প্রজাপতি – ১০

প্রজাপতি – ১০

মনে হয়, মোটরবাইক-এব এঞ্জিনের সঙ্গে আমার রক্তের কী একটা মাখামাখি আছে, শব্দটা কানে গেলেই প্যাডেলে পা বাখলেই, মনে হয়, আমার শবীর-খারাপ বলে কিছু নেই, একেবারে ঈজি চলে যেতে পারি। তা হলেও, বুকের কাছটা কী রকম ঢকস ঢকস করছে, যেমন কোনো আলগা জিনিস ধাক্কা খেলে ঢকস ঢকস করে, সেই রকম। ওবেলা যে-বাস্তা দিয়ে ফিরেছিলাম, সে-ই রাস্তা ধবেই ফিরে চলি, এবার বাডি যেতেই হবে, আমার চান করতে ইচ্ছা কবছে। কিন্তু আবাব-আবার সেই শিউবোনি ভাবটা ঘাডের কাছে শিবশিবিয়ে উঠছে, স্‌সাহ্‌, কী যে হচ্ছে! প্রায় সেই জায়গাটায চলে এলাম, শহবেব বাস্তাটা যেখানে সব থেকে চওড়া, ওবেলা কমেশ যেখানে গরীবদেব উদ্ধাব করছিল। এখানটায় শহবেক দুটো বড় বেস্টরেন্ট, সিনেমাটাও কাছে, তাছাড়াও বড় বড় দোকান, তাই এখানে বাস্তাব পাবে দাডিয়েই শহরের ছোড়ারা আড্ডা দেয়—এই আব কি মেয়েটেযে দেখা, টিকা-টিপ্পুনি কাটা, হিডিক মারা যাকে বলে আর কী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে, রেস্টুরেন্টেব সামনে বেঞ্চি পেতে বসে, একটু ব্যালা না করলে চলবে কেন, আমিও কবি। কিন্তু বিজে ছোড়াটা আমার দিকে ওবকম তাকিযে আছে কেন, খালি তাকিয়ে না, হাসছেও যেন, হাসছে অথচ চোখ নামিয়ে নিচ্ছে না, বাপাব কী। ওদের একটা নেড়ি মাস্তানের দল আছে, আসলে কেশবেরই ফাইফবমায়েস থাটে। এই—এই সেই জিনিস, আবাব আমার ভয়ের গুব গুরোনিটা চেপে এল—না, ঘাড়ের শিউবোনি না, সেই ভয়, শিরদাঁড়ার কাছটা কী রকম করে ওঠা, যেটা হলেই,হাত-পা অবশ হযে আসতে চায়, কে যেন আমার ঘাড় মুচড়ে ধরতে আসে, মূর্ছা রুগীর মত মুখ গুজরে পড়ে যাবে হয়তো …

মনে হতেই, রাস্তার ধারে, একেবারে পাঁচিলেব পাশে, মোটরবাইকটা কোনরকমে থামিয়ে, ঠেকিয়ে রেখেই প্রায় পাগলের মত চিৎকার করে উঠলাম, আর বিজে—বিজয়টাকে ক্যাত করে একটা লাথি কষলাম, ‘শুয়োরের বাচ্চা, বড় যে হাসি দেখছি।’ বলতে বলতেই, ঘুষিও চালালাম, নাকে মুখে পেটে, আর সঙ্গে সঙ্গে এদের দলের দু-তিনটে নেড়িও ছুটে এল, ‘খবরদার সুখেন’ বলে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে আমি তখন কী যে করছি, নিজেই জানি না, ভয়ের ভাবটা কাটাবার জনো পাগলের মত হাত চালিয়েছি। আমার সেই চেহারাটা দেখে, বিজেদের নেড়ি দলটা প্রায় হকচকিয়ে যাবার মত, তবু পাল্টা দু-একটা ঘুষি আমার গায়ে লাগতেই, ভয়ের ভাবটা যেন কেটে যেতে লাগলো, ভীষণ চিৎকার করে আমি আরো জোরে হাত চালালাম। এ সময়ে আমার দলেরও কেউ নেই, হঠাৎ মনে পড়ে গেল কোমরে ছুরি আছে। মনে হতেই, সেটা টেনে বের করলাম, একটা নেড়িকে তার আগেই পাঁজরায় লাথি মেরেছি, বাকীরা দৌড়ুতে আরম্ভ করেছে। শুধু নেড়িগুলোই না, রাস্তার লোকেরাও দৌড়ুতে আরম্ভ করেছে। কে যেন ‘খুন খুন’ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন, আর কয়েকটা দোকানের ঝাঁপ ঝপ ঝপ বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। আমি তখন ভয়ের ভাবটা একেবারে কাটিয়ে উঠেছি, আর ঠিক এ সময়েই আমার চোখে পড়লো রমেশ একলা দূর দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে, ঠিক একটা ল্যাজ গুটানো কুকুরের মত। আসলে একলা বলেই ভয় পেয়েছে, ভেবেছে, গুণ্ডাটা চোখে পড়ে গেলে যদি ভুকিয়ে দেয়। ‘কেন, এখন আয়!’ মনে হল রাস্তাটা প্রায় ফাঁকা, আর ট্রাফিকের জন্যে যে-সেপাইটা দাঁড়িয়েছিল, সে ছুটে এল আমার কাছে, বললো, এই সুখেনদা, কী করছেন, ছুরিটা রাখুন। হ্যাঁ, এখন আর আমার কোন ভয় নেই। ছুরিটা বন্ধ করে, আস্তে আস্তে কোমরে গুজে রাখি, সেপাইটা তখনো বলতে থাকে, ‘ওরা কখন চলে গেছে। যান চলে যান, থানায় খবর গেলে আবার ও. সি. আসবে, একটা হাঙ্গামা হুজুক…।‘ ও বলেই যাচ্ছে, আর আমি মোটরবাইকটা সোজা করে, চেপে স্টার্ট দিই। এখন ভবসা পেয়ে, অনেকেই আড়াল-আবড়াল থেকে বেরিয়ে আসে, ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকায়, সসুখেন গুণ্ডাকে দেখছে সবাই। আমি বলতে থাকি, কিন্তু কি জানি, আমার যে কী রকম একটা হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। বিজে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসবে, ঠোঁট বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে, সেটা টলারেট করতে পাবি না, কিন্তু আসলে তো আমার সেই ভয়ের কাঁপুনিটা লেগেছিল বলেই ওরকম করছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, আমি দুর্বল, হাঙ্গার-স্ট্রাইকের পরে যেরকম হয়েছিল, সেই রকম, অথচ তার সঙ্গে আরও একটা যেন কী হচ্ছে—কী একটা—কে জানে স্‌সাহ্‌, কেঁদেই ফেলব কি না। লাও, দেখ আবার কোথায় চলে এলাম। আবার সেই দয়ালদার দোকানেই। আসলে, সেই টাকাটার কথা ভুলতে পারিনি বলেই বোধহয় এসেছি, কিন্তু মদের কথাই তো বেশী মনে হচ্ছে। তা হলে বোধহয়, মদ খেতেই এসেছি।

এখানে, এ রাস্তার নিরিবিলি ভাবটা আমার এখন বেশ ভাল লাগছে, একটা লোকও দেখছি না, কেবল দয়ালদা টিমটিমে লণ্ঠন জ্বালিয়ে বসে রয়েছে, তার কাছেই বেঞ্চির ওপর একটা মেয়েমানুষ, শুনেছি দযালদা নাকি এ মেয়েমানুষটার সঙ্গেই সারা জীবন রয়েছে। বউ তো না, এ শহরেরই বেশ্য ছিল, তারপরে দয়ালদার সঙ্গেই সারা জীবন—ছেলেপিলে কিছু নেই। রোজই সন্ধ্যেবেলা আসে, আর রাত্রে ঝাঁপ বন্ধ করে দুজনে একসঙ্গে ঘরে ফিরে যায়—কী জানি এদের স্বামী-স্ত্রী বলে কি না। মোটরবাইকটা দাঁড় করিয়ে বললাম, একটা পটি দাও তো দয়ালদা। বললাম, কিন্তু দোকানের পিছনে, ঢালু বেয়ে, নদীর দিকে নেমে গেলাম। নদীর ধারেই এ রাস্তাটা। দোকানের পিছনে একটা ভাঙা ঘাট আছে, সেখানে কাউকে দেখতে পেলাম না, ভাঙা ধাপের ওপর দিয়ে সাবধানে নামতে লাগলাম, আর প্রায় জলের কাছে গিয়ে, হঠাৎ একটা মানুষ দেখে, থমকে দাঁড়ালাম। থমকে দাঁড়াতে গিয়েই, একটা শব্দ হল, বসে-থাকা লোকটা আমার দিকে ফিরে তাকালো, আর তখুনি আমার বা পা একটা গর্তে পড়ে যেতে, আমি হুমড়ি খেয়ে প্রায় লোকটার ঘাড়ের ওপর পড়লাম। লোকটা আমাকে পড়তে না দিয়ে ধরে ফেললো। আর একটু হলেই আমি জলে পড়ে যেতাম। এটাই সব চেয়ে নিচের ধাপ, আর না ধরলে, জুতোসুদ্ধ আমার পা মচকে যেত। লোকটা আমাকে বললো, “বস একটু! মেলাই খেয়ে এসেছ মনে হচ্ছে।‘

কে রে লোকটা, গলার স্বরটা অদ্ভুত, যাকে বলে ভরাট আর মোটা। তা ছাড়া, আরো একটা কী ভাব আছে যেন, যে-ভাবটা শুলাদার কথায় প্রায়ই ফুটে ওঠে। যেন—এই আর কী, একটা ভালবাসা-ভালবাসা ধরনের। মদের গন্ধটা ঠিক টের পেয়েছে, ভেবেছে আমি মাতাল বলেই পড়ে গেছি, কিন্তু পেটে তো মদের আর ম-ও নেই, সবই তো বমি হয়ে গেছে। রাস্তার ওপরে বুড়োদের চোখের মত যে টিমটিমে আলো ছিল, তাতেই আমি লোকটার মুখ দেখতে পেলাম, মনে হল, মুখটা ধুলোমাখা, পাতলা বড় বড় চুলগুলো উসকোখুসকো, খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর মস্ত বড় গোঁফ চিনতে পারলাম, বচন, কারখানায় কাজ করে, পূর্ণেন্দুদের দলের লোক। আমি বস্‌লাম না, দাঁড়িয়েই রইলাম খানিকক্ষণ, তারপরে জলের দিকে পা বাড়াতেই, বচন—বচন কাওরা, লোকে তা-ই বলে ওকে, আমার হাতটা চেপে ধরলো। বললো, ‘একটু বসই না স্থির হয়ে, এখুনি পেছল সিঁড়িতে পা দেবার কী দরকার, আবার পড়ে যাবে হয়তো।‘

কথা শুনলে, এ লোকটাকে ঠিক দলবাজদের মত মনে হয় না, তার ওপরে আবার আমার সঙ্গে, যাকে ওরা শত্ৰু মনে করে। আর সত্যি বলতে কি, না কি, এও আমার সেই ভুতুড়ে বিদঘুটে ব্যপারের মতই একটা কিছু। লোকটা যে আমার হাত ধরেছে, তার মধ্যে কেমন যেন একটা—কী বলব—একটা মন-টানা মন-টানা ভাব, ওই আর কি, ভালবাসাবাসি মত। ও যদি মেয়ে হত, আর বয়স কম হত, তা হলে এই হাত ধরাটা শিখার হাত ধরার মতই মনে হত বোধহয়। অথচ ও হচ্ছে পূর্ণেন্দুদের গরীব দলের লোক, আমাকে কেন ঘেন্না করছে না কে জানে! হয়তো ঘেন্নাই করছে ‘তুমি তো আবার গরীব দলের নেতা?’

‘নেতা?’

লোকটার কয়েকটা দাঁত নেই, শব্দ না করে হাসতে বোঝা গেল। যেন এমন মজার কথা সে কোনদিন শোনেনি। হাসিটাও এমন, লোকটাকে কেমন চালাক চালাক বিটলে বলে মনে হচ্ছে। বললাম, ‘তোমরা তো মাতালদের ঘেন্না কর।‘

‘ঘেন্না করব? কেন, আমিও তো মাল খাই, মাতাল হই।‘

ওহ্‌ স্‌সাহ্‌, তাও তো বটে, অনেকদিন তো নিজের চোখেই বচনকে মাল খেতে দেখেছি। বললাম, ‘তবে, গুণ্ডাকে তো ঘেন্না কর।‘

‘তা করি, সে তো তোমার গুণ্ডাদের সবাই ঘেন্না করে।‘

‘তবে আর কি, এবার আমাকে ছেড়ে দাও, আমিও তো গুণ্ডা।‘

লোকটা এ কথার কোন জবাব দিল না। বলল, ‘একটু বস না।‘

খচরামি করছে নাকি আমার সঙ্গে। বললাম, ‘আমি মাতাল না, মাল সব বমি করে ফেলেছি।‘

‘সেটা তো আরো খারাপ। খেলে, আবার পেটেও রাখতে পারলে না। তা হলে তো নদীর ধারে একটু বসাই ভাল, ভাল লাগবে।‘

এ-সব, কথাবার্তা নেই, হুটাপুট পীরিত আমার ভাল লাগে না। ‘নাহ, ছাড়। ‘

হাত টানলাম, আশ্চর্য, লোকটা হাত ছাড়লো না, তেমনি করে হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, আর মনে মনে সন্দেহ হলেও, আমি যেন রাগ করতে পারছি না। আচ্ছা, লোকটা বোধহয় বোকা, নিশ্চয়ই বোকা, ভাবভঙ্গিটা বোকাল মতই। একথা মনে হতেই আমি বলে উঠলাম, ‘আচ্ছা, পূর্ণেন্দু রমেশ বিমলে, এরা তোমাদের দলের লিডার কেন?‘

লোকটা খানিকক্ষণ একেবারে চুপচাপ আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল, তারপরে সেইরকম বিটলে ভাবে হেসে বললো, ‘ওরা লিডার হয়েছে, তা-ই।’

‘ওরা আবার লিডার কিসের? ওরা তো সব জুচ্চোর-ফেরেববাজ।‘

‘তবু, গরীবদের জন্যে বলে তো।‘

‘ও, বললেই নেতা?’

বচন কোন জবাব দিল না, চুপ করে, আগের মতই খানিকক্ষণ চেয়ে রইল, তারপর বললো, ‘তোমার আবার এসব কথা কেন। তুমি অত বড়লোকের ভদ্দরলোকের ছেলে হয়ে, দাদাদের মত হলে না কেন?’

‘কী জানি, আমি তা জানি না, ওদের সঙ্গে আমার মিল নেই। তুমি তো চাঁদ আমার কথার জবাব দিলে না। তার মানে ধোকা খেয়ে খেয়ে মগজে কিছু নেই।‘ বচন কয়েকটা দাঁত দেখিয়ে হেসে বললো, তা হবে। আমার তো দেখ, তিন পুরুষ কারখানায় কাজ করছি, তার আগে,ঠাকুদার বাপেরা শুয়োর চরাত—আই, কী আর বলব বল, অনেক তো দেখলাম, দিন এক রকম যায় না। গায়ে ঘা থাকলে একদিন সে ধরা পড়েই।‘

আমার বলতে ইচ্ছা করলো, ‘ইয়ে পড়ে’, কিন্তু লোকটার গলার স্বরটা আর কথাগুলো এমন যে, সেরকম কিহচু বলতে পারছি না, অথচ রাগ হচ্ছে এই ভেবে যে, এ যেন বচন ক্যাওড়া না। একজন, কী বলে—‘জ্ঞানী সাধু-সন্ত। ধূ-র স্‌সাহ্‌, হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে, সাবধানে পেছল ধাপে নেমে চোখে মুখে জল দিই। দিয়ে, একবার অন্ধকার নদীটার দিকে তাকাই, একটাও নৌকা নেই, একেবারে ফাঁকা, কোন শব্দ পর্যন্ত নেই, যেমন অন্য সময় ছলছল কলকল করে। আমার যেন মনে হয়, জলের তলায় কারা সব চুপিচুপি চলাফেরা করছে, কথাবাত বলছে। এইসময়ে যদি শিখা এখানে আসতো—আচ্ছা, মা কি এখানে কাছাকাছি বা জলের তলায়-টলায় কোথাও আছে। বাবার কথা আমার মনে পড়ে গেল—ঠিক বাবা যেন এইরকম অন্ধকার নদীর তলার লোক। আমি এবার বাড়ি যাব। ফিরে, উঠতে যাব, দেখলাম, বচন ক্যাওরা আমার দিকে ঠিক তেমনি চেয়ে আছে। আমি বললাম, ‘তোমরা সব বোকা।‘

বলে, উঠতে লাগলাম, আর বচনের যেন হাসি হাসি ভাবের কথা শুনতে পেলাম, ‘তুমি আমাদের চেয়ে বেশী।‘

সে কথার আর জবাব দিতে ইচ্ছা করলো না, লোকটা শুলাদার মত মনে হচ্ছে, ওর কাছে বেশীক্ষণ থাকা বা চোখে চোখ রাখতে ভাল লাগে না। ওপরে উঠেই মোটরবাইক-এ চেপে স্টার্ট দিলাম, দয়ালদা চেঁচিয়ে বললো, ‘পাঁট বের করতে বললে যে?’

‘না, খাব না।‘

চলতে চলতে, প্রথমেই আমার মনে হল, না, ও স্‌লা চোপরার কারখানাতে আমি চাকরি করব না। আচ্ছা, আমি যা লেখাপড়া শিখেছি, তাতে যদি একটা গাঁয়ে গিয়ে প্রাইমারি ইস্কুলের মাস্টারি করি, কোঁচা দিয়ে কাপড় পরে, মাস্টারমশাইয়ের মত একটা জামা গায়ে দিয়ে—স্‌সাহ্‌, মারাত্মক হাসি পাচ্ছে মাইরি। নিজেকে ওরকম ভেবে, দারুণ হাসি পাচ্ছে, ঠিক যেমন বাঁদরনাচওয়ালাটা বাঁদরকে পায়জামা পাঞ্জাবী পরিয়ে ঘুরিয়ে বেড়ায়, সেটা যেমন অদ্ভুত—সেই রকম। কিন্তু আমাদের বাড়ির রাস্তার মোড়ে, লোক তিনটে কে যে, বাইক-এর শব্দ শুনেও সরছে না। শেষটায় আমাকে দাঁড়াতেই হল। উহ্‌, শরীরটা ঢিলঢিল করছে, জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে রে?’

তিন জনেই ফিরে দাঁড়ালো। ওহ বাব্বা, বড়বাবু যে, দুজন পেটেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, মানে আমার বড়দা কেশববাবু। আমি থামতেই দুজন সরে গেল, কেশব আমার দিকে এগিয়ে এল। মতলব কী! উহ্‌রে বাব্বা, আমার মায়ের মত সুন্দর মুখ হয়েও, কেশবকে এখন ছুঁচোর মত দেখাচ্ছে। বললো, ‘একটা সত্যি কথা বলবি?’

‘কী?’

‘চাল আর ফুডের কথা কার কাছ থেকে জেনেছিস তুই?’

ও, বাছাধনের ভাবনা ধরেছে, এমন সিক্রেট খবরটা আমি পেলাম কোথা থেকে। তাও আবার জানতে চাইছে আমার কাছ থেকে, অততো সহজ না চাঁদ। বললাম, ‘যার কাছ থেকেই শুনি, তোকে বলব কেন?’

‘আমাদের কেউ কী?’

সেটাই আমার—কী বলে, জ্যেষ্ঠ স্‌সহোদরের ভাবনা হয়েছে, সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে নাকি। বললাম, ‘বলব না, যেতে দে।‘

উ-উ-উ-স্‌লা, মুখখানি দেখ একবার, বিম্‌লের থেকেও যেন বেশী দাঁত কড়মড় করছে। বললে, ‘দ্যাখ টুকু, একটা কথা বলে দিই, ভাগ চাস তো দিতে পারি—একদিন তোকে আমার কাছে আসতেই হবে, তোর আর কোন ফিউচার নেই, কিন্তু যদি এভাবে—।’

আ রে লে লে, আমি গিয়ারটা হ্যাঁচকা ছেড়ে এগিয়ে চলে যাই, আর যেতে যেতেই বলি, ‘বেশী পেঁয়াজি করিস না।‘ কিন্তু আমার ভিতরটা যেন কী রকম হয়ে গেছে, শুকিয়ে সব কাঠ। তবু কেমন যেন জুলছে শরীরটা-—মনটাও, খচ্চর আমাকে ভয় দেখাতে এসেছে। না, আমি একটা কথা জানতে চাই, রাজনীতির দল না-হয় একটা মন্দিরের মত—যেমন কেষ্ট বা বিষ্ট্র বা কালী, দুগা, যা হোক, আর লোকেরা তো তাদেরই চায়—মানে দেবতাকে—মানে আসল পাওয়া যেটা, কিন্তু পূজারীগুলো যেমন ভাব দেখায়, দেবতারা সব ওদের হাত-ধরা, ওদের চাল-কলা দিতে হবে, ওরা ঘণ্টা নাড়লেই ঠাকুর চোখ মেলে তাকাবে, তা-ই ওদের পুষতে হবে, ওদের কথা শুনতে হবে—অথাৎ দেবতা মানেই সল গজুরাম হরেরাম পূজারী। সে-ই সব। এইসব পূর্ণেন্দু কেশবরাও তা-ই যেন। যেমন পূজারীই মন্দিরের মালিক, সে-ই সব পাইয়ে দেয়, এ খচ্চরগুলোও সেই রকম, ওরাই যেন দলের সব। পূজারীর মন্দিরের মত দলটাও ওদের দখলে, ওরা যেমন মন্দির চালাবে, তেমনি চলবে। স্‌সাহ্‌, গোপালঠাকুর!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *