‘ডাইনিং রুমে একটা বোতলের মধ্যে’, বললেন সমীরণবাবু। ‘দোকান থেকে এলেই লোকনাথ টিনফয়েল ছিঁড়ে বড়িগুলো বার করে বোতলে রেখে দিত।’

‘সেই বোতলটা একবার আনতে পারেন?’

সমীরণবাবুর ফিরে আসতে যেন একটু বেশি সময় লাগল। আর যখন এলেন তখন ভদ্রলোকের মুখ আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

‘বোতল নেই,’ ধরা গলায় বললেন ভদ্রলোক।

ফেলুদার ভাব দেখে মনে হল সে যেন এটাই আশা করছিল। বলল, ‘গত পরশু সন্ধ্যায় আমাদের সামনেই ভদ্রলোক একমাসের স্টক কিনলেন এই ওষুধের।’ তারপর সাহার দিকে ফিরে বলল, ‘এই বড়ির খান ত্রিশেক একসঙ্গে একজন মানুষকে খাওয়ালে তার মৃত্যু হতে পারে না?’

‘এটা কী বড়ি?’

‘টফ্রানিল। অ্যান্টি-ডিপ্রেসাণ্ট পিল্‌স।’

‘তা নিশ্চয়ই হতে পারে,’ বললেন সাহা।

‘এবং তখন সে বড়িকে বিষ বলা যেতে পারে না?’

‘নিশ্চয়ই।’

‘তাহলে বিষ কথাটার একটা মনে পাওয়া যাচ্ছে, যদিও…’। ফেলুদার যেন খট্‌কা লাগছে। একটু ভেবে বলল, ‘যে লোককে খুন করা হচ্ছে সে যদি মরার পূর্বমুহূর্তে কিছু লিখে যায় তাহলে কী ভাবে তাকে মারা হচ্ছে সেটা না লিখে সে যাকে আততায়ী বলে সন্দেহ করছে তার নামটাই লিখে যাবে না কি?’

‘কথাটা আপনি ঠিকই বলেছেন,’ বললেন সাহা, ‘কিন্তু এক্ষেত্রে ভদ্রলোক সেটা করেননি সেটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।…ভালো কথা, একবার বেয়ারা লোকনাথকে ডাকলে হত না?’

ফেলুদা প্রস্তাবটা সমর্থন করে সমীরণবাবুর দিকে চাইল। সমীরণবাবু ইঙ্গিতটা বুঝে নিয়ে লোকনাথের খোঁজে বেরিয়ে গেলেন।

ফেলুদার চোখ থেকে যে ভ্রূকুটি যাচ্ছে না সেটা আমি লক্ষ করছিলাম। লালমোহনবাবু বললেন, ‘লোকনাথ দেড়টা নাগাত একবার দক্ষিণের বারান্দায় এসেছিল মিঃ মজুমদারকে ডাকতে। কিন্তু মিঃ মজুমদার তৎক্ষণাৎ যাননি।’

‘তার মানে আজকে তাঁর নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম হয়েছিল,’ বলল ফেলুদা।

‘হ্যাঁ,’ বললেন লালমোহনবাবু। ‘মনে হচ্ছিল ভদ্রলোক শুটিং-এর ব্যাপারটাতে বেশ ইণ্টারেস্ট পাচ্ছিলেন। রায়না আর ভার্মাকে সুযোগ পেলেই নানারকম প্রশ্ন করছিলেন।’

সমীরণবাবু ফিরলেন ঘরে। তাঁর মুখ দেখেই বুঝলাম খবর ভালো না। কিন্তু যা শুনলাম ততটা তাজ্জব খবর আমি আশা করিনি।

‘লোকনাথকে পাওয়া যাচ্ছে না’, বললেন সমীরণবাবু।

‘পাওয়া যাচ্ছে না?’ অবাক হয়ে জিগ্যেস করল ফেলুদা।

‘না,’ বললেন সমীরণবাবু। ‘সে দেড়টার কিছু পর থেকেই মিসিং। চাকররা দুটো নাগাত খেতো—লোকনাথ খায়ওনি। কোথায় গেছে, কখন গেছে, কেউ বলতে পারছে না।’

‘রজতবাবু তাকে কোথাও পাঠাননি ত?’

‘না। উনি কিছু জানেনই না। বললেন দুপুরের খাবার পর আধ ঘণ্টা বিশ্রাম করেই উনি ঝাউবনে বেড়াতে যান। এটা ওঁর একটা বাতিক আছে। উনি দুপুরে ঘুমোন না।’

কথাটা যে সত্যি সেটা জানি। কারণ শুটিং-এ লাঞ্চ ব্রেকের সময় আমি একবার ঝাউবনে গিয়েছিলাম ছোট কাজ সারতে। তখন রজতবাবু ঝাউবন থেকে ফিরছিলেন।

‘এই লোকনাথ বেয়ারা কতদিনের?’ জিগ্যেস করলেন সাহা।

‘বছর চারেক,’ বললেন সমীরণবাবু। ‘আগের বেয়ারা রঙ্গলাল খুব পুরোন লোক ছিল। সে হঠাৎ হেপাটাইটিসে মারা যায়। লোকনাথ খুব ভালো রেফারেন্স নিয়ে এসেছিল। একটু লিখতে পড়তেও পারত। বাবার হবির ব্যাপারে রজতবাবুকে ও সাহায্য করত।’

‘তাহলে ত মনে হচ্ছে ওকে খুঁজে বের করলেই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে,’ বললেন সাহা। ‘আপনাদের টেলিফোনটা একটু ব্যবহার করতে পারি?’

‘নিশ্চয়ই,’ বলে সমীরণবাবু সাহাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

‘কিন্তু মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-টা কেন দেওয়া হল সেটা ত বুঝতে পারছি না ফেলুবাবু,’ বললেন লালমোহনবাবু। ‘চুরিই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে ত সে কাজটা ত্রিশটা বড়ি খাইয়ে বেহুঁশ করেই হয়ে যায়। আবার ছোরা কেন?’

ফেলুদা বলল, ‘মনে হয় শুধু বড়িতে আততায়ী নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। হয়ত যে সময় মূর্তিটা চুরি করতে এসেছিল সেই সময় মজুমদার একটু নড়াচড়া করেছিলেন। বড়ির অ্যাকশন হতে ত সময় লাগে! এই নড়াচড়া দেখেই ঘাবড়ে গিয়ে ছোরাটা মারা হয়েছে। এবং তারপর মূর্তিটা সরানো হয়েছে।’

‘কিন্তু তাহলে বিষটা কখন লেখা হল?’

‘সেটা অবিশ্যি ছোরা মারার আগেই হয়েছে—যখন মজুমদার প্রথম বুঝেছেন যে তাঁকে কিছু একটা খাইয়ে বেহুঁশ করার চেষ্টা হয়েছে। লেখাটা লিখেই উনি অন্তত সাময়িকভাবে সংজ্ঞা হারান। এছাড়া আর কোনো সমাধান আপাতত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

ফেলুদা যে খুশি নয় সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম।

সাহা ইতিমধ্যে ঘরে ফিরে এসেছিলেন; বললেন, ‘আমার কাছে ইট সার্টেনলি মেক্‌স সেন্‌স। …যাক্‌ গে, আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি। ইতিমধ্যে অবিশ্যি আমার অন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমি এ বাড়ির এবং ফিল্মের দলের সকলকে জেরা করতে চাই।’

‘একটা কথা,’ বললেন লালমোহনবাবু। ‘ফিল্মের দলের মধ্যে সকলের কিন্তু বাড়ির উত্তরদিকের বাথরুম ব্যবহার করার অধিকার ছিল না। সে অধিকার ছিল পরিচালক পুলক ঘোষালের, ক্যামেরাম্যান সুদেব ঘোষ, রায়না, ভার্মা, আর আমার।’

‘তাহলে শুধু তাদেরই জেরা করা হবে,’ বললেন সাহা।

‘মানে, আমাকেও?’ ধরা গলায় প্রশ্ন করলেন লালমোহনবাবু।

‘তা ত বটেই,’ বলল ফেলুদা। ‘সুযোগ যাদের ছিল তাদের মধ্যে

আপনি ত একজন বটেই।’

সাহা বললেন, ‘এ ছাড়া আছে বাড়ির লোক। অর্থাৎ—’ভদ্রলোক সমীরণবাবুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলেন।

সমীরণবাবু বললেন, ‘অর্থাৎ আমি, রজতবাবু, চাকর বাহাদুর, আর রান্নার লোক জগদীশ।’

‘ভেরি গুড।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *