০১. যুক্তি – দেশ-পরিচয়

যুক্তি – দেশ-পরিচয়

দেশ ও জাতির বাস্তব ইতিহাস জানিতে হইলে সর্বাগ্রে দেশের যথার্থ ভৌগোলিক পরিচয় লওয়া প্ৰয়োজন। মহাকালের কোনও রূপ নাই; কাল অনন্ত, অব্যয় এবং অরূপ। দেশের আধারকে আশ্রয় করিয়া, অসংখ্য বস্তু ও প্রাণীরূপ পাত্রকে অবলম্বন করিয়া। তবে সেই কাল নিজের সীমায়িত রূপ প্রকাশ করে। দেশ এবং পাত্র নিরপেক্ষ কালের কোনও রূপের কল্পনা অ্যাবসট্রাক্ট কল্পনা মাত্র, তাহার বস্তুগত ভিত্তি নাই; দেশ এবং পাত্র, অর্থাৎ দেশান্তৰ্গত বস্তু ও প্রাণী-জগৎ কালকে তাহার বস্তুপ্রতিষ্ঠা দান করে। তখনই সম্ভব হয়। কালের বাস্তব স্বরূপ উপলব্ধি করা। তাই, ইতিহাসের অর্থই হইতেছে কাল, দেশ ও পাত্রের যথাযথ বর্ণনা এবং এই ত্রয়ীর সম্মিলিত রূপ ও তারহার ব্যঞ্জনাকে প্রকাশ করা। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে এই ত্রয়ীর তৃতীয়টির, অর্থাৎ পাত্রের (দেশান্তর্গত প্রাণিজগতের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ প্রাণী সেই মানুষের) আদি কথা বলিয়াছি। এই মানুষকে লইয়াই তো মানুষের গর্ব, এবং মনুষ্যসমাজের কথাই ইতিহাসের কথা; কাজেই পরবর্তী সকল অধ্যায়ে তাহাদের কথাই সবটুকু জুড়িয়া থাকিবে। বর্তমান অধ্যায়ে ত্রয়ীর দ্বিতীয়টির অর্থাৎ দেশের বাস্তব বিবরণের কথা বলিবার চেষ্টা করা যাইতে পারে; কারণ দেশই হইতেছে মানুষের ইতিহাসের ভিত্তি ও পরিবেশ। দেশের বস্তুগত রূপ বহুল পরিমাণে দেশান্তর্গত মানুষের সমাজ, রাষ্ট্র, সাধনা-সংস্কৃতি, আহার-বিহার, বসন-ব্যাসন, ধ্যান-ধারণা ইত্যাদি নির্ণয় করে। কাজেই, বাংলাদেশের মানুষের কর্মকৃতির কথা বলিবার আগে বাঙলাদেশের বস্তুগত ভৌগোলিক পরিচয় লওয়া অযৌক্তিক হইবে না।